আঞ্চলিক ভাষার অভিধান [১৯৬৪] : সৈয়দ আলী আহসান ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ভাষা প্ল্যানিং
- বাঙ্গালা ভাষা ।। লিখিবার ভাষা* – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় [১৮৬৪]
- Bengali, Spoken and Written. Sayamacharan Ganguli (1877). কিস্তি ১
- Bengali, Spoken and Written. Sayamacharan Ganguli (1877). কিস্তি ২ ।।
- Bengali, Spoken and Written. Sayamacharan Ganguli (1877). শেষ কিস্তি ।।
- বাঙ্গালা ভাষা – গ্রাডুএট্ (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী) [১৮৮১]
- একখানি পুরাতন দলিল: আবদুল করিম [১৯০৬]
- আমাদের ভাষাসমস্যা – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৯১৭)
- “মুসলমানী বাঙ্গালা” কি? – আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ
- বাঙ্গালা বানান সমস্যা (১৯৩১) – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
- বাংলাভাষা পরিচয় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [১৯৩৮]
- পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ।। সৈয়দ মুজতবা আলী।। কিস্তি ১ ।।
- পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ।। সৈয়দ মুজতবা আলী।। কিস্তি ২ ।।
- পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ।। সৈয়দ মুজতবা আলী।। কিস্তি ৩।।
- পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ।। সৈয়দ মুজতবা আলী।। শেষ কিস্তি।।
- আমাদের ভাষা ।। আবুল মনসুর আহমেদ ।। ১৯৫৮ ।।
- আঞ্চলিক ভাষার অভিধান [১৯৬৪] : সৈয়দ আলী আহসান ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ভাষা প্ল্যানিং
- (বই থেকে) স্বাতন্ত্রের স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রিক বনাম কৃষ্টিক স্বাধীনতা – আবুল মনসুর আহমদ (১৯৬৮)
- বাংলা প্রচলিত হবে যে সময় শিক্ষকরা প্রথম প্রথম একটু ইনকমপিটেনটলি (incompetently) কিন্তু পারসিসটেনটলি (persistently) বাংলায় বলা অভ্যাস করবেন (১৯৮৫) – আবদুর রাজ্জাক
- বাংলা ভাষার আধুনিকায়ন: ভাষিক ঔপনিবেশিকতা অথবা উপনিবেশিত ভাষা
- বাংলা ভাষা নিয়া কয়েকটা নোকতা
- খাশ বাংলার ছিলছিলা
- বাছবিচার আলাপ: খাশ বাংলা কি ও কেন? [২০২২]
১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি থিকা “আঞ্চলিক ভাষার অভিধান” ছাপা হয়। তখন বাংলা একাডেমির পরিচালক আছিলেন সৈয়দ আলী আহসান। আর এই ডিকশানি প্রজেক্টের প্রধান সম্পাদক আছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। উপদেষ্টা কমিটিতে মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ আবদুল হাই, মুনীর চৌধুরী ও কাজী দীন মুহম্মদ ছিলেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
তো, উনারা যেইটা করছেন, ভাষার ব্যাপারটারে পয়লাই ছড়ায়া দিছেন বা রিডিউস কইরা নিয়া আসছেন – “আঞ্চলিক” ব্যাপারটার ভিতরে। কলকাতার কলোনিয়াল কারখানার লোকজন যেই বেইজটাতে জোর দিছিলো যে, “বাংলা হইতেছে সংস্কৃতির দুহিতা” – এই আলাপের বেইজটার বাইরে উনারাও যাইতে পারেন নাই; উনারা ফাইট দিছেন সংস্কৃত শব্দের লগে “সর্বজনবোধ্য আরবী-ফারসী শব্দ” নিয়া; যে, এইগুলাও বাংলা-ভাষা; তো, এইগুলা যে বাংলা-ভাষা না – তা না, কিন্তু ভাষা জিনিসটা খালি এইরকম শব্দ দিয়া ডিটারমাইন্ড করার ঘটনা তো না। 🙁
সৈয়দ আলী আহসান ক্লেইম করছেন যে, “আঞ্চলিক” শব্দগুলারে ডিকশনারিতে নেয়া হয় নাই “অসাধু” বইলা, কিন্তু শুরুর দিকে বিদেশিরা যেই ডিকশনারী বানাইছিলেন, সেইখানে এই “আঞ্চলিক” শব্দগুলা কিন্তু ছিল! মানে, বিদেশিরা বাংলা-ভাষায় যেই শব্দ ইউজ হইতেছে নানান এলাকায় সেইগুলারে বাংলা-শব্দ মনে করছে, কিন্তু যখন কলকাতার কলোনিয়ান কালচারে যেই একটা ভাষা প্ল্যানিং হইছে সেইখানে অই শব্দগুলা বাংলা-শব্দ হইতে পারে নাই। একইভাবে, সৈয়দ আলী আহসান একটা ভাষা প্ল্যানিংয়ের কথাই কইতেছেন; কিন্তু আনফরচুনেট জিনিস হইলো, এই শব্দগুলারে সরাসরি বাংলা-শব্দ কইতে পারতেছেন না আর, বলা লাগতেছে “আঞ্চলিক শব্দ”। 🙁 মানে, ভাষা-প্ল্যানিংয়ের যেই ফ্রেম, যেই বেইজ, সেইখানে ক্রিটিক্যাল হইতে আর রাজি হইতে পারতেছেন না।
শব্দগুলারে ঠিক বাংলা-শব্দ হিসাবে না দেইখা যে দেখতেছেন “আঞ্চলিক” শব্দ হিসাবে। সেইখানে উনারা নিজেরাই একটা ইনফিরিয়র পজিশনরে বাছাই কইরা নিতেছেন নিজেদের জন্য। উনারা এক ধরণের “আঞ্চলিকতা”রে বাঁচাইতে চাইতেছেন বা আইডেন্টিফাই করতেছেন, মূল বা সেন্ট্রাল বাংলা-ভাষারে ডির্স্টাব না কইরা। ভাষা-প্ল্যানিংয়ে উনারা যে বাংলা-ভাষারে ডিফাইন করার সাহস দেখাইতে পারেন নাই, সেই কারণে এই প্রজেক্টটা একটা সাইড-লাইনের জিনিস হয়াই রইছে। সোকল্ড ”শুদ্ধ” বাংলাভাষা যে আরেকটা ডায়ালেক্ট বা আঞ্চলিক ভাষা, এইটা কইতে না পাইরা অন্য সব ডায়ালেক্টগুলারে আঞ্চলিক ভাষা বইলা যাইতে হইতেছে এখনো।
কিন্তু উনাদের এই কাজের এটলিস্ট তিনটা সিগনিফিকেন্স আছে বইলা মনে করি –
১. অথরিটি ক্লেইম করা: এই ডিকশনারি ছাপানোর ভিতর দিয়া বাংলা একাডেমি বা তখনকার পূব পাকিস্তান পয়লা তার অথরিটি ক্লেইম করে। অই সময়ে অন্য যেই সব ডিকশনারি ছিল বাংলাভাষার, তার সবগুলাই কলকাতার প্রডাকশন, এর বাইরে ১৯৫৩ সালে কাজী আবদুল ওদুদের ব্যবহারিক শব্দ বাদ দিলে, বাংলাদেশে লেখা কোন ডিকশনারিই ছিল না i ; তো, এই যে একটা ডিকশনারি তৈরি করা, এইটা নিজেদের অথরিটি ক্লেইম করার একটা ঘটনা তো! পলিটিক্যালি ইর্ম্পটেন্ট জিনিস একটা।
২. ভাষার ভিতরে পাবলিকরে নিয়া আসা: এই ডিকশনারির একটা ক্লেইম খুবই ক্লিয়ার যে, এই শব্দগুলা মানুশ বলে! যদিও সাহিত্যে ইউজ করার জন্য বানাইতেছেন, কিন্তু পাবলিক বলে বইলা এইগুলারে নিতেছেন উনারা। এই যে, ভাষার ভিতরে পাবলিকের এগজিসটেন্সটারে স্বীকার করা – এইটা সিগনিফিকেন্ট একটা ঘটনা। মানে, সংস্কৃত থিকা আসা বা আরবি-ফারসি শব্দ – এইসব ক্যাটাগরি হিসাবে না দেইখা, পাবলিকে বলে – এইটারে নেয়াটা, ভাষা নিয়া আলাপের বেইজটারে একভাবে চেইঞ্জ করার ঘটনা।
৩. এই অভিধান একটা টেম্পোরারি ঘটনা: খুবই সুন্দর একটা কথা কইছেন সৈয়দ আবুল আহসান – “…সময় সাপেক্ষ হইলেও পরস্পরের এই ব্যবহারের ফলে সৰ্বাঞ্চলবােধ্য একটি ভাষারীতি গড়িয়া উঠা সম্ভব হইবে বলিয়া আশা করা যায়। …একাডেমীর এই প্রচেষ্টা ‘পূর্ব পাকিস্থানী বাংলার আদর্শ অভিধান’ পরিকল্পনার অংশ বিশেষ।” মানে, এই আঞ্চলিক ভাষার অভিধানটা আল্টিমেট কোন ঘটনা না, বরং একটা ‘আদর্শ’ অভিধানে যাওয়ার একটা রাস্তা।
কিন্তু এই ডিকশনারি এখনো যে “আঞ্চলিক” হয়া আছে, আর আমরা যে ক্যাটাগরি হিসাবে এখনো আমরা “আঞ্চলিক ভাষার” মুড়ি খাইয়াই যাইতেছি, এইটা উনাদের ভাষা প্ল্যানিংয়েরই লিগ্যাসি একটা।
২.
এইখানে ভাষা ও সাহিত্য নিয়া আরেকটা আলাপ আছে। সৈয়দ আলী আহসান ধরে নিছেন যে, এই ডিকশনারি সাহিত্যিকরা ইউজ করতে পারবে, আর সাহিত্যে ইউজ হওয়া শুরু হইলে সাহিত্যের কমন জায়গা থিকা এই “আঞ্চলিকতা” একটা কমন ভাষার দিকে যাইতে পারবে। কিন্তু ঘটনাটা যে এইরকমের লিনিয়ার না, সেইটা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ও বলছেন, “…কোনও একটা উপভাষাকে ভিত্তি করিয়া রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাহিত্যিক প্রভাবে সাহিত্যিক ভাষা গড়িয়া উঠে।“
কিন্তু তারপরও সাহিত্যে ইনক্লুড হওয়াটারে উনারা গুরুত্ব দিছেন। অ্যাপিয়েরন্সের কারণে এই ইল্যুশনটা হয় যে, সাহিত্যটারেই ভাষা বইলা মনে করি আমরা। মানে, সাহিত্য দিয়া ভাষা তৈরি হয় না, সাহিত্য ভাষার একটা ঘটনা। কিন্তু লিখিত সাহিত্য দিয়া যা হয় ভাষারে একটা ‘জাতে’ তোলার ঘটনা ঘটে। তো, সৈয়দ আলী আহসান ভাষারে জাতে তুলতে চাইতেছেন আগে। আর এইটা বাজে ঘটনা না অবশ্যই; কিন্তু পদ্ধতি হিসাবে একই। যার ফলে এই পদ্ধতিতে হিন্দু ব্রাহ্মণের জায়গায় মুসলিম আশরাফরা চইলা আসেন, অটোমেটিক্যালি। ভাষাটা “আঞ্চলিক”-ই থাইকা যায়, সবসময়।
৩.
তো, ব্যাপারটা হিস্ট্রিটারে আন-ডু করার ঘটনা না; বরং নতুন একটা জায়গা থিকা রিড করার ঘটনা। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একটা রিডিং করছেন বাংলা-ভাষার। দেখাইতেছেন, কোন জায়গায়, কেমনে শুরু এই বাংলা-ভাষার; পলিটিক্যালি বৌদ্ধ রাজাদের আমলে গৌড় এলাকায় এর ইউজ বাড়তে থাকে, কিন্তু হিন্দু রাজাদের আমলে এরে ইনফিরিয়র কইরা রাখা হয়; মুসলমান রাজারা এরে দরবারে তোলেন (“কৃত্তিবাস গৌড়ের জলালুদ্দীন মুহম্মদ শাহের (১৪১৮-১৪৩১ খ্রীষ্টাব্দ) আদেশে বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন।”); শ্রীচৈতন্যের কারণে একভাবে নদীয়া’রে বেইজ কইরা বাংলা-ভাষার সেন্টার গইড়া উঠে; পরে কলকাতা রাজধানী হয়া উঠলে অইখানে ‘সাধু-ভাষা’র রাজত্ব শুরু হয়, যেইখান থিকা ক্রিয়াপদ চেইঞ্জ কইরা সাধু-ভাষার “সহচর” চলিত-ভাষা চালু হয়। যেইটারে এখন বাংলা-ভাষা বইলা জানি আমরা।
এইখানে একটা জার্নি আছে ভাষার, একটা রিডিং আছে হিস্ট্রির এবং উপভাষাগুলা থিকা শব্দগুলা ভাষাতে আসতেছে, এমনকি বিদেশী শব্দগুলা আগে ইউজ হইতেছে, বলাবলি হইতেছে, তারপরে একটা চেইঞ্জের ভিতর দিয়া ভাষাতে আসতেছে। মানে, ভাষা জিনিসটা অনেকগুলা ডায়ালেক্টের মিলমিশের ভিতর দিয়াই ভাষা হয়া উঠতেছে।
এখন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ যে “পূর্ব পাকিস্তানী বাংলার আদর্শ অভিধানের প্রথম খন্ড“ লিখতে পারতেছেন এইখানে ভাষার বাইরেও পলিটিক্যাল জায়গাটা তো আছে। অথচ মনে হইতে পারে এইটা যেন খুবই “স্বাভাবিক“ জিনিস বা ভাষাবিজ্ঞানের ঘটনা। আমরা ধারণা, এই সিলসিলা এখনো জারি আছে। সৈয়দ আলী আহসান আর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ যেই সাহস করছিলেন, যেই ভাষা-প্ল্যানিংয়ের কথা ভাবছিলেন, সেইটারে ‘ভুল’ ভাইবা বাদ দিতে পারছি আমরা; মনে করতে পারতেছি যে, অইটা তো পাকিস্তানি আমলের প্রজেক্ট একটা, এইরকম। 🙂
কোন সাহিত্য পলিটিক্যালি ইনফ্লুয়েন্সড (যেইরকম,মার্কসিস্ট সাহিত্য) হইলেই যেমন ‘ভালো-সাহিত্য’ হয়া যায় না, একইভাবে কোন চিন্তা একটা পলিটিক্যাল আমলে শুরু হইছিল বইলা বাতিল হইতে পারে না। এই ডিফরেন্সগুলারে বুঝতে পারা আর কাজগুলারে আগায়া নিয়া যাইতে পারা বরং দরকারি ঘটনা।
আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গা থিকা “আঞ্চলিক” বইলা যেই ক্যাটাগরি, সেইটারেই ক্রিটিক্যালি দেখতে চাই আমরা। এমন না যে, আঞ্চলিক ভাষা বইলা কিছু নাই, বা ডায়ালেক্টগুলা এগজিস্ট করে না, বরং কি কারণে একটা ডায়ালেক্ট প্রমিনেন্ট হয়া উঠে, ‘শুদ্ধ’ বা ‘সাধু’ বইলা মনে হইতে থাকে, সেই জায়গাগুলারে দেখাটা জরুরি মনে করি। আর এই কারণে উনাদের ভাষা প্ল্যানিংয়ের ব্যাপারটা ইর্ম্পটেন্ট একটা রেফারেন্স। যেই কারণে আরেকবার আলাদা কইরা হাজির করতেছি এইখানে।
৪.
সৈয়দ আলী আহসান আর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্’র পুরা লেখা কোট করা হয় নাই। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ আর আঞ্চলিক ভাষার ক্যাটাগোরাইজেশনের জায়গাগুলারে বাদ রাখা হইছে। উনাদের পুরা টেক্সট পড়তে চাইলে, অই অভিধানে তো পাইবেনই। আমরা রিলিভেন্ট জায়গাটুকই রাখতেছি, এইখানে।
ই. হা.
………………….
প্রথম সংস্করণের
প্রসঙ্গ কথা
যে কোনও বস্তু ভাষা পরিবর্তনশীল। অনবরত গ্রহণবর্জনের মাধ্যমে ইহা অগ্রসর হয়। ইহার ফলে শুধু ভাষার শব্দরূপেরই পরিবর্তন ঘটে না, বরং শব্দার্থ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ব্যতিক্রম দেখা দেয় । এই সর্বাঙ্গীন পরিবর্তন কোন বিশেষ ভাষারীতিতে সীমাবদ্ধ নহে । সাহিত্য-রীতিতে যে পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহা যে কোনও সাহিত্যের সৃষ্টি-সম্ভার পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষণ করিলেই বুঝতে পারা যায় । চির প্রবাহমান আঞ্চলিক রীতিতে এই পরিবর্তন আরও ব্যাপক। এই কারণে বিভিন্ন সময়ে এই পরিবর্তনের প্রকৃতি বিচার করিয়া ভাষার বৈশিষ্ট্য নিরূপণের প্রয়োজন রহিয়াছে। অভিধান সংকলনের দ্বারা এই প্রয়োজন আংশিক ভাবে পূরণ হইয়া থাকে ।
বাংলা ভাষায় অভিধান সংলনের ইতিহাস খুব বেশী দিনের নহে। ১৭৪৩ খৃষ্টাব্দে মানুয়েল-দা- আসসুম্পসাও সংকলিত পোর্তুগীজ-বাংলা অভিধান মােন হরফে মুদ্রিত হয়। বাংলা হরফে সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয় ফস্টার সাহেবের ইংরেজী-বাংলা অভিধান ১৭৯৯ খৃষ্টাব্দে ! পরবর্তী কালে বিভিন্ন প্রকৃতির এবং পরিসরে বহু অভিধান সংকলিত হইয়াছে। কিন্তু প্রথম দিকে বিদেশী পণ্ডিতদের দ্বারা সংকলিত অভিধানে এবং তাঁহাদের অন্যান্য রচনায় আঞ্চলিক শব্দ ও বাক্রীতি ব্যবহারের যে আদর্শ বিদ্যমান, পরবর্তী কালে তাহা রক্ষিত হয় নাই। অভিধান সংকলনের সময় আঞ্চলিক শব্দসমুহকে অসাধু বলিয়া পরিত্যাগ করা হইয়াছে। এই জন্য দেখা যায়, অভিধান সংকলয়িতাগণ একদিকে যেমন নির্বিকার চিত্তে প্রচলিত সংস্কৃত শব্দ গ্রহণ করিয়াছেন, অন্যদিকে তেমনি সাহিত্যে অনুপ্রবিষ্ট বহু আঞ্চলিক শব্দকে নির্বিচারে বাদ দিয়াছেন। একই কারণে সর্বজনবােধ্য আরবী-ফারসী শব্দও পরিত্যক্ত হইয়াছে। ইহার কারণ প্রথমতঃ উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সাহিত্য সৃষ্টিতে পন্ডিতী–বাংলা ব্যবহারের ব্যাপক প্রচেষ্টা এবং দ্বিতীয়তঃ বাংলা অভিধানকে সংস্কৃতির জন্যও ব্যবহার করিবার প্রয়াস। কলিকাতার ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ হইতেই ইহার সূত্রপাত ।
সম্ভবতঃ এই কারণেই বাংলা ভাষায় সাহিত্য-রীতির সহস্রাধিক বৎসরের নিদর্শন বিদ্যমান থাকিলেও সেই তুলনায় আঞ্চলিক রীতির লিখিতরূপ অতি নগণ্য। ভাষাতাত্বিক প্রয়োজনে সংগৃহীত শব্দ এবং সাহিত্যে ব্যবহৃত সামান্য বাক্রীতি ব্যতীত অন্য কোন ব্যাপক নিয়মে আঞ্চলিক ভাষারূপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয় নাই।
তদুপরি বাংলা ভাষার সাহিত্য-রীতিতে একটি বিশেষ অঞ্চলের প্রভাব থাকায় অন্যান্য অঞ্চলের ভাষা দীর্ঘ কাল উপেক্ষিত হইয়া আসিয়াছে। পুথিসাহিত্য, পল্লীগীতিকা এবং নাটকাদিতে ইহার আত্মপ্রকাশ ঘটিলেও এবং কোনও কোনও সহৃদয় ব্যক্তি ইহার শব্দসংগ্রহ প্রকাশের চেষ্টা করিলেও আঞ্চলিক ভাষা রীতি–বিশেষ করিয়া পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্থানের আঞ্চলিক রীতি সাহিত্যিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারে নাই।
পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে আঞ্চলিক ভাষাগত ব্যবধান সুস্পষ্ট। তদুপরি পূর্ব পাকিস্তানে আঞ্চলিক ভাষারূপের বিভিন্নতা যেরূপ প্রত্যক্ষ, পশ্চিমবঙ্গে তদ্রূপ নহে। সেখানে শিক্ষিত সমাজে প্রধানতঃ কলিকাতা ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলের ভাষাই প্রাধান্য লাভ করিয়াছে। অথচ পূর্বপাকিস্তানে বিশেষ কোন অঞ্চলের ভাষা সর্বত্র গৃহীত না হওয়ায় শ্রীহট্ট, চট্টগ্রাম, নােয়াখালী, ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলের ভাষা শিক্ষিতসমাজেও কথা হিসাবে প্রচলিত রহিয়াছে। সেইজন্য এই সকল আপাতবিভিন্ন ভাষারূপের প্রকৃতি নিরূপণ ও প্রগতি বিশ্লেষণ করা আবশ্যক।
অন্যদিকে একান্ত স্বাভাবিক কারণে আজ পূর্ব পাকিস্তানে সাহিত্য সৃষ্টিতে স্থানীয় ভাষাসম্পদ ব্যবহারের প্রয়েছিল তীব্র ভাবে অনুভূত হইতেছে। এই অনিবার্য চাহিদা পূরণের সহায়ক হিসাবে বিভিন্ন অঞ্চলের শব্দ-সংগ্রহ প্রকাশ করিবার প্রয়ােজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না; যাহাতে অতি সহজেই এক অঞ্চলের সাহিত্যিক অন্য অঞ্চলের শব্দ সম্পর্কে অবহিত হইতে পারেন এবং প্রয়ােজন বােধে উহা ব্যবহার করিতে সক্ষম হন। সময় সাপেক্ষ হইলেও পরস্পরের এই ব্যবহারের ফলে সৰ্বাঞ্চলবােধ্য একটি ভাষারীতি গড়িয়া উঠা সম্ভব হইবে বলিয়া আশা করা যায়।
ভাষাতাত্ত্বিক প্রয়ােজনেও আঞ্চলিক শক্ত-সংগ্রহ তথা অভিধান প্রকাশের যৌক্তিকতা অস্বীকার কৱা যায় না। পূর্ব পাকিস্তানে বিভিন্ন অঞ্চলের শব্দসম্পদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ বিদেশী শব্দ ইহাতে বিদ্যমান। সাহিত্যে ব্যবহৃত আরবী-ফারসী তথা অন্যান্য বিদেশী শব্দ অপেক্ষা আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশী শব্দগুলি নানা কারণে ভাষাতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে অধিকতর মনােযােগ আকর্ষণের দাবী করিতে পারে।
এই সকল প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াই বাংলা একাডেমী আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সংকলনে ব্রতী হয়। একাডেমীর এই প্রচেষ্টা ‘পূর্ব পাকিস্তানী বাংলার আদর্শ অভিধান’ পরিকল্পনার অংশ বিশেষ। আযাদী লাভের পর হইতেই পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে একটি আদর্শ বাংলা অভিধানের যে চাহিদা পরিলক্ষিত হয়, তদনুসারেই বাঙলা একাডেমী এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই সুবৃহৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিধানটি তিন খণ্ডে সমাপ্ত হইবে ।
প্রথম খণ্ড : আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। ইহাতে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত শব্দ সংগৃহীত হইবে।
দ্বিতীয় খন্ড: ব্যবহারিক বাংলার অভিধান। ইহাতে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানী সাহিত্যে ব্যবহৃত শব্দাবলী সংকলিত হইবে।
তৃতীয় খন্ড: বাংলা সাহিত্যকোষ। ইহাতে বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত বিশেষার্থক শব্দ, প্রবাদ-প্রবচন, উপমা, রূপক, উল্লেখ ও উদ্ধৃতি এবং মুসলমান সাহিত্য-সাধকদের সংক্ষিপ্ত জীবনী স্থান পাইবে।….
[বাকি অংশ বাদ দেয়া হইছে। ]
ঢাকা
২০ শে মে, ১৯৬৪
সৈয়দ আলী আহসান
পরিচালক, বাঙ্লা একাডেমি
প্রথম সংস্কণের ভূমিকা
বর্তমান পূর্ব পাকিস্তান প্রাচীন গৌড় বা বরেন্দ্র এবং বঙ্গ বা বঙ্গাল দেশ লইয়া গঠিত। প্রাচীন বাংলা ভাষার আদিলেখক মৎস্যোন্দ্রনাথ চন্দ্রদ্বীপের (বাখরগঞ্জ জেলার) অধিবাসী ছিলেন। তিনি ৬৫৭ খ্রীষ্টাব্দে নেপালের রাজা নরেন্দ্রদেবের সভায় উপস্থিত হন। মৎস্যোন্দ্রনাথ শিষ্য জালন্ধরি-পা, তাহার শিষ্য কাহ্নুপা বা কানুপা সােমপুর বিহারে (বর্তমান পাহাড়পুরে) থাকিয়া তাঁহার গ্রন্থ রচনা করেন (খ্রীষ্টীয় ৭০০ হইতে ৭৫০-এর মধ্যে)। মৎসােন্দ্রনাথের রচিত চারি চরণযুক্ত একটি শ্লোক “আশ্চচর্যাচয়-এ টীকায় উদ্ধৃত হইয়াছে। পরলোকগত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক সম্পাদিত ‘বৌদ্ধ গান ও দোহায় এই আশ্চর্যচর্যাচয় ছাপা হইয়াছে। খন্ডিত পুস্তকে কাহ্নপার একটি পদ পাওয়া যায় নাই। চর্যাপদগুলির অধিকাংশ রচয়িতা আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলেন। সুতরাং আরা বলিতে পারি যে বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তি পূর্ব পাকিস্তানে।
এই প্রদেশ বৌদ্ধ ধর্মের লীলাভূমি ছিল। ময়নামতী, মহাস্থান ও পাহাড়পুরের ধ্বংসাবশেষ তাহার পরিচয় বহন করিতেছে। বৌদ্ধ রাজগণ দেশী ভাষার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, যদিও তারা সংস্কৃতের বিরোধী ছিলেন না। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ বা রাঢ় দেশে প্রথমে শূর রাজবংশ এবং পরে সেন রাজবংশ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্টপােষক ছিলেন। এইজন্য তাঁহারা দেশী ভাষাকে অবজ্ঞা করিতেন এবং সংস্কৃতের উৎসাহদাতা ছিলেন। এই কারণে রাঢ় বা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে প্রাচীনকালে বাংলা সাহিত্যের উদ্ভব সম্ভব হয় নাই; কিন্তু প্রাচীন গৌড় এবং বঙ্গে বা বৰ্তমান পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম রাজত্বের পূর্বেই বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তি ও শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছিল। গৌড় হইতে গৌড়ী প্রাকৃত (দন্ডী, কাব্যাদর্শ ১/৩৫) এবং গৌড় অপভ্রংশের (মার্কেন্ডেয়, প্রাকৃতসর্বস্ব) নামকরণ হইয়াছিল। আমীর খুস্রও (১৩৩৭ খ্রীষ্টাব্দে) দেশীয় ভাষাগুলির মধ্যে গৌড় ও বঙ্গালের নাম উল্লেখ করিয়াছেন। রাজা রামমােহন রায়ের বাংলা ব্যাকরণের নাম ছিল গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ। প্রাকৃত পিঙ্গলের (১/৪) ‘এও জে’ বাক্যকে টীকাকে রবিকর বারেন্দ্রী ভাষা বলিয়াছেন। পুরা শ্লোকটি এই:
মাণিণি মাণহিঁ কাঁই ফল এও জে চরণ পড়ু কন্ত।
সহজে ভুঅঁগম জই ণমই কিং করিএ মণি মণ্ড ।
[অর্থাৎ মানিনি, মানে কি ফুল? এই যে কান্ত চরণে পতিত ।
সহজে ভুজঙ্গম যদি নত হয়, মণিমন্ত্রে কি করে?]
কতিপয় প্রাকৃত বৈয়াকরণ ঢক্ঢী অংশের নাম উল্লেখ করিয়াছেন। R. Pischel ঢক্কীকে পূর্ব বাঙ্গলার ঢক্ক নগর হইতে বুৎপন্ন মনে করিয়াছেন (Garatik der skrit Sprachen, পারা ২৫)। ইহাতে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাচীন দেশী ভাষার নাম পাইয়াছি; কিন্তু কোনও স্থানে রাঢ়ী প্রাকৃতের বা রাঢ় অপভ্রংশের নাম আমরা পাই না। আধুনিক বাংলা নামও পূর্ব পাকিস্তানের অর্ন্তগত প্রাচীন বঙ্গাল দেশের নাম হইতে বুৎপন্ন। ‘বঙ্গাল’ শব্দটি রাজেন্দ্র চোলেব একাদশ শতকের শিলালিপিতে ব্যবহৃত হইয়াছে। এই বঙ্গাল দেশের রাজার নাম গােবিন্দচন্দ্র বলা হইয়াছে। ইনি চন্দ্রবংশীয় রাজা ছিলেন এবং নাথগীতিকার গােপীচাঁদ হইতে ভিন্ন।
বৌদ্ধ গানে ভুসুকুর শদে বঙ্গাব্দ শব্দে প্রয়োগ আছে :
‘বাজ নাউ পাড়ি পঁউআখানে বাহিউ,
অদয় বঙ্গাল দেশ লুড়িউ।
[অর্থাৎ ব্রজযান রূপ নৌকায় পাড়ি দিয়া পদ্মার খালে বাহিলাম ।
অদ্বরূপ বঙ্গাল দেশ লুট করিলাম। ]
বৌদ্ধ গানের রাগরাগিণীর মধ্যে গৌড় ও বঙ্গাল রাগের উল্লেখ আছে । সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, বর্তমান পূর্ব পাকিস্তান প্রাচীনকালেও সংস্কৃতিসম্পন্ন দেশ ছিল।
সেন রাজাদের সময় হইতে বাংলা ভাষা অনাদৃত হইতে থাকে। মুসলমান রাজত্বের প্রথমে প্রায় দেড়শত বৎসর কাল দেশ যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য অশান্তিময় থাকায় কোন উল্লেখযােগ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয় নাই। এই সময়ে বাংলা ভাষার প্রতি উচ্চ সমাজের মনােভাব পরলােকগত শ্রদ্ধেয় ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন কর্তৃক উদ্ধৃত নিম্নের সংস্কৃত শ্লোক হইতে বুঝা যায়:
অষ্টাদশ পুরাণানি রামসা চরিতানি চ।
ভাষায়ং মানবঃ শ্রুত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ।।
[ অর্থাৎ, অষ্টাদশ পূরাণ এবং রামের চরিত
দেশী ভাষায় শ্রবণ করিলে মানব রৌরব নরকে যায়। ]
গৌড়ের সুলতানগণ রাজনৈতিক কারণে জনগণের ভাষা বাংলার পৃষ্ঠপােষক হইলেন। বঙ্গের কাব্য কুঞ্জের আদিপিতা বড়ু চণ্ডীদাস সুলতান সিকান্দর শাহের (১৩৫৭-৮৯ খ্রীষ্টাব্দ) সভায় সমাদৃত ছিলেন। তাহার পুত্র গয়াসুদ্দীন আযম শাহ (১৩৮৯-১৪০৯ খ্রীষ্টাব্দ) শাহ্ মুহম্মদ সগীরের পৃষ্ঠপােষক ছিলেন। এই সময়ে পীর নূর কুত্বে আলম ফারসী ও বাংলা মিশ্রিত গযল রচনা করেন। কৃত্তিবাস গৌড়ের জলালুদ্দীন মুহম্মদ শাহের (১৪১৮-১৪৩১ খ্রীষ্টাব্দ) আদেশে বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের কুলীন গ্রাম নিবাসী মালাধর বসু শ্রীকৃষ্ণ বিজয় মেলা করিয়া (১৪৮০ খ্রীষ্টাব্দ) গৌড়ের সুলতান শম্সুদ্দীন যূসুফ শাহ (১৪৭৪-৮২ খ্রীষ্টাব্দ) কর্তৃক গুণরাজখান খেতাব পান। আরও অনেক কবি গৌড়ের সুলতানগগের বিশেষতঃ হুসযন শাহ, নসরত শাহ ও ফীরোয শাহের সভায় সমাদর লাভ করেন। সুলতানগণের দেখাদেখি অনেক আমীর ওমরা বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপােষক হন। এইরূপে গৌড়ের সুলতান ও প্রধানগণ গৌড়ের বৌদ্ধ পালরাজাগণের ঐতিহা অক্ষুন্ন রাখেন।
সেন রাজাদের সময়ে রাজধানী নবদ্বীপ সংস্কৃত চর্চার কেন্দ্রস্থল ছিল। নবদ্বীপ-নিবাসী শ্রী চৈতন্য দেবের প্রভাবে তাহা বাংলা সাহিত্যের কেন্দ্র হইয়া উঠে। ষােড়শ শতকের চৈতন্যভগবতে বৃন্দাবনদাস নবদ্বীপ সম্বন্ধে বলিয়াছেন :
নানা দেশ হইতে লােক নবদ্বীপে যায়।
নবদ্বীপে পড়িলে সে বিদ্যারস পায় ।।
অতএব পঢ়ুয়ার নাহি সমুচ্চয়।
লক্ষ কোটি অধ্যাপক নাহিক নির্ণয়।।
এই সময় হইতে নদীয়ার ভাষা বাঙ্গালায় সাহিত্যিক ভাষা হইয়া উঠে। এই ভাষা গৌড়ের বাংলা ভাষাই এক নূতন সংস্করণ। এখন পূর্ববঙ্গের উপশাখা সাহিত্যিকদের নিকট নিন্দনীয় হয়। চৈতন্যভাগবতে তাহার প্রমাণ আছে:
সভার সহিত প্রভু হাস্য কথা রঙ্গে।
কহিলেন যেন মত আছিলেন ব্যঙ্গে।।
বঙ্গ দেশি বাক্য অনুকরণ করিয়া ।
বাঙ্গালেরে কদর্থেন হাসিয়া হাসিয়া।।
বিশেষ চালেন প্রভু দেখি শ্রীহট্টিয়া।
কদর্থেন সেই মত বচন বলিয়া ।।
বলা কর্তব্য প্রাচীন ও মধ্যযুগে বঙ্গদেশ বলিতে পূর্ববঙ্গ বুঝাইত। পূর্ববঙ্গের ভাষার প্রতি নিন্দা নিন্মলিখিত্ত সংস্কৃত শ্লোকেও পাওয়া যায়।
আশীর্বাদং ন গৃহ্লীয়াৎ বঙ্গদেশনিবাসিনঃ।
শতায়ুরিতি বক্তব্যে হুতায়ুৰ্বদতি যতঃ।।
[অর্থাৎ বঙ্গদেশবাসীর আশীর্বাদ গ্রহণ করিবে না, কারণ বঙ্গবাসী শতায়ু বলিতে গিয়া হুতায়ু বলিয়া ফেলে।]
গৌড় ও নবদ্বীপের প্রভাব বিশেষতঃ চন্ডীদাস, কৃত্তিবাস, বিপ্রদাস, বৃন্দাবনদাস প্রমূখ পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্যচার্যগণের অনুসরণে পাঠান রাজত্বের শেষে একটি সাহিত্যিক বাংলা সাধুভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন বীরভূম হইতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দেশে এমন কি বাঙ্গালার বাহিরে আরাকানে এই ভাষা সাহিত্যে ব্যবহৃত হইতে থাকে। মুসলমানী পুথি সাহিত্যের ভাষায় আরবী ফারসী ও হিন্দীর মিশ্রণ থাকিলেও তাহা মূলতঃ ব্যাকরণে এই সাহিত্যিক ভাষারই আদর্শে রচিত। তবে ইহা অনস্বীকার্য যে সাহিত্যিক ভাষা বিরাট জনগণের মুখের ভাষাকে কাড়িয়া লইতে পারে নাই। এইজন্য লােক সাহিত্যে আঞ্চলিক ভাষা অনেকটা রক্ষিত হইয়াছে, যদিও তাহা সাহিত্যিক ভাষার প্রভাব হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত হইতে পারে নাই।
মুসলমান রাজত্বের শেষে বাংলাদেশে নবদ্বীপের সাহিত্যিক গৌরব কৃষ্ণনগরে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাদ্বারা রক্ষিত হয়। ইহার পরে যখন কলিকাতা রাজধানী হইয়া শিক্ষাকেন্দ্র হইয়া উঠে, তখন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য-রথীদের প্রভাবে সাহিত্যিক সাধু ভাষার মান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। পরে সাহিত্যিক সাধু ভাষার সহচর একটি সাহিত্যিক চলিত ভাষাও গঠিত হইয়াছে। ইহার বিশেষত্ত্ব ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্ত রূপে, যেমন ‘করছি’ করিতেছি’ হইতে, করছিলাম করিতেছিলাম’ হইতে।
।। দুই ।।
ম্যাকস্মুলার বলিয়াছেন, “The real and natural life of language is in its dialects” অর্থাৎ ভাষার প্রকৃত এবং স্বাভাবিক জীবন তাহার উপভাষাগুলিতে । এইজন্য ব্যক্তিগতভাবে বহুদিন হইতে অনেকে এই কাজে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন । তাঁহাদের প্রবন্ধগুলি প্রধানতঃ কলিকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সম্বন্ধে আমি ১৩২৭ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কৃর্তক আহুত ছাত্র সম্মিলনীতে মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সভাপতিত্বে যে ভাষণ প্রদান করি, তাহাতে বলিয়াছিলাম, “ভাষাতত্ত্বের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান প্রাদেশিক বিভাষার (উপভাষার) সাহায্যে হইতে পারে। একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। হিন্দী, মারাঠী, গুজরাঠী প্রভৃতি ভাষার সহিত তুলনা করিলে দেখিবে মূলে ছিল ‘মুই’ একবচন এবং ‘আমি’ বহুবচন। এমন কি আসামীতে ‘ময়’ একবচন এবং ‘আমি’ বহুবচন। প্রাচীন বাঙ্গালায় যে এইরূপ প্রয়ােগ ছিল, তাহা চট্টগ্রামের ‘চাকমা’ বুলি দ্বারা প্রমাণিত হয়। চাকমায় ‘মুই’ একবচন এবং ‘আমি’ বহুবচন। বাঙ্গালায় ‘আমি যাই’, চাকমায় ‘মুই যাং’, বাঙ্গালায় ‘আমরা যাই’, চাকমায় ‘আমি যেই’। The English Dialect Dictionary প্রায় তিন শত স্বেচ্ছা-সাহিত্য-সেবকের যোগে সুসম্পন্ন হইয়াছে। আমাদের প্রাদেশিক বিভাষা সংগ্রহের জন্য আমরা কি বাঙ্গালা প্রান্ত জেলায় অন্ততঃ একটি করিয়া উদ্যোগী ছাত্র সাহিত্য-সেবক পাইব না?” (ভাষা ও সাহিত্য) ।
বিগত ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে ভাষাবিদ পণ্ডিত Sir G. A. Grierson-এর সম্পাদনায় পাকভারত উপমহাদেশের ভাষাগুলির বিবরণী The Linguistic Survey of India নামক গ্রন্থাবলীতে ১৯০৩ হইতে ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। ঐ সময়ে দেশে ভাষাবিজ্ঞান বা ধ্বনিবিজ্ঞানের আলােচনা মুষ্টিমেয় লােকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সুতরাং বিবরণী সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানসম্মত হয় নাই। যাহা হউক ব্রিটিশ সরকার কীর্তি এই ভাষাবিবরণীই আমাদের উপভাষা সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের একমাত্র সােপান না হইলেও আমাদের প্রধান অবলম্বন। নানা অবিশ্যম্ভাবী ত্রুটি বিচ্যুতি সত্ত্বেও গ্রিয়ার্সন সাহেবের অবদান আমাদের চিরস্মরণীয়। তিনি বাংলা ভাষার উপভাষাগুলিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভেদে প্রধান দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন। পাশ্চাত্য বিভাগের উদীচ্য শাখার বিরাজভূমি হিসাবে তিনি দিনাজপুর, পূর্ব মালদহ, রাজশাহী, বগুড়া এবং পাবনা জেলাগুলিকে গণনা কঢ়িয়াছেন। এগুলি এখন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। রাজবংশী বা রংপুরী শাখা রংপুর, জলপাইগুড়ি (পশ্চিম বঙ্গ), গােয়ালপাড়া (আসাম) ও কোচবিহারে (পশ্চিমবঙ্গ) প্রচলিত । পূর্ব পাকিস্তানের কুষ্টিয়া জেলার কথ্য ভাষা পাশ্চাত্য বিভাগের কেন্দ্রীয় শাখার অন্তর্গত। তাঁহার প্রাচ্য বিভাগ প্রধানত: পূর্ব পাকিস্তানের এবং আংশিকভাবে তাহার সংলগ্ন ভারত ও বর্মা রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত।…
[বাকি অংশ বাদ দেয়া হইছে। ]
॥ তিন ॥
কেহ কেহ মনে করেন যে সিলহেট এবং চট্টগ্রামের উপভাষায় ‘ক’ অক্ষরের আরবী খে’ হরফের ন্যায় উচ্চারণ এবং ঢাকা,, ময়মনসিংহ, নােয়াখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানের উপভাষায় জকার স্থানে আরবী ‘যে’ উচ্চারণ আরব বণিকগণের সংস্রবের ফলে সংঘটিত হইয়াছে। প্রথমতঃ এই বিকৃত উচ্চারণ হিন্দু, মুসলমান ও বৌদ্ধ নির্বিশেষে স্থানীয় সকল অধিবাসীর মধ্যে দেখা যায়; দ্বিতীয়তঃ আরবী ভাষায় যখন ‘কাফ’ (ক) এবং খে, জীম (জ) এবং ‘যে’ দুই ধ্বনিই সমানভাবে আছে, তখন কেবল এই ‘খে’ এবং ‘যে’ উচ্চারণের জন্য আরবী প্ৰভাব স্বীকার করা যায় না। পূর্ব পাকিস্তানের বহু স্থানে যে শ স স্থানে হকার উচ্চারণ হয়, তা অবশ্য পারসী প্রভাবের ফলে নয়। মােট কথা ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ সম্বন্ধে আমাদের ভাষাতত্ত্বানুযায়ী গবেষণা করা প্রয়ােজন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রান্ত ভাগে অনেক অনার্য জাতি বাস করে। তাহাদের ভাষার প্রভাব উপভাষার উপর থাকা অসম্ভব নহে। এবিষয়েও গবেষণার ঢথেষ্ট অবকাশ আছে ।
ভাষাতাত্বিকগণের নিকট উপভাষাগুলির বিশেষ গুরুত্ব আছে। কোনও একটি উপভাষাকে ভিত্তি করিয়া রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাহিত্যিক প্রভাবে সাহিত্যিক ভাষা গড়িয়া উঠে; কিন্তু সাহিত্যিক ভাষার ইতিহাস উপভাষাগুলির মধ্যে বজায় থাকে। প্রাচীন বাংলায় বলে ‘মই মারম’, বহুবচনে “আহ্মে মারিঅই’, মধা বাংলায় যথাক্রমে ‘মােঞে মারোঁ’, ‘আহ্মে (আন্ধি) মারীএ (মরি)’ রূপ ছিল। আধুনিক বাংলায় ‘মুই’ অসাধু বলিয়া পরিত্যক্ত হইয়াছে। ‘আমি’ একবচনে ব্যবহৃত হইতেছে এবং ইহার নূতন বহুবচন করা হইয়াছে ‘আমরা’; কিন্তু কোনও কোন উপভাষায় এই প্রাচীন রূপ রক্ষিত, যথা পূর্ব সিলহেটিতে ‘মুই মারো’, ‘আমরা মারি’, চাকমায় ‘মুই মাঙ্’, ‘আমি মারি’, দিনাজপুরে ‘মুই মারঁ’, ‘হামরা মারি’, বাংলার সহোদরা আসামী ভাষাতেও “মই মারোঁ। দেখা যাইতেছে বাংলা সাধু ভাষার ক্রিয়ার একবচনের রূপ এবং আসামী ভাষার বহুবচনের রূপ লােপ পাইয়াছে। চাকমা ও আসামী ভাষায় ‘আমি’ বহুবচন; ‘আমি’ শব্দের পূর্ববর্তী রূপ পালি ও প্রাকৃতে ‘অম্হে’ বহুবচন । ইহার মূলে বৈদিক এবং আদি প্রাকৃতে ‘অস্মে’ বহুবচন। সাধু বাংলা ভিন্ন সমস্তু পাক-ভারতীয় আর্য ভাষায় নিষেধাত্মক অব্যয় ক্রিয়ার পূর্বে বসে। এইরূপ প্রাচীন বাংলায় এবং মধ্যযুগের আদি পুস্তুক শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে দৃষ্ট হয়। উপভাষাগুলির মধ্যে চট্টগ্রামের উপভাষায় ঐ চাকমায় এইরুপ প্রয়ােগই আছে এবং আসামী ভাষাতেও এইরূপ আছে। সর্বনামে প্রথম পুরুষের স্ত্রীলিঙ্গ সিলহেটী (তাই), চট্টগ্রামী (তেই, তাই, হিতি), ঢাকায় (হাতাই), ও নোয়াখালীর উপভাষায় (হেতি) আছে। আসামী ভাষায় ‘তাই’ এবং মারাঠী ভাষায় ‘তী’ রূপ আছে। আসামী ভাষার সহিত চট্টগ্রামী উপভাষার ধ্বনি ও রূপতত্ত্বে কিছু ঐক্য দেখা যায়।
ধ্বনিতত্ত্বে ঘোষ মহাপ্রাণ বর্ণ খ ধ ত প্রভৃতি এবং আদি হ ক্ষিত আছে। রূপতত্বে আমরা দেখি (ক) সম্বন্ধে ‘র্’, যেমন হাতর্, যবর্ ইত্যাদি। (খ) অধিকরণের একবচনে ‘ত্’ বিভক্তি যুথা বার বারিত্ (বাড়ীতে), ঘরত্। (গ) সর্বনামের প্রথম পুরুষের স্ত্রীলিঙ্গ আসাৰ্মী ‘তাই’, চট্টগ্ৰামী ‘তাই’, ‘তেই’ ‘হিতি’। পদক্রমে আমরা দেখি নিষধার্থক অব্যয় ‘ন’ ক্রিয়ার পূর্বে বসে, যথা ন গেল, ন ছিল, আছিল্ (ছিল না) ইত্যাদি। এই সাদৃশ্যের কারণ কি? উত্তর বঙ্গের ভাষার সহিত আসামী ভাষার সাদৃশ্য আছে, যেমন ধ্বনিতত্বে ঘােষ মহাপ্রাণ বর্ণ ও আদি হকার রক্ষিত এবং রূপতত্ত্বে কর্মকারকে ‘ক্’, অধিকরণে ‘ত্’ বিভক্তি এবং সকর্মক ক্রিয়ার অতীত কালের প্রথষ্ট পুষে ‘লে, যথা দিলে। পদক্রমে উত্তর বঙ্গের কোনও কােনও উপভাষায় ক্রিয়ার পূর্বে ন বসে। হইতে পারে প্রাচীন বাংলা ভাষার একটি স্রোত উত্তরবঙ্গ হইতে পূর্ব অভিমুখে আসামে প্রবেশ করে। পরে সেই স্রোত আসাম হইতে দক্ষিণ অভিমুখে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এককালে বাংলা দেশের এই পূর্ব প্রান্তের ভাষা বোধ হয় আসামীর সহিত একরূপ ছিল; কিন্তু পূর্ববঙ্গের উপভাষার প্রভাবে তাহার বৈশিষ্ট্য লােপ হইয়া পূর্ব বঙ্গের উপভাষা গােষ্ঠীর শামিল হইয়াছে । সিলহেটী উপভাষায় এবং ময়মনসিংহের পূর্বাঞ্চলে “তাই’ (she) শব্দ তাহার প্রাচীনত্ব রক্ষা করিয়াছে ।…
[চার নাম্বার অধ্যায় বাদ দেয়া হইছে এইখানে।]
|| পাঁচ ॥
পাক-ভারতে বাংলাদেশের উপভাষার অভিধান রচনার সর্বপ্রথম চেষ্টা করেন মি: এফ. ই. পাজিটার তাঁহার Vocabulary of Peculiar VernaCular Bengali Words পুস্তুকে (১৯২৩ খ্রী:)। ইহা ’এসিয়াটিক সােসাইটি অব বেঙ্গল’ হইতে প্রকাশিত হয়। ইংল্যাণ্ডে Thomas Wright ১৯৯৩ খ্রীষ্টাব্দে দুই জিলদে Dictionary of Obsolete and Provincial English প্রকাশিত করেন; কিন্তু Dr. Joseph Wright-এর English Dialect Dictionary একটি প্রামাণ্য পুস্তক। ইহা ছয় জিলদে ১৮৯৮ হইছে ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ইহা তেইশ বৎসরের উপকরণ সংগ্রহের ফল। অতিরিক্ত জিলদ সমেত ইহার পত্র সংখ্যা ৪৬৮৪ । ইহার প্রথম জিলদে ১৭,৫১৯টি একক ও সমাস যুক্ত শব্দ আছে। ইহার পরিশিষ্টে উপভাষার ব্যাকরণ এবং শব্দসূচী আছে। বাংলা ভাষা পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম বাঙ্গালা এবং বিহার, আসাম ও বর্মার কোনও কোনও অঞ্চলে প্রচলিত। এই সকল স্থানে উপভাষার নমুনা সংগৃহীত হইলে, বাংলা ভাষার উপভাষ্যর একটি সার্থক পূর্ণ চিত্র অংকিত হইতে পারিত। তাহা কবে হইবে এবং কখনও হইবে কিনা, আমরা জানি না। আশা করি আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানী বাংলার আদর্শ অভিধানের প্রথম খন্ড ও ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ সমস্ত বাংলা-ভাষামােদীর নিকট সমাদরে গৃহীত হইবে। আমরা এই সুযোগে মাননীয় পাকিস্তান সরকার, আমাদের গ্রাহক এবং সহকারিবৃন্দের নিকট আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি । ইতি–
৩০/৩/৬৪ইং
বিনীত
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
প্রধান সম্পাদক
বাছবিচার
Latest posts by বাছবিচার (see all)
- আমি – জহির রায়হান (১৯৬৭) - অক্টোবর 31, 2024
- (বই থিকা) ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক – কমলকুমার মজুমদার - অক্টোবর 12, 2024
- নজরুলের চিঠি: ফজিলাতুন্নেসা ও নারগিস’কে - জুন 13, 2024