Main menu

তাহমিদ রহমানের কবিতা

নূরে আলমের পিছে পিছে

আমিও নূরে আলমকে দেখলাম আজকে
(একইভাবে) রাস্তায় দাঁড়ায়ে থাকতে
একটা বাসের ভিতর বন্দি হওয়ার জন্য
অস্থিরভাবে দাঁড়ায়ে আছে
যেই বাসটা তাকে নিয়ে যাবে ক্যাম্পাস পর্যন্ত
ওর বন্ধুদের কাছে

তারপর সে হয়তো একটু হাসতে পারবে
ওদের সাথে বিড়ি টিড়ি খাইতে পারবে
তার অতটা চিন্তা করতে হবে না আর
কারণ বাসের ভিতর
যতক্ষণ বাস চলে
ওর এংজাইটিগুলা রাস্তার ডিভাইডার গুনতে গুনতে
ভুলে থাকতে পারবে সে
আর ওরাও ভুলে থাকতে পারবে ততক্ষণ
কারণ ও জানে
ওদের দেখা হলে
ওরা হাসতে পারবে সত্যি সত্যি
আর বিষয়গুলাকেও এত কঠিন মনে হবে না আর
মেনে নিবে ওরা তো এরকমই
একটু সিরিয়াস, একটু ভ্যাগাবন্ড

তখন আবার বাসে ওঠার মতো শক্তি পাবে
ফেরার পথে ডিভাইডারগুলা থেকে এংজাইটি কুড়ায়ে নিয়ে যাবে
ভাববে জ্যামট্যাম সিগনাল এগুলা তো এরকমই
থাকবে রাস্তায়一রাস্তার নিয়ম

আমার তর সইতেছিলো না আর
তাড়াতাড়ি বাসে উঠে গেলাম
নূরে আলমের পিছে পিছে
I sha’n’t be gone long.—You come too.


ভিনসেন্ট

আত্মহত্যার আগে
ভিনসেন্ট বললেন: আল্লাহ আমার সঙ্গে আমার ছবিগুলিকেও তুমি গ্রহণ করো!
আল্লাহ বললেন: না, ওগুলি জঘন্য, পৃথিবীতেই থাকুক, তুমি একাই চলে আসো।


পথচারী

বইগুলা যেরকম ‘পথচারী’ শব্দটাকে লেখে
যেন তাদের গন্তব্য নাই কোনো
রাস্তার সিনটাকে ফিলাপ করার জন্য শুধু হাঁটতেছে
কিংবা তাদের গন্তব্য আরো দূরে
বোকা বইগুলা জানে না যেটা
আমরাও একদিন হাঁটতেছি সেরকম
লাল মলাটের ময়লা রং ডিকশনারিগুলার
বাইন্ডিং এর ফাটলের মতোন রাস্তার উপর
এমন না যে আমরা শুধু হাঁটতেছিলাম, হাঁটতে হয় বলে
এমন না যে আমাদের জন্য আকর্ষণ ছিলো না কোনো
আমরা ভালোবেসেছি একে অন্যকে,
তার মধ্যে খোদাও ছিলো

ইটের গুড়ার মতোন আমাদের জুতাগুলি
মিশে গেলো রাস্তায়, ফেলে দিলাম
সঙ্গে আর যা কিছু ছিলো, অপ্রয়োজনীয়
চামচ, ব্যাগ, তাবিজ, চিরুনি, কিছু খুচরা পয়সা
কারণ পা ভারী হয়ে আসছিলো আমাদের
হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিলো

তবে এতটাও বন্য ছিলাম না আমরা,
আমাদের কথাগুলা কিছুটা ধারালো হলেও
নখগুলা ছিলো সিভিল করে কাঁটা

এরপর আমরা ভাঙলাম অনেকখানি প্রথা
যদিও প্রতিষ্ঠা করলাম সামান্যই,
অল্পকিছু রীতি
অবশ্য এসব কিছু যতটা টানলো আমাদের
জানি না আর কাউকে ততটা টানলো নাকি

কারণ এসব নিয়ে মাথা ব্যথা ছিলো না আমাদের
আমরা তো মনোযোগী ছিলাম,
অনেকখানি কমিটেড

কিন্তু যখন পথের ফাটল আমাদের দুইভাগ করে দিলো
বিদায় নেয়ার আগে
আমরা হাত ধরে দোয়া করলাম অনেকক্ষণ
আর সান্ত্বনা পেলাম এই ভেবে যে
আমরা তো পথচারী
দূরত্ব পথেরই নিয়ম
এখানে ততটুকুই থাকবো আমরা, যতটুকু থাকবো না
কিন্তু কখনো এই দেয়ালের ছায়ায়,
দেবদারু আর ছাতিমের নিচে
এতসব স্মৃতি আর ভাগ্যের ভিতর
আমরা ভালোবেসেছি একে অন্যকে
দাঁড়িয়েছি আমাদের ছায়ার উপর।


সংক্রমণ

কোয়ারেন্টিনে আছি
তাই যদি বলে
একা থাকাকে।
সেদিন দেবদারু গাছের নিচে
আমাকে সংক্রমিত
করলা তুমি
আমি তোমাকে।


আমারান্তা

আমারান্তা
আমি যখন একটা মনের ভিতর ডুবে যেতে চাই
যেরকম তুমি ডুবে যাও তোমার মনের সাথে
যেন তোমার মনের ভিতর আরেকটা মন আছে

তখন আমার খামতিগুলি খামচায় ধরে আমাকে
যদিও আমি বলে বেড়াই এগুলা আমার অবাধ্যতা
তুমি আদর করে দিলেই শান্ত হয়ে যাবে শয়তানগুলা

কিন্তু আমরা সম্ভবত জেনে গেছিলাম দুজনেই
তাই কাউকে কেউ কিছু বললাম না

আমারান্তা
এখন যদি দুনিয়াটা ছোট হয়ে আসতে আসতে
আমাদের চামড়ার সাথে মেশে
ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলা আঙুলের মতো
তোমার অনেকগুলা মন
কোনো দিন জোড়া লাগবে না আর
ভিনসেন্টের কানের মতোন
এত ভালোবাসা আর বিষে
তুমি কি মিশাতে পারবা তখন
যেই মন ফেনা হয়ে ভাসে
নদী আর স্রোতের উপর—

এখন মেরাজের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতেছে দ্রুত
স্মৃতি আর ভাগ্যের পরিণাম
আর আমরা নিজেদের প্রস্তুত করলাম
জীবনের কাফনে।


অনুলিপি

সুবিধাজনক কিছু ইমোশন
ততটা মলিন না, যতটা উঠে যাওয়া রং
“ততটাও সুখী না, কিন্তু তারও চেয়ে সুখী”
আমি হই নি কখনো

শুধু জানালাগুলা কখনো খুলে যায় হুটহাট
কয়েকটা মৃদু শব্দ পায়চারী করে
আমার রুমের বাইরে, কার্নিশে বারান্দায়

স্যান্ডেলগুলা এখন যদিও তোমার হাতে
আর শক্ত করে বাঁধা চুলগুলা এমন না যে
বাতাস যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে

বালুর আঁকড়ে উঠে দাঁড়ায় আরেকটা দিন
মুছে ফেলা চকবোর্ড থেকে মিহি গুড়া
ছড়িয়ে পড়ে তোমার কাঁধে, ক্ল্যাভিকলে
অমসৃণ চামড়ায়।

তোমার চেয়েও তোমার অনুলিপি ভালো
যতটা আমি আঁকতে পারি দূ-র থেকে।
অন্তত তার আকার আছে,
ছায়া আছে, মানে আলো আছে
আমার এখন সবচেয়ে বেশি যা দরকার।

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

তাহমিদ রহমান

জন্ম ১৯৯৯ এর সেপ্টেম্বরে। বড় হওয়া ঢাকায়। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেন। কবি। অনুবাদক। চাকরীপ্রত্যাশী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →