একজন লেখকরে রিস্ক নিতে হয়, সে যা দেখে সবকিছুরেই লিখতে পারার বিষয়ে – জেমস বল্ডউইন
১.
জেমস বল্ডউইন জন্মাইছিলেন ২ আগস্ট, ১৯২৪। আজকে থেকে প্রায় একশো বছর আগে। একশো বছর আগে আম্রিকার অবস্থা কেমন ছিল? সেইটা সম্ভবত আঁচ করা যায় বল্ডউইনের এই ইন্টারভিউটা পড়লে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন বিচ্ছিন্নতা এবং রেসিয়াল অপ্রেশনের বাস্তবিকতায় আইন জারি করার পক্ষে যে আন্দোলন এবং প্রতিবাদ শুরু হইছিল বিশ শতকের শুরুতে তার শেষ দশ বছরের মাথায় বল্ডউইন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। বল্ডউইন আম্রিকান রেসিয়াল অপ্রেশনের রগরগে পরিণতির সাক্ষী হইছিলেন। ওনার বন্ধুর ব্রিজ থিকা লাফ দিয়া আত্মহত্যা করা, চল্লিশ ডলার নিয়া প্যারিসে চইলা আসা। এগুলা তো এক ধরণের ঘটনাই। সম্ভবত একজন লেখক তৈরী হয় তার সমাজের নানান ঘটনার ভেতর দিয়া, একটা এগজিস্টিং বাস্তবতা এবং পরে সম্ভাবনাময় এক বাস্তবতার ভেতর দিয়া। বল্ডউইন তো অন্য যেকোনো কিছুই হইতে পারতেন, যেমনটা উনি ইন্টারভিউতে বলতেছিলেন। তবু লেখকই হইলেন এবং একজন এংরি ইয়ং ম্যান।
২.
বল্ডউইন তার বাস্তবতারে ফিকশনালাইজ করছেন। ওনার আত্মজিজ্ঞাসা, সোসাইটির সাথে তার নিজের সম্পর্ক, নানান ডিলেমা এবং মানসিক জটিলতার ভেতর দিয়া যে উনি গেছেন, সেইগুলাই উনি ডিল করছেন তার লেখায়। অই সময়ের মেসকুলিনিটি, সেক্সুয়ালিটি, রেস এবং ক্লাস নিয়া যে সোশ্যাল ন্যারেটিভ তার বিপরীতে একজন সোশ্যাল অবজারভার হিশাবে তার খ্যাতি “সিভিল রাইটস মুভমেন্ট” ও “গে লিবারেশন মুভমেন্ট” এর সময় দেখা যায়। তার উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট একচেটিয়াভাবে শুধু আফ্রিকান আম্রিকান না, র্যাদার গে, বাইসেক্সুয়াল কারেক্টারও যা আসলে অই সময়ের বাস্তবতাটারেই রিফ্লেক্ট করে।
৩.
মরিস ব্লাশোর ‘লিটারেচার এন্ড দ্য রাইট টু ডেথ’ যেইটা মূলত ফ্রয়েডের ‘আনকনশাস’ এর উপর বেস করে লেখা। সেইখানে তিনি বলতেছেন, কেউ লেখালিখি শুরু করেন একটা প্রশ্ন থিকা, একটা জিজ্ঞাসা থিকা। কিন্তু আপনি যখন লিখতে বসেন এবং শেষপর্যন্ত আপনার লেখা হয়ে যায়, কিন্তু লেখার পরে আপনি সেই প্রশ্নের উত্তর আর খুঁজে পান না। যেমনটা বল্ডউইন বলতেছেন যে, লেখালিখির ব্যাপারটাই হইতেছে কিছু একটা খুঁজে বের করা, কিন্তু আপনি সেইটা আসলে আর খুঁজে পান না। সেই প্রশ্নাতীত একটা জায়গা থিকা তিনি তার অভিজ্ঞতাগুলারেই লিখছেন। এবং পরবর্তীতে ‘জিওভানিস রুম, ‘গো টেল ইট অন দ্য মাউনটেইন’ এর মতো ফিকশনসহ নন-ফিকশন ‘দ্য ফায়ার নেক্সট টাইম’, ‘নোটস অফ এ নেটিভ সন’ এর মতো বইগুলা ছিল তার সোশ্যাল-পলিটিক্যাল কনশাসনেসের ভেতর দিয়া আম্রিকান আধাসত্য, ব্লাশফেমি এবং মিথ্যার বিপরীতে একধরণের পাল্টা বয়ান তৈরী করা, অপ্রেসড এবং অপ্রেসর উভয়েরই মানসিক প্রভাবরে ডিল করা যা অই সময়ের আত্মাভিমানী সমাজের কাছে এক ধরণের অস্তস্তিকর সত্যের প্রকাশই ছিল।
৪.
একটা ইন্টারভিউ মূলত একজন লেখকের থট-প্রসেসটারে ধরতে কিছুটা সাহায্য করে। কিভাবে একজন লেখক কিছু জিনিস এডপ্ট করতেছে আর কিভাবে কিছু জিনিসরে বাতিল করতেছে সেইদিকে নজরটারে নিয়া যায়। বল্ডউইন এইখানে নানান বিষয় নিয়াই আলাপ করছেন। তার আর্লি এইজ, স্ট্রাগলিং সময়ের কথা, অন্য রাইটারের সাথে তার ভালো-মন্দ সম্পর্ক, ইভেন ফিকশন লেখার নানা টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়াও ডিটেইল আলাপ আছে। সব মিলায়ে, অই সময়ের ইউরোপ-আম্রিকার রেসিয়াল কনটেক্সটারে বোঝা যাবে ভালো।
সাঈদ শ’
এপ্রিল, ২০২৩
…
এই ইন্টারভিউ দুইটা নেওয়া হইছে লেখক হিশাবে জেমস বল্ডউইনের সংগ্রামের পছন্দের দুই জায়গায়। প্রথমে আমরা প্যারিসে দেখা করছিলাম, যেখানে উনি লেখক হিশাবে বাইড়া ওঠার প্রথম নয় বছর কাটাইছে এবং তার প্রথম দুইটা উপন্যাস লিখছেন, গো টেল ইট অন দ্য মাউন্টেইন আর জিওভানিস রুম। পাশাপাশি তার সবচে পরিচিত প্রবন্ধ সংগ্রহ, নোটস অফ এ ন্যাটিভ সন। উনি বলেন, প্যারিসেই উনি প্রথম নিজের সাথে এবং আম্রিকার সাথে তার বিদীর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে পরিচিত হন। আমাদের পরের আলাপটা হইছিলো সেন্ট পলে ডি ভেন্সের বল্ডউইনের বাড়িতে পাউট্রেস-এন্ড-স্টোনে, যেখানে লাস্ট দশ বছর ধইরা সে তার বাড়িটা বানাইছে। আমরা আগস্টের এক সপ্তাহে একসাথে লাঞ্চ করছিলাম তার মরশুমি গেস্ট ও সেক্রেটারি সহ। শনিবারে, অসহনীয় গরম আর আর্দ্রতার মধ্যে একটা ঝড় উঠছিলো, যার ফলে বাতজনিত কারণে তার লেখার হাত (বাম) এবং কব্জিতে ব্যথা হইছিলো। ঝড়ের কারণে অনিয়মিত বিদ্যুতের ঘাটতি আমাদের পাশের টেপ-মেশিনটার ব্যাঘাত ঘটাইছে। ব্ল্যাকআউটের সময় এলোমেলোভাবে বিষয়গুলা নিয়া আলাপ করতাম বা ড্রিংকে চুমুক দেওয়ার সময় নীরব হয়া থাকতাম।
বল্ডউইনের আমন্ত্রণে রবিবার ফিরা আসি, সূর্য জ্বলতেছিলো এবং বাইরে আমরা একটা পিকনক টেবিলে লাঞ্চ করতে সক্ষম হইছি, কুঞ্জছায়াঘেরা বিস্তৃত জমি যেইখানে ফলের গাছগুলা আর দেখার মতো ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী দৃশ্য। বল্ডউইনের মেজাজ আগেরদিনের চাইতে অনেকটা প্রফুল্ল হয়া উঠছে, এবং আমরা তার অফিসে ঢুকি আর পড়াশুনা করি যেইটারে তিনি তার “টর্চার চেম্বার’ হিশাবে বইলা থাকেন। বল্ডউইন স্ট্যান্ডার্ড লিগ্যাল প্যাডে লঙহ্যান্ডে লিখতেছেন, (‘আপনি সংক্ষিপ্ত ঘোষণামূলক বাক্যগুলি অর্জন করেন’) যদিও একটা বড়, পুরানা এডলার ইলেকট্রিক তার ডেস্কের একপাশে বইসা আছে — একটা আয়তকার ওক তক্তা যার দুইপাশে বেতের চেয়ার বসানো। একটা লেখার জায়গা এবং বেশ কয়েকটা খসড়া দিয়া স্তূপ করা হইছে; একটা উপন্যাস, একটা নাটক, আঁকা ছবি, আটলান্টা শিশুর হত্যার উপরে প্রবন্ধ, এগুলা সর্বশেষ ‘দ্য এভিডেন্স অফ থিংস নট সিন’-এ সংকলিত। তার রিসেন্ট কাজের মধ্যে আছে দ্য ডেভিল ফাইন্ডস ওয়ার্ক, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জাতিগত পক্ষপাত ও ভয়ের বিরুদ্ধে এক ধরণের আক্রমণ, একটা নোবেল, জাস্ট এবভ মাই হেড, যা ১৯৬০-এর দশকে সিভিল-রাইটস এক্টিভিস্ট হিশাবে তার অভিজ্ঞতা থিকা লেখা।
জর্ডান এলগ্রাবলি
১৯৮৪
…
ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি বলবেন কিভাবে স্টেট ছাইড়া আসলেন?
বল্ডউইন: আমি ভাইঙা পড়ছিলাম। আমি প্যারিসে আসছিলাম চল্লিশ ডলার নিয়া, কিন্তু আমারে নিউ ইয়র্ক থিকা বাইর হইতে হইছিল। আমার অবস্থা তখন নানান মানুষের দুরবস্থায় পীড়িত ছিলো। একটা সময়, পড়াশুনা আমারে লম্বাসময়ের জন্য দূরে নিয়া গেছিলো। তখনো আমারে রাস্তাঘাট, অথরিটি আর ঠাণ্ডার সাথে ডিল করতে হইছে। আমি জানতাম শাদালোক হওয়ার অর্থ কি, আমি জানতাম একটা নিগ্রো হওয়ার অর্থই বা কি এবং আমি জানতাম আমার লগে আসলে কি ঘটতে যাইতেছিল। আমি আমার ভাগ্য হারায়া ফেলছিলাম। আমি জেলে যাইতেছিলাম, আমি কাউরে খুন করতে যাইতেছিলাম অথবা খুন হইতে। জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ থিকা লাফ দিয়া আমার বেস্টফ্রেন্ড দুই বছর আগে সুইসাইড করছিল। Continue reading