খলিফা হইয়া ওঠা
- রাজনিতির দাগ খতিয়ান: বাকশাল-দুছরা বিপ্লব এবং তার পর
- এস্টে কিরিয়েটিভ
- এডিটোরিয়াল: শ্যামলা এরিয়া
- মানুশ
- মাইনোরিটি লইয়া রকম শাহের বয়ান
- গনতন্ত্রের বুনিয়াদি ঘাপলা
- মারেফতি শাশন
- ইনছাফের পুলছেরাত অথবা ওয়াকিং অন দ্য এজ অব জাস্টিস
- বেক্তি বনাম শমাজ বনাম রাশ্টো
- বাপের জুলুম এবং জাতির আব্বারা
- খলিফা হইয়া ওঠা
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি
বহুদিন ধইরাই আমি ভাবি, বাংলায়, অন্তত বরিশালের দখিনে খলিফার অর্থ কেমনে দর্জি হইলো!? ঠিক ঠিক জবাব পাই নাই এখনো, তবে একটা আন্দাজ পয়দা হইছে মনে।
পটুয়াখালির মির্জাগন্জে ইয়ারউদ্দিন খলিফার দরগা আছে [শারা দেশের ঐটার দানবাকশো দেখেন খুব শম্ভব]। কতো বছর আগে উনি কই থিকা আশছেন বা কবে ওফাত হইছে ওনার জানি না, কিন্তু ওনার ব্যাপারে লোকের মুখের কাহিনি হইলো, উনি কাপড় শেলাই কইরা জিন্দেগি চালাবার কামাই করতেন।
খাইবারপাছের পুবে শেলাই করা কাপড়ের ইতিহাশ বেশি পুরানা না, এইটা খুব শম্ভব ইরানের লোকেরা লইয়া আশছিলেন পয়লা; তবে ততোদিনে ইরানের লোকেরা মোছলমান হইছে এবং ইরানের লোকেরাও খাইবারপাছের পুবের আমজনতার কাছে আরবের লোকই মোটামুটি। ফলে, শেলাই ব্যাপারটা একটা কালচারাল রেভলুশনও এইদিকে এবং শেলাইতে মুন্সি (এক্সপার্ট) তো ততো আছিলো না শেই জামানায়!
তো, আন্দাজ করি, এই জে ইয়ারউদ্দিন খলিফা, জিনি শেলাই করতেন এবং শেলাই তখন খুব কমন ঘটনা না হবার কারনে খলিফা আর শেলাইয়ের কামের অর্থ ছেম ছেম হইয়া পড়ে।
এই ব্যাপারটার পক্ষে আরেকটা ঘটনাও শুনছি আমি; এইটা আমার দাদা, মানে আমার বাপের বাপের ব্যাপারে। আমার বাপে বেশিদিন না বাচলেও আমাদের জেনারেশন বেশ লম্বা, দাদার ৬৩ বছর বয়শে আমার বাপ পয়দা হইছে, আমার দাদার জনম শেই ১৮৭৫ শালে! তো, দাদার বাপের নাম আছিলো ‘কমর আলি হাওলাদার’, শেইখান থিকা ছামহাউ দাদার নাম হইলো ‘ইবরাহিম খলিফা’! আমার গেরামের বুইড়াদের কাছে শুনছি, দাদার একটা ছাতা আছিলো, শেইটা ফুটা হইতো, আর দাদা শেইখানে পট্টি লাগাইতো; এইভাবে কয় বছর পরে অর্জিনাল ছাতাটা পুরাই নাই হইয়া গেলো, রঙ-বেরঙের পট্টি মারা একটা বাহারি ছাতা হইয়া উঠলো! এই কারনে লোকে তারে ‘খলিফা’ ডাকা শুরু করছিলো!
এখন এইখানে, দুই জনের বেলাতেই একটা ছাবটেক্সট বা তলের কথা আছে! শেলাই কইরা জেমন খাইতে হইতো না ইয়ারউদ্দিন খলিফার, উনি চাইলে তো পেরায় শেখ হাসিনার মতোই আরামে থাকতে পারতেন, তেমনি আমার দাদাও মোটামুটি ধনিই আছিলেন, কিপটাও আছিলেন না, তাইলে ওনাদের শেলাইয়ের অর্থ কি আশলে!
এই ব্যাপারটা বুঝতে শেই খলিফা উমর ইবনে খাত্তাবের একটা ঘটনা টানি। গত দুয়েক বছরের ভিতর ইউটিউবে এক বয়াতির বয়ানে খলিফা উমর ইবনে খাত্তাবের ব্যাপারে শুনছিলাম মনে পড়ে; তার আমলে জেরুজালেম ঘিরে রাখছে মোছলমানরা, ভিতরের খিরিস্টান রাজা কইলো, আমরা ছারেন্ডার করবো, কিন্তু ডাইরেক খলিফার কাছে করবো। খলিফা উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে শেই খবর গেলে উনি জেরুজালেমের দিকে রওনা হইলেন।
ওনারে রিছিভ করতে বাইর হইলো জেরুজালেমের রাজা, বাইরায়া দ্যাখে উটের পিঠে একজন বশা, আরেকজন উটের গলায় লাগানো দড়ি ধইরা হাইটা আশতেছে; রাজা উটের পিঠে বশা লোকটারে খলিফা ধইরা কথা কইতে গেলো; তখন উটের পিঠের লোকটা শামনে দড়ি ধরা লোকটারে দেখাইয়া কইলো, ‘খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব উনি।’। খিরিস্টান রাজারে টাশকি খাইতে দেইখা খলিফা উমর কইলেন, আমরা পালা কইরা একজন উটের পিঠে, আরেকজন দড়ি ধইরা হাটছি মরুজমিনে, এখন আমার পালা ছিলো দড়ি ধরার।
জেরুজালেমের ইতিহাশ আর না বাড়াই, বরং খলিফা উমর ইবনে খাত্তাবের ঐ ঘটনার ভিতর খলিফা শব্দের অর্থের ইশারা খুজি। খলিফা মানে ভোগের বাশনা আর দেমাগি বড়াই ছাইড়া দেওয়া লোক, একজন দরবেশ, অন্তত বাংলার আমজনতার কাছে, মোছলমান-হিন্দু-বোশ্টম-বৌদ্ধ, শবার কাছেই তিনি একজন শাদাশিদা দরবেশ, জিনি নিজেও ইনছাফের জেনারেল কানুনের অধিন, উপরের কেউ না।
আরবি এবং ইছলামের বুজুর্গ-আলেম-মুফতি জারা আছেন দেশে, তারা ‘খলিফা’ বলতে জা কিছু বোঝেন, আমজনতা তাতে একিন করেন আলবত, কিন্তু ঐ একিনের অর্থ আমজনতার কাছে এমন জে, খলিফা হইলেন তাদের ভরশার জমিন, জেইখানে তারা খোদ নিজেদেরই আমানত হিশাবে রাখতে পারে। এমনকি জেরুজালেমের শেই রাজাও খলিফায় ভরশা কইরা উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে জেরুজালেমের তাবত খিরিস্টানকে আমানত হিশাবেই জমা দিতেছে! খলিফাও শেই আমানতের এক চুলও খেয়ানত করেন নাই।
এখন খেয়াল করেন, আমি নাগরিক, আমি জার কাছে আমারে আমানত হিশাবে রাখি, শে তো আমার উকিলও, মানে রিপ্রেজেন্টেটিভ, পোতিনিধি, ডেলিগেট। খলিফা তাইলে এমন কেউ হইয়া ওঠা, জার উপর ভরশা করতে পারি আমি, ভরশা কইরা জারে আমার উকিল/ডেলিগেট হিশাবে মাইনা নেই, মানে তার কাছে বায়াত দিতেছি। এবং আমি জাতে আরামেই, মনখুশিতে আমার বায়াত দিতে পারি, একজন খলিফা তেমন কেউ হইয়া উঠতে চাইবেন, তার মনজিলে মকছুদ হইলো আমার কবুলিয়ত পাওয়া।
এখন বায়াত কেমনে দিবো, শকল জামানায় এইটার ফর্ম কি একই কিছিমের, আমি কি আমার পুরাটাই একজনের কাছে আমানত দিবো, নাকি কিছুটা কইরা কয়েক জনের কাছে দিবো? খেয়াল করলে দেখবেন, জুগের লগে লগে, টেকনোলজিকেল পরিবর্তনের লগে লগে এইটা পাল্টাইতে পারে। মর্ডান ছাপাখানা ইহিতাশে হাজির হবার আগে এখনকার দিনের জেনারেল ইলেকশন করা ছিলো অশম্ভব; তার লগে আছে কমুনিকেশন, রাস্তা-গাড়ি, ইস্টিম-ইন্জিন। এই জামানায় এইটা আরো শোজা হইয়া উঠছে ইন্টারনেটের ভিতর দিয়া।
এই কারনে আমার আন্দাজ হইলো, মর্ডান ইলেকশন হইলো মানুশের বায়াত পাবার/দেবার/নেবার এখনকার ফর্ম, টেকনোলজির কারনে জামানার বদলের ফল। এবং আমরা জাদের ইলেক্ট করি, তারা আমাদের খলিফাই আশলে।
ওদিকে, জামানার বদল মানে তো ডিভিশন অব লেবারও বাইড়া জাওয়া, উটের বদলে এখন জদি এয়ারে কোথাও জান খলিফা, তিনি কি পাইলটকে উঠাইয়া দিয়া নিজে কতখন পেলেন চালাবে? ঠিক হবে শেইটা!? তেমনি শাশনেরও অনেকগুলা ভাগ হইছে, ডিফরেন্ট শমাজে ডিফরেন্ট জামানায়, ডিফরেন্ট কেরাইমে/ঘটনায় একই মর্মেরই ডিফরেন্ট আইন হবার কথা; এইগুলা তো কোন একজনের পক্ষে শামাল দেওয়া জায় না আর! তাই কাজি একজন, ইমাম আরেকজন, বিদেশে জাইয়া চুক্তি করে আরেকজন; ফলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন লোকের কাছে বায়াত দেই, তারা শকলেই আমাদের পোতিনিধি। ইলেকশনের বাইরেও আমরা বাছাই করি, হয়তো পিরের কাছে জাইয়া বায়াত দেই, আমাদের মুর্শিদ বানাই, খোদার রহমত আর খুশি পাবার শবচে ভারো তরিকা খুজতে খুজতে আমরা হয়তো কোন মুফতিকে আমাদের মুর্শিদ বানাইলাম, তিনিও আমাদের খলিফা।
বাংলাদেশে এখন জেই আইন-কানুনগুলা আছে, তা মোটামুটি ইংরাজের বানানো আইনের উপরই খাড়াইয়া আছে; খেয়াল করার ব্যাপার হইলো, ইংরাজ কলোনিয়াল মাশ্টাররা কলোনির নাগরিক হিন্দু-মোছলমানদের রিলিজিয়াছ ছেন্টিমেন্টের লগে খাপ খাওয়ানো আইন করার ফিকিরই করতো! শেই কারনেই তারা পয়শা দিয়া পন্ডিত আর মুনশি পালতো। পরে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ হবার পরের আইনকানুনও মোছলমান বা হিন্দুদের ধর্মিয় দাবিদাওয়া হিশাবে নিয়াই করা হইছে; ইছলামবিরোধি আইন না করার কছম খাইতেও দেখা গেছে বাংলাদেশের শাশকদের।
আরেকটু খেয়াল করলে দেখবেন, দুনিয়ার পেরায় শকল রাশ্টোই আশলে আস্তিকদের রাশ্টো, বাংলাদেশও তাই; বাংলাদেশ রাশ্টের কায়কারবারেও হরদম আল্লা-খোদা হাজির, পলিটিশিয়ানদের বয়ানেও।
ছো, আমার হিশাবে, আমরা আশলে খিলাফতের ভিতরেই আছি! ইছলামের কেলাছিকেল খিলাফতে কয় বছর পরেই দেখা গেলো, মোছলমান নাগরিক মাত্র ১০/১৫%, বেশিরভাগ খিরিস্টান; কেননা, জোর কইরা মোছলমান বানানো শেই খিলাফতের এজেন্ডা আছিলো না, কিন্তু তারা খিরিস্টান রাজাদের থিকাও বেটার ইনছাফ দিছে খিরিস্টানদেরো, কেননা, ইনছাফ কায়েম করাই আছিলো খলিফাদের পয়লা এজেন্ডা!
আমি তাই বাংলাদেশে নজর দেবার ব্যাপার ভাবি শেই শব ঘটনাগুলায় জেইখানে ইনছাফের খেলাপ হইতেছে; জেমন ধরেন, জনগন তার খলিফা ইলেক্ট/বাছাই করতে পারে নাই কতো বছর, হাসিনা আর আওমি লিগ/বাকশাল দখল কইরা রাখছিলো বাংলাদেশটারে, এইটা ইনছাফের খেলাপ; হাসিনা জেই আইন-কানুন বানাইছে (জেমন DSA), তাতে ইনছাফের খেলাপ হইছে, কোরোছফায়ার আরেকটা খেলাপ; নিজেরেই উনি গনভবন দিয়া দিলেন, এইটা ডাইরেক খেয়ানত, তাই খেলাপ; দেশে গরিবের থাকার জমিন নাই, খাইতে পায় না, শেইখানে ছামিট-এছ.আলম দেশের পয়শা মাইরা দিছে, পাচার করছে, এইগুলা খেলাপ; দেশের শকল শম্পদ হয়তো ৫% নাগরিকের হাতে, এইটা খেলাপ।
মোটের উপর আমাদের বাহাছ করতে হবে এইখানে জে, ইনছাফ বলতে কি বুঝবো আমরা? কোন একটা পয়েন্টে একমত হইয়া শান্তিচুক্তির ভিতর দিয়া শেই ইনছাফ কায়েম করতে হবে আমাদের। তার বাইরে, দেশের হেড, জেমন পেছিডেনের বাংলা কইরা ফেলা জাইতে পারে ‘খলিফা’; শকল ইলেকশনের ভিতর দিয়াই আমরা খলিফা পাইতেছি, ইউনিয়নের খলিফা, উপজেলার খলিফা ইত্তাদি; চেয়ারম্যান-পেছিডেনের চাইতে শব্দ এবং অর্থে ‘খলিফা’ শুন্দর, আই বিলিভ 🙂 ।
#রকমশাহেরবয়ান ৩০ আগস্ট ২০২৪
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024
- আমাদের নিয়ত এবং বাংলাদেশের ফিউচার - আগস্ট 25, 2024