চেয়ারে ভাতঘুমে ঢলে পড়া কবির চিঠি – নিকানোর পাররা।
নিকানোর পাররা এন্টিপোয়েম আর ইমারজেন্সি পোয়েম লিখেছেন। চিলির লোক তিনি। গণিতবিদ হওয়ার কারণেই বিনয় মজুমদার হবেন তাও তো না। বিনয় মজুমদার গণিতে ডিগ্রীধারী ছিলেন। দুইজন একলোক না। যা ই হোক, এন্টিপোয়েম নিয়ে কোন সংজ্ঞার অবতারণা না করে বরং আমার আর নিকানোর পাররা বিষয়ে বলি।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
নিকানোর পাররা কবি। আমি জীবাণুবিদ। তার কবিতা পড়তে গিয়ে দেখলাম তিনি কাব্যিক এসথেটিকস থেকে বেরিয়ে কেমন গদ্যধর্মী কবিতা লিখেছেন। কবিতাগুলো কেমন যেন ব্যানানা শেপ ফিমেল ফিগারের মত। তো পাররার কবিতা পড়ে তর্জমা করছিলাম। কয়েকটা করার পর মনে হল, এর চাইতে ইছাশুটকি ভর্তা করে গরম ভাত দিয়ে খাওয়াই তো ভাল। তাই ওইটাই করলাম।
এরপর দিন যায়, রাত আসে। বেশ কিছুদিন পর, কবি নাসিফ আমিনের শরনার্থী শিবিরে গিয়ে আমি আশ্রয় নিই। তিনি বললেন, এইরকম চল আছে। তিনি এই তর্জমার নাম দিলেন ‘এক্সপেরিয়েন্সিং আ ফরেইন পয়েট টু মাই ল্যাংগুয়েজ’’। রেফারেন্স দিলেন ফিল্মমেকার রবিউল আলম রবি’র ‘হেডরুমে পিংক ফ্লয়েড’ লেখাটির। লাল জীপের ডায়েরীতে ছাপা হয়েছিল। তো, নিকানোর পাররার কবিতা আসল থেকে ইংরেজি ভার্শন (নকল) নিয়া আসেন ড্যাভিড আংগার। আমি ড্যাভিড আংগারকেই ভর্তাতে কিঞ্চিত মেখে মিশিয়েছি।
মঈন উদ্দিন
…………………………………………………………………………………….
চেয়ারে ভাতঘুমে ঢলে পড়া কবির চিঠি
এক।
আমার কথা রেলগাড়ির মত সোজা
হয়তো সেই সকাল থেইকাই রেলস্টেশনে কি কি ঘটতেছে তা জানি
অথবা দেখা গেল, স্টেশনে আসি নাই বইলা কি ঘটল কিছুই জানি না।
কিন্তু যেইখানেই রই না কেন
আল্লা আমাদের সোজাসুজি কথা বলার তৌফিক দিন।
দুই।
পুরাটা রাত আমি থাইকা থাইকা মেয়েলোক স্বপ্ন দেখছি
তাদের কেউ কেউ আমারে নিয়া রঙ্গ করতেছিল
বাকিরা খামছি দিতেছিল আমারে।
এরা ছাড়তেছিলই না।
স্বপ্নের শেষ পর্যন্ত এরা আমারে নাজেহাল করছে।
আমি তব্দা খাওয়া মুখ নিয়া ঘুম থেইকা উঠলাম
খোয়াবের অর্থ তাইলে কি আমি বরবাদ হয়া গেছি
নাকি এইটা আসলে মরন ভয় আছিল!
তিন।
এরকম পাওয়ারফুল লোকের উপর আস্থা রাখা বেশ কঠিন
যে কিনা তার সন্তান-সন্ততি থেকে আলাদা থাকে
যে যার মতন একা একা
কেননা বুড়া বয়সের ধাক্কা আছে
আর আছে রোগ বালাই
মরার পর কবর দেয়ার ব্যাপারটা বাদই দিলাম।
চার।
আমি লাশবাহী গাড়িতে হেলান দিয়া সিগারেট টানা লোক!
পাঁচ।
কবি ভাই-বোনেরা আমার,
কবিতায় যা ইচ্ছা তাই লেখবেন
নিজের স্টাইল খুইজা নিবেন
কত কবি যে ট্রামের নিচে পইড়া রক্ত দিছেন
এইটা দিয়া প্রমাণ হয়
কবিদের রগ একটা ব্যাপারে ত্যাড়া যে:
কবিতা অনেক রকম!
ছয়।
রোগে শোকে ভুগতেছেন?
বয়স হইছে?
মরনের ভয়ে আছেন?
সব ভুইলা বরং বাংলা সিনেমার নায়িকার মত নাচেন
হাঁস চড়া পুকুর পাড়ে
আলুথালু শাড়ি পইরা
দুই পেগ নিয়া ঢুলুঢুলু
আপনার কমলার কোয়ার মত লাল ঠোঁটে তার ঘ্রাণ।
সাত।
একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন
চাঁদের বুড়ি বইলা আসলে কিছু নাই
(চাঁদ আসলে আপনার মামা লাগেনা)
চেয়ারগুলা আসলে একপ্রকার টেবিলই
প্রজাপতিগুলান আসলে উড়ন্ত ফুলই
উপরের আউলফাউল কথাগুলাই আসলে সত্য।
মরা মানুষের মন থাকে না
একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন
গর্ভকালীন পেটের ফাটা দাগ আসলে কলংক না।
আট।
সজ্ঞানে বা গৌতমবুদ্ধের নির্বাণ ফাঁদে পইড়া
যতবারই শীতের রাইতে সন্ন্যাস নিতে বাইর হইছি
সোনার সংসার ফেইলা
জ্যাকেটটা ফেইলা যাওয়ার কারণে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরতে হইছে
একাকী শুন্য গলির একাকিত্ব থেকে পালাইয়া ঘরে ফিরতে হইছে
মাথার উপর বাদুড়ের ঝাপ্টার ভয়ে ঘরে ফিরতে হইছে
খালি পায়ে ইটের রাস্তায় হাটার দুর্দশা থেকে পলাইয়া ঘরে ফিরতে হইছে।
নয়।
মাল্টিন্যাশনাল বর্গীরা তো সব ফুটছে
ক্ষেতের সব ফসল কাইট্যা নিয়ে গেছে
যতদূর চোখ যায় সব
হালার মার্ক্সও তো সাতবার বেহাত বিপ্লব দেখাইছে
আমরা এখন চোদনা হইয়া রইছি
দশ।
ভ্রমররে তিতা করলার নির্যাস দ্যাও
ব্লো’জব শেষে বীর্যগুলান গলগল ডীপথ্রটে
রক্ত-বিধ্বস্ত প্রতিমন্ত্রীরে ফিল্ডে নিলডাউন কইরা
দাফন প্রাক্কালে তৎকালীন খালি কবরে মুতো
যাও গাভীন দুয়াইয়া আনো
উক্ত বালতিভর্তি দুধ উনার গালে ঝপাস কইরা মারো।
এগারো।
সকালটা ঝড়ো হাওয়া দিয়া শুরু হয়
বাদ যোহর কিছু বজ্রপাত চলে
আর রাইতে শুনশান খালি বিজলি চমকান কবি
বারো।
মন খারাপ করাটা আমার জন্যে বেশ কঠিন
সত্যি বলতে কি
মানুষের বিপদ-আপদ দেখলে আমার হাসিই পায়।
কবি তুন্দুলের আগুনে বসিয়া হাসবে পুষ্পের হাসি
আর আপনারে দিবে কেবল বিশুদ্ধ চাকরির হাহাকার।
তের।
কবির কাজ হইল
শুন্য পৃষ্ঠাকে আরো শুন্যতায় ভরে তোলা
সেটা কি আদৌ পসিবল!
চৌদ্দ।
সুন্দর বড় ভাল লাগে
অসুন্দর বড় পেইন লাগে।
পনেরো।
এই শেষ, আর বলবো না
ধরা খাওয়া লোকগুলাই সর্বময়
এরা সেই প্রজাপতি যেগুলা দেখতে উড়ন্ত ফুলের মতই
এরা কানলে ফোঁকলা দাঁত বাইর হয়
চিৎকার দিলেই দাঁত ফাটায় দেয়া হয়
তার চেয়ে বরং নির্বাক সাদাকালো ব্লু ফিল্ম দেখি গা চলেন
চোদাচুদিও তো সাহিত্যের মতই নির্বাক একটিভিটি।
মঈন উদ্দিন
Latest posts by মঈন উদ্দিন (see all)
- আমার গান কি সাহিত্য? – বব ডিলান - এপ্রিল 25, 2021
- “রসুন চাষের ঘটনাবলী” নভেলের একটা অংশ - মার্চ 18, 2021
- মঈন উদ্দিনের কবিতা - ডিসেম্বর 29, 2020