Main menu

গণঅভুত্থান নিয়া দুই কথা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক রকমের সাবলাইম অবজেক্টে পরিণত হইছিলেন। শেখ হাসিনার ডুয়েলিটিতে, তার মোর দ্যান ম্যাটেরিয়াল, তার স্পিরিটটা ছিল আনক্রিটিকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে দেবত্ব বা সুপারসিডিং ইমম্যাটেরিয়াল স্টেট তৈরি হইছিল, তা আক্ষরিক অর্থেই ক্ষমতার রেফারেন্সে তার ম্যাটেরিয়াল স্টেটকে অতিক্রম করতে পারছিল। তুলনায়, খালেদা জিয়া জাস্ট মানুষ। তার লিগাসি, জিয়াউর রহমানের যে হিস্ট্রিকাল কনস্ট্রাকশন, তাকে তিনি আত্তীকরণ করেন নাই। বা পারেন নাই। শুধু রিকগনাইজ করছিলেন। স্টেট এপারাটাসের থ্রুতে শেখ হাসিনা মানুষের চেয়ে একজন স্পিরিট হয়ে উঠছিলেন।

রিয়েলিটি একটা ফিকশন। এই ফিকশনের নানা ভার্সন আমরা দেখতে থাকি। ইডিওলজি ইন ওয়ার্কস। এইটার চেঞ্জ করা সম্ভব। কিন্তু বাইরে যাওয়া সম্ভব না। এবসলুট রিয়েল এক্সপেরিয়েন্স করা সম্ভব না বা চূড়ান্ত স্পিরিট বা খোদার সাক্ষাৎ সম্ভব না, কারণ এতে মানুষ তার সাবজেক্টিভিটি হারায়। তার সমস্ত সেনসেশনের সিংগুলারিটি হারায়। ফলে গণুঅভুত্থানের যে সংস্কার প্রস্তাব, তা পোস্ট ইডিওলজিকাল কোন চিন্তা হয়ে থাকলে, তা ভুল বা ভান। আপনি গল্পের বাইরে যাইতে পারবেন না। কারণ গল্প ছাড়া আপনার আইডেন্টিটি নাই।

কোন ন্যারেটিভই কাজ করে না, যখন রিয়েলিটির ফেব্রিক ভেঙে পড়ে। ভায়োলেন্স নানাভাবে জাস্টিফাইড হয়ে থাকে, কিন্তু সেই সকল ফিকশন চালায়া নিতে হইলে প্রিমিটিভ/বেসিক কিছু ল’ মানতে হয়। আপনি একজনের বিরুদ্ধে একজনকে ডুয়েল লড়তে দেন। একজনের বিরুদ্ধে তিনজন না। দাবার বোর্ডে দুই পক্ষের একটা করে মন্ত্রী থাকে। মানুষের যে ক্রুয়াল্টি বা ভায়োলেন্স, তা ফেয়ার ওয়েতে হইতে হয়। তার কম বেশি জাস্টিফিকেশন থাকতে হয়।

স্টালিন বা হিটলারের ভায়োলেন্সে তারা নিজেদের মনে করছে হিস্ট্রির কন্ডুইট। ভবিষ্যত মানুষের কল্যাণে এই মুহূর্তে করা করা অপরাধের জাস্টিফিকেশন। একটা আদর্শগত ম্যাডনেস। কিন্তু এই জায়গায় সাবেক পার্লামেন্ট আলাদা। পুলিশ মানুষ মেরে ভ্যানে স্তুপ করে রাখছে। ফর হোয়াট? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঠিক ওই সেন্সে প্রোপার পলিটিকাল ইডিওলজিও বলা যাবে না। দিস ইজ পিওর ইভিল। নট ইভেন আন্ডার দা ইলুশন অফ হায়ার ন্যারেটিভ।

যেমন, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। আইন ভায়োলেন্টলি ওয়ার্ক করতে পারে, কিন্তু তার লিমিট আছে। যে রিয়েলিটি তৈরি করছে, তার স্থিতিস্থাপকতার সাথে সেই ভায়োলেন্সের ক্যাপাসিটির অনুপাতগত সম্পর্ক আছে। সেই অনুপাতের বাইরে গেলে রিয়েলিটির সাপোর্টিভ যে ভাষা, অন্যতম পিলার, তা আর কাজ করে না। আপনি যা উৎপাদন করবেন, সেই পণ্য তার উৎপাদনের মৌলিক শর্ত ভাঙতে পারে না। তাহলে সেই সিস্টেম কলাপ্স করে।

গণঅভুত্থান হইছে মূলত সেই ফেব্রিক ভাঙার কারণে। পার্টিকুলারলি বামরা পারে নাই, বিএনপি পারে নাই,ইসলামিস্টরা পারে নাই, ইন্টেলেকচুয়ালরা পারে নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন এক সিংগুলার পয়েন্ট ব্রেক করছে, যার পরে আগাইতে দিলে মানুষের সাবজেক্টিভিটি কলাপ্স করে। তার স্যানিটি ভেঙে পড়ে। রাস্তায় নামে নাই কিন্তু বাসায় বসে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কারণ কি? কারণ তার ফিকশনের স্ট্রাকচার ভেঙে পড়তেছে। মানুষ অতদূর নিতে পারে না। তার ফিকশন ছাড়া যে সে অন্তত মিনিংলেস ভয়েড, এইটা তার আনকনশাসে আছে। ফলে এই জায়গায় তার ছাড় দেয়ার সুযোগ নাই।

গণঅভুত্থান পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে নেসেসারি ফিকশনের প্রস্তাব আসতেছে। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আসতেছে। এইটার যত রিজিড ভার্সন আমরা নিব, সমস্যা তত জটিল আকার ধারণ করবে। আমরা নানারকম অবলিগেশনে পড়বো। অবলিগেশন থেকে আসবে যে, আমরা ‘ইউরোপ’ হইতে চাই। বাংলাদেশ আসলে কিছু হতে চাইছিল কি? আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইছিল। আমাদের কি এই রকম বিশেষ কিছুর দরকার ছিল আসলে? স্পেসিফিক ডোমিনেন্ট ইডিওলজি কাজ করে এইসব ব্যানারে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অমুক তমুক ইনডেক্সের মাধ্যমে। সমাজের উদ্ভুত সমস্যা মোকাবেলা করা এবং চাহিদা হ্যান্ডেল করাই ক্ষমতাসীন দলের মেইন কাজ।

ডিজায়ার ট্রিকি জিনিস। সোসাইটি যেহেতু অর্গানিক, তার নিজস্ব প্যাথলজি আছে। তার ডিজায়ার নিয়ে খেলতে চাওয়াটা খুবই কঠিন কাজ। তাকে ‘রাইট’ কোর্সে তোলার অবলিগেশন ফিল করানো আরো বিপদজনক। মানুষের ড্রিম যে নাইটমেয়ার হবে, তা নিয়ে কোন দার্শনিক সন্দেহের অবকাশ নাই। ফলে ড্রিমের চাইতে তার রিপ্রেশনের জায়গাগুলাই প্যাথলজির জায়গা।

ডিপ্রাইভড কারা? বঞ্চিত কারা? ওয়ার্কফোর্সে নাই কারা? স্ট্রাকচারের কারা ডোমিনেন্ট কালচারের বাইরে অদৃশ্য? কারা অরাজনৈতিক? কাদের পড়াশোনা কোন কাজে আসতেছে না? কোন বিশ ভাগ লোক তিন বেলা খেতে পায় না? এইগুলা কি আমরা এড্রেস করতেছি? লেটেন্ট কন্টেন্ট হইতেছে এইগুলা। এইগুলাই তার রোগের উৎস। তার রিপ্রেশন। তারমানে এনজিওমার্কা অরাজনৈতিক ভানের কাজের কথা বলতেছি না।
রাষ্ট্র পলিটিকালি সংযুক্ত হয়ে এই কাজগুলায় হাত দেয়া।

এই রিপ্রেশনগুলা আমরা তো জানি। কিন্তু সে কোন কোন সিম্পটম আকারে আসছে, সেই ফর্মগুলাই ছিল বিগত সরকারের ক্ষমতার জায়গা। শোককে যেমন শক্তি বানানো যায়, দূর্বলতাকেও শক্তি বানানো যায়। ভিক্টিম রোল প্লে করা যায়। যেকোন বাইনারি এই নিয়ম মেনে চলে।

সম্ভাবনার শর্ত কি? যেকোন কিছু অস্তিত্বশীল হয় তার কন্ট্রাডিকশন থেকে। সম্ভাবনা এমন একটা ব্যাপার যে, তার অন্তর্গত কন্ট্রাডিকশন সব সময় আছে। এক্সটার্নাল কাজটা হইতেছে, তারে স্পেস দেয়া। সে যত জায়গাজুড়ে থাকবে, যত ফ্লেক্সিবল থাকবে, যত বেশি রিয়েলিটি প্রোভাইড করতে পারবে, তত বেশি সম্ভাবনার সুযোগ থাকবে।

রাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট মানে পলিটিকাল রিয়েলিটির ডেভেলপমেন্ট। সেইটা পলিটিকাল পার্টির থ্রুতে ছাড়া উপায় নাই। সেইটা দুই পা আগাইলেও, এই দুই পা-ই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অরাজনৈতিক ক্ষমতার কেবল আদেশ করার ক্ষমতা আছে। পাবলিকের কাছে যাওয়ার ক্ষমতা নাই। এইটা ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন।

এই সিনারিও-র বেস্ট আউটকাম হইতেছে, পলিটিকাল রিয়েলিটি গ্রো করার। এমন একটা ফিল্ড তৈরি হইছে, যখন পলিটিকাল পার্টি ফ্লুরিশ করার সম্ভাবনা আছে। পলিটিকাল এম্বিশন আছে কিন্তু নামতে পারতেছিল না-তাদের মাঠে নামার। যে পলিটিকাল কম্পিটিশনের মাঠ দেখা যাইতেছে, সেই জায়গাটায় হেলদি পলিটিক্সকে ইন্ট্রোডিউস করা। পার্লামেন্টে গিয়া যেন নির্বাচিত সরকার দরকারি সংবিধান ও আইনগত পরিবর্তনও আনতে পারে। একইসাথে সমাজের মধ্যে থেকে তার লেজিটেমেসি তৈরি হইতে পারে।

যারা আইন কানুন নিয়া ব্যাস্ত আছেন, তারা এক সময় গিয়া দেখবেন, সমাজ ও রাষ্ট্র আইনকানুন দিয়া ঠিক করা যায় না। টেকসই সংস্কার করা যায় না। মানুষের ট্র‍্যাজেডি কি? তার ডিজায়ার সব সময় অন্যের ডিজায়ার উৎপাদন করা। সেইটা একটা কমন গ্রাউন্ডে তৈরি করতে পারাই পলিটিক্সের কাজ। আইন বা নিয়ম কানুনের না। প্রশাসনের না। এরা কেবল নির্বাহীই হইতে পারে।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

কবির আহমেদ

জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
Avatar photo

Latest posts by কবির আহমেদ (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →