কোনো কিছু করতে পারার সক্ষমতা অন্য কিছু একটা করতে না পারার অক্ষমতারে মাইনাস করে দেয় – নোম চমস্কি ও আন্দ্রেয়া মুরো’র আলাপ
[১]
নোম চমস্কিরে আপনারা প্রায় সবাই চিনবেন। অন্তত নাম শুনছেন, একবার হইলেও। লিঙ্গুইস্টিক্স নিয়া যারা নাড়াচাড়া করেন তারা আন্দ্রেয়া মুরোরেও চিনেন। কিন্তু যারা লিঙ্গুইস্টিকসের বাইরের বা এই দুনিয়ায় নতুন তাদের কাছে আন্দ্রেয়া মুরো একটা নতুন নাম মনে হইতে পারে। তাদের জন্য আন্দ্রেয়া মুরোর একটা প্রাথমিক পরিচয় দিতেছি। আন্দ্রেয়া মুরোর যে পরিচয়টা আমি দিতে চাই সেইটা হইলো মুরো নোম চমস্কির ছাত্র। চমস্কির এমআইটির ক্লাসে মুরো ছিলেন। এবং পরবর্তীতে চমস্কির লং টাইম কলিগ হিশেবে একসাথে কাজ করছেন। আন্দ্রেয়া মুরো জাতিতে ইতালিয়ান। কর্মে লিঙ্গুইস্ট, নিউরোসায়েন্টিস্ট আর নভেলিস্ট। সিনট্যাক্স আর নিউরোলিঙ্গুইস্টিক্স হইলো মুরোর প্রধান ইন্টারেস্ট আর গবেষণার বিষয়। লিঙ্গুইস্টিকসের নামকরা কয়েকটা এক্সপেরিমেন্টের প্রধান আর প্রথম কুশলী হিশেবেও মুরো খ্যাত আছেন। দুনিয়ার বহু নামকরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন, পড়াইছেন। এমআইটি আর হার্ভাডেও ফুলব্রাইট গ্রান্টে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিশাবে কাজ করছেন। তার বিখ্যাত বইগুলা হইল: ইম্পসিবল ল্যাঙ্গুয়েজেস, দ্য বাউন্ডারিস অব বাবেল, আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব দ্য ভার্ব টু বি ইত্যাদি। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি স্কুল ফর এডভান্স স্টাডিজ পাভিয়া, ইতালিতে জেনারেল লিঙ্গুইস্টিকসের প্রফেসর হিশেবে কর্মরত আছেন।
আর মর্ডান লিঙ্গুইস্টিকসের বাপ আব্রাম নোম চমস্কিরে তো আপনারা চিনেনই! আমেরিকান প্রফেসর আর বুদ্ধিজীবি। লিঙ্গুইস্টিকসের বাইরে পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিজম আর সোশ্যাল ক্রিটিসিজমেও তার নাম আছে। অ্যানালিটিক ফিলোসফিরও একজন উস্তাদ পাবলিক। কগনিটিভ সায়েন্সের ফাউন্ডারদের একজন। ভাষাবিজ্ঞান, যুদ্ধ, রাজনীতি নিয়া দেড়শোরও বেশি বই লিখছেন। আমেরিকান বামদের মধ্যে, সেই ১৯৬০ সাল থেকেই, চমস্কি আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতি, হাল জমানার পুঁজিবাদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার উপরে কর্পোরেট প্রভাবের লাগাতার সমালোচনা করে আসতেছেন।
[২]
মুরো এবং চমস্কির এই আলাপের কিন্তু একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে। আলোচনার ডাইনামিক চরিত্র, এক বিষয়ে আটকায়ে না থেকে কৌতূহল সৃষ্টিকারী বহু বিষয় নিয়া নানামুখী আলাপ তোলার দিক দিয়া। ল্যাঙ্গুয়েজ আর লিঙ্গুইস্টিক্স ছাড়াও হিস্ট্রি অব সায়েন্স, ভাষা আর ব্রেইনের সম্পর্ক নিয়াও বিস্তর আলাপ করছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়া বর্তমানে যে উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা দেখা যায় চমস্কি এইগুলারে সিলিকন ভ্যালি থেকে ছড়ায়া দেয়া হাইপ আর প্রোপাগান্ডা বলে উল্লেখ করছেন। ব্রেইন স্টাডিজ নিয়া আলাপের সময় দেখাইছেন, ১৯৫০ এর দশকে ব্রেইন নিয়া করা গবেষণাগুলার কোনো ফলাফলই শেষ পর্যন্ত সেই সময়ের সাইকোলজির কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়াইতে পারে নাই। লিঙ্গুইস্টিকসে মুরোর করা কিছু নামকরা এক্সপেরিমেন্ট নিয়াও বিস্তারিত আলাপ আছে আলোচনাটাতে। পুরা আলোচনাটা এমন সহজ একটা ভঙ্গিতে আগায়ে গেছে যে পাঠক যত ভিতরে ঢুকতে থাকবেন তত নতুন নতুন বিষয় জানতে পারবেন। আরো বেশি জানার দিশা খুঁজে পাবেন। কেউ যদি এই বিষয়গুলা নিয়া পরবর্তীতে আরো পড়তে চান তাইলে কিভাবে আর কোথা থেকে আপনার শুরু করতে হবে এই নির্দেশনাটাও আপনি আলোচনাটাতে পায়া যাবেন। ফলে বলা যায়, লিঙ্গুইস্টিকসের পাবলিক তো বটেই, যারা লিঙ্গুইস্টিকসে নতুন বা এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য পুরা আলোচনাটা একটা পথের দিশারি হয়া কাজ করবো।
[৩]
ইন্টারভিউ হিশাবে আপনারা যে লেখাটা এখন পড়বেন এইটারে ইন্টারভিউ না বলে আলোচনা বলাই ভালো। চমস্কি আর মুরোর সম্পর্কটা যেহেতু বহুমুখী আন্তরিকতার, মানে একে তো ছাত্র-শিক্ষককের সম্পর্ক, তার উপর দীর্ঘ সময়ের সহকর্মী সম্পর্কও আছে, ফলে এইটা কোনোভাবেই একপেশে সওয়াল-জওয়াব মার্কা কোনো রোবোটিক ইন্টারভিউ না থেকে খুবই উপভোগ্য একটা দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়ে দাঁড়াইছে শেষ পর্যন্ত। ফলে পাঠকগণ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়াই পড়তে করতে পারেন। Continue reading