Main menu

নারী আর ফিকশন – ভার্জিনিয়া উলফ

এই আর্টিকেলের টাইটেলরে দুইভাবে পড়া যায়। টাইটেলটা দেইখা মনে হইতে পারে নারী আর তারা যেসব ফিকশন লিখে এইটা বুঝাইছে, আবার এইটাও মনে হইতে পারে যে নারী আর তাদের নিয়া যে ফিকশন লিখা হয়, এইটা বুঝাইতেছে। ইচ্ছা কইরাই এইটা ক্লিয়ার করতেছি না। কারণ যখন নারী রাইটার নিয়া ডিল করতেছেন, লেখা ওপেনই রাখা উচিত। লেখার শব্দগুলা বা অন্য জিনিস নিয়া ভাবার জন্যও কিছু স্পেস রাখা উচিত, কারণ এই কাজগুলার পিছে এমনসব জিনিসের ইনফ্লুয়েন্স আছে যার সাথে আর্টের কোন সম্পর্কই নাই।

নারীর লেখা নিয়া সবচেয়ে ন্যারো চিন্তাভাবনা অনেকগুলা প্রশ্ন উঠায়। কেন এইটিন্থ সেঞ্চুরির আগে নারীরা টানা লিখে যান নাই? এরপরে কেন পুরুষের মত একটার পর একটা লিখতে শুরু কইরা ইংলিশ ফিকশনের বেশ কিছু ক্লাসিক লিখে ফেলছেন? এইসবের পরে তাদের লেখা কেন, বলতে গেলে এখনো, ফিকশনের রূপ নেয়?

একটু ভাবতে গেলেই টের পাব যে আমরা যা যা জিগাইতেছি, এইগুলার উত্তরে শুধু আরো ফিকশনই পাব। এইগুলার উত্তর এখন পুরান ডায়রিতে, পুরান ড্রয়ারে, বয়স হওয়া মানুষের মেমরিতে ভাসা ভাসা অবস্থায় পাওয়া যাবে। এইগুলার উত্তর পাওয়া যাবে সাধারণ মানুষের লাইফে, বা ইতিহাসের আন্ধার অলিগলিতে, যেইখানে নারীদের একদম অল্প, ভাসাভাসাভাবে দেখানো হইছে। কারণ নারীদের নিয়া খুবই কম জানা যায়। ইংল্যান্ডের হিস্টোরিও পুরুষদের লাইনের হিস্টোরি, নারীদের না। আমাদের বাপদের নিয়া আমরা সবসময়ই কিছু না কিছু বলতে পারি, কোন ফ্যাক্ট বা স্পেশাল কিছু। উনারা আর্মিতে ছিলেন বা নাবিক ছিলেন, অমুক অফিসে ছিলেন, বা তমুক আইন বানাইছেন। কিন্তু আমাদের মা, দাদি-নানিদের কী রইছে? ট্র্যাডিশন ছাড়া কিছুই না। উনি বেশ সুন্দরী ছিলেন, লাল চুল ছিল, একজনরে কুইন চুমু দিছিলেন। আমরা উনাদের নাম, বিয়ার তারিখ, কয়টা বাচ্চা পয়দা করছে এসব বাদে উনাদের নিয়া কিছুই জানি না।

এমনেই, আমরা যদি জানতে চাই যে একটা পার্টিকুলার টাইমে নারী কেন এইটা ওইটা করছে, কেন কিছু লিখে নাই, আবার অন্যদিকে কেন তারা মাস্টারপিস লিখছে- এইটার উত্তর দেয়া চরম মুশকিল। একজন এসব ইতিহাসের দলিল খুঁজতে গেল, তারপর ইতিহাস ছাঁইকা নারীদের নিয়া যেসব কথা ওভারলুক করা হইছে বের কইরা শেক্সপিয়ার, মিল্টন, জনসনের টাইমে সাধারণ নারীদের ডেইলি লাইফের একটা রিয়েল ছবি ফুটায়া তুললো। সে কিন্তু তাইলে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা বই লিখার সাথে ক্রিটিকদের হাতে একটা নতুন অস্ত্র ধরায়া দিলো। এক্সট্রাঅর্ডিনারি নারী অর্ডিনারি নারীর উপর ডিপেন্ড করে। তাদের দিয়াই আমরা জানতে পারি যে একজন নরমাল নারীর লাইফের কী অবস্থা ছিল – কয়টা বাচ্চা ছিল, নিজের টাকাপয়সা ছিল কিনা, নিজের আলাদা রুম ছিল কিনা, ফ্যামিলি চালাইতে কেউ তারে হেল্প করত কিনা, হেল্পিং হ্যান্ড ছিল কিনা, বাসার কাজ করত কিনা। সাধারণ নারীর রিয়েলিটি আর লিমিটেশনগুলা দেখলে এক্সট্রাঅর্ডিনারি নারী রাইটারদের সাক্সেস বা ফেইলিওরের ব্যাখ্যা দেয়া যায়।

এই না থাকাটা একেকটা পিরিয়ডরে আলাদা কইরা দেয় মনে হয়। ক্রাইস্টের জন্মের ছয়শ বছর আগে একটা গ্রিক আইল্যান্ডে স্যাফো আর নারীদের ছোট একটা গ্রুপ কবিতা লিখত। তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না। তারপর ১০০০ সালের দিকে আমরা লেডি মুরাসাকি নামের এক নারীরে পাই যে জাপানে একটা লম্বা সুন্দর নভেল লিখছিল। কিন্তু আবার সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরির ইংল্যান্ডে যখন নাটক লেখক আর কবিরা এক্টিভ ছিল সেই সময়ে নারীরা ডাম্ব ছিল। এলিজাবেথান লিটারেচার পুরাপুরিই ম্যানলি। আবার এইটিন্থ সেঞ্চুরির শেষে, নাইন্টিন্থের শুরুতে আমরা ইংল্যান্ডে নারীরে আবার ঘনঘন সেরা লেখা লিখতে দেখি।

অবশ্যই আইন আর রীতিরেওয়াজ এই সাইলেন্স আর এবসেন্সের জন্য বড়সড়ভাবে রেস্পন্সিবল ছিল। ফিফটিন্থ সেঞ্চুরির একজন নারীর সাথে যা ইচ্ছা তাই করা যাইত, যেমন বাপ-মার পছন্দের পুরুষরে বিয়া না করলে পিটায়া রুমের একদিকে ছুঁইড়া ফালানো হইত – এইসবের মধ্যে থাকলে তো আর আর্ট বাইর হবে না। স্টুয়ার্টদের সময়ের মত যখন নারীরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়া বিয়া করতে হইত, আর হাজবেন্ডরে ‘লর্ড’, ‘মাস্টার’ মানতে হইত, এইটাই পসিবল যে তার লেখার জন্য সময় থাকত না, এনকারেজমেন্টও থাকত না। পরিবেশ আর অন্য মানুষের কথা মনের উপর যে কড়া ইফেক্ট ফেলে, এই সাইকো এনালাইটিকাল যুগে আইসা আমরা এইটা বুঝতে শিখতেছি। আবার চিঠি আর ডায়রির হেল্পে আমরা বুঝতে শিখতেছি যে একটা আর্ট বের করতে হইলে কতখানি এফোর্ট লাগে, আর একজন আর্টিস্টের মনরে কীরকম সাপোর্ট দেয়া লাগে। জন কিটস, টমাস কার্লাইল, গুস্তাভ ফ্লবার্টের জীবন আর চিঠি আমাদের এই ফ্যাক্টগুলা দেখায়া দেয়।

এইভাবেই এইটা ক্লিয়ার যে নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরির ফিকশনের এমন এক্সট্রাঅর্ডিনারি আউটবার্স্টটা হইছে আইন আর রীতিরেওয়াজের অল্পসল্প চেইঞ্জ আনার জন্য। এই সেঞ্চুরির নারীদের কিছু অবসর টাইম ছিল, লেখাপড়া ছিল। শুধু মিডল ক্লাস আর আপার ক্লাসের নারীরা নিজেদের হাজবেন্ড চুজ করতে পারবে এমন ব্যাপার আর ছিল না। এই সময়ের চার গ্রেট নারী নভেলিস্ট – জেন অস্টেন, এমিলি ব্রন্টি, শার্লট ব্রন্টি, জর্জ এলিয়টের মধ্যে একজনেরও বাচ্চাকাচ্চা ছিল না, দুইজন তো আনম্যারিড ছিল।

যদিও বলা যায় যে লেখার উপর ব্যান সরানো হইছিল, তাও নভেল লেখা নিয়া নারীদের উপর একটা ভালোধরণের প্রেশার ছিল। এই চার নারীর মত জিনিয়াস আর পার্সোনালিটিওয়ালা নারী আর কেউ হয় নাই। জেন অস্টেনের জর্জ এলিয়টের সাথে কিছুই কমন নাই, জর্জ এলিয়ট আবার এমিলি ব্রন্টির ডিরেক্ট অপোজিট। তাও উনারা সেইম প্রফেশনের জন্য খাটছেন – যখন উনারা লিখতেন, নভেলই লিখতেন।

তখন নারীদের জন্য ফিকশন ছিল লেখার সবচেয়ে সহজ জিনিস, এখনও এইটা বলা যায়। এইটার কারণ বের করাও মুশকিল কিছু না। নভেল হইলো আর্টের সবচেয়ে ফ্লেক্সিবল ফর্ম। একটা নাটক বা কবিতার চাইতে নভেলরে আরো সহজে শুরু করা যায় বা শেষ করা যায়। বাপের টেক কেয়ার করার জন্য জর্জ এলিয়ট তার কাজ ছাইড়া দিছিল। শার্লট ব্রন্টি আলু ছিলার জন্য তার কলম রাইখা দিছিল। ড্রয়িং রুমে মানুষের চারপাশে বইসা একজন নারী অবজার্ভ করত আর কারেক্টাররে এনালাইসিস করত। সে কবি হওয়ার ট্রেইনিং নিত না, নভেলিস্ট হওয়ার জন্য নিজেরে প্রিপেয়ার করত।

নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরিতেও একজন নারী শুধুমাত্র তার ইমোশনের সাথে বাসায় থাকত। যেসব নারী এই নাইটিন্থ সেঞ্চুরি নভেলগুলা লিখত, অন্য নারীরা এই নারীদের নানারকম এক্সপিরিয়েন্স থেকে বাদ দিত। এই ব্যাপারটা এই নভেলগুলারে ইনফ্লুয়েন্স করছে। পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স যে ফিকশনে ভালো ইনফ্লুয়েন্স হিসাবে কাজ করে এইটা নতুন কইরা বলার কিছু নাই। যদি জোসেফ কনরাড জাহাজে কাজ না করতেন, আমরা উনার নভেলগুলার বেস্ট পার্টগুলা পাইতাম না। সোলজার হিসাবে, একজন টাকাপয়সাওয়ালা এডুকেটেড ইয়াং ম্যান হিসাবে তলস্তয় যা জানতেন ঐসব যদি না থাকত, দেখতেন ওয়ার এন্ড পিস কেমন লো কোয়ালিটির লাগত।
তাও প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস, উদারিং হাইটস, ভিলেট, মিডলমার্চ এমন সব নারী লিখছেন যাদের এক্সপিরিয়েন্স একটা মিডল ক্লাস ড্রয়িং রুম পর্যন্তই লিমিটেড ছিল। যুদ্ধ, জাহাজে থাকা, পলিটিক্স বা বিজনেসের ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স উনাদের জন্য পসিবল ছিল না। এমনকি উনাদের ইমোশনাল লাইফও আইন আর রীতিরেওয়াজই কন্ট্রোল করত। যখন জর্জ এলিয়ট মিস্টার লুইসরে বিয়া না কইরা উনার সাথে থাকতে গেলেন, পাবলিক উনারে ধুইয়া দিছিল। এই প্রেশারে উনি নিজেরে আলাদা কইরা ফেলছিলেন, যেইটার ইফেক্ট উনার কাজের উপর খুবই বাজেভাবে পড়ছিল। উনি লিখছিলেন যে মানুষ যদি নিজে থেকে আইসা উনারে দেখতে না চাইত, উনি কাউরে ডাকতেন না। আবার একই সময় ইউরোপের অন্যদিকে তলস্তয় সোলজার হিসাবে একটা ফ্রি লাইফ কাটাইতেছিলেন – সব ধরণের নারী-পুরুষের সাথে, যেটার জন্য কেউ উনারে কিছুই বলে নাই, যেটার জন্য উনার নভেলগুলা এইরকম স্ট্রং রেঞ্জ কভার করতে পারছে।

কিন্তু নারীদের লেখা এই নভেলগুলা জাস্ট রাইটারের কম এক্সপেরিয়েন্স দিয়াই এফেক্টেড হয় নাই। অন্তত নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরির নভেলগুলা থেকে আরেকটা জিনিস দিয়া রাইটারের জেন্ডার বুঝা যাইত। আমরা যেমন ডিকেন্স পড়তে গেলে উনার কারেক্টারটা ধরতে পারি, মিডলমার্চ আর জেন আয়ার পড়তে গেলে আমরা শুধু রাইটারের কারেক্টারই না, একজন নারীর প্রেজেন্স ধরতে পারি – যে নারী নিজের জেন্ডারের সাথে করা অবিচার নিয়া বিরক্ত, যে নিজের রাইটসের জন্য ফাইট করতেছে। একজন পুরুষের লেখায় এইধরণের জিনিস পাওয়া যাবে না, যদি না সে গরিব হয়, বা মাইনরিটির কেউ হয়, বা কোন ধরণের ডিজাবিলিটিতে ভুগতে থাকা কেউ হয়। এই জিনিসটা লেখাটারে আলাদা কইরা তুলে, সেই সাথে প্রায়ই একটা উইকনেসের কারণ হয়া দাঁড়ায়। কোন কারেক্টাররে নিজের পার্সোনাল দুঃখকষ্ট, রাগের আউটলেট বানাইলে সেইটা সবসময়ই বইয়ে একটা স্ট্রেস ফেলে। রিডারদের তখন মনে হইতে পারে যে তাদের এটেনশন দুইদিকে চইলা যাইতেছে।
জেন অস্টেন আর এমিলি ব্রন্টি এইদিক দিয়া বেশ ইম্প্রেসিভ কারণ উনারা কনফিডেন্টলি ক্রিটিসিজম আর প্রেশার ইগনোর কইরা উনাদের কাজ চালায়া গেছেন। কিন্তু না খেপে কাজ চালানোর জন্য একটা বেশ ঠাণ্ডা আর পাওয়ারফুল মনের দরকার ছিল। নারীরা কিছু লিখলে মানুষজন ওইটা নিয়া হাসাহাসি করত, আজাইরা ক্রিটিসাইজ করত, তাদের কোন না কোন ভাবে ইনফেরিওর ফিল করাইতে চাইত – এইসব থেকে তো ন্যাচারালিই খেপার কথা। শার্লট ব্রন্টির রাগ, জর্জ এলিয়টের লুকায়া যাওয়াতে এইসবের ইফেক্ট বুঝতে পারা যায়। এমন ইফেক্ট কম পরিচিত নারী রাইটারদের কাজেও দেখা যায় – তাদের লেখার সাবজেক্টে, তাদের লেখার মধ্যে দেখানো ওভারকনফিডেন্সে, বা সোসাইটির সাথে অতিরিক্ত তাল মেলানোতে। আনকনশাসলি এই দেখানো ভাবটা চইলা আসে। অথরিটিরে চ্যালেঞ্জ করতে তারা একধরণের ভিউতে চলে। এই আর্টিস্টিক ভিশন হয় অতিরিক্ত ম্যানলি হয়া যায় নাহলে অতিরিক্ত ফেমিনিন হয়া যায় – পারফেক্ট ট্রুথটা হারায়া যায়, সেইসাথে আর্টের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট কোয়ালিটিটাও।

তবে নারীর লেখার মধ্যে যেই চেইঞ্জটা আস্তে আস্তে আসছে সেইটা হইলো এটিচ্যুডের চেইঞ্জ। এখন নারী রাইটাররা আর বিরক্ত না। তারা খেপা না। এখন লেখার সময় সে রিকুয়েস্ট বা প্রোটেস্ট কিছুই করে না। আমরা যদি এতদিনে নাও পৌঁছায়া থাকি, তাও বলতে পারি এমন টাইমের দিকে যাইতেছি যখন তার লেখারে ডিস্টার্ব করার জন্য কোন বাইরের ইনফ্লুয়েন্স থাকবে না। বাইরের ক্যাচাল ছাড়াই সে নিজের ভিশনের উপর ফোকাস করতে পারবে। এইসব বাইরের ক্যাচাল থেকে আগে শুধু জিনিয়াস নারীরাই ডিটাচড থাকতে পারত, এখন অর্ডিনারি নারীরাও এইটা পারে। এইজন্য বলা যায়, পঞ্চাশ-একশ বছর আগের চেয়ে এখন একজন নারীর লেখা এভারেজ নভেল বেশি জেনুইন আর ইন্টারেস্টিং।

কিন্তু এইটা এখনো সত্যি যে একজন নারীর ইচ্ছামত লিখতে যাওয়ার আগেও নানারকম ডিফিকাল্টি ফেস করতে হয়। যেমন টেকনিকাল ডিফিকাল্টি, শুনতে খুব সিম্পল লাগবে, কিন্তু আসলে অনেক বেশি প্যারা। যেমন সেন্টেন্স স্ট্রাকচার ইউজ করতে নারী প্যারা খাইতে পারে। এই সেন্টেন্স স্ট্রাকচারগুলা পুরুষের বানানো – নারীর এক্সপিরিয়েন্স, ভয়েস এই স্ট্রাকচারগুলা ঠিকমত তুইলা ধরতে পারে না, নারীরা ঠিকঠাক এক্সপ্রেস করতে প্যারা খায়। তাও একটা বড়সড় নভেলে, একটা সিম্পল নরমাল সেন্টেন্স একজন রিডাররে খুব সহজেই শুরু থেকে শেষে নিয়া যাইতে পারে। একজন নারীরে নিজের রাইটিং স্টাইল বানায়া নিতে হবে, সেন্টেন্স এমনে গুছাইতে হবে যাতে সে নিজের চিন্তাভাবনারে কোনরকম চেইঞ্জ না কইরা এক্সপ্রেস করতে পারে।

কিন্তু এইটা তো শেষ পর্যন্ত যাওয়ার একটা তরিকা- আর এই শেষের দিকে তখনই যাওয়া যাবে যখন নারীর অপোজিশনরে কাটায়া যাওয়ার সাহস আর নিজের প্রতি ট্রু থাকার জেদ আসবে। নভেল তো আফটার অল হাজারটা আলাদা জিনিস নিয়া একটা স্টেটমেন্ট – হিউম্যান, নেচারাল বা স্পিরিচুয়াল। নভেল এইসবরে একটা আরেকটার সাথে রিলেট করার চেষ্টা করে। রাইটারের ভিশনের পাওয়ারে প্রত্যেক নভেলে এই আলাদা আলাদা জিনিস একেকভাবে আসে। কিন্তু তাদের আরেকটা ব্যাপার মানতে হয় – সোসাইটির নিয়মকানুন। পুরুষ যেহেতু এই নিয়মকানুন বানাইছে, ফিকশনেও তাদের এই ডমিনান্সটা চইলা আসে, কারণ ফিকশন তো বড়সড়ভাবেই লাইফের উপর বেইজ করা।

যাইহোক, এইটাও হইতে পারে যে লাইফ আর আর্ট দুই জায়গায়ই নারীর বিলিফ আর পুরুষের বিলিফ এক না। তো নারী যখন নভেল লিখতে যাবে, দেখবে যে সে অলরেডি সমাজের এসব বিলিফরে বদলানোর ইচ্ছা রাখতেছে – যেইটা পুরুষের কাছে বেইল পায় না, সেইটারে বড় কইরা দেখাবে, আর যেইটা ইম্পর্টেন্ট, সেইটারে কোন পাত্তা দিবে না। এইটার জন্য অবশ্যই তারে ক্রিটিসাইজ করা হবে, কারণ অপোজিট সেক্সের ক্রিটিক এই বিলিফ চেইঞ্জের চেষ্টা দেইখা জেনুইনলি কনফিউজড আর সারপ্রাইজড হয়া যাবে। এইটারে সে মতের অমিল হিসাবে না দেইখা একটা দুর্বল, আনইম্পর্ট্যান্ট বা সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার হিসাবে দেখবে, কারণ এই মত তার সাথে মিলে না।

কিন্তু এখানেও নারীরা অপিনিয়ন নিয়া আরো ইন্ডিপেন্ডেন্ট হইতেছে। তারা নিজেদের বিলিফের সেন্সরে রেসপেক্ট করা শুরু করছে। এই কারণে তাদের নভেলের সাবজেক্ট ম্যাটারও আস্তে আস্তে নানান ধরণের চেইঞ্জ দেখাইতেছে। মনে হবে তারা নিজেদেরকে নিয়া কম ইন্টারেস্টেড, কিন্তু অন্য নারী নিয়া বেশি ইন্টারেস্টেড। নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরির শুরুর দিকে নারীদের নভেলগুলা বেশিরভাগই অটোবায়োগ্রাফিকাল ছিল। তখন নারীদের লেখালেখির একটা মোটিভ ছিল নিজেদের সাফারিং এক্সপোজ করা, নিজেদের রাইটস নিয়া কথা বলা। এখন যখন এই খায়েশ এত আর্জেন্ট না, নারীরা নিজেদের জেন্ডার নিয়া এক্সপ্লোর করা শুরু করছে, নারীদের নিয়া নতুন কইরা লেখা শুরু করছে, কারণ এই কিছুদিন আগ পর্যন্তও লিটারেচারের নারী কারেক্টারগুলাও পুরুষের ক্রিয়েশন ছিল।

এই সিচুয়েশনের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। জেনেরালি বললে, নারীরা তাদের জীবন নিয়া পুরুষের তুলনায় প্রাইভেট থাকে, আর নরমাল লাইফ এক্সপিরিয়েন্সে পুরুষদের লাইফ নিয়া যেমন কড়া ক্রিটিসিজম বা জাজ করা হয়া থাকে, নারীদের সাথে সেইটা হয় না। অনেকসময় নারীদের ডেইলি লাইফের কোন সলিড এভিডেন্সও থাকে না। যেই খাবার রান্ধে সেইটা খাওয়া হয়া যায়। যেই বাচ্চাদের পালে তারা বড় হয়া দূরে চইলা যায়। তো নভেলিস্ট এদের লাইফের কোন পয়েন্টে ফোকাসটা করবে? বলা তো খুবই টাফ। তার জীবন আনক্লিয়ার, কনফিউজিং। এই প্রথমবার এই ব্যাপারটা ফিকশনে এক্সপ্লোর করা হইতেছে। সেই সাথে নারী রাইটারদের এইটাও নোট করতে হইতেছে যে এখন যখন নারীরা বাইরে কাজ করতে পারতেছে, তাদের চিন্তাভাবনা আর হ্যাবিটগুলা কেমনে চেইঞ্জ হইতেছে। নারীদের জীবন যখন আরো পাবলিক হইতেছে, রাইটারদের এখন নারীর মধ্যে আরো নতুন দিকগুলা দেখানো লাগবে – কেমনে নারীরা বাইরের দুনিয়া আর বাসার মধ্যে আলাদাভাবে এক্ট করে।

এখন প্রেজেন্ট মোমেন্টে নারীদের ফিকশনের কথা যদি গুছায়া বলা লাগে, আমি বলব এইটা বেশ ব্রেভ, এইটা অনেস্ট, নারীরা যা ফিল করে ওইটার কাছাকাছি কথাই বলে। এইটা কড়া না। ফেমিনিন হওয়া নিয়া জোরজবরদস্তি করে না। আবার একই সাথে একজন পুরুষ যেভাবে লিখত নারী সেইভাবে নারীদের নিয়া বই লিখে না। এই কোয়ালিটিগুলা আগের চেয়ে বেশ কমন হয়া দাঁড়াইছে, এমনকি কম পরিচিত রাইটারদের কাজেও এই ট্রুথ আর অনেস্টির ব্যাপারটা চইলা আসে।

কিন্তু এইসব ভালো কোয়ালিটির সাথে আরো দুইটা কোয়ালিটি নিয়া আলাপ উঠে। যেই চেইঞ্জ ইংলিশ নারীরে সাইলেন্ট কারেক্টার থেকে একজন ভোটার, কামাই করা ওয়ার্কার, রেস্পন্সিবল সিটিজেন বানাইছে, এই চেইঞ্জ তাদের লাইফ আর তাদের আর্টরেও ইনফ্লুয়েন্স করছে। এই চেইঞ্জ তাদেরকে অন্যান্য ব্যাপারে ফোকাস করাইছে। নারীর সম্পর্কগুলা এখন শুধু ইমোশনাল না, ওইগুলা ইন্টেলেকচুয়াল, ওইগুলা পলিটিকাল। আগে নারী যখন বিভিন্ন জিনিস নিয়া প্রশ্ন করত, তার হাজব্যান্ড বা ভাই সেইটা নিয়া তারে ঝাড়ত, বকত, কিন্তু এখন এই পুরান সিস্টেম আর নাই। এখন নারী প্র্যাকটিকাল ব্যাপারে ডিরেক্টলি অংশ নেয়, নিজের ডিসিশন নিজে নেয়। এইজন্য আগের নভেলগুলাতে নারীর যেমন একটা ‘পার্সোনাল’ বা প্রাইভেট ভাব ছিল, এখন সেইটা অন্যান্য ব্যাপারে চইলা গেছে। তাই নারীর লেখা নভেলগুলা এখন পার্সোনাল লাইফ নিয়া কম, সোসাইটি নিয়া বেশি ক্রিটিকাল।

এতদিন যে পুরুষ একচেটিয়াভাবে রাষ্ট্রের ক্রিটিসিজম করছে, আমরা আশা করতে পারি যে এখন থেকে নারীরাও তা করবে। তাদের নভেলগুলা সোসাইটির খারাপ দিক তুইলা ধরবে, কেমনে তা থেকে পার পাওয়া যায় সেইটা তুইলা ধরবে। নভেলের নারী-পুরুষ কারেক্টারগুলার শুধু ইমোশনাল সম্পর্ক তুইলা না ধইরা তাদের মধ্যে গ্রুপ, ক্লাস, রেইস নিয়া মারামারি-কাটাকাটি দেখাবে। এইটা একটা ইম্পর্ট্যান্ট চেইঞ্জ। কিন্তু যারা ক্রিটিসিজমের চাইতে এস্থেটিক ব্যাপার পছন্দ করে তাদের জন্য আরেকটা ব্যাপার ইন্টারেস্টিং। নারীরা যে পার্সোনাল লাইফের বাইরেও অন্য ব্যাপার নিয়া ইন্টারেস্ট দেখাইতেছে, এই জিনিসটা পোয়েটিক স্পিরিটরে সাপোর্ট দিবে। নারীর ফিকশন এখনো সবচেয়ে দুর্বল পোয়েট্রিতেই। নারী এখন পার্সোনাল লাইফের ছোট ছোট ডিটেইলসে কম মনোযোগ দিবে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট এসব ডিটেইল লিইখা তারা স্যাটিসফাইড থাকবে না। এর চেয়ে তারা পার্সোনাল আর পলিটিকাল রিলেশনশিপ ছাড়ায়া আরো বড় কিছুর দিকে ফোকাস করবে, কবিরা যেমন করে, ধরেন লাইফের মিনিং বা আমাদের কিসমত নিয়া।

এই পোয়েটিক এটিচ্যুড বেশিরভাগ ম্যাটেরিয়াল জিনিসের উপর বেইজ কইরা আসে। ফ্রি টাইম, হালকা টাকাপয়সা, আর এই দুইটা মিলে যে চান্সটা দেয় যেইটা দিয়া এমন নিউট্রালভাবে সবকিছু দেখা যায় – এইসবের উপর এই এটিচুড ডিপেন্ড করে। টাকাপয়সা আর ফ্রি টাইম থাকলে নারীরা আগের চেয়ে বেশি লেখালেখি করতে পারবে। তাদের টেকনিক আরো বোল্ড হবে, আরো ভালো হবে।
একটা পাখি যেমন নিজে থেকেই গান গায়, মন থেকে – তেমনি আগে মন থেকে আসা জেনুইন এক্সপ্রেশনের জন্য নারীদের লেখার তারিফ করা হইত। এই জিনিসটা তাদের শেখানো লাগে নাই, এইটা নিজে থেকেই আসত। কিন্তু এইটা আবার বেশিরভাগ সময় হুদা প্যাচাল লাগত – কাগজে কিছু মিনিংলেস কথা ছাপায়া কালি শুকাইতে দেয়ার মত। ফিউচারে নারীর যখন টাইম থাকবে, বইয়ের একসেস থাকবে, আর বাসায় নিজের জন্য একটা ছোট কর্নার থাকবে, তখন তারা পুরুষদের মতই লিটারেচার নিয়া পড়াশোনা করতে পারবে। নারীদের টেলেন্ট আরো প্রাকটিস করা হবে। তখন আর নভেলরে ডায়রির মত পার্সোনাল ইমোশন লেখার জায়গা বানানো হবে না। তখন নভেলও এক প্রকার আর্ট হবে, আর নারীরাও নভেলের পসিবিলিটি আর লিমিটেশন ঘাটায়া দেখবে।

এইখান থেকে নারীরা লেখালেখির আরো কমপ্লেক্স ফর্ম প্রাকটিস করা শুরু করবে, যেমন এসে, ক্রিটিসিজম, হিস্টোরি, বায়োগ্রাফি, যেগুলা আগে তারা তেমন একটা করে নাই। এই চেইঞ্জটা নভেলের জন্যও ভালো হবে। রাইটিং যত ডাইভার্স হবে নভেলের কোয়ালিটি তত ভালো হবে, সেইসাথে যারা ফিকশন তেমন একটা পড়ে না তারাও নভেল পড়তে ইন্টারেস্টেড হবে। নভেলে যে আননেসেসারি হিস্টোরি আর ফ্যাক্ট ঢুকায়া নভেলের ফর্মটা নষ্ট কইরা দেয় এই জিনিসটাও কমবে।

তো আমরা যদি ফিউচারের কথা আগেই বলতে যাই, নারী তখন নভেল কম লিখবে, কিন্তু বেটার লিখবে। আর শুধু নভেলই লিখবে না, পোয়েট্রি, ক্রিটিসিজম, হিস্টোরিও লিখবে। তাই আমি আশা করতেছি নারীরা এতদিন যা পায়নি, তখন পাবে – ফ্রি টাইম, টাকাপয়সা আর নিজের জায়গা।

[ফোরাম, নিউ ইয়র্ক, মার্চ ১৯২৯]

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রপকথা নাওয়ার

জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →