Main menu

খাশ বাংলা: কি ও কেন?

[১৮.০২.২০২২ তারিখে একটা আলাপ হইছিল। সেই আলাপের একটা ট্রান্সক্রিশপন হইতেছে এই টেক্সট।]

সিফাত আহমেদ: খাশ বাংলার বাংলাদেশে আমরা, একটা স্পেস ক্রিয়েট হচ্ছে, কারণ এইটা তো মোস্ট নেচারাল থিংক, বাংলাদেশে, এইটা হবেই। আমরা করতে পারি আর যেই করতে পারুক, এইটা হবেই আর কি কিছুদিনের ভেতর। এই যে একটা ইন্টেলেকচুয়াল প্রসেসের ভেতর দিয়ে আলাপ আলোচনা ডিসকোর্সের ভিতর দিয়া এইটা হইতেছে, এইটা হইয়া যাওয়ার পর – এইটা সোসাইটিতে কোনো নেগেটিভ কনসিকুয়েন্স তৈরি হইতে পারে কিনা? পলিটিকসে, যেহেতু একটা ভাষা পলিটিকসের ভেতর দিয়া এইটা হইতেছে, পলিটিকসে এইটা থাকতেই পারে, সেই জায়গাগুলা কিভাবে ট্যাকল দেয়া যাইতে পারে? এইটা একটা আধিপত্য তৈরি করতে পারে কিনা, বাংলায় — যদি বলি আর কি, সেই জায়গাটা ট্যাকল দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার চিন্তা কি? অই জায়াগাটা কি আপনি ভাবছেন?

রক মনু: এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব, কিন্তু ইমরুলের ভাবনা কি? .

ইমরুল হাসান: এইটার বাইরে কনটেক্সটা নিয়া কথা আছে। ভাষার ব্যাপারে যে আলাপ-টালাপ হচ্ছে, বা যেভাবে হয়ে আসছে, এইখানে তো আসলে, বেইজলাইনে বিশাল একটা কনটেক্সট আছে। আমি ভাবতে গিয়া ওইটা নিয়া ভাবতেছিলাম। যে ওই কনটেক্সট কিভাবে তৈরি হচ্ছে, কিভাবে কোশ্চেন হচ্ছে বা কি রকম হইছে। এই ব্যাপারগুলি নিয়া ওইখানে হয়তো দুই-এক কথা এড করা যাইতে পারে।

ভাষা তো আসলে সবচেয়ে বেশি ইউজ হয় হচ্ছে কথা বলার বাইরে সাহিত্যের জায়গাটাতে। সাহিত্যের জায়গাটারে আমরা ভাষা বইলা দেখতে চাই আর কি। বা বড় কোনো সাহিত্যিক হচ্ছে ভাষাকে ডিকটেট করবেন এরকম একটা ধারণা আছে। তো যারা লেখালেখি করে তারা তো আসলে ভাষা নিয়া ডিল করে, ওইটা নিয়াই আসলে চিন্তা করা লাগে। তো যেইটা আসছিল আমার চিন্তাতে, লেখালেখির শুরুতে; আমরা তো ধরেই নিছি যে সাহিত্য ভাষাটা আছে, ওইটাই হচ্ছে নেচারাল, মোস্ট নেচারাল।

তো যখন এইটা নিয়া আমরা চিন্তা করতে গেছি তখন দেখতেছি যে, না, এইটা তো আসলে নেচারাল বলে যে জিনিস, ওইটা তো না। মানে কিছু চিন্তা করতে গেলে এইখানে তো আসলে হোচট খাইতে হচ্ছে। মানে জিনিসগুলি তো আসলে ভাষার ভেতরে আটানো যাইতেছে না। এইখানে যে একটা ব্যাকরণ সম্মত ভাষা বলে জিনিস আছে, এইটা যে খালি আমি ফিল করছি তা না। আমাদের সময়ে আমাদের আগেও অনেকে ফিল করছে। কিন্তু আমার ধারণা এইটা এইটিজ পর্যন্ত… ধরেন এক ধরণের ঝামেলা একটা হইছিল ত্রিশ চল্লিশের দিকে; তখনকার সময়ে তর্ক বিতর্কগুলির মধ্যে এইটা পাওয়া যাবে।

মুসলমান যারা ছিলেন উনারা দাবি করতেছিলেন যে মুসলমানরাও সাহিত্যের অংশ ভাষার অংশ, সুলতানি আমলেও ভাষা ছিল, দেন, যেইটা আসলে ব্রিটিশ আমলে প্রেসক্রাইবড যেইটা ফোর্ট উইলিয়ামের ভাষা ওইটাই যে আসলে বাংলা ভাষা ওইটার এগেইনেস্টে যারা ছিলেন উনারা আসলে একটা স্পেইস দাবি করতেছিলেন। ওই রকম একটা জায়গা থেকে ছিল। দেন, যখন ’৪৭ হইল পলিটিক্যালি, যখন ভাগ হইল তখন তো আসলে ইন্ডিয়াতেও প্রশ্ন উঠল যে ভাষা কোনটা হবে—হিন্দি হবে? পাকিস্তানের দাবি হইল যে আসলে উর্দু হবে, এইরকম।

তো তখন ইন্ডিয়ার যে সাউথ পার্টটা, ওরা কিন্তু এইটা মাইনা নেয় না। ওরা বলছিল যে যার যার রিজিওনাল ল্যাঙ্গুয়েজ হবে। মোটামুটি/ ভুলভাবে একটা সেটেল হইছিল। পাকিস্তানেও ওইভাবে স্যাটেল হইছে। কিন্তু যেইটা বাংলা ভাষা বইলা বলা হচ্ছিল সেইখানে আসলে ওই আমাদের মধ্যে সোসাইটির যে ভাষাটা, কমন পিপলের যে ভাষাটা ওইটা আসলে বাংলা ভাষা হিসাবে তৈরি হচ্ছিল না। ওইটার নড়চড়গুলি টের পাওয়া যাবে। মানে যেমন ধরেন সিনেমা হইলে সেইটা যাত্রা সিনেমা হয়ে যাচ্ছিল, গান হইলে সেইটা ফোক সং হয়ে যাচ্ছিল, কবিতা হইলে সেইটা লোকজ-ভাষার কবিতা হয়ে যাচ্ছিল। মানে ধরেন ডিফেরেন্সগুলি তখনও কিন্তু ছিল, কিন্তু আমাদের আসলে কলোনিয়াল হ্যাঙ-ওভারটা তখনও কাটে নাই। যেই জিনিস কাটতে তো আসলে সময় লাগে।

সিফাত: একটা মান ধইরা হিসাব করলে যেইটা হয় আর কি।

ইমরুল: হ্যাঁ, হ্যাঁ। তো ওই জিনিসটা যাইতে যাইতে আমার ধারণা বাংলাদেশ যখন হইছে; এবং স্পেশালি বাংলাদেশ হওয়ার পরও না; আমার ধারণা পঁচাত্তর ছিয়াত্তরের পরে, আমরা বুঝতে পারছি যে না, বাংলাদেশ তো আসলে একটা আলাদা রাষ্ট্র, আলাদা একটা জায়গা। তো তখন ভাষার জায়গাগুলি আরও স্পষ্ট হয়া উঠছে, তর্ক-বির্তকের জায়গাগুলি। এই সেভেনটি সিক্স এইটিজে গিয়া আমার ধারণা এই জায়গাগুলি স্পষ্ট হইতে শুরু করছে এবং ওইটার লিগ্যাসি থেইকা আমরা আসলে লিখতে গিয়া সাহিত্য করতে গিয়া টের পাইছি যে না এইটা তো ঠিকঠাক না। এইখানে আরও কিছু ঘটনা আছে আর কি। যেইগুলি চিন্তা ভাবনা করা দরকার। এইটা হইছে আমার কাছে ভাষা নিয়া আলাপের কনটেক্সটা।

মনু: সিফাতের যে কোশ্চেনটা এইটা, আমি যেভাবে বুচ্ছি; সেটা হলো যে… আচ্ছা, একটা দিক হচ্ছে যে ধরেন যে জায়গাগুলি থেইকা আমরা ইয়ে করতেছি… মার্ক্সের হিস্ট্রিকাল পোগ্রেশনের যে আইডিয়া ওইটার একটা মোস্ট প্রোবাবলি একটা ছায়া আছে, মানে অটোমেটিক্যালি। সিফাত যেভাবে প্রস্তাবটা দিল, যে ঘটনাটা তো ঘটবে আসলে; মানে ধরেন, এইটা কোনো রকম জোর করা এইখানে তা না। এইটা আসলে ঘটবে, এইটাই ঘটার কথা।

ধরেন যে খাশ বাংলা, দুইটাই হচ্ছে ধরেন স্টান্ডার্ড বাংলা হইয়া ওঠার কথা। এইটা হচ্ছে যে খুবি, ওই মার্ক্সের পোগ্রেশনের আইডিয়া থেকে যে আগাইতে আগাইতে এইটা অই জায়গায় যাবে, যেইটা অবভিয়াস; ফলে ওইটা আসলে আমাদের উপরে ডিপেন্ডেড না। ওরকম একটা জায়গা।

তো, মার্ক্সের কথাটা আনলাম এই জন্য যে ধরেন রেভ্যুলেশনারি বা মার্ক্সিস্ট রেভ্যুলেশন করে এদের ব্যাপারে আসলে হচ্ছে যে বহু ক্রিটিক আছে। একটা বড় কোশ্চেন যেটা, সেটা হচ্ছে যে যখনি আপনি রিভল্ট করে ফেলছেন তারপরে আপনি কি করবেন?

তো, মানে খাশ বাংলার ব্যাপারেও কোশ্চেনটা আসলে কাইন্ড-অপ ওইরকম। যে ধরেন এইটা উইন করল। মানে হিস্টিরিতে তো উইন করবে, এইটা ধইরা নিয়া, যে উইন করল, তারপরে তার শাসনটা কেমন হবে?

দেখেন, এইখানে আমি হচ্ছে যে, ইম্পরট্যান্ট জিনিস হচ্ছে যে, আমি কিছু ওয়ার্ড ব্যবহার করলাম যে শাসন; যে ডমিনেন্ট, সে যখন লুকাইতে চায়, যে এইটা আসলে শাসন না, এইটাই হচ্ছে জুলুমের পয়লা স্টেইজ বা পয়লা কদম—যে এইটা আসলে শাসন না। এখন ধরেন আমার পয়েন্ট হচ্ছে যে রেভ্যুলেশন এমন একটা জিনিস আপনি যখন জিতলেন তখন আসলে এইটা এন্ডিং অব শাসন না। এন্ডিং অব গভর্নেন্স না; বরং আপনার শাসনের শুরু।

তো আমাদের যে দিকটা দেখতে হবে যে আপনার শাসনটা কেমন হচ্ছে, বা হবে। এই কোশ্চেনটা হচ্ছে ধরেন রেভ্যুলেশনারিরা প্রায়শই এভয়েড করে এবং লুকাইতে চায়। প্রায় সকল কর্পোরেট যে ইন্সটিটিউশনগুলো আছে, ওইগুলোর ভেতরও এইটা আছে। বসেরা হচ্ছে একটু ফ্রেন্ড-ফ্রেন্ড ভাব ধরে; যেমন, আমি কিছু না…

ইমরুল: যেমন ধরেন ওই যে রূপকথাতে. ফেইরি টেলে; এরপরে এরা সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল। এর পরে হচ্ছে যে প্রেমের মিলন হয়া গেলো, এরপরে আর কাহিনি নাই আর কি। কাহিনি শেষ।

মনু: রেভ্যুলেশন হইলো মানে হচ্ছে যে এন্ডিং অব পলিটিকস। ফলে এখন আপনি যদি অন্য জায়গায়, গ্লোবাল পলিটিক্স করেন। আপনি একটা সোভিয়েট ইউনিয়ন বানাইছেন, এখন হচ্ছে যে সারা দুনিয়ায় কেমনে আরো আরো সোভিয়েত ইউনিয়ন হবে বা এই সোভিয়েত ইউনিয়নের পার্ট হবে, সেইটা নিয়া আপনি কাজ করেন! ইন্টারনাল পলিটিকস এন্ডিং হয়ে গেছে, এইটা আমরা খতম করে দিছি। এইখানে তো আসলে কোনো পলিটিকসই নাই। এইটা তো আসলে শাসনই না। আমরা তো হচ্ছি ফ্রেন্ড।! কর্পোরেট বসেরা কিন্তু এইটা খুব ইয়ে করে। যে না আমি তো বস না। ইভেন সে স্যার বা ই এগুলোও বলবে না। মানে হচ্ছে যে ধরেন আপনার কান্ধে চাপড় দিয়ে কথা বলা, এরকম ধরেন এই যে কনসেপ্টটা, ওপেন অফিস। ওপেন অফিস কনসেপ্টটার ভেতরে যে আইডিয়া অফ নজরদারি – এইটা পুরোপুরি লুকায়া ফেলা যায় যে দেখো এমডিরও কোনো আলাদা রুম নাই। এরকম, মানে আলাদা কোন রুম নাই, কোন বেড়া নাই।

তো, ওইটাই আমি বললাম, টর্চারের শুরু হচ্ছে, যখন হচ্ছে এইটা গোপন করে যে, এইটা শাসনের শুরু, সেইটা যখন দাবি করতে থাকে যে এন্ডিং অব শাসন। তো এখন যদি ওইটা, এই কারণেই আমি শাসন শব্দ ইউজ করতেছিলাম, এখন ওইটাকে যদি আমরা শাসন বলি, তাহলে হচ্ছে যে চিন্তা করতে হবে যে শাসনের অবভিয়াস ফলাফল কি? অবভিয়াস ফলাফল হচ্ছে একটা পাওয়ারের ইন-ইকুয়ালিটি। ক্ষমতা হচ্ছে যে কারো কম থাকবে কারো বেশি থাকবে। যে ডমিনেন্ট, যে শাসন করে তার ক্ষমতা বেশি; তার শাসনে অন্যরা আছে। এখন ধরেন, এই যে শাসন, এইটা হচ্ছে পাওয়ারের আমার যেটা আইডিয়া যে পাওয়ারের ইকুয়ালিটি মানেই হচ্ছে জুলুমের সম্ভাবনা।

তো জুলুমের সম্ভাবনা যদি হয়, এইটাকে আপনার কোনভাবে যে এইটা জিরো লেভেলে আপনি নিয়ে আসবেন মানে একদম পুরোপুরি এলিমিনেন্ট করবেন – সেইটা না; বরং এইটাকে কেমনে মিনিমাম রাখা যায়, সেইটার জন্যই হচ্ছে যে ধরেন আপনার মোস্ট ফ্লেক্সিবল রাখা, সবচেয়ে ফ্লেক্সিবল রাখা। মানে হচ্ছে যে এইটা কোনো কনক্রিক্ট ফর্ম না থাকা। যেমন ধরেন আমার কন্সটিটিউশন যেইটা রাষ্ট্রের, সেইটাকে বাংলায়, ওরা বাংলা করছে না সংবিধান, জিনিসটার ভিতরে ধরেন বিধানের চাইতেও বড় কিছু আর কি। মানে ধরেন একটা ইভারলাস্টিং একটা ফিলিং আছে। এইটা হচ্ছে যে আপনার কেয়ামত হয়া যাবে, কিন্তু এইটা থাকবে। যেইখানে ধরেন আমার একটা অল্টারনেটিভ প্রস্তাব ছিল, সেইটা হচ্ছে যে এইটাকে মুসাবিদা বলা, যে রাষ্ট্রের মুসাবিদা। মুসাবিদা কথাটার ভেতরে একটা ইভারলাস্টিং খসড়া ব্যাপার আছে।

বাস্তবে দেখেন কন্সটিটিউশন কিন্তু এইটা ঘটনাটাই। এই যে ধরেন এত এত এমেনমেন্ট, দুনিয়ার সকল কন্সটিটিউশনে। এত এত এমেমমেন্ট এইটা আসলে ধরেন খসড়া হিসাবেই বাস্তবে রাখছে। কিন্তু এইটা যে আসলে খসড়া সেটা সে বলবে না। এইটা হইলো আপনার যেনবা ধরেন দেশ মানুষ সব শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এইটাই এইটা, এইটাই থাকবে। মানে ধরেন একদমই গডের যে আইডিয়া, সেই আইডিয়াটার রেপ্লিকেশন হয়া উঠতেছে।

সিফাত: সাদগুরুদের কিন্তু একটা আর্গুমেন্ট আছে যে কেন এই জিনিসগুলা দরকার। এই সেন্স অব পারমানেন্স কেন দরকার। রাষ্ট্রকে রাষ্ট্র হইয়া ওঠা। বলতেছিল ইন্ডিয়ার নাম কেন দরকার ভারত? কারণ এই ভারত নামটার ভেতরে সবকিছুকে যোগ করার, একটা মানুষের সিটিজেনদের মনের ভিতরে একটা সেই কি বলে, একদম রিয়েল ইউনিটি তৈরি করার একটা (শক্তি) থাকে আর কি; এবং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা তৈরি হয়। সংবিধান বলার মাধ্যমে রাষ্ট্রধারণাটাকে পোক্ত করা, নাইলে বাংলাদেশ তো হইতে পারবে না, হইয়া উঠতে পারবে না; আর্গুমেন্টটা এইরকমের আর কি। ইংরেজিতে কিন্তু কন্সটিটিউশন বলে। মানে, মনু ভাই যেইটা বলতেছিলেন মুসাবিদা; কন্সটিটিউশন শব্দটার ভেতর ওইটার একটা আইডিয়াটা আছে যে, কন্সটিটিউট হচ্ছে।

মনু: কন্সিটিটিউশন মানে হচ্ছে যে কন্সটিটিউট করতেছে।

ইমরুল: মানে ভাষার যেইটা হচ্ছে অই ফিক্সডের চাইতে ফ্লেক্সিবিলিটির যেই জায়গাটা, এইখানে হচ্ছে যে ফ্লেক্সিবিলিটির সাথে আসলে ফ্যাশেনবিলিটির একটা ঘটনাও খুব এমবেডেড আছে। যেমন ধরেন এইটিজ বা নাইনটিজে গিয়ে যখন আসলে লেখালেখি-তে বলা হইলো যে প্রমিত ভাষার, সংস্কৃতমনা যেইটা আর কি ভাষার মধ্যে এখনও রয়ে গেছে, ওইটাকে যখন আসলে কোশ্চেন করা হইলো, তখন দেখা গেল যে এক ধরণের ‘আঞ্চলিকতা’ জিনিসটা বের হয়ে আসলো।

যেমন লোকাল হইতে পারাটা হচ্ছে একটা ফ্যাশন্যাবল। আপনি ‘টিভি’ নাটকে মোস্তফা সাওয়ার ফারুকির ব্যাপারটা যে আগের আলাপে বলতেছিলেন আর কি। উনারা হচ্ছে, কিন্তু ভাষার জায়গাটাকে নিছে, ওই কনটেক্সট থেইকা। যেইটা পারমানেন্সের একটা জায়গা আছে, সেইটার এগেইনেস্টে আরেকটা পার্মানেন্স তৈরি হচ্ছে।

তো মুশকিলটা হচ্ছে ওই জায়গাটাতে, যে আপনি যখনই ফ্যাশনাবিলিটির জায়গাটাতে আসতেছেন, যখন ফ্লেক্সিবিলিটির জায়গাটাতে আসতেছেন না, তখনি কোশ্চেনটা থাকতেছে যে আসলে, ও তখন তো প্রমিত ছিল এখন তো আঞ্চলিক হয়া যাইতে হবে, এখন তো লোকাল হয়া যাইতে হবে! আপনি লোকাল না হইলে তো হচ্ছে যে … এইটা মানে, দ্যাটস হাউ, এই পারমানেন্সির জায়গাটা সাসটেইন করে যাইতে হচ্ছে আর কি।

মানে, আমার কথা হচ্ছে যেই বেইজটা থেকে দেখা হচ্ছে, ওই বেইজের জায়গাটারেই যদি আমি চেইঞ্জ করতে রাজি না হই, তাইলে তো মুশকিল আর কি। মানে আমি যদি একই বেইজ থেইকা ধরেন যেকোনো রেভ্যুলেশন, কমুনিস্ট রেভোলেশনের ফেইলিওরের জায়গাটা তো আসলে এইটাও। ওইযে যখন বলা হইছিল যে রাষ্ট্র হিসাবে কিছু থাকবে না, আরো বেশি রাষ্ট্র হয়া গেছে। মানে আরো বেশি রিজিড করার মাধ্যমে সারভাইব করছে যেই চল্লিশ পঞ্চাশ বছর বা সত্তর আশি বছর সারভাইব করছে, এইটা আসলে আরো রিজিটিটির ভেতর দিয়া সারভাইব করছে।

তো ব্যাপারটা তো এরকমই হয় যে ধরেন, এই যে ভাষার গোড়ামির জায়গাগুলি যেইটা কলোনিয়াল আমলে তৈরি হইছিল, যেই কলোনিয়াল বাংলাটা এখন তৈরি হইছে, এইটাকে যদি পার হয়া গিয়া আরেকটা জিনিসই তৈরি করতে হয় তাইলে তো আসলে একই গর্তে পা দেওয়া হইলো, এরকম।

মনু: আমি একটু বলি, সেটা হচ্ছে ধরেন, এইটা তো একটা বেসিক্যালি এনার্কিস্ট আইডিয়া। যেটা হলো, সকল শাসন সমান। ফলে হচ্ছে ধরেন, এইটার বদলে ওইটা হইলো, ফলে একই তো হইলো—এরকম একটা ভাবনা দেখবেন। এইটা আসলে আল্টিমেটলি কি করে?

আল্টিমেটলি যে এইটা সে এইটাকে পারপিচুয়েট করে। মানে এইটার বদলের দরকারটাকেই নাই করে দেয়। এইটাও শাসন ওইটাও শাসন।

ইমরুল: এইখানে একটা জিনিস এড করে রাখি, ভুলে গেছিলাম। যেইটা হচ্ছে যে আপনি ডিফরেন্সের জায়গাটা বলেন, মানে হচ্ছে যে ফোর্ট উইলিয়ামের যে ব্যাকরণ তৈরি করা হইছিল, সংস্কৃত জানা মুন্সিদের দিয়ে করানো হইছিল আর কি। ফার্সিরও হয়তো, ফার্সি জানা কয়জন ছিলেন কিনা, জানি না। তো এখন কথা হচ্ছে যে আপনি এইটার বেইজটা ছিল ব্যাকরণ বেইজড হইতে হবে। তার মানে নতুন যে একটা কমন ভাষা বা একটা খাশ বাংলা তৈরি সেইখানে যে কোনো ব্যাকরণ থাকবে না তা না। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে যে এইটা ব্যাকারণ বেইজ তো হবে না। মানে বেইজটা হচ্ছে যে আসলে পাবলিক…

সিফাত: মূলধারা হিসাবে উইঠা আসবে।

ইমরুল: হ্যাঁ, হ্যাঁ, মানে পাবলিক কোন জায়গাগুলিতে যাচ্ছে, এখন ওই জায়গাগুলিকে একোমোডেশন করার আর কি। আপনি দেখেন বাংলাদেশের একটা ডিকশনারি যখনি বানানো হইছে সেই ডিকশনারি কিন্তু প্রতি বছর না হোক, অন্তত পাঁচ বছর দশ বছর পরে পরে তো আপডেট হওয়া উচিত। যে কোনটা বাংলা ভাষায় ঢুকতেছে কোনটা বাংলা ভাষায় ব্যবহারের মধ্যে থাকতেছে না। কিন্তু এই জায়গাগুলি নাই। ভাষা একটা রিজডিটির মধ্যে নিয়া আসা হইছে আর কি। ধইরা নেওয়া হয় যে কোনো ব্যাকরণ থাকবে না। কিন্তু ব্যাকরণটা হচ্ছে বেইজ হবে না আর কি। মানে অবশ্যই একটা আমাদের একটা অল্টারনেটিভ জায়গায় যাইতে হবে আর কি।

সিফাত: মানে, যেই ভাষাটা আমরা বুঝবো, আমরা বলবো, আমরা যেই ভাষাটা ইউজ করতেছি সেইটাকে বোঝার একটা টুলস আর কি ব্যাকরণ।

ইমরুল: হ্যাঁ, একটা টুল হিসাবে কাজ করবে।

মনু: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ব্যাকরণ তো ইনহেরিয়েট করার ব্যাপার না, এইটা ডিসকভারি। এইটা অলরেডি আছে। আমার একটা বেসিক আইডিয়া হচ্ছে, সবচেয়ে অশিক্ষিত বাঙালি, বাংলা ব্যাকরণ সবচেয়ে ভালো জানে। আমরা সবাই হইতেছে নকল করি।

সবচেয়ে অশিক্ষিত বাঙালি, কনভেনশনাল সেন্সে অশিক্ষিত যেইটারে বলে, সে হইলো বাংলা যে ফোনেটিক্স, সেইটা সবচাইতে ভালো জানে। আমরা হচ্ছি অনেক বেশি নকল করি। আমি যে ডিফিউশনরে ঠেকাইতে চাই, একটা জিনিস যে ঢুকবে – তা না। ব্যাপারটা হচ্ছে একটা সারটেইন হিস্টরিকাল মোমেন্টে আপনি যখন এইটাকে ডিটারমাইন করবেন, যে দিস ইজ দ্যাট, তো সেই দ্যাট-টা কি? এইখানে হচ্ছে যে বাংলা, বাংলাটা কি? তাইলে হচ্ছে যে ধরেন এইটা একটা সার্টেইন মোমেন্টে ডিটারমেন্ট করবেন তখন কে সবচেয়ে বেটার, এইটাকে ওউন করে, সেইটার একটা ডিসিশন নিতে হবে না? আমার পয়েন্টটা হচ্ছে এইটা সার্টেইন হিস্টিরিক্যাল মোমেন্টে মোস্ট অশিক্ষিত লোক সে হচ্ছে ধরেন বাংলা ফোনেটিক্স বলেন ব্যাকরণ বলেন, বাক্যের যে ফর্মেশন বলেন এই জিনিসগুলা সে সবচাইতে ভালো জানে। তাকে যদি আমরা এনালাইস করি, এনালাইস করলে ওইখান থেকে আমাদের যে বাংলা গ্রামারটা ওই হিস্টিরিক্যাল মোমেন্টের যে বাংলা গ্রামার, বাংলা কানুন, সেই কানুনটা সবচাইতে ভালো বোঝা যাবে। এবং ফোনেটিক্সও। যেই কারণে ধরেন আমি কিছু জিনিস বাদ দিয়া দেই। কেন বাদ দিয়া দিই। ধরেন ডাইরেক্ট, এই যে ‘রেক্ট’, পরের যে ট, এইটা দেখবেন যে যতগুলা ইংরেজি থেইকা, আমরা যারা ইংরেজির নকল করি তারা হচ্ছে যে এই ট-টা হচ্ছে সব সময় বলি। কিন্তু বাংলায় মোস্ট অশিক্ষিত লোকটা সে হচ্ছে যে এভরি ট-টা বাদ দিয়ে দেয়।

সিফাত: বলেই না। …

মনু: আরেকটা জিনিস বলি। ধরেন যারা হরফ দিয়া পড়ে, স্রেফ হরফ দিয়া পড়তে পারে, এইটুক শিক্ষা যার আছে, সে আপনি, বাংলায় যেইটা নাই, সে হচ্ছে যে কিছু জিনিস পড়তে পারবে না। যে কারণে হচ্ছে, যেমন ধরেন আমি এস্টাইল বা ইস্টাইল; এইটার আগে এ বা ই কোথাও লেখা দেখছেন? আমি কিন্তু দেখছি। এইটার মানে কী? এইটার মানে হচ্ছে সে হরফ দিয়া ওইটা পড়তে পারে। সে যে আসলে অত ধরেন ইংরেজি বা হচ্ছে ধরেন ফার্সি, হিন্দি, উর্দু, এগুলো অনেক জানে, ব্যাপারটা তা না। মানে ধরেন এডুকেশন অর্থে। সে হচ্ছে সমাজ থেকে যেইটা পায়। তখন যেইটা হয়, এস্টাইল, ধরেন বাংলায় যারা লেখে, প্রথম আলো বা এরকম যারা আছে, তারা দেখবেন এস্টাইল লেখে হচ্ছে যে দাতি ছ’য়ে, মানে যেটাকে দন্ত শ বলে, সেইটার সাথে ট দিয়া আকার ল।

আমার পয়েন্টটা হচ্ছে যে বাংলায় এই যে এইটা উচ্চারণ করলেন এস্টাইল, এই স্টাইলে বলার সময়, শুনতে একটা ‘এ’ আছে না? এই এ-টা আপনি কই পাইলেন? মানে, যে হচ্ছে সেরেফ, আপনার হরফ দিয়া পড়ে, সে হচ্ছে এইটা কেমনে পড়বে? কীভাবে উচ্চারণ করবে? সে এইটা কীভাবে, এইখানে একটা ‘এ’ আছে বুঝবে? এখন দেখেন এই জিনিসটা হচ্ছে বাস্তবে খেয়াল করলে দেখবেন যে এইটা সংস্কৃতে আছে। কিন্তু বাংলায় নাই।

যে কারণে হচ্ছে সংস্কৃতে পাবেন যেটা সেটা হচ্ছে – স্থল। বাংলায় স্থল ইউজ করে। কিন্তু আপনি ধরেন এই যে স্থল বা স্থান, এই জিনিসটা সংস্কৃতে আছে, কিন্তু এইটা যদি বাংলায় আসে তাহলে আপনি দেখবেন যে থান হয়ে যায়। এই যে থান—এইটা কেন হইছে? কারণ হচ্ছে যে ওই যে ওই জিনিসটা নাই। এই যে শুরুর, এইখানে যে একটা ‘এ’ আছে, এইটা আসলে বাংলার যে ফর্মেশন ফোনেটিক্স সেইটা আসলে পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা যারা সংস্কৃত ইংরেজি এই জিনিসগুলা নকল করি, আমরা জানি যে স্টাইল শব্দটা ইংরেজিতে ওই উচ্চারণ। ফলে এইটাকে ওইটা উচ্চারণ করতে হবে। কিন্তু হরফ দিয়া ওই জায়গায় রিচ করা যায় না।

এইখানে হচ্ছে, সবচেয়ে অশিক্ষিত লোকটা তাকে যদি আপনি এনালাইস করেন, সেইখান থেকে আপনি সবচাইতে ধরেন, ওই হিস্টিরিক্যাল মোমেন্টের ধরেন, মোস্ট প্রোবাবল বাংলা কানুন, সেইটা আপনি পাবেন ওইখানে। নট শিক্ষিত মানুষ। আপনার আমার ভেতর সেইটা পাওয়া যাবে না। কারণ আমরা ধরেন যত কমই ইংরেজি জানি, ধরেন আমি ইংরেজি জানি না, কিন্তু যত কমই ইংরেজি জানি, আমরা হচ্ছে যে এই জিনিসগুলা তো আমাদের চেনা। এই ধরেন পরের ‘ট’ বললাম। এই যে ধরেন শুরুতে একটা ‘এ’ আছে এই জিনিসটা আমরা জানি। ফলে হচ্ছে যে ওই জিনিসটা আমরা ওইভাবে বলি আর কি। কম ইংরেজি জানি তারপরও।

আপনার কথাটা বলেন তারপর আপনার কোশ্চেনে যাব।

সিফাত: আমি বলতেছিলাম যে, প্রমিত বাংলাঅলাদের আর্গুমেন্টটা হচ্ছে গিয়া বাংলাদেশের বাংলাটা সব সময় খাপছাড়া, মানে আলাদা আলাদা, ডিফরেন্ট, বহুদাবিভক্ত, টাওয়ার অফ ব্যাবিলনের মত দেখতে; একেক জায়গার মানুষ একেক রকম, মানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ভাষার ভিতরে; এই কারণে একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রমিত ভাষা হিসাবে ওইখান থেইকা ওইটা আমদানি করে। তার মানে কি, আমাদের এইখানকার ভাষার কোনো মূলধারা নাই? ফ্লেক্সিবল রাখা, ইমরুল ভাই যেইটা বলছে, আমি তো সেইটা তো বুঝছিই, ফ্লেক্সিবল রাখা। মূলধারাকে তাইলে কি আমরা ডিনাই করতে পারব? আরেকভাবে ওই পয়েন্টটা ইউজ করতে পারে যে মূলধারা তো…

ইমরুল: প্রমিত জায়গাটা টিকাই আছে হচ্ছে যে এইখানে বাংলাদেশের ভাষার যে মূলধারাটা আছে সেটাকে অস্বীকার করার ভেতর দিয়া। সেইটারে দাবায়া রাখার ভেতর দিয়া।

সিফাত: আমি এই জিনিসটা একটু এড করি। এই জিনিসটা এর আগেও মনু ভাইকে বলছিলাম, অত গোছায়া বলতে পারি নাই। মনু ভাই যে বাংলাটা ইউজ করেন, সেই বাংলাটা নিয়া এলিগেশন আছে কিন্তু, আমি কয়েক জায়গায় দেখছি যে এই বাংলাটা হইছে গিয়া মূলত দক্ষিণ অঞ্চলের বাংলা। অনেকে বলছে বরিশাইল্ল্যা বাংলারে মনু ভাই খাশ বাংলা হিসাবে এস্টাবলিশ করতে চাইতেছে। অনেক ওয়ার্ড মনু ভাই বললে বলে এইটা তো বরিশালের বাংলা। তখন এইটারে মেইন ট্রেন্ড হিসাবে দেখে না। ইমরুল ভাইয়ের কোনো একটা পোস্টেই এই জিনিসটা দেখছিলাম যে একজন পোস্টে লিখছে খিরুই, ইমরুল ভাই। তখন একজন কমেন্ট করছে যে আপনারাও খিরুই বলেন, এইটা তো আমিও বলি। দেখেন কখন কানেক্ট করতেছে, যখন ইমরুল ভাই বলতেছে একটা আঞ্চলিক জায়গা থেকে বলতেছে তখন ঠিকি সে কানেক্ট করতেছে যে হ্যাঁ, এইটা আমরা সবাই বলি। কিন্তু যখন খাশ বাংলা হিসাবে প্রস্তাবটা আসতেছে, তখন আঞ্চলিক ভাষা হয়ে যাইতেছে, বরিশাল বরিশাল, এইটা তো খুলনার জিনিস।

মানে সব সময় সেন্স অফ মূলধারার জিনিসটাকে মানতেছে। বাংলাদেশে মূলধারার কোনো ফর্ম থাকতে দিবে না, বাংলাদেশে বাঙালি। সেই ক্ষেত্রে কীভাবে এই জিনিসটা তৈরি হয়ে উঠবে, ইমরুল ভাই বলতেছিলেন মনে হয়।

ইমরুল: আপনার শুরুর দিকে একটা জিনিস, পরে মনে হইলো। যেটা বলতেছিলেন যে আসলে, খাশ বাংলার জায়গাটা তো আসবেই, মানে এইটার এই সার্টেইনটিটির ব্যাপারটা, মানে একটা পলিটিক্যাল জায়গা তো আছেই, সেটা হচ্ছে যে, ভাষা তো হচ্ছে মোস্ট ডেমোক্রেটিক ঘটনা। মানে এইখানে আপনি সাহিত্যের মধ্যে, ছোটখাট ব্যাপার এইগুলি; হচ্ছে, দান্তে যে লিখলেন আর কি, উনি যখন ল্যাটিনে না লিইখা হচ্ছে, ইতালিয়ান একটা প্রদেশের ভাষায় লিখলেন আর কি, তখন দেখা গেল ওইটাই আসলে ইতালিয়ান ভাষা হইয়া উঠল আর কি। মানে ওইটা হচ্ছে সারভাইব করে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ যখন যেইটা বলতেছে আপনি যতই আসলে দাবায়া রাখেন, মানুষের কথা বলার জায়গাটারে তো আপনি আসলে ফালায়া দিতে পারবেন না। এইটা টিইকা থাকতেছে। এইটা প্রমিনেন্ট হইয়া উঠবে। মানে হইয়া উঠবে আসলে ডেমোক্রেটিক কারণে আর কি।

সিফাত: এইটা তো আসলে আমরা দেখতে পাইতেছি, এইটাকে ওই লোকালি দেখার লেন্সটা পইরা আছে দেইখা মনে হইতেছে যে এইটা বরিশাইল্ল্যা।

ইমরুল: আমার কাছে বাধাটা মনে হয় যে, আসলে খুব মানে কি বলব, প্রথম দিকের যে বাধাটা; ওই যে যেইটা হইছে বেইজের জায়গাটা। এখন আমরা ব্যাকরণের দিকে তাকায়া আছি। বানান কি ব্যাকরণ সম্মত হইলো? মানে কথা হচ্ছে যে, মনু যেইটা বললেন, মানে ফোনেটিক্সের দিকে যদি তাকাই, তাইলে আসলে বানানটা কী হওয়া দরকার? তখন কিন্তু আপনার পুরা দুনিয়া চেইঞ্জ হয়া যাচ্ছে। এইটা নিয়া তো মনুও কথা বলছিলেন, আমিও দুই একটা জায়গায় হচ্ছে, এ কার আর আ-কার দিয়া দেখাইছিলাম যে যদি আপনি “রসিয়া বন্ধুরে” না বইলা “রসিয়ে বন্ধুরে” বলেন তাহলে তো আসলে দুইটা দুই দুনিয়া হয়া থাকে। মানে মনে হইতে পারে যে আকার একারের ডিফারেন্স। কিন্তু হচ্ছে যে পুরা দুনিয়াই আলাদা। আপনি বলতেছেন যে না এইটা ব্যাকরণ সম্মত হইতে হবে। ব্যাকরণ লিখতে হবে। আপনি অলটুগেদার একটা আলাদা দুনিয়াতে আছেন। আপনি যখন ওইখান থেকে সরতে না পারতেছেন যে আসলে মানুষ কেমনে কথা বলতেছে, মানুষ কেমনে এইটাকে ইউজ করতেছে। ওই প্ল্যাটফর্মে যখন না আসতে পারতেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে জায়গাটা এক্সপ্লোরই করা হচ্ছে না—মুশকিলটা হচ্ছে এই জায়গায়। কেউ যদি এক্সপ্লোর করতে রাজি হয়, এই জায়গাটাতে আসতে থাকে, তখন দেখবেন যে তার সামনে ওই যে যত ইল্যুশনের ইমারতগুলি, ধর্মবিশ্বাসের মতো আপনার এই জায়গাগুলি খান খান কইরা ভাইঙা যাবে।

সিফাত: মনু ভাইয়ের যে উচ্চারণের প্রস্তাবনা, যে উচ্চারণটা আসলে আমরা বাংলায় এইখানে করি, এই ব্যাপারে তো মনু ভাইয়ের একটা আলাপ আছে যে এইভাবেই উচ্চারণটা করি আমরা। যেমন ভ্রমরকে ভোমর বলা। এই উচ্চারণের টেনডেন্সি প্রথম শুনলে ভ্রমরকে ভোমর বলা কিংবা প্রেমকে পেরেম বলা, এইগুলা মনে হবে যে আমাদের কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি এমন ভাবে ফর্ম করছে যে এইগুলাকে মনে হবে দক্ষিণ অঞ্চলের ভাষা—বরিশাইল্ল্যা ভাষা মনে হবে। এইটা যে মূলধারা হিসাবে আছে, এইটা তো আমরা রাধারমণের ওইখানে দেখতে পাইতেছি।

ইমরুল: এইখানে দুইটা কথা। একটা কথা হচ্ছে যে আমি মনে করি, মনু এইটার সাথে এগ্রি হবেন আশা করি, নাও হইতে পারেন; সেইটা হচ্ছে, উনি যে প্রস্তাবগুলি করতেছেন, অ্যাজ ইট ইজ এই প্রস্তাবগুলি থাকতে হবে – এইটা আসলে আমার ধারণা এইখানে আসলে অনেক অল্টারনেটিভ আসতে পারে।

মনু: হ্যাঁ। অল্টারনেটিভ আসতে পারে।

ইমরুল: আমার কথা হচ্ছে বেইজটাকে চেইঞ্জ করেন। আপনি যখন বেইজটাকে চেইঞ্জ করবেন, তখন দেখবেন যে আপনি নিজেও প্রস্তাব আবিস্কার করতে পারতেছেন। যে আরে, আমি যদি এই লাইনে যাই, তাইলে তো আসলে দেখা যাচ্ছে যে মনু এইটা বলছে, আসলে তো অন্য আরেকটা বেইজ হইতে পারে।

সেকেন্ড কথা হচ্ছে যে, ধরেন আমার কথাটা এইরকম হইছে, আমি তো আসলে, ওই যে আমার ঢাকা কলেজ ঢাকা ভার্সিটি, এবং আমি হচ্ছি মোটামুটি ৬৪টা জেলার ৬০ জেলায় থাকতে হইছে আমাকে, চাকরির কারণে। তখন আমার একেকজনের যেইটা হইছে যে কখনও বগুড়া গেলে বগুড়ার লোকের টোন চইলা আসছে, কখনও মানিকগঞ্জের টোন চইলা আসে, সিলেটের কথাবার্তা, চিটাগাঙয়ের কথাবার্তা চইলা আসে, শব্দ। তো লোকজন অনেক সময় আসলে ওই যে কিশোরগঞ্জের লোক হিসাবে এতটা আইডেন্টিফাই করতে পারে না। কিন্তু কোনো না কোনো অঞ্চল দিয়া আইডেন্টিফাই করতে চায়। আর ইনফ্যাক্ট আমি যখন কথা বলব, তখন তো আমার আসলে, আমি এখন তো ঢাকায় থাকি গত পনের বিশ বছর ধইরা। তো এই ঢাকার টোনটা তো আমার মইধ্যে ঢুইকা আসবে। আমি যদি বরিশালের লোক হই আমার মইধ্যে টোন বরিশাইল্ল্যা থাকবে না? কিন্তু ওইটা তো আমার মেইন টোন না। মুশকিল হইছে এইটাই যে, আমি, একটা মানদণ্ড থাকবে, এর পাশাপাশি আমার একটা ইউজুয়ালিটিও তো আছে। রাইটার হিসাবে বলেন বা একজন ভোকাল হিসাবে, আপনি কারো কথা শুইনা বুঝতে পারেন না যে আরে এ তো, চিটাগাইঙ্গ্যা লোকরা যখন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে, তখন তো আমরা বুঝতে পারি। বা সিলেটি লোকজন যখন বলে, ব্যাপারটা সুইটও হয় অনেকটা।

সিফাত: চিটাগাংয়ের লোকজনের ভাষা, বগুড়ার লোকজনের ভাষা ওই ডাইভারসিটির ভেতরেই আমরা কিন্তু দেখতে পাইতেছি। এইখানকার ভাষা ডিফারেন্ট ফ্রম কলকাতা এবং সেইখানেও একটা টেনডেন্সি আছে। নট দ্যাট এইটা যে চিটাগাইঙিয়ান, এইটা বাংলা, এইখানে বাংলা নাই।

ইমরুল: আপনি নদী না বইলা গাঙ বললে যে আসলে কেউ বুঝতেছে না তা তো না। কিন্তু গাঙ বললে আঞ্চলিক হয়া যাইতে হচ্ছে। মুশকিলটা হচ্ছে এই জায়গাটায়।

সিফাত: গাঙ বলার সাথে সাথে বলবে আপনি কি বগুড়ার নাকি? আপনি নট দ্যাট বগুড়ার লোকজনের গাঙ বরিশালের লোকজনের গাঙের মধ্যে ডিফরেন্স আছে। কিন্তু দুইটাই গাঙ আছে। বগুড়ার লোকজন যখন ছল বলেতেছে, ছাওয়াল, পোলা বা ছেলেদের ছাওয়াল বলে, তখন আমরা বুঝতেছি, একটা সেন্ট্রাল টেনডেন্সি হিসাবে এইখানে ছাওয়াল বলার একটা ব্যাপার আছে। কারণ আমরা বরিশালের লোকজনও অনেক সময় ছাওয়াল বলি।

ইমরুল: ওইটা হচ্ছে আমাদের কলোনিয়াল ভাষার বা যেকোনো ধারণার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে কলোনিয়াল লিগ্যাসির কারণে আমরা ওই ধারণাগুলির কাছে যাইতেই রাজি না।

মনু: আমি যদি আরেকটা জায়গায় যাই; সেইটা হচ্ছে যে, একটা শব্দ আপনারা ইউজ করছেন—মূলধারা। ইংরেজিটা খেয়াল করেন, মেইনস্ট্রিম। এই যে মেইন, মেইনটার ভেতর একটা ডমিনেন্সটা কিন্তু আছে। সেইটা হচ্ছে যে, একটা পাওয়ার স্ট্রাগল পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি যখন মূল বলেন, মূলের ভেতরে পাওয়ার স্ট্রাগল পাওয়া যায় না—এক; দুই হচ্ছে যে একটা কম্পিটিশন যে আছে, সেই কম্পিটিশনটা মূলের কথার ভেতরে নাই। যে কারণে ওরা হচ্ছে মূলধারা ইউজ করে, শব্দটা হবে, আপনারা.. আপনি ধরেন মেইনটারেই কেন নিতে পারবেন না? যেটাই হোক, পয়েন্ট হলো যে, মেইন রোড, মেইন রোড বলে না?

সিফাত: মানুষ সেইটাই বলে।

মনু: এখন একটা জিনিস হচ্ছে এই জায়গা থেকে যাই, ধরেন ওই যে এইটিজে বা তার পরে যখন হচ্ছে যে এই সো কলড মূলধারা মেইনস্ট্রিমের তুমি তো বাংলা, হ্যাঁ, কলোনিয়াল কলিকাতায়; এখানে একটা জিনিস, এই যে কলোনিয়াল কলিকাতা, দুইটা একসাথে বলি। কেন বলি কারণ হচ্ছে একটা কথা হচ্ছে আছে, নদীয়া অঞ্চলের বাংলাটা প্রমিত হইছে পরে—এইটা ফলস। ফলস কেন বলি, ধরেন, চণ্ডীদাস কোথাকার লোক? ওইদিককারই তো লোক, তাই না? নদীয়ার ওই দিককারই তো লোক। সে যখন লেখে, যখন তার লেখা হচ্ছে ধরেন, রান্ধিলা, বা রান্ধন; আপনারা এখন দেখেন, বাংলাদেশে কিন্তু রান্ধন শব্দটা আছে। তার মানে হচ্ছে ধরেন, নদীয়া বা কলকাতার আশেপাশে ওই জায়গাও রান্ধন শব্দটা ছিল। এই যে র-য়ের একটা আকার, এই আকারটা প্রমিত বাংলায় কেন বাদ দিয়া দিল?

ইমরুল: ছোট্ট একটা জিনিস এড করি, সেইটা হচ্ছে ওই যে আমি স্বর্ণকুমারী দেবী’র কবিতা পড়তেছিলাম। ওইখানে কিন্তু হচ্ছে যে পালাইয়া, আটকায়া, চলিয়া—মানে এই যে সাধু ভাষা যেইটা আগে যে ছিল আর কি। এইটা আরেকটা ফারদার ডিস্টোরশন করছে চলিত ভাষার সময় গিয়া। মানে এইখানে হিস্টিরিক্যালি অনেক ঘটনা আছে। কীভাবে জায়গাটা করাপ্ট হইছে আর কি। কীভাবে এইখানে ভাষার জায়গাটাকে এড়ায়া গিয়া, জায়গাগুলিরে টিকায়া রাখা হচ্ছে আর কি।

মনু: আমি যেইটা বলতেছিলাম, ধরেন ওই যে বিশৃঙ্খলা, ইত্যাদি, ইত্যাদি; বলে না? যে ওদের কাছে কিছু প্রিয় শব্দ আছে, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য—এইরকম আর কি। তো এইটা তার মানে হচ্ছে যে, আমি যে প্রপোজালটা দিছি, এইটাকে তারা ট্রিট করে যেন বা এইখানে কোনো একটা এনার্কিজমের, এনার্কিস্ট মুভমেন্ট। তাইলে এইরকম ভাব কি থাকবে না? না তো। আমরা তো বলতেছি যে মেইনস্ট্রিমটাই ডিফরেন্ট। তুমি যেইটারে মেইনস্ট্রিম কও, ওইটা মেইনস্ট্রিম না।

ফলে, এইটা কোনো এনার্কিস্ট মুভমেন্ট না। এইটা একটা পাওয়ার স্ট্রাগল। আমরা হচ্ছে যেইটা মেইনস্ট্রিম, সেইটা যে মেইনস্ট্রিম, সেইটা আমরা কইতেছি। নাথিং এলস। মেইনস্ট্রিমটাকেই মেইনস্ট্রিম কইতেছি।

যেই কারণে আমি বললাম যে শাসন, যে মূলধারাটা যখন বলে, তখন হচ্ছে যে এই শাসনটা লুকায়। মূল তো শাসন করেই আসলে। কিন্তু সেই শাসনটা যেটা হয় যে ধরেন কমপ্লিটলি ডিপেন্ডেড, শাসনই কিন্তু এইটা না। শাসন হচ্ছে একটা পাওয়ার স্ট্রাগল। শাসন না থাকলে যে শাসিতরা মইরা যাবে, ব্যাপারটা তা না। কিন্তু মূলধারা যখন বলে, তখন হচ্ছে মূল না থাকলে, বাকি সব মইরা যাবে। তাই না ঘটনাটা? মানে ওইটা হচ্ছে প্রাণভোমরা।

এই যে এই ব্যাপারটা, এইটা হচ্ছে ধরেন এইটার পলিটিকস। এরা হচ্ছে সবচেয়ে ভায়োলেন্ট পলিটিকসটা করে, কিন্তু পলিটিকসটা সবচাইতে বেশি লুকায়। ফানি থিংক। এখন পয়েন্টটা হচ্ছে যে আমরা কোনো এনার্কিস্ট মুভমেন্ট করতেছি না। আমরা বলতেছি যেইটা মেইনস্ট্রিম, সেইটা মেইনস্ট্রিম, এই কথাটাই আমরা কেবল মাত্র বলতেছি। এবং সেইটা যখন মেইনস্ট্রিম হিসাবে এইটা যখন হবে, ধরেন সব জায়গা দখলে নিবে, তখন সেই দখলটা কেমন হবে?

এই জন্যই আমি বলতেছিলাম, যে ধরেন, সকল সরকার, সকল রাষ্ট্র, এগুলো তো সমান না। আপনি যখন এনার্কিস্ট পারসপেকটিভ থেকে দেখবেন, তখন তারা ইকুয়েটমেট করে – শাসন ইজ শাসন। ফলে হচ্ছে যে শাসন তো হলো শাসন, ধরেন তাইলে এইখানে আমরা কেন যাব? ওইটাও শাসন এইটাও শাসন। এখন আপনি যদি আজকের এই যে এই বাকশালি বাংলাদেশ এইটার লগে আপনি হচ্ছে ধরেন সুইডেন বা হচ্ছে ধরেন সুইজারল্যান্ড, বা আপনার হচ্ছে ধরেন নিউজিল্যান্ড, এগুলারে মিলান; এই দুইটা কি এক? ওইটাও তো শাসন, ওইটাও তো রাষ্ট্র। ফলে এই দুইটা এক। তাদের আইডিয়ার যে এক বড় ফ্ল, সেইটা হচ্ছে যে একটা জায়গা থেকে অন্য জায়াগায় কেমনে যায়? যেন বা লাফ দিয়া যায়। এরা বলতেছে যে আপনি এরকম আছেন, ফট কইরা আপনি অন্য রকম হইয়া যাবেন।

এইরকম যে জিনিস, এইটাই তো হচ্ছে টর্চার, তাই না? আপনার যেকোনো একটা সাডেন চেইঞ্জ, এইটা টর্চার না? ধরেন আপনি বেশি খাইতেন, ফ্যামিলির ভিত্রে আপনি বেশি খাইতেন। এখন ফট করে হচ্ছে আপনাকে এক সের থেকে এক ছটাকে নামায়া দিল। আপনাকে ধরেন কমানো দরকার, সেইটা গ্রাজুয়ালি কমাইতে হবে না? আপনাকে তো আসলে এইটা খুন করবে। তাই না? এই যে এই চেইঞ্জটা যে একটা গ্রাজুয়াল প্রসেস, এই জিনিসটা তারা অস্বীকার করে।

সার্টেইন চেইঞ্জ তো হবে না। ওরকম তো হয় না। ইতিহাস ওরকম কাম করে না। এইটা হইলো আমাদের মেনে নিতে হবে।

সিফাত: সবকিছুরই একটা বিল্ড-আপ আছে। বিপ্লব হইলেও সেইটার একটা বিল্ড-আপ আছে।

মনু: ইতিহাস হইলো, গ্রাজুয়ালি একটা জায়গায় যায়। এইটা ধরেন, কতগুলি জিনিস আমি ইউজ করি না, যেমন ধরেন ওই যে বিজ্ঞান সম্মত-টম্মত এইগুলা বলে না? যেমন ধরেন এসেটিসটিক্স দিয়া বলে না যদি মোস্ট প্রভাবলি সবচায়া ভালো বুঝা যায় আর কি। যে এরকম গ্রাজুয়ালি এরকম ওঠে, এর কোনো সার্টেইন কোনো ইয়া নাই, ইতিহাসের এরকম সার্টেইন যে ব্যাপারটা এইটা ওইরকমভাবে নাই।

আমি অনেক সময় একটা মেটাফোর দিয়া অনেক সময় বুঝাই, যে ধরেন, আপনি নদীতে একটা বাঁধ দিছেন, বা হচ্ছে যে একটা ড্যাম্ব—এখন একজন এইটা কাটতেছে, কাটার পরে, ধরেন দুই কোটি কোদালের কোপ লাগবে। লাস্ট যে কোদালের কোপটা দিলেন, তখন তো পানিটা ওই পাশ দিয়া এই পাশে আসল, তাই না? তো তাইলে আপনার বান্ধটা খালি কি ওই লাস্ট কোপটা কাটল? না আগের কোপগুলাও কাটছে? আগের কোপগুলাতে তো পানি আসে নাই, তাই না, পানি বের হয় নাই? ওদের যে চিন্তা, ওরা হচ্ছে, ওই লাস্ট কোপটারে ভাবে, এইটাই হচ্ছে সব, অন্য যে কোপগুলা এইগুলা যেন ঘটে নাই। এখন এই যে দুই কোটি কোপ, এইটা তো গ্রাজুয়ালি লাস্ট কোপে গেছে, এইটা তারা প্রায়শই মিস করে।

সিফাত: মিস করে না, এইটাই আমি বলতে চাইতেছিলাম যে হাইড করে আর কি। বিপ্লবের যে বিল্ডআপ, সেই বিল্ডআপের আবার জন্য নেসেসারি যে জুলুম, সেই জুলুমের পক্ষেও কিন্তু তারা অ্যাডভোকেট করে, অ্যাডভোকেসি আছে তাদের। এইভাবে বিষায়ে যাইতে হবে, তার আগে একটা এইরকমের অবস্থা তৈরি হইতে হবে, যেইখানে মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত হয়া বিপ্লব করতে বাধ্য হইতেছে। এইটাও মেনুফেকচার করতে চায়, এইরকম ধারাও আছে কমুনিস্টদের মধ্যে, বাংলাদেশে সর্বহারাদের মধ্যেও এরকম ধারা ছিল। নকশালদের মধ্যেও এইরকম স্টাইল ছিল।

মনু: ওদের ভিতরে কনসেপ্ট অফ রি-একশনারি, এইটার ভিতর দিয়াও বুঝা যায় আর কি

সিফাত: এই বাকশালি আমলেও, মানুষ তো রক্ত ঝরাইতেছে না যথেষ্ঠ! এত সহজেই কি সরকার ফেলানো যায় নাকি? সরকার ফেলানো এত সহজ না, রক্ত তো পড়তেছে না।

ইমরুল: হ্যাঁ হ্যাঁ, আজব, এইখানে আরেকটা পয়েন্ট আছে, আপনাকে পুলিশ ধরতেছে না কেন! তার মানে আপনি আসলে বাকশালের লোক! মানে, কি পরিমাণ (বাজে) অবস্থা!

তো আমি যদি আলাপটাকে এই জায়গা থেকে দেখি, মানে এই যে ধরেন, খাশ বাংলার পরের কী ঘটনাটা ঘটবে, সেইটা তো আছে জায়গাটা। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, এই জায়গাগুলিকে আসলে কনস্ট্রাকশনের মানে ওই যে কোপগুলি দেওয়ার জায়গাতে যাইতে হবে আর কি। আমরা যেই সময়টাতে আছি, আমি জানি যেহেতু ভাষা নিয়াই আমারে লিখতে হচ্ছে, ভাষা নিয়াই আমারে কাজ করতে হচ্ছে এইখানে লেখালেখির বাইরেও আসলে আমার একটা সার্টেইন পজিশন নিতে হবে। সার্টেইন পজিশনগুলির কনটেক্সটাকে তৈরি করতে হবে। এইটা করতে গেলে দুইটাই আসলে মেইন স্ট্রাগলটা এইখানে।

একটা হচ্ছে যে ওই, এর সাথে তো যেই আলাপটা আমরা আসলে হয়তো ব্যাকগ্রাউন্ডে রাইখা করছি, যে এইটা তো আসলে খুব সোসিও-পলিটিক্যাল ঘটনা। এই যে ধরেন ভাষাটা তৈরি হইলো ফোর্থ উইলিয়ামের। এই যে কলোনিয়াল হ্যাঙওভারের কথাগুলি বলতেছি, এইগুলা তো আসলে জুলুমের রাজনীতির পার্ট আর কি। তো, এইটা তো আসলে এমন না যে কেউ ব্যাকরণ থেকে যে পাবলিকেট ভাষার দিকে যাবে, এইটা তো সহজ জিনিস হয়ে উঠবে না। পলিটিকসের কারণে আসলে আমরা এইটা করতে পারতেছি না বা করাটা টাফ।

সেকেন্ড হচ্ছে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাটা আর কি। ওই যে যেইটা বললাম যে ব্যাকরণটা যদি আমরা বেইজ কইরা রাখি আমরা… এবং থার্ড যে পয়েন্টটা, সেইটা হচ্ছে যে আসলে মনু যেইটা বললেন যে পাবলিক এমনভাবে দেখাইতে চায় যে একটা “স্থিত-অবস্থা” আছে, একটা ব্যাকরণ সম্মত, শুদ্ধ ভাষা আছে, সেইটাকে ভাইঙা একটা এনার্কির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘটনাটা এইটা না।

ওই যেমন ধরেন, আঞ্চলিক ভাষার নাটকগুলি, আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা, আঞ্চলিক শব্দটা, মানে এইখানেই আসলে জিনিসটাকে ভুলভাবে রিপ্রেজেন্ট করা হইতেছে, চিন্তার মধ্যেই। এইখানে খুব ফানি ফানি সব ঘটনা আছে আর কি। যখন পাকিস্তান আমল হইলো, তখনও তো আসলে বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষাটাকে নিজেদের ভাষা দাবি করতে পারে নাই। বাংলা একাডেমি হইছে, কিন্তু ধরেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহরা একটা ডিকশনারি বানাচ্ছে, বাংলা একাডেমি থেকে, ওইটার নাম দিচ্ছে “আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। আপনি চিন্তা করতে পারেন! নিজেদেরকে কি ভাবতেছে!

সিফাত: অইটা হচ্ছে একটা পয়েন্ট অফ ডিপারচারের মতো, যে অইখান থিকা জিনিসটা শুরু হইছে।

ইমরুল: হ্যাঁ, কিন্তু ওইটা শুরু হইছে, আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা শুরু হইছে আঞ্চলিক ভাষার ভেতর দিয়া। যেইটার মেইনস্ট্রিমটা কলোনিয়াল কলকাতাতে আছে।

সিফাত: সবকিছুকে আঞ্চলিক কইরা রাখার যে ফর্মালাইজেশনটা ওইখান থেকেই শুরু হইছে মূলত।

ইমরুল: হ্যাঁ হ্যাঁ, কখন আঞ্চলিকটা হচ্ছে, যখন আপনি সেন্টার হিসাবে ওইটাকে আসলে বাদ দিতে পারতেছেন না আর কি, বা সেন্টারের ধারণাটাকে।

সিফাত: বাকি সবকিছু হইতেছে বিশৃঙ্খলা।

ইমরুল: হ্যাঁ, হ্যাঁ.. আমাদের বাছবিচারের সাইটে যখন কেউ লেখা দেয়, বা কেউ কিছু ট্রান্সলেট কইরা দেয়, তখনও বলে যে আমি তো এইটা প্রমিত ভাষায় করছি, বা এইটা অপ্রমিত ভাষায় করছি। তো তখন আসলে আমি প্রথম প্রথম লোকজনরে বলার চেষ্টা করতাম, আসলে ব্যাপারটা তো এইরকম না যে প্রমিত ভাষা আছে, এর এগেইনেস্টে হচ্ছে আরেকটা অপ্রমিত ভাষা আছে। এই জায়গাটা তো আসলে এখনও তৈরি হয় নাই। আমাদের লেখালেখির মধ্যে তো এইটা নাই। ওই জায়গাটাকে আমরা কন্সট্রাক্ট করার চেষ্টা করতেছি। কিন্তু ওই যে আমি একটা অপ্রমিত ভাষায় লিখছি বা বলতেছিল যে এইখানে সবার ভাষা একইরকম। মানে এই যে ডিফরেন্স আছে, যে ধরেন, মনুর ভাষা, বা আপনার লেখালেখি বা আমার লেখালেখি মধ্যে যে আসরে ডিফরেন্স আছে, এইটাকে আসলে রিকোগনাইজ করতেই রাজি না।

সিফাত: রিকগনাইজ করতেছে না। মানে যারা ওই ভাষায় লিখতেছে, তারা হইলো গিয়া এক রকম, আর যারা প্রমিততে লিখতেছে তারা হইতেছে গিয়া আলাদা আলাদা, “নিজস্ব স্বর” নিয়া আসতেছে, “নিজস্ব ভয়েস” নিয়া আসতেছে, বাকি সবাই হইতেছে, এরা এর মতো লেখে।

ইমরুল: আমি মনে করি যে তিনটা জায়গাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত হাইলাইট করা হচ্ছে বা মানুষ বুঝতে রাজি না হইতেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে সামনে আগানোটা বেশ কঠিন।

সিফাত: আরেকটা জায়গা, যেইটা মনু ভাই এড্রেস করবেন কিনা, বা ইমরুল ভাইয়েরও এই অ্যাড্রেসের জায়গাটায় ল্যাগিং আছে। যেমন এখন যেইটা চলতি ভাষা, এই চলতি ভাষাটার চলতি হইয়া ওঠার পিছনে কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালো রকম কন্ট্রিবিউশন আছে আর কি। তার হিউজ এমাউন্ড অফ প্রোডাকশন এইখানে হেল্প করছে। মানে ওইটারে একদম ভাসায়া দিছে। বাকি সবকিছুরে একেবারে ভাসায়া দিছে। মানে এইটা একটা এস্থেটিক্যাল কন্ট্রিবিউশন।

এই জিনিসটা রিসেন্টলি আমি আরো ভালোভাবে টের পাইতেছি। উর্দু নিয়া যে ইউলোলাইজেশন হইতেছে, একটা প্রশংসামূলক ঘটনা ঘটতেছে, সেইটা দেখবেন উর্দুর একটা ইনহিরেন্ট খুব সুন্দর ভাষা হিসাবে যারা প্রশংসা করতেছে, যারা সুন্দর ভাষা হিসাবে দেখার চেষ্টা করতেছে, এইরকমও দেখছি যে উর্দুর ভেতরেই একটা আলাদা রুহানিয়াত আছে। মানে উর্দু যারা পছন্দ করতেছে তার ভেতরে তারা রুহানিয়াত টাইপের কথা বলে। উর্দু ভাষার ভেতরেই একটা কাব্যিকতা আছে। এই যে ইনহেরেনটলি একটা বিউটিফাই করা, সেইটা কিন্তু বাংলার যেই প্রমিত রূপ যেইটা রঠা হয়া আসছে, সেইটারে নিয়াও করা আছে। অনেকের বর্ণনাতে দেখবেন যে একটু গোল, সুন্দর এস্থেটিক্যালি প্লিজিং, বাংলা ভাষা তো খুব মিষ্টি, বিশেষ করে, বিদেশীরা যারা বাংলা শিখতেছে। তারা কিন্তু বলে বাংলা ভাষা খুব মিষ্টি। তো এই এস্থেটিক যে লড়াইটা এস্থেটিক যে স্ট্রাগলটা এইটা কিন্তু এড্রেস কম করছে মনে হয়।

মানে, যে কারণে আমার কাছে মনে হয় এইটাও একটা কন্ট্রিবিউট করছে, টেলিভিশনের নাটকগুলাতে কিংবা ফিল্মগুলাতে কেন ভিলেনের ভাশা খাশ বাংলা? কারণ খাশ বাংলা তো শুনতেই খারাপ শোনায়। তো এই যে ভাষারে সেইভাবে না দেইখা সেইটার একটা সুন্দরতা কিংবা অসুন্দরতা আরোপ করা এই জায়গাগুলারে আমরা কীভাবে অ্যাড্রেস করতে পারি? এইটা নিয়া কিছু বলার আছে কিনা, ইমরুল ভাইয়ের, বা মনু ভাইয়ের?

মনু: আমি ঢালিউডের দুইটা সিনেমা নিয়া একবার আলাপ তুলছিলাম, নাম দিয়া দিছি, একটা হচ্ছে “ঘাড় ত্যাড়া”। আরেকটা হচ্ছে “খাইছি তোরে”। তো ওইটার ভিতরে আপনি যেইটা বললেন এস্থেটিক যে ইয়ে, এইটা কেমন নাম? আপনি দেখবেন যে ফার্স্ট যে রিঅ্যাকশন, সেইটা হচ্ছে এইটা কেমন নাম? ঘাড় ত্যাড়া, খাইছি তোরে, এইগুলা কী?

মানে এইগুলা হচ্ছে যে অনেকের আফসোস, ঢালিউড আগে কত ভালো ভালো সিনেমা হইতো, এখন কী সব হয়। এইটার এক্সাম্পল হিসাবে কয়, যে এখন নামই হয়, খাইছি তোরে, নামই হইছে ঘাড় তেড়া। এখন ধরেন এই যে ঘাড় ত্যাড়া বা খাইছি তোরে, এই ধরণের যে নেইমিং, এই নেইমিংগুলা যে আসলে ইনহিরেন্টলি কুৎসিত, এইরকম একটা জায়গা; এইটা আসলে বেশ অটোমেটেড। অটোমেটেড মানে কি, এইটা বিউটির যে আইডিয়া, সেটা হচ্ছে যে যা কিছু হচ্ছে ধরেন কোনো একটা ছোট লোকের ছোঁয়া আছে। ছোটলোক মানে হচ্ছে যে গরিবের। গরিব মানে হচ্ছে যে, আমির, গরিব। এইটা একটা মজার জিনিস, বাট বাংলাদেশে আমিরকে বড়লোক ভালোভাবেই বলা যায়। কিন্তু গরিবকে ছোটলোক বলা যায় না। ছোটলোক বললে কি কি জানি হয়! আমিরকে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, বড়লোক।

যাইহোক, আমির এবং গরীব, যা কিছুতেই গরীবের একটা ছোঁয়া সেই জিনিসগুলা মোটামুটি কুৎসিত হয়। সেইটা ধরেন আপনি একদম ফিজিকাল এট্রিবিউট্রস দিয়াই যদি চিন্তা করেন, যে কাজ করা, কাজ কাম করলে কি হয়? হাত পা একটু শক্ত হয়, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই জিনিসটা হচ্ছে যে ধরেন, তার মানেই হচ্ছে যে বিউটি, মানে হচ্ছে ওইখান থেকে বের হওয়া। এখন এই জিনিসগুলা এইটা বলতেছি না যে এইরকম হাতে কড়া কড়ি থাকা সেইটা বিউটিফুল, সেইভাবে দেখতে হবে। পয়েন্ট সেটা না, পয়েন্ট হইলো যে ধরেন এই যে এই ছোটলোক গরিবেরা, এদের যে ল্যাঙ্গুয়েজ, সেই কারণেই এইটা কুৎসিত। এইটা ধরেন ইনহেরেন্টলি কুৎসিত তা না। তাদের এই যে বিউটির যে আইডিয়া, এই আইডিয়ার ভিতরে যে ধরেন যা কিছুর ভিতরে গরিবের ছোঁয়া আছে, সেইটা ইনহেরেন্টলি কুৎসিত।

যে কারণে ধরেন যে বাংলায়, বাংলাদেশে, বা ধরেন হিন্দুস্তানে, যেইখানে আপনার কালা যে কুৎসিত, এইটা কোত্থেকে আসছে? কারণ এইটাও তো ওই পাওয়ারেরই জায়গাটা। যেইখানে হচ্ছে ধরেন, এরা হচ্ছে গরিব। এরা হচ্ছে লোকাল। ফলে এই লোকগুলা হচ্ছে কুৎসিত। ফলে হচ্ছে যে এই রংটা কুৎসিত। এরকমভাবেই তো, এইভাবে ফর্মুলেটেড হইছে। যে এইটা হচ্ছে বিউটিফুল, এইটা হচ্ছে ইয়ে। এবং এইটা হচ্ছে যে ধরেন, লিটারেরি অনেক ডাইমেনশন থাকে, অনেক ওয়ার্ডেই চলে আসে, যেমন ধরেন, কালা কানুন, ধরেন কালোবাজারি, এই যে কালো-টাকা; এই কথাগুলা, এই কথাগুলার দিয়া এই জিনিসগুলা আরো বেশি এস্টাবলিশড হয়। এইটা তো আসলে ধরেন একটা কালেক্টিভ একটা ইয়ে, যেইটা আসলে ধরেন রিলেটেড, যেইটা অনেক সময় টেরই পাওয়া যায় না। অথচ এইটা আসলে ধরেন কোনটা কাকে রি-ইনফোর্স করতেছে, সেইটা মজবুত করে ফেলতেছে, সেইটা একটা দেখাদেখির জায়গা।

ফলে আপনার যে কোশ্চেনটা ওইটা আসলে ওই জায়গায়। যে ধরেন, এইটা যে কুৎসিত, এইটা আসলে ভাবাভাবিটা আছে।

সিফাত: রবীন্দ্রনাথের হিউজ প্রোডাকশন, এইটা একটা কন্ট্রিবিউট করছে…

ইমরুল: এইখানে বলার মত একটা জায়গা আছে, সেইটা হচ্ছে যে আসলে এই যে রবীন্দ্রনাথের প্রচুর ই ছিল, এইটা আমার কাছে আসলে মনে হয় যে অনেক বেশি হচ্ছে লিটারারি যে সাহিত্য-পলিটিকসের জায়গা আছে, যেইটার একটা ঘটনা। রবীন্দ্রনাথের আসলে প্রচুর হিউজ কাজ নাই। বরং হচ্ছে উনার সময়ের যে কাঠামো…

সিফাত: মানে প্রোডাকশন বেশি, কাজটা বেশি…

ইমরুল: না না, প্রোডাকশনের জায়গাতেও, যেমন ধরেন আমি দুইটা উদাহরণ দেই, একটা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সময়ে ভালো যদি গদ্য পড়েন আপনি যদি একদম নাম ছাড়া দেন আর কি; জগদীশ গুপ্তের গল্প দেন আর রবীন্দ্রনাথের গল্প দেন, আপনি দেখবেন যে জগদীশ গুপ্তের গল্প ফার মোর বেটার। কিন্তু হচ্ছে যে জগদীশ গুপ্তের নাম আপনি শুনবেন না। শুনবেন না কেন কারণ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ তাকে দেখতে পারতেন না। তাকে নিয়া দুই-তিনটা খারাপ কথা বলছিল আর কি। পরে তার সাঙ্গপাঙ্গরা সব ক্লিয়ার হয়া গেছে যে না, জগদীশ গুপ্তের কথা বললে বাংলা সাহিত্যে ভাত পাওয়া যাবে না।

আরো কিছু ঘটনা আছে ধরেন, ক্ষিতিমোহন সেন, উনি হচ্ছে যে আসলে গীতাঞ্জলি লেখার আগে হচ্ছে কবিরের যে দোহাগুলি আছে, সেইগুলি বাংলায় অনুবাদ করছিলেন। বাংলায় অনুবাদ করছিলেন উনি গদ্যে। ঠিকাছে, উনি কিন্তু কবিতায় অনুবাদ করেন নাই। তো গদ্য কবিতার কথা যদি বলেন বঙ্কিমের পরে আসলে ক্ষিতিমোহন সেন থাকবে। এইটা অনুবাদের মাধ্যমে শুরু করছেন, কবিরের। আমি উদাহরণটা দেই, কবিরের দোহার সাথে কিন্তু গীতাঞ্জলির মিল পাবেন। কিন্তু কবিরের দোহার হচ্ছে শান্তিনিকেতন থেকে ছাপানোর পরে, তারপর মনে হয় যে ১৯৮০/৯০ এর দিকে গিয়া আরেকবার ছাপা হইছে। ৮০/৯০ বছরে এই জিনিসটা আর ছাপানোই হয় নাই।

আমি যেই কাজটার কথা বলতেছি ওই সময়ের রবীন্দ্রনাথের আগে যে বিশাল সাহিত্য ছিল, তার সময়ের যে একটা সাহিত্য ছিল, তারপরের যে একটা সাহিত্য ছিল, এই জায়গাগুলিকে লুকায়া রাখা হইছে। এইখানে একটা ঘটনা আছে। সেকেন্ড ঘটনা হচ্ছে যে …

সিফাত: লিটারারি কন্ট্রিবিউশনের ওই জায়গাটাতে আমি খুবই একমত।

মনু: ওই সময়টা ধরেন ওই যে মাসিক পেপার পত্রিকা আছে না, এই পেপার, যেইটাকে বলে আর কি ধরেন গোল্ডেন ইরা, হ্যাঁ, পেপার পত্রিকার গোল্ডেন ইরা ছিল ওইটা, ডিটারমাইন্ট করে আর কি। ধরেন আপনার সেকেন্ড হাফ থেকে শুরু; ওই যে নাইনটিন সেঞ্চুরির সেকেন্ড হাফ থেকে শুরু, এইটা হচ্ছে আপনার নাইটিন ফোরটি সেভেন, ইন্ডিপেন্ডেন্সির আগ পর্যন্ত এই টাইমটা ধরেন, আশি বছরের মত এইটাকে আপনি মনে করেন পেপার পত্রিকার ডিকটেট করতেছে।

এইটা ছিল একটা দিক, আরেকটা হচ্ছে ধরেন, বাস্তবে ধরেন আমরা, আপনি যদি ডেমোক্রেটিক পারস্পেকটিভ থেকে চিন্তা করেন তাইলে মনে হয় কি যে একটা জিনিস খুব ডমিনেন্ট না হইলে সেইটা পলিসি হিসাবে এক্সেপ্টেড হয় না। এইটা তো ট্রু, ডেমোক্রেসির বেলায়, কিন্তু এই সময়, মানে ধরেন যখন আসলে ডেমোক্রেসিই নাই, সেরকম একটা সময় ধরেন যে পাওয়ারফুল, সেই পাওয়ারফুল কারো ভাল্লাগছে, এইটাই এনাফ। আমাদের যে ন্যাশনাল এন্থেম, এইটা হইছে কিভাবে, এইটা পাওয়ারফুল দুইজন মানুষের ভালো লাগার কারণে হইছে। আর তো কোনো কারণ নাই। কারণ হইতেছে কন্সটিটিউশন, এই কন্সটিটিউশ এই ফর্মে গেছে কেমনে? ড. কামালরে বলছে যে বানাও, সে হচ্ছে যে ইন্ডিয়ানটারে ধইরা তারপর বানায়া ফেলছে।

ইমরুল: এইখানে সেকেন্ড যে পার্টটাতে আসতেছিলাম। একটা তো হচ্ছে যে ওই যে আশেপাশের হিস্টিরিগুলিরে বাদ দেওয়া হইছে। এর সাথে মনু যেইটা বললেন যে ওইটা হচ্ছে ফ্লারিশিং টাইম। এই ন্যাশনালিজম আসলে বানাইছে কলকাতার পত্রিকাগুলা। মানে এইখানে তো আসলে পাবলিকের এসোসিয়েশনই নাই ওই অর্থে।

আরেকটা সেকেন্ড যেইটা হইতেছে, ওই যে বললেন যে সুন্দর লাগে ভাল্লাগে এই সুন্দর লাগা ভালো লাগাটা আসলে এইটা অনেক বেশি কন্সট্রাক্টেড একটা ঘটনা। আমার পাশের ১০ জন লোক যদি বলে যে না, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওকে সুন্দর লাগতেছে, আমারও কিন্তু বলতে হবে যে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওকে সুন্দর লাগতেছে। সে সুন্দর অসুন্দর সেইটা পরের কথা। কিন্তু কথা হচ্ছে যে যখনি আমার আশেপাশে ১০ জন লোক বলতেছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভাল্লাগে। তখন আমি যদি বলি যে এইটা ভাল্লাগতেছে না, তখন বলবে যে, ও এইখানে পন্ডিতি করতে আসছে! তারে ডিফরেন্ট হইতে হবে এইগুলা বলতেছে।

সিফাত: এইটা তো হইতেছে গিয়া এক জেনারেশনের স্ট্রাগল। আমার মনেহয় দুই-তিন জেনারেশনের পরে আসল ভালো-লাগা শুরু হয়। আসল ভালো-লাগা যখন শুরু হয় তখন গিয়া আসল বিপদটা শুরু হয়।

ইমরুল: হ্যাঁ হ্যাঁ, মানে এইটা যে আপনার ভালো লাগতে হবে, বা এইটারে যে আপনার গালিগালাজ করতে হবে অন্যটারে; এইটা তো আসলে আশপাশ দিয়া অনেক কিছু তৈরি হয়, এইটার স্ট্যান্ডার্ডগুলি। মানে এইখানে একটা জিনিস আছে আর কি। এই কারণে ধরেন বাংলাদেশি সিনেমার গান নিয়া ইন্টারেস্টটা হচ্ছে। আপনি ওই গানগুলিরে বাদ দিতে পারতেছেন না। ওইগুলি কিন্তু ভাল্লাগতেছে। কিন্তু ওই ভাল্লাগাগুলিরে আপনি ফোক-সং বানায়া রাখছেন।

আমি এইখানে আরেকটা যোগ করি, ধরেন যে কবিতার সাথে যেই গীতিকবিতাগুলি আছে, গালিগালাজ কইরা গীতিকবিতারে একদম গান বানায়া দেওয়া হইছে। মানে এইখানে তো আসলে কেটাগরি হিসাবে আপনার কবিতা আছে, গীতিকবিতা আছে, গানের লিরিকসও আছে। আপনার যেইসব গীতিকবিতা আছে সেইটার কিন্তু কোনো প্রিন্টেড ভার্সন পাবেন না। একটারে বানানো হইছে লিখিত-সাহিত্য, আরেকটারে হচ্ছে মৌখিক-সাহিত্য বানানো হইছে। কিন্তু দুইটার মধ্যেই যে আসলে মিলঝুল হইতে পারে, এই জায়গাগুলি নাই। যেইগুলি লিখিত, ওইগুলি হইতেছে মুখের মধ্যে নাই, মুখের যেইগুলি ওইগুলি আবার লিখিত হিসাবে নাই। যেমন ধরেন রাধারমণের গান, বাউল আব্দুল করিমের গান যদি বলেন, বা হাছন রাজার গানগুলি যদি বলেন। এইগুলি কিন্তু রিটেন ফর্মে নাই, এইগুলি আমরা হরফে দেইখা অভ্যস্ত না। এইটা একটা ঝামেলা। মানে এই কারণে যেইগুলি স্পিকিং টুল আছে …

মনু: কিন্তু গীতবিতান পাবেন।

ইমরুল: হ্যাঁ, গীতবিতান পাবেন, ধরেন এইটা লার্জ একটা স্কেল। মানে এইখানে বিশ পঁচিশজন লোক আছেন, যাদের এই মৌখিক জিনিগুলিকে আসলে হরফের সামনে যদি আপনি দেখেন তখন আপনার এই যে সৌন্দর্যবোধের ধারণা… আমি মনে করি আমাদের আসলে এই কাজগুলি করার চেষ্টা করতে হবে।

সিফাত: মনু ভাইয়ের প্রশ্নের জায়গাটাও ওইটাই ছিল, সবাই বুঝি আর কি যে মূলত, সৌন্দর্যের আইডিয়াটাও ফর্মেটেড আইডিয়া। ওইখান থেকে বাইর হব কীভাবে আমরা?

ইমরুল: এস্থেটিকসের জায়গাটা শুধুমাত্র আমি আপনি করলে এইটা তৈরি হবে না। এই যে মূলধারা যেই জায়গাটা, এই যে জায়গাগুলিকে আমরা বাইর কইরা রাখা হইছে, বাউন্ডারির বাইরে ঠেইলা দেওয়া হইছে। ওই জায়গাগুলিকে আসলে ইনক্লুড করতে হবে। ওইগুলি যখন আমরা ইনক্লুসনের ভেতরে একভাবে নিয়া আসব, যখন দেখা যাবে যে আরে এইগুলি তো অনেক আগে থিকাই ছিল।

মানে আমি বলতেছি না যে এইটা আসলে মানে, বাইরা চইলা গেছিল, এখন যেভাবে দেখানো হচ্ছে জায়গাটা ওইরকম না আর কি। আপনি যখন ওইগুলিকে ইনক্লুড করবেন, তখন আপনি পিকচারটা দেখতে পারবেন যে, না, এইখানে তো বেইজ বলে কিছু আছে। যেইটারে আমরা খাশ বাংলা বলতেছি এইটার যে কোনো চর্চা নাই তা না। কিন্তু ওই চর্চাগুলি হচ্ছে ফোক-সং, ওইগুলি হচ্ছে লোকসাহিত্য। আপনি দেখেন বাংলা সাহিত্যের বেইজে যদি আপনি হচ্ছে ময়মনসিং গীতিকা নেন, ময়মনসিং গীতিকা নিলে আর কিছু লাগে? কিন্তু ওইটারে আপনি লোকসাহিত্য বানায়া রাখছেন। ওইটা কলোনিয়াল-সাহিত্য না।

সিফাত: ওই যে বলতেছিলেন যে, শান্তিনিকেতন থেকে ছাপা হইছিল, ছাপা হওয়ার পর হইছে গিয়া ১৯৯০ এর দিকে আবার রিপ্রিন্ট করা হইছে। ময়মনসিংহ গীতিকাটা ছাপায় কারা? ছাপানো কিন্তু এক ধরণের সেন্সরশিপের ঘটনা।

ছাপানোর ঘটনার ভেতর দিয়া সেন্সরশিপের ঘটনাটা কি রকমের হয়, স্বত্ত্ব নিয়া নিল। স্বত্ত্ব নিয়া ছাপাইলো, প্রথম প্রথম ভালো লাগলো। তারপর করবে কি, স্বত্ত্ব নেওয়ার মানে হইছে গিয়া সে এইটা নিয়া আলাপ বন্ধ কইরা দিল। কেউ আলাপ করতেছে না, কারণ হইছে গিয়া এইটা তো এখন শান্তিনিকেতনের প্রোপার্টি। আবার তো ওইখান থেইকা না আসলে আর কিভাবে আলাপে আসবে? আর সেকেন্ড প্রিন্ট তো করবে হইছে গিয়া তার মর্জি মত। আবার ১৯৯০ সালে গিয়া করবে আর কি। এইভাবে কিন্তু সেন্সরশিপ তৈরি কইরা ফেলল। ময়মনসিংহ গীতিকা কেন আমাদের আলোচনায় নাই? কারণ এই গীতিকাটা যারা ছাপাবে, ছাপায় কারা? বাংলা একাডেমি ছাপাবে। বাংলা একাডেমি ছাপায়া আলোচনা করবে না, ওই স্টলে রাইখা দিবে। কে কিনবে? আপনি যদি একটা ট্রেন্ড না তৈরি করেন, সেইটা এখনকার ঘটনা না, সব সময়ের একটা ট্রেন্ড, এইটা তৈরি করবে না তারা। বলবে, আমরা ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতেছি। এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের ভেতর দিয়া, সে ওইটাকে ঢাইকা ফেলল।

ইমরুল: এসথেটিকসটা তো হইতেছে একটা প্রাকটিসের ব্যাপার

সিফাত: সংরক্ষণটা কি করতেছে, আর্কিওলজিক্যাল ঘটনা বানায় দিলো। প্র্যাকটিস থেকে দুরে সরায়া দিলো। আর্কিওলজির দায়িত্ব পালন করল। কিন্তু এইটা তো ভাষা তো এইরকমের না। ওই জিনিসটা ধরে আসছে যে যারা ছাপাইছে টাপাইছে তারা এই জিনিসটা করছে। এইগুলি কারা ছাপাইছে? বাংলা একাডেমিরা ছাপাইছে। কিংবা এই ধরণের লোকজনই ছাপাইছে। আলোচনা থেকে সরায় দিছে।

ইমরুল: মানে, এইখানে একটা কন্ট্রোল মেকানিজম তৈরি হইছে। আমার ধারনা হচ্ছে একটা এসথেটিক্স আছে, ওটা হচ্ছে প্রাকটিসের মধ্যে নাই। ওই প্রাকটিসের জায়গাগুলিতে আসলে বা একটু দেখায়া দেওয়ার জায়গাতে নাই। এইগুলিতে যখন যাওয়া যাবে আমার ধারনা ওই এসথেটিক্সের জায়গাটাতে মানুশ আরো মোর পার্টিসিপেট করবে, জায়গাটা অটোমেটিকালি তৈরি হবে। ইনিশিয়াল ওই যে একবার বাঁধটা বাহিরে গেলে তারপর হচ্ছে যে আপনার হুরমুরায়া পানি ঢোকে এই আরকি।.

সিফাত: আমার কাছে ওইটা জরুরি মনে হয়। একটু সময় লাগলেও ইঞ্জিনিয়ার করার চেয়ে জিনিসটাকে নরমাল থাকতে দেওয়া বেটার। যে এইটা কোথাও না কোথাও গিয়া তৈরি হইতে থাকলো। কন্সিটিউট হইতে থাকলো। কন্সট্রাক হইতে থাকলো নিজের মতো কইরা।

ইমরুল: আমার ধারণা কন্সট্রাক্ট হচ্ছে। মানে আমাদের কাজ হচ্ছে এইগুলিরে হাইলাইট করা, এপ্রিসিয়েট করা। মানে একটু দেখায়া দেওয়া। ওইটাতে যাইতে পারলে…

মনু: ধরেন, পাওয়ারফুল যে স্পেসগুলা, ওই স্পেসগুলা…

সিফাত: তারপর এখানে লাস্টে একটা প্রশ্ন করতে চাই মনু ভাইরে যে তারপরেও কেনো দেরি হইতেছে। এখানে একটা কিকস এন্ড স্টাকস লিপস মানে আটকায়া পরার একটা ব্যাপার আছে। যে সবসময় একটা রেজিস্টেন্সের ভেতর দিয়া যাইতেছে সবসময় একটা স্টার্ট করার মত জায়গায় যাইতেছে তারপর গিয়া আবার স্টপ হইয়া যাইতেছে। এই ঘটনাটা তার মানে সবসময় এইটাকে আমরা কন্টিনিউ রাখতে পারতেছি না। এই জায়গাটা ঘটতেছে। একটা রেজিসটেন্স আছে। একটা রেজিস্টেন্স আছে যেই জায়গা থেকে আমরা জিনিসটারে কন্টিনিউ করতে পারতেছি না। মানে মার্জিনে রাখার একটা ব্যাপার আছে। সেটাও আছে যে হয়ে উঠতেছে। আমরা দেখতেছি যে অবভিয়াস, এটা আমার মনে হয় যে অবভিয়াস বুঝার ব্যাপারটা নতুন না। এইটা আগে থেকেই হইতেছে। অনেকেই ট্রাই করছে কিন্তু তারপরেও হইয়া ওঠে না। যেটা বলতেছিলো যে সেন্টারের বাইরে থাকলে, সার্কেলের বাউন্ডারের বাইরে রাখলে যেটা হয় যারা বাইরের থেকে প্র্যাকটিস করে তাদের তাকতের, সাহসের অভাবও থাকে, সেই চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার।

মনু: এইটা যে অনেক দেরি হচ্ছে সেটা আমার মনে হয় না। যেমন ধরেন আপনার ইতিহাসে এরচাইতে অনেক বেশি বেশি টাইম লাগছে। কিন্তু তার থেকে ইম্পর্টেন্ট যেটা সেটা হচ্ছে যে যতক্ষণ আপনি বেদখলে থাকেন ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে আপনি নাই। মানে আপনি তো তখন মেইনস্ট্রিম হবেন না, যদি নিজেই বেদখলে থাকেন।

এখন আমরা যেহেতু পলিটিক্যালি বেদখলে, পলিটিক্যালি বেদখলে থাকলে ধরেন যারা যারাই হচ্ছে যে আপনাকে টর্চার করবে জুলুম করবে তারাই হচ্ছে আপনার মাথার উপরে বইসা আছে। সেটা একটা বড় কারণ। যেই কারণে আমি বলছি ধরেন ফার্স্ট যে ডেমোক্রেটিক ঘটনা সেটা হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজে। মানে আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ধরেন এই পয়লা কদমটা দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ওই যায়গায়ও যাইতে পারবেন না। আবার ধরেন ওইটা যদি এইমাত্রার, আমরা এখন যেভাবে আছি এইমাত্রার বেদখলে আপনি থাকেন তাইলে হচ্ছে যে এই ল্যাঙ্গুয়েজটাকে আপনি ওই জায়গায় নিতে পারবেন না। এবং পাওয়ারের যে বড় বড় স্পেসগুলা আছে সেই স্পেসগুলা যেই যেই মানুষজনের দখলে সেই দখলটা যতক্ষণ থাকতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এইটা করা মুশকিল।

কিন্তু এতকিছুর পরেও এটা আসলে ধরেন অবভিয়াসলি ঘটতেছে আর কি। যেইটা হচ্ছে ধরেন এইটা ট্রাই করেও আর ঠেকানো যাচ্ছে না পজিটিভ কিছু ঘটনা, যেমন আমি যেটাকে মোস্ট পজিটিভ যে ইগুলা বলি, যেমন ইউটিউব, এটা খুবই পজিটিভ একটা ঘটনা। ফেসবুক, খুবই পজিটিভ একটা ঘটনা। কারণ উইদআউট ফেসবুক আমিই থাকতাম না, আমি হইতাম না। আমি হইলাম যে পুরোপুরি… ধরেন, থ্রু ফেসবুক আমার পয়দা হয়।

ফার্স্ট যেই বড় ঘটনা সেটা হচ্ছে প্রাইভেট টেলিভিশন। প্রাইভেট টেলিভিশন যেটা করছে সেটা হচ্ছে ধরেন আপনার এই কলোনিয়াল কলিকাতায় যে আপনার কনটেন্ট সেইটার প্রডাকশন পুরোপুরি অফ করে দিছে। আপনি এইটিজ এবং নাইনটিজ মানে ধরেন প্রাইভেট টেলিভিশন এই ঘটনাটা। এটা এই জন্যেই বললাম যে পলিটিক্যাল যে ডেমোক্রিটিক জায়গায়, একটা মোটামুটি একটা ডেমোক্রিটিক জায়গা অন্তত ইলেকশন বেইজ একটা জায়গায় যদি যাওয়া না যায় তাইলে যে ঘটনাটা হয়। ধরেন এই প্রাইভেট টেলিভিশন কখন হইছে।

সিফাত: নাইনটি এইটে হইছে, নাইনটি এইটে একুশে টেলিভিশন দিয়ে হইছে।

মনু: ফাস্ট হচ্ছে এটিএন বাংলা মনে হয়, যেটাই হোক…

সিফাত: হ্যাঁ, হ্যাঁ এটিএন বাংলা।

মনু: এই যে ঘটনা ঘটল, তার আগে হচ্ছে যে ডিশ। আগে যেটা ছিল মানে ডিশের ফলে ডিশের সাথে প্রাইভেট টেলিভিশনের, এইগুলার তো একটা যোগাযোগ আছে। যখন হচ্ছে যে এইগুলা হইছে, যখন হচ্ছে ধরেন পাওয়ার ডিরেক্টলি কন্ট্রল করে না, ধরেন বিটিবি ডিরেক্টলি কন্ট্রোল করে পাওয়ার, এটা যখন ডিরেক্টলি কন্ট্রল করে তখন যেটা হইছে যে ওই যে আগের দিন আমরা বলতেছিলাম যে বড় পর্দা থেকে ছোট পর্দার নায়ক নায়িকারা বড় নায়ক নায়িকা হইছে, এটা তো হচ্ছে এরশাদের রেজিমে হইছে, বিটিবিতে। ডিরেক্টলি যখন এটা রেগুলেটেড হয় তখন আপনি দেখবেন ওই ইয়া হচ্ছে যে ধরেন এই যে আফজাল, সুবর্ণা, শম্পারেজা এরা হচ্ছে যে নায়ক নায়িকা। এবং ওই সময়ের যে বিটিভির নাটক সেটা হচ্ছে পুরাপুরি কলোনিয়াল কলিকাতার ব্যাপার।

কিন্তু যখনি হচ্ছে যে এইখান থেকে ছাড় পাইছে, যখনি হচ্ছে যে আপনার গভরনেন্সটা ইনডাইরেক্ট হইছে তখনি হচ্ছে যে কিছু জিনিস আনলিশ করছে। ধরেন আপনার এই প্রাইভেট টেলিভিশন সেইটার পরে এখন আইসা কি হইছে, এর সাথে আবার যোগ হইছে ধরেন ইউটিউব, এর সাথে যোগ হইছে ধরেন এই যে আরো কিছু এই ওটিটি প্লাটফর্ম, এই জিনিসগুলা। ধরেন ফেসবুক, এই জিনিসগুলা যেটা করছে সেটা হচ্ছে যে এই কলোনিয়াল কলিকাতা বাংলার যে ভিজুয়াল, আপনার এই নাটক সিনেমা, এই জিনিসগুলা মোটামুটি বাংলাদেশে এখন ইম্পসিবল হয়ে উঠছে। এটা একটা কনটেন্ট হয় না। আমি যেটা দেখি আরকি। যে এমন কোনোটা পাবেন না যেটা হচ্ছে যে ধরেন ওই এইটিজের আফজাল, সুবর্ণা ওই ফর্মেটে আপনার কলোনিয়াল কলিকাতা বাংলায় হইতেছে। ফলে ধরেন এটা এইরকম হইছে। এখন ধরেন এইটার যখন একটা পলিটিক্যাল ইনভায়রনমেন্ট পাবেন তখন অটোম্যাটিক্যালি এটা হচ্ছে যে ফল করবে।

ধরেন এটা যে আসলে একটা ঠ্যাঙের উপরে দাড়ায় আছে, এই জিনিসটা। আপনি যদি এই হিস্ট্রিতে অন্যান্য ইস্যুর চিন্তা করেন, ধরেন সেই বেদ-টেদ ওই জিনিসগুলা ওইরকম থাইকা থাকে তাইলে ওইযে বামন, ক্ষত্রিয় এদের যেই শাসনটা ছিল, হঠাৎ কইরা একদিন যে নাই হইয়া গেল, ধরেন এইটা আমি একটা জিনিস বলছিলাম যে সংস্কৃত ল্যাঙ্গুয়েজটা দিয়া। সংস্কৃত ল্যাঙ্গুয়েজ কখনো স্পোকেন ছিল কিনা আমি জানি না। মানে এটা কনর্ফাম হওয়ার তো কোনো উপায় নাই। ধরেন এটা তো আসলে সবচেয়ে ইজ্জতের একটা ব্যাপার ছিল। তো তারপরে হঠাৎ করে যে নাই হইয়া গেল, এইটার সাথে হচ্ছে যে পলিটিক্যাল কলাপসের ডিরেক্ট একটা রিলেশন ছিল। যতক্ষণ এই কলাপসটা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত মনে হয় কি এইটা তো আছে, এইটাই। কিন্তু কলাপসের সাথে সাথে এরা অটোম্যাটিক্যালি নাই হয়ে যায়।

ইমরুল: আমি, এইখানে আমি দুইটা জিনিস একটু এড করতে চাই। একটা হচ্ছে যে, যেই কথাটা বললেন সেইটারই একটা সাপ্লিমেন্টারি। যেটা হচ্ছে যে ধরেন আপনি বাংলাদেশি যেই জিনিসগুলি এইগুলি দেখবেন শুরু হইছে উনিশশো ছিয়াত্তর সাতাত্তরের পরে। মানে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট হইলেও আনটিল নাইনটিন সেভেনটি ফাইভ পর্যন্ত বাংলাদেশি জিনিসগুলি কিন্তু আনলিশ হইতে পারে নাই। এটা হইছে যখন হচ্ছে যে আপনার ওই ভোট দেওয়ার ইস্যুটা শুরু হইছে। জিয়ার আমল থেকে শুরু হইছে। তখন দেখবেন যে একসাথে একটা ফ্লাডের মত একটা ঘটনা হইছে আর কি। হিউজ কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, হিউজ সিনেমা হচ্ছে।

মনু: মাঝখানে একটা টিকা দেই। সেটা হচ্ছে যে ধরেন এটা জিয়া বা এদের সাথে একটা ইসের কথা কেউ কেউ বলতে পারে। কিন্তু ইন্টারেস্টিং কিছু ফ্যাক্ট আছে। ফ্যাক্ট হচ্ছে, যারা হচ্ছে পরে বা তখনো ধরেন আওমি-লিগ বা বাকশালের সাথে রিলেটেড সেইসব মানুষও ওই সময়ে আর্ট করছে এবং তারা ওই সময়ে যে ঢাকাইয়া সিনেমা টিনেমা বানাইছে সেই জিনিসগুলা হচ্ছে আগের থেকে কমপ্লিটলি ডিফরেন্ট। এবং ঘুড্ডি সিনেমা যে বানাইছে, পুরা এরশাদ রিজিমে তার আর কোনো কনটেন্ট নাই।

ইমরুল: হ্যাঁ হ্যাঁ, সেইটাই, মানে ওই ইন্ডিপেন্ডেস তো ফিল করে নাই।

এইটা একটা জিনিস, আবার ওই যেটা হচ্ছে যে ওই বৌদ্ধধর্মের ব্যাপারে কিন্তু একই ঘটনা। বৌদ্ধ ধর্ম হচ্ছে যে আসলে খুব রাজা-রাজড়াদের ধর্ম ছিল। যখন ওই রাজারা আসলে চলে গেছে তখন হচ্ছে যে বৌদ্ধ মঠগুলিও ফাইনান্স বন্ধ হয়ে গেছে, শেষ হয়ে গেছে। তো এইটা এর সাথে রিলেটেড যে ভাষা পলিটিক্যাল পাওয়ারের সাথে রিলেটেড একটা ঘটনা, ভাষা-কালচার।

সেকেন্ড যেইটা আমি, আপনি যেইটা বলতেছেন যে আসলে কেনো সময় লাগতেছে, মানে এইখানে আমার কাছে একটা মনে হয় যে কোর একটা ঘটনা। যদিও খুব ট্রেডিশনাল কথা মনে হইতে পারে। এইখানে ফিলোসফিক্যাল যে বেইজটা আছে এইটাকে আমরা এতদিন পর্যন্ত আসলে ক্লিয়ার করতে পারি নাই। বা এখনো খুব বেশি ক্লিয়ার করতে পারতেছি না। আমরা এখন, আমার ধারনা মনু খুব স্পেসিফিক্যালি দুই তিনটা কথা বলছেন, যেটার ওপর আসলে বেইজ করে আগানো যায়।

আর সেকেন্ড ঘটনা হচ্ছে যে, এইটার সাথে রিলেটেড হচ্ছে যে আপনাকে ভাষা বলেন বা কালচার বলেন, যেকোনো আর্ট বলেন সেটা হচ্ছে প্র্যাকটিসের ঘটনা। আমাদের সামনে নমুনা কম, প্র্যাকটিসগুলা কম। এইটা যখন তৈরি হইতে শুরু করবে তখন আসলে ওই জায়গাটা আসলে ফুললি রিভাইভ করতে পারবে। তো ওই আসলে তিনটা ঘটনাই।

একটা হচ্ছে ফিলোসফিক্যাল বেইজটা, ফিলোসফিক্যাল বেইজটা-তে আমরা কথা বলার মধ্যে দিয়ে লেখালেখির মধ্যে দিয়ে যতটা পারি স্পষ্ট করার দরকার আছে; যে ঘটনা হচ্ছে এটা। তো, এইটা একটা জিনিস আর সেকেন্ড হচ্ছে যে আসলে যেই এস্থেটিক জায়গাগুলি আছে, ওই জায়গাগুলি স্পষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। আর থার্ড হচ্ছে যে আসলে এইগুলি প্র্যাকটিসের মধ্যে আনতে হবে।

আমি দেখতেছি যে, অনেকেই আছেন এখন আসলে কোশ্চেন করতে চান জায়গাগুলিরে। তো উনাদেরকে আসলে মানে এনকারেজ করা না। মানে হচ্ছে যে এই যে রাস্তাগুলি আছে সেইটা অন্তত তাদেরকে বলা যে আপনাকে কলোনিয়াল বাংলার মধ্যে আটকায়া থাকতে হবে – তা না;. ইউ ক্যান থিং আদার ওয়াইজ। মানে এইখানে স্পেসটা ওরকম আছে আর কি। মানে আমাদের মতই লিখতে হবে, আমাদের মতই ভাবতে হবে, তা না। কিন্তু আপনি যে যেইখান থেকে ভাবতেছেন, চিন্তা করতেছেন ওইটাকে আপনার কোশ্চেন করেন আরকি। তাইলে আমার ধারনা আমরা যেই জায়গাগুলিতে আসতেছি, কাছাকাছি কোনো জায়গাতেই সবাই রিচ করার কথা, ইন্টেলেকচুয়েলি।

মনু: জিনিসটা হচ্ছে আমাদের করাকরির মামলা না। যদি এইটা আপনি ভাবেন আপনি যা করতেছেন, সেইটা তো আসলে আপনি আরেকজনের মত করতেছেন, এইটা অন্তত নিজে নিজে টের পান আর কি। এইটাই। আর কিছু না। মানে এইটা হইলো সবচেয়ে ইয়ে ঘটনা, করতেছে আরেকজনের মত, কিন্তু ভাবতেছে আমি নিজে নিজে করতেছি! মোস্ট সাকসেসফুল স্কুলিং তো এইটারেই বলে, তাই না?

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →