Main menu

চারুকলার মেইন্সট্রিমের থটস ও ডক্ট্রিন

২০১৪ সালের ইলেকশনের পর বিএনপি-র জ্বালাও-পোড়াও নিয়ে শিল্পীরা চারুকলার সামনে বিশাল বিশাল শিল্পকর্ম করলেন এবং যত অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে মোল্লাদেরকে দেখাইলেন। এর পরের মানে ২০১৫ সালের বৈশাখেও অশুভ শক্তির টুটি চেপে ধরা প্রতীকে চাঁদ তারার সিম্বল মারা হইছিলো। অথচ ১৫৩ আসনের আনকন্টেস্টেড ইলেকশন নিয়ে এদের মধ্যে মিনিমাম কোনো পাবলিক আলাপ দেখা যায় নাই। কারণ আওয়ামীলীগ জিতছে।

২০১৮ সালের শুরুর দিক, কলাকেন্দ্রে কাজ করি তখন আমি। কলাকেন্দ্রে বইসা বোধিচিত্তের চ্যানেলে মানস চৌধুরী-র একটা লেকচার শুনছি আন্তেনিও গ্র্যামসির উপর। হঠাৎ পিছন থেকে নিসার হোসেন আসলেন। আমাকে বললেন -” এই এইসব কি শুনতেছো? এ তো ফরহাদ মজহারের শিষ্য, এ তো জামাত-শিবিরের লোক।” আমি পুরাই বেকুব হয়ে গেছি। কি কয় এইটা। আস্তে আস্তে ঐ গং এর রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট হইতে শুরু করলো আমার কাছে। বিশেষ করে এর কিছুদিন পরেই যখন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু দাবী করলেন খান আতাউর রহমান একজন রাজাকার। ১৬ ডিসেম্বরের পর তিনি নাকি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কল্যাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

যাইহোক কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে একজন ভদ্রলোক বললেন কিভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয়। যেখানে সবচেয়ে বড় ক্রেডিট তিনি দিলেন ছায়ানটের ওয়াহিদুল হক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে। অথচ চারুকলার তৎকালীন শিক্ষার্থীদের বক্তব্য সম্পুর্ন আলাদা।

আওয়ামীলীগের এই লাস্ট রেজিমে দেশের গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে এরা কোনোদিন কোনো পাবলিক প্রোগ্রাম করে নাই। করবেও না কারণ এরা চেয়েছে আওয়ামিলীগ-ই টিকে থাক। আর এদের পকেট ভর্তি হইতে থাকে।

মুলত বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর তার সাথে আওয়ামিলীগ কে একাকার করে দেখার বয়ান এই সুশীল প্রগতিশীল তকমাধারীরা দিয়ে যাচ্ছেন লম্বা সময় ধরে এবং যা কিছু এটাকে চ্যালেঞ্জ করে সেটাই যেনবা বিএনপি/জামাত/শিবির। Continue reading

নাগরিক চুক্তি এবং শান্তি শুখ পাট্টির ইশতেহার

ডেমোক্রেটিক রেভলুশন ঘটাইতে নাগরিক চুক্তি

আমাদের একমত হওয়া দরকার জে, রাশ্টো হিশাবে বাংলাদেশ বহু জাতির একটা কনফেডারেশন। একই শাথে ‘বাংলাদেশি’ নামে ছেরেফ টেরিটোরিয়াল অর্থের জেনারেল ‘জাতি’ আছে জেইটা ‘নেশনাল পার্লামেন্ট’, ‘নেশনাল ইলেকশন’, ‘নেশনাল আর্কাইভ’, ‘পাছপোর্ট’ ইত্তাদি শব্দে পাই এবং বুঝতে পারি আরামেই। এই জেনারেল জাতির আইডিয়া এবং ‘বাংগালি’, ‘মোছলমান বাংগালি’, ‘হিন্দু বাংগালি’, ‘চাকমা’, ‘মান্দি’, ‘শাওতাল’, ‘টিপরা’, ‘রাখাইন’ ইত্তাদি জাতির আইডিয়া এবং এগুলির ভিন্ন ভিন্ন কালচারাল চর্চার কোন বিরোধ-ঝগড়া-ফ্যাছাদ নাই; বরং একটা আরেকটারে পুরা করে, টেরিটোরিয়াল অর্থের জেনারেল জাতি দেশের শকল জাতির শান্তিচুক্তির ভিতর দিয়া একটা একক ইকোনমিক এনটিটি পয়দা করতেছে। জেমন ঘটে একটা কোম্পানির বেলায়: কয়েকজন বেক্তি মিলে একটা কোম্পানি বানায়, জেইটা ঐ বেক্তিদের লিগাল হক এবং দায়িত্তঅলা, ঐ বেক্তিদের শমান আরেকটা এনটিটি–একটা ইকোনোমিক ইউনিট, জার লগে ঐ বেক্তিদের কোন বিরোধ নাই, বরং উল্টা, ঐ কোম্পানির ভিতর দিয়া ঐ বেক্তিদের ইউনিটি বা একতার শক্তি মালুম হইতে পারে।

একটা শুখি বাংলাদেশ গড়তে আমাদের একটা শান্তির বাংলাদেশ বানাইতে হবে শুরুতে। এবং শান্তির শর্ত হইলো ইনছাফ; বহু জাতি, মত, পথ, ধর্ম, দর্শনের ভিতর একটা শান্তিচুক্তি না হইলে শান্তি কায়েম হবে না দেশে, ফলে ইনছাফের শম্ভাবনা পয়দা হইতে পারবে না, ফলে শুখি বাংলাদেশ পাওয়াও অশম্ভব থাইকা জাবে।

ঐ শান্তিচুক্তিরই আরেকটা নাম ডেমোক্রেটিক রেভলুশন। অন্ন জে কোন কিছিমের রেভলুশন শক্তিমানের শাশন কায়েম করে; শেই শক্তিমান বহু ছুরতে হাজির হইতে পারে: এখনকার বাকশালি তালুকদারি-মাফিয়া শাশন তারই একটা, আরো কয়েকটা ছুরত হইতে পারে বাংগালি নেশনালিজম, মোছলমান বাংগালি, হিন্দু বাংগালি, মার্ক্সের তরিকার গাহেক। ডেমোক্রেটিক রেভলুশন মানে ঐ শব শক্তিমানের শাশনের বদলে একটা শান্তিচুক্তির ভিতর দিয়া শকলের, জনতার শকল ভাগের শরিকির ভিতর দিয়া ইনছাফ কায়েম করা।

এমন একটা ডেমোক্রেটিক রেভলুশন বহাল তবিয়ত রাখতে এবং শেই রাস্তায় হাটতে হাটতে ইতিহাশের কোন একটা জামানায় শুখি বাংলাদেশ গড়তে ইতিহাশের এই মোমেন্টে অন্তত ৩টা পয়েন্টে আমাদের একমত হওয়া দরকার, এবং একটা আপদকালিন চুক্তি কইরা ওয়াদা রাখার কছম খাইতে হবে আমাদের। ৩টা পয়েন্ট এমন:

ক. ইলেকশন এবং একমাত্র ইলেকশনের ভিতর দিয়া খমতার হাতবদল।

খ. বেক্তি মালিকানা। এই বেক্তি মালিকানার অর্থ এমন না জে, ছেরেফ ৫% দেশের শব কিছুর মালিক হবে, বাকি ৯৫% নাগরিক কোনকিছুর মালিক থাকবে না; বরং এই বেক্তি মালিকানার অর্থ হইলো, ১০০% নাগরিকই মালিক হবে। বাংলাদেশের মোট জমিনকে ২০ কোটি ভাগ করলে পেরায় ৮০০ এস্কয়ার মিটার জমি পড়ে পোরতিটা ভাগে; তাই শকল নাগরিকের পার হেড অন্তত ২০ শতক জমি থাকা খুবই শম্ভব।

গ. মুক্ত বিবেক। নাগরিকদের বিবেকের চারপাশে রাশ্টো কোন বাউন্ডারি দিতে পারবে না, মানুশের চিন্তা এবং কথা কোন ছার্কেলের ভিতর থাকার ব্যাপার না। রাশ্টের শকল কর্মি, ইলেকটেড ডেলিগেট, শরকার আদতে জনতার খাদেম, এই খাদেমদের কায়কারবার তদারক করার হক আছে জনতার বা নাগরিকদের; নাগরিকদের বিবেক মুক্ত না থাকলে ঐ তদারকি অশম্ভব, রাশ্টের জে কোন ব্যাপারে কথা কইতে পারবে নাগরিকরা, এইটা নাগরিকদের হক এবং দায়িত্ত। খোদ রাশ্টোই বানাইছে নাগরিকদের বিবেক, তাই নাগরিকদের বিবেক বন্দি করতে পারে না রাশ্টো।
Continue reading

দেয়ার ইজ এ ইস্পুন

বলিউডের এনিমেল ছিনামার ডাইরেক্টর এমন কইছিলো কয় দিন আগে: মারতেই জদি না পারি, তাইলে ঐটা কোন বালের ভালোবাশা!

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক মাইয়াও মনে পড়ে, তার গায়ে মাইরের দাগের ছবি আর পরে ভাতার কি কি করলো, শেই ছায়াছবি দিয়া ভাতারের পিরিতের নিশানা দেখাইতেছিলো!

এই দুই ব্যাপারেই আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগলো এইটা জে, একটা আকাম কইরা আফছোছ হওয়া এবং তার পরে ওভারকম্পেনছেট করা! এইটা কখনো কখনো বাপ-মা করে, নিজেদের বাছুরের উপর টর্চার করে, তারপর ছুপার-শপে লইয়া জাবে, রেস্টুরেন্টে নেবে, জা চাইবে বাছুর, তাই কিনা দেবে। এমন ঘটনায় পিরিতির আলামত আছে আলবত, কিন্তু চরম দুইটা দশাই এড়াইতে পারলে বেটার পিরিতি ঘটে। মানে, গরু মাইরা হাতি দিলে হাতিটা পাইলাম বটে, গরুটা কিন্তু এমনই মরলো জে, জতোই পাদুক হাতি, গরুটা জিন্দা হইলো না তো আর! ওদিকে, হাতিটা পালাও আরেক মুছিবত, আরো বড়ো মুছিবত হইলো, খোদ মনের খায়েশটাই হাতির মাপে হইয়া উঠতে থাকা–এভরিডে পেরাকটিছে জেইটা গরহাজির আলবত! তখন টর্চারটাই বাশনা হইয়া উঠতে পারে, জেহেতু, তখন হাতির খায়েশ পুরা হবার শম্ভাবনা! আমার হিশাবে তাই, মরা গরুটারে আদর কইরা লাভ-বাইট বলাটা ছাফ ছাফ বেকুবি!

উপরের নকশা দিয়া চিন্তার ইতিহাশ বোঝার চেশ্টা করা জাইতে পারে। ধরেন, পচ্চিমা দুনিয়ারে বহুদিন শাশন করতেছিলো রিয়ালিজম, এম্পিরিছিজম, পজিটিভিজম, অবজেক্টিভিটি, ম্যাটেরিয়ালিজম; বাকি দুনিয়ার তাবত ভাব, ইস্পিরিচুয়ালিটি, একিন, এবাদত, দোয়া লইয়া পচ্চিমের আছিলো বেশুমার হাশাহাশি, টিটকারি আর হিউমিলিয়েশন।

এই জামানায় পচ্চিমা দুনিয়া শেইখানে আর নাই, শেই চরমের ওভারকম্পেনছেশন শুরু হইছে এখন, ওনারা এখন কইতে লাগছেন–দেয়ার ইজ নো ইস্পুন; মায়া আর ছেরেফ মনের লিলাখেলা ‘এই’ তাবত দুনিয়া! হলিউডি ছাইন্স-ফিকশনে এখন আকছার মায়া, কোয়ান্টাম ফিজিক্স জেইখানে বাড়তি হাওয়া জোগান দিতেছে!

এই ‘দেয়ার ইজ নো ইস্পুন’ আইডিয়ার জরুর ফলের ছুরতই হইলো, ‘মাইন্ড ওভার বডি’। একটা মাশটার-স্লেভ রিশতা জেনো আলবত লাগবে, একটা কোহেরেন্স, একটা খুব শরবত জেনো বানাইতেই পারে না মাইন্ড এন্ড বডি মিলা!

টেরান্সজেন্ডার ইশুটারে আমাদের বুঝতে হবে এই ‘মাইন্ড ওভার বডি’ আইডিয়ার ভিতর থাকা মাশটার-স্লেভ রিশতা দিয়া। Continue reading

কবিতার বই থেকে কবিতা: দুই আনা সফর

কলাপাতার মতন লম্বা সকালে
~
একটা গান ছাড়া তুমি আর কী পারো দিতে?
একটা গান—
যেখানে ইতস্তত চুমুরা
সুরভিত মনে একজিমা ছড়ায় আমাদের গালে..

দিনগুলা এমন খুদকুড়ার মতন যে—
আমাদের মোতায়েজ করেই চলা লাগে রুটিনভর।

তুফানে বাবুই পাখির বাসার মতন
দুলতে থাকা মনে
সিলসিলা ছাড়াই
একটার পর একটা পাতা তখনও
উড়ে যাইতে থাকে তোমার টানে।

যদিও একটা বন্ধ সিমেই
যেন বারবার কল দিতেছি আমরা—

যেন একটা নারকেল গাছ
চোখের পানি বুকে নিয়ে দাঁড়ায়ে আছে—

চুলায় পাতিল চড়ায়ে দিনের পর দিন
যারা রানতেছে ক্ষুধা, তাদের—
চড়ুইয়ের ঝাঁকের ভিতর যে কথা হারায়ে গেছে
সে কথা আর বলা হবে না।
তাও লাগে যে, যা কিছু উহ্য ছিল এতদিন
গাছের পাতার মতন উলতে থাকবে একে একে।

কোন বিমর্ষ সকালে অফিসগামি মুখগুলা
দেখতে থাকব কলাপাতার ফাঁকে।
আঞ্চলিকতার মতন ফুরফুরে হাওয়ায়
আগের রাতের নকশা আরো বেশি মনে পড়বে।

কোথাও কোন প্রজাপতি
কিংবা মৌমাছি না থাকলেও
ঘন জঙ্গলের সবুজমায়ায়
কেবল একগুচ্ছ ফুল
সাদা রঙের শুচিতা মেখে
দুলতে থাকবে হাওয়ায়।

কোথাও বাসি তেলে ভাজা হবে পরোটা,
নুডলসের বাটিতে ঝিমাবে মাছি।
হঠাৎ মৃত্যুর খবরে ভাত পড়ে যাবে
বেসিনে—কাটা কাটা সবজির মতন
টুকরা কথারা সিদ্ধ হবে ভাঁপে!
শোকের বাতাসে
এমন—মৌ মৌ ঘ্রাণে
সরিষার তেলে উপচানো ফেনার মতন
তোমার সকালের ঘুম আরো উম পেলে
মাছের কাঁটার মতন বজায় রাখব দরকারি দূরত্ব।

আর কলাপাতার মতন এমন লম্বা সকাল
জানলা ধরে বসে থাকতে থাকতেই হয়ত শেষ করে ফেলব আমি। বিষ্টি পড়তে পড়তে হয়ত
রুটির হিসাবের ভিতরেই বদলে যাবে পরিচয়।

যেখানেই যাই মাছিদের উৎপাত আমাকে স্মরণ করাবে গলিত স্মৃতিগন্ধার কথা।

কোন ফুলের পতন কিংবা রঙ
এতটাই বিষণ্ন করবে আমাকে
হয়ত লিখতে পারব মনে ধরার মতন একটা কবিতা।
নিজের খুশিটুকু কবিতায় ফুটাতে চাইব! অথচ লিপিস্টিকমাখা ঠোঁটের মতন
অপরিচিত লাগার ভয়ে
এইসব খুশিও শাড়ির কুচিতে লুকায়ে হাঁটব— কল্পনায়
ঘুম ঘুম চোখে যেন কবিতারা ঘুমায়ে থাকবে আমার কোলে।
কলাপাতায় বিষ্টি পড়ার মতন মায়া নিয়ে—সারাদিন এমন এম্বুল্যান্সের শব্দ শুনব
যেন আসমান চোখে কানতেছে কোন ভাইহারা বোন…

Continue reading

নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭)

মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হিসাবে ‘জীবন থেকে নেয়া’রে (১৯৭০) যতোটা হাইলাইট করা হয়, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র (১৯৬৭) কথা ততোটা শুনবেন না। অথচ যদি সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের কথা চিন্তা করেন, সিরাজউদ্দৌলা ম্যাস লেভেলে ‘বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার’ আইডেন্টিটিটা ছড়ায়া দেয়ার কাজটা করছিল। যেইখানে একটা মিডল-ক্লাস অডিয়েন্সের বাইরে ‘জীবন থেকে নেয়া’ যাইতে পারারই কোন কারণ নাই, এর এসথেটিক এপ্রোচের কারণেই। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমার রিডিং-এ এইটারে আমরা বানাইছি ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা’ আর ‘সিরাজউদ্দৌলা’র কোন নাম-গন্ধও নাই।

/আ ক্রিটিকাল হিস্ট্রি অফ বাংলাদেশি সিনেমা, ২০২২

 

১. মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা

১৯৬৭ সালের ১২ই জানুয়ারি রিলিজ হওয়া খান আতাউর রহমানের “নবাব সিরাজউদ্দৌলা” (১৯৬৭) যে ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা’ – এই রিকগনিশন কোথাও পাইবেন না! ১৯৬৭ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’র ধারনা তো ক্লিয়াললি ভিজিবল হইতে পারে নাই, কিনতু পুরা সিনেমা জুইড়া দেখবেন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নিয়া প্যাশোনেট কথা-বার্তা। এমনকি সিনেমা শুরু-ই হইছে ‘দেশপ্রেমের’ গান – “ও আমার জন্মভূমি মাগো মা…” দিয়া; এবং এই ‘দেশপ্রেম’ পুরাটাই ‘বাঙালির’ এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ ভরপুর; পুরা সিনেমাতে পাকিস্তান শব্দটাও কোথাও পাইবেন না। তারপরও এই সিনেমারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুর্ন-জাগরনের’ মুভি বইলা ভাবতে না পরার কতোগুলা কারন তো আছেই।

এক নাম্বার ঘটনা হইতেছে, যেইটা বলতেছিলাম, তখনকার কনটেসকটে তো ইনডিপেনডেনসের কোন ক্লেইম নাই বা ছিল না, বরং ব্রিটিশ-বিরোধি মুভমেনটে পুব-বাংলাও শামিল ছিল – এইরকম একটা হিস্ট্রিকাল ক্লেইমই ছিল। এই সিনেমারে তখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি থ্রেট হিসাবে দেখা তো হয়-ই নাই, বরং এই সিনেমা উর্দু-ভার্সনেও রিলিজ দেয়া হইছিল একইসাথে পশ্চিম পাকিস্তানে, এবং ৩২ সপ্তাহ ধইরা চলছিল। দুইটা ন্যাশনাল (নিগার) এওয়ার্ডও পাইছিল মনেহয়। মানে, হিট-সিনেমা ছিল একটা! এখন যেই সিনেমা পাকিস্তানে ‘নিন্দনীয়’ হইতে পারে নাই, সেইটারে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ ঘটনা হিসাবে রিড করবো কেমনে আমরা! এইটাই হইতেছে ফ্যাক্টচুয়াল ডিলেমাটা।

মানে, এই যে হিস্ট্রিকাল ভিউ-পয়েনট থিকা আমরা দেখি, সেইটারেই প্রবলেমেটিক মনে করি আমি। ১৯৪৭’র পর থিকা পুব-পাকিস্তান কখনোই একটা কনফেডারেশনাল স্টেইট হওয়ার দাবি ছাড়ে নাই, ১৯৫৪’র ইলেকশনে যুক্তফ্রন্ট যে জিতলো এবং মুসলিম লীগ নাই হয়া গেলো, সেইটার কারনও ছিল যে পুব-পাকিস্তানরে অনেক কিছু আলাদা কইরা দিতে হবে, এবং এরই পলিটিকাল মেনিফেস্টশন হইতেছে এই সিনেমা। তখন ১৯৬৬’র ছয় দফাও চলে আসছে, যেই জায়গাতে এই সিনেমা ‘বাঙালি’ আইডেনটিটিরে শেইপ-আপ করার কাজটা করছে, পলিটিকালি। এই জায়গাটা নিয়া ডাউট করাটা মোটামুটি ইমপসিবল-ই হবে আসলে।

সেকেন্ড হইতেছে, খান আতাউর রহমান নিজে; যিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) [যেইটা এখন বাংলাদেশে আন-অফিসিয়ালি নিষিদ্ধ] সিনেমা বানায়া মুক্তিযুদ্ধের ইনডিয়ান-নেরেটিভ’টারে বিপদে ফালায়া দিয়া ‘বির্তকিত’ হয়া উঠছেন! তো, উনারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ একজন সার্পোটার হিসাবে দেখলে তো বিপদ! এইটার কনট্রিবিউশনও এইখানে আছে।

থার্ড হইতেছে, এইটা তো যাত্রা-সিনেমা! মানে, বাংলাদেশি সিনেমা আসলে শুরু-ই হইছে ‘রূপবান’ (১৯৬৫) থিকা; যেইটা গেরামের যাত্রা’র একটা সিনেমা-এডাপশন; তখনকার সময়ে ‘আধুনিক’ হইতে চাওয়ার বিপরীতে এইগুলা তো ‘কুসংস্কারচ্ছন্ন’ ঘটনা, এবং কোনভাবেই ‘আর্ট’ হয়া উঠার যোগ্য না – এই নেরেটিভ এখনো খুবই স্ট্রং, যার ফলে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ও যেহেতু যাত্রা-পালা হিসাবে পপুলার ছিল, তারে ‘সিনেমা’ হিসাবে ‘স্বীকৃতি’ দেয়াটাই তো টাফ! এখন না হয় ‘অরিয়েন্টালিজম’ শিখার পরে নাম নিতে রাজি হইতে পারি আমরা, সেইটা তো কয়দিন আগেও পসিবল ছিল না আসলে।
Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →