Main menu

বাঙ্গালা বানান সমস্যা (১৯৩১) – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

This entry is part 9 of 22 in the series লেখার ভাষা

[জাস্ট চিন্তা করেন, আজকে থিকা আরো ১০০ বছর আগে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই শাজেশনগুলা দিয়া গেছেন, বাংলা-বানানের ব্যাপারে। যেমনে আপনি বলেন বা উচ্চারণ করেন, বানান অইরকম হওয়া দরকার; বা ৫০টা অক্ষরের কোন দরকার নাই, ৩৭টা হইলেই হয়। তারপরও আমরা সেই “শাহশ” করতে পারি নাই!

তার কারণ এইটা না যে, আমাদের শাহশ নাই, বিদ্দা-বুদ্ধি নাই না, বরং আমরা যে ‘শিক্খিত’ হিসাবে বই পইড়া বাংলা শিখছি, শেই দেমাগ দেখানোর কোন উপায় তো থাকে না তখন! মানে, বাংলা-ভাশায় এই যে কথার লগে লেখার মিল নাই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সেইটারে না-জানা বা ভুল-জানা বা ঠিকমতো বুঝতে-না-পারা হিসাবে ভাবতে রাজি থাকলেও, আমি আশলে বলতে চাই যে, এইটা খালি বেয়াকরণের সমস্যা না, বরং শোশিও-পলিটিকাল ঘটনা। ভাশা একটা কালচারাল উপাদানই না, পলিটিকাল টুল। আর বানান এর একটা খুবই ক্রুশিয়াল পার্ট। এই জায়গা থিকা না দেখতে রাজি হইলে ভাশা ও বানান নিয়া গোঁড়ামি (আশলে এলিটিস্ট পজিশন) কখনোই ছাড়তে পারা পছিবল না।

এখন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যা বইলা গেছেন, তা আমাদেরকে অক্খরে অক্খরে পালন করতে হবে – ব্যাপারটা কখনোই তা না, কিন্তু যেই বেইজ থিকা উনি কথাগুলা বলতেছেন সেইগুলারে আমলে না নিয়া, বরং ভাশা বিষয়ে আলাপে সামনে না রাখাটা কোন কাজের জিনিস না আর কি! এরপরেও আরো কয়েকটা লেখাতে বাংলা হরফ, বানান এবং ভাষা নিয়া মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কিছু সাজেশন রাখছেন, যেইগুলা এখনকার সময়ের কনটেক্সটে রিভিউ করতে পারাটা দরকারি একটা কাজ।

লেখাটা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ উনার “ভাষা ও সাহিত্য” বইয়ে বাংলা ১৩৩৮ সনে (১৯৩১) সালে ছাপাইছিলেন; তার আগে ১৩৩১ সনে “প্রতিভা” পত্রিকা’তে ছাপা হইছিল; আর এখন ১৪৩০ সন, হিসাব করলে লেখাটার মোটামুটি ১০০ বছর পার হইছে। পুরান লেখা হইলেও এর আরগুমেন্টগুলা এখনো ভ্যালিড আশলে।

ট্রাই দিস!]

মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন বাঙ্গালীর উপর একটা বড় রকম কলঙ্ক চালাইয়া বিয়াছেন। বাঙ্গী নাকি –

প্রতিজ্ঞায় কল্পতরু, সাহসে দুর্জ্জয়,
কার্য্যকালে খোঁজে সবে নিজ নিজ পথ।।

অর্থাৎ কিনা বাঙ্গালীর কাজে কথায় ঠিক নাই। বাঙ্গালী হইয়া অবশ্য আমরা নিজের মুখে এই কালী মাখিতে রাজি নই, কথাটা সত্যই হউক আর যাহাই হউক। বাঙ্গলী নবীন সেন বলিয়াছিলেন, তাই আমরা উচ্চবাচ্য করি নাই, বড়লাট কর্জ্জন ঐ রকম একটা কথা বলায় আমরা কিন্তু বেজায় চটিয়া গিয়াছিলাম। সে যাহা হউক, একটা কথা কিন্তু খুব খাঁটি যে বাঙ্গালীর লেখায় আর পড়ায় ঠিক নাই। বাঙ্গালী আগুন লিখিয়া জল পড়ে না কিম্বা চাঁদ লিখিয়া ফাঁদ দেখে না; কিন্তু অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারে আমাদের লেখা আর পড়া, বা বলা আর লেখা এক নয়। “অনেক” আর “এক” এই দুইএর “এ” আমরা এক রকম পড়ি না। বর্ত্তমান “কাল”, “কাল” চোখ – এই দুই জায়গায় “কাল” এর উচ্চারণে অনেক তফাৎ। সে তোমার “মত”, তোমার “মত” কি? – এখানেও দুই “ম তে”র দুই উচ্চারণ।

আমাদের যে কেবল স্বরেই শঠতা তাহা নয়, ব্যঞ্জনেও আমাদের গোলযোগ কম নয়। গৃহলক্ষ্মীরা ব্যঞ্জনের দোষের কথা শুনিয়া অবশ্য আমার উপর চটিবেন না। এ ব্যঞ্জন ভাষার ব্যঞ্জন। কানে শোনা আর কানের সোনা – এখানে “শোনা” আর “সোনা” শুনিতে একই, কিন্তু চেহারায় আলাদা। তিনি যান, তুমি জান, – এখানেও আমাদের বলা ও লেখা এক নয়। এই রকম আরও অনেক গরমিল পাওয়া যাইবে।

স্বরাজ্য দল নাকি দো-ইয়ারকি ভাঙ্গিয়া এক-ইয়ারকি করিবেন। বাঙ্গালার বানান রাজ্যে যখন দো-ইয়ারকি দেখা যাইতেছে, তখন যদি কেহ তাহাকে এক-ইয়ারকি করিতে চায় সে কাজটা নিশ্চয়ই সময় মোতাবেক হইবে। পয়লা কথা এই যে, যে সকল শব্দ বাঙ্গালা ভাষার নিজস্ব অর্থাৎ যাহা সংস্কৃত থেকে ধার করিয়া বা ভাঙ্গিয়া চুরিয়া লওয়া হয় নাই সেখানে বাঙ্গালার স্বরাজ্য চলিবে। ইহাতে বোধ হয় পুরানী রৌশনীদের কোন অমত হইবে না। এই ধরুন ষত্ব ণত্বের কথা, ঐ দুইটা সংস্কৃতের জন্যই বাঁধা থাকিবে। অর্থাৎ কিনা এই দুইটা হইল সংস্কৃত বিভাগের জন্য রিজার্ভড্। ইহাতে অবশ্য নরম দল কোন আপত্তি করিবেন না। কিন্তু যখন দেখি নরম দলেরাই জিনিষ, পোষাক, কোরাণ, গভর্ণমেন্ট প্রভৃতি এলাকার বাহিরের বিষয়েও ষত্ন, ণত্বের কাড়াকাড়ি চালাইতেছেন, তখন মনটা বিদ্রোহী না হইয়া থাকিতে পারে না।

রূপক অলঙ্কার বাদ দিয়া সোজা কথায় বলিতে গেলে আমরা জানিতে চাই বাঙ্গালা বানান কি সংস্কৃতের হুবহু নকল হইবে, না উচ্চারণ অনুযায়ী হইবে? যদি বল সংস্কৃত অনুযায়ী হইবে, তবে প্রশ্ন উঠিবে সংস্কৃত অনুযায়ী কেন? তুমি হয়ত বলিবে সংস্কৃত বাঙ্গালা ভাষার জননী। এখানেই কিন্তু এক মহা খইকা। বাঙ্গালা যদি সংস্কৃতের মেয়ে হইল, তবে যে সময় সংস্কৃত বাঁচিয়াছিল সেই সময়েই বা ভাষাতত্বের হিসাবে ঠিক তার পরেই বাঙ্গালার জন্ম্ন দরকার ছিল। কিন্তু মহারাজ অশোকের পাথরের লেখা হইতেই প্রমাণ হইবে যে দু হাজার বছরের আগেই গোটা ভারতে সংস্কৃত মরিয়া গিয়াছিল। বাঙ্গালা কিন্তু তত প্রাটীন নয়। বাঙ্গালার বয়স প্রায় হাজার বছর। এ কথা আমরা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের বৌদ্ধগানের প্রসাদে জানিয়াছি। বাঙ্গালার আগে অপভ্রংশ, প্রাকৃত, প্রাচীন প্রাকৃত (পালি যাহার একটি রূপ) ছিল। কাজেই সংস্কৃতকে বাঙ্গালার মা না বলিয়া তাহাকে দিদিমার দিদিমা বলা যাইতে পারিত, যদি পালি ইত্যাদি প্রাচীন প্রাকৃত সংস্কৃতের মেয়ে বলিয়া সাব্যস্ত হইত। কিন্তু পালির কোষ্ঠী বিচার করিয়া অটো ফ্রাঙ্কে প্রভৃতি পণ্ডিতেরা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে সংস্কৃত পালির মা নয়। পিশেল প্রভৃতি পণ্ডিতেরা বলেন খালি তাহাই নয়, সংস্কৃত প্রাকৃতেরও মা নয়। তবুও তর্কের খাতিরে, যদি মানা যায় বাঙ্গালা সংস্কৃত হইতেই বাহির হইয়াছে, তাহা হইলে বাঙ্গালার বানান যে সংস্কৃতের মতন হইবে তাহার নজির কি? পালি, প্রাকৃত, অপভ্রংশ কোনটাই ত সংস্কৃতের বানান মানে না। বাঙ্গালা মানিতে যাইবে কেন? পালি, প্রাকৃত, অপভ্রংশ লিখে ভিকষা, আমরা কেন লিখিব ভিক্ষা অর্থাৎ ভিক্যা? পালি, প্রাকৃত লিখে, দকখিণ, আমরা কেন লিখিব দক্ষিণ? পালি লিখে ঞাতি, ঞাণ, প্রাকৃত লিখে ণাই, ণাণ; আমরা কেন লিখিব জ্ঞাতি, জ্ঞান? মাগধী প্রাকৃত লিখে “শে”, আমরা কেন লিখিব “সে”? পালি লিখে জিব্‌হা, প্রাকৃত লিখে জিব্ভা, আমরা কেন লিখিব জিহবা? যদি সাবেক নজির মানিতে হয়, তবে বাঙ্গালাকে সংস্কৃতের শাসনে আনা চলে না।

তবুও না হয় মানিয়া লইলাম যে সকল শব্দ সংস্কৃতেরই মত, অর্থাৎ যাহাকে বৈয়াকরণেরা বলেন “তৎসম” যেমন কোণ, শন, যদি, সকল ইত্যাদি – এগুলিকে সংস্কৃতের নিয়মেই লিখা উচিত। কিন্তু যে সকল শব্দ সংস্কৃত ভাঙ্গিয়া বাঙ্গালায় আসিয়াছে, বরং একটু সূক্ষরূপে বলিতে গেলে যে সকল শব্দ সংস্কৃতেও দেখা যায় আর বাঙ্গালাতেও কিছু বিগড়ান অবস্থায় দেখা যায় অর্থাৎ যাহাকে বৈয়াকরণেরা বলেন “তদ্ভব” যেমন কান, সোনা, ইত্যাদি – সেগুলির বানান কেমন হইবে? যাঁহারা “তৎসম” শব্দে সংস্কৃত বানান চালান, “তদ্ভব” শব্দ সম্মন্ধে তাঁহাদের কিন্তু দুইমত দেখা যায়। একদল বলেন কর্ণে “ণ” আছে কাজেই “কানে” ও “ণ” থাকিবে, স্বর্ণে “স” ও “ণ” আছে, কাজেই “সোনা’য়ও “স” ও “ণ” থাকিবে, বাঙ্গালায় প্রকৃত প্রস্তাবে এখানে “স” এবং “ণ” এর “শ” ও “ন” উচ্চারণ হইলেই বা কি হয়? অর্থাৎ সংস্কৃতের বানান চালাও, উচ্চারণ টুচ্চারণ কিছুই দেখিবার দরকার নাই। ইহাদের মত কিন্তু ঠিক বুঝা যায় না। কারণ ইহারাই “যখন” “তখন” ইত্যাদি স্থানেও “ন” লিখেন। অথচ সংস্কৃতের “যৎক্ষণ” “তৎখন” আর বাঙ্গালার “যখন” “তখন” একই। এই মতে সে শোনে এখানে ণ কেন হইবে না? শূণোতি আর শোনে একই। ইহারা “রাণী”তে “ণ” লিখেন, অথচ সংস্কৃত রাজ্ঞীতে “ণ” নাই। আর এক দল বলেন সংস্কৃতে ণত্বের কারণ যে “র”, তাহা যখন বাঙ্গালা তদ্ভব শব্দে নাই, তখন “এখন”, “কান” ইত্যাদিরূপ “ন” যুক্ত বানানই শুদ্ধ। এটা একটা ন্যায়ের ফাঁকি। কারণ ণত্বের কারণ আগের “র” বা “ষ” নয়, বরং সংস্কৃত ভাষায় র বা ষ এর পর ন এর উচ্চারণ বদলাইয়া ণ হইত, এই জন্য সেই ভাষায় উচ্চারণ অনুযায়ী ণ লেখা হইত। কোণ, গণ ইত্য লেখা হইত। আমরা যদি বাঙ্গালার খাঁটি উচ্চারণ না ধরি, তবে মূল বানান কেন রাখা যাইবে না? আর বাঙ্গালার উচ্চারণ মানিয়া চলি, তবে “সোনা”র ন এ আসিয়া থামিলে চলিবে না, একেবারে “শোনা”য় গিয়া তবে রেহাই পাইবে। যদি বল এ কি হইল। স্বর্ণ আর শ্রবণ করা দুইই যদি শোনা হয়, তবে মানে বুঝিব কেমন করিয়া? আমি বলির যদি গায়ের তিলে আর গাছের তিলে কোন গোল না ঠেকে, যদি গানের তালে আর গাছের তালে ঠোকাঠুকি না ঘটে; তবে স্বর্ণ শোনায় আর শ্রবণ শোনায়ও কোন হাঙ্গামা হইবে না। আসল কথা, ভাষায় অক্ষরের মত শব্দ কখন দল ছাড়া হইয়া একেলা আসে না। অক্ষর থাকে শব্দের সঙ্গে জড়াইয়া আর শব্দ থাকে ব্যাকোর মাধ্য মিশাইয়া। কাজেই মানে যদি আলাদা আলাদা হয়, তবে বানান বা উচ্চারণ এক হইলেও বুঝিবার গোলমাল বড় একটা হয় না।

যে দুই দলের কথা বলিতে ছিলাম, ইহ্যদের উভয়েরই কিন্তু কয়েকটী বে-আইনী কাজ বেশ মিল দেখা যায়। তাহার মধ্যে একটা মস্ত ব্যাপার হইতেছে বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এক করা। সংস্কৃতে এই দুয়ের উচ্চারণে ও কাজে অনেক তফাৎ। বর্গীয় ব-এর উচ্চারণের জায়গ ঠোঁট আর অন্তঃস্থ ব এর ঠোঁট আর দাঁত। বর্গীয় ব-এর আগে ম্ মই থাকে, কিন্তু অন্তঃস্থ ব-এর আগে মং হয়; যেমন কিংবা। অন্তঃস্থ ব অবস্থা বিশেষে উ হয়চ যেমন বাক, উক্ত; কিন্তু বর্গীয় ব একেবারে নির্বিকার। যদি বল বাঙ্গালায় ত দুয়েরই উচ্চারণ এক। তবে আমি বলিব, বেশ কথা, যদি এই অজুহাতে দুই ব এক কর, তবে জ য, ণ ন, শ য স (স্থান, স্রোত ইত্যাদি শব্দ ছাড়া স) এক ক্লর না কেন, সকল লেঠা চুকিয়া যাইবে।

দুই দলই লিখেন চুল, অথচ ইহ্য চূড়া হইতে। শোওয়া, অথচ ইহা স্বপ ধাতু হইতে, শী ধাতু হইতে নয়। বসা, অথচ ইহা উপবিশ হইতে, বস্ ধাতু হইতে নয়। গরু অথচ ইহা গোরূপ শব্দ হইতে সিদ্ধ। মূল অনুযায়ী বানান করিতে হইলে লিখিতে হইবে চুল, সোওয়া, বশা, গোরূ।

আমরা দেখিলাম পুরানী রৌশনীদের অর্থাৎ সংস্কৃত-ভক্তদের (আমিও বাদ নই) মতের ঠিক নাই, বলা ও লেখার মিল নাই, লেখা ও পড়ার ঐক্য নাই। এখন জিজ্ঞাসা করি বানান জিনিসটা কি? বানান কি অক্ষর দিয়া একটি ভাষার শব্দ প্রকাশ বা পরিচয় করিবার নাম নয়। তাহা হইলে বানান সেই ভাষার উচ্চারণের পরিচয়কারী হওয়া দরকার। এই হইল বানান আসল উদ্দেশ্য। গোড়ায় বানান এই রকম উচ্চারণ অনুযায়ীই (phonetic) থাকে। কিন্তু যখন উচ্চারণ কালক্রমে বদলাইয়া যায়, তখন যদি সাবেক বানানই বজায় রাখা হয়, তবে বানান একটা আচারের মত (conventional) হইয়া দাঁড়ায়। তখন বানান শব্দের উচ্চারণকে সাচ্চারূপে না চিনাইয়া বরং তার ব্যুৎপত্তি বা ইতিহাসের সাক্ষী হইয়া দাঁড়ায়। ইংরেজির বানান এইরূপ। Know, Knee, Knave প্রভৃতির K এক সময় উচ্চারণ করা হইত। K থাকাতে Know Knee যে সংস্কৃত জ্ঞান, জানুর সঙ্গে এক এবং Knee, Knave জার্ম্মান ভাষার Knie, Knabe-র সহিত এক বুঝিতে পারি। বলা আবশ্যক জার্ম্মান ভাষায় এইরূপ জায়গায় K-র উচ্চারণ আছে। সে যাহাই হউক এইরূপ বানানকে আমরা কখন বর্ত্তমান ইংরাজির প্রকৃত বানান বলিতে পারি না। বাঙ্গালা বানানেরও অবস্থা তাই। ইংল্যান্ডে এই বানান দুরস্ত করিবার অন্য সভা সমিতি করিয়া চেষ্টা করা হইতেছে, কিন্তু ইংরাজ জাতির গোঁড়ামির জন্য বড় বেশী কাজ হইয়া উঠে নাই। বাঙ্গালা বানানেরও মেরামত হওয়া দরকার। পালি প্রাকৃতের বানান যেমন উচ্চারণ অনুযায়ী ছিল, বাঙ্গালার বানানও তেমনটি হওয়া চাই। বাস্তবিক আমাদের যে বানান, তাহা এক মুঠা লোকের জন্য। দেশের আপামর সাধারণ তাহা এখন মানে না, আগেও মানিত না। যদি বিশ্বাস না হয়, যে কোন পুরান পুঁথি বা আদালতের নথি কিংবা ডাকঘরের চিঠির বাকস সার্চ করিয়া দেখ। উচ্চারণ অনুযায়ী বানান হইলে যে এখন পাঁচ বছর বাঙ্গালা শিখিয়াও বানান ভুল করিয়া ফেলে, সে দু এক মাসে বানান শিখিতে পারিবে। ইহা আমাদের মত মূর্খের দেশে বড় কম একটা লাভ নয়। উচ্চারণ মত বানান সংস্কার করিলে বানান কি রকম হইবে, এখন আমরা তাহার আলোচনা করিব।

প্রথমে বাঙ্গালা স্বরের কথা ধরা হউক। আগে ছিল বর্ণমালায় ষোলটি স্বর – অ, আ, ই, ঈ, ঋ, ঋৃ, ৯, ৯৯ এ, ঐ, ও, ঔ, অং, অঃ। বিদ্যাসাগর মহাশয় বর্ণমালা হইতে ঋৃ, ৯৯ একেবারে বাদ দিয়া এবং “ং”, “ঃ”কে ব্যঞ্জন বর্ণের ভিতর পুরিয়া স্বরবর্ণকে বারটি করেন। তিনি ৯ কে অনায়াসে বাদ দিতে পারিতেন। কেন দেন নাই জানি না। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে বাঙ্গালায় একট (Monophthong) হ্রস্ব স্বর আছে নয়টি এবং জোড় (Diphthong) হ্রস্বম্বর আছে উনিশটি। মোট এই ২৮টি হ্রস্ব স্বরের দীর্ঘও আছে আটাইশটি। একুনে বাঙ্গালার স্বর ছাপান্নটি। হ্রস্ব স্বরগুলি নিম্নে লিখিতেছি।

একট নয়টি স্বরের মধ্যে কেবল মাত্র তিনটি বর্ত্তমান অক্ষর দ্বারা দেখান যাইতে পারে। বাকীগুলি দেখান যায় না। সংস্কৃতের আ, এ, ও দীর্ঘ। বাঙ্গালায় কিন্তু এইগুলি হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয়ই। প্রাকৃতেও হ্রস্ব ‘এ’, হ্রস্ব ‘ও’ ছিল। নয়টি একট দীর্ঘস্বরের মধ্যে কেবল পাঁচটি বাঙ্গালা অক্ষরে দেখান যায়, যেমন আ, ঈ, উ, এ, ও। তাহা হইলে দাঁড়াইতেছে মোট আঠারটি একট স্বরের জন্য আটটি মাত্র হরফ আছে। বাঙ্গালা ভাষায় ঋ, ৯-র খাঁটি উচ্চারণ নাই। পালি প্রাকৃতেও ছিল না। সংস্কৃত বাঙ্গালা হরফে লিখিবার জন্য এই দুইটির দরকার হইতে পারে না। সেই রকম ঋৃ, এবং বৈদিক ল, ল্হ, ং প্রভৃতি অক্ষরের দরকার পড়িতে পারে। তাই বলিয়া এগুলি বাঙ্গালা বর্ণমালায় থাকিতে পারে না। জোড় স্বরের মধ্যে বাঙ্গালা হরফের কেবল ঐ, ঔ আছে। কিন্তু তাহাদের উচ্চারণ সংস্কৃতের মত আই, আউ নয়, ওই ওউ। বাকীগুলির জন্য কোনও হরফ নাই। এখন যদি আমাদিগকে উচ্চারণ অনুযায়ী বাঙ্গালায় লিখিতে হয়, তা অন্ততঃ পক্ষে নয়টি একট হ্রস্বম্বর এবং উনিশটি জোড় হ্রস্বস্বরের জন্য আলাদা আলাদা হরফ চাই। আমাদের পুঁজি কিন্তু একট হ্রস্ব তিনটি হরফ এবং জোড় হ্রস্ব দুটি হরফ। তাহা হইলে তেইশটি হরফ নুতন গড়া দরকার। কিন্তু সে ত এক বিভ্রাট ব্যাপার।

আমরা কৌশল করিয়া অল্প অক্ষর দ্বারা এই সব উচ্চারণ দেখাইতে পারি। এখন প্রায় সকলেই বিকৃত “ও” বিকৃত “আ’-র জন্য apostrophe দিয়া লিখেন, যেমন ব’লে (বলিয়া) কা’ল (কল্য)। আমরা ইহা মঞ্জুর করিয়া লইতে পারি। তবে বিকৃত “এ”-র জন্য ‘অ্যা’ দেওয়া মোটেই সঙ্গত হয় না। অ্যাক (এক) লিখা কিম্ভুতকিমাকার। তার চেয়ে বিকৃত “আ” ও বিকৃত “ও”র ন্যায় বিকৃত “এ”-র জন্য এ’ লেখা মন্দ নয়। জম্মান ভাষায় ä, ö, ü’ র মত বাঙ্গালায় অ’ আ’ এ’ চলিতে আপত্তি কি? যত তত প্রভৃতি শব্দের শেষের হ্রস্ব ওকার দেখাইবার জন্য অক্ষরের নীচে কষি দিলেই চলিতে পারে, যেমন যত, তত, অতি, ছোট ইত্যাদি। এই প্রস্তাবটি অবশ্য নূতন নয়। কেহ কেহ শেষের উচ্চারিত হ্রস্ব ওকারের জন্য ওকার লিখেন, যেমন মতো। কিন্তু আগের হ্রস্ব ওকার দেখাইবার উপায় কি? যদি সেখানেও ওকার লিখি, তাহা হইলে মত স্থানে মোতো, অতি স্থানে ওতি লিখা দরকার হইবে এবং মতি লিখিতে মোতি, করি লিখিতে কোরি লিখিতে হইবে। বিশ্বভারতী উচ্চারিত মধ্য ওকারের জন্য apostrophe ব্যবহার করিতেছেন; যথা, ব’লি, কিন্তু বলো। জোড় স্বরের জন্য বাঙ্গালা স্বরবর্ণের ঐ, ঔ বাদ দিয়া সতেরটি হরফ দরকার। এই সতেরটি হরফ না গড়িয়া বরং আমরা ঐ, ঔ-কে বাঙ্গালা বর্ণমালা হইতে বাদ দিতে পারি। পালি ও প্রাকৃতেও ঐ, ঔ নাই। তাহা হইলে আমাদের প্রস্তাব অনুসারে হ্রস্ব স্বরগুলি এই হইবে যথা – অ আ ই উ এ ও অ’ আ’ এ’। ইহার সহিত পালি ও প্রাকৃতের স্বরবর্ণ আমরা তুলনা করিতে পারি,– অ আ ই ঈ উ ঊ এ ও। দীর্ঘস্বরের জন্য কোন আলাদা হরফের দরকার নাই। তবে দীর্ঘস্বর বুঝাইবার জন্য কোন চিহ্ন হইবে কিনা? যেমন সংস্কৃত ইত্যাদির রোমান অক্ষরে অনুলেখনে (transliteration) স্বরবর্ণের উপর দীর্ঘ চিহ্ন দেওয়া হইয়া থাকে, আমাদের বিবেচনায় বাঙ্গালায় তাহার কোন দরকার নাই। বাঙ্গালা উচ্চারণের নিয়মেই হ্রস্ব দীর্ঘ ধরা পড়ে – যেমন হসন্ত বর্ণের আগের স্বর দীর্ঘ হয়। বাস্তবিক যেখানে আমরা সংস্কৃতের অনুকরণে হ্রস্বদীর্ঘ লিখি, বাঙ্গালা উচ্চারণ অনেক জায়গায় তাহার বিপরীত, যেমন “সীতা” এবং “মিতা” এখানে “সী” ও “মি” উভয়েরই উচ্চারণ হ্রস্ব। “মীন” “দিন” এখানে “মী” “দি” উভয়েরই উচ্চারণ দীর্ঘ। কাজেই “শিতা” “মিন” লিখিলে বাঙ্গালা উচ্চারণ দস্তুরমত বুঝা যাইবে।

এখন ব্যঞ্জন লইয়া কথা। ব্যঞ্জন বর্ণের মধ্যে কতকগুলি বে-দরকারী অক্ষর আছে, যেমন ণ, য, অন্তঃস্থ ব, ষ, স। “স”-র খাঁটি উচ্চারণ ঋ, ক, খ, ত, থ, ন, প, ফ, র-এর সঙ্গে মিলা অবস্থায় দেখা যায় যেমন, সৃত, স্কন্ধ, স্থলন; হস্ত, স্থান, স্নান, স্পষ্ট, স্ফটিক, স্রাব। ঋ র ন-এর সহিত “শ” মিলিলেও ‘শ’-র উচ্চারণ ‘স’-র মত হয় যেমন শৃগাল, আশ্রিত, প্রশ্ন। কিন্তু সাধারণতঃ বাঙ্গালা ভাষায় ‘স’-র উচ্চারণ নাই কিন্তু ‘শ’-র উচ্চারণ আছে। এই জন্য বাঙ্গালা ব্যঞ্জন বর্ণ হইতে ণ, য, ষ, স বাদ দেওয়া যাইতে পারে। অন্তঃস্থ ব সম্বন্ধে একটু কথা আছে। বিদ্যা, বীণা প্রভৃতি শব্দে যেখানে সংস্কৃতে অন্তঃস্থ ব আছে, বাঙ্গালার উচ্চারণ মত বর্গীয় ব লেখা হয় এবং তাহাই উচিত। কিন্তু খাওয়া, পাওয়া প্রভৃতি বাঙ্গালা শব্দে অন্তঃস্থ ‘ব’-এর উচ্চারণ আছে। সে জন্য আসামীর মত অন্তঃস্থ ব্ বাঙ্গালার দরকার। পালি ভাষায় শ ষ নাই।

মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে ন, শ, য, য নাই, মাগধী প্রাকৃতে ন, স, য. জ নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় অন্তঃস্থ ‘ব’-কে বর্ণীয় ‘ব’-র সহিত একাকার করিয়া প্রকারান্তরে এক ‘ব’ স্বীকার করিয়াছেন। তিনি আর একটু সাহসী হইলে জ, ঘ. ণ, ন এবং শ য স এগুলিকেও একাকারে আনিতে পারিতেন। ও, ও-র উচ্চারণ বাঙ্গালায় আছে, কিন্তু হিনীর ন্যায় ‘ৎ দ্বারা এই দুইয়েরই কাজ অনায়াসে চলিতে পারে। অতএব ‘খ’, ‘এ’ বাদ দেওয়া চলে। ‘র’-এর উচ্চারণ ‘হ’ কিম্বা পরের অক্ষরের দ্বিত্ব দ্বারা চলে। যেমন দুঃখ স্থানে দুঃখ বা দুক্খ। পালি ও প্রাকৃতেও ঃ নাই। আমাদের প্রস্তাবিত ব্যঞ্জনগুলি এই হইবে –

ক খ গ ঘ
চ ছ জ ঝ
ট ঠ ড ঢ
ত থ দ ধ ন
প ফ ব ভ ম
র ল
শ হ

ড় য
অভ্যস্থ ব্

এখন যুক্তাক্ষরের পালা। বাঙ্গালায় য ফলা ও ব ফলার কোন সার্থকতা নাই। উভয়ের দ্বারা অক্ষরের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। তবে ‘য’ ফলায় আগের ‘অ’ ‘ও’রূপে এবং ‘আ’ বিকৃতরূপে উচ্চারিত হয়। ‘জ্ঞ’-র উচ্চারণ গঁ-র মত। কখনও “গ্যা”-র মত, যেমন জ্ঞান বাঙ্গালা উচ্চারণে গ্যান, বিজ্ঞ বাঙ্গালা উচ্চারণে বিগ্‌গঁ। ‘ম’ ফলায়ও বাঙ্গালার কোন দরকার নাই। উচ্চারণ অনুযায়ী লিখিতে গেলে শ্মশান হইবে শ শান, পদ্ম হইবে পদ্দ। ‘ক্ষ’-র উচ্চারণ সংস্কৃতে কষ। কিন্তু বাঙ্গালায় কখ। প্রাকৃতেও এইরূপ ছিল এবং এইরূপ লিখা হইত। বাঙ্গালায়ও ‘ক্ষ’-র বদলে ক্‌খ চলিবে না কেন? হ্র হৃ বাঙ্গালা ভাষায় উচ্চারিত হয় rha, rhi অর্থাৎ ‘র’-এর মহাপ্রাণরূপে (aspirate)। এইরূপ ‘হল’-র উচ্চারণ বাঙ্গালায় Iha এবং হ্ল হ্ন-এর উচ্চারণ nha। বাঙ্গালায় তিনটী হরফ এই জন্য না গড়িয়া র্‌হ, লহ, ন্‌হ দ্বারা কাজ চালান যাইতে পারে। রেফযুক্ত বর্ণকে প্রায়ই দ্বিত্ব করিয়া লেখা বাঙ্গালা বানানের নিয়ম, যেমন ধর্ম্ম, বর্জন, অর্দ্ধ ইত্যাদি। পাণিনি মতে এইরূপ স্থলে ধর্ম, বর্জন, অর্ধ ইত্যাদি বানানও চলিতে পারে। আমরা বাঙ্গালায় এই শেষোক্ত বানানই প্রয়োগ করিতে চাই। আমি এখন উদাহরণের সহিত যুক্তাক্ষরগুলির সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত রূপ দিতেছি –

এখন কথা হইতেছে এই উচ্চারণ-অনুযায়ী বানান চলিবে কি? ইহার সোজা উত্তর দশজনে এই রকম লিখা ধরিলেই ক্রমে চলিবে। ইহার জন্য চাই শুধু বৈজ্ঞানিক প্রবৃত্তি ও নৈতিক সাহস।

উচ্চারণ-অনুযায়ী বানানের বিপক্ষে কেহ হয় ত বলিবেন যে উচ্চারণ বাংলাদেশের সকল জায়গায় এক নয়। কলিকাতার লোকে বলে হাঁশি (হাসি), শ্যাঁখারি (শাঁখারি) ইত্যাদি; ঢাকা অঞ্চলের লোকে বলে কাপর (কাপড়), পরা (পড়া), বাত (ভাত), Zal (জল), tsal (চল) ইত্যাদি। প্রত্যেক স্থানের উচ্চারণের কিছু না কিছু রকম ভেদ আছে। এখন কোন্ জায়গার উচ্চারণ ধরিয়া বানান করা যাইবে? ইহার উত্তরে বলা যাইবে যে যেমন প্রত্যেক স্থানের বুলির বেশী বা কম তফাৎ থাকিলেও লেখ্য ভাষায় এক সাধারণ ভাষা (standard language) ব্যবহার করা হয়, তেমনি একটী সাধারণ শিষ্ট উচ্চারণ আছে, যাহা স্কুল কলেজে শিখান হয় এবং পাঁচ জায়গার ভদ্রলোক এক জায়গায় হইলে কথাবার্তায় বা বক্তৃতায় ব্যবহার করা হয়। এই সাধারণ শিষ্ট উচ্চারণ মতই লেখা হইবে।

কেহ কেহ হয়ত বলিবেন এইরূপ বানানে শব্দের নাড়ীর ঠিক পাওয়া যাইবে না অর্থাৎ ব্যুৎপত্তি বুঝা যাইবে না। উত্তরে বলা যাইতে পারে যে আনাড়ী না বুঝিতে পারেন, কিন্তু পণ্ডিতের বুঝিতে গোল ঠেকিবে না। যদি ব্যুৎপত্তির উপরই জোর দিতে হয়, তবে বাঙ্গালা ভাষা তিব্বতী ভাষার মত হইয়া দাঁড়াইবে। লিখিতে হইবে মস্তক, পড়িতে হইবে মাথা; লিখিতে হইবে উপাধ্যায়, পড়িতে হইবে ওঝা; লিখিতে হইবে ঘোটক, পড়িতে হইবে ঘোড়া। এরূপ যদি অসহ্য হয়, তবে ভিক্ষা (ভিক্‌ষা) লিখিয়া কেন ভিক্খা পড়া হইবে, জ্ঞান (জ্ঞান) কেন গেঁন (গ্যাঁন) পড়া হইবে? অন্য পক্ষে, যদি পক্ষী স্থানে পাখী লেখা অশুদ্ধ না হয়, তবে ক্ষেত্র, ক্ষীর স্থানে খেত, খীর কেন অশুদ্ধ হইবে? যদি রাজ্ঞী স্থানে রাণী অশুদ্ধ না হয়, তবে জ্ঞাতি স্থানে বা গেঁ’তি (গ্যাতি) কেন অশুদ্ধ হইবে? সংস্কৃত অনুযায়ী বানানের পক্ষকে আমরা বলিব, পয়লা বাঙ্গালীর জিভকে সংস্কৃত করুন, তারপর বানান সংস্কৃতের মত লিখিবেন। কিন্তু সে কি সম্ভব?

Series Navigation<< “মুসলমানী বাঙ্গালা” কি? – আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদবাংলাভাষা পরিচয় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [১৯৩৮] >>

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →