(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ৪
৯: অলৌকিক কান্ড
হালিমার গৃহে অবস্থানকালে হযরত মুহম্মদের জীবনে একটি অলৌকিক কান্ড ঘটিয়াছিল বলিয়া জানা যায়।
এই ঘটনা হাদিস শরীফে নিম্নরূপে উল্লিখিত হইয়াছে : “আনাস বলিতেছেন: একদা হযরত বালকদিগের সহিত খেলা করিতেছিলেন, এমন সময় জিব্রাইল ফিরিশতা তথায় উপস্থিত হইলেন। জিব্রাইল হযরতকে একটু আড়ালে লইয়া তাঁহাকে চিৎ করিয়া শোয়াইলেন; তারপর তাঁহার বুক চিরিয়া হৃৎপিণ্ডটিকে বাহিরে আনিয়া তাহার মধ্য হইতে খানিকটা জমা-রক্ত বাহির করিয়া ফেলিলেন এবং বলিলেন: শয়তানের অংশ যেটুকু তোমার মধ্যে ছিল তাহা এই। তারপর সেই হৃৎপিণ্ডটিকে একটি সোনার তশতরীতে রাখিয়া জমজমের পবিত্র পানি দ্বারা ধৌত করিলেন। অতঃপর সেটিকে জোড়া লাগাইয়া পুনরায় যথাস্থানে সংস্থাপন করিলেন। বালকেরা দৌড়াইয়া গিয়া হালিমাকে বলিল: ‘দেখ গিয়া, মুহম্মদ নিহত হইয়াছে।” তখন সকলে তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, মুহম্মদ বিবর্ণ হইয়া পড়িয়া আছেন। আনাস বলিতেছেন: ‘আমি হযরতের বুকে সেলাইয়ের দাগ দেখিয়াছি।”
শুধু যে আনাসই এই হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা নহে। ইবনে হিশাম এবং অন্যান্য ঐতিহাসিকগণও অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনে হিশাম বলিতেছেন :
“হালিমা বলিয়াছেন: মুহম্মদ একদিন তাহার দুধভাইদের সহিত বাড়ীর নিকট মেষ চরাইতেছিল, এমন সময় বালকেরা ছুটিয়া আসিয়া আমার নিকট বলিল যে, দুইজন শ্বেতবাসপরিহিত লোক আসিয়া তাহাদের কোরেশ-ভাইকে ধরিয়া তাহার বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া ফেলিয়াছে। আমি এবং আমার স্বামী তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া দেখিলাম মুহম্মদ বিবর্ণ ও ভীত অবস্থায় পড়িয়া আছেন। আমরা বালকটিকে আলিংগন করিলাম এবং এরূপ হইবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলাম। তখন বালক উত্তর দিল: “দুইটি শ্বেতবাস-পরিহিত লোক আমার নিকট আসিযা আমাকে চিৎ করিয়া শোয়াইয়া আমার কলিজা বাহির কবিয়া লইল এবং উহার মধ্য হইতে একটা-কিছু বাহির করিয়া ফেলিল। সে যে কী জিনিস, আমি জানি না।”
অন্য আর একটি হাদিসে আছে :
“একদা কতিপয় লোক হযরতের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহার নিজের সম্বন্ধে কিছু, বলিতে অনুরোধ করিল। হযরত বলিতে লাগিলেন: “হযরত ইসমাইলের প্রতি খোদাতালা যে আশীর্বাদ প্রেরণ করিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, আমি সেই আশীর্বাদ এবং যিশু যাহার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন, আমি সেই ব্যক্তি। আমি যখন মায়ের পেটে ছিলাম, তখন আমার মা প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন যে তাঁহার মধ্য হইতে একটি দিব্যজ্যোতিঃ বিকীর্ণ হইয়া সিরিয়ার রাজপ্রাসাদকে আলোকিত করিয়া তুলিয়াছে। একদিন আমি আমার দুভাইদের সংগে মেষ চরাইতেছিলাম এমন সময় শুভ্রবেশধারী দুই ব্যক্তি আমার নিকট উপস্থিত হইযা আমাকে চিৎ করিয়া শোয়াইয়া ফেলিয়া হৃৎপন্ড বিদীর্ণ করিয়া উহার মধ্য হইতে এক ফোঁটা কালো রক্ত বাহির করিয়া ফেলিলেন। তারপর তাঁহাদের হস্তস্থিত তরীর পানিতে উহা ধৌত করিয়া দিলেন। তখন একজন ফিরিশতা আমাকে ওজন করিবার জন্য অপরকে বলিলেন। ওজনে আমি দশজনের চেয়েও ভারী প্রমাণিত হইলাম। তখন আমাকে একশত জনের বিরুদ্ধে ওজন করা হইল, এবারেও আমি সকলের চেয়ে ওজনে ভারী হইলাম। তখন একজন অপরজনকে বলিলেন: আর দরকার নাই, সমস্ত পৃথিবীর বিরুদ্ধে ওজন করিলেও ইহার ভার কম হইবে না।” Continue reading