Main menu

আমি – জহির রায়হান (১৯৬৭)

[আসিরুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত সিনে-পত্রিকা ‘ঝিনুক’র ১৯৬৭ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় জহির রায়হানের এই লেখাটা ছাপা হয়। জহির রায়হান রচনাবলী’সহ যে কোন এন্থোলজি’তেই এই লেখাটা রাখা হয় নাই বইলাই আমরা জানি। এমনিতেও উনার সিনেমা বিষয়ে কথা বা লেখা তো খুব একটা গুরুত্ব দিয়া কালেক্ট করা হয় নাই; কিন্তু করা যে দরকার, এবং খুঁজলে যে কিছু জিনিস পাইতে পারি আমরা, সেইটার একটা নমুনা হিসাবে এই লেখাটারে দেখা যাইতে পারে। – এডিটর, বাছবিচার]

কি লিখবো?
আমাকে অকারণ কিছু লিখতে বলে অপ্রস্তুত করার কোন মানে হয় না।
আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত।
অভিজ্ঞতা অপ্রতুল। সঞ্চয় অতি সামান্য।
আকাঙ্ক্ষা অনেক। অনেক। অনেক। সাগরের ঢেউয়ের মত। আকাশের তারার মত।
শ্রাবণের ধারার মত। এর কোন ইতি নেই। যতি নেই। শেষ নেই।
লিখবো কি?

এককালে স্বপ্ন দেখতাম। ভারী সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন।

সূর্যের সোনাঝরা রোদে একঝাঁক পায়রা যেমন করে ডানা মেলে দিয়ে ওড়ে। আঁধারের অন্তরঙ্গ ছোঁয়া পেয়ে জোনাকীরা যেমন মৃদু মৃদু জ্বলে। আর বাতাসের অকৃপণ উদারতার স্পর্শে পালতোলা নৌকোগুলো যেমন দুর্বার বেগে ছুটে চলে, তেমনি আমার অল্প বয়সের অনভিজ্ঞ মনে স্বপ্নের বলাকারা কখনো উড়তো, কখনো জ্বলতো, কখনো ছুটে চলতো এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে।

এখন ওসব বাজে অভ্যেস বর্জন করেছি।
স্বপ্ন দেখি না।
কারণ, স্বপ্নের সাথে বাস্তবের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। অকারণ হতাশার বোঝা বাড়িয়ে জীবনকে ভারাক্রান্ত করতে চাইনে।

আমি আমার আবেগের ক্রীতদাস। আমার আবেগ আমাকে যখন যেখানে নিয়ে যেতে চায় আম সুবোধ বালকের মত তাকে সেখানে অনুসরণ করি।
আবেগ যদি বলে, আগুনে ঝাঁপ দাও। দিই। দগ্ধ হই। পুড়ি। পোড়াই আবেগ যদি বলে, মরো। মরি। সে মরণেও সুখ। ওই আবেগের অঙ্কুর থেকে আমার জন্ম। সে আছে বলেই বেঁচে আছি।
সে যেদিন থাকবে না, সেদিন আমার এই অর্থহীন তুচ্ছ দেহটাকে দু’হাত মাটির নীচে পুঁতে আসবে সবাই।
তাই আমার আবেগকে আমি আমার প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসি। সে যদি বলে, ভাঙ্গো। ভাঙ্গি। ভেঙ্গে সব চুরমার করে দিই।
সে যদি বলে, গড়ো। আবার গড়ার কাজে লেগে যাই।
আমি যে তার হাতের পুতুল।

একদিন। সে অনেকদিন আগের কথা। বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারী।
সেদিন অপরাহ্ণে, সে আমার মনে এক দুর্জয় সাহসের সঞ্চার করেছিলো। সে বলেছিলো, ওই হিংস্র দানবের মুখোশগুলা খুলে ফেলো। ভেঙ্গে ফেলো ফেরাউনের দূরাশার স্বর্গ। নইলে তোমার কণ্ঠ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে।
আমি তক্ষুনি সাড়া দিলাম।
আর আমার আবেগ আমাকে কারাগারের অন্ধকার গহ্বরে নিক্ষেপ করলো। Continue reading

হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি

This entry is part 12 of 18 in the series রকম শাহ'র বয়ান

‘মুজিববাদ’ শব্দটা লাইক করি না আমি; তার বড়ো কারন, এইটা দিয়া আমি কিছু বুঝি না, বোঝার উপায়ও নাই আমার মতে! কেননা, একটা ‘বাদ/ইজম’ হইতে জেই ভাবনা-চিন্তার দরকার হয়, শেইটা শেখ শাহেবের নাই; মানে, ওনার কোন পলিটিকেল ডকট্রিন দেখতে পাই না আমি, তেমন কোন ডকট্রিন পাইতে ওনার কতক ভক্ত হইতে হয় বইলা মনে হয় আমার!

তবে, এইটাই না ছেরেফ, আরো কারন আছে।

মতি-মাহফুজ, তাদের মিডিয়া এবং ছিপিবি ইশকুল লইয়া একটু ভাবলে ব্যাপারটা খোলাশা হইতে পারে আরেকটু।

১৮ অক্টোবর ২০২৪, মরা আওমি লিগ নেতার পোলা মাহফুজ আনাম লিখলেন, ‘হাসিনার আকামের শাজা শেখ শাহেবকে দেওয়া জায় না।’। মতিউর রহমান বা ছিপিবি বা আওমি লিগের পজিশনও এই ব্যাপারে ছেম ছেম।

তাইলে হিশাব করেন, এনাদের ইতিহাশ মতে ‘বাকশাল’ একটা ইনোছেন্ট ঘটনা, শেখ শাহেবের ৭২-৭৫ শাশন হাসিনার শাশনের থিকা খুব তফাতের (গুড গভর্নেন্স খুব শম্ভব) ঘটনা; শেখ শাহেব তার নিজেরই আকামের ফল পাইতেছেন না জেন, শেখ হাসিনার আকামের দায় আমরা জেন শেখ শাহেবের কান্ধে দিতেছি!

এইখানে মনে করাই, হাসিনার শাশনকে জখন আপনারা ‘ফেছিজম’ কইয়া ডাকতেন হরদম, কুত্তার মতো আমরা কয়েকজন ঘেউ ঘেউ কইরা গেছি, ফেছিজমের বাংলা হিশাবে ‘বাকশাল’ ইউজ করতে কইতাম; কেন কইতাম এইটা? কেননা, ছেরেফ ফেছিজম কইলে দেশের ইতিহাশ এবং আমজনতার লগে কানেকশন পয়দা হয় না, শেখ হাসিনার আওমি লিগ আর তার খারাপ শাশনের শুরুটা হয় ২০১৩/১৪ শালে, কারো কারো মতে বড়ো জোর ২০০৮!

শেখ শাহেবের শাশন এবং দেশের ইতিহাশের কন্টিনিউটির ব্যাপারে আমাদের তাগিদ আপনারা আমলে না নেবার কারনে আমরা দরকারি হিস্ট্রিওগেরাফি বানাইতে পারি নাই 🙁 ! শেইটাই মতি-মাহফুজদের এমন মওকা বানাইয়া দিছে; এনাদের মিডিয়া, মুনতাসির মামুন-গোলাম মুরশিদ-শাহরিয়ার কবির গঙের বানানো ভুয়া হিস্ট্রিওগেরাফি দেশের কতোগুলা মানুশের মন এমনভাবে বানাইয়া রাখছে জে, শেখ শাহেবরে লইয়া মতি-মাহফুজদের অশৎ আর্তি এখনো কিছু অ্যাপিল পয়দা করতে পারতেছে।

৭২-৭৫, শেখ শাহেবের শাশনের শেই জামানা আমরা কতোটা ভুইলা আছি ভাবেন–খালেদার ১৫ ফেব্রুয়ারির ইলেকশন এখনো মনে করি আমরা, নিন্দা করি–বাস্তবে ঐটারে ছেরেফ বেহুদা খরচ কইতে পারেন, তার বাইরে ঐটা খমতা দখলে রাখার ব্যাপার আছিলো না, বরং শেই পার্লামেন্টে বানানি কেয়ারটেকার গভমেন্টের ইলেকশনে হাসিনা পিএম হইছে; কিন্তু দ্যাখেন, আজকে ৭ মার্চ বলতে ছেরেফ ১৯৭১ শালের ৭ মার্চ বুঝি, অথচ ১৯৭৩ শালের ৭ মার্চ শেখ শাহেব হাসিনার ১৮ ইলেকশনের মতোই একটা ইলেকশন কইরা পুরা পার্লামেন্ট দখল করছেন, শেই পার্লামেন্টই পরে বাকশাল পয়দা করছে। ইতিহাশ মাথায় রাখলে আমরা বরং ৭ মার্চকে ‘ভোট ডাকাতি’র দিন হিশাবে পালন করতে পারি, আমরা তাইলে এরশাদের ৮৬/৮৮, খালেদার মাগুরা, হাসিনার ১৪/১৮/২৪ ইলেকশনের ইতিহাশের বুনিয়াদ হিশাবে শেখ শাহেবের ৭ মার্চ ইলেকশনরে পাইতে পারতাম!

এখন ভাবেন তো, কেন এই দিকের বহু লোক বাকশালের ইতিহাশ ভুলাইয়া রাখা টার্ম ‘ফেছিজম’ কইতে থাকে কেবল, আর ঐ দিকে মতি-মাহফুজরা শেখ শাহেবের শাশন-বাকশালরে ইনোছেন্ট/মাছুম (এমনকি পজিটিভ!) ঘটনা হিশাবে দেখতে চায়!? এই দুই পক্ষের এই মিল কেমনে ঘটলো?

কিন্তু এই আলাপে জাবার আগে বাকশাল এবং তার লগে মতি-মাহফুজ-ছিপিবি-বুরোক্রেছি-কলোনিয়াল এডুকেশনের রিশতাটা ভালো কইরা খেয়াল করা দরকার। Continue reading

(বই থিকা) ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক – কমলকুমার মজুমদার

[সাধু-সন্ন্যাসীদের কিছু কথা, কাহিনি ও বানী অনেকগুলা বই থিকা নিয়া কমপ্লাইল কইরা কমলকুমার মজুমদার একটা বই বানাইছিলেন “ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক” নামে। অই বইয়ের কয়েকটা কাহিনি আলাদা শিরোনাম দিয়া এইখানে রাখা হইলো। বইয়ের ২০০৭ সালের এডিশন’টা এইখানে ফলো করা হইছে।]

ব্রাহ্মোৎসব

সেজবাবুকে বল্লুম, আমি শুনেছি দেবেন্দ্র ঠাকুর ঈশ্বর চিন্তা করে, আমার তাকে দেখবার ইচ্ছা… (সেজবাবু নিয়ে গেল) অনেক কথাবাত্তার পর দেবেন্দ্র খুসী হয়ে বল্লে, আপনাকে উৎসবে (ব্রাহ্মোৎসবে) আসতে হবে। আমি বল্লাম সে ঈশ্বরের ইচ্ছা – আমার ত এই অবস্থা দেখছো। কখন কি ভাবে রাখেন।

দেবেন্দ্র বল্লে, না আসতে হবে তবে ধুতি আর উড়ানি পরে এসো – তোমাকে এলোমেলো দেখে কেউ কিছু বললে, আমার কষ্ট হবে। আমি বললাম তা পারবো না। আমি বাবু হতে পারবো না। দেবেন্দ্র সেজবাবু সব হাসতে লাগল।

তারপর দিনই সেজবাবুর কাছে দেবেন্দ্রর চিঠি এলো আমাকে উৎসব দেখতে যেতে বারণ করেছে, বলে অসভ্যতা হবে গায়ে উড়ানি থাকবে না।

/শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

.

জ্ঞানীর ভয় আছে

তবে সংসারে জ্ঞানীর ভয় আছে। কামিনী কাঞ্চনের ভিতর গেলেই একটু না একটু ভয় আছে। কাজলের ঘরে থাকতে গেলে যত সেয়ানাই হও না কেন, কাল দাগ একটু না একটু গায়ে লাগবেই।… এই যখন ভাজা খই খোলা থেকে টপ্ টপ্ করে লাফিয়ে পড়ে – সেগুলি যেন মল্লিকা ফুলের মত, গায়ে একটু দাগ থাকে না। খোলার উপর সে সব খই থাকে, সেও বেশ খই, তবে অত ফুলের মত হয় না – একটু গায়ে দাগ থাকে।

/শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

.

বাঙালি

(আজমীরে) তখন আমার দেহের দিকে একেবারেই নজর ছিল না। চুলগুলো জটা ধরে গিয়েছিল আমায় দেখলে লোকে পাগল মনে করত। ওখানে এসে একদিন জলাশয়ে স্নান করছি, এমন সময় এক বাঙ্গালী ভদ্রলোক আমায় দেখে তার বাড়ীতে ডাকল। প্রবাসে বাঙ্গ ালীরা, স্বদেশের লোককে দেখলে খুব আনন্দিত হয়। আমি তার বাড়ী গেলাম, আমার চেহারা দেখে সে তিরস্কার করে বললে, বাঙ্গালী এমন কদর্য্য থাকে নাকি? সাধু হলে কি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে নেই।

/শ্রীশ্রীনিগমানন্দ
Continue reading

কোনো কিছু করতে পারার সক্ষমতা অন‌্য কিছু (একটা করতে পারার) অক্ষমতারে মাইনাস করে দেয় – নোম চমস্কি ও আন্দ্রেয়া মুরো’র আলাপ

[১]

নোম চমস্কিরে আপনারা প্রায় সবাই চিনবেন। অন্তত নাম শুনছেন, একবার হইলেও। লিঙ্গুইস্টিক্স নিয়া যারা নাড়াচাড়া করেন তারা আন্দ্রেয়া মুরোরেও চিনেন। কিন্তু যারা লিঙ্গুইস্টিকসের বাইরের বা এই দুনিয়ায় নতুন তাদের কাছে আন্দ্রেয়া মুরো একটা নতুন নাম মনে হইতে পারে। তাদের জন্য আন্দ্রেয়া মুরোর একটা প্রাথমিক পরিচয় দিতেছি। আন্দ্রেয়া মুরোর যে পরিচয়টা আমি দিতে চাই সেইটা হইলো মুরো নোম চমস্কির ছাত্র। চমস্কির এমআইটির ক্লাসে মুরো ছিলেন। এবং পরবর্তীতে চমস্কির লং টাইম কলিগ হিশেবে একসাথে কাজ করছেন। আন্দ্রেয়া মুরো জাতিতে ইতালিয়ান। কর্মে লিঙ্গুইস্ট, নিউরোসায়েন্টিস্ট আর নভেলিস্ট। সিনট্যাক্স আর নিউরোলিঙ্গুইস্টিক্স হইলো মুরোর প্রধান ইন্টারেস্ট আর গবেষণার বিষয়। লিঙ্গুইস্টিকসের নামকরা কয়েকটা এক্সপেরিমেন্টের প্রধান আর প্রথম কুশলী হিশেবেও মুরো খ্যাত আছেন। দুনিয়ার বহু নামকরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন, পড়াইছেন। এমআইটি আর হার্ভাডেও ফুলব্রাইট গ্রান্টে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিশাবে কাজ করছেন। তার বিখ্যাত বইগুলা হইল: ইম্পসিবল ল্যাঙ্গুয়েজেস, দ্য বাউন্ডারিস অব বাবেল, আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব দ্য ভার্ব টু বি ইত্যাদি। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি স্কুল ফর এডভান্স স্টাডিজ পাভিয়া, ইতালিতে জেনারেল লিঙ্গুইস্টিকসের প্রফেসর হিশেবে কর্মরত আছেন।

আর মর্ডান লিঙ্গুইস্টিকসের বাপ আব্রাম নোম চমস্কিরে তো আপনারা চিনেনই! আমেরিকান প্রফেসর আর বুদ্ধিজীবি। লিঙ্গুইস্টিকসের বাইরে পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিজম আর সোশ্যাল ক্রিটিসিজমেও তার নাম আছে। অ্যানালিটিক ফিলোসফিরও একজন উস্তাদ পাবলিক। কগনিটিভ সায়েন্সের ফাউন্ডারদের একজন। ভাষাবিজ্ঞান, যুদ্ধ, রাজনীতি নিয়া দেড়শোরও বেশি বই লিখছেন। আমেরিকান বামদের মধ্যে, সেই ১৯৬০ সাল থেকেই, চমস্কি আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতি, হাল জমানার পুঁজিবাদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার উপরে কর্পোরেট প্রভাবের লাগাতার সমালোচনা করে আসতেছেন।

[২]

মুরো এবং চমস্কির এই আলাপের কিন্তু একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে। আলোচনার ডাইনামিক চরিত্র, এক বিষয়ে আটকায়ে না থেকে কৌতূহল সৃষ্টিকারী বহু বিষয় নিয়া নানামুখী আলাপ তোলার দিক দিয়া। ল্যাঙ্গুয়েজ আর লিঙ্গুইস্টিক্স ছাড়াও হিস্ট্রি অব সায়েন্স, ভাষা আর ব্রেইনের সম্পর্ক নিয়াও বিস্তর আলাপ করছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়া বর্তমানে যে উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা দেখা যায় চমস্কি এইগুলারে সিলিকন ভ্যালি থেকে ছড়ায়া দেয়া হাইপ আর প্রোপাগান্ডা বলে উল্লেখ করছেন। ব্রেইন স্টাডিজ নিয়া আলাপের সময় দেখাইছেন, ১৯৫০ এর দশকে ব্রেইন নিয়া করা গবেষণাগুলার কোনো ফলাফলই শেষ পর্যন্ত সেই সময়ের সাইকোলজির কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়াইতে পারে নাই। লিঙ্গুইস্টিকসে মুরোর করা কিছু নামকরা এক্সপেরিমেন্ট নিয়াও বিস্তারিত আলাপ আছে আলোচনাটাতে। পুরা আলোচনাটা এমন সহজ একটা ভঙ্গিতে আগায়ে গেছে যে পাঠক যত ভিতরে ঢুকতে থাকবেন তত নতুন নতুন বিষয় জানতে পারবেন। আরো বেশি জানার দিশা খুঁজে পাবেন। কেউ যদি এই বিষয়গুলা নিয়া পরবর্তীতে আরো পড়তে চান তাইলে কিভাবে আর কোথা থেকে আপনার শুরু করতে হবে এই নির্দেশনাটাও আপনি আলোচনাটাতে পায়া যাবেন। ফলে বলা যায়, লিঙ্গুইস্টিকসের পাবলিক তো বটেই, যারা লিঙ্গুইস্টিকসে নতুন বা এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য পুরা আলোচনাটা একটা পথের দিশারি হয়া কাজ করবো।

[৩]

ইন্টারভিউ হিশাবে আপনারা যে লেখাটা এখন পড়বেন এইটারে ইন্টারভিউ না বলে আলোচনা বলাই ভালো। চমস্কি আর মুরোর সম্পর্কটা যেহেতু বহুমুখী আন্তরিকতার, মানে একে তো ছাত্র-শিক্ষককের সম্পর্ক, তার উপর দীর্ঘ সময়ের সহকর্মী সম্পর্কও আছে, ফলে এইটা কোনোভাবেই একপেশে সওয়াল-জওয়াব মার্কা কোনো রোবোটিক ইন্টারভিউ না থেকে খুবই উপভোগ্য একটা দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়ে দাঁড়াইছে শেষ পর্যন্ত। ফলে পাঠকগণ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়াই পড়তে করতে পারেন। Continue reading

থামতে পারার আর্টটা জানা খুবই দরকারি – মিলান কুন্দেরা

This entry is part 28 of 28 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

ট্রান্সলেটর’স ইন্ট্রো

আমার কাছে কুন্দেরা যত না পলিটিকাল তার থেকে বেশি ফিলোসফিকাল। অন্তত আমি কুন্দেরাকে যতবার যেভাবে পড়ছি, তাতে মনে হইছে কুন্দেরা তার নভেলে পলিটিক্সের থেকে ফিলোসফির নজরে বেশি নোকতা নিছেন। তার মানে এই না যে তার নভেলে পলিটিকাল নোকতা টানা যাবে না, কিন্তু নভেলগুলা গুরুত্বপূর্ণ হইতে পারে এইদিক থেকে যে রাইটার ক্যামনে তার নভেলের ভিতর দিয়া ফিলোসফিকাল কোশ্চেন ফর্ম করতে পারেন, এবং একইসাথে সেগুলার আন্সার খুঁজতে পারেন একটা দেশের হিস্ট্রি ও পলিটিকাল চেইঞ্জের আলোকে তার ভাল দৃষ্টান্ত তার কাজ।

কুন্দেরা ছাত্রবয়সে একবার কম্যুনিস্ট পার্টিতে জয়েন করছিলেন, পরে তারে ছাঁটাইও করা হইছিল তার স্বাধীন চিন্তাভাবনা ও ইন্ডিভিজ্যুয়ালিস্টিক ডিজপজিশনের কারণে। তখন কেবলই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হইছে। ইউরোপিয়ান দেশগুলা কমন ওয়েলফেয়ার জায়গা খুঁজবার ট্রাই করতেছিল। সোভিয়েত-ঘেঁষা কম্যুনিস্ট আদর্শের হাওয়া তখন জোরালো। চেক-প্রজাতন্ত্রে কম্যুনিস্ট বিপ্লব মারফত তার প্রভাব আরও বেশি ছিল। কুন্দেরা কম্যুনিজমের সাথে সম্পর্ক তাই একরকম জটিলই বলা চলে। দেশ, আদর্শ এবং পলিটিক্স- এই সমস্ত জায়গায় কুন্দেরা একরকম নন-কনফর্মিস্ট- যার ফলে তার নাগরিকত্বই একসময় বাতিল কইরা দেয়া হয়।

কিন্তু কুন্দেরার এই নন-কনফর্মিস্ট জায়গা বুঝতে গেলে দেখা যায়, আসলে নভেলের সাধারণ ন্যারেটিভ ধরে বুঝলে কুন্দেরার নভেল যতটা পলিটিকাল মনে হয়, আসলে তার থেইকা বেশি ফিলোসফিকাল। এখন পলিটিকাল-ফিলোসফিকাল কোনটার ভার কার থেকে বেশি সেই খাজুরে আলাপে যাব না। এই ইন্টারভিউ থেকেও যেই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উইঠা আসছে যে কুন্দেরার কাছে নভেল ফিলোসফিকাল এনগেজমেন্টের জায়গা। কিছু কোশ্চেন আন্সার করবার মিডিয়াম হইতেছে নভেল।

এই কাজ তিনি করছেন তার ক্যারেক্টারের ভিতর দিয়া, যেইখানে তার ক্যারেক্টার-সকল খুবই রিফ্লেক্টিভ, মেডিটেটিভ এবং থিংকিং-লাইক। টমাস, সাবিনা, তেরেজা এবং লুদভিক এরা তাদের চিন্তার মারফতে একটা বেসিক কোশ্চেন আন্সার করবার চেষ্টায় থাকে। দা আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিয়িং-এ যেমন কিচের কোশ্চেন, দা বুক অফ লাফটার এন্ড ফরগেটিং-এ যেমন তামিনার জীবন-মৃত্যুর গভীর মেটাফিজিকাল কোশ্চেন- এগুলা পুরা নভেলের স্টেইজটাই সেট কইরা দেয়। এবং ইন্টারভিউ থেকে ক্লিয়ার হবে, তার এই কোশ্চেনগুলা কোন র‍্যান্ডম জায়গা থেকে উঠে আসা না, বরং গভীর স্টাডি-রিসার্চ থেইকা উঠে আসা। আরেকদিক থেকে বলতে গেলে তার নভেল অনেকখানিই মেটা-ক্রিটিক অফ লাইফ।

কুন্দেরার নভেলে আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট জায়গা আছে, যেইটা হইতেছে তার ক্যারেক্টারের মেডিটেশন। এই কথা ইন্টারভিউতেও উঠে আসছে বেশ কয়েকবার। তামিনা, তেরেজা, তমাস, সাবিনা- এরা নভেলে কোন প্যাসিভ এজেন্ট হিসেবে কাজ করে না। বরং পুরো নভেলের ন্যারেটিভ তৈরিতে, স্ট্রাকচার ডেভেলপে এদের থিংকিং, মেডিটেশন, রিফ্লেকশন সবকিছুই খুব জোরালো রোল প্লে করে। সেদিক থেকে কুন্দেরার ক্যারেক্টারগুলা খুব অদ্ভুতভাবে, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে এই নভেলসবে।

দ্য জোকের কেইসে লুসি একটা সোশিও-পলিটিকাল কনটেক্সট থেকে ইল্যুসিভ, এবং একিসাথে তার এক্সিস্টেন্স তার হিস্ট্রি-এবানডানমেন্ট-ট্রমা অনেককিছুই দিয়া ডিফাইনড। আবার একইসাথে আমরা তার জীবন দেখতেছি কোন শব্দ দিয়া না, বরং তার জীবন যাপনের সাইলেন্সের ভিতর দিয়া। এর মধ্য দিয়া কুন্দেরা ডিল করতেছেন এক্সিস্টেন্স ইটসেলফকে (যেখানে শব্দের থেকেও এক্সিস্টেন্সটা তার কাছে মেইন থিম)। একইভাবে আবার দা আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিয়িং-এ আমার সবচে ইন্টারেস্টিং লাগে সাবিনাকে। সাবিনার কমিটমেন্ট ইস্যু আছে যার কারণ হয়তো তার হিস্ট্রি যেইখানে বিট্রেয়ালের দাগ অনেক গভীর। আমরা সাবিনাকে পাই কমপ্লেক্স একটা ক্যারেক্টার হিসাবে- যার স্যাটিসফ্যাকশন না দিতে পারে ফ্রাঞ্জ না দিতে পারে টমাস। এবং শে একইসাথে ফুল-ফ্লেজড ইন্ডিপেন্ডেন্ট উইম্যান। তার লাইফ ফুল অফ কিচ, এবং যা থেকে সাবিনা পালায়ে বাঁচতে চায়। কিংবা অন্য কথায় কিচ মানে হইতেছে ফুল অফ শিট। কুন্দেরার উপন্যাসকে যদি আরও প্রিসাইস করতে চাই, তাহলে হয়তো এরকম দাঁড়ায়: ক্যারেক্টারের এক্সিস্টেন্সের থ্রুতে সোশিও-পলিটিকাল এনালাইসিস। মেটা-ফিলোসফিকাল কোশ্চেন যেখানে আমাদের লিড করে বুঝে উঠতে আমরা ঠিক কোথায় যাইতেছি।

কুন্দেরার এন্ট্রিপয়েন্ট হইতেছে তাই তার নভেলের ক্যারেক্টার। আমার কাছে মনে হইছে কুন্দেরা তার ক্যারেক্টারের থ্রুতে নভেলে ঢুকেন, এবং সেইখান থেকেই জার্নিটা শুরু।
Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →