Main menu

ফরিদ উদদীন আত্তারের “মানতিক-উত-তোয়ায়ের“ বই থিকা কয়েকটা কাহিনি।। লাস্ট পার্ট।।

ফার্স্ট পার্ট

………………………………………………

আমি ধরে নিছি যে, মানকিত উত তোয়ারের (যেইটারে দ্য কনফারেন্স অফ বার্ডস নামেও চিনেন অনেকে) কাহিনি আপনারা জানেন। সব পাখি মিইলা একসাথে হয়া ঠিক করে যে, অরা অদের রাজার লগে দেখা করতে যাইবো; হোপিপাখি অদেরকে লিড দেয়। কিন্তু যখন যাওয়ার টাইম আসে, একেকজন একেকটা সমস্যার কথা কয়। অদের সমস্যাগুলা নিয়া একটা কইরা কাহিনি কয় হোপিপাখি। এই কাহিনিগুলা অই বই থিকা চুজ করা কয়েকটা কাহিনি।

এমনিতে তো একটা তরিকা হইলো, কোন ঘটনা বুঝার লাইগা কনটেক্সট’টারে আগে জানতে চাই বা বুঝতে চাই আমরা। তাইলে ঘটনা’টা বুঝা যায় বা ঘটনা’টা মিনিংফুল হয়া উঠতে পারে তখন। কিন্তু কনটেক্সট তো দুইটা, একটা হইল, যেইখানে ঘটনা ঘটতেছে বা ঘটছিল, আরেকটা হইতেছে যেই জায়গা থিকা আমরা দেখতেছি। এই কারণে, কনটেক্সট অনুযায়ী ঘটনা একইরকমের হইলেও, মিনিংটা একইরকম থাকে না, বরং অনেক সময় উল্টায়াও যায়। অই যে একটা বাণী আছে, ফার্স্ট অ্যাজ ট্রাজেডি, দ্যান অ্যাজ কমেডি…। অইরকম।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

আবার, কিছু কাহিনি বা ঘটনা বা স্পেশালি মিথ বা প্রবাদ-প্রবচনগুলা নানান সিচুয়েশনে রিলিভেন্ট হয়া উঠে, এমনকি ঘটনার সিগনিফিকেন্সটারে আত্মসাত কইরা ফেলে; আলাদা কোন মিনিং হিসাবে সাসটেইনই করতে পারে না। মানে, যা যা মিথ আর মিনিং আমরা জানি, তার বাইরে গিয়া ঘটনারে দেখতে পারি না আর। আমাদের যা জানা-বোঝা, তার ভিতর দিয়াই তো আমরা রিলেট করি। ভাষার যেই রেফারেন্স সিস্টেম, তার বাইরে গিয়া কোন মিনিং প্রডিউস করা পসিবল না। হুমায়ূন আহমেদ একটা গল্পে লিখতেছিলেন, “আমার দুলাভাই একটা খবিশ। (খবিশ মানে কি আমি জানি না।)” মানে জানেন না, এইরকম না, বাজে কিছু, এইটা জানেন, কিন্তু কেমনে যে বাজে জিনিস হিসাবে ভাষাতে আইলো, সেইটা জানেন না, এইরকম। ভাষার মরে না খালি, ভাষার রেফারেন্স সিস্টেমও মারা যায়। যেমন ধরেন, ‘মাউস’ কইলে ইন্দুর বুঝার পসিবিলিটি এখন কমই বাংলা-ভাষায়, কম্পিউটারের মাউস-ই বুঝবো আমরা। একটা ওরাল কালচার থিকা যখন লিখিত বা ছাপানোর জায়গাতে আসছি আমরা, রেফারেন্স সিস্টেমটা চেইঞ্জ হইছে, এখন লিখিত থিকা যখন ডিজিটাল জায়গাতে যাইতেছি, নতুন আরেকটা রেফারেন্স সিস্টেম এমার্জ করার কথা।

তো, চাইলেও নতুন রেফারেন্স সিস্টেম দাঁড়া করানো পসিবল না, এইটা অনেকটা আমাদের কাজ-কাম, চিন্তা-ভাবনা’র লগে রিলেটেড একটা ঘটনা। যেই কারণে সংস্কৃত ভাষা থিকা যেইসব শব্দ আসছিল, সেইগুলা ডেড অলরেডি; আবার না চাইলেও ইউরোপিয়ান চিন্তা-ভাবনার গাহেক হওয়ার কারণে ‘মাউস’, ‘মোবাইল ফোন’ টাইপের জিনিসগুলারে না নেয়ার কোন রাস্তা নাই।… এইভাবে অন্য রেফারেন্স সিস্টেমগুলা ভাষার ভিতরে ঢুইকা পড়ে। এইগুলারে নিতে পারাটা জরুরি, তা নাইলে ভাষাটা ইউজেবল থাকতে পারবে না।

কিন্তু একটা ভাষা যদি মাল্টিপল রেফারেন্স সিস্টেম’রে পসিবল কইরা না তুলতে পারে, অন্য যে কোন ডমিনেন্ট রেফারেন্স সিস্টেমের ডরে নিজেরে গুটায়া নিতে শুরু করে, এইটা তার মরণ-যাত্রা শুরু কইরা দেয়ার কথা।

তো, এই অনুবাদে আমার আগ্রহ আসলে সো-কল্ড ‘বিজ্ঞান-চিন্তা’র বাইরে, রেশনার-এনলাইটমেন্টের বাইরেও আরো আরো যেই চিন্তা-ভাষা আছে, তার একটা নজির’রে সামনে নিয়া আসা। এই ধারণা থিকা রুমি’র কিছু কাহিনিও আমি অনুবাদ করছি। যদিও এই টেক্সট’টা ইংলিশ থিকাই বাংলা করা, তারপরও এই কাহিনিগুলার যেই কনটেক্সট সেইটা ইটসেলফ আরেকটা রেফারেন্স সিস্টেমের ইশারা দিতে পারা’র কথা। মানে, জিনিসটা স্রেফ একটা ‘আধাত্ম্যবাদ’র ঘটনা না আর কি! যেইরকম ইউরোপিয়ান থটপ্রসেসগুলা আমাদেরকে জানায়।

যদিও একটা ইউরোপিয়ান থট-প্রসেসর ভিতর দিয়াই আমার পয়েন্ট’টারে লোকেট করা লাগতেছে, তারপরও আমি ভাবতে চাইতেছি যে, ঘটনা’টা এইটুকই না আর কি! 🙂 মানে, সাইকোলজিক্যাল টার্মে, একটা কনশাসনেসের ভিতর দিয়া অনেকগুলা সাব-কনশাসনেস বা আন-কনশাসনেসরে রিভিল করতেছি না আমরা, ভাষায়; বরং আরো অনেক সাব-কনশাস বা আন-কনশাস যাতে তাদেরকে এক্সপ্লোর করতে পারে, জায়গা দিতে পারে ভাষার ভিতরে, সেই স্পেইসটা ক্রিয়েট করার লাইগা কনশাসলি ট্রাই করতে চাইতেছি। 🙂

২.
এই যে, ‘মানকিত তোয়ার’ – এইটা কোরানের একটা আয়াত থিকা নেয়া, সুলেমান পয়গম্বরের কাহিনি’র সাথে রিলিটেড।

৩.
সব মানুষের ভিতরেই তো শয়তান আছে। তো, এইরকম একটা কাহিনির কথা আমি শুনছি যে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ভিতর থিকা নাকি শয়তানের জায়গাটা সরায়া নেয়া হইছিল বা ছিল না উনার ভিতরে। তো, এইরকম কিছু কোন ব্যক্তি-মানুষের জায়গাতে পসিবল না!

শয়তান তো আছে আর থাকতেছে, ইন এভ্ররি ট্রান্সলেশন। কিন্তু আমি জাইনা-বুইঝা কোন ‘ভুল’ করি নাই আর কি! যা বুঝছি, তা-ই লেখছি। হয়তো আরো বেটার করা পসিবল। বাঁইচা থাকলে আরো কিছু কারেকশন তো করাই হবে। 


ই. হা.

……………………………………………….

।। শেখ সানানের গল্প ।। বায়েজিদ বোস্তামির কাহিনি ।। রাজা আর ভিখারি ।। একটা প্রাসাদ নিয়া একজন দরবেশের ঠাট্টা ।। নিসাপুরের শেখ আবু বকর ।। এক দিওয়ানা আর তার মাশুক ।। মাহমুদের আরেকটা কিচ্ছা ।। মাহমুদ আর আয়াজের আরেকটা কাহিনি ।। পোকাদের কাহিনি ।।

……………………………………………….

শেখ সানানের গল্প

শেখ সানান উনার সময়ে একজন পরজেহগার মানুষ আছিলেন, আর নিজেরে অনেক উঁচা জায়গায় নিয়া যাইতে পারছিলেন। পঞ্চাশ বছর ধইরা উনি উনার দোয়ার ভিতর ছিলেন উনার চারশ মুরিদসহ, যারা দিন রাইত নিজেদের লাইগা কাজ করতো। উনার অনেক এলেম ছিলো, আর ভিতরের আর বাইরের অনেক জিনিস উনি জানতেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় উনি পার করছেন মক্কায় হজ্জ্ব করতে। অসংখ্যবার উনি রোজা রাখছেন আর দোয়া কালাম পড়ছেন আর সুন্নতের কোনটাই বাদ দেন নাই। উনি মিরাকল ঘটাইতে পারতেন, আর তার দম দিয়া অসুস্থ আর বিষন্নদের সারাইয়া তুলতে পারতেন।

এক রাইতে উনি স্বপ্ন দেখলেন যে উনি মক্কা থিকা গ্রীসে গেছেন আর সেইখানে গিয়া একটা মূর্তির পূজা করতেছেন; এইরকম নিঠুর ড্রিম দেইখা খুবই মন-খারাপ হইলো উনার, উনি মুরদিদেরকে ডাইকা কইলেন: ‘আমি এখনই গ্রীসের দিকে রওনা দিতে চাই, এই ড্রিমের মাজেজাটা বুঝতে চাই।’

চারশ মুরিদ নিয়া উনি কাবা ছাইড়া গেলেন আর একটা সময়ে গ্রীসে গিয়া পৌঁছাইলেন। উনারা অই দেশটার শেষ পর্যন্ত ট্রাভেল করলেন, আর একদিন হঠাৎ কইরা একটা জায়গায় আইলেন যেইখানে একটা ইয়াং মাইয়া একটা ব্যালকনিতে দাঁড়ায়া ছিলো। মেয়েটা আছিলো খ্রিষ্টান, আর তাঁর মুখের এক্সপ্রেশনে এইটা দেখা যাইতেছিলো যে খোদার যেই জিনিসের দিকে শে তাকাইবো সেইটাই শে দখল করতে পারবো। তাঁর রূপ আছিলো সূর্যের মতোন চোখ ধাঁধানো, আর তাঁর সম্মান ছিলো রাশিচক্রের সাইনগুলার মতোন। তাঁর ঝলকের প্রতি জেলাসির কারণে সকালের শুকতারা তাঁর বাড়ির উপরে বেশিক্ষণ ধইরা ঝুইলা থাকতো। তাঁর চুলে যার হৃদয় বাঁধা পড়তো সে একজন খ্রিস্টানের বেল্ট পইড়া ফেলতো; তাঁর ঠোঁটের রক্তিমাতে যার বাসনা চমকাইতো, তার মাথা পাগল হয়া যাইতো। তাঁর কালা চুলের কারণে সকালটা কিছুটা কালা হয়া থাকতো, তাঁর চামড়ার কুঁচকানির সৌন্দর্য্যের লাইগা গ্রীসের ল্যান্ড কুঁচকায়া থাকতো। তাঁর দুইটা চোখ ছিলো প্রেমিকদের লাইগা একটা লূর; তাঁর আনত ভ্রুগুলা যমজ চান্দের মাঝখানে ছিলো কোমল কাস্তের মতোন। যখন তাঁর চোখের মণিগুলা চমকাইতো একশটা দিল তাঁর বলি হইতো। একটা জীবন্ত আগুনের শিখার মতোন তার মুখ চকচক করতো, তাঁর ঠোঁটের শুকনা চুণীগুলা পুরা একটা দুনিয়ার পিপাসা নিয়া আসতো। তাঁর ঢিলেঢালা লেইসগুলা ছিল একশোটা চাকুর মতো, আর তাঁর মুখ এতোটাই ছোট ছিলো যে ইভেন শব্দগুলাও পার হইতে পারতো না। তাঁর কোমর, একটা চুলের মতোন সরু, তাঁর জুনারের লগে মিইশা থাকতো; আর তাঁর থুতনির রূপালি টোল যিশুর উপদেশগুলার মতোন ছিল প্রাণবন্ত।

যখন শে তাঁর ঘোমটার একটা কোণা তুললো শেখের দিলে তো আগুন লাইগা গেলো; আর একটা চুল তার কোমরের জামারে বাইন্ধা রাখছিলো যেইখানে ছিল একশোটা জুনার। ইয়াং খ্রিষ্টানের দিক থিকা সে তার চোখ ফিরাইতে পারতেছিলো না, আর তার এতোটাই মহব্বত ছিলো যে তার ইচ্ছা তার হাতের মধ্যে ছিলো না। মেয়েটার চুল থিকা অবিশ্বাস আইসা তার বিশ্বাসের উপর ছড়াইয়া পড়ছিলো। সে চিল্লায় উইঠা কইলো: ‘আহ, কি ভয়ানক এই ভালোবাসা, যা আমার তাঁর লাইগা আছে। যখন ধর্ম তোমারে ছাইড়া যায়, মনের মধ্যে ভালো আর কি থাকতে পারে!’

যখন তার লগের মানুষজন বুঝলো কি ঘটছে, আর দেখলো সে কি অবস্থায় আছে, তারা তাদের মাথায় হাত দিয়া বইসা পড়ল। তারে যুক্তি দেখাইতে গেল, কিন্তু সে কথা শুনতে অস্বীকার করল। সে খালি দিন রাইত খাড়ায়া থাকলো, তার চোখ ব্যালকনির উপরে ফিক্সড হয়া থাকল আর তার মুখ খোলা হয়া থাকল। তারাগুলা, যেইগুলা বাতির মতোন জ্বলতো এই পবিত্র মানুষের মনের ভিতরে যেই আগুন জ্বলতেছিল তার থিকা তাপ ধার নিতো। তার মহব্বত বাড়তে লাগল, যতক্ষণ না সে তার নিজেরে তার সাথে পাইলো। ‘হে খোদা,’ সে দোয়া করলো, ‘আমার লাইফে আমি রোজা রাখছি আর কষ্ট করছি, কিন্তু কোনদিনও এইভাবে কষ্ট আমি পাই নাই; আমি ছারখার হয়া যাইতেছি। রাতটা তার চুলের মতোন কালা। বেহেশতের বাতি কই? আমার আহাজারি কি এইটা নিভায়া দিছে নাকি জেলাসির কারণে সে নিজেরে লুকায়া ফেলছে? কই আমার খুশ নসিব? কেন সে আমারে এই মেয়ের মহব্বত আমারে পাইতে দেয় না? কই আমার যুক্তি, যা আমার এলেমরে ইউজ করতে দেয় না? কই আমার হাত, আমার মাথায় ধূলা ঢালার লাইগা? কই আমার পা, আমার মাশুকের দিকে হাঁইটা যাওয়ার লাইগা, আমার চোখ কই, তার মুখ দেখার লাইগা? কই আমার মাশুক, যে আমারে তার হৃদয় দিবে? এই মহব্বত, এই কষ্ট, এই পেইন, কি জিনিস এইগুলা?

শেখের ফ্রেন্ডরা আবার তার কাছে আসলো। একজন কইলো: ‘ও কাবিল শেখ, নিজেরে তুমি তোলো আর এই লোভ ছাইড়া দেও। নিজেরে ধইরা রাখো আর অযু করো।‘ উনি জবাব দিলেন: ‘তোমরা কি জানো, আজকে রাতে আমি একশবার অযু করছি, আর করছি আমার দিলের লহু দিয়া?‘  আরেকজন কইলো: ‘আপনার তসবি কই? এইটা বাদ দিয়া আপনি দোয়া কেমনে করবেন?‘ উনি জবাব দিলেন: ‘আমি আমার তসবি ফালায়া দিছি যাতে আমি একটা খ্রিষ্টান জুনার দিয়া নিজেরে বানতে পারি।‘ আরেকজন কইলো: ‘হে পরজেহগার মানুষ, যদি আপনি পাপ কইরা থাকেন দেরি না কইরা তওবা করেন।‘  ‘আমি এখন তওবা করি,‘ উনি জবাব দিলেন, ‘সত্যিকারের নিয়ম ফলো করার লাইগা, আর আমি ভাবি আমি যদি খালি এই অ্যাবসার্ডিটি বাদ দিতে পারতাম।‘ আরেকজন কইলো: ‘এই জায়গা ছাড়েন আর আল্লার কাছে মাথা নত করেন।‘ উনি জবাব দিলেন: ‘যদি আমার খোদা আজকে এইখানে থাকতো তাইলেও আমি তো অই মেয়েরে সিজদা দিতাম।‘ আরেকজন কইলো : ‘তাইলে, আপনি তওবা করার ট্রাইও করবেন না! আপনে আর ইসলামের রাস্তায় নাই?‘ শেখ জবাব দিলেন: ‘আমার চাইতে বেশি অনুতাপ আর কেউ করে নাই এখন পর্যন্ত যে আমি কেন আরো আগে প্রেমে পড়ি নাই।‘ আরেকজন কইলো: ‘নরকের এলাকা আপনার লাইগা ওয়েট করতেছে, আপনি যদি এই রাস্তাতেই চলতে থাকে; দেইখা চলেন, তাইলে আপনি পার পাইতে পারবেন।‘ উনি জবাব দিলেন: ‘যদি অইখানে নরক থাকে, এইটা খালি আমার আহাজারিতে আছে, যা সাতটা নরকরে ভইরা তুলতে পারে।‘

অরা দেখলো যে অদের কথার কোন এফেক্টই নাই শেখের উপরে, যদিও তারা সারা রাইত ধইরা তারে মিনতি করলো, তারপরে তার ফ্রেন্ডরা চইলা গেলো। এই সময়ে সকালের তুর্কি আসলো, তাদের সৈন্যদের আর সোনালি ঢালগুলা নিয়া, কালো রাইতের মাথা কাইটা দিলো, যাতে কইরা ইল্যুশনের দুনিয়াটা সূর্যের রশ্মির মধ্যে গোসল করলো। শেখ, যে ছিলো তার প্রেমের খেলনা, কুত্তাদের লগে
ঘুরতেছিল, আর একমাসের মতোন রাস্তায় বইসা ছিল তার প্রেমিকার মুখ দেখার লাইগা। ধূলা ছিল তার বিছানা আর তার প্রেমিকার ঘরের চৌকাঠ ছিল তার বালিশ।

তখন সুন্দরী খ্রিষ্টানটা, যখন দেখলো যে সে অসহায়ভাবে প্রেমে পড়ছে, তাঁর ঘোমটা খুললো, তার কাছে আসলো আর তারে কইলো: ‘ও শেখ, এইটা কেমনে হইলো, তোমার মতো একজন সাধু মানুষ, পলিথিয়াজমের ওয়াইন খাইয়া মাতাল হয়া গেলা, আর একজন খ্রিষ্টানের রাস্তায় এমনে বইসা রইলা? তুমি যদি আমারে এমনে ভালোবাসতে থাকো তুমি তো পাগল হয়া যাবা।‘ শেখ জবাব দিলো: ‘এইরকম হইছে কারণ তুমি আমার দিল চুরি করছো। হয় এইটা আমারে ফেরত দাও অথবা আমার প্রেমরে একসেপ্ট করো। যদি তুমি চাও আমি তোমার লাইগা আমার জীবন বিছায়া দিবো, কিন্তু তোমারে সেই লাইফরে ঠিক কইরা দিতে হবে তোমার ঠোঁটের একটা ছোঁয়া দিয়া। তোমার লাইগা আমার দিলে আগুন জ্বলতেছে। বৃষ্টির মতোন কানছি আমি আর আমার চোখের দৃষ্টি হারায়া ফেলছি। যেইখানে আমার হৃদয় ছিল সেইখানে আছে খালি রক্ত। যদি আমি তোমার লগে মিশতে পারি তাইলে আমার লাইফ ঠিকঠাক হবে। তুমি হইতেছো সুরুজ, আমি হইতেছি ছায়া। আমি একটা হারায়া যাওয়া মানুষ, কিন্তু যদি তুমি আমারে নাও আমি আমার ডানার নিচে দুনিয়ার সাতটা
গম্বুজরে নিয়া নিতে পারবো। আমারে ছাইড়া যাইও না, আমি মিনতি করি তোমারে!‘

‘অ, বুইড়া ভাম!‘ শে কইলো, ‘তোর কি লজ্জাও নাই নিজের দম দেয়া কাপড়ে কর্পূর ইউজ করার লাইগা? তোর ঠান্ডা দমের লগে আমার ইন্টিমেসির কথা কওয়ার আগে তোর তো একটু শরম পাওয়া উচিত ছিল! তোর উচিত আমার পিছে সময় নষ্ট না কইরা একটা কাফনের কাপড় দিয়া নিজেরে প্যাঁচায়া রাখা। তোমার পক্ষে প্রেম করা সম্ভব না। যাও এইখান থিকা!‘

শেখ জবাব দিল: ‘তোমার যা খুশি বলো, আমি তারপরও তোমারে ভালোবাসবো। কে ইয়াং, কে বুইড়া, এইটা কোন ঘটনাই না, মহব্বত সব দিলেরেই তব্দা বানায়া দেয়।‘

শে কইলো: ‘খুবই ভালো কথা, তোমারে বাদ দিতেছি না আমি, আমার কথা শোনো। ইসলাম থিকা তুমি হাত ধুইয়া ফেলো; যেই মহব্বত তার মাশুকের লগে এক না হইতে পারে, সেইটা তো খালি রং আর সুগন্ধ।‘

সে কইলো: ‘তুমি যা চাইবা আমি সেইটাই করবো। তুমি যা আদেশ করবা আমি সেইটাই করবো, তুমি, যার শরীর রূপার মতো, আমি তোমার দাস। তোমার একটা চুল আমার নাকের উপ্রে রাখো, আমারে আমার দাসত্বের কথা মনে করানোর লাইগা।‘

‘যদি তুমি এক কথার মানুষ হয়া থাকো,‘ ইয়াং খ্রিষ্টানটা কইলো, ‘তোমার চারটা জিনিস করা লাগবো: মূর্তিদের সামনে পূজা দিবা, কোরান পুড়াইবা, ওয়াইন খাইবা, আর তোমার ধর্মের দিকে তাকানো বন্ধ করবা।‘

সে কইলো: ‘আমি তোমার সৌন্দর্য্যের প্রতি তাকায়া ওয়াইন খাইতে পারি কিন্তু বাকি তিনটা কাজ তো আমি করতে পারবো না।‘ ‘খুবই ভালো কথা,‘ শে কইলো, ‘আসো আর আমার লগে ওয়াইন খাও, বাকি শর্তগুলা খুব তাড়াতাড়িই একসেপ্ট করবা। ‘

শে তারে নিয়া জাদুকরদের একটা মন্দিরে গেল, যেইখানে খুব আজিব ধরণের একটা গেদারিং হইতেছিল। একটা মজমার ভিতরে অরা বসলো যেইখানে সেবিকা তাঁর বিউটির কারণে অন্য সবার চাইতে আলাদা ছিল। তার মাশুক তারে ওয়াইনের একটা কাপ দিলো, আর যখন সে এইটা নিলো আর তাঁর চূণীর মতোন ঠোঁটগুলার দিকে তাকাইলো, একটা ছোট বাক্সের দুইটা পাল্লার মতোন, তার হৃদয়ে আগুন লাইগা গেলো আর একটা রক্তের ধারা তার চোখে উইঠা গেলো। ধর্মের উপর লেখা গোপন বইগুলার কথা সে ভাবতে চাইলো যা সে লিখছিল আর পড়ছিল, আর কোরানের কথা যা খুব ভালোভাবে জানতো; কিন্তু যখন ওয়াইনটা কাপ থিকা তার পেটে পৌঁছাইল, সে সবকিছুর কথা ভুইলা গেলো; তার সব স্পিরিচুয়াল এলেম ভাইসা গেলো। সে তার ইচ্ছাশক্তি হারায়া ফেললো আর তার হৃদয়রে তার হাত থিকা ফসকায়া যাইতে দিলো। যখন সে তার হাত দিয়া তাঁর ঘাড় জড়ায়া ধরতে নিলো তখন শে কইলো: ‘তুমি খালি প্রেম দেখানোর ভান করতেছো। তুমি প্রেমের মিস্ট্রিটাই বুঝো না। যদি তুমি তোমার প্রেম নিয়া শিওর হইতা তুমি বন্ধ তালাগুলা খুঁইজা পাইতা। নিজেরে অবিশ্বাসের মধ্যে ছাইড়া দাও আমার ছোট আঙটির জটের ভিতর; আমার চুলের গোছারে ফলো করো, আর তাইলে তখন তুমি আমার ঘাড়ে হাত রাখতে পারবা। কিন্তু যদি তুমি আমার রাস্তা ফলো না করো, উঠো আর চইলা যাও; আর একটা ফকিরের ছদ্মবেশ আর জিনিসগুলা নিয়া যাও।‘

এই কথা শুইনা, কামুক শেখের ঝুঁটি পইড়া গেলো; আর এখন উনি বুঝতে পারলেন উনার নিয়তির উপর কোনকিছু করার নাই। যেই ওয়াইন উনি খাইছেন সেইটা তার মাথারে কম্পাসের মতোন আনসার্টেন কইরা দিলো। ওয়াইনটা ছিল পুরান আর তার প্রেম ছিল ইয়াং। মাতাল না হয়া আর প্রেমে না পইড়া উনি আর কি ই বা করতে পারতেন?

‘হে চান্দের আলো,’ উনি কইলেন, ‘কও তুমি কি চাও। আমি যে আগে ইমেজের পূজা করি নাই, আমি আমার আক্কেল হারায়া ফেলছিলাম, এখন আমি মাতাল আছি, আমি ইমেজের সামনে কোরান পুড়ায়া ফেলবো।

ইয়াং সুন্দরী কইলো: ‘এতোক্ষণে তুমি আমার মানুষ হইছো। তুমি আমার যোগ্য হইছো। এর আগ পর্যন্ত তুমি প্রেমে কাঁচা আছিলা, এখন এক্সপেরিয়েন্সড হইছো, তুমি পাকা হইছো। গুড!’

যখন খ্রিষ্টানরা শুনলো যে শেখ তাদের বিশ্বাসরে মাইনা নিছে তারে তারা তুইলা নিয়া গেলো চার্চে, মাতাল অবস্থাতেই, আর তারে কইলো কোমরে একটা জুনার বানতে। উনি তাই করলেন আর তার দরবেশের আলখাল্লা আগুনে ফালায়া দিলেন, বিশ্বাসের কারণে, আর নিজেরে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রাকটিসগুলাতে নিয়া গেলেন।

উনি মেয়েটারে কইলেন: ‘ও আমার মনমোহিনী নারী, আমি তোমার লাইগা যা করছি কোনদিন কোন মেয়ের লাইগা কেউ এইরকম করে নাই। আমি তোমার ইমেজগুলারে পূজা করছি, আমি ওয়াইন খাইয়া মাতাল হইছি, আর আমি সত্যিকারের বিশ্বাস ছাইড়া দিছি। এইসবই আমি করছি তোমার মহব্বতের লাইগা, আর যাতে আমি তোমারে পাইতে পারি।’

আবার শে তারে কইলো: ‘বুড়া ভাম, প্রেমের দাস, তোমার মতোন একটা ফকিরের লগে কেমনে  আমার মতোন একটা মেয়ে থাকতে পারে? আমার সোনা রূপা দরকার, আর তোমার তো কিছু নাই, তোমার মাথাটা নেও আর যাও।’

শেখ কইলেন: ‘ও সুন্দরী মহিলা, তোমার শরীর তো একটা কার্পাস আর তোমার স্তনগুলা রূপা। তুমি যদি আমারে তাড়ায়া দাও, তুমি তো আমারে গায়েব কইরা দিবা। তোমারে পাইবার ভাবনা আমারে একটা অশান্তির ভিতরে ফেলছে। তোমার কারণে আমার দোস্তরা আমার দুশমন হয়া গেছে। তুমি যেমন, তারাও তেমন; কি করবো আমি তাইলে? ও আমার জান, আমি তো তোমারে নিয়া দোজখেও
থাকতে রাজি, তোমারে ছাড়া বেহেশতে থাকার চাইতে।

শেষে তাঁর মন ফিরলো, আর শেখরে তার নিজের মানুষ বানাইলো, আর শেও প্রেমের আগুন টের পাইতে লাগলো। কিন্তু তারে আরো পরীক্ষা করার লাইগা কইলো: ‘এখন, আমার যৌতুক দিবার লাইগা, অ ঊন মানুষ, যাও আর আমার শুয়োরের পালরে এক বছরের লাইগা দেখাশোনা করো, আর তারপরে আমরা আমাদের জীবন সুখে দুখে একলগে কাটাবো!’ কোন প্রটেস্ট না কইরা, কাবার শেখ, এই দরবেশ, শুয়োরের খামারি হইতে চললো।

আমাদের সবার ভিতরেই একশোটা শুয়োর আছে। এই তুমি, যে কিছুই না, ভাবতেছো খালি শেখই এই বিপদের মধ্যে আছে! এই বিপদ আমাদের সবার ভিতরেই পাওয়া যাবে, আর এইটা তখনই মাথাচাড়া দেয় যখন আমরা সেলফ-নলেজের দিকে চলা শুরু করি। যদি তুমি নিজের শুয়োরদেরকে না চিনো, তাইলে তুমি তো নিজের পথরে চিনো নাই। যদি তুমি ঠিকঠাকমতো চিনো তাইলে তুমি হাজারটা শুয়োরের দেখা পাইবা – হাজারটা মূর্তির। এই শুয়োরগুলারে সরায়া দাও, মূর্তিগুলারে পুড়ায়া ফেলো মহব্বতের সমতলভূমিতে; তা নাইলে এই শেখের মতোন হবা, মহব্বতের কারণে মানসম্মান হারাইবা। তো, তখন, এই নিউজ ছড়ায়া পড়লো যে, শেখ খ্রিষ্টান হয়া গেছে, তার সঙ্গীসাথীরা তো খুবই বিপদে পড়লো আর একজন বাদে সবাই চইলা গেলো, সে উনারে কইলো: ‘এই ব্যাপারে আমাদেরকে বলেন যাতে আমরাও আপনার লগে খ্রিষ্টান হইতে পারি। আমরা চাই না যে খালি আপনি একলাই ধর্মত্যাগী হন, আমরাও তাইলে খ্রিষ্টানি জুনার নিবো। যদি আপনি রাজি না হন আমরা কাবা’তে ফিরা যাবো আর নামাজ-কালাম পইড়া আমাদের টাইম পার করবো, এখন যা দেখতেছি তা দেখবো না আর।‘

শেখ কইলেন: ‘আমার আত্মা বিষাদে ভরা। তোমাদের ইচ্ছা যেইখানে নিয়া যায় সেইখানে যাও তোমরা। আমার লাইগা, চার্চই হইতেছে আমার জায়গা, আর এই ইয়াং খ্রিষ্টানিই হইতেছে আমার মঞ্জিলে মাকসুদ। তুমি কি জানো কেন তুমি ফ্রি? কারণ  তুমি আমার পজিশনে নাই। যদি তুমি থাকতা,আমি আমার কষ্টের প্রেমে একজন সাথী পাইতে পারতাম। এই কারণে চইলা যাও, প্রিয় বন্ধু আমার, কাবা’র কাছে, কারণ কেউ আমার এখনকার অবস্থা শেয়ার করতে পারবো না। যদি অরা আমার কথা জিগায়, বইলো: “তার চোখ রক্তে ভরা, তার মুখ বিষে ভরা; সে ড্রাগনদের ভায়োলেন্সের মুখের ভিতরে পইড়া আছে। কোন বিধর্মীও এইটাতে সায় দিবো না নিয়তির ফেরে পইড়া এই প্রাউড মুসলমান যেই কাম করছে। এক ইয়াং খ্রিষ্টানি তাঁর চুল দিয়া তারে ঘাড়ে প্যাঁচায়া ধরছে।“ যদি তারা আমার নিন্দা করে, বইলো এই পথে চলতে গিয়া অনেকেই পইড়া যায়, যেইটা শুরুও না, শেষও না, কিন্তু বাই চান্স কেউ উতরাই আর বিপদ থিকা সেইফ থাকতে পারে।‘ এই কথা বইলা সে তার দোস্তের কাছ থিকা মুখ ফিরায়া নিলো আর তার খোঁয়ারে ফিরা গেলো।

তার ফলোয়াররা, যারা তারে একটু দূরে থিকা দেখতেছিলো, খুবই কান্দাকাটি করল। শেষমেশ, তারা কাবা’র পথে ফিরা গেলো, আর শরম পাইয়া আর হতভম্ব হয়া একটা কোণায় অরা লুকায়া থাকল।

এখন কাবা’তে শেখের এক দোস্ত আছিলো যে দেখতে পাইতো, আর যে সত্যের পথে আছিল। শেখরে তার চাইতে ভালোমতো আর কেউ জানতো না, যদিও সে তার লগে গ্রীসের পথে যায় নাই। মানুষটা যখন তার সাগরেদদেরকে খবরাখবর জিগাইলো যে, শেখের কি হইছে, আর তারা জিগাইলো একটা গাছের বিশ্রী ডাল বুকের ভিতর ঢুকলে কি হয়, আর এইটা কি নিয়তির দোষে ঘটে। অরা কইলো এক ইয়াং বিধর্মী তারে একটা চুল দিয়া বাইন্ধা ফেলছে আর ইসলামের শত পথে খিল দিয়া রাখছে। ‘সে অর আংটিগুলা নিয়া আর তিলগুলা নিয়া খেলা করছে, আর তার আলখাল্লা ছিঁড়া ফেলছে। সে তার ধর্মরে ছাইড়া দিছে আর একটা জুনার দিয়া নিজেরে বানছে, একটা শুয়োরের খোঁয়ার দেখাশোনা করে। কিন্তু যেহেতু সে তার আত্মারে বাজি ধরছে, আমরার মনেহয় এখনো কিছু আশা আছে।‘

এইটা শুইনা, দোস্তের চেহারা পুরা সোনালি হয়া উঠলো আর সে বিলাপ কইরা কানতে লাগলো। তখন সে কইলো: ‘দুর্ভাগ্যের সময়ে, ধর্মে যারা সঙ্গী, তাদের মধ্যে কোন পুরুষ বা নারী নাই। যখন কোন দুর্ভাগা দোস্ত বিপদে পড়ে তখন মাঝে-মধ্যে এইরকমও হয় যে এক হাজার মানুষের ভিতরে একজন মানুষই কাজে লাগে।‘ সে তখন তাদেরকে বকাঝকা করলো শেখরে ছাইড়া আসার লাইগা আর কইলো তার লাইগা অদের সবারও খ্রিষ্টান হওয়া দরকার ছিল। সে আরো কইলো: ‘একজন দোস্ত সবসময় একজন দোস্ত। খারাপ সময়েই টের পাওয়া যায় যে কার উপরে ভরসা করা যায়; ভালো সময়ে তো তুমি হাজারটা দোস্ত পাবা-ই।  এখন শেখ যেহেতু কুমিরের মুখে পড়ছে সবাই তার কাছ থিকা সইরা আসছে নিজেদের রেপুটেশন ধইরা রাখার লাইগা। এই অদ্ভুত ঘটনার লাইগা যদি তোমরা তারে ছাইড়া থাকো, তোমাদের ট্রাই করা উচিত আর খুঁইজা পাওয়া দরকার চাহাত কি জিনিস।‘

‘আমরা উনার লগে থাকতে চাইছিলাম,’ অরা কইলো, ‘আর এমনকি মূর্তিপূজারীও হইতে রাজি ছিলাম। কিন্তু উনি একজন অভিজ্ঞ আর জানা-শোনা মানুষ, আর আমরা উনারে ট্রাস্ট করছি, তো যখন উনি বলছেন আমাদেরকে চইলা যাওয়ার লাইগা, আমরা এইখানে চইলা আসছি।‘

বিশ্বাসী সাগরেদ তখন উত্তর করলেন: ‘যদি তুমি সত্যি সত্যিই কাজ করতে চাও তোমার তো খোদার দরবারে নক করা দরকার; তারপরে, নামাজ পইড়া, তুমি তাঁর প্রেজেন্সে দাখিল হইতে পারতা। খোদার কাছে তোমার শেখের লাইগা আর্জি জানাইতে পারতা, একেকজন একেকটা দোয়া পইড়া; আর খোদা তোমরার জেরবার অবস্থা দেইখা তারে তোমরার কাছে ফেরত দিয়া দিতো। কেন তোমরা খোদার দরবারে আর্জি জানানো থিকা বিরত থাকলা?’

এইটা শুইনা অরা শরমে অদের মাথা নিচা কইরা রাখলো। কিন্তু সে কইলো: ‘খেদ করার কোন টাইম নাই আর। চলো আমরা খোদার দরবারে যাই। ধূলায় গিয়া শুইয়া পড়ি, আর মিনতির কাপড়ে নিজেদেরকে জড়ায়া রাখি তাইলে আমরা হয়তো আমাদের নেতারে ফিরা পাইতে পারি!’

সাগরেদ’রা তখনই গ্রীসের পথে রওনা দিলো, আর অইখানে পৌঁছায়া অরা শেখের ধারে কাছে থাকলো। চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাইত ধইরা অরা দোয়া করলো। এই চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাইত অরা না করলো খাওয়া-দাওয়া আর না ঘুমাইল; অরা রুটিও খাইলো না, পানিও না। শেষমেশ এই খাঁটি মানুষদের দোয়া বেহেশতে গিয়াপৌঁছাইলো। ফেরেশতারা আর সব দরবেশরা সবুজ কাপড় পিইন্দা উঁচাতে আর উপত্যকাগুলাতে ছিলেন, এখন শোকের পোশাক পিইন্দা একলগে দাঁড়াইলেন। দোয়ার তীর তার জায়গায় পৌঁছাইছিল। যখন সকাল হইল, কস্তুরীর সুবাসঅলা সুন্দর একটা বাতাস বিশ্বাসী সাগরেদের কামরার উপর দিয়া বইয়া গেলো, আর তার আত্মার কাছে দুনিয়ার পর্দা উইঠা গেলো। সে দেখলো নবী মুহাম্মদ (সঃ) আসতেছেন, সকালের মতোন উজ্জ্বল, তাঁর দুইটা চুলের ঝুটি তাঁর বুকের উপর পইড়া আছে; খোদার ছায়া তাঁর চেহারায় সুরুজের মতোন ভাসতেছিল, তাঁর প্রতিটা চুলে একশটা দুনিয়া ঝুইলা ছিল। তাঁর দয়ালু হাসি সব মানুষরে তাঁর দিকে টানতেছিল। সাগরেদ উইঠা দাঁড়াইলো আর কইলো: ‘ও খোদার নবী, সব প্রাণীদের পথপ্রদর্শক, আমারে হেল্প করেন! আমাদের শেখ বিপদগামী হইছেন। উনারে পথ দেখান, মহামহিমের নামে আপনার কাছে মিনতি করতেছি আমি!’

মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন: ‘শোনো, তুমি যে ভিতরের চোখ দিয়া জিনিসগুলারে দেখো, তোমার এই চেষ্টার কারণে তোমার খাঁটি বাসনারে কবুল করা হবে। খোদাতালা আর শেখের মাঝখানে অনেকদিন ধইরা একটা কালা দাগ ছিল; কিন্তু আমি মিনতির শিশিরের ফোঁটা রাখছি আর তার অস্তিত্বের ধুলার উপরে সেইটা ছড়ায়া দিছি। সে তওবা করছে আর তার গুনাহ মুইছা ফেলা হইছে। একশটা দুনিয়ার ভুলগুলা মাফ হয়া যাইতে পারে একটা মোমেন্টের তওবার ভিতর দিয়া। যখন সদিচ্ছার সাগর নড়তে থাকে তার ঢেউগুলা পুরুষ আর মহিলার সব গুনাহরে ভাসায়া নিয়া যাইতে পারে।‘

এই ভক্ত এমন কান্দা কানছেন যে সব বেহেশতরে নাড়ায়া দিছেন। সে দৌড়ায়া গেলো আর তার সঙ্গীসাথীদেরকে ভালো খবরের কথা কইলো, তারপরে খুশির কান্দা তাড়াতাড়ি শেখের কাছে নিয়া গেলো যেইখানে সে শুয়োরগুলারে রাখতেছিল। কিন্তু শেখ ছিল একটা আগুনের মতোন, যে জ্বলতেছিলো। সে তার খ্রিষ্টানের বেল্ট খুলে ফেলছিলো, কোমরবন্দ ছুঁইড়া ফেলছিলো, তার মাথা থিকা মাতলামির শিরস্ত্রাণ ছিঁড়া ফেলছিলো আর খ্রিষ্টানিটি ত্যাগ করছিল।  সে দেখলো সে কে আছিলো আর উপরের দিকে হাত তুইলা চোখ দিয়া অনুতাপের পানি ঝরাইতে লাগলো; যা সবকিছু সে ফেলে দিছিল – কোরান, রহস্যময়তা আর প্রফেসিগুলা, তার কাছে ফিরা আসলো, তার দুর্দশা আর মুর্খতা থিকা সে আজাব পাইলো। অরা তারে কইলো: ‘এখন সবুর করার আর শুকরিয়া জানানোর সময়। নবীজি আপনার লাইগা মধ্যস্থতা করছেন। খোদার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন যে উনি আপনারে আলকাতরার একটা সাগর থিকা তুইলা সুরুজের পথে আপনার পা’রে নিয়া আসছেন।‘

এই কথার উপরে শেখ তার খিড়কা পড়লেন,অযু করলেন, আর হিজাজ করতে চললেন।

এইসব কিছু যখন ঘটতেছিলো তখন খ্রিষ্টান মেয়েটা একটা স্বপ্ন দেখলো যে, সুরুজটা তার উপরে ডুইবা যাইতেছে, আর এই শব্দগুলা শুনলো: ‘তোমার শেখরে ফলো করো, তার বিশ্বাসরে আঁকড়ায়া ধরো, তার ধূলা হও। যেই তুমি কলুষিত হয়া আছো, সে এখন যেমন পবিত্র আছে, তার মতোন হও। তুমি তারে তোমার পথে টানছিলা, এখন তার পথে যাও।‘

শে জাইগা উঠলো; তাঁর আত্মার ভিতরে একটা আলো ঢুকলো, আর শে তাঁর যাত্রার জন্য তৈরি হইল। তাঁর হাত তাঁর হৃদয়রে দখল করলো, আর হৃদয় তাঁর হাত থিকা পইড়া গেলো। কিন্তু যখন শে বুঝলো যে শে তো একলা, আর কোন দিকে যাইবো কোন আইডিয়া নাই, তাঁর আনন্দ তাঁর কান্দায় পরিণত হইলো আর দৌড়ায়া গিয়া তাঁর মাথায় ধুলা ছুঁইড়া মারলো। তখন শে শেখ আর তার সাগরেদেরকে খুঁজতে বাইর হইলো; কিন্তু ক্লান্ত হয়া আর ক্ষিপ্ত হয়া ঘামে জবজবা হয়া, নিজেরে শে মাটিতে ফেলে দিলো আর কাইন্দা কইলো: ‘খোদা, আমারে মাফ কইরা দাও! আমি তো মহিলা, জীবন নিয়া ত্যক্ত। আমারে আর আঘাত দিও না, আমি না বুইঝা তোমারে আঘাত করছিলাম আর আমার না-বুঝের কারণে অনেক ভুল করছি।  যেই বাজে কাজ আমি করছি, ভুইলা যাও। সত্যিকারের বিশ্বাসরে আমি গ্রহণ করছি।‘

একটা ভিতরের আওয়াজ শেখরে এইটা নিয়া জানাইলো। সে থামলো আর কইলো: ‘ইয়াং মাইয়াটা তো আর বিধর্মী নাই। তাঁর কাছে রশ্মি আসছে আর শে আমাদের পথে আসছে। চলো ফিরা যাই। এখন কেউ পাপ ছাড়াই তার মাশুকের সাথে মিলতে পারবো।‘

কিন্তু উনার সঙ্গীসাথীরা কইলো: ‘এখন তাইলে আপনার অনুতাপের আর প্রায়শ্চিত্তের কি মানে থাকলো! আপনি কি আপনার প্রেমের কাছেই ফিরা যাইবেন?’ উনি যেই আওয়াজ শুনছেন সেইটার কথা উনি অদেরকে কইলেন, আর মনে করায়া দিলেন যে, উনি আগের পথে ফিরা আসছেন। তো,তারা ফিরা গেলো যেইখানে মেয়েটা পইড়া ছিল। তাঁর চেহারা থিকা হইলদা সোনার আভা মুছে গেছিল, তাঁর পায়ে ছিল না কিছু, তাঁর জামা-কাপড় ছিল ছিঁড়া। যখন শেখ তাঁর দিকে ঝুঁকলো শে জ্ঞান হারায়া ফেললো। যখন তাঁর জ্ঞান ফিরলো, গোলাপের থিকা শিশির ঝইরা পড়ার মতোন শে কানতে লাগলো, আর শে কইলো: ‘তোমার লাইগা আমি শরমে মারা যাইতেছি। গোপনের পর্দাটা সরায়া দাও আর আমারে ইসলাম কবুল করাও যাতে আমি পথটাতে হাঁটতে পারি।‘

যখন এই ফর্সা পুতুল বিশ্বাসীদের দলে যোগ দিল, সঙ্গীসাথীদের চোখ থিকা আনন্দের পানি ঝইরা পড়লো। কিন্তু তাঁর মন অস্থির হয়া ছিল বেদনার কাছ থিকা ছাড়া পাওয়ার লাইগা। ‘অ শেখ,’ শে কইলো, ‘আমার শক্তি শেষ হয়া গেছে। আমি এই ধুলার বধির দুনিয়া ছাইড়া যাইতে চাই। বিদায়, শেখ সানান। আমার দোষ আমি স্বীকার করতেছি। আমারে মাফ কইরা যাও, আর যাইতে দাও।‘

তো, এই চান্দের মতোন সুন্দরের, যার অর্ধেকের বেশি লাইফ ছিল না, তাঁর হাত থিকা সেইটাও পইড়া গেল। সুরুজটা মেঘের পিছনে চইলা গেল যখন তার মিষ্টি আত্মা তাঁর শরীরের থিকা আলাদা হয়া গেল। শে, যে মায়ার সাগরের একটা ফোঁটা ছিল, সত্যিকারের সত্যিকারের সাগরে ফিরা গেল।

আমরা সবাই বাতাসের মতোই চইলা যাই; শে চইলা গেছে আর আমরাও চইলা যাবো। প্রেমের পথে মাঝে-মধ্যেই এইরকমের ঘটনা ঘটে। এইখানে আছে হারায়া যাওয়া আর দয়া, মায়া আর জামিন।  যেহেতু ডিজায়ারের শরীর গোপনগুলারে বুঝতে পারে না, দুর্দশাও খুশ নসিবের পলো বল’রে ধরতে পারে না।  আমাদেরকে শুনতে হবে মনের আর হৃদয়ের কান দিয়া, শরীরেরটা দিয়া না। আত্মার আর শরীরের বাসনার এই সংগ্রামের কোন শেষ নাই। বিলাপ করো! কারণ দুঃখ করার কারণ আছে এইখানে।

 

বায়েজিদ বোস্তামির কাহিনি

এক রাতে শেখ বায়েজিদ যখন শহর থিকা বাইর হইলেন, দেখলেন একটা গভীর নিরবতা ছড়ায়া আছে সমতলভূমির উপর। চাঁদ এতো আলো ছড়াইতেছিল যে রাতটা দিনের মতোন ফর্সা হয়া ছিল, তারাগুলা তাদের দরদের মাপে ছড়ায়া ছিল আর প্রতিটা নক্ষত্রপুঞ্জ ছিল তাদের স্পেশাল অবস্থা নিয়া। শেখ হাঁইটা যাইতে যাইতে দেখতেছিলেন একটা কোন আত্মাও নড়তেছিল না। উনার হৃদয় আলোড়িত হইলো আর উনি কইলেন, ‘খোদা, একটা তীব্র স্যাডনেস আমারে তাড়ায়া নিয়া যাইতেছে। এই চরাচর কেন এতো শান্ত, কোন আকুল ভক্তরাও নাই?’ ‘এতো অবাক হইও না,’ ভিতরের এক আওয়াজ উত্তর দিলো, ‘রাজা তার দরবারে সবাইরে ঢুকতে দেন না। তার মর্যাদার কারণে ভবঘুরে লোকজনরে তার নিতে হয় না তার দরজায়।

তুমি হইলা হাজার জনের একজন যে ব্যাকুলভাবে ঢুকতে চায় আর এই কারণে তুমি শান্ত হইয়া ওয়েট করো।‘

যখন আমাদের মাজারের দ্যুতি তার দীপ্তি ছড়ায়, সেইটা ঘুমন্তদের আর অমনোযোগীদের দূরে সরায়া রাখে।

 

রাজা আর ভিখারি

কোন এক সময়ে, মিশরে, এক অভাগা লোক রাজার প্রেমে পইড়া গেলো; রাজা যখন এইটা শুনলেন বিপথগামী লোকটারে নিয়া আসার লাইগা লোক পাঠাইলেন আর কইলেন: ‘যেহেতু তুমি আমার প্রেমে পড়ছো, তোমার দুইটা জিনিস থিকা একটা চুজ করা লাগবো – হয় তুমি তোমার গর্দান দিবা তা নাইলে নির্বাসনে যাবা।’  লোকটা কইলো, সে নির্বাসনে যাবে, আর লগে লগে সে হাঁটা শুরু করলো, যেন চইলা যাইতেছে। কিন্তু রাজা কইলেন, তোরে গর্দানই দেয়া লাগবে। একজন উজির কইলেন: ‘সে তো নির্দোষ, তারে কেন মারা লাগবে?’ ‘লাগবে’ রাজা কইলেন, ‘কারণ সে তো আসলে সত্যিকারের দিওয়ানা না আর পুরা-মন দিয়া ভালোবাসে নাই। যদি সে আমারে সত্যি সত্যি কামনা করতো, তাইলে সে তার মাথা দিয়া দিতো তার মহব্বতের মানুষরে ছাইড়া না গিয়া। এইটা হয় পুরাটা তা নাইলে আর কিছুই না। যদি সে জান দিতে রাজি থাকতো, আমি তারে আমার সিংহগুলার পাশে বসাইতাম আর তার দরবেশ হইতাম। যে আমারে ভালোবাসে, কিন্তু তার মাথারে তার চাইতে বেশি ভালোবাসে, সে সত্যিকারের দিওয়ানা না।

 

একটা প্রাসাদ নিয়া একজন দরবেশের ঠাট্টা

শত হাজার দিনার দিয়া এক রাজা এক প্রাসাদ বানাইলেন। বাইরে দিয়া এইটা ছিল চকচক করা মিনার আর গম্বুজওলা, আর ভিতরটাতে ফার্নিচার আর কার্পেটগুলা একটা বেহেশত বানায়া রাখছিল। যখন এইটা বানানি শেষ হইলো উনি সব দেশ থিকা মানুষরে দাওয়াত দিলেন তার লগে দেখা করার লাইগা। অরা আসলো আর গিফট দিলো, আর উনি সবাইরে উনার লগে বসাইলেন। তখন উনি উনাদরকে জিগাইলেন: ‘আমারে বলেন, আমার প্রাসাদ নিয়া কি মনেহয় আপনাদের, এই শুকতারা’র বিউটিতে কোনকিছু কি বাদ আছে?’ সবাই কইলো যে, দুনিয়াতে এইরকম একটা প্রাসাদ কখনোই ছিল না আর এইরকম কোন প্রাসাদ হবেও না। সবাই, কিন্তু একজন বাদে, একজন দরবেশ, উঠে দাঁড়াইলেন আর কইলেন: ‘হুজুর, এইখানে ছোট একটা খুঁত আছে যেইটা আমার কাছে কলঙ্কের মতোন মনেহয়। আর এই কলঙ্কের কারণেই কি মনে হয় না, বেহেশত আপনার কাছে গিফট নিয়া আসবে অ-দেখা দুনিয়া থিকা।’ ‘আমার কাছে এইটা কলঙ্ক মনেহয় না,’ রাজা চেইতা গিয়া কইলেন। ‘তুমি একটা মুর্খ লোক আর তুমি নিজেরে ইর্ম্পটেন্ট দেখাইতে চাও।’ ‘না, অহংকারী রাজা,’ দরবেশ জবাব দিল। ‘যেই ফাটলের ভিতর দিয়া আমি কথা বলতেছি, এইটা দিয়া জান নেয়ার ফেরেশতা, আজরাইল, আসবো। আপনি কি এইটারে খোদার সামনে নিয়া যাইবেন, আর তা নাইলে আপনার এই ঝলমলা করা প্রাসাদ, আপনার মুকুট আর সিংহাসনের কি দাম? যখন মরণ আসবো এইগুলা তো এক মুঠা ধুলার মতোন। কোনকিছুই থাকে না, আর এইটা সেই জিনিস যা আপনার বসতবাড়ির বিউটিরে মাটি কইরা দেয়। যা কিছু থাকে না, কোন আর্ট তারে ধইরা রাখতে পারে না। আহ, আপনার সুখের আশা একটা প্রাসাদের উপ্রে রাইখেন না! আপনার প্রাইডের বোঝা ক্যারাকোলের উপ্রে দিয়েন না। যদি কেউ রাজার সামনে সহজে কথা কইতে না পারে আর তারে তার দোষ দেখায়া দিতে না পারে, এইটা তো খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।’

 

নিসাপুরের শেখ আবু বকর

একদিন শেখ তার আশ্রম থিকা উনার সাগরেদরে লইয়া বাইর হইলেন, উনি ঘোড়াতে কইরা যাইতেছিলেন আর উনার লগের লোকেরা উনার পিছনে হাঁটতেছিল। হঠাৎ কইরা গাধাটা আকাশ-বাতাস কাঁপায়া চিল্লায়া উঠলো, এরপরে শেখ কানতে শুরু করলেন আর উনার জোব্বা ছিঁড়তে লাগলেন। উনার সাগরেদরা অবাক হয়া উনার দিকে তাকাইলো, একজন তারে জিগাইলো কেন উনি এইরকম করতেছেন। উনি কইলেন: ‘যখন আমি চারপাশে তাকাইলাম আর আমার এতো অনুসারী দেখলাম আমি নিজে নিজে ভাবলাম, “আমি তো বায়েজীদের সমান হয়া গেছি। আজকে, এতোগুলা দরদী সাগরেদ আছে আমার লগে; তো, আগামীকালকে, আমি তো কোন সন্দেহ ছাড়াই হাশরের ময়দানে গৌরব আর সম্মানের সাথে পার হয়া যাবো।” উনি আরো কইলেন, “আর তখনই, যখন আমি ভাবতেছিলাম এইটা হবে আমার নিয়তি, আমার গাধাটা বেখাপ্পা আওয়াজটা করলো, যেইটা তোমরা শুনলা। এর ভিতর দিয়া উনি কইতে চাইলেন, “এইটা হইতেছে সেই রিপ্লাইটা যেইটা একটা গাধা তারে দেয় যার এইরকম ভন্ডামি আর বাজে চিন্তা থাকে!” এই কারণে আমার আত্মার উপরে এইরকম হঠাৎ কইরা অনুশোচনার আগুন নাইমা আসছে আর আমার অ্যাটিটুড চেইঞ্জ হইছে, আর আমার ইমাজিন করা পজিশন টুকরা টুকরা হয়া গেছে।’

শোন, যেই তুমি প্রতি মুহূর্তে চেইঞ্জ হইতেছো, তোমার চুলের গোড়াতে তুমি হইতেছো ফারাওয়ের মতোন। কিন্তু যদি তুমি নিজের ভিতরে নিজের ইগোরে ধ্বংস কর একটা দিনের লাইগাও, তোমার অন্ধকার জ্বইলা উঠবো। কখনোই ‘আমি’ শব্দটা বলবা না। তুমি, তোমার ‘আমি’র কারণে, একশটা শয়তানির ভিতরে পইড়া যাবা, আর সবসময় তুমি শয়তানের ইশারা দিয়া চলতে থাকবা।

 

এক দিওয়ানা আর তার মাশুক

খুব উঁচা মনের এক মানুষ এক সুন্দর ইয়াং মেয়ের প্রেমে পড়ছিল। কিন্তু, সময় যতো পার হইল, যারে সে তার হৃদয় দিছিলো শুকায়া যাইতেছিল, আর জাফরানের একটা ডালের মতোন হলুদ হয়া উঠছিল। তাঁর হৃদয় থিকা উজ্জ্বল দিন বিলীন হয়া যাইতেছিল; আর মরণ, যা তারে দূর থিকা দেখতেছিল, আরো কাছে চইলা আসছিল। তার দিওয়ানা যখন এইটা জানতে পারল সে একটা ছুরি হাতে নিলো আর কইলো: ‘আমি যাবো আর আমার মাশুকরে খুন করবো যেইখানে শে শুইয়া আছে যাতে তার এই সৌন্দর্য্য, যা একটা সুন্দর ছবির মতোন, ন্যাচার যেন তারে মাইরা না ফেলে। অরা তারে কইলো: ‘তুমি কি পাগল হইছো! কেনো তুমি তারে খুন করতে চাও যখন শে অলরেডি মরার দশায় আছে?’ দিওয়ানাটা কইলো : ‘যদি শে আমার হাতে মারা যায় অরা আমারে মাইরা ফেলবে, যেহেতু নিজেরে নিজে খুন করাটা ঠিক কাজ না। এই কারণে, কেয়ামতের দিনে, আমরা একসাথে থাকতে পারবো এখনকার মতো। যদি আমারে মারা হয় তাঁর প্রতি আমার প্যাশনের কারণে তাইলে আমরা একটা জ্বলন্ত মোমবাতির স্পষ্ট আলোর মতোন এক হইতে পারবো।’ দিওয়ানারা, যারা তাদের মহব্বতের লাইগা নিজেদের জীবন বাজি রাখছে, রাস্তাটাতে ঢুকছে। আত্মার দুনিয়াতে তারা তাদের মায়ার জিনিসের লগে মিলতে পারছে।

 

মাহমুদের আরেকটা কিচ্ছা

যখন এই রাজাদের দিশারি গজনা ছাইড়া হিন্দুদের লগে লড়তে গেলেন আর তাদের বিশাল আর্মির সামনাসামনি হইলেন, উনি থমকাইলেন, আর উনি ইনসাফের রাজার কাছে মানত করলেন, যদি উনি যুদ্ধে জিতেন, উনার হাতে লুটের যা মালামাল পড়বে, তা সব উনি দরবেশদেরকে দিয়া দিবেন। উনি জিতলেন, আর উনার আর্মি বিশাল সোনা-দানা জড়ো করল। যখন কালা-মুখগুলা লুটতরাজের মালামাল একখানে আনলো, মাহমুদ কইলেন: ‘এইগুলা দরবেশদেরকে দিয়া দাও, যেহেতু আমি খোদার কাছে কসম দিছিলাম এইটা করার লাইগা, এখন আমার অবশ্যই মানত রাখা লাগবো।’ তখন তার অফিসাররা এর প্রতিবাদ করল আর কইলো: ‘কেন এতো সোনা-রূপা আপনি অই মানুষদেরকে দিবেন, যারা লড়াই-ই করে নাই! নাইলে আর্মিদেরকে দিয়া দেন যারা যুদ্ধের ময়দানের ধকলটা টানছে, বা, এটলিস্ট খাজাঞ্চিখানা’তে রাইখা দেন?’

সুলতান উনার মানত আর আর্মিদের দাবিদাওয়ার মাঝখানে অস্বস্তিতে পইড়া গেলেন। এই সময়, বো হাসেইন, খোদাতালার এক দিওয়ানা, যে বুদ্ধিমান কিন্তু অশিক্ষিত, অই পথ দিয়া যাইতেছিল। মাহমুদ তারে দূর থিকা দেইখা কইলেন: “অই বেকুবটারে ডাকো; অরে এইখানে আসতে বলো আর জিগাও কি করা দরকার, আর আমি অইটাই করবো; যেহেতু সে সুলতানরে বা আর্মিরে ডরায় না, সে একটা ঠিক রায় দিবো।’ যখন সুলতান তারে ঘটনাটা কইলেন বো হাসেইন কইলো: ‘হুজুর, এইটা তো দুই পয়সার একটা মামলা, কিন্তু যদি আপনি খোদার পথে কাম করতে চান, হে আমার প্রিয়, এই দুইটা পয়সা নিয়া আপনি কোন চিন্তা কইরেন না; আর উনার দয়াতে যদি আপনি আরেকটা যুদ্ধ জিতেন তখন আপনি শরম পাবেন যে এই দুইটা পয়সা আপনি ধইরা রাখছিলেন। যেহেতু খোদা আপনারে বিজয় দিছেন, যা কিছু খোদার মালিকানায় আছে সেইটা কি আপনার হইতে পারে?’

এর পরে সব মাহমুদ সব ধন-সম্পদ দরবেশদেরকে দিয়া দিলেন, আর উনি একজন মহান রাজা হয়া উঠলেন।

 

মাহমুদ আর আয়াজের আরেকটা কাহিনি

এইরকম বলা হয় যে, যখন ফারুক আর মাসুদ অইখানে ছিলেন যেইখানে মাহমুদের বাহিনির প্রদর্শনী চলতেছিল, বেশুমার হাতি, ঘোড়া আর সৈন্যরা ছিল সেইখানে, এতোই ছিল যে মনে হইতেছিল দুনিয়াটা পিঁপড়া আর পঙ্গপাল দিয়া ঢাকা। একটা উঁচা জায়গাতে আয়াজ আর হাসান মাহমুদের লগে বসা ছিলেন। এই বিশাল আর্মি যখন তাদের সামনে দিয়া মার্চ পাস্ট কইরা যাইতেছিল মহান রাজা তার মুখ খুললেন আর আয়াজরে কইলেন: ‘বাচ্চা আমার, আমার এই সব হাতি আর ঘোড়া আর মানুষেরা এখন থিকা তোমার, তোমার প্রতি আমার প্রেম এইরকম যে আমি তোমার দিকে তাকায়া থাকি যাতে তুমি কিছু চাও আমার কাছে।’ যদিও এই কথাগুলা বিখ্যাত মাহমুদ কইছিলেন, আয়াজ একইরকম থাকলেন, কোন নড়াচড়া করলেন না; রাজারে কোন থ্যাংকস দিলেন না, কোন কথাও কইলেন না। হাসান খুবই অবাক হয়া তারে কইলো: ‘আয়াজ, একজন রাজা তোমারে সম্মান দিছে, একজন সামান্য দাস’রে, আর তুমি মেহেরবানির কোন সাইনও দেখাইলা না; তুমি না করলা কুর্নিশ না তারে সম্মান দেখায়া সিজদা দিলা।’ আয়াজ একটু চিন্তা করলেন আর তারপরে কইলেন: ‘তোমার নিন্দার দুইটা জবাব আমি দিবো: পয়লা কথা হইলো আমি, যার না আছে কোন স্থিরতা না আছে কোন অবস্থা, যে আমি রাজারে আমার ভক্তি দেখাবো, উনার সামনে আমি নাকাল হয়া ধুলায় মিইশা যাইতে পারি বা একটা ঘ্যাঙানির সুরে উনার গুণকীর্তন কইরা গান গাইতে পারি। অনেক বেশি কিছু করা আর অনেক কম কিছু করা – এই দুইটার মধ্যে কোন কিছু না করাটা বেটার। এই দাস তো রাজারই, আর দাস যে রাজারে রেসপেক্ট করবে, এইটা তো বলার কোন দরকার নাই। এই ভাগ্যবান রাজা আমারে যেই সম্মান দেখাইছেন, যদি দুই দুনিয়ার সবকিছু দিয়া উনার তারিফ করা লাগে তাও উনার যোগ্য হবে না। যদি আমি অহংকার দেখায়া থাকি আর আমার আনুগত্য গোপন কইরা থাকি, তাইলে সেইটা এই কারণে যে, আমি নিজেরে এর যোগ্য মনে করি না।’

হাসান কইলেন: ‘ও আয়াজ, এখন আমি দেখতে পাইতেছি তুমি কি রকম সন্তুষ্ট আছো, আর এইরকম একশটা ফেভার পাওয়ার তুমি যোগ্য।’ তখন সে যোগ করলো, ‘এখন আমারে দুসরা জবাবের কথাটা বলো।’ কিন্তু আয়াজ কইলেন, ‘আমি তো আপনার সামনে ফ্রিলি বলতে পারবো না, আমি শুধুমাত্র রাজার সাথে একলা থাকলেই এইটা বলতে পারবো। আপনি তো এই গোপনীয়তার ভাগীদার না।’ তো রাজা হাসান’রে চইলা যাইতে বললন, আর যখন সেখানে না ছিল ‘আমরা’ আর ছিল ‘আমি’, আয়াজ কইলেন: ‘রাজা যখন রহমত কইরা তার চোখগুলা দিয়া আমার দিকে তাকাইলেন উনার ঝলসানো রশ্মি দিয়া আমার অস্তিত্ব নাশ হয়া গেছে। যেহেতু আপনার সুরুযেে আলোর ভিতরে আমি আর নাই, আমি কেমনে আমারে সিজদা দেওয়াইবো? আয়াজ তো তার ছায়া, যে তার (মাহমুদের) চেহারার সুরুযের ভিতরে হারায়া গেছে।’

 

পোকাদের কাহিনি

এক রাতে, পোকাগুলা মোমবাতির লগে এক হওয়ার বাসনায় পীড়িত হয়া একসাথে হইলো। অরা কইলো: ‘আমাদের একজনরে পাঠানো দরকার আমাদের প্রেমের জিনিসের ইনফরমেশন নিয়া আসার লাইগা।’ তো, একজন উইড়া গেলো আর একটা দুর্গে আসলো, আর তার ভিতরে একটা মোমবাতি দেখলো সে। সে ফিরা গেলো, আর সে যা বুঝলো সেইটা গিয়া কইলো। কিন্তু এলেমদার পোকা যে অই জমায়েতের মাঝখানে আছিল, কইলো যে সে মোমবাতিটার কিছুই বুঝে নাই। তখন আরেকটা পোকা সেইখানে গেলো। সে তার ডানাগুলা দিয়া শিখাটারে ছুঁইলো, কিন্তু তাপের কারণে সইরা আসলো। তার রিপোর্ট পয়লাজনের চাইতে খুববেশি স্যাটিসফাইয়িং ছিলো না, থার্ড একজন গেলো তখন। এইজন, প্রেমের নেশায় পইড়া, নিজেরে আগুনের শিখার ভিতরে ফেলে দিলো; সামনের পা’গুলা দিয়া সে আগুনটারে ধরলো আর খুশিমনে তার লগে মিইলা গেলো। সে তারে পুরাপুরি জড়ায়া ধরলো আর তার বডি আগুনের মতোন টকটকা লাল হয়া উঠলো। এলেমদার পোকাটা, যে অনেক দূর থিকা দেখতেছিল, দেখলো আগুনের শিখাটা আর পোকাটা এক হইয়া উঠলো, আর সে কইলো: ‘সে জানতে পারছে যা সে জানতে চাইছিলো; কিন্তু একমাত্র সে-ই বুঝতে পারছে, আর কারোরই কিছু কওয়ার নাই, এইটা নিয়া।’

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →