আবার কখোন আসবে বর্ষাকাল

[বিস্টি ও বর্ষাকাল নিয়া কবিতার একটা ইবুক বানাইছি আমি। অই বইয়ের কিছু কবিতা এইখানে ছাপানো হইলো।]
বাংলা-ভাষায় এইরকম কোন কবি মেবি নাই যিনি বিস্টি নিয়া কোন কবিতা লেখেন নাই; বিস্টি নিয়া লেখা অনেক ভালো-ভালো কবিতা পাইবেন, এমনকি এমন কবি অনেক পাইবেন যাদের সবচে ভালো-কবিতাটা বিস্টি নিয়া লেখা; মানে, বাংলা-ভাষায় কবি হইতে হইলে বিস্টি নিয়া কবিতা লেখতে পারতে হবে আপনারে, বা কবিতা লেখতে হয় আসলে…
বাংলাদেশে সবচে বড় ঋতুও বর্ষাকাল, যদিও ‘নিয়ম অনুযায়ি’ আষাঢ়-শ্রাবন (জুন-জুলাই-অগাস্ট) বর্ষকাল, কিনতু বিস্টি সারা-বছরই হয়, চৈত্র-বৈশাখে হয় ঝড়, শরত-হেমন্তেও বিস্টি হয় কিছু, এমনকি শীতকালেও দুই-একবার বিস্টি না পড়লে ঠান্ডা’টা ঠিকমতো পড়তে পারে না; সারা বছরই বিস্টি ও বর্ষা আমাদের মন’রে ভিজায়া রাখে, বিস্টির কবিতাও লেখা হয় বেশি
আমারও অনেকগুলা কবিতা লেখা হইছে বিস্টি ও বর্ষাকাল নিয়া, নানান সময়ে লেখা সেই কবিতাগুলা এইখানে থাকলো
২.
এর আগে হেমন্তকাল নিয়া “হেমন্তে আমি তোমার গান গাই”, শীত নিয়া “শীত আসে আমাদের বসন্ত মনে” বসন্ত নিয়া “বসন্ত বাতাস”, গরমের দিন নিয়া “আ ব্রাইটার সামার ডে” নামে চাইরটা কবিতার বই বানাইছি আমি, এইটা পাঁচ নাম্বার বই
এর পরে শরতকাল নিয়া আরেকটা বই বানাবো, ছয়টা ঋতুর ছয়টা বই
পরে কখনো হয়তো ছাপাইতেও পারি, আরেকটু এডিট-টেডিট কইরা
৩.
ইচ্ছা ছিল পয়লা আষাঢ়ে বইটা পাবলিক করার, কিনতু দেখলাম এই বছরে বর্ষাকাল একটু আগেই চলে আসছে; টাইমিংয়ের একটা বেপার তো আছেই, কিনতু অইরকম দিন-ক্ষন মাইনা তো ঋতু আসে না; কখনো একটু আগে চইলা আসে, কখনো একটু পরে, কখনো একটু বেশি সময় থাকে, কখনো অল্প কিছু সময়, কিনতু ফিল করা যায় সব সিজনের ভাইব-ই
আর ফিলিংস যে সবসময় একইরকম হয় – তা তো না, কখনো মনেহয় বিস্টি আসে না ক্যান, এতো গরম! কখনো মনেহয় এতো বিস্টি ভাল্লাগে না, প্যাঁক-কাদা, বেশি বিস্ট হইলে তো শুরু হবে বন্যা! কিনতু তাই বইলা কি বিস্টি হবে না? এইরকম নানান কিছু, প্যারাডক্স…
এইসবকিছুর ভিতর দিয়া আসে আমাদের বর্ষাকাল
…
বর্ষাকাল। সুদূরতম পাইন। আবার কখোন আসবে বর্ষাকাল। বিরহের গান। বৃষ্টি আর ডালিম গাছের কাহিনি। সিলেট শহর। পয়লা আষাঢ়। বিকাল আসতেছে ধীরে। আবিদ আজাদ। রেইন, রেইন।মিথ্যাবাদী রাখাল। এভারেজ কবিতা। সিন্ডারেলা। আমি আর আমার টেবিল। ভৈরববাজারে সন্ধ্যা।পরদেশি মেঘ। বৃষ্টি। বৃষ্টি সুন্দর। আমাদের লোহার আত্মাগুলি। দিওতিমা। একটা হাসি-খুশি বৃষ্টির কথা। আফটার রেইন। একটা গরু বিস্টিতে ভিজতেছে। শশীদল। দীর্ঘ ক্লান্ত বর্ষাকাল। ট্রাভেলগ। বিস্টি ভালো।
…
বর্ষাকাল
মৌন রাস্তা, কাদামাখা চোখ
তোমাকে দেখে আসন্ন সকাল;
বৃষ্টির ভিতর তিল তিল ফাঁক,
ক্যারাম খেলতেছে মানুষ;
স্বল্প আলো
দীর্ঘ, বিশাল ছায়া, নিভে যাইতেছে…
/১৯৯৬
সুদূরতম পাইন
পাইন, দীর্ঘ বাতাস তোমারে আলোড়িত করে। কান্নায় আর কেঁপে কেঁপে ওঠা আলোগুলি
মুগ্ধ চোখ নিয়ে দেখে, তোমার পুরানো ঘ্রাণ এখনো হয় নাই মলিন।
বিশুষ্ক ল্যাম্পপোস্ট অন্ধকারে, দাঁড়ায়া থাকে;
কেন আর কি করে পাইন, তুমি দেখবে শীর্ণ ও অতিকায়
রশ্মিগুলা নিয়া যায় আমাদের
তোমার গান আমরা শুনি, অন্ধকার নিরব হলে, দীর্ঘ বৃষ্টির পথে পথে
তোমার প্রতিরূপ; কবে, কে, তোমাতে ঠেস দিয়া দাঁড়ায়াছিলো
আজ তা সত্যি মনে হয়।
উদগ্রীব একটা শিশু গাছ, যে শুশ্রুষাহীন, ছোট আর নমনীয়
কান পেতে শোনে তোমারে;
পাইন, এই সন্ধ্যায়, বৃষ্টির অন্ধকারে, তুমিও শোনো একা;
যে কেউ-ই হারিয়ে যেতে পারে
/১৯৯৮
আবার কখোন আসবে বর্ষাকাল
অনেক সূর্যের দিন শেষ হইলো।
এখন বর্ষাকাল।
আকাশ নুয়ে আসে
লেকের পানিতে ভাসতেছে ছোট্ট নৌকা একটা
রাস্তায় হাঁটতেছে মানুষ, ভয়ে, তাড়াহুড়া কইরা
– এই চিহ্নগুলা মুইছা যাবে।
বৃষ্টি আসলেই ধুইয়া যাবে সব।
আর আমরা ভাববো যে, কেবলমাত্র একটা বৃষ্টির পরেই একটা নতুন শুরু সম্ভব!
সকালের আকাশের দিকে তাকাই, সন্ধ্যার আলোর মতো লাগে;
দুপুরের মলিন রাস্তা – মনে হয় বিকাল
সময় ভাঙতে থাকে
আর একটা বৃষ্টির পর আবারো অপেক্ষা করি, বৃষ্টি হোক তবে!
পানিতে ভরে থাক পথ-ঘাট
আজকে বাসায় ফিরা হয়ে উঠুক আরো অ্যাডভেন্চারাস…
ডুবন্ত শহরের ভিতর খাবি খাবি খাইতে খাইতে
মানুষের বন্দীত্ব জাইগা উঠুক, একটা ঘণ্টার জন্য করুক জেলখানার চিন্তা
তারপর বৃষ্টি থামলে, রাস্তার পানি নাইমা গেলেই মনে হবে, শেষ হইলো বর্ষাকাল!
অনেক সূর্যের নিচে আমাদের রৌদ্র-তপ্ত দিন
রাতের গরমের ভিতর, লোডশেডিং-এ বারান্দায় দাঁড়ায়া দেখা
অন্ধকার আকাশে ভুস ভুস উড়ে যায় বিমান
দীর্ঘশ্বাস আসে
আবার কখোন, আসবে বর্ষাকাল!
/২০১০