Main menu

এই সময়ে যে কোন কিছুর চাইতে ভিডিও গেমস ফিকশনের অনেক কাছাকাছি – হারুকি মুরাকামি।

This entry is part 6 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

দ্য প্যারিস রিভিউ’তে মুরাকামি’র এই ইন্টারভিউ’টা ছাপা হইছিল ২০০৪ সালে। দ্য আর্ট অফ ফিকশন সিরিজের অংশ হিসাবে, যেইটা ১৯৫৩ সাল থিকা উনারা শুরু করছিলেন এবং এখনো চালু আছে। মুরাকামির ইন্টারভিউটা ১৮২ নাম্বার। বাংলা অনুবাদে ইন্টারভিউ’র শিরোনামটা চেইঞ্জ করা হইছে।   [pullquote][AWD_comments][/pullquote]

মুরাকামি’র লেখাতে খেয়াল করার জায়গা মেইনলি দুইটা। একটা হইলো, সাহিত্য-বাজারে যে এখনো আলাদা কইরা একটা ঐতিহ্য  বানানো (যদিও নিয়ম হইলো তুলে ধরা  লেখা) ভালো  উপন্যাসের শর্ত হিসাবে চালু আছে, মুরাকামি তাঁর উপন্যাসগুলাতে এই জিনিসটারে মোটামুটি আজাইরা প্রমাণ করতে পারছেন। গ্লোবাল কালচারাল উগ্রবাদীরা এই ঐতিহ্য  আবিষ্কারের ভিতর দিয়াই নিজেদের অপারেট করেন। এই ঐতিহ্য-নিয়ম মাইনা, গল্প-উপন্যাসে বার্গার খাইয়া কেউ বাংলা-কবিতা লেখতে পারবো না, ভাপা-পিঠাই খাওয়া লাগবো, ইভেন গরমের দিন আইসা পড়লেও!

মুরাকামি’র ঐতিহ্য-মানা কবি বরিশালে থাইকা বিটেলসের গান নিয়া কবিতা লেখতে পারেন, এই পারমিশন তার আছে।

আরেকটা খেয়াল করার জায়গা হইলো যে, এইটা করার লাইগা তারে ম্যাজিক-রিয়ালিজমের ভিত্রে ঢোকা লাগে না। বুড্ডিজম ছাড়া যেমন (ওয়েষ্টার্ন অ্যান্ড ইন্ডিয়ান) ইন্ডিভিজ্যুয়াল আর নিজ’রে এখন ধইরা রাখতে পারেন না; একই কারিশমায় ম্যাজিক-রিয়ালিজমও ঐতিহ্যবাদী সাহিত্যরে এই ঠেকা দিয়াই খাড়া কইরা রাখছে। সাহিত্যে ম্যাজিক-রিয়ালিজমের প্রিটেন্ডিং প্যার্টান রাজনৈতিকভাবে পুঁজিবাদরে মোর সহনশীল কইরা তোলতে পারে। মুরাকামি তার এগেনেইস্ট বিপ্লব (ইংরেজি রেভিউলেশন অর্থে) করেন না অবশ্যই; কিন্তু ইগনোর করার প্যার্টানের মধ্যেও আটকাইয়া থাকেন না।

এই দুইটা ডিপার্চার মুরাকামি’রে হুমায়ূন আহমেদ  হইতেই দেয় নাই খালি; বরং এমন একটা পাটাতনের ইশারা দেয় যেইখানে স্পষ্টতাগুলি মোর প্রাসঙ্গিক হয়া ওঠতে পারে। অবশ্য মুরাকামি এইসব নিয়া খুব একটা কথা কইতে চান নাই, কারণ সমালোচনার চাইতে অনুবাদই উনার বেশি পছন্দের। এইজন্য উনার ইন্টারভিউ’র অনুবাদই করলাম।

ইন্টারভিউ’টা বেশ ডিটেইল। দুইদিনে নেয়া। সহজ ইংরেজিতেই বলা কথাগুলা। কিন্তু সহজ ইংরেজীরেও ত বাংলায় অনুবাদ করা যায়!

 

ই.. হা.

__________________________________________

ইন্টারভিউ নিছেন জন রে

জন রে

জন রে

ইন্টারভিউয়ার: আমি আপনার নতুন ছোটগল্পের সংগ্রহ আফটার দ্য কোয়েক ’টা মাত্র পড়লাম আর আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো  যে কি রকম ফ্রিলি আপনি গল্পগুলারে মিশাইলেন যা রিয়ালাস্টিক ছিল, আপনার নওরোজিয়ান উড-এর স্টাইলের লগে,  আমরা যদি বলি, অন্যান্যগুলার দ্য উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকল  বাহার্ড-বয়েলড ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যান্ড দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ডের  সাথে অনেক বেশি মিল ছিল। আপনি কি এই দুইটা ফর্মের মধ্যে কোন মৌলিক পাথর্ক্য দেখেন?

মুরাকামি: আমার স্টাইল, যা আমি আমার স্টাইল বইলা ভাবি, অনেকটা হার্ড-বয়েলড ওয়ান্ডারল্যান্ডের খুব কাছাকাছি। আমি নিজে রিয়ালাস্টিক স্টাইল পছন্দ করি না। আমি সুরিয়ালাস্টিক স্টাইল একটু বেশি পছন্দ করি। কিন্তু নওরোজিয়ান উড  নিয়া আমি ঠিক করছিলাম যে একটা হান্ড্রেড পারসেন্ট রিয়ালাস্টিক উপন্যাস লিখবো। আমার সেই অভিজ্ঞতাটা দরকার ছিল।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি এই বইটারে স্টাইলের একটা প্রাকটিস হিসাবে নিছিলেন নাকি আপনার একটা নির্দিষ্ট গল্প ছিল যা রিয়ালাস্টিকভাবে বললে সবচে ভালো ভাবে বলা যাইতো?

মুরাকামি: আমি একজন কাল্ট লেখক হইতে পারতাম যদি আমি সুরিয়ালাস্টিক নভেলগুলা লিখতে থাকতাম। কিন্তু আমি মূলধারাতে আসতে চাইতেছিলাম, তো, আমি প্রমাণ করতে চাইছিলাম যে আমি একটা রিয়ালাস্টিক বই লিখতে পারি। এই কারণে আমি সেই বইটা লিখছিলাম। এইটা জাপানে বেস্ট-সেলার হইছিলো আর আমি এই রেজাল্টটা চাইছিলাম।

ইন্টারভিউয়ার: তাইলে এইটা আসলে একটা স্ট্রাটেজিক চয়েস।

মুরাকামি: এইটা ঠিক। নওরোজিয়ান উড পড়াটা খুব সহজ আর খুব সহজেই বোঝা যায়। অনেক মানুষ সেই বইটা পছন্দ করছে। এরপরে হয়তো তারা আমার অন্য কাজ নিয়া আগ্রহী হইছে; তো এইটা বেশ হেল্প করছে।

ইন্টারভিউয়ার: তাইলে জাপানি পাঠকরা আম্রিকান রিডারদের মতো? তারা একটা সহজ গল্প চায়।

মুরকামি: আমার লেটেস্ট বই, কাফকা অন দ্য শোর, তিনশ হাজার সেট বিক্রি হইছে – আপনি জানেন, এইটা দুইটা ভলিউমে। আমি অবাক হইছিলাম এইটা যে এতো বিক্রি হইছে; এইটা খুব সাধারণ জিনিস না। গল্পটা খুবই জটিল আর ফলো করা বেশ কঠিন। কিন্তু আমার স্টাইল, আমার গদ্য, পড়াটা খুব সহজ। এইটাতে সেন্স অফ হিউমার আছে, এইটা নাটকীয়, আর এইটা একটা পেইজ-টার্নার। এই দুইটা জিনিসের মধ্যে এক ধরণের ম্যাজিক্যাল ব্যালেন্স আছে; হয়তো আমার সাকসেসের এইটা আরেকটা কারণ। তারপরও এইটা একটা আশ্চর্যের ব্যাপার। প্রতি তিন বা চার বছরে আমি একটা উপন্যাস লিখি, আর মানুষ এইটার জন্য অপেক্ষা করে। আমি একবার জন আরভিং-এর ইন্টারভিউ নিছিলাম, আর তিনি আমারে বলছিলেন যে একটা ভালো বই পড়া একটা শিরায় ড্রাগ ঢুকানোর মতোন। যখন তারা অ্যাডিক্টেড হয়া পড়ে, তারা সবসময় অপেক্ষা করে।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি আপনার পাঠকদেরকে জাঙ্কি  বানাইতে চান।

জন আরভিং

জন আরভিং

মুরাকামি: আরভিং এইটাই কইছিলেন।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার এইখানে দুইটা ফ্যাক্টর থাকে – একটা সরাসরি, ইজি-টু-ফলো ন্যারেটিভের ভয়েস যা অনেকসময় একটা বিভ্রান্তিকর প্লটের লগে জোড় তৈরি করে – এইটা কি আপনার কনশাস চয়েস?

মুরাকামি: না, তা না। যখন আমি লিখতে শুরু করি, তখন আমার কোন প্ল্যানই থাকে না। আমি খালি অপেক্ষা করি গল্পটা আসার জন্য। আমি বাইছা নিই না কি ধরণের গল্প এইটা অথবা কি ঘটতে যাইতেছে। আমি খালি অপেক্ষা করি। নওজেরিয়ান উড একটা আলাদা জিনিস, কারণ আমি সিদ্ধান্ত নিছিলাম একটা বাস্তববাদী স্টাইলে লিখার জন্য। কিন্তু বেসিক্যালি, আমি বাছতে পারি না।

ইন্টারভিউয়ার: কিন্তু আপনি কিভাবে ভয়েসটা বাছাই করেন যেইভাবে এইটা বলা হয়, সেই ডেডপ্যান, ইজি-টু-ফলো ভয়েসটা? আপনি কি সেইটা বাছাই করেন?

মুরাকামি: আমি কতগুলা ইমেজ পাই আর একটার সাথে আরেকটারে মিলাই। এইটা হইলো স্টোরি লাইনটা। তারপর আমি স্টোরিলাইনটা রিডারের কাছে ব্যাখ্যা করি। যখন আপনি কোনকিছু ব্যাখ্যা করেন আপনাকে অনেক দয়ালু হইতে হবে। আপনি যদি মনে করেন, এইটা ঠিকাছে; আমি এইটা জানি, এইটা খুবই অ্যারোগেন্ট একটা জিনিস। সহজ শব্দগুলা আর ভালো মেটাফর; ভালো অ্যালাগরি। তো, এইটাই আমি করি। আমি খুব সাবধানে আর স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করি।

ইন্টারভিউয়ার: এইটা কি খুব ন্যাচারালি আপনার কাছে আসে?

মুরাকামি: আমি খুব ইন্টিলিজেন্ট না। আমি অ্যারোগেন্ট না। যারা আমার বই পড়ে আমি তাদের মতোন মানুষ। আমার একটা জ্যাজ ক্লাব ছিল, আর আমি ককটেল বানাইতাম আর আমি স্যান্ডউইচ বানাইতাম। আমি একজন লেখক হইতে চাই নাই – এইটা জাস্ট হয়া গেছে। এইটা একটা গিফটের মতো, বেহেশত থেকে পাওয়া, আপনি জানেন। তো, আমি মনে করি আমার খুবই বিনয়ী থাকাটা দরকার।

ইন্টারভিউয়ার: কোন বয়সে আপনি লেখক হয়া উঠলেন? এইটা কি আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিল?

মুরাকামি: আমার বয়স তখন উনত্রিশ বছর। ওহ হ্যাঁ, এইটা একটা সারপ্রাইজ ছিল। কিন্তু আমি সাথেসাথেই এইটার সাথে মানায়া নিছিলাম।

ইন্টারভিউয়ার: সাথেসাথে? লেখার প্রথম দিন থিকাই আপনি কমর্ফোটেবল ছিলেন?

মুরাকামি: আমি মাঝরাতের পরে কিচেন টেবিলে লেখালেখি শুরু করলাম। প্রথম বইটা শেষ করতে দশ মাস লাগছিলো; আমি এইটা একজন পাবলিশাররে পাঠাইলাম আর কোন একটা প্রাইজও পাইলাম, তো এইটা একটা ড্রিমের মতো – এইটা ঘটতেছে দেখে আমি সারপ্রাইজড হইছিলাম। কিন্তু একটা মুহূর্ত পরে, আমি ভাবলাম, হ্যাঁ, এইটা ঘটতেছে এবং আমি একজন লেখক; কেন না? এইটা এইরকম সহজ।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার লেখালেখি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়া আপনার বউয়ের অনুভূতিটা কিরকম ছিল?

মুরাকামি: শে একদম কিছুই বলে নাই, আর যখন আমি বললাম, আমি একজন লেখক, শে খুবই অবাক হইছিল এবং অনেকটা বিব্রত হইছিল।

ইন্টারভিউয়ার: কেন তিনি বিব্রত হইছিলেন? তিনি কি ভাবছিলেন যে আপনি এইটা করতে পারবেন না?

মুরাকামি: লেখক হওয়াটা তো অনেকটা দেখানো-ব্যাপার।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার আদর্শ কারা? কোন জাপানি লেখকরা আপনারে প্রভাবিত করছে?

মুরাকামি: যখন আমি ছোট ছিলাম বা আমার কৈশোরে আমি জাপানি লেখকদের খুব একটা পড়ি নাই। আমি এই কালচার থিকা পালাইতে চাইতাম; আমার মনে হইতো এইটা বিরক্তিকর। খুবই আঠালো।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার আব্বা তো জাপানি সাহিত্যের একজন টিচার ছিলেন, তাই না?

মুরাকামি: হুমম। তো, এইটা বাপ-ছেলের রিলেশনও। আমি জাস্ট ওয়েস্টার্ন কালচারের দিকে চলে গেছিলাম: জ্যাজ মিউজিক আর দস্তয়েভস্কি আর কাফকা আর রেমন্ড চ্যান্ডলার। অইটা ছিল আমার দুনিয়া, আমার ফ্যাণ্টাসিল্যান্ড। যদি আমি চাইতাম আমি সেন্ট পির্টাসবার্গে অথবা পশ্চিম হলিউডে চলে যাইতে পারতাম। অইটা ছিল উপন্যাসের ক্ষমতা – আপনি যে কোন জায়গায় যেতে পারবেন। এখন স্টেটসে যাওয়া সহজ – সবাই দুনিয়ার যে কোন জায়গায় যাইতে পারে – কিন্তু ১৯৬০-এর দিকে এইটা মোটামুটি অসম্ভব ছিল। তো, আমি খালি পড়তাম আর মিউজিক শুনতাম আর আমি অইখানে চলে যাইতে পারতাম। এইটা ছিল এক ধরণের মানসিক অবস্থা, একটা স্বপ্নের মতো।

ইন্টারভিউয়ার: আর এইটা কোন একভাবে আপনারে জায়গায় লিখতে নিয়া আসলো।

মুরাকামি: হুমম। তখন আমার বয়স উনত্রিশ, আমি হঠাৎ কইরাই একটা নভেল লিখতে শুরু কইরা দিলাম। আমি একটা কিছু লিখতে চাইতেছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম না কেমনে লেখবো। আমি জানতাম না জাপানিতে কিভাবে লিখতে হয় – আমি মোটামুটি জাপানি লেখকদের কোন লেখাই পড়ি নাই – তো, আমি যা পড়ছি  – আম্রিকান বই বা ওয়েস্টার্ন বই – তার থিকা স্টাইল, স্ট্রাকচার, সবকিছু ধার করলাম। যার থিকা আমি আমার নিজস্ব আসল স্টাইল তৈরি করলাম। সুতরাং এইটা ছিল একটা শুরু।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার প্রথম বই যখন পাবলিশড হইছিল, আপনি একটা পুরস্কার জিতলেন আর কম-বেশি নিজের তরিকায় লেখা শুরু করলেন। আপনি কি অন্য রাইটারদের লগে দেখা করতে শুরু করলেন?

মুরাকামি: না, একদমই না।

ইন্টারভিউয়ার: ওই সময়ে যারা লেখক ছিল তাদের মধ্যে আপনার কোন দোস্ত ছিল না?

মুরাকামি: কেউই না।

ইন্টারভিউয়ার: বা সময়ের সাথে সাথে আপনার কি কারো সাথে দেখা হইলো যে আপনার একজন ফ্রেন্ড বা কলিগ হয়া উঠলো?

মুরাকামি: না, একদমই না।

ইন্টারভিউয়ার: এখনকার দিনে, আপনার কি কোন ফ্রেন্ড নাই যারা লেখক?

মুরাকামি: না, আমার মনে হয় না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার এমন কেউ কি নাই যারে আপনি দেখান আপনার কাজ যখন চলতেছে?

মুরাকামি: কখনোই না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার বউরেও না ?

মুরাকামি: আচ্ছা, আমার ফার্স্ট নভেলের ফার্স্ট ড্রাফটটা তারে দেখাইছিলাম কিন্তু শে দাবি করে যে শে কখনোই এইটা পড়ে নাই! তো, আমার মনেহয় তার কোন ইম্প্রেশনই হয় নাই।

ইন্টারভিউয়ার: উনি ইম্প্রেসড হন নাই।

মুরাকামি: না। কিন্তু ওইটা ছিল প্রথম ড্রাফট আর জঘন্য ছিল। পরে আমি অনেকবার রিরাইট করি।

ইন্টারভিউয়ার: এখন যখন আপনি একটা বইয়ের ওপর কাজ করতেছেন উনি কি কখনো জানতে চান আপনি কি লিখতেছেন?

মুরাকামি: প্রত্যেকবার যখন আমি একটা বই লিখি, শে আমার ফার্স্ট রিডার। আমি তার ওপর ভরসা করি। শে আমার কাছে পার্টনারের মতো। এটা স্কট ফিটজেরাল্ডের মতো – তাঁর জন্য, জেল্ডা ছিল তার ফার্স্ট রিডার।

ইন্টারভিউয়ার: তাইলে আপনার ক্যারিয়ারের কোন সময়েই ফিল করেন নাই যে আপনি লেখকদের কোন কম্যুনিটির অংশ?

মুরাকামি: আমি একজন লোনার। আমি গ্রুপস, স্কুলস, লিটারারি সার্কেলস পছন্দ করি না। প্রিস্টনে, একটা ছোট রেস্টুরেন্টে বা এইরকমের একটা কিছুতে আমারে খাওয়ার দাওয়াত দিছিলো। জয়েস কার্ল ওটস সেইখানে ছিলের আর টনি মরিসন সেইখানে ছিলেন আর আমি খুব ডরাইতেছিলাম, আমি প্রায় কিছুই খাইতে পারি নাই! মেরি মরিস সেইখানে ছিলেন আর তিনি খুবই ভালো মানুষ, প্রায় আমার বয়সী, আর আমি বলবো, আমরা দুইজন দোস্ত হয়া উঠলাম। কিন্তু জাপানে আমার কোন লেখক বন্ধু নাই, কারণ আমি আসলে চাই… ডিসট্যান্স।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকলসের  একটা বড় অংশ ইউ.এস.-এ থাকার সময় লিখছেন। ওইখানে থাকাটা কি আপনার লেখালেখির প্রক্রিয়ার ওপর বা টেক্সটের নিজের ওপর কোন স্পষ্ট প্রভাব রাখছে?20090205230030!Wind-up_Bird_Chronicle

মুরাকামি: উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকলস লেখার চার বছর সময়টাতে, আমি ইউ.এস.’তে একজন স্ট্রেঞ্জারের মতো ছিলাম। এই “স্ট্রেঞ্জারনেস”টা আমারে একটা ছায়ার মতো সবসময় অনুসরণ করতো এবং নভেলের মেইন কারেক্টাটার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতো। এইটার কথা ভাবি, যদি আমি জাপানে এইটা লিখতাম, এইটা হয়তো খুবই অন্যরকম একটা বই হইতো।

ইউ.এস.-এ থাকার সময় আমার স্ট্রেঞ্জারনেসটা জাপানে থাকার সময়টাতে আমি যা ফিল করি তার চাইতে আলাদা। ইউ.এস.’তে এইটা অনেকবেশি স্পষ্ট আর ডাইরেক্ট আর এইটা আমারে নিজের সম্পর্কে অনেক বেশি পরিষ্কার ধারণা দিছিল। একভাবে দেখতে গেলে, এই নভেল লেখাটা একটা প্রক্রিয়া যা নিজেকে ন্যাংটা করার মতোই।

ইন্টারভিউয়ার: জাপানে এমন কেউ কি লিখছে যার বই আপনি পড়েন আর ভাল্লাগে?

মুরাকামি: হ্যাঁ, কয়েকজন আছেন। রুয়ো মুরাকামি, বানানা ইয়োশমোতো – তার কয়েকটা বই আমার পছন্দ হইছে। কিন্তু আমি কোন রিভিউ বা সমালোচনা করি নাই; আমি ওইটাতে জড়িত হইতে চাই না।

ইন্টারভিউয়ার: কেন চান না?

মুরাকামি: আমি মনে করি আমার কাজ হইলো মানুষজনরে এবং দুনিয়াটারে দেখা, আর তাদেরকে বিচার করা না। আমি সবসময় নিজেকে তথাকথিত উপসংহারের জায়গাটা থিকা দূরে থাকতে চাই। আমি সবকিছুকে দুনিয়ার সমস্ত সম্ভাবনার প্রতি খোলা বিস্তৃত রাখতে চাই।

আমি সমালোচনার চাইতে অনুবাদ করা পছন্দ করি, কারণ যখন আপনি অনুবাদ করতেছেন তখন আপনার খুব কমই বিচার করার দরকার পড়ে। প্রতিটা লাইনে লাইনে আমি আমার প্রিয় কাজটাকে আমার শরীর আর আমর মনের ভিতর চলে যেতে দিই। নিশ্চিতভাবেই, আমাদের এই দুনিয়াতে সমালোচকদের দরকার আছে, কিন্তু এইটা আমার কাজ না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার নিজের বইয়ের কথায় ফিরি: আধ-সেদ্ধ আমেরিকান গোয়েন্দা কাহিনি পরিষ্কারভাবেই একটা মূল্যবান কৌশল। আপনি কখন এইরকমের জায়গায় পরিচিত হইলেন আর কে আপনাকে এইটার দিকে ফিরাইলো?

মুরাকামি: হাইস্কুলের ছাত্র হিসাবে, আমি ক্রাইম-উপন্যাসের প্রেমে পড়ি। আমি কোবে’তে থাকতাম, যেটা একটা বন্দর শহর যেইখানে অনেক বিদেশিরা আর নাবিকেরা আসতো এবং সেকেন্ডহ্যান্ড বইয়ের দোকানে তাদের পেপারব্যাকগুলা বিক্রি করতো। আমি গরিব ছিলাম, কিন্তু পেপারব্যাকগুলা কমদামে কিনতে পারতাম। আমি ওই বইগুলা থিকা ইংরেজী পড়া শিখছিলাম আর এইটা খুবই রোমাঞ্চকর।

ইন্টারভিউয়ার: ইংরেজীতে আপনি প্রথম কোন বইটা পড়ছিলেন?

মুরাকামি: রস ম্যাকডোনাল্ডের নাম হইলো তীরন্দাজ ।

নাম হইলো তীরন্দাজ বইয়ের কাভার

নাম হইলো তীরন্দাজ বইয়ের কাভার

আমি এই বইগুলা থিকা অনেক কিছু শিখেছিলাম। যখন আমি শুরু করতাম, আমি থামতে পারতাম না। একই সময়ে আমি তলস্তয় আর দস্তয়েভস্কি পড়তেও পছন্দ করতাম। এই বইগুলাও পেইজ-টার্নারস; তারা খু্বই দীর্ঘ ছিল, কিন্তু আমি পড়া থামাইতে পারতাম না। সুতরাং আমার জন্য একই ব্যাপার ছিল, দস্তয়েভস্কি আর রেমন্ড চ্যান্ডলার। এমনকি এখন, ফিকশন লেখার জন্য আমার আদর্শ হইলো দস্তয়েভস্কি এবং চ্যান্ডলারকে একটা বইয়ে নিয়া আসা। এইটাই আমার লক্ষ্য।

ইন্টারভিউয়ার: কোন বয়সে আপনি প্রথম কাফকা পড়ছিলেন?

মুরাকামি: আমার বয়স তখন পনের। আমি দুর্গ পড়েছিলাম; এইটা একটা মহান বই। আর বিচার

ইন্টারভিউয়ার: এইটা বেশ মজার। উভয় উপন্যাসই অসম্পূর্ণ ছিল, যা অবশ্যই বোঝায় যে তাদের কখনোই সমাধান করা হয় নাই; আপনার উপন্যাসগুলিও – বিশেষ করে আপনার অনেক সাম্প্রতিক বইগুলি, যেমন উদভ্রান্ত  পাখির বৃত্তান্ত – অনেক সময় মনে হয় হয়তো পাঠক যেইরকমের পুনঃসমাধান খুঁজতেছে তারে আটকায়। এইটা কি কোনভাবে কাফকার প্রভাবের কারণে?

মুরাকামি: পুরাটা না। আপনি রেমন্ড শ্যান্ডলার পড়ছেন ত অবশ্যই। উনার বইগুলা আসলে সমাপ্তি টানে না। সে হয়তো বলতে পারে, সে একজন খুনী, কে এইটা করছে সেইটা আমার কাছে ব্যাপার না। এইখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা পর্ব আছে যখন হাওয়ার্ড হকস বড় ঘুম-এ একটা ছবি তৈরি করেন।

বড় ঘুম সিনেমার পোস্টার

বড় ঘুম সিনেমার পোস্টার

হকস বুঝতে পারতেছিল না কে শোফার’কে খুন করছে, সুতরাং সে শ্যান্ডলাররে ডাকলো এবং জিজ্ঞাসা করলো, আর শ্যান্ডলার উত্তর করলো, আমার কিছু যায় আসে না! আমার জন্যও একই, শেষটার কোন অর্থই নাই। কারমাজভ ভাইয়েরা-তে কে খুনি তা নিয়া আমার কিছু যায় আসে না।

ইন্টারভিউয়ার: কিন্তু তারপরও কে শোফাররে খুন করেছে সেইটা বড় ঘুম-রে একটা পেইজ-টার্নার বানানোর একটা অংশ।

মুরাকামি: আমি নিজে, যখন আমি লিখতেছি, জানি না কে এইটা করছিল। আমি আর পাঠকরা একই জায়গায় আছি। যখন আমি একটা গল্প লিখতে শুরু করি, আমি শেষটা একদমই জানি না এবং আমি জানি না যে এরপরে কি ঘটতে যাচ্ছে। যদি প্রথমত এইখানে একটা খুন থাকে, আমি জানি না খুনি কে। আমি বইটা লিখি কারণ আমি এইটা বাইর করতে চাই। যদি আমি জানিই খুনি কে, তাইলে গল্পটা লেখার কোন উদ্দেশ্য নাই।

ইন্টারভিউয়ার: এইখানে কি আপনার বইগুলাকে ব্যাখ্যা না করতে চাওয়ার অনুভূতিও আছে, যেইভাবে একটা স্বপ্ন তার ক্ষমতা হারায় যখন এইটা বিশ্লেষণের নিচে আসে?

মুরাকামি: বই লেখার একটা ভালো জিনিস হচ্ছে যখন আপনি সজাগ আছে তখন আপনি স্বপ্ন দেখতে পারেন। এইটা যদি সত্যিকারের স্বপ্ন হয়, আপনি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। বই লেখার সময়টাতে আপনি সজাগ আছেন; আপনি সময়, দৈর্ঘ্য সবকিছু বেছে নিতে পারেন। আমি সকালের দিকে চার-পাঁচ ঘণ্টা লিখি আর যখন সময় আসে, আমি থামি। আমি পরের দিন চালাইয়া যাইতে পারি। এইটা যদি সত্যিকারের স্বপ্ন হয়, আপনি তা করতে পারেন না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি বললেন যে যখন আপনি লিখেন আপনি জানেন না খুনি কে, কিন্তু আমার কাছে একটা সম্ভাব্য ব্যতিক্রম: নাচ নাচ নাচ -এ

নাচ নাচ নাচ বইয়ের কাভার

নাচ নাচ নাচ বইয়ের কাভার

গোটানডা চরিত্রটা। ওই উপন্যাসটাতে একটা নিশ্চিত ইচ্ছাকৃত তৈরি করা হইছে একটা মুহূর্তের দিকে, যখন গোটানডা নিজের স্বীকারোক্তিটা দেয় – ক্ল্যাসিক-ক্রাইম নভেল স্টাইলে, তাকে আমাদের কাছে দেখানো হচ্ছিলো শেষ লোক যারে সন্দেহ করা যায়। আপনি কি হয়তো আগে থেকে জানতেন না যে গোটানডা দোষী?

মুরাকামি: প্রথম ড্রাফটাতে আমি জানতাম না যে এইটা গোটানডা। শেষের দিকে – তিনভাগের-দুইভাগে অথবা এইরকম – আমি জানলাম। যখন আমি দ্বিতীয় ড্রাফটা লিখলাম আমি গোটানডার দৃশ্যগুলি আবার লিখলাম, জেনে যে এইটা সে।

ইন্টারভিউয়ার: তাইলে, সংশোধনের এইটা একটা মূল কারণ – প্রথম ড্রাফটের শেষে আপনি যা শিখলেন সেইটা নেয়া এবং একটা নিশ্চিত অপরিহার্যতার অনুভূতি দেয়ার জন্য আগের পরিচ্ছেদে আবার কাজ করা?

মুরাকামি: ঠিক। প্রথম ড্রাফটটা অগোছালো, আমারে বারবার সংশোধন করতে হয়।

ইন্টারভিউয়ার: সাধারণত আপনাকে কয়টা ড্রাফট করতে হয়?

মুরাকামি: চারটা বা পাঁচটা। প্রথম ড্রাফটটা লিখতে আমি ছয়মাস খরচ করি আর তারপর ঠিকঠাক করতে সাত বা আট মাস খরচ করি।

ইন্টারভিউয়ার: এইটা বেশ দ্রুত।

মুরাকামি: আমি একজন পরিশ্রমী শ্রমিক। আমি আমার কাজে খুব ভালোভাবে মনোযোগ দেই। সুতরাং, আপনি জানেন, এইটা সহজ। আর যখন আমি লিখি আমার ফিকশন লেখা ছাড়া আমি আর কোন কাজ করি না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার সাধারণ কাজের দিন কিভাবে সাজানো?

মুরাকামি: যখন আমি একটা উপন্যাস লেখার মতো অবস্থায় থাকি, আমি চারটা সময় ওঠি আর পাঁচ থিকা ছয় ঘণ্টা কাজ করি। বিকালে, আমি দশ কিলোমিটার দৌড়াই অথবা পনেরোশ মিটার সাঁতরাই (অথবা দুইটাই করি), তারপর আমি একটু পড়ি অথবা কোন মিউজিক শুনি। আমি নয়টার দিকে বিছানায় যাই। কোন ভিন্নতা ছাড়াই আমি প্রতিদিন এই রুটিনটা রাখি। এই বারবার করাটা নিজেই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; এইটা একটা সম্মোহনের মতোন। মনের গভীর একটা জায়গায় পৌঁছানোর জন্য আমি নিজেরে সম্মোহন করি। কিন্তু বেশি সময় ধরে এইরকমের বারবার করার জন্য – ছয় মাস অথবা এক বছর ধরে – ভালো রকমের মানসিক এবং শারীরিক শক্তি দরকার। এইভাবে, একটা দীর্ঘ উপন্যাস লেখা বেঁচে থাকার ট্রেনিংয়ের মতো। শৈল্পিক অনুভূতিপ্রবণতা যেইরকম সেইরকম শারীরিক শক্তিও দরকারি।

ইন্টারভিউয়ার: আমি আপনার চরিত্রগুলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাই। আপনি যখন কাজ করেন তখন তারা আপনার কাছে কতোটা বাস্তবিক হয়ে ওঠে? এইটা কি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের একটা স্বাধীন জীবন আছে এই বর্ণনার বাইরে?

মুরাকামি: যখন আমি আমার বইয়ের চরিত্রগুলা বানাই, আমি আমার জীবনের সত্যিকারের মানুষদের দেখার চেষ্টা করি। আমি কথা বলতে খুব একটা পছন্দ করি না; আমি অন্য মানুষদের গল্পগুলা শুনতে পছন্দ করি। আমি সিদ্ধান্ত নিই না যে তারা কি ধরণের লোক; আমি চিন্তা করার চেষ্টা করি তারা কি অনুভব করে, তারা কোথায় যাচ্ছে। আমি তার (পুরুষ) কাছে থেকে কিছু গুণ, তার (মহিলা) কাছ থেকে কিছু গুণ নেই। আমি জানি না এইটা  “বাস্তবিক” অথবা “অবাস্তবিক” কিনা, কিন্তু আমার জন্য, আমার চরিত্ররা সত্যিকারের মানুষদের চাইতে বেশি সত্যি। এই যে ছয় বা সাত মাস আমি লিখি, এই মানুষগুলা আমার ভিতর থাকে। এইটা একটা বিশ্বনিখিলের মতো।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার মুখ্য চরিত্ররা প্রায় সময়ই আপনার কল্পিত দুনিয়ার বর্ণনাগুলির ভিতর আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখায় – স্বপ্নের ভেতরে স্বাপ্নিক।

মুরাকামি: প্লিজ এইটারে এইভাবে ভাবেন: আমার একটা যমজ ভাই আছে। আর যখন আমার বয়স দুইবছর, আমাদের একজন – অন্যজন – কিডন্যাপড হইছিল। তারে অনেকদূর নিয়া যাওয়া হইছিল আর তখন থিকা আমরা একজন আরেকজনরে দেখি নাই। আমি ভাবি আমার মুখ্য চরিত্রটা হইলো সে। আমার একটা অংশ, কিন্তু আমি না, আর অনেকদিন ধইরা আমরা একজন আরেকজনরে দেখি না। এইটা অনেকটা আমার বিকল্প একটা রূপ। ডিএনএ-এর অর্থে, আমরা একই, কিন্তু আমাদের পরিবেশ ভিন্ন। সুতরাং আমাদের চিন্তাগুলি ভিন্ন হবে। প্রত্যেকবার যখন আমি একটা বই লিখি আমি বিভিন্ন জুতায় আমার পা রাখি। কারণ অনেকসময় আমি আমার হওয়া নিয়া ক্লান্ত। এইভাবে আমি পালাইতে পারি। এইটা একটা ফ্যাণ্টাসি। আপনার যদি একটা ফ্যাণ্টাসি না থাকে, তাইলে একটা বই লিখার কি মানে?

ইন্টারভিউয়ার: ভয়ঙ্কর আজবদেশ  নিয়া আরেকটা প্রশ্ন। এর একটা নির্দিষ্ট সামঞ্জস্য আছে, একটা নির্দিষ্ট বিধিমত যোগ্যতা এবং একটা সংকল্পের অনুভূতি যেইটা পরবর্তী বইগুলা যেমন উদভ্রান্ত  পাখির বৃত্তান্ত এর চাইতে আলাদা। উপন্যাসের গঠনের কাজ ও গুরুত্ব সম্পর্কে আপনার ধারণাগুলি কি একটা সময়ে চেইঞ্জ হইছিল?

মুরাকামি: হ্যাঁ। আমার প্রথম বই দুইটা জাপানের বাইরে ছাপানো হয় নাই; আমি চাই নাই তাদেরকে হইতে দিতে। তারা অপরিণত কাজ, আমি মনে করি – খুব ছোট বইগুলা। তারা দুর্বল, যদি এইটাই ঠিক শব্দ হয়।

ইন্টারভিউয়ার: তাদের দুর্বলতাগুলা কি?

মুরাকামি: আমার প্রথম বই দুইটা আমি যা করার চেষ্টা করছিলাম তা হইলো প্রথাগত জাপানি উপন্যাসকে বিনির্মাণ করার জন্য। বিনির্মাণ দিয়া, আমি বোঝাইতেছি ভিতরের সবকিছুরে বাদ দেয়া, শুধুমাত্র কাঠামোটাকে রাখার। তারপর এই কাঠামোটাকে সজীব এবং আসল জিনিস দিয়া ভর্তি করতে হইতো। কিভাবে সফলভাবে এইটা করা যায় ১৯৮২তে আমার তৃতীয় বই একটা বন্য ভেড়ার খোঁজে-এর পর আমি সেইটা আবিষ্কার করতে পারলাম।

বইয়ের কাভার: একটা বন্য ভেড়ার খোঁজে

বইয়ের কাভার: একটা বন্য ভেড়ার খোঁজে

প্রথম বই দুইটা এই প্রক্রিয়াটা জানার ক্ষেত্রে সাহায্য করছিলো – এর বেশি কিছু না। আমি মনে করি একটা বন্য ভেড়ার খোঁজে আমার স্টাইলের সত্যিকারের শুরু।

এর পর থিকা, আমার বইগুলা আরো বড় হইতে; তাদের গঠনগুলা আরো জটিল হইতে শুরু করে। প্রতিটা সময় যখন আমি একটা নতুন বই লিখি, আমি আগের গঠনটারে ধ্বংস করতে পছন্দ করি, একটা নতুন জিনিস তৈরি করার জন্য। আর আমি সবসময় নতুন বইয়ের একটা নতুন থিম রাখতে চাই, অথবা একটা নতুন বাঁধা, অথবা একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। আমি সবসময় কাঠামোটা সম্পর্কে সচেতন। আমি যদি কাঠামোটা পরিবর্তন করি, আমাকে আমার গদ্যের স্টাইলটা পরিবর্তন করতে হয় এবং একইভাবে আমার চরিত্রগুলারেও। আমি যদি প্রতিটা সময় একই কাজ করি, আমি ক্লান্ত হয়া যাবো। আমি বিরক্ত হয়া যাবো।

ইন্টারভিউয়ার: আর আপনার লেখালেখির কিছু উপাদানগুলি এখন পর্যন্ত পরিবর্তিত হইছে যে অন্যেরা তা মেনে নিছে। আপনার উপন্যাসগুলা সবসময় প্রথম পুরুষে বলা হয়। তাদের প্রত্যেকটাতে, একজন মানুষ মহিলাদের সাথে একটা বিভিন্ন রকমের মুখ্যত যৌন সম্পর্কের মধ্যে ঘুরে; এই মহিলাদের মধ্যে যে সাধারণত প্যাসিভ, যে মনে হয় তার ভয় এবং ফ্যাণ্টাসির প্রকাশ হিসাবে কাজ করে।

মুরাকামি: আমার বইয়ে এবং গল্পগুলাতে, নারীরা হইলো মাধ্যম; একটা ভাবে; এই মাধ্যমের কাজ হইলো তার মধ্যে দিয়া কোন কিছু ঘটানো। এইটা একটা পদ্ধতি যার অভিজ্ঞতা নেয়া। নায়ক সবসময় এই মাধ্যম দিয়া একটা জায়গাতে যান এবং যে দৃশ্যগুলা তিনি দেখেন সেইটা তার (নারী) দেখানোর ভিতর দিয়াই দেখেন।

ইন্টারভিউয়ার: মাধ্যমগুলি কি ভিক্টোরিয়ান সেন্সে? আধ্যাত্মিক মাধ্যমগুলি?

মুরাকামি: আমি মনে করি যৌনক্রিয়া হইলো… এক ধরণের আত্মার-অঙ্গীকার। যদি আপনার যৌনক্রিয়া ভালো হয়, আপনার ক্ষতগুলি নিরাময় হবে, আপনার কল্পনা সতেজ হবে। এইটা উচ্চতর এলাকায়, একটা অপেক্ষাকৃত ভালো জায়গায় যাওয়ার একটা পথ। এই ভাবে, আমার গল্পগুলাতে, নারীরা মাধ্যম –  আসন্ন দুনিয়ার অগ্রদূত। এই কারণে তারা আমার নায়কের কাছে আসে; সে তাদের কাছে যায় না।

ইন্টারভিউয়ার: এইখানে মনে হয় দুই ধরণের নারী আছে আপনার উপন্যাসগুলিতে; যার সাথে আপনার নায়কের মৌলিকভাবে সিরিয়াস সম্পর্ক থাকে – প্রায়ই এই নারী হারাইয়া যায় এবং যার স্মৃতি তারে তাড়ায় – আর অন্য ধরণের নারী হইলো, যে পরে আসে আর তারে খুঁজতে সাহায্য করে, অথবা উল্টাটা করে – ভুলতে বলে। দ্বিতীয় ধরণের নারীরা স্পষ্টবাদী, খামখেয়ালি, আর যৌনতার ক্ষেত্রে অকপট ধরণের হন, আর নায়ক তার সাথে অনেক উষ্ণভাবে এবং অনেক কৌতুকপূর্ণভাবে মিথস্ক্রিয়া করতে পারেন হারিয়ে যাওয়া নারীর সাথে তার সম্পর্কের তুলনায়, যার সাথে সে কখনোই সংযুক্ত ছিল না। এই দুইটা আদর্শরূপ কোন উদ্দেশ্য পূরণ করে?

মুরাকামি: আমার মূল চরিত্র প্রায় সবসময়ই বাস্তব দুনিয়া এবং আধ্যাত্মিক দুনিয়ার মধ্যে ধরা পড়ে। আধ্যাত্মিক দুনিয়াতে, নারী – অথবা পুরুষেরা – শান্ত, বুদ্ধিমান, নম্র। জ্ঞানী। বাস্তব দুনিয়াতে, যেমনটা আপনি বললেন, নারীরা খুবই সক্রিয়, মজার, পজিটিভ। তাদের একটা হিউমার সেন্স আছে। মুখ্য চরিত্রের মন এই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুনিয়ার মধ্যে ভাগ হয়ে আছে আর সে পছন্দ করতে পারে না কোনটা নিবে। আমি মনে করি আমার কাজের এইটা একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভয়ঙ্কর আজবদেশ  এ এইটা খুবই দেখা যায়, যেইখানে তার মন শারীরিকভাবে বিভক্ত। নওজেরিয়ান বন’য়েও দুইজন মেয়ে আছে আর সে তাদের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

ইন্টারভিউয়ার: আমার সমবেদনা মনে হয় সবসময় হাস্যরস বোধসম্পন্ন মেয়েটার প্রতি। যেইখানে হাস্যরস প্রাথমিক মুদ্রা সেই সম্পর্কের মধ্যে পাঠকদের প্রবেশাধিকারটা সহজ; একটা আন্তরিক প্রেমের সম্পর্কের বর্ণনা দিয়া পাঠকরে মজানোটা কঠিন। নওজেরিয়ান বন-এ আমি সারাটাক্ষণ মিদরি’র জন্য গাঢ় ছিলাম।[youtube id=”tqiYXmpb41I”]

মুরাকামি: আমার মনে হয় বেশিরভাগ পাঠকই একইরকম বলবে। বেশিরভাগই মিদরি’রে পছন্দ করবে। আর মুখ্য চরিত্রটা, অবশ্যই শেষে তারে পছন্দ করে। কিন্তু তার কিছু অংশ সবসময় অন্য দুনিয়ায় আছে আর এইটা সে ফেলে দিতে পারে না। এইটা তার অংশ, একটা জরুরি অংশ। সব মানুষেরই তাদের মনে একটা অসুস্থতা দিয়া শুরু হয়। ওই জায়গাটা তাদের অংশ। আমাদের মনের একটা অংশ সুস্থ আর আরেকটা অংশ অপ্রকৃতিস্থ। আমরা দুইটা অংশের মধ্যে বচসা করি; এইটা আমার বিশ্বাস। যখন আমি লিখি তখন আমি আমার মনের অপ্রকৃতিস্থ অংশটা বিশেষভাবে দেখতে পাই – অপ্রকৃতিস্থটা ঠিক শব্দ না। অস্বাভাবিক, অবাস্তব। আমারে বাস্তব দুনিয়াতে ফেরত যাইতে হয়, অবশ্যই, আর সুস্থ অংশটারে নিতে হয়। কিন্তু যদি অপ্রকৃতিস্থ অংশটা, অসুস্থ অংশটা না থাকে, আমি এইখানে থাকতাম না। অন্য কথায়, মুখ্য চরিত্রটা দুইজন নারী’র আশ্রয় পায়; তাদের যে কোন একজনের ছাড়া, সে আগাইতে পারে না। এই ভাবে, আমি যা করতে চাই নওজেরিয়ান বন তার খুবই সরাসরি উদাহারণ।

ইন্টারভিউয়ার: এই আলোকে নওজেরিয়ান বন-এর রিওকো চরিত্রটা ইন্টারেস্টিং। আমি ঠিক জানি না তারে কোথায় রাখা যায়; তার মনে হয় দুই দুনিয়াতেই একটা পা আছে।

মুরাকামি: সে আধা-সুস্থ, আধা-অপ্রকৃতিস্থ মনের। এইটা একটা গ্রীক মুখোশ: আপনি যদি তারে এক দিক থিকা দেখেন, শে একটা ট্রাজিক চরিত্র; আপনি যদি তারে অন্য দিক থিকা দেখেন, শে কমিক। এই ভাবে, শে খুবই প্রতীকী। এই চরিত্রটা আমি খুবই পছন্দ করি। আমি যখন তাকে লিখি, রিওকো-সেন’রে, আমি খুব আনন্দিত ছিলাম।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি আপনার কমিক চরিত্রগুলির প্রতি বেশি স্নেহ অনুভব করেন – আপনার  মিদরি এবং মে কাসারাসে প্রতি – আপনার নাওকোসের চাইতে?

মুরাকামি: আমি কমিক সংলাপগুলা লিখতে পছন্দ করি; এইটা মজার। কিন্তু আমার সব চরিত্রগুলা যদি সব কমিক হইতো সেইটা বিরক্তিকর হইতো। এই কমিক চরিত্রগুলা আমার মনের সুস্থিতি; হাস্যরসের অনুভূতি খুবই স্থির একটা জিনিস। কৌতুকপূর্ণ হওয়ার জন্য আপনাকে ঠান্ডা হইতে হবে। যখন আপনি সিরিয়াস, আপনি অস্থির হয়ে পড়তে পারেন; সিরিয়াসনেস নিয়া এইটা একটা সমস্যা। কিন্তু যখন আপনি কৌতুকপূর্ণ, আপনি স্থির থাকেন। কিন্তু আপনি হাসিমুখে যুদ্ধ করতে পারেন না।

 

ইন্টারভিউয়ার: কয়েকজন উপন্যাসিক তাদের অবসেশনগুলি এতোটা জবরদস্তিমূলকভাবে বারবার লিখছেন, আমার মনে হয়, যেমনটা আপনিও। ভয়ঙ্কর আজবদেশ, নাচ নাচ নাচ, উদভ্রান্ত পাখির বৃত্তান্ত এবং স্পুটনিক সুইটহার্ট অনেকটাই একটা থিমেরই ভিন্নতা হিসাবে পঠিত হওয়ার দাবি করে: একজন মানুষ পরিত্যক্ত হইছে, অথবা অন্যভাবে হারাইয়া ফেলছে, তার বাসনার বস্তু, আর তারে ভুলতে না-পারার অক্ষমতা নিয়া যায় একটা সমান্তরাল দুনিয়াতে যেইটা মনে হয় সে যা হারাইছে তা ফিরা পাওয়ার সম্ভাবনা দিতে পারে, একটা সম্ভাবনা যে জীবন সে (এবং পাঠক) জানে, তা কখনোই দিতে পারতো না। আপনি কি এইরকম বৈশিষ্ট্যকরণের সাথে একমত হবেন?

মুরাকামি: হ্যাঁ।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার ফিকশনের এই অবসেশনটা কতোটা কেন্দ্রে আছে?

মুরাকামি: আমি জানি না কেন আমি এইসব জিনিস লিখতে থাকি। জন আরভিং-এর কাজে আমি পাইছি, তার প্রত্যেকটা বইয়ে, কোন লোক থাকে যার শরীরের একটা অংশ নাই। আমি জানি না তিনি কেন এই হারানো অংশগুলা নিয়া লিখতে থাকেন; হইতে পারে তিনি নিজেরে জানেন না। ব্যাপারটা আমার জন্য একইরকম। আমার নায়ক সবসময় কিছু পায় না, আর সে হারানো জিনিসটা খুঁজতে থাকে। এইটা হলি গ্রেইল  অথবা ফিলিপ মার্লো’র মতো।

ইন্টারভিউয়ার: কোনকিছু না হারাইলে ত আপনি গোয়েন্দা হইতে পারেন না।

মুরাকামি: ঠিক। যখন আমার নায়ক কোনকিছু হারায়, তারে সেইটা খুঁজতে হবে। সে অডিসি’র অডিসিয়াসের মতো। তার খোঁজের মধ্যে সে অনেক অদ্ভুত জিনিসের অভিজ্ঞতা নেয়…

ইন্টারভিউয়ার: বাড়ি ফিরার চেষ্টার সময়ে।

মুরাকামি: এই অভিজ্ঞতাগুলার মধ্যে তারে বাঁইচা থাকতে হয়, আর শেষে সে যা খুঁজতেছিল তা খুঁজে পায়। কিন্তু সে নিশ্চিত না এইটা একই জিনিস কিনা। আমার মনে হয় আমার বইগুলার মূল সুর। এই জিনিসগুলা কই থিকা আসে? এইটা আমার সাথে যায়। আমার গল্পগুলার এইটা একটা চালানোর শক্তি: হারানো এবং খোঁজ করা এবং পাওয়া। আর নিরাশ হওয়া, দুনিয়া সম্পর্কে এক ধরণের নতুন সচেতনতা।

ইন্টারভিউয়ার: একটা চলে-যাওয়ার রীতি’র  মতো নিরাশা?

মুরাকামি: এইটা ঠিক। অভিজ্ঞতা নিজেই হইলো অর্থ। অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়া নায়ক পরিবর্তিত হয় – এইটাই মূল জিনিস। সে কি পাইলো তা না, বরং কিভাবে সে পরিবর্তিত হইলো।

ইন্টারভিউয়ার: আমি আপনার নিজের বইগুলার অনুবাদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাই। যেহেতু আপনি নিজে একজন অনুবাদক, আপনি নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যেকার ঝামেলাগুলা সম্পর্কে সচেতন আছেন। আপনি কিভাবে আপনার অনুবাদকদেরকে বাছাই করেন?

মুরাকামি: আমার তিনজন আছেন – আলফ্রেড ব্রানবাম, ফিলিপ গাব্রিয়েল, জে রোবিন – আর নিয়মটা হইলো “আগে আসলে আগে পাইবেন।” আমরা বন্ধু-মানুষ, সুতরাং উনারা খুবই সৎ। উনারা আমার বই পড়েন আর উনাদের মধ্যে কেউ একজন ভাবেন যে, এইটা গ্রেট! আমি এইটা করতে পছন্দ করবো। সুতরাং সে এইটা নেয়। আমি নিজে যেহেতু অনুবাদক, আমি জানি যে একটা ভালো অনুবাদের মূল অংশটা হইলো উদ্যমী হওয়া। যদি কেউ একজন ভালো অনুবাদক হন কিন্তু একটা বই খুব একটা পছন্দ না করেন, তাইলে এইটা গল্পের শেষ। অনুবাদ একটা খুবই কঠিন কাজ, আর এইটা সময় নেয়।

ইন্টারভিউয়ার: অনুবাদকরা এইটা নিয়া নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করেন না?

মুরাকামি: তেমন একটা না। উনাদের নিজেদের নিজস্ব প্রেফারেন্স আছে; উনারা আলাদা লোক, বিভিন্ন চরিত্রের। সাগরতীরে কাফকা’র ক্ষেত্রে, ফিল এইটা পছন্দ করছিলো এবং নিছিলো। জে এতোটা উদ্যমী আছিলো না। ফিল খুবই বিনয়ী, ভদ্র মানুষ, আর জে খুবই যথাযথ, সর্তক অনুবাদক। সে অনেকটা শক্ত চরিত্রের মতোন। আলফ্রেড বোহেমিয়ান ধরণের; আমি জানি না এখন সে কই আছে। সে মায়ানমারের একজন মহিলারে বিয়া করছে, আর শে একজন অ্যাক্টিভিস্ট। অনেক সময় সরকার তাদেরকে বন্দী করে। সে এইরকমের লোক। সে অনেকটা মুক্ত অনুবাদক; সে অনেকসময় গদ্যরে চেইঞ্জ করে। এইটা তাঁর স্টাইল।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি আপনার অনুবাদকদের সাথে কেমনে সহযোগিতা করেন? আসলে, প্রক্রিয়াটা কিভাবে কাজ করে?

মুরাকামি: উনারা আমারে অনেককিছু্ জিগান যখন উনারা অনুবাদ করেন, আর যখন প্রথম খসড়াটা শেষ হয়, আমি সেইটা পড়ি। মাঝে-মধ্যে আমি উনাদেরকে কিছু পরামর্শ দেই। আমার বইগুলার ইংরেজী অনুবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ; ছোট দেশগুলা, যেমন ক্রোশিয়া অথবা স্লোভেনিয়া, ইংরেজী থিকা অনুবাদ করে, জাপানিজ থিকা না। সুতরাং এইটা অবশ্যই খুব যথার্থ হওয়া লাগে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশে, উনারা মূল জাপানিজ টেক্সট থিকাই অনুবাদ করেন।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি নিজে মনে হয় বাস্তববাদীদের অনুবাদ করতে পছন্দ করেন – কার্ভার, ফিটজেরাল্ড, আরভিং। এইটা কি পাঠক হিসাবে আপনার টেস্টরে প্রতিফলন করে, অথবা এইটা কি লেখার ক্ষেত্রে খুব অন্যরকম একটা কিছু দিয়া আপনারে আরো নিবিষ্ট হইতে সাহায্য করে?

মুরাকামি: আমি মানুষজনের সেইসব বইগুলাই অনুবাদ করছি যেইখান থিকা আমি কিছু শিখতে পারছি। এইটাই মূল ব্যাপার। আমি বাস্তববাদী লেখকদের কাছ থিকা অনেককিছু শিখছি। অনুবাদ করার জন্য উনাদের কাজগুলা খুব কাছ থিকা দেখতে হয়, আর আমি দেখতে পারি তাদের গোপনীয়তাগুলি। যদি আমারে উত্তর-আধুনিক লেখকদের যেমন ডন ডেলিলো, জন বার্থ অথবা টমাস পেনচোন-এর   লেখা অনুবাদ করা লাগতো, তাইলে ওইখানে একটা সংঘর্ষ হইতো – আমার ক্ষিপ্ততার সাথে উনাদের ক্ষিপ্ততার। আমি উনাদের কাজের প্রতি মুগ্ধ, অবশ্যই; কিন্তু যখন আমি অনুবাদ করি আমি বাস্তববাদীদের বাইছা নিই।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার লেখারে প্রায়ই বলা হয় আমেরিকান পাঠকদের জন্য সবচে অ্যাকসিসেবল হিসাবে, এই পয়েণ্টে যে বর্তমান সময়ের জাপানিজ লেখকদের মধ্যে আপনারে সবচে বেশি পশ্চিমা হিসাবে দেখা হয়। আমি ভাবতেছিলাম জাপানি কালচারের সাথে  আপনার সর্ম্পকরে কিভাবে দেখেন?

মুরাকামি: আমি বিদেশি দেশে বিদেশিদের নিয়া লিখতে চাই না; আমি আমাদের নিয়া লিখতে চাই। আমি জাপান নিয়া লিখতে চাই, এইখানে আমাদের জীবন নিয়া। এইটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ বলে যে আমার স্টাইল পশ্চিমাদের কাছে অ্যাকসিসেবল; এইটা সত্যি হইতে পারে, কিন্তু আমার গল্পগুলা আমার নিজস্ব, তারা পশ্চিমাকরণ না।

ইন্টারভিউয়ার: আর অনেক রেফারেন্স আছে যেইটা আমেরিকানদের কাছে অনেকবেশি পশ্চিমা মনে হয় – যেমন ধরেন, বিটেলস – জাপানি কালচারাল ল্যান্ডস্কেপের একটা আবশ্যিক অংশও।

মুরাকামি: যখন আমি লিখি যে মানুষজন ম্যকাডোনাল্ডের একটা হ্যামবার্গার খাইতেছে, আমেরিকানরা অবাক হয়, এই চরিত্রটা তফু  না খাইয়া হ্যামবার্গার কেন খাইতেছে? কিন্তু হ্যামবার্গার খাওয়াটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক জিনিস, প্রতিদিনকার ব্যাপার।

তফু অ্যান্ড হ্যামবার্গার

তফু অ্যান্ড হ্যামবার্গার

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি বলতে চান যে আপনার উপন্যাসে সমকালীন জাপানি শহুরে জীবন যথাযথভাবে আছে?

মুরাকামি: লোকজন যেমনে কাজ করে, যেমনে লোকজন কথা কয়, যেমনে লোকজন প্রতিক্রিয়া দেখায়, যেমনে লোকজন চিন্তা করে, এইটা খুবই জাপানি। কোন জাপানি পাঠক – মোটামুটি কোন জাপানি পাঠকই – অভিযোগ করেন নাই যে আমার গল্পগুলা আমাদের জীবনের চাইতে ভিন্ন কিছু। আমি জাপানিদের সর্ম্পকে লেখার চেষ্টা করি। আমি লেখার চেষ্টা করি আমরা কারা, আমরা কই যাইতেছি, কেন আমরা এইখানে আছি। এইটা হইলো ভাবনাটা, আমি ধারণা করি।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি আরেক জায়গায় বলছেন, উদভ্রান্ত পাখির বৃত্তান্তের রেফারেন্সে, যে আপনি আপনার বাপের বিষয়ে আগ্রহী, তার কি কইছিল এবং তাঁর পুরা জেনারেশনের; কিন্তু এইখানে উপন্যাসে কোন বাপের ছবি নাই, অথবা আপনার ফিকশনের কোন জায়গাতেই। বইটার ভিতরে কোন জায়গাটায় এই আগ্রহটা স্পষ্ট?

মুরাকামি: আমার সবগুলা উপন্যাসই মোটামুটি প্রথম ব্যক্তিতে লেখা। আমার নায়কের মূল কাজ হইলো তাঁর চারপাশে কি ঘটতেছে সেইটারে দেখা। সে দেখে তারে যা অবশ্যই দেখতে হবে, অথবা তার যা দেখার কথা, আসল সময়টাতে।

আমি যদি এইরকমটা বলি, সে অনেকটা দ্য গ্রেট গেটসবি’র নিক কেরাওয়ে’র মতো। সে নিরপেক্ষ, আর তাঁর নিরপেক্ষতা ধইরা রাখার জন্য, সে যে কোন ধরণের রক্তের সর্ম্পক, একটা খাড়ারকমের পারিবারিক ব্যবস্থা থিকা সে মুক্ত।

এইটা হয়তো আমার প্রতিউত্তর হিসাবে নেয়া যাইতে পারে “পরিবার” বিষয়ে যেইটা ট্রাডিশন্যাল জাপানি সাহিত্যে একটা অত্যাধিক বড় ভূমিকা রাখছে। আমি আমার প্রধান চরিত্ররে আঁকতে করতে চাই একজন স্বাধীন, পুরাপুরি ব্যক্তি হিসাবে। একজন শহুরে বাসিন্দা হিসাবে তাঁর যে অবস্থান তারে এইটা নিয়া কিছু করতে হবে। সে এমন একজন মানুষ যে স্বাধীনতা এবং একাকীত্ব’রে বেছে নিছে ঘনিষ্ঠতা এবং ব্যক্তিগত যুক্ততার চাইতে।

ইন্টারভিউয়ার: যখন আমি আপনার “বিশাল ব্যাঙ টোকিওরে বাঁচাইলো” পড়তেছিলাম আপনার সাম্প্রতিক গল্পের সংগ্রহতে, যেইখানে একটা বিশাল সুড়ঙ্গ পোকা টোকিও’র নিচে বাস করে, যে ধ্বংসের হুমকি দেয়,

আমি মাঙ্গা’র কথা চিন্তা না কইরা থাকতে পারি নাই, অথবা আগেকার-রকমের জাপানি দৈত্যের ছবির কথা। তারপর সেইখানে আরো প্রচলিত মিথ আছে যে বিশাল ক্যাটফিশ টোকিও’র সমুদ্রপারে ঘুমাইয়া আছে, লৌকিক কথামতে, প্রতি পঞ্চাশ বছরে একবার জাইগা উঠে এবং ভূমিকম্প ঘটায়। এই সংশ্লিষ্টতাগুলা কি আপনার কাছে কোন অর্থ তৈরি করে? উদাহারণ হিসাবে, মাঙ্গা’র কথা ধরেন? আপনি কি আপনার কাজের সাথে কোন সর্ম্পক দেখতে পান?

মুরাকামি: না, আমি এইরকমটা মনে করি না। আমি মাঙ্গা কমিকসের খুব একটা বড় ভক্ত না। আমি এইসব জিনিস দিয়া প্রভাবিত হই নাই।

ইন্টারভিউয়ার: জাপানি লোককাহিনি বিষয়ে?

মুরাকামি: যখন আমি বাচ্চা ছিলাম, আমারে অনেক জাপানি লোককাহিনি এবং পুরানা গল্প বলা হইছিল। আপনি যখন বড় হইতে থাকেন যখন এই গল্পগুলা বেশ ক্রিটিক্যাল। যেমন ধরেন, ওই বিশাল-ব্যাঙের ছবি, হয়তো গল্পগুলার ছাপ থিকা আসছে। আপনার আমেরিকান লোককাহিনি আছে, জার্মানদের তাঁদেরটা আছে, রাশানদের তাঁদেরটা আছে। কিন্তু সেইখানে একটা পারস্পরিক রির্জার্ভার আছে যা আমরা নিতে পারি: দ্য লিটল প্রিন্স, ম্যাকডোনাল্ড’স, অথবা বিটেলস।

ইন্টারভিউয়ার: বৈশ্বিক পপ-কালচারের রির্জার্ভার।

মুরাকামি: বর্তমান সময়ে বই লেখার ক্ষেত্রে ন্যারেটিভস খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি তত্ত্বগুলা নিয়া খুব একটা ভাবি না। আমি শব্দভান্ডার নিয়া চিন্তা করি না। গুরুত্বপূর্ণ হইলো যে ন্যারেটিভটা ভালো কি না। আমাদের নতুন ধরণের লোককাহিনি আছে, এই ইন্টারনেট দুনিয়ার কারণে। এইটা এক ধরণের মেটাফর। আমি ঐ সিনেমাটা দেখছি, দ্য ম্যাট্রিক্স – এইটা বর্তমান মনের একটা লোককাহিনি। কিন্তু এইখানে সবাই কইলো যে এইটা বোরিং।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি হাইয়ো মিয়াজাকি’র অ্যানাইম সিনেমা স্পিরিটেড এওয়ে’টা দেখছেন? আমার মনে হইছে আপনার বইগুলার সাথে কিছু মিল আছে, এইটাতে তিনি লোককাহিনির জিনিসগুলারে বর্তমানের পথগুলাতে পরিবর্তিত করছেন। আপনি কি উনার সিনেমা পছন্দ করেন?

মুরাকামি: না। আমি অ্যানিমেটেড সিনেমা পছন্দ করি না। আমি ঐ সিনেমাটার একটা ছোট অংশ দেখছিলাম, কিন্তু এইটা আমার ষ্টাইল না। আমি এইরকমের জিনিসে আগ্রহী না। যখন আমি বইগুলা লিখি, আমি একটা ইমেজ পাই, আর সেই ইমেজটা খুবই শক্তিশালী।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি প্রায়ই সিনেমা দেখতে যান?

মুরাকামি: ও, হ্যাঁ। সবসময়ই। আপনি পছন্দের পরিচালক হইলেন ফিনল্যান্ডের – আকি কারোসমাকি। উনার প্রতিটা সিনেমা আমার ভালো লাগছে। উনি সাধারণের অনেক উপরে।

Aki Kaurismäki

Aki Kaurismäki

ইন্টারভিউয়ার: আর মজার।

মুরাকামি: খুবই মজার।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি আগে বলতেছিলেন যে হাস্যরস স্থিরতা আনে। এইটা কি অন্যান্যভাবে কাজে দেয়?

মুরাকামি: আমি চাই আমার পাঠকরা মাঝে-মধ্যে হাসুক। জাপানে অনেক পাঠকেরা বই পড়েন ট্রেনে যাওয়া-আসার সময়। গড়পরতা চাকরিজীবীরা ট্রেনে দুই ঘণ্টা যাওয়া আসাতে কাটান এবং তিনি এই সময়টা বই পইড়া কাটান। এই কারণে আমার বড় বইগুলা দুইটা ভলিউমে ছাপা হয়: একটাতে হইলে অনেক ভারী হবে তারা। কেউ কেউ আমাকে চিঠি লেখেন, অভিযোগ করেন যে ট্রেনে আমার বই পড়তে গিয়া তারা হাইসা উঠেন! এইটা উনাদের জন্য খুবই অস্বস্তির। এই চিঠিগুলা আমি সবচে বেশি পছন্দ করি। আমি জানি তারা হাসতেছেন, আমার বই পইড়া; এইটা ভালো। আমি প্রতি দশ পৃষ্টায় লোকজনরে হাসাইতে চাই।

ইন্টারভিউয়ার: এইটা কি আপনার গোপন ফর্মূলা?

মুরাকামি: আমি হিসাব করি না। কিন্তু আমি যদি এইটা ম্যানেজ করতে পারি, এইটা ভালো হয়। যখন আমি কলেজ-ছাত্র ছিলাম তখন কার্ট ভেনগার্ট এবং রিচার্ড ব্রটিগান পড়তে পছন্দ করতাম। উনাদের একটা সেন্স অফ হিউমার ছিল, আর একই সময়ে তাঁরা যা লিখতেছিলেন সেইটা ছিল সিরিয়াস। আমি এই ধরণের বইগুলা পছন্দ করি। যখন আমি প্রথমবার ভনেগার্ট আর ব্রাউটিগান পড়ি তখন আমি ধাক্কা খাইছিলাম যে এই ধরণের বই আছে! এইটা ছিল নতুন দুনিয়া আবিষ্কার করার মতো।

ইন্টারভিউয়ার: কিন্তু আপনি কি এই ধারাতে কিছু লেখার জন্য উত্তেজিত হন নাই?

মুরাকামি: আমি মনে করি এই দুনিয়াটা নিজেই একটা কমেডি, এই শহুরে জীবন। টিভিতে পঞ্চাশটা চ্যানেল, সরকারে ষ্টুপিড লোকগুলা – এইটা একটা কমেডি। সুতরাং আমি সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু যত কঠিন চেষ্টাই আমি করি, আমি ততই কমিক্যাল হইতে থাকি। ১৯৬৮ এবং ১৯৬৯ এ যখন আমার বয়স উনিশ বছর, আমরা মারাত্মক রকমের সিরিয়াস ছিলাম। এইটা একটা সিরিয়াস সময় ছিল এবং মানুষজন ছিল খুবই আদর্শবাদী।

ইন্টারভিউয়ার: এইটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে নওজেরিয়ান বন’টা ওই সময়ের, সম্ভবত আপনার বইগুলার মধ্যে সবচে কম কমিক।

মুরাকামি: এই সেন্সে, আমাদের জেনারেশন হইতেছে একটা সিরিয়াস জেনারেশন। কিন্তু এখনকার সময়ে দেখতে গেলে, এইটা খুবই কমিক্যাল! এইটা ছিল একটা অনিশ্চিত সময়। সুতরাং আমরা – আমার জেনারেশন – এইটাতে অভ্যস্থ, আমার মনে হয়।

ইন্টারভিউয়ার: যাদু বাস্তবতার একটা অপরিহার্য নিয়ম হইলো, গল্পের বিচিত্র উপাদানগুলাতে মনোযোগ না দেয়া। আপনি, যেকোনভাবে, এই নিয়মটারে মানেন নাই: আপনার চরিত্ররা গল্পের ধারার অদ্ভুত উপাদানগুলা নিয়া প্রায়ই মন্তব্য করে, এমনকি পাঠকদেরকে খেয়াল করার জন্য বলে। এইটা কি উদ্দেশ্য সাধন করে? কেন?

মুরাকামি: এইটা একটা খুবই ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। আমি এইটা নিয়া চিন্তা করতে চাই… আচ্ছা, আমি মনে করি আমার সৎ অবজারভেশন হইলো দুনিয়াটা কী অদ্ভুত। আমার মূলচরিত্রটা সেই অভিজ্ঞতাটা পায় যেইটা আমি লেখার সময় পাই, সেইটা একই অভিজ্ঞতা যা আমার পাঠকরা পায় যখন তারা পড়ে। কাফকা বা গার্সিয়া মার্কেজ, তাঁরা যা লিখেন সেইটা সাহিত্য, ক্ল্যাসিক্যাল সেন্সে। আমার গল্পগুলা অনেকবেশি আসল, অনেকবেশি সমসমায়িক, অনেকবেশি উত্তরাধুনিক অভিজ্ঞতা। এইটারে একটা সিনেমার সেটের মতো ভাবেন, যেইখানে সবকিছু – সব সাজ-সরঞ্জাম, দেয়ালের বইগুলা, তাকগুলা – নকল। দেয়ালগুলা কাগজের তৈরি। ক্ল্যাসিক্যাল ধরণের যাদুবাস্তবতায় দেয়ালগুলা রিয়েল। আমার ফিকশনে যদি কোনকিছু নকল হয়, আমি তারে নকল বলতে পছন্দ করি। আমি এমন ভাব করতে চাই না যেন এইটা রিয়েল।

ইন্টারভিউয়ার: সিনেমার সেটের মেটাফরটারে যদি কনটিনিউ করি, এইটা কি ক্যামেরাটারে পিছনের দিকে নিয়া আসা, ষ্টুডিও’র কাজগুলা দেখানোর জন্য?

মুরাকামি: আমি পাঠকদেরকে বোঝাইতে চাই না যে এইটা একটা আসল জিনিস; এইটা যা, আমি সেইটাই দেখাইতে চাই। একভাবে বলতে গেলে, আমি এই পাঠকদেরকে বলতে চাই যে এইটা খালি একটা গল্প – এইটা নকল। কিন্তু যখন আপনি নকলটারে আসল বইলা অভিজ্ঞতা নেন, এইটা আসল হইতে পারে। এইটা ব্যাখ্যা করাটা সহজ না।

ঊনিশ এবং বিশ শতকের প্রথমদিকে, লেখকরা আসল জিনিস দিতেন, ওইটাই ছিল উনাদের কাজ। যুদ্ধ এবং শান্তি’তে টলস্টয় যুদ্ধক্ষেত্ররে এতোটা কাছ থিকা বর্ণনা করছিলেন যে পাঠকরা বিশ্বাস করতো যে এইটা আসল। কিন্তু আমি তা করি নাই। আমি ভাবতে থাকি না যে এইটা একটা আসল জিনিস। আমরা একটা নকল দুনিয়ায় থাকি; আমরা সন্ধ্যার নকল সংবাদ শুনি। আমরা একটা নকল যুদ্ধে লড়াই করি। আমাদের সরকার নকল। কিন্তু আমরা নকল দুনিয়াতে রিয়ালিটি খুঁজে পাই। সুতরাং আমাদের গল্পগুলা একই; আমরা নকল দৃশ্যগুলার ভিতর দিয়া হেঁটে যাই, কিন্তু আমাদের জন্য, যখন আমরা হেঁটে যাই দৃশ্যগুলার ভিতর দিয়া, সেইটা আসল। পরিস্থিতিটা আসল, এইরকমভাবে যে এইটা একটা অঙ্গীকার, এইটা একটা সত্যিকারের সম্পর্ক। আমি এইটা নিয়াই লিখতে চাই।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার লেখালেখির মধ্যে, আপনি জাগতিক ডিটেইলগুলাতে বারবার ফিরা আসেন।

মুরাকামি: আমি ডিটেইল খুব পছন্দ করি। টলস্টয় পুরা বর্ণনা লিখতে চাইতেন; আমার বর্ণনাটা একটা ছোট জায়গার মধ্যে সংহত থাকে। আপনি যখন ছোট জিনিসগুলার ডিটেইলগুলা বর্ণনা করেন, আপনার ফোকাসটা কাছাকাছি থিকা আরো কাছাকাছি হইতে থাকে, আর টলস্টয়ের উল্টাটা ঘটতে থাকে – এইটা আরো অবাস্তব হইতে থাকে। সেইটাই আমি করতে চাই।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার ফোকাসটা এতো কাছে চইলা আসে যে আপনি বাস্তবতার এলাকা দিয়া বাইর হয়ে যান, আর প্রতিদিনকার এবং মামুলি জিনিসগুলা আবার অদ্ভুত হইতে থাকে?

মুরাকামি: যত কাছে যাইবেন, এইটা তত সত্যি হইতে থাকে। এইটা আমার ষ্টাইল।

ইন্টারভিউয়ার: একটু আগে আপনি বলতেছিলেন গার্সিয়া মার্কেজ এবং কাফকা হইলেন সাহিত্যের লেখক, আপনার নিজের কাজের বিপরীতে; আপনি কি নিজেরে সাহিত্যের লেখক বইলা মনে করেন না?

মুরাকামি: আমি সমসাময়িক সাহিত্যের একজন লেখক, যা খুবই ভিন্ন। কাফকা যখন লিখতেছিলেন, আপনার তখন খালি সঙ্গীত, বই আর থিয়েটার আছিলো; আর এখন আমাদের ইন্টারনেট, সিনেমা, ভাড়া করা ভিডিও, আর আরো কতকিছু আছে। আমাদের এখন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। মূল সমস্যা হইলো সময়: ঊনিশ শতকে, মানুষ – আমি অবসর শ্রেণীর কথা বলতেছি – তাদের পার করার মতো এত সময় আছিলো, সুতরাং তারা বড় বইগুলা পড়তেন। তারা অপেরাতে যাইতেন এবং তিন অথবা চার ঘণ্টা বইসা থাকতেন। কিন্তু এখন সবাই ব্যস্ত, আর এইখানে সত্যিকারের কোন অবসর শ্রেণী নাই। মবি-ডিক অথবা দস্তয়েভস্কি পড়াটা ভালো, কিন্তু এখন লোকজন এইটা পড়ার পক্ষে খুবই ব্যস্ত। সুতরাং ফিকশন আগা-গোড়া পরিবর্তিত হইছে – আমাদের লোকজনকে ঘাড় ধইরা নিয়া আসতে হয় এবং তাদেরকে টাইনা রাখতে হয়। সমসাময়িক ফিকশন লেখকরা অন্যান্য রকমের – জ্যাজ, ভিডিও গেমস, সবকিছুর টেকনিক ব্যবহার করতেছেন। আমি মনে করি এই সময়ে অন্য যে কোন কিছুর চাইতে ভিডিও গেমস ফিকশনের অনেক কাছাকাছি।

ইন্টারভিউয়ার: ভিডিও গেমস?

মুরাকামি: জ্বী। আমি নিজে ভিডিও গেমস খেলতে পছন্দ করি না, কিন্তু আমি মিলটা টের পাই। অনেকসময় যখন আমি লিখতেছি আমি ফিল করি যে আমি একটা ভিডও গেম ডিজাইন করতেছি, আর একইসাথে, একজন খেলোয়ার। আমি প্রোগ্রামটা বানাইছি, আর এখন এর মাঝখানে আছি; বাম হাতটা জানে না ডান হাতটা কি করতেছে। এইটা এক ধরণের বিচ্ছিন্নতা। একটা ভাগ-হওয়ার অনুভব।

ইন্টারভিউয়ার: এইটা কি এইভাবে বলা যায় যে, যখন আপনি লিখেন, যদিও আপনার কোন ধারণা নাই যে এরপরে কি ঘটতে যাচ্ছে, আপনার আরেকটা অংশ জানে না যে ঠিক কী আসতে যাচ্ছে?

মুরাকামি: অসচেতনভাবে, আমার মনে হয়। যখন আমি লেখার মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকি তখন আমি জানি যে লেখক কী অনুভব করতেছেন এবং আমি জানি যে পাঠক কী অনুভব করতেছেন। এইটা ভালো – এইটা আমার লেখার গতি বাড়ায়। কারণ আমি জানতে চাই এরপরে কী ঘটতে যাচ্ছে যতোটা আমার পাঠক জানতে চান। কিন্তু আপনারে মাঝেমধ্যে স্রোতটা থামাইতে হবে। এইটা যদি খুব দ্রুত ঘটতে থাকে মানুষজন ক্লান্ত আর বিরক্ত হয়া পড়বে। একটা নির্দিষ্ট পয়েণ্টে আপনার তাদেরকে থামাইতে হবে।

ইন্টারভিউয়ার: আর আপনি এইটা কিভাবে করেন?

মুরাকামি: আমি জাস্ট এইটা অনুভব করি। আমি জানি কখন থামতে হবে।

ইন্টারভিউয়ার: সাধারণভাবে, জ্যাজ এবং মিউজিক সর্ম্পকে কি ধারণা? এইটা আপনার কাজের জন্য কিভাবে উপকারী?

মুরাকামি: আমার যখন চৌদ্দ বা পনের বছর বয়স তখন থিকা আমি জ্যাজ শুনি। মিউজিকের খুব শক্তিশালী একটা প্রভাব আছে: কর্ডসগুলি, মেলোডিগুলি, তালটা, ব্লুজের অনুভূতি খুবই কাজে দেয় যখন আমি লিখি। আমি মিউজিশিয়ান হইতে চাইতাম, কিন্তু আমি যন্ত্রগুলা ভালো বাজাইতে পারি না, এইজন্য আমি লেখক হইছি। একটা বই লেখা মিউজিক বাজানোর মতো: প্রথমে আমি থিমটা বাজাই, তারপর আমি ইম্প্রুভাইজ করি, তারপর একটা শেষ টানি, এইরকম।

ইন্টারভিউয়ার: একটা ট্রাডিশন্যাল জ্যাজ পিসে শুরু’র থিমটা শেষের দিকে ফিরা আসে। আপনি কি আপনারটাতে ফিরা আসেন?

মুরাকামি: মাঝেমধ্যে। জ্যাজ আমার কাছে একটা ভ্রমণের মতো, একটা মানসিক ভ্রমণ। লেখার চাইতে আলাদা কিছু না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার পছন্দের জ্যাজ মিউজিশিয়ান কারা?

মুরাকামি: এইখানে অনেকে আছেন! আমি স্ট্যান গেটজ আর গেরি মুলিগান’রে পছন্দ করি। যখন আমি কিশোর ছিলাম, তারা ছিলেন সবচাইতে ফাটাঢাটি মিউজিশিয়ান। আমি অবশ্যই মাইলস ডেভিস আর চার্লি পার্কার’রেও পছন্দ করি। আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন কারে আমি সত্যিকারভাবে সবচে বেশি পরিবর্তিত টেবিলের ওপর রাখি, তাইলে উত্তরটা হবে মাইলসের পঞ্চাশ থিকা শুরু কইরা ষাট পর্যন্ত। মাইলস সবসময় একজন আবিষ্কারক, একজন মানুষ যিনি সব সময় তাঁর নিজের বিপ্লবরে তুলে ধরছেন – আমি উনারে মারাত্মকভাবে প্রশংসা করি।[youtube id=”PoPL7BExSQU”]

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি কলট্রেনেকে পছন্দ করেন?

মুরাকামি: অ্যাঁ, মোটামুটি। মাঝেমধ্যে উনি অনেক বেশি করেন। বেশি পীড়াপীড়ি করেন।

ইন্টারভিউয়ার: অন্য রকমের মিউজিক সম্বন্ধে কি অভিমত?

মুরাকামি: আমি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকও পছন্দ করি, বিশেষ কইরা বারোকিউ মিউজিক। আর আমার নতুন বই সাগর-পারে কাফকা’তে, মূলচরিত্র, একটা ছেলে, রেডিওহেড এবং প্রিন্স শুনে। আমি খুবই অবাক হইলাম: রেডিওহেডের কয়েকজন সদস্য আমার বইগুলা পছন্দ করে!

ইন্টারভিউয়ার: আমি অবাক হই নাই।

মুরাকামি: আরেকদিন আমি কিড অ্যা-এর জাপানিজ লাইনার নোটস পড়তেছিলাম, আর সে বলতেছিল যে সে আমার বইগুলা পছন্দ করে, আর আমি খুবই গর্বিত হইছিলাম।[youtube id=”JS8m44KjGGU”]

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি আমারে সাগর-পারে কাফকা নিয়া কিছু বলতে পারেন?

মুরাকামি: আমি এই পর্যন্ত যা লিখছি তার মধ্যে এইটা সবচে জটিল বই, এমনকি উদভ্রান্ত পাখির বৃত্তান্তের চাইতেও জটিল। এইটা ব্যাখ্যা করাটা মোটামুটি অসম্ভব।

এইখানে দুই গল্প আছে যা পাশাপাশি চলে। আমার মূল চরিত্র হইলো পনের-বছর বয়সের একটা ছেলে। তার নাম, তার প্রথম নাম হইলো কাফকা। অন্য আরেকটা গল্পে মূল চরিত্রটা হইলো ষাট-বছর-বয়সের বুড়া মানুষ। সে অশিক্ষিত; সে লিখতে বা পড়তে পারে না। সে অনেকটা নির্বোধ ধরণের, কিন্তু সে বিড়ালদের সাথে কথা বলতে পারে। ছেলেটা, কাফকা, তার বাপে তারে অভিশাপ দেয়, অডিপাস ধরণের অভিশাপ: তুই আমারে খুন করবি, তোর বাপেরে, আর তোর মায়ের সাথে ভালোবাসা করবি। সে তার বাপের কাছ থিকা পালায়, অভিশাপ থিকা বাঁচার জন্য, আর সে খুব দূরের একটা জায়গায় যায়, কিন্তু সে খুবই অদ্ভুত একটা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা পায়, খুবই অবাস্তবিক, স্বপ্নের মতোন জিনিসগুলি।

ইন্টারভিউয়ার: গঠনের দিক দিয়া এইটা ভয়ঙ্কর আজবদেশ এবং দুনিয়ার শেষ’র মতো, যার ভিতর এইটা আগ পিছ করে, অধ্যায় থিকা অধ্যায়ে, একটা গল্পের ধারা থিকা আরেকটাতে?

মুরাকামি: ঠিক। প্রথমে, আমি ভয়ঙ্কর আজবদেশ’র সিক্যুয়াল লিখতে চাইছিলাম, কিন্তু পরে আমি পুরা ভিন্ন একটা গল্প লেখার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু স্টাইলটাতে খুব মিল আছে। আত্মাটাতেও মিল আছে। থিমটা হইলো এই দুনিয়া এবং আরেক দুনিয়া; আপনি কিভাবে তাদের মধ্যে যাইতে আসতে পারেন।

ইন্টারভিউয়ার: আমি এইটা শুইনা খুব উত্তেজিত হইলাম, কারণ আপনার বইগুলার মধ্যে ভয়ঙ্কর আজবদেশ আমার বেশি পছন্দের।

মুরাকামি: আমারও। এইটা খুবই উচ্চাভিলাষী বই, নতুনটা, কারণ আমার বইগুলার মূলচরিত্রগুলা সবসময়ই তাদের বিশ বছর বা ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে থাকে। এইবার সে পনের বছর বয়সের।

ইন্টারভিউয়ার: অনেকটা হলেন্ড কল্ডফিল্ড-এর মতো?

মুরাকামি: একদম ঠিক। এই গল্প লেখাটা এক ধরণের উত্তেজনার ব্যাপার। আমি যখন ছেলেটার কথা লিখি, আমি মনে করতে পারি আমার বয়স যখন পনের বছর বয়স ছিল। আমি মনে করি মানব অস্তিত্বের সবচে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হইলো স্মৃতি। এইটা এক ধরণের জ্বালানী; এইটা পুড়ে আর আপনারে গরম রাখে। আমার স্মৃতি একটা সিন্দুকের মতো: সিন্দুকটাতে খুব বেশি ড্রয়ার নাই, যখন আমি পনের-বছর-বয়সের ছেলে হইতে চাই, আমি একটা নির্দিষ্ট ড্রয়ার খুলি আর আমি সেই দৃশ্যগুলা দেখি যখন আমি কোবে’তে একটা ছেলে ছিলাম। আমি বাতাসের গন্ধ পাই, আমি মাটি ছুঁইতে পারি, আর আমি সবুজ গাছগুলা দেখি। এইভাবেই আমি একটা বই লিখি।

ইন্টারভিউয়ার: পনের-বছর-বয়সের দৃষ্টিভঙ্গীটাতে ফিরা যাওয়ার জন্যে?

মুরাকামি: এইক্ষেত্রে। হ্যাঁ।

ইন্টারভিউয়ার: কোবে’তে বাইড়া ওঠাটা এবং জাপানের অন্য কোথাও না হওয়াতে এই স্টাইলটা তৈরি করার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ? কোবে’র ত দুনিয়ার শহর হিসাবে একটা পরিচয় আছে, এবং সম্ভবত কিছুটা অদ্ভুত।

মুরাকামি: কোয়েটের লোকজনরা কোবে’র চাইতে অদ্ভুত। তারা পাহাড় দিয়া ঘেরা, সুতরাং তাদের মানসিকতা আলাদা।

ইন্টারভিউয়ার: কিন্তু আপনি ত কোয়েটোতে জন্মাইছিলেন। এইটা কি ঠিক?

মুরাকামি: হ্যাঁ, কিন্তু আমরা কোবে’তে চলে আসি যখন আমি দুই বছরের। সুতরাং আমি সেই জায়গা থিকাই আসছি। কোবে হইলো সাগরের পারে আর তার পাশে পাহাড়গুলি, অনেকটা স্ট্রিপের মতো। আমি টোকিও পছন্দ করি না; এইটা খুবই সমতল, এতো বিস্তৃত, এতো বিশাল। আমি এইখানে এইটা পছন্দ করি না।

ইন্টারভিউয়ার: কিন্তু আপনি এইখানে থাকেন! আমি নিশ্চিত আপনি যে কোন জায়গাতেই থাকতে পারেন, যেইখানে আপনি পছন্দ করেন।

মুরাকামি: এর কারণ হইলো যে আমি এইখানে নামহীন থাকতে পারি। এইটা নিউইয়র্কের মতোই। কেউ আমারে চিনতে পারে না; আমি যে কোন জায়গাতে যাইতে পারি। আমি ট্রেনে উঠতে পারি আর কেউ আমারে বিরক্ত করে না। টোকিও’র উপকণ্ঠে একটা ছোট শহরে আমার একটা বাড়ি আছে, আর এইখানে সবাই আমারে জানে। যখনই আমি হাঁটতে বাইর হই, আমারে চিইনা ফেলে। আর মাঝে মাঝে এইটা বিরক্তিকর।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি আগে ইয়ো মুরাকামির’র নাম নিছিলেন। লেখক হিসাবে উনার মনে হয় খুবই ভিন্ন একটা এজেন্ডা আছে।

মুরাকামি: আমার স্টাইলটা অনেকটা উত্তর-আধুনিক; তাঁরটা অনেকটা মূলধারার। কিন্তু যখন আমি প্রথমবার কয়েন লকার বেবিস পড়ি, আমি ধাক্কা খাইছিলাম; আমি সিদ্ধান্ত নিছিলাম যে আমি এইরকমের একটা শক্তিশালী উপন্যাস লিখতে পছন্দ করবো। তখন আমি একটা বন্য ভেড়ার খোঁজে লিখতে শুরু করি। সুতরাং এইটা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো।

ইন্টারভিউয়ার: আপনারা কি বন্ধু?

মুরাকামি: আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক আছে। অন্তঃত আমরা শত্রু না। তাঁর খুবই সহজাত, শক্তিশালী প্রতিভা আছে। এইটা যেন অনেকটা মাটির ঠিক নিচ দিয়া তেলের মতো। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তেলটা এতো গভীরে যে আমারে খুঁড়তে হয়, খুঁড়তে হয় আর খুঁড়তে হয়। এইটা সত্যিকারের খাটনির কাজ। আর ওইখানে যাইতে অনেক সময় নেয়। কিন্তু একবার আমি পৌঁছাইয়া গেলে, আমি খুব শক্তিশালী আর আত্মবিশ্বাসী হই। আমার জীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক। এইটা ভালো, সারাটা পথ খুঁড়তে থাকাটা।

 

Series Navigation<< বইয়ের ইন্ট্রু : একটা কালচার যদি নিজের ক্রিয়েটিভ শক্তিটারে বাঁচায়া রাখতে চায়, তাইলে বিদেশি কালচারের ব্যাপারে উদার থাকা লাগবে – ইতালো কালভিনো।বই: চিনোয়া আচেবে’র ইন্টারভিউ >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →