Main menu

বই: আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ইন্টারভিউ

হেমিংওয়ের এই ইন্টারভিউ নিছিলেন জর্জ প্লিম্পটন, ১৯৫৮ সালের বসন্তে। তার চার বছর আগে তিনি নোবেল পাইছিলেন, তিন বছর পরে তিনি শটগান দিয়া শুট কইরা সুইসাইড করবেন। মাঝখানের এই পিরিয়ডে হেমিংওয়ের ইন্টারভিউ— প্যারিস রিভিউয়ের বদৌলতে নেয়া হইছিলো। রিভিউয়ের লোকজন ১৯৫০ থেকে শুরু করছেন বুড়া হইয়া যাইতেছে, হইতেছে, হইয়া গেছেন বা বিখ্যাত কিংবা এসটাবলিশড রাইটারদের ইন্টারভিউ নেওয়ার কাম। এই কাজ করতে করতে তেনারা দেখলেন, এই ইন্টারভিউগুলা একেকটা হইয়া উঠতেছে আর্ট। সেগুলা নেওয়ার ধরণ, রাইটারের বর্ণনা, এছাড়া কিভাবে একটা ফিকশন ‘হইয়া উঠে’ তার ব্যাপারে ইন ডেপথ এনালাইসিস, প্যারিস রিভিউয়ের এই সেগমেন্টের অন্যরকম লিটারেরি ভ্যালু তৈরি করছে। রাইটারের কথা কওনের সাইকোএনালাইসিসের ভিতর দিয়া আপনি দেখতে পারবেন কিভাবে আর্ট, আর্ট হইয়া উঠে।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

সেই সুবাদে আমি এই দফায় আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ইন্টারভিউ ট্রান্সলেট করলাম আরকি। ট্রান্সলেট বললেই তো আর ট্রান্সলেট হইয়া যায় না। এইটা একটা প্রসেস। একটা লানলি প্রসেস। যেকোন লেখালিখিই, হেমিংওয়ের মতে লানলি একটা কাম। রেমন্ড কার্ভার, যার ইন্টারভিউ ১৯৮৩ তে নেয়া হইছিলো, তার ভাষায়, যখন আমি একটা শব্দ লিখি না বা লেখা হইতেছে না তখন আমার ঘুম হয় না ঠিকমতো, ভাল্লাগে না কোনকিছুই। যখন আমি একটা শব্দ লিখি, যখন অইটা লিখতেছি, সেই মোমেন্টটা খুব লানলি একটা সময়। একই জিনিস হেমিংওয়ের মধ্যে অন্যভাবে আমরা আবিষ্কার করি। সো, যখন আমি ট্রান্সলেট করতেছিলাম, তখন একটা লম্বা টাইমের জন্যে আমি হেমিংওয়ের সাথে ছিলাম, কী কী বলতেছেন তার একটা ভিডিও আমার চোখের সামনে ভাসতেছিলো। আমি ডুব দিছিলাম, হেমিংওয়ের ফিকশানে চিন্তা ক্যামনে কাজ করে সেই রিডিং-এর ভিতরে। এবং এই সময়ে আমারে একাই থাকতে হইছিলো।

হেমিংওয়ে, আর্ট বা যেকোন রাইটিং এর ব্যাপারে খুব পার্সোনাল। এই বিষয় তার কাছে একটা স্যাক্রেড বস্তু। পারতপক্ষে তিনি এই ইন্টারভিউ নেওনের ব্যাপারে রাজি ছিলেন না। পুরাটা টাইম আপনি তার বিরক্তি দেখতে পারবেন, রেজিস্ট্যান্স প্রতিটা কথায়। সরাসরি উত্তর দিতেছেন না, দূরে চলে যাইতেছেন কোন কোন প্রশ্নে। অনেক সময় এড়ায়ে অন্য কোন আন্সার দিতেছেন। কনশাসলি কোন কোন কথা বলতেছেন বা বলতেছেন না। একটা আলাদা পৃথিবী নিজের ভিতরে নিয়া হেমিংওয়ে লেখালিখি কইরা গেছেন। এবং এই কাজ তিনি ক্যামনে ক্যামনে করতেন এইটার একটাই উত্তর হইতে পারে— তিনি না কইরা থাকতে পারেন নাই।

তার জীবনের লম্বা একটা সময় যুদ্ধ, স্ট্রাগল, অসুস্থতার ভিতর দিয়া গেছে। দুইবার প্লেন ক্র্যাশ করার পর ইনজুরড হইলেও বাঁইচা ফিরছিলেন। কয়েকবার শক ট্রিটমেন্ট দেয়া হইছিলো শেষের দিকে। ডিপ্রেশন, লাইফ নিয়া অস্বস্তি তাড়া করে ফিরছিলো হেমিংওয়েকে নানাভাবে। এই স্ট্রাগলের একটা ছাপ আপনি তার লেখার ভিতরেও পাইবেন। লাইফ কিভাবে বিভিন্ন রাইটারের পুরা ক্যারেক্টার শেপে ভূমিকা রাখে তার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ইনসাইট পাওয়া যাইতে পারে সম্ভবত। এবং আরও সম্ভবত, রাইটারদের তাদের নিজেদের কাজের বাইরে আর কোন পার্সোনাল লাইফ থাকা পসিবলও না। কারণ, এইটাই, মানে লেখা— যা আনকনশাসলি, রাইটারের ভিতর যা যা আছে, তা সুতা দিয়া টাইনা টাইনা বাইর কইরা নিয়া আসে। (মিডিয়াম.কমে স্টিভ নিউম্যানের ‘ডেথ অফ আর্নেস্ট হেমিংওয়ে’ নামে একটা সুন্দর লিখা পাইবেন, যদি তার সুইসাইড নিয়া জানার খায়েশ থাকে)

ট্রান্সলেশনের বিচারে একটা জিনিস বন্ধুবান্ধব যারা পড়তেছেন, তাদের ভ্রু কুচকাইতে পারে। এক, ভাষা; যার ব্যাপারে নতুন কইরা কিছু বলার নাই। আপনার ঢাকাই ভাষা, অপ্রমিত ভাষা, ‘অশুদ্ধ’ ভাষা নানান ট্যাগের প্রতি ‘অস্বস্তি’ থাকতেই পারে। কিন্তু, এমন একটা ভাষা যা আমরা রাস্তাঘাটে, আড্ডায়, ফেসবুকে ইনফর্মালি ইউজ করি তা দিয়া লেখালেখির মতো কাজ ক্যানো করা যাবে না, তা আমার বুঝে আসে না। অন্তত এই ইনফর্মাল ভাষায়ই পুরা ইন্টারভিউটা ট্রান্সলেট করা হইছে। এই ইন্টারভিউটা নেওয়াও হইছিলো ইনফর্মালি, জানায়ে রাখলাম। সেই বলা শব্দগুলার একটু কাটছাঁট কইরা প্লিম্পটন সাহেব ছাপাইছিলেন। আর, লাস্ট টিপস— এই ইন্টারভিউ পড়ার জন্যে হেমিংওয়ে যদি নাও পইড়া থাকেন সমস্যা নাই। হেমিংওয়ের লেখা না পইড়াও আপনার এইটা পড়তে কুনো সমস্যা হবার কথা না।

 

তৌকির হোসেন

১৪ অক্টোবর, ২০১৯
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।

…………………………………

আমার মনেহয় একজন মানুষের ইমাজিনেশন তার রেসের ভিতর থেকে আসা একটা অভিজ্ঞতার রেজাল্ট 

 

হেমিংওয়েঃ আপনি রেসে যান বা রেস দ্যাখেন?

ইন্টারভিউয়ারঃ হ্যাঁ, মাঝে মাঝে।

হেমিংওয়েঃ তাইলে একটা রেস ক্যামনে ক্যামনে রেস হইয়া উঠে সেইটার দিকে নজর দেন… অইখানেই লুকায়া আছে আর্ট অফ ফিকশান।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বাড়ির খোঁজে আমাদের যাইতে হয় হাভানার সান ফ্রান্সিসকো দে পলা নামক এক মফস্বল এরিয়ায়। সেইখানেই তার বাড়ি, সেইখানের শোবার ঘরে চলে হেমিংওয়ের লেখালেখি। বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় স্কয়ার টাওয়ারে অবশ্য আলাদা একটা ওয়ার্করুম তার জন্যে বানানো আছে। কিন্তু হেমিংওয়ের ওইটাতে পোষায় না। তিনি শোবার ঘরে লেখালেখি করতে প্রেফার করেন। যখন ক্যারেক্টারগুলা প্যারা দিতে থাকে, তখন অবশ্য হেমিংওয়ের টাওয়ার–ঘরে না যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

শোবার ঘর বাড়ির নিচ তলায় আর তা মূল ঘরের সাথে লাগানো। দুই ঘরের মাঝের দরজা হালকা ভিজানো, দরজায় ঝুলতেছে “বিশ্বের এয়ারক্র্যাফট ইঞ্জিনস” লেখা বড়সড় একটা ক্যালেন্ডারের মত লিস্ট। শোবার ঘর বড়, বাইরের রোদ আসে। জানালাগুলা পূব আর দখিনামুখি। এই দিয়া রোদ আইসা সাদা দেওয়াল আর হলুদ রঙা টাইলসের মেঝেতে ঝিলিক মারে।

দুইটা বুক সমান উঁচু বুকশেলফ ঘরটাকে দুইভাগ কইরা রাখছে। বুকশেলফ দুইটা পরস্পর নাইনটি ডিগ্রি কোণে বসানো। একপাশে বড় লোয়ার ডাবল বেড অনেকখানি জায়গা দখল কইরা আছে। পায়ের দিকে বেঢপ সাইজের স্লিপারস, লোফারস সুন্দরমতো সাজানো। মাথার দিকে দুইটা বেডসাইড টেবিলে উঁচা কইরা বই রাখা। আরেকদিকে,  বিশালাকারের ফ্ল্যাট-টপ ডেস্ক। দুইটা চেয়ার। ডেস্কে ছড়ায়া আছে পত্রিকা আর রাখা আছে মেমেন্টো। ঘরের শেষের দিকে একটা জামাকাপড় রাখার আলমারি যার উপরে লেপার্ডের চামড়া সাজানো। অন্য দেওয়ালে সাদা রঙ করা অনেকগুলা বুককেস। বইয়ের জায়গা হইতেছে না, কিছু মেঝের দিকে চইলা আসতেছে, কিছু পুরানা পত্রিকার উপর স্তুপ কইরা রাখা আর কিছু বুলফাইট জার্নালস, কিছু চিঠিপত্র রাবারব্যান্ড দিয়ে একসাথে বাইন্ধা রাখা।

এরই মধ্যে একটা বুককেস— যেটা পূব দিককার জানলার দিকে এবং বিছানা থেকে তিন ফিটের মতো দূরত্বে অবস্থিত— তার উপরের পাটাতনরে হেমিংওয়ে তার “ওয়ার্ক-ডেস্ক” বানাইছেন। এইটা এক বর্গফিটের মতো একটা ছোটখাটো খালি জায়গা। একপাশে বই, আরেকপাশে পত্রিকা গাদা কইরা রাখা, পাণ্ডুলিপি, প্যাম্ফলেট ইত্যাদি জায়গাটাকে ঘেরাও কইরা রাখছে। মানে কোনভাবে একটা টাইপরাইটার বসাইয়া ফেলন যায় সেইখানে। এবং টাইপরাইটারটা আছেও— আর আছে কাঠের রিডিংবোর্ড, পাঁচ/ছয়টা পেন্সিল, একটা কপারের আকর যেইটা পূবদিকের বাতাস আইলে পেপারওয়েট হিসাবে চালানো যায়।

হেমিংওয়ের শুরু থিকাই অভ্যাস— দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া লেখা। বেঢপ সাইজের লোফার পায়ে দিয়া হেমিংওয়ে দাঁড়ান। তার বুকসমান উঁচাতে গিয়া ঠেকে টাইপরাইটার, রিডিংবোর্ড। যেমন যেখানটায় আছে। দাঁড়ায়া লিখতে এইজন্যে একদমই অসুবিধা হয় না।

যখন হেমিংওয়ে কোন একটা প্রজেক্ট নিয়া আগাইতে চান তখন সবসময় তার শুরুয়াত হয় একখানা পেন্সিল দিয়া। রিডিংবোর্ডের উপর পেঁয়াজখোসার লাহান কাগজের উপর ওই পেন্সিল কাজে লাগান। টাইপরাইটারের বাঁ পাশে একটা ক্লিপবোর্ডে কিছু সাদা কাগজ  আটকানো থাকে। মেটাল ক্লিপের নিচ থেকে একটা কাগজের অংশ সবসময় বাইর হয়া আছে। ওই ক্লিপের উপর একটা লেখা পড়া যাইতেছে— “এইসবের দাম চুকাইতে হবে”। হেমিংওয়ে কাগজটা একটু বাঁকা কইরা ধরেন, বাম হাত ঠেশ দিয়া ভর দেন, কাগজটারে সোজা করেন, কলম চালাইতে থাকেন। বছর ধইরা লেখনের ফলে হাতের লেখা আরও বড় হইতেছে, একটু বালসুলভও লাগে। টানা বানান, কম ক্যাপিটাল হরফ, অনেক সময় দাঁড়িও না কেবল একটা এক্স দিয়া টান দেন। পৃষ্ঠা খতম হইলে উঠায়ে নেন। টাইপরাইটারের ডানে রাখা আরেকটা ক্লিপবোর্ডে আটকায়া দেন।

হেমিংওয়ে টাইপরাইটারের দিকে শিফট করেন, রিডিংবোর্ডে হালকা ধাক্কা লাগে, কখনো কখনো তা ঢাইকা দেন। সেই সময়ে হেমিংওয়ে দ্রুত লিখেন কিংবা তার লেখা এমনিতেই তখন ভালো গতি পাইতে থাকে— তার ভাষায়, যখন লেখাটা একটা ডায়ালগ হইয়া উঠতে থাকে।

একটা দেয়ালে হরিণের মাথা ঝুলে। মাথার নিচে কার্ডবোর্ড ঝুলে। সেইটায় বড় একটা চার্ট বানানো আছে। অইখানে হেমিংওয়ে প্রতিদিন কতখানি শব্দ লেখা হইলো তার হিসাব রাখেন যাতে “আমি নিজেরে ফাঁকি দিতে না পারি”। প্রতিদিনের আউটপুট দেখা যায়— ৪৫০, ৫৭৫, ৪৬২, ১২৫০ থেকে ৫১২। সবচেয়ে বেশি শব্দের সংখ্যা বেসিকালি হেমিংওয়ের ওভারওয়ার্ক। যাতে পরদিন কিছুটা উশুল করা যায়। যাতে পরদিন গালফ নদীতে প্যারা ছাড়া মাছ ধরা যায়। গিল্টছাড়া।

ঘরের অন্যখানেও ইচ্ছা করলে লিখতে পারতেন। ওইখানের ডেস্কটাই বরং আরও পারফেক্ট। টাইপরাইটার বসায়ে ভালোমতনই লেখা যায়। কিন্তু অভ্যাসের মানুষ হেমিংওয়ে ওইটা ব্যবহার করেন না। অবশ্য ওই ডেস্কেও বিভিন্ন বস্তু সাজায়ে রাখা আছেঃ চিঠির বান্ডিল, ব্রডওয়ে নাইটারি থিকা কেনা খেলনা সিংহ, ছোট ব্যাগভর্তি মাংশাসী দাঁত, শটগানের শেল, শু-হর্ন; কাঠের তৈরি সিংহ, রাইনো, দুইটা জেব্রা, একটা শুকর— নিয়া একটা সেট ডেস্কে সারি করে সাজানো এবং অফকোর্স বই তো আছেই। ঘরভর্তি বইগুলা— ডেস্কের উপর পাইল করা, টেবিলের পাশে, শেলফে জ্যাম হইয়া আছে— নভেলস, হিস্টোরি, পোয়েট্রির কালেকশান, নাটক, প্রবন্ধ— এগুলা তো মনে থাকার মতই। টাইটেলগুলার দিকে চোখ গেলেই এইসবেরর ভ্যারাইটি বুঝা যায়। ওয়ার্কডেস্কের উপরের একটা শেলফে ভার্জিনিয়া উলফের দ্য কমন রিডার, বেন এ্যামিস উইলিয়ামসের হাউস ডিভাইডেড, দ্য পার্টিসান রিডার, চার্লস এ বিয়ার্ডের দ্য রিপাবলিক, টার্লসের নেপোলিয়ান’স ইনভেশন অফ রাশিয়া, পেগি উডের হাউ ইয়াং ইউ লুক, এ্যাল্ডেন ব্রুকসের শেকসপিয়ার এন্ড দ্য ডায়ারস হ্যান্ড, বাল্ডুইনের আফ্রিকান হান্টিং, টিএস এলিয়টের কালেক্টেড পোয়েমস আর লিটল বিগ হর্নের যুদ্ধে জেনারেল কাস্টারের হারের কাহিনী নিয়া দুইটা বই।

প্রথম দেখায় ঘরটারে একটা ক্যাওসই মনে হইব। মনে হইব এমন একজন লোক এইখানে বসবাস করে যেন সে নিজে গোছানো মানুষ কিন্তু অদরকারি কোনকিছু ফালায়া দিতে তার ব্যাপক সমস্যা আছে। বিশেষত ওই অদরকারি বস্তুর সাথে সেন্টিমেন্টাল ভ্যালুর যদি যোগ থাকে। বুককেসের উপরে মেমেন্টো বা স্মারকগুলার একটা অদ্ভুতরকমের সিরিয়াল— কাঠের বিড দিয়া তৈরি জিরাফ, ঢালাই করা লোহার কচ্ছপ, ইঞ্জিন, দুইটা জিপ আর ভেনেসিয়ান গন্ডোলার ছোট মডেল, পিছে চাবিওয়ালা খেলনা ভালুক, মন্দিরা হাতে ধরা বাঁদর, গিটারের মিনিয়েচার, ইউএস নেভি বাইপ্লেনের একটা টিনের তৈরি মডেল (একটা চাকা অবশ্য মিসিং) করুণভাবে খড়ে ঠেস দিয়া খাড়া করানো আছে— যেই ছোটখাট জিনিসগুলা সাধারণত কোন বাচ্চা ছেলের ক্লোজেটে জুতার বাক্সের মধ্যে চাপা পড়ে থাকে। যদিও এইটা বুঝা যায় যে এইগুলার প্রতিটারই আলাদা আলাদা ভ্যালু আছে। যেমনটা হেমিংওয়ের শোবার ঘরে রাখা মহিষের ওই তিনটা শিং এরও আছে। তাদের সাইজের জন্যে না, বরং তাদের ক্যামনে পাওয়া গেছে সেইটার উপর ভিত্তি করে ভ্যালু এ্যাড করা। শিকার করতে গিয়া একদিন হেমিংওয়ে খুব অসুবিধায় পড়ছিলেন। ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঠিক কুলাইয়া উঠতে পারতেছিলেন না। সাডেনলি, ওই অসুবিধা কাইটা গেছিলো। তখন তিনটা মহিষ ওইরকম ডিফিকাল্ট টাইমে শিকার করতে পারতেছিলেন। “ওইগুলার দিকে যখন তাকাই, মন ভালো হইয়া যায়”, তিনি যেমনে ডেসক্রাইব করেন ওই সিচুয়েশনরে ইয়াদ কইরা।

হেমিংওয়ে এই টাইপ কুসংষ্কার স্বীকার করলেও, এই নিয়া বেশি কথা বলতে চান না। কারণ, অতিরিক্ত কথা তাদের ভ্যালুকে কমাইয়া দিতে পারে। একই জিনিস তার লেখালেখির ক্ষেত্রেও। এই ইন্টারভিউ নেওনের সময় অনেকবার তিনি জোর দিছেন বইলা যে অযথা কথা কওনের ফলে লেখালেখির ক্র্যাফটে ভাঙন ধরে— “লেখালেখির একটা দিক সবসময় সলিড। যত কথাই বলা হোক না কেন এই দিকটা নিয়া, তাতে বিশেষ অসুবিধা হয় না; আরেকটা দিক সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে, এইটার ব্যাপারে কথা বলতে গেলে স্ট্রাকচারে ফাটল ধরে এবং আপনার কাছে যা আছে তাও হারায়ে যায়।”

এই কারণে, একজন অসাধারণ স্টোরি টেলার হইলেও, হিউমারের খনি নিয়া বইসা থাকলেও কিংবা পছন্দের বিবিধ বিষয়াদির উপরে অঢেল জ্ঞান রাইখাও যখন কথা ঘুইরা ফিইরা তার লেখার দিকে আসে, হেমিংওয়ে দিক হারায়ে ফেলেন। এমন না যে তিনি এই বিষয়ের উপর তেমন জানেন না বরং তিনি এইটা স্ট্রংলি ফিল করেন যে এই বিষয়ের আইডিয়াগুলা না বলাটাই ভালো। এই ব্যাপারে প্রশ্নটশ্ন করলে তা তারে ‘স্পুক’ (হেমিংওয়ের ফেভারিট এক্সপ্রেশন) বা আননার্ভ কইরা ফেলে। এই ইন্টারভিউয়ের বিভিন্ন উত্তর তিনি সিম্পলি দিয়া গেছেন কেবল “আমি রিডিংবোর্ডে কাজ করতে পছন্দ করি” এই কথা বইলা। মাঝেমাঝে উত্তরের মধ্যে যে বিরক্তির সুর শোনা যায় তাও এই স্ট্রং ফিলিং থেকে আসা। বারবার এইটা মনে করাইয়া দেওয়া, লেখালেখি খুব প্রাইভেট ব্যাপার, নিঃসঙ্গ এক কাজের মধ্যে থাকা, যেইটার কোন সাক্ষী থাকে না যতক্ষণ না পুরা লেখাটা শেষ হয়।

মানুষজনের কাছে হেমিংওয়ে যেমনভাবে পরিচিত— চিল, কেয়ারলেস, টইটই করা; আর্টের প্রতি এই ডেডিকেশন দেখলে তারে সেই পরিচয়ের সাথে মিলানো যায় না। পয়েন্টটা হইতেছে, যদিও হেমিংওয়ে লাইফরে খুব এনজয় করেন, তার কাজের প্রতি এক ধরণের সিরিয়াস ডেডিকেশন আছে— এক ধরণের সিরিয়াসনেস যেইখানে ভুল হবার আশংকা থাকে, নিজের ভিতর কনফিউশন কিংবা কোনকিছু অসম্পূর্ণ রইয়া যাবার ভয় থাকে।

হলুদ টাইল করা শোবার ঘর ছাড়া এই ডেডিকেশন আর কোথাও ভালোভাবে বুঝা যাবে না— যখন, খুব সকালবেলা, হেমিংওয়েকে নিবিড় মনোযোগ দিয়া রিডিংবোর্ডের সামনে দাঁড়ায়া থাকতে দেখা যায়, মাঝে মাঝে শুধু দেহের ভর পাল্টানোর লাইগা একটু একটু মুভ করতেছেন। অনেক সময় যখন লেখাটা ভালোভাবে আগাইতে থাকে, তখন দেখা যায় বাচ্চা ছেলের মতো ঘামতেছেন। আবার যখন লেখার মধ্যে কোন একটা জায়গায় আটকায়া যান কিংবা সুর হারায়া ফেলেন তখন খিটখিটে হয়া উঠতেছেন। সেই সময়ে খুব বেচারি বেচারি একটা ভাব তার চোখেমুখে ফুটে উঠে। নিজের তৈরি এই ডিসিপ্লিনের খাঁচার ভিতর তিনি ঢুইকা কাজ করতে থাকেন দুপুর পর্যন্ত। দুপুর হইলে তিনি বাঁধানো হাঁটার লাঠি নিয়া ঘর ছাইড়া বাইর হন। সুইমিং পুলের দিকে আগাইতে থাকেন যেখানে তিনি নিয়মিত সাঁতার কাটেন। রোজ আধা মাইল।

ইন্টারভিউয়ারঃ লেখালিখি করার টাইমটা আপনার কাছে আনন্দের?

হেমিংওয়েঃ খুবই।

ইন্টারভিউয়ারঃ এই প্রসেসটার ব্যাপারে কিছু বলবেন? কখন আপনি কাজ করেন? কোন স্ট্রিক্ট শিডিউল ধইরা না অন্য কোনভাবে?

হেমিংওয়েঃ যখন আমি একটা বই কিংবা একটা গল্পের উপরে কাজ করতে থাকি, তখন বেসিকালি খুব সকাল থিকাই ধরি। একেবারে প্রথম আলো যে টাইমে ধরা দেয়। কারণ, ওই সময়টাতে আপনারে ডিসটার্ব করার জন্যে কেউ থাকে না, আবার আবহাওয়াটাও ঠান্ডা ঠান্ডা। যখন আপনি কাজ শুরু করেন, লিখতে থাকেন, ধীরে ধীরে তাপ বাড়তে থাকে। যা লিখা হইলো, তা পড়লেন একবার এবং থামলেন, তখন এও জানেন, এর পরে কী হইতে পারে। আপনি সেখান থিকাই আবার স্টার্ট করতে লাগলেন। লিখতে লিখতে এমন একটা পয়েন্টে আসলেন, তখনও আপনার ভিতর একটা জোশ আছে, জানেন নেক্সটে কী হইতে পারে, সেই সময়েই আপনি থাইমা গেলেন। পরের সকাল পর্যন্ত আপনি এমনেই ওয়েট করতে থাকেন যখন আবার ওইখান থিকাই শুরু করবেন। ধরেন, সকাল ছয়টা থিকা শুরু করলেন— দুপুর কিংবা তার আগ পর্যন্ত লিখতে থাকলেন। যখন আপনি থামলেন, তখন আপনি পুরাপুরি এম্পটি আবার একই সাথে এম্পটি না অথচ পুরা একটা পরিপূর্ণতা আপনার ভিতর কাজ করতে থাকে। অনেকটা সেক্সের মতো— শেষ অথচ শেষ না। কোনকিছুই আপনারে হার্ট করতে পারে না, কোনকিছুই নতুন কইরা ঘটে না, কোনকিছুই কোনকিছুরে মিন করে না যতক্ষণ না নেক্সট দিন থেকে আপনি আবার শুরু করতেছেন। এই যে নেক্সট দিন পর্যন্ত অপেক্ষা— এই অপেক্ষার ভিতর থাকাটাই হইতেছে খুব কঠিন কাজ।

ইন্টারভিউয়ারঃ যখন আপনে টাইপরাইটার থিকা দূরে, তখন কি আপনি আপনার মাথা থেইকা অনগোয়িং প্রজেক্ট ঝাইড়া ফেলতে পারেন?

হেমিংওয়েঃ অফকোর্স। তবে এইটার জন্যে এফোর্ট লাগে এবং এফোর্টের ফলে এইটা অভ্যাসে আনা যায়। এফোর্ট দিলে এইটা না হইয়া পারে না।

ইন্টারভিউয়ারঃ নেক্সট দিনে যখন আপনি আবার ব্যাক করেন তখন কি ঘষামাজা করেন যেটুকু পার্ট হইলো? না একেবারে শেষে গিয়া এই ঘষামাজার কাজ ধরেন?

হেমিংওয়েঃ আমি প্রতিদিনই যেইখানে থামি সেইখানে কিছু জিনিস বাদ দেই, যোগ করি, আবার লিখি। যখন পুরাটা শেষ হয়, তখন তো আপনি এমনেই পুরাটা আরেকবার দেখেন। যখন অন্য কেউ জিনিসটা টাইপে নিয়া বসে, ঠিকঠাক করার আরেকটা চান্স পাওয়া যায়। পুরা লেখাটারে আপনি টাইপ করা অবস্থায় দেখতেছেন— নিট এন্ড ক্লিন। শেষ সুযোগ আপনি পান যখন লেখাটা প্রুফে যায়। এই সুযোগগুলা পাওয়া আসলেই খুবই ভালো একটা ব্যাপার।

ইন্টারভিউয়ারঃ কতটুকু এডিটিং আপনি করেন?

হেমিংওয়েঃ এইটা ডিপেন্ড করে। আমি ফেয়ারওয়েল টু আর্মস এর শেষ পার্টটা নতুন করে  লিখছিলাম উনচল্লিশবার। এরপরে অইটা আমার মনের মতো হইছিলো।

ইন্টারভিউয়ারঃ ওইখানে কি কোন টেকনিকাল প্রবলেম ছিলো? কোন জিনিসটা আপনার অস্বস্তি তৈয়ার করছিলো?

হেমিংওয়েঃ শব্দগুলা ঠিকঠাক লাগতেছিলো না।

ইন্টারভিউয়ারঃ একই পার্ট বারবার পড়ার ফলে কি লেখার জোশ বাড়ে?

হেমিংওয়েঃ যেইখান থেকে আগাবেন, সেই অংশটুকু আরেকবার পইড়া নিলে সুবিধা। কোনদিকে যাইতেছেন— জানাটা ভালো। আর জোশ এইখানে না, অন্যকোথাও থাকে।

ইন্টারভিউয়ারঃ এমন সময়ও কি আসে না যখন ইন্সপিরেশন একেবারেই থাকে না?

হেমিংওয়েঃ আসাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু যেই সময়ে আপনি থামলেন এবং জানেন এর পরে কী হইতে চলেছে, তখন ইচ্ছা করলে না থাইমা আপনি আগায়া যাইতেও পারেন।  যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি শুরু করতে পারতেছেন— এইটাই আসল। এই পর্যন্ত ঠিক আছে। জোশ আসবে।

ইন্টারভিউয়ারঃ থর্নটন ওয়াইল্ডার একবার লেখক একদিনে কতটুকু আগাইলো তা মনে রাখার উপায়ের কথা বলছিলেন। আপনি নাকি তাকে বলছিলেন, আপনার একদিনে বিশটা পেন্সিল শার্প করার প্রয়োজন পড়ছিলো।

হেমিংওয়েঃ আমার কাছে একসাথে কোনদিন বিশটা পেন্সিল ছিলো বলে আমার মনে হয় না। তবে সাতটা দুই নাম্বার পেন্সিল শেষ করাকে আমি ভালো কাজের একটা দিন হিসাবে ধইরা নিব।

ইন্টারভিউয়ারঃ কাজ করতে সুবিধা এইরকম কোন কোন জায়গা আপনার পছন্দের লিস্টে আছে? এম্বোস মুন্দোস হোটেল তো শিওরলি একটা হবে, ওইখানে লিখা আপনার বইয়ের সংখ্যা দেখলেই তো তা বোঝা যায়। নাকি আশপাশের পরিবেশের কাজের উপর খুব কম প্রভাব আছে?

হেমিংওয়েঃ হাভানার এম্বোস মুন্দোস কাজ করার জন্যে সেরা একটা জায়গা। এই ফিঙ্কা (অনেকটা খামারবাড়ির মত) একটা অসাধারণ জায়গা ছিলো, হয়তো এখন আর নাই। কিন্তু আমি অন্য সব জায়গায়ও কাজ করছি। মানে বলতে চাইতেছি, আমি বিভিন্ন পরিস্থিতির মাঝেও কাজ টাজ করতে সক্ষম। টেলিফোন আর ভিজিটর— এই দুইটা জিনিস আমার কাজে খুবই ব্যাঘাত ঘটায়। শেষ কইরা দেয় সব।

ইন্টারভিউয়ারঃ ভালো কইরা লেখার জন্যে কি ইমোশনাল স্ট্যাবিলিটি থাকাটা জরুরি? আপনি এক সময় আমাকে বলছিলেন, আপনি যখন প্রেমে থাকবেন তখনই কেবল ভালো করে লিখতে পারবেন। এই বিষয়ে আরও একটু ব্যাখা করতে পারবেন?

হেমিংওয়েঃ কী অদ্ভুত প্রশ্ন। তবে ট্রাই করার জন্যে ফুল মার্কস। মানুষজন আপনাকে যদি একা থাকার সুযোগ করে দেয়, ব্যাঘাত না ঘটায়— এই রকম মোমেন্টে আপনি যেকোন সময় লিখতে পারেন। কিংবা আপনি লিখে যাইতে পারেন যদি খুব কঠিন একটা চেহারা বা মন আপনার থাকে। তবে অবশ্যই প্রেমে পড়লে সেরা লেখালিখিটা বাইর হয়া আসে। এখন যদি এই দুইটা জিনিসকে আপনি একই ভাবেন, তাহলে বেটার আমি আর এই ব্যাপারে ব্যাখা না করি।

ইন্টারভিউয়ারঃ ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটির ব্যাপারে কী বলেন? এইটা কি ভালো লেখালিখির জন্যে ক্ষতিকর হইতে পারে?

হেমিংওয়েঃ যদি এইটা প্রথমেই থাকে আর আপনি যদি জীবনকে কাজের মতই ভালোবাসেন, তাইলে টাকাপয়সার টেম্পটেশন থেইকা মুক্তি পাওয়াটা খুব কঠিন হইয়া পড়বে। আর যদি লেখালিখি আপনার একমাত্র পাপ হইয়া যায় আবার আনন্দের সেরা খনিও হইয়া পড়ে তাইলে মৃত্যু ছাড়া এ থিকা মুক্তি পাওনের উপায় নাই। ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটি খুব হেল্প করে কারণ এইটা আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। দুশ্চিন্তা লেখালেখির সামর্থ্য নষ্ট কইরা ফেলে। অসুখ-বিসুখও এই হিসাবে ক্ষতিকর কারণ এইগুলা দুশ্চিন্তা উৎপাদন করে যা আপনার সাবকনশাসরে ভালো কইরা আক্রমণ করে আর ভিতরের শক্তিও ধসাইয়া দেয়।

ইন্টারভিউয়ারঃ আপনার কি এইরকম কোন মুহূর্ত মনে পড়ে যেই টাইমে আপনি সিদ্ধান্ত নিছিলেন যে আপনি লেখক হবেন?

হেমিংওয়েঃ না, আমি সবসময়ই লেখক হইতে চাইছি।

ইন্টারভিউয়ারঃ ফিলিপ ইয়াং তার বইয়ে আপনার ব্যাপারে এইরকম একটা মন্তব্য করছিলেন যে ১৯১৮ সালে মর্টারের যে আঘাত আপনি পাইছিলেন তা লেখক হেমিংওয়ের উপর বড় প্রভাব ফেলছিলো। আমার এইটাও মনে আছে, মাদ্রিদে আপনি ছোট কইরা তার এই থিসিস নিয়া কমেন্ট করছিলেন যে ইয়াং এর সিদ্ধান্তে আপনার তেমন আস্থা নাই। এও বলছিলেন, শিল্পী তার বৈশিষ্ট্য অর্জন কইরা নিতে পারে না বরং এইটা অনেকাংশে ইনহেরিটেড, মেন্ডেলিয়ান সেন্সে।

হেমিংওয়েঃ মাদ্রিদের এইটা যে সময়কার ঘটনা তখন আমার মনের অবস্থা খুব যে ভালো ছিলো তা বলা যায় না। আমি যেইটা মনে করতে পারি, আমি ব্রিফলি মিস্টার ইয়াং এর বই আর তার সাহিত্যের উপর ট্রমা থিওরি নিয়া কিছু একটা বলছিলাম। হয়তো ওই বছরে, দুইটা আঘাত আর একটা স্কাল ফ্র্যাকচার আমার স্টেটমেন্টগুলা খুব খেলো কইরা দিছিলো। তবে এইটা মনে পড়তেছে, আমি আপনাকে বলছিলাম আমি বিশ্বাস করি লেখকের যে ইমাজিনেশন তা এমনে এমনে তৈরি হয় না। তার পূর্বসূরীরা যেই ধরণের স্ট্রাগল করছেন, যেই সময়ের মুখোমুখি হইছেন কিংবা যেই সার্ভাইভালের মধ্যে দিয়া গেছেন তার ইতিহাস তো চইলা যায় না। বরং এক জেনারেশন থেইকা আরেক জেনারেশনে পাচার হইতে থাকে। এই পাচার হওয়া বৈশিষ্ট্য কোন এক জেনারেশনে লেখক পাইয়া গেলে সেইটা সম্ভবত তার ইমাজিনেশনের শক্তি হিসাবে ফুইটা উঠে। এই অর্থে, এইটা সম্ভবত অনেকটাই ইনহেরিটেড। এইটা ধাক্কা-পরবর্তী সময়ে, মানে ওই বছরটাতে (১৯১৮) আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যেন পারফেক্ট একখান কথা— সময়ের সাথে মানানসই আরকি। মনে হয়, মোর অর লেস এইটাই আমি বলতে চাইছিলাম। সুতরাং, নেক্সট মুক্তির ট্রমা না আসা পর্যন্ত আপাতত এইটা এইখানেই ছাইড়া দিই। সমস্যা নাই তো? কিন্তু আপনাকে থ্যাংকস যে আমি যদি কোন রিলেটিভের নাম সেই সময় উল্লেখ কইরা থাকি তা এখন আর উল্লেখ না করনের লাইগা৷ কথা বলার ফান পার্টটা হইতেছে, বিচড়ায়া দেখন যায়। কিন্তু খুব বিচড়ানি, এবং যা যা এমনেই মুখ দিয়া বাইর হয়া যায়, সবকথা লেখনের আমি দরকার দেখি না। একবার লিখা ফালাইলে আপনার ওইটার পক্ষে দাঁড়াইতে হবে। হয়তো আপনি এমন একটা কথা কইলেন, যা আপনি নিজে বিশ্বাস করেন কি করেন না স্রেফ তা যাচাই করনের লাইগা বলছিলেন। পরে এইটা নিয়া ফাঁইসা যাইতে পারেন। আর যে প্রশ্নটা আপনি তুললেন, আঘাতের প্রভাব আসলে বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন রকম হয়৷ সাধারণভাবে আহত হওয়া, কোন হাড় ভাঙলো না, অনেক সময় কোন সমস্যা তৈয়ার করে না। অনেক সময় তারা আত্মবিশ্বাস জোগায়। আঘাত, যেগুলা হাড় এবং নার্ভের ক্ষতি করে, লেখকদের জন্যে ভালো কিছু না, কারও জন্যেই ভালো কিছু না।

ইন্টারভিউয়ারঃ লেখক হইতে চাওয়া মানুষটার জন্যে বেস্ট ইন্টেলেকচুয়াল ট্রেইনিং কী হইতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

হেমিংওয়েঃ যদি কেউ মনে করে যে ভালো লেখা তার জন্যে অসম্ভব কঠিন কোন ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইছে তবে তার উচিত সব কিছু ছাইড়া ছুইড়া ফাঁসির দড়িতে নিজেরে ঝুলায়া দেওয়া। ক্রিটিকাল মোমেন্টে কোন দয়া না দেখাইয়া তার দড়ি কাইটা দেওয়া উচিত। দেখা যাবে, সে একপ্রকার বাধ্য হইতেছে লেইখা যাবার এবং এই লেখা সে সারা জীবন চালায়া যাইতে পারে। অন্ততপক্ষে, তার কাছে তো ফাঁসিতে ঝুলবার একটা গল্প আছে যেইটা দিয়া সে শুরু করতে পারে।

ইন্টারভিউয়ারঃ যেসব মানুষ একাডেমিক ক্যারিয়ার বাইছা নিছে তাদের ব্যাপারে কী বলবেন? অনেক লেখক যারা একাডেমিক কিংবা টিচার হইয়া আছেন, আপনি কি মনে করেন যে এইজন্যে তাদের সাহিত্যিক ক্যারিয়ারে কিছুটা ছাড় দিতে হইছে?

হেমিংওয়েঃ এইটা নির্ভর করে, আপনি ছাড় বলতে কী বুঝান সেইটার উপরে। এইটা কি ওইরকম ছাড় যেইটা একজন নারীকে দিতে হয়? নাকি একজন রাষ্ট্রের নেতার ছাড় যেইটা তারে রাজনীতিতে দিতে হয়? নাকি আপনি দোকানি বা টেইলারের সাথে যে বোঝাপড়ায় যাইতে চান— আপনি একটু বেশি দাম দিবেন কিন্তু পরে দিতে চাইতেছেন— এইরকম কোন ছাড়ের ব্যাপার? একজন লেখক যিনি একই সাথে লিখতে এবং পড়াইতে পারেন, তিনি দুইটাই একসাথে করার সামর্থ্য রাখেন৷ অনেক ভালো লেখক এইটাকে সত্য প্রমাণ কইরা ছাড়ছেন। আমি জানি, আমি এইরকম করতে পারি নাই, এবং যারা দুইটাই একসাথে করতে পারে আমি তাদের প্রশংসা করি। তবে আমার মনে হয়, একাডেমিক জীবন বাইরের জীবনের সাথে একটা গ্যাপ তৈরি করে যেইটার জীবন থিকা জ্ঞান নিবার একটা লিমিট তৈয়ার করার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে একজন লেখকের জন্যে, জ্ঞান, অনেককিছু ডিমান্ড করে, যা এই লেখালেখিটারে আরও কঠিন কইরা তুলে। চিরকাল মূল্য থাকবে এইরকম কোনকিছু লেখার চেষ্টা করার অর্থ হইতেছে, একটা ফুল-টাইম জবে নিজেকে নিয়োগ দেওয়া; যদিও একটা দিনের খুব অল্প কয়টা ঘন্টাই আসলে এই লেখার কাজে ব্যয় করা হয়। একজন লেখকরে একটা কুয়ার সাথে তুলনা করা যাইতে পারে। অনেক ধরণের যেমন লেখক আছে, তেমনি অনেক ধরণের কুয়াও আছে। বিষয়টা হইতেছে, কুয়াতে পানি থাকা। একেবারে কুয়ার পানি পাম্প আউট কইরা শুকায়া, তারপর আবার পানি ভরার জন্যে অপেক্ষা করার থেকে বেটার হইতেছে রেগুলার বেসিসে কুয়া থিকা কিছু পরিমাণ পানি তোলা। দেখেন, আমি প্রশ্ন থেইকা দূরে সইরা যাইতেছি। যদিও প্রশ্নটা অত ইন্টারেস্টিং কিছু ছিলো না।

…………………………….

এই বইটাসহ ইন্টারভিউ সিরিজের অন্য বইগুলা কিনতে নিচের লিংকে ক্লিক করেন:
https://www.facebook.com/PrintPoetryInterviewSeries/posts/308119643968118

রকমারি.কম থিকা কিনতে নিচের লিংকে ক্লিক করেন:
https://www.rokomari.com/book/191548/the-art-of-fiction

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

তৌকির হোসেন

জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →