Main menu

মিডিয়ার আসলে কাজ হইতেছে সুন্দর রকমের ডিসটরশন তৈরি করা – জ বদ্রিয়া

This entry is part 10 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

[ এই ইন্টারভিউটা “ফরগেট ফুকো/ফরগেট বদ্রিয়া” নামের বইয়ে, ১৯৭৭ সালে পাবলিশড হইছিল। ]

লট্রিঞ্জার: আচ্ছা, কোন ফাঁপা নিয়ম পুরা করবার যে ধান্দা তা কি ধ্বংসাত্মক হইতে পারে?

বদ্রিয়া: একটা নিয়ম যখন আপনি দেন তখন কিন্তু সেইটা র‍্যান্ডম হইতে পারে, কিন্তু আইনের মতো নিয়মটারে আপনি সহজে ভাঙতে পারবেন না। আইন নিয়া আপনি যা খুশি তাই-ই করতে পারেন। আর নিয়মের ক্ষেত্রে যেইটা হয়— আপনি নিয়মটা হয় মানেন কিংবা মানেন না। আপনি যদি মানেন, তাহলে নিয়মটা আরও শক্ত হইলো। কিন্তু আপনি নিয়মটারে কমবেশি করতে পারবেন না। নিয়মটারে আংশিকভাবে মানা বা না মানা এই ক্ষেত্রে ইডিয়টের মতো কাজ হবে। যে কোন খেলার নিয়ম, এইটার মধ্যে যে একটা সেডাক্টিভ সিকুয়েন্স থাকে, একটা পুরা রিচুয়ালের মতো ফলো করা হয়। সিচুয়েশন একের পর এক আপনি পাল্টাইতে পারবেন, কিন্তু নিয়মের কোন পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু এইটা সিচুয়েশনের পর্দার আড়ালে থাকতেই পারে, কোন কিছু জানানোর বা বলার প্রয়োজন পড়ে না। যদি নিয়ম জানা যাইতো, সবকিছু আমাদের সামনে খোলাসা হইয়া যাইতো, এবং পুরাপুরি উল্টায়ে দেয়া সম্ভব হইতো। কার্যকারণ বা কোন র‍্যাশনাল সিকুয়েন্সের ভিতর দিয়া আপনার ক্রাইসিস তৈরি হয়। আর সেডাক্টিভ সিকুয়েন্সের ভিতরে এই ঘটনা যদি ঘটে তবে সেইটা বিপর্যয় আকারে তৈরি হয়।

লট্রিঞ্জার: অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো?

বদ্রিয়া: যে সকল ফর্ম যুক্তি-কারণের ছকে আটকানো যায় না, সেই সকল ফর্মের ফ্যাসিনেশনের একটা বড় ক্ষমতা থাকে। এই একই কারণে, যে কোন সিস্টেমে তারা ভয়াবহ হইয়া উঠতে পারে। কারণ, সেইগুলা আপনি আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যে কোন মুহূর্তে যদি কোন ক্যাটাগরি কিংবা কোন ফর্ম নিজেরে রিপ্রেজেন্ট করা বন্ধ কইরা দেয়, সে রিপ্রেজেন্টেশনের কোন স্টেজেই আর প্রবেশ করতেছে না, কোন বড় লক্ষ্যকে সামনে রেখেও সে আর ফাংশন করতেছে না। এইটা নিজের কাছেই একটা দ্রুত কার্ভ টেনে ডাবল ব্যাক করে, যার ফলে তার পটেনশিয়ালও সর্বোচ্চ হইয়া যায়। আর বাদবাকি সবকিছুর আর কোন ওজন থাকে না। কবিতার ভাষায়, আমরা এইরকম সিকুয়েন্সগুলার সাথে পরিচিত যখন কবিতার বাক্য কোন নির্দিষ্টতা না রাইখা, একের পর এক এসে ভিড় করতে থাকে, এইসমস্ত বাক্যগুলা রচনার সময়ে যে কোন গভীর চিন্তা খেলা করে তা-ও না। ভাষারে সেডাকশনের অর্ডার হিসেবে বলা যায়— একটা মিউট্যান্ট অর্ডার (Mutant Order)।

আপনি যদি কন্টিনিউয়াস, প্রগ্রেসিভ আর লিনিয়ার অর্ডার মেইনটেইন করেন তাহলেও কিন্তু এইটা একটা রূপান্তরিত “সুপারস্ট্রাকচার”-এর উপর বেইজ কইরা দাঁড়ায়। কোন কবিতার মধ্যে যে শব্দ সেগুলোও অনেকটা এইরকম অর্ডারে ফাংশন করে। কোনরকম মিনিং না রাইখা একের পর এক শব্দগুলা আসে। একরকম আচ্ছন্নতার ভিতর দিয়া একটা শব্দ আরেকটা শব্দকে ডাকতে থাকে। এই একটা শব্দ আরেকটা শব্দকে যেভাবে টেনে আনে, এই টেনে আনার প্রক্রিয়াটা কিন্তু চিন্তা ছাড়া, মাথা না খাটায়েই আসে। খেয়াল রাখতে হবে, আমি ইর‍্যাশনালের কথা বলতেছি না। বরং এর এক ধরণের প্রয়োজনও আছে। এই ঘটনা কিন্তু যে কোনো ফ্যাক্টস, একশন কিংবা এক্সিস্টেনশিয়াল সিচুয়েশনে ঘটতে পারে।

লট্রিঞ্জার: এর ভিতর পবিত্র কোনকিছু নাই, কিন্তু রিচুয়াল আছে। ট্র্যাজেডি নাই, অথচ ট্র্যাজিক।

বদ্রিয়া: মহাবিশ্ব কোন পবিত্র কিছু না, যদিও এই সেডাকশনে একটা ট্র্যাজিক দিক আছে বলতে হবে। আপনি যদি গেইমের রুলসগুলা মেনে নেন, তাহলে ‌কিন্তু আপনি কখনোই জানবেন না এপিয়ারেন্সের মধ্যকার কানেকশানগুলা কোন জায়গায় গিয়া ঠেকবে? ওই যে ওই গল্পটা আছে না, এক মহিলাকে একটা লোক খুব ভালোবাসা, যত্ন দিয়া একটা প্রেমের চিঠি দিলো। মহিলাটা লোকটারে জিগেস করে, তার কোন অংশটা তারে সবচেয়ে বেশি সেডিউস করে? লোকটা মহিলাটারে কী জবাব দিবে? অবশ্যই তার চোখ। এবং পরের দিন সকালে লোকটা বাদামি রঙের খামে আরেকটা চিঠি পায়। খাম খুলে দেখে ভিতরে মহিলার চোখ। লোকটার উপর যেন একটা বজ্রপাত হইলো, ওইখানেই সে চুরমার হইয়া গেল। মহিলাটা নিজেরে দ্য আদারের (The Other) জায়গায় স্থাপন করে। মহিলাটা ছিলো লোকটার দ্য আদার, ডেস্টিনেশন। এখন মেটাফরটারে মহিলা লিটারেলি নিয়ে ফেলার কারণে সে সিম্বলিক অর্ডারটারেই নাই কইরা দিলো। সাবজেক্ট যে— সে নিজেরে নিজের ডিজায়ারের মধ্যে আবিষ্কার করলো। মহিলাটা নিজের একটা চোখ হারাইলো। আর লোকটা নিজের মুখ।

লট্রিঞ্জার: আপনি অন সেডাকশনে উইমেন অবজেক্টের ব্যাপারে আরেকটা মেটাফর লিটারেলি নিছিলেন। যদি আমি সেইটার লিটারেল এপিয়ারেন্স ধরি, অনেকটা এরকম মনে হইছিলো, ফেমিনিজম নিজের বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়া আছে এবং এই ফেমিনিজমের ভিতরে অনেক রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাবার মতো পটেনশিয়াল আছে।

বদ্রিয়া: আমি নারীকে ডিজায়ারের অভাব মনে করি। এখন এইটা রিয়েল নারীর ধারণার সাথে যায় কি যায় না তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নাই। এইটাই আমার ‘ফেমিনিনিটির’ কনসেপ্ট।

লট্রিঞ্জার: আপনি মেটামরফোসিসের কথা বলতেছিলেন, কিন্তু আপনি ফেমিনিন ফিগারের জায়গায় মোটামুটি ফিক্সড। জিনিসটা সারপ্রাইজিং না? আপনি যেন এই ফেমিনিন ফিগারের ক্ষেত্রে যে রোল সমস্তের পোলারিটি আছে, সেই ভাবনাতে এখনও নস্টালজিক।

বদ্রিয়া: কিন্তু, আমি এই রোলের পোলারিটিতে বিশ্বাস করি না। আমার কাছে, ফেমিনিনিটি নন-পোলার (Non-polar)। মাস্কুলানিটিতে সেক্সের যেরকম আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ফোকাল থাকে, ফেমিনিনিটিতে তা থাকে না। একজন নারী সেক্সের ফোকালে ফিক্সড কোন পজিশনে থাকে না। বরং সে নিজেরে বারবার ট্রান্সফর্ম করতে পারে।

লট্রিঞ্জার: তার মানে, নারী-হওয়ার মতো ঘটনা নারীর ভিতর যেমন ঘটতে পারে, পুরুষের ভিতরেও ঘটতে পারে।

বদ্রিয়া: অফকোর্স। ফেমিনিনিটি নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে প্রকাশ পায়, সে নারী হোক বা পুরুষ হোক। কিন্তু নারী হইতেছে সেই অবজেক্ট যে ডিজায়ারের সকল কারিশমা, ঘটনা ঘটায়। ভালোবাসার যে ড্রামা তা সম্পূর্ণটা পুরুষের, কিন্তু যে চার্মটা তা মূলত পুরাপুরি নারীর।

লট্রিঞ্জার: ভালোবাসার কথাতে যখন আমরা আসছি- আপনি ইন্টারসাবজেক্টিভিটিকে (Inter subjectivity) এক ধরণের নিয়ত পরিবর্তনের ভিতর দিয়া চিন্তা করেন। আপনি আদারের মধ্যে যাওয়ার একটা প্যাসেজ খুঁজেন, কিন্তু এই আদারের তো কোন অস্তিত্বই নাই।

বদ্রিয়া: এইটা আসলে আদারনেসেরই প্রবলেম। এখনকার পৃথিবীতে একটা সেক্সের বিপরীতে গিয়ে যে আরেকজন আদার হইয়া উঠবে তার কোন দরকারই নাই। কিন্তু এই সিচুয়েশনটা কোন নার্সিসিজম না, নার্সিসিজমে একজন নিজের একাকিত্বেই নিজের একটা কনক্রিট ফর্ম তৈরি করতে থাকে, কিংবা এইটা কোন আদারনেসও না। বর্তমান সময়ে একজন নিজের গ্যালাক্সিতে ঘুরপাক খাইতে খাইতে নিজের ভার্চুয়ালিটি অর্জন করে।

লট্রিঞ্জার: আমি যদি বুইঝা থাকি, নারী-হওয়ার যে কথাটা আপনি বললেন, তা মূলত নারী বা পুরুষ ক্যাটাগরির বাইরে আলাদা কোন অবজেক্ট। তাদের প্রত্যেকেরই চ্যালেঞ্জ থাকে যে ওই ফেমিনিনিটি অর্জন করতে হবে নিজের (সে বা শে) সাথে সম্পর্কযুক্ত কইরা।

বদ্রিয়া: আমার মনে হয় এইখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হইতেছে ওই কোনকিছু-হওয়ার প্রসেসটা। আমার কাছে সাবজেক্টের থেকে অবজেক্ট, এবং এর ডেসটিনিটারে খুব ইন্টারেস্টিং লাগতেছে। অবজেক্টটাই আদারের জন্য ডেসটিনি হইয়া উঠে। আপনি যদি ছোটবেলার কথা চিন্তা করেন তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হইয়া উঠবে। একটা শিশু সবসময় ডাবল স্ট্র্যাটেজি ফলো করে। তার কাছে একটা অপশন থাকে, সে নিজেরে অবজেক্ট হিসাবে উপস্থাপন করবে, বন্দী, বাপ-মা সবসময় তারে প্রটেক্ট করতেছে কিংবা আপনি তাকে গিয়ারের মতো একদিক থেকে আরেকদিকে নিয়া যাইতে পারবেন। আবার একইসাথে সে কিন্তু আপনার সাথে পাল্লা দিতেছে। মানে এডাল্টের সাথে। একটা পর্যায়ে গিয়ে বাচ্চা কিন্তু বুঝতে পারে, সে আসলে বাচ্চা না, কিন্তু বাচ্চার এই ধারণা এডাল্ট বুঝতে পারে না। এইটাই হইতেছে সিক্রেটটা।

লট্রিঞ্জার: সম্ভবত এই ঘটনাই বর্তমান সময়ের অন্যতম জোরালো একটা ক্যাম্পেইনরে ফুয়েল করছে- শিশু নির্যাতন রোধ করার ক্যাম্পেইন। এডাল্ট মানুষজন ছোটবেলা যখন হুমকির মুখে পড়তেছে তখন প্যানিক শুরু কইরা দিসে। কারণ, ছোটবেলা তো আমাদের কালচারের সর্বশেষ খুটা। যদি এই খুটা ভাইঙা পড়ে, আমাদের সমাজের মোরালিটি কিসের উপর দাঁড়াবে? তাই এই সময়ে আমাদের সোসাইটি যেভাবে ‘শিশু নির্যাতনকারী’দের পুরা একঘরে কইরা দিতেছে, তা কিন্তু খেয়াল করবার মতো।

বদ্রিয়া: সমস্যাটা হইতেছে, ছোটবেলার ব্যাপারে সবকিছুই যেন ব্যাখা করা হইয়া গেছে। কোন সাইকোএনালিটিক জোক মারতেছি না— শৈশবকাল যেন এই জমানায় এসে নতুনভাবে ‘জন্ম’ নিছে। এবং এই নতুন ‘জন্মানো’ শৈশবকালরে মানুষজন খুব সিরিয়াসলি নিয়া নিছে। শৈশবকালের যে ক্যাটাগরি তা কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে ডিফাইন করা হয়, এবং এই জায়গা থেকেই সাইকোলজি শুরু হয়: চাইল্ড সাইকোলজি, থেরাপি, লার্নিং এডুকেশন, সবকিছু। এখন আপনি যদি এই সবকিছুর বিপরীতে গিয়া একটা ছোট্ট ইউটোপিয়ান ফ্যাক্ট— শৈশবকাল এক্সিস্টই করে না— আঁকড়ে ধরে বলেন, শৈশবকাল এক্সিস্ট করে না, আর একটা বাচ্চাই কেবল শৈশবকাল সম্পর্কে জানতে পারে, সবকিছু তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। আমি এই জিনিসটাই নারীদের ব্যাপারে বইলা আসতেছি। শুধু নারী না- নারী, শিশু, পশু— এদের ব্যাপারে আমরা এক করে ফেলতেছি কিনা— এই ভয় ‌পাইলে চলবে না। এই ধরেন নারী, শিশু ও পশু— এদের যে শুধু একটা সাবজেক্ট-কনশাসনেস আছে তাই না, এদের এক ধরণের আইরনিক অবজেক্টিভ প্রেজেন্সেরও জায়গা আছে, যার ফলে ভাবা হয় এদের কে যে ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়, অবজেক্টিফিকেশনের এই ক্যাটাগরিগুলা এক্সিস্ট করে না। কিন্তু আসলে এই ক্যাটাগরিগুলাই এদেরকে যেকোন মুহূর্তে একটা ডাবল স্ট্র্যাটেজি ফলো করবার সুযোগটা দেয়। এইটা সাইকোলজি না। এইটা স্ট্র্যাটেজি।

লট্রিঞ্জার: তার মানে, আপনি যখন ধ্বংস হওয়ার স্ট্র্যাটেজির কথা বলতেছেন, আমার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগে স্ট্র্যাটেজির বিষয়টা। এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের স্ট্র্যাটেজি কী হওয়া উচিত?

বদ্রিয়া: না, দুইটা স্ট্র্যাটেজি একভাবে মিলাইলে চলবে না। দুইটা কিন্তু দুই জিনিস। আপনি এই শব্দের খেলাটা খেলে সাবজেক্ট থেকে অবজেক্টে নিয়া গিয়া পুরা প্যাসেজটারেই ড্রামাটাইজ করে দিছেন। আপনি এইটারে অবজেক্টের রিভেঞ্জ হিসাবেই চিহ্নিত করেন কি বস্তুর ইভিল জিনিয়াস বলেন, এই পুরা ধ্বংস হওয়াটা রিপ্রেজেন্ট করবার মতো কিছু না। কিন্তু এইটার একই সাথে সবকিছু মিলায়ে ঝুলায়ে একটা শক্তি আছে। প্রকৃতপক্ষে, আমি এই এইটারে ইভিলের প্রিন্সিপাল বলব, যেইটার কোন সমাধানে আসা সম্ভব না। আর সমাধানে আসা, নেগোশিয়েশনে আসবার বিষয়টা তো ভালোর প্রিন্সিপাল। ধ্বংস হওয়াটা এগজিস্ট করে, এইটারে আপনি ঠেকাইতে পারবেন না, ধ্বংস হওয়ার ফ্যাক্টরে আপনি ধ্বংস করতে পারবেন না।

লট্রিঞ্জার: তাও কি আপনি যেই সিচুয়েশনে সাবজেক্টের কোন জায়গা নাই, সেই সিচুয়েশনের জন্য কোন একটা স্ট্র্যাটেজি বা উপায়ের কথা বলতে পারেন?

বদ্রিয়া: একটা ‘অবজেক্টিভ’ স্ট্র্যাটেজির কথা বলা যায়, যেইটা আসলে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি চোখের সামনে যেইটা দেখতেছি, তা হইলো সব ফর্ম একটা আরেকটারে ট্রান্সপোজ করতেছে, অর্ডার পাল্টায়া দিতেছে, আর কোন ধরণের পলিটিক্সের সম্ভাবনা নাকচ কইরা দিতেছে। কিন্তু এইখানে একটা জড়তা কাজ করে, আর জড়তারও তো একটা শেষ সীমা আছে। এইটার বাইরে গেলে শুধু বরফের গোলা তৈরি হইতে পারে, আর একটা এম্পটি টেরর তৈরি হয়।

লট্রিঞ্জার: প্যানিক।

বদ্রিয়া: একদম। এইটা একধরণের একস্ট্যাসি (Ecstasy), একটা বিধ্বংসী ফর্ম আকারে হাজির হয়। এবং একদম নিউট্রালি চিন্তা করলে, এর একটা গাণিতিক বিস্তৃতি ঘটে। আর রেসপন্সটা কিন্তু অবজেক্টের দুনিয়া, সাবজেক্টের দুনিয়ার প্রতি ডিরেক্টেড। সম্পূর্ণ বাহির থেকে আসা একটা সারপ্রাইজের মতো পারমাণবিক বিস্ফোরণ কিন্তু যার সিম্বলিক শকওয়েভ পুরা মানুষের দুনিয়ারে নাড়ায়ে দেয়।

লট্রিঞ্জার: আপনি তাহলে একস্ট্যাসির আরও বিভিন্ন দিক দেখতেছেন?

বদ্রিয়া: আমি দুইটা দেখতেছি। একজন ফ্যাশন মডেলের কথা চিন্তা করেন। তার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয়টা হইতেছে, ফ্যাশন মডেল সত্যের থেকে আরেকটু বেশি ‘সত্য’। এই ঘটনা একধরণের পিনিকের ‘মায়া’, সত্যের এক ধরণের বিস্তৃতি তৈরি করে। একজন মডেল খুব প্যাথেটিক টাইপের ‘বিষয়’। আবার ফ্যাশনের কথা ধরলে ফ্যাশনও এই একস্ট্যাসির ঘটনার মধ্যে পড়ে। কিন্তু ফ্যাশন কোন ধরণের নান্দনিক বিচারের উপর নির্ভর করে না। আগলির বিপরীতে গিয়ে খুব সুন্দর এইরকম কোনকিছু কিন্তু ফ্যাশন ইন্ডিকেট করে না। ফ্যাশন হইতেছে সুন্দরের থেকেও ‘সুন্দর’। আমেরিকার মেদ-ভুঁড়িতে ভোগা একজন মোটা লোক কিন্তু শুকনা কারো বিপরীতে গিয়া নিজেরে দেখায় করে না। সে হইতেছে মোটার থেকে ‘মোটা’। ফ্যাসিনেটিং বিষয়। ফ্যাশন হইতেছে সৌন্দর্যের একেবারে চরম ফরমালাইজেশন। বিভিন্ন ফর্মের ভিতরকার যে শর্তহীন মিথস্ক্রিয়া তার ভিতর দিয়েই ফ্যাশন কাজ করে। একস্ট্যাটিক ফর্মগুলা অনেকসময় স্ট্যাটিক হইতে পারে, আবার অনেক সময় ডাইনামিক হইতে পারে, কুল হইতে পারে, হট হইতে পারে। ফ্যাশনের একরকম আভিজাত্য আছে। আর এইটার পিছনে যে নিয়মগুলা খেলা করে তারে কিন্তু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এই নিয়ম নিজেই নিজের ভিতরে ফ্যাশনের যে ভিতরকার হাসি-ঠাট্টা তা টাইনা নিয়া চলে। আপনি এখন আর যত তত্ত্ব আবিষ্কার করেন না কেন, সবকিছুই এই কথার সামনে আসলে আর বেল পাবে না। আর এই ফ্যাক্টের বাইরে গিয়াই সাধারণত আবিষ্কারগুলা করা হয়।

লট্রিঞ্জার: আচ্ছা, ফ্যাশন কি কখনো পলিটিক্সের মডেল হিসাবে কাজ করতে পারে?

বদ্রিয়া: ফ্যাশনের সাথে পলিটিক্সের সবসময়ই একরকম সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল। এবং পলিটিক্স ফ্যাশনরে কখনো ভালোচোখে দেখে নাই। আপনি রাজনৈতিকভাবে ফ্যাশনের বিরোধিতা করতে পারবেন না, ফ্যাশনকে পলিটিক্সের বিরোধি কোন স্পেকট্রামে ফেলতে পারবেন না। ফ্যাশন হইতেছে মেটামরফোসিসের এক আশ্চর্য উদাহরণ। এইটা একই সাথে একটা রিচুয়াল আবার উদযাপন। একে প্রোগ্রাম করে চালানো সম্ভব না।

লট্রিঞ্জার: পলিটিক্সের হ্যাপি, একস্ট্যাটিক কোন ধরণ ধারণা করা সম্ভব?

বদ্রিয়া: আসলে কোনটা হ্যাপি ফর্ম আর কোনটা আনহ্যাপি তা নির্ধারণ করা খুব কঠিন একটা কাজ। যেমন ধরেন, সেডাকশন— ডিজায়ারের যে সৌন্দর্য তার অনেক বাইরে গিয়ে ফ্যাশনেরই একটা হ্যাপি ফর্ম— “আমি বিউটিফুল না। আমি ডেভিল।” সেডাকশন এমন এমন সব সিমুলেটর সাইন হিসেবে ব্যবহার করে, যেগুলা অলরেডি ফলস। কিন্তু সেডাকশনের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে সেগুলা আরও বেশি ‘ফলস’ হইয়া উঠে। এগুলা একটা আরেকটারে সরায়া ফেলে, একেকটা ট্র্যাপ হিসাবে তৈরি করে এবং সাইনগুলার ভিতরকার সত্যতা ছিনায়ে নিয়া একটা অ্যামেজিং ইফেক্ট তৈরি করে। ডিজায়ারের ভিতরকার সত্যতাও এই প্রসেসে হারায়ে যায়। তাই সেডাকশনে ডিজায়ার থাকে না, সাইনগুলার সত্যতাও থাকে না।

লট্রিঞ্জার: আচ্ছা সব পলিটিকাল রিচুয়ালের কি প্রোগ্রামড হওয়ার দরকার আছে?

বদ্রিয়া: রাজনীতি একটা স্পষ্ট অপোজিশনের ভিতর দিয়ে ফাংশন করে: হয় বাম নয়তো ডান। অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনার সত্য আছে কিংবা মিথ্যা আছে, বিউটিফুল কিংবা বিশ্রি আছে ইত্যাদি রকমের স্পষ্ট বাইনারি আছে। এখন একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টে যদি কোন সিচুয়েশনের এনার্জি এই ধরণের বাইনারি অপোজিশানের উপর নির্ভর করা বন্ধ কইরা দেয়, তাহলে কী হবে? সিচুয়েশনের পথ ঠিক করতে আর দুইটা টার্মের ডায়ালেক্টিকের প্রয়োজন পড়ে না। এবং দুইটা ফর্ম কোন ধরণের মিনিং, সেন্স ছাড়া নিজের নিজের পথে অরবিটালে ইলেক্ট্রনের মতো ঘুরতে থাকে। এবং এই দুইটা ফর্ম সত্যের থেকেও একটু বেশি ‘সত্য’ অথবা মিথ্যার চাইতে একটু বেশি ‘মিথ্যা’। এই ফর্মগুলা কোনরকমের হিসাব ছাড়া, কোনরকমের হিস্টোরি কিংবা মেমরি ছাড়াই নিজের নিজের মতো একধরণের চিরায়ত লজিক ক্রিয়েট করে। ক্যান্সারের কোষ যেমন কোন অর্গানিক বডিতে বাড়তে থাকে, তেমনি এই ফর্মটাও নিজের নিজের মতো লজিক ক্রিয়েট করতে থাকে। আমার কাছে এই লজিক ইন্টারেস্টিং লাগে, কারণ বর্তমানে যে ধরণের ঘটনা চারপাশে ঘটতেছে তা ব্যাখা করতে গেলে এই লজিকের ভ্যালিডিটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হইয়া উঠে।

লট্রিঞ্জার: বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই লজিকরে আপনি কোন কোন জায়গায় কাজ করতে দেখতেছেন? মিডিয়ায়?

বদ্রিয়া: মিডিয়ার আসলে কাজ হইতেছে সুন্দর রকমের ডিসটর্শন তৈরি করা। কিন্তু এই ধরণের ব্যাখা-বিশ্লেষণের পিছনে ‘সত্য’-এর প্রতি একরকম সিম্বলিক ডিমান্ড কাজ করে (আমরা ভিতরে ভিতরে যেন সত্য খুঁজতেছি)। এই ‘ডিসটর্শনের’ আইডিয়াটা কোত্থেকে আসলো? মিডিয়ারে যখন আপনি ফ্রিডম-চয়েজ-লিবার্টির সিস্টেমে স্থাপন করেন। এইটা খুবই জেনেরিক একটা এনালাইসিস। আপনি তখন কী করেন, রাজনীতির বিষয়টারে আপনি পুরাপুরি এলিয়েন আকারে হাজির করেন, ক্ষমতা-কাঠামো কীভাবে মিডিয়ারে ম্যানিউপুলেট করতেছে এইসব টানেন। ক্ষমতা-কাঠামো টেলিভিশনরে ম্যানিউপুলেট করে না, বরং ক্ষমতা-কাঠামো যেমনে ফাংশন করা দরকার, সেইভাবেই ফাংশন করতেছে। এই কাঠামো রিপ্রেজেন্টেশনের উপর নির্ভর করে। একইসাথে রিপ্রেজেন্টেশনের সাথে টেলিভিশনের ইমেজের যে রাজনৈতিক স্বস্তি তা জুড়ে দিতে থাকে। সেইটার সত্যতা থাকুক বা না থাকুক, কোন এনার্জি থাকুক বা না থাকুক। এই ইমেজটা নাগরিক সিভিল সোসাইটিতে এমন এক পর্যায়ে মিশে যায়, যেইখানে ইমেজটারে আর রাজনৈতিক বলে চিনা যায় না। কম্যুনিকেশনের মারপ্যাঁচে মিনিং দিগন্তে হারায়ে যায়। এই হারানো কিংবা অদৃশ্য হওয়ার ঘটনায় মিডিয়া কেবল লোকাসের ভূমিকা দখল করে আছে। ক্ষমতার একটা সবসময়ের চ্যালেঞ্জ হইতেছে এই লোকাসটারে কীভাবে ক্ষমতার কোলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আমাদের এখন উচিত, মিডিয়ার কোন নতুন ধরণের থিওরি তৈরি করা যেইখানে মিডিয়ারের কেবল মিডিয়া না বরং ওভারলোডেড ইনফরমেশনের ‘এজেন্ট প্রভোকেটর’ হিসাবে দেখা হবে। কারণ, এই এজেন্ট প্রভোকেটররাই রাজনৈতিক বিতর্ককে একটা বিশাল কালো গহ্বর হিসাবে চিহ্নিত করতেছে। ‘মিডিয়া যে কোন কিছুরে মিস্টিফাই করে কিংবা এলিয়েনেট করে’- এইরকম পুরান চিন্তা থেকে আমাদের বাইর হয়ে আসা উচিত। বহুত হইছে এইসব।

লট্রিঞ্জার: এলিয়েনেশনের তত্ত্ব মিডিয়ার নিজের অস্তিত্বের জন্যই দরকারি। আবার একই সাথে এই কথাটা তাদের একটা ‘ইনটেনশান’ থাকবার প্রিভিলেজও দেয়। যেইটা তারা ডিজার্ভ করে না।

বদ্রিয়া: আপনি একদম ঠিক বলছেন। ট্রান্স-পলিটিকাল দুনিয়ায় কাউরে স্পেসিফিকালি আইডেন্টিফাই করা যায় না। এইখানে মূল অ্যাক্টর যে ক্ষমতা-কাঠামো না, তা স্পষ্ট। এখন যদি এইখানে কোন সাবজেক্টও না থাকে, তাইলে কি আমরা ধারণা করতে পারি না যে অবজেক্টেরও আলাদা কোন স্ট্র্যাটেজি আছে- অবজেক্টিভ আইরনির মতো?

লট্রিঞ্জার: মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি আসলে নিজের প্রয়োজনীয়তা বারবার রিপ্রোডিউস করা ছাড়া কিন্তু আসলে আর কিছু করে না। উইলিয়াম বারোউ (William Burrough) যেমন পরিষ্কার করে বলছিলেন, ভালোভাবে চিন্তা করে দেখলে বোঝা যায় পাবলিক, নিউজ ছাড়াও বিন্দাস থাকতে পারে।

বদ্রিয়া: একদম। এখন পর্যন্ত যা যা ঘটছে সবকিছু দিয়াই দেখানো যায়, আমরা যে চয়েজের কথা বলি, চয়েজের একটা রেঞ্জ তুইলা ধরি, সবকিছুই সমানভাবে ক্যাপাবল বা এদের প্রত্যেকের পটেনশিয়াল সেইম। ব্যু ব্রামেলের (Beau Brummel) ওই গল্পটা কি আপনি শুনছিলেন? ব্রামেল প্রচুর ঘুরাঘুরি কইরা বেড়াইতেন, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাইতেন এবং সবসময় তার সাথে তার একজন চাকর থাকতো। একদিন তিনি স্কটল্যান্ডের কোন এক জায়গায় গেছিলেন। সেইখানে প্রচুর লেক দেখতে পাইলেন এবং প্রত্যেকটা লেকই একটা আরেকটার থেকে সুন্দর। ব্রামেল তার চাকরের দিকে ফিরা জিগেস করলেন, ‘কোন লেকটা আমার পছন্দ হওয়া উচিত?’ কোন কিছু পছন্দ করা, চয়েজ করা খুব বোরিং একটা কাজ। এই বোরিং কাজ থেকে উদ্ধার পাইতে চাকরদের রাখা হয়। চয়েজ যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তা না। ক্ষমতা-জ্ঞান-ইচ্ছাশক্তি এই সব আইডিয়া যারা বানাইছেন তারা এইগুলার দায়িত্ব নিক। খেয়াল করলে দেখবেন, বৃহৎ পরিসরে আমজনতা খুব অহং নিয়াই বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ, বিজনেস ম্যানেজারদের ক্লাসে নিজেরা সাবস্ক্রাইব করে। কোনকিছু চয়েজ করা কিংবা আমি কী চাই- এই জানাটার জন্যেও ওই ক্লাসগুলার সাহায্য নেয় আমজনতা। কারণ, তাদের নিজের কোনকিছু চুজ করবার কোন ইচ্ছাই নাই। তারা খুব খুশিমনেই তাদের উপর চাপানো সকল ক্যাটাগরি কাকঝাড়া দিয়া ফেলে দিতে পারে, যে ক্যাটাগরির -তারা ডিপ ডাউন ইনসাইড- অংশ হওয়ার কোন তাগিদই বোধ করে নাই। মানুষ নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা অন্যের কাছ থেকে শুনতে চায়- এই কথাটা একদমই সত্য না। এমনকি এইটাও আসলে ক্লিয়ার না, তারা আসলেই যা চায়, তা আদতে জানতে চায় কিনা। কিংবা আদতেও তাদের নিজের ওই ‘চাওয়া’ জানবার কোন ডিজায়ার আছে কিনা। সোশ্যালিজমের মন্ত্র এই ধারণার উপর ভিত্তি কইরাই দাঁড়ায়ে আছে। তারা এইভাবে শুরু করে যে, হ্যাঁ সোশ্যালিজমই মানুষের ‘চাওয়া-পাওয়া’ হওয়া উচিত; তারা তো সামাজিক তাইলে নিশ্চয়ই তাদের নিজেদের জানতে হবে, নিজেরা কী চায় তা জানতে হবে। আমার মনে হয়, আমরা ওই পয়েন্টের ইহকাল পার করে আসছি, ‘চাওয়া-পাওয়া’-র পয়েন্টের সত্যতা তো নাইই, রিয়ালিটিও নাই।

লট্রিঞ্জার: আমজনতার কাছে এই অবজেক্টিভ আইরনি দায়িত্ব এড়ানোর একটা সহজ রাস্তা হইতে পারে। ক্ষমতারে ফ্যান্টাসি, জ্ঞানকে অবসেশন ও ইচ্ছাশক্তিকে ইল্যুশন আকারে দেখবার একটা সহজ পথ। মেজরিটি যে সাইলেন্ট থাকে, এই সাইলেন্ট থাকবার ফলে আইন ও অর্ডার যে খুব সুসংহত হয় এমন কিছু না, বরং তাদের এই সাইলেন্স মৃত্যুর সমান। আমজনতা মৃত হওয়ার ভান ধরতাছে। তাদের এই সুনসান নিরবতা, সবকিছু থেকে নিজেদের গুটায়ে নেয়া- সম্ভবত সমাজের ইন্তেকালেরই ঘোষণা দেয়।

বদ্রিয়া: একদম। এখনকার ইনফরমেশনের এত বড় সিস্টেমের সাথে জনতা যখন পরিচিত হয়, তখন তাদেরকে এই সিস্টেম ‘জানা’, ‘বোঝা’, ‘অবগত’ হওয়ার বার্ডেন থেকে মুক্তি দেয়। বিজ্ঞাপন— নতুন ধরণের এডভার্টাইজিং মানুষকে কোন কিছু বাছাই করার দায়িত্ব থেকেও মুক্তি দেয়। অথচ এই বাছাই করবার যে অভ্যাস মানুষের এতদিন ছিল তা পুরাপুরিই মানবিক কিন্তু একইসাথে ভয়াবহও। ক্ষমতার ক্ষেত্রে যে জিনিসটা চালু আছে, ক্ষমতা জনগণের দরবারে দিয়া দেয়া হোক – এই আলাপ আমার কাছে হাস্যকর বইলা মনে হয়। এই আলাপ দিয়া যেন আমজনতারে মাছের জাল দিয়া ঝাঁক বেঁধে ধরা হয়, পরে ধীরে ধীরে জালটা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবানই নিজের কাছে গুটায়ে আনে। আমার কাছে মনে হয়, এই সমস্ত কিছু আসলে ইন্ডিকেট করে — জনগণের এতদিনকার স্ট্র্যাটেজি ক্যামনে ভয়াবহভাবে রিভার্স হইতেছে। তারা আর কোন ধরণের বিপ্লব কিংবা সাবভার্সিভ কার্যকলাপে নাই, ওই প্রসেসে নিজেদের দেখেও না। কিন্তু একধরণের না চাইতেই পাওয়া যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা থেকে একরকম বড় পরিসরের ডিভল্যুশনের ভিতর দিয়া যাইতেছে। এই ডিভল্যুশনের পিছনে কোন একটা ইভিল জিনিয়াস মুখ বাঁকা কইরা হাসতেছে। আমার মনে হয়, আমরা ধীরে ধীরে রিয়ালাইজ করতে পারব এই যে যোগাযোগব্যবস্থা, কম্যুনিকেশনের একটা বেহেশত আমাদের সামনে উইঠা আসতেছে, এই বেহেশতের কেন্দ্রে কতটা ভয়াবহ টেরর অপেক্ষা করতেছে। আর এর বাইরে, যাবতীয় সকল ঘটনা গুরুত্বহীন হইয়া পড়ছে, এমনকি থিওরিরও আর কোন মূল্য নাই।

লট্রিঞ্জার: ক্ষমতা কিন্তু এখনও গুরুত্বহীন হইতে পারলো না।

বদ্রিয়া: মে‘৬৮-তে এইটাই আমাকে ভাবায়ে তুলছিল। রাজনৈতিক, বৈপ্লবিক, ঐতিহাসিক কোন মঞ্চ এবং এর সাথে রিলেটেড ব্যর্থতা- এইসবের পিছনে এই ক্ষমতার ঘটনা নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়া যাইতেছে সবসময়। মাঝে মাঝে এই ঘটনা ঝড়ের মতো নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়, কোন কোন সময় নিজেরে গিলা খাইয়া নিজের ভিতরেই গুটায়ে যায়, অদৃশ্য হয়ে পড়ে।

লট্রিঞ্জার: মে‘৬৮ ফ্রান্সের উপর দিয়া একটা ডিজাস্টারের মতো গেছে। যত তাড়াতাড়ি এইটা ঘটছে, তত তাড়াতাড়িই এত অদ্ভুতভাবে এই ঘটনা বাস্তবিকভাবে শেষ হইয়া গেছে যে এর কোন নিশানাও পরে আর পাওয়া গেল না।

বদ্রিয়া: তাহলে এই ঘটনা এত যে তীব্র শক্তিশালী এনার্জি নিয়া হাজির হইছিল তা কই গেল? কোথাও না। সোশ্যালিজমে তো না-ই। নিশ্চয়ই এই এনার্জিটা অন্য কোথাও গিয়ে জমা হইছে। আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়া পৌঁছাইছে পরে আবার এমার্জ করবে – এইরকম নাও হইতে পারে। আন্ডারগ্রাউন্ডের উপরেই অন্য কোথাও হয়তো জমা হইছে। আমার কাছে মে‘৬৮ কোন রাজনৈতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে যে এই ইনার্শিয়াল পয়েন্টের অস্তিত্ব থাকতে পারে তার প্রথম নমুনা ঘটনা। কন্টিনিউটিও (Continuity) অদৃশ্য হইয়া যাইতে পারে। কী ফ্যাসিনেটিং!

Series Navigation<< দেরিদা অন শোয়াহএকটা ক্যারেক্টার কখনোই ভালো বা খারাপ কিছু করতে পারে না, সে জাস্ট ট্রুথের সাইডে থাকতে পারে বা পারে না – টারানটিনো >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

তৌকির হোসেন

জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →