Main menu

দেরিদা অন শোয়াহ

This entry is part 9 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

যে ইন্টারভিউখান আপনেরা পড়বেন বইলা ঠিক করছেন(!) সেইটা জেরুজালেমের ইয়াদ ভাশেমে বইসা গ্রহণ করা হয় ১৯৯৮ সালে। ড মিশাল বেন-নাফতালি এই ইন্টারভিউটা নেন। জ্যাক দেরিদা তখন ইসরায়েল ট্যুরে ছিলেন।

ইয়াদ ভাশেম হইল জেরুজালেমের একটা মিউজিয়াম, যেইটা শোয়াহ বা হলোকস্টের ভিকটিমদের জন্য একটা মেমোরিয়াল এবং আর্কাইভ হিসাবে সার্ভ করতেছে। হিব্রুতে হলোকস্টরে শোয়াহ কওয়া হয়। ইসরায়েলে এর ইউজ আছে। তবে ইউজ শুরু হয় এইটা ১৯৪০ হইতেই। দেরিদার এই ইন্টারভিউও মূলত শোয়াহ-র উপরেই।

– ইব্রাকর ঝিল্লী

……………………………….

(ইন্টারভিউ’র দুইটা অংশ এইখানে ছাপা হইলো।)

হাইডেগার, স্পিরিট ও ইউরোপীয় কালচার

বেন-নাফতালি: আপনে যখন হলোকস্ট পরবর্তীকালে ফরাসী প্রেক্ষাপটের সাথে জার্মান প্রেক্ষাপটের তুলনা করেন, তখন আপনে কি কোন বলার মতন ফারাক দেখতে পান দুই সিনারিওর মইধ্যে? হাইডেগারের ফিলোসফির ব্যাপারে যে রেসপন্স তা নিয়া যেনবা জার্মানদের তুলনায় ফরাসী চিন্তকেরা অধিক বিচলিত হইয়া গেছিলেন, এইটা কেন? নাকি এইটা একটা দেখার ভ্রম? মানে উভয়পক্ষই কি বিচলিত ছিলেন, ভিন্নভিন্নভাবে? হইলে, কী ভাবে? আপনে কি মানেন যে আপনার নিজের চিন্তার ভিতরেই এইরকম একটা প্রকাশ লক্ষ্য করা যাইতেছে, যেইটা হাইডেগারের সাথে একদম ঘনিষ্ঠভাবে জড়ায়ে গেছে, পষ্ট কইরা বললে, যেইটা হাইডেগারের রাজনৈতিক-দার্শনিক বিন্যাসের সাথে জড়ায়ে আছে? ‘De l’esprit’ এই ধরণের কোন পরিস্থিতির বাইরে লেখা সম্ভব ছিল আদৌ? আপনে কি এইটা আবার লেখতেন, হাইডেগারের যে ভুলটা আপনে ধরতেছেন “স্পিরিচুয়ালাইজিং নাৎসিজম”, সেইটারে কারেক্ট কইরা? এই যে বিচার আপনের এইটা কি কোনভাবে ক্ষমাশীলতার কথা প্রমোট করতে চায়?

দেরিদা: আপনের শেষ প্রশ্নটার জওয়াবে আমি কইতে চাই যে, হাইডেগারের যে এটিচ্যুড সেইটা ক্ষমার যোগ্যও না, আবার অযোগ্যও না। আমি বুঝতেছি না, আমি বা, যে কেউই, এইরকম একটা প্রশ্ন এই টার্মে ঠিক কেমনে করতে পারতাম। কারুর আদৌ হাইডেগাররে ক্ষমা করার দরকারটা কী? আসেন এইরকমের একটা আন্দাজা হইতে শুরু করি যে হাইডেগারের এটিচ্যুড সীমা-পরিসীমা ছাড়ায়া গিল্টি। এই রকম ধইরা নিলেও, কার আসলে সেই অধিকারটা আছে যে বলবেঃ “আমি ক্ষমা কইরা দিলাম,” বাঃ “আমি ক্ষমা করলাম না”? আমি জানি না। ইন এনি কেইস, আমার কথা কইতে পারি যে আমার সেই রাইট নাই। এই পুরা বিষয়টার সাথে আমার সম্পর্ক কখনোই কোন বিচারকের জায়গা থেকে ছিলো না, এমন কোন জায়গা থেকে ছিলো না যে কিনা একটা বই বা বক্তিমাঃ “হাইডেগার দোষী এবং আমি উনারে ক্ষমা করি না” এইরকম একটা লাইন দিয়া শেষ করার তাড়াহুড়ার ভিতরে আছে। এই রকম কিছু একটা করা আমার জন্য খুবই কঠিন।

এখন আপনের সওয়ালের গোড়াতে ফিরা যাইতে চাই, অফ কোর্স, শোয়াহ-র প্রতি ফরাসীদের, বিশেষ কইরা ফরাসী দার্শনিকদের যে এটিচ্যুড আর জার্মান ও জার্মান দার্শনিকদের যে এটিচ্যুড এ দুয়ের মইধ্যে মেলা ফারাক আছে। প্রথমত, এই অবভিয়াস কারণে যে, ফরাসীরা ফরাসী আর জার্মানরা জার্মান। জার্মানদের যে গিল্ট যুদ্ধের পরে, জার্মান নাগরিকরা বা জার্মান দার্শনিকেরা যখন সেইটা ফিল করছে –অনেক ক্ষেত্রেই কোন গিল্টি ফিলিং ছিলো না, কিন্তু যখন সেইটা এগজিস্ট করছে- তখন সেইটা এত ব্যাপক ও ভায়োলেন্ট ছিলো যে তারা নিৎসে ও হাইডেগারের কিছু টেক্সট কার্যত নিষিদ্ধই কইরা ফেলে, বিশেষ কইরা, যুদ্ধের পরপর যেগুলি ব্যানড করা হইছিল। দেখা যায় যে হাইডেগাররে বিচারের আওতায় আনা হইতেছে, হাইডেগাররে – এইটারে কীভাবে বলা যায়? – কারিকুলাম হইতে ছাইটা ফেলা হয়, এইরকম একটা রায়ও ছিলো। এই ব্যাপারে জার্মান দার্শনিকদের অফিসিয়াল এটিচ্যুড ছিলো, পাবলিকলি, নিৎসে আর হাইডেগারের কাজকামরে গণহারে বাতিল হিসাবে সাব্যস্ত করা, এবং এইটা বহুদিন ধইরা চলে। এই কিছুদিন হইলো এই সেন্সরশীপ, বা এই বাতিল করা, বা উহ্য রাখার টেন্ডেন্সি কতক কমতে শুরু হইছে।

এর বিপরীতে ফ্রান্সে বিষয়গুলি আরেকটু জটিল ছিল এবং যেকোনভাবেই হউক আরেকটু সহজও। হাইডেগারের প্রভাব যুদ্ধের আগে আগে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে; এবং যুদ্ধের পরে সার্ত্রে ও মার্লো-পন্টির (Maurice Merleau-Ponty) মত দার্শনিকেরা সহ আরও অনেকে, যেমন লেভিনা, যাদের হাইডেগারের ব্যাপারে ইন্টারেস্ট ছিলো, তারা তাদের ইন্টারেস্টটা ধইরা রাখতে থাকে। যুদ্ধের সময়, যুদ্ধের আগে, নাৎসিজমের আন্ডারে হাইডেগারের এটিচ্যুড লইয়া একটা রাজনৈতিক তর্কাতর্কি শুরু থেকেই জারি আছে। একদম শুরুতে, “Temps Modernes” এ হাইডেগাররে লইয়া কামের প্রথম ওয়েভটা আসে, তারপর এইটা কিছু ঝিমায়ে আসে, পরে আবার পঞ্চাশ, ষাইট ও সত্তুরের দশকে হাইডেগাররে লইয়া প্রচুর দার্শনিক লেখালেখি হয়, তারে নিয়া যে রাজনৈতিক কোশ্চেন আছে সেই কোশ্চেন এইসব আলাপরে তেমন হ্যাম্পার করতে পারেনাই। এবং তারপরে সেই সময়ের প্রশ্নটা আবার সামনে আসে, জেনারেশনের প্রশ্ন, শোষণরে ব্যর্থ কইরা দেওয়ার প্রশ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি (যেগুলার প্রত্যেকটাই গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে) – সামনে আসতে থেকে, এবং আপনে জানেন, এইভাবে আশির দশকের মাঝামাঝিতে হাইডেগাররে নিয়া আবার বিতর্কের শুরু হয়।

De l’esprit নিয়া আমি যে পজিশনটা নিই, যেই ব্যাপারে আপনে সচেতন আছেন, সেইখানে আমি যে হাইডেগারের সকল একশনরে একটা “স্পিরিচুয়ালাইজেশন”এর জায়গা থেকে, একটা নির্দিষ্ট আধ্যাত্ম-মানবতাবাদের জায়গা থেকে, স্পিরিটের রেফারেন্সে ব্যাখ্যা করছি শুধু তাই না। এইটা ছাড়াও আমি মনে করি হাইডেগারের সিদ্ধান্তের যে দায়, একটা পার্টিকুলার পরিস্থিতিতে, যখন সে রেক্টর হিসাবে এইটা সেইটা করে, একটা পার্টিকুলার টেক্সটে সাইন করে ইত্যাদি, সেই দায়রে তার দায়িত্বের পরিধির ভিতরেই বিচার করা দরকার। ওইটার বিচার তার হইয়া গেছে, এবং আমার কথা বলতে পারি যে, তারে তার দায় হইতে খালাশ কইরা দেওয়া আমার কনসার্ন না। আমি যেইটা করতে চাইছি, রেক্টর থাকা অবস্থায় সে যে স্পিচ দিছে, আর তার লেখার বা শেখানোর যে ডিসকোর্স তার মইধ্যে কোন পারস্পরিক-দার্শনিক নির্ভরশীলতা আছে কিনা সেইটারে কিছুটা হইলেও খতায়ে দেখা।

আমি ওই স্পিরিটের রেফারেন্সটা ধইরা আগাইছি। আমি ওই আলাপটা পুরা এইখানে হুবুহু তুইলা ধরতে পারব না। কিন্তু আমার পয়েন্ট এইটা না যে এইভাবে আমি হাইডেগারের সকল ভঙ্গিমারে স্পিরিটের রেফারেন্স ধইরা ব্যাখ্যা কইরা ফেলবো, বরং উনার চিন্তার একটা সার্টেন সিষ্টেমের দিকে এটেনশন দেওয়া, যে সিষ্টেম মাইনা সে তার দার্শনিক জার্নি পুরা করছে, যেইটা তার নাৎসি কমিটমেন্টরে সম্ভব কইরা তুলছে, বা বলা যায় অসম্ভব করতে পারেনাই। এবং এই সিষ্টেমেই, আমি বিশ্বাস করি, সে একদম শুরু থেকে দীর্ঘ সময় ধইরা, স্পিরিট তথা আধ্যাত্মের প্রশ্নগুলি হ্যান্ডেল করছে। আমি মনে করি যদি উনি এই পুরা ব্যাপারটারে ডিকনস্ট্রাক্ট করার পজিশনে থাকত, মানে এই আধ্যাত্মবাদের ইমপ্লিকেশনগুলি, তাইলে উনি নাৎসি দশাটারে রিয়েলি ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা বুঝতে পারতেন। আনফরচুনেটলি, উনারে দিয়া সেইটা সম্ভব হয়নাই।

এর ভেতর দিয়া আসলে হাইডেগাররে ক্ষমার অযোগ্য হিসাবেও সাব্যস্ত করা হয়নাই আবার, তার দায় হইতে তারে খালাশও দিয়া দেয়া হয়নাই, বরং এইভাবে স্পিরিটের রেফারেন্সে আসলে কী ঘটতেছিল সেই বোঝাবুঝির জার্নিটা শুরু করা যায়। এইভাবে শুধু হাইডেগার না, ওই যুগের বহু দার্শনিকেরেই বোঝা যাবে। L’Autre cap বা De l’esprit-এ আমি এই স্পিরিটের রেফারেন্সটা টানছি সেই একইরকম রেফারেন্স আর লজিক ধইরা যা আপনে হাসের্ল(Edmund Husserl), ভ্যালেরি (Paul Valéry)-র কামে পাইবেন। তো এইটা শুধু হাইডেগারের ব্যাপার না। আমি যেইটা রিকনস্ট্রাক্ট করতে চাইছি তারে ঠিক স্পিরিট অব টাইম, বা জাইটগাইস্ট দিয়া বোঝা যাবে না, বরং একটা সাধারণ সংকটের কথা বলতে চাইছি আসলে যেইটা পুরা ইউরোপীয় সংস্কৃতিরেই আটকায়ে ফেলে, যেই জিনিসটা শুধু যে এই হাইডেগারের অফেন্সটার জন্যই দায়ী তা না, বরং নাৎসিদের ব্যাপারে ইউরোপের যে একটা সাধারণ ঔদাসীন্য সেইটার জন্যও দায়ী। নাৎসিবাদ, যেইটা আমি De l’espritএ বলছি, মাশরুমের মতন গজায়নাই। দশ থেকে বারো বচ্ছর যাবত ইউরোপীয় কুটনীতি, ইউরোপীয় গীর্জা, ইউরোপীয় ভার্সিটি সব নিজেদের মত কইরা নাৎসিবাদে তাল দিয়া গেছে। এইটা ব্যাখ্যা করার জরুরত আছে। এইটা হইছে ডিসকোর্সের ভিতর দিয়া, কুটনৈতিক আয়োজনের ভেতর দিয়া, নীরবতার ভেতর দিয়া, মুখ ঘুরায়ে রাখার ভেতর দিয়া, কুবিশ্বাস ধইরা রাখার ভেতর দিয়া। গীর্জা কেমনে এমনে বিহেভ করতে পারে? কেমনেই বা ইংলিশ ও ফরাসী কুটনীতি এই সব কিছুর লগে মিল রাইখা চলছে, যুদ্ধের আগে? কী কারণে তারা এমন ভেক ধইরা ছিল যেন তারা বুঝতেই পারতেছেনা বা দেখতেই পাইতেছেনা ইহুদিদের লগে কী ঘটতেছে? এই সব কিছু মিলাই একটা ইউরোপীয় সংস্কৃতিরে ইন্ডিকেট করে। এবং এখন খুব ছোট কইরা আবার শুরুতে ফিরা যাইতে চাই যে, এই কারণেই ডিকনস্ট্রাকশনের কাম হইল ইউরোপের ইতিহাস, ইউরোপের সংস্কৃতির উপর কাম, এবং এইটা এখন যে রূপ পরিগ্রহ করছে তা এই শতাব্দীর দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সেই ইউরোপীয় মোমেন্টের রেফারেন্স বিনে সম্ভবই ছিলো না। তো হাইডেগাররে নিয়া যে আমার ছোট বইটা, শুধু ওইটা না, আমার যত টেক্সটই আমি হাইডেগাররে উৎসর্গ করছি, সেগুলি শুধুই তার কাজকামরে ঘিরা আবর্তিত হয়নাই, যদিচ তার কাজকাম আমার কাছে সব সময়ই খুবই শক্তিশালী এবং প্রোভোকেটিভ, বরং আবর্তিত হইছে ইউরোপীয় চিন্তাপদ্ধতির পুরাটা ঘিরা, সেই চিন্তাপদ্ধতির ভিতরেই হাইডেগার এমন একটা অবস্থান নিয়া আছে যেইটা একদম খোলা চোখে দেখা যায়, এবং বলা ভালো, যারে এড়ানো এক কথায় অসম্ভব।

……………………………..

ভায়োলেন্সরে ধামাচাপা দেওয়া এবং ডিকনস্ট্রাকশন

বেন-নাফতালি: ইসরায়েলে যে আপনে দিলখোলা অভ্যর্থনা পাইলেন এইবার একটু সেইখানে আসি। কিছুদিন আগে, জেরুজালেমে প্রথমবারের মত হ্যানা আরেন্দ-র ওপর একটা কনফারেন্সের আয়োজন হয়, যেইখানে হলোকস্ট ও আইখম্যান ট্রায়াল-এর ব্যাপারে তার আইডিয়াগুলির মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হইছে। আপনে কি মনে করেন এই যে একজন ভাবুক, যিনি দীর্ঘকাল মার্জিনালাইজড ছিলেন, তার ব্যাপারে যে ওপেননেস এর সাথে আপনের ব্যাপারে যে রেসপন্স তার কোন যোগ আছে?

দেরিদা: যদি এইটা সত্যও হয়, আপনে কি মনে করেন এর সাথে ইয়াদ ভাশেম-এর কোন লেনাদেনা আছে? না… ইয়াদ ভাশেমের কথা যখন বলতেছি তখন আসলে আমি এখন যে প্রবলেমগুলি আমরা এড্রেস করতেছি সেইটারে মিন করতেছি। আপনে কি মনে করেন কোন যোগ আছে… এছাড়া এই ইন্টারভিউতে এই প্রশ্ন করার তেমন কোন তো কারণ নাই, যদি কোন কানেকশন না থাকে… আপনে বলতে পারেন…

বেন-নাফতালি: আমি যে কনফারেন্সটার কথা বলতেছি সেইটা একটা লার্জার ট্রেন্ড নির্দেশ করতেছে, মেইবি ইসরায়েলী পাবলিকের সেলফ-রিফ্লেকশনের জন্য এইটা একটা দরকারি ফেইজ। ইসরায়েল মিউজিয়াম গত কয়েক মাস ধইরাই ইয়াং আর্টিশ আর. রোজেন (Roee Rosen) এর একটা এগজিবিশনের আয়োজন করতে চাইতেছে, যেইখানে হিটলারের প্রেমিকা হিসাবে ইভা ব্রাউনের যে কাতরতা তার সাথে পরিচিত হইতে পারবে দর্শকেরা। স্বাভাবিকভাবেই, এইটা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিছে, যেহেতু এর মানে হইতেছে, ভায়লেন্সের ভেতরে, ইভিল-এর ভেতরে কারু ফ্যাসিনেশনের মুখামখি হওয়া।

দেরিদা: আপনে কি বলতে চাইতেছেন যে, এখন যেহেতু কতলকারী এবং যারা কতল হইছে, যেমন ইভা ব্রাউন, এদের প্রতি একটা ইন্টারেস্ট গ্রো করতেছে, একটা ওভারঅল চেইঞ্জের পর, তাইলে আমার প্রতিও একটা ইন্টারেস্ট গ্রো করতে পারে?! সেই সময় যখন ইভা ব্রাউনরে নিয়া কথা বলা সম্ভব হইতেছে, আমিও একসেপ্টেড হইতেছি?! আচ্ছা, সিরিয়াসলি নিয়েন না, একটু মজা করলাম আর কি।

আমার মনে হয়, যেইটা আমরা একটু আগে বলতেছিলাম ফরাসী কালচার নিয়া, ইসরায়েলী কালচারেরও ওইরকম একটা নিজস্ব ইভোলুশনারী পর্যায় আছে। এবং এইটা এর বিবেকের ভেতরে, এর সচেতন বা, অচেতন এর ভেতরে হরেক রকমের ভায়োলেন্সরে রেজিস্টার কইরা রাখছে। অবভিয়াসলি শোয়াহ-র যে ভায়োলেন্স, যেইটা কিনা ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার খুব কাছাকাছি সময়ের একটা ঘটনা, এবং ইসরায়েল পাবলিক পরিসরে, পাবলিক সজ্ঞা, চেতনে অফেন্সিভ, হুমকীমূলক বিষয়াদির উপস্থাপন আটকায়ে রাখছে(ইসরায়েল রাষ্ট্রের আরম্ভের টাইমে এমনকি স্পিনোজারে নিয়াও কথা কওয়া যাইত না)। এবং তারপর, আস্তে আস্তে, আইখম্যান ট্রায়ালে হ্যানা আরেন্দের এটিচ্যুড এমন ছিল যে উনারে রিজেক্ট করা হইল। তারপর, আস্তে আস্তে, এইখানেও ফ্রান্সের মতই, যা কিছু চাপা দিয়া রাখা হইছিল তা মুক্ত করা হইল, রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল ঘটলো, এবং আমি বিশ্বাস করি এখন ইসরায়েল সেইসব বিষয় নিয়া আরও সহজে কথা বলতে পারে, যেগুলারে তারা নাৎসি ভায়োলেন্সের সাথে মিলায়ে দেখত, বা, ইহুদিদের সাথে ঘটা সকল ভায়োলেন্সের সাথেই মিলায়ে দেখত, জার্মান বিষয়াদি হইতে শুরু কইরা স্পিনোজা (যারে বাতিল কইরা ফেলা হইছিল, বহিষ্কার তো বটেই)।

কিন্ত ইসরায়েলের এখন উচিত সমানভাবে, একই সাথে, নিজের ভায়োলেন্সের ব্যাপারেও সচেতন হওয়া, মানেই ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকালে যে ভায়োলেন্সের সূত্রপাত। প্রতিষ্ঠার পরপরই এইটা নিয়া কথা বলা যায়নাই; কিন্তু জেনারেশনের পালাবদলে এবং পলিটিকাল ফিল্ডের বিবর্তনে, বহু জোর জবরদস্তি এখন শিথিল হইতে পারছে। ফলেই এখন আবার, বা বলা যাইতে পারে প্রথমবারের মত সেইসব লোকেদের, চিন্তার, ডিসকোর্সের ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড হওয়া যাইতেছে যা আগে আড়ালে পইড়া ছিলো। অমনই একটা কেইস হ্যানা আরেন্দেরটা, ধরতে পারেন।

আপনে যাদের নাম নিলেন, স্পিনোজা হইতে ইভা ব্রাউন হইতে হ্যানা আরেন্দ, আমি উনাদের সাথে আমার সিচুয়েশনরে মিলাবো না। তথাপিও বলতে হয়, আমার কামরে এইখানে ডিকনস্ট্রাকশনের এক প্রকার ক্যারিকেচার ইমেজের মত কইরা দেখা হইছে, দুনিয়ার সবখানেই এইরকম কিছুটা হইছে, অনেক সময়ই হাইডেগার ও নিৎসেরে নিয়া, জার্মান চিন্তা নিয়া, ওভারসফিস্টিকেটেড ফরাসী চিন্তা নিয়া। এবং তারপর, এইটাও সত্য ইসরায়েলী কালচারের একটা জেনারেল পরিবর্তনের লগে লগে, জেনারেল শিফটের লগে লগে, একাডেমির ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টগুলিতে যে অ্যাংলো-এনালিটিকাল ডমিনেশন ছিল, যদিও তা একেবারে উধাও হইয়া যায়নাই, সেইখানে কিছুটা হইলেও পায়ের তলার মাটি সরছে, অল্প হইলেও। ইসরায়েলী একাডেমিক দার্শনিক কালচারে একটা চাইপা বসা এমেরিকান হেজেমনি আছে (যেই কথা দর্শনের জন্য ট্রু সেইটা আদার ডিসিপ্লিনের জন্য ট্রু নাও হইতে পারে, কিন্তু দর্শনের ক্ষেত্রে এমেরিকান দর্শনের একটা প্রিভিলেজ আছে এইখানে)। এইটা ধীর পরিবর্তনের একটা প্রক্রিয়ার ভেতর ঢুকতেছে, অল্প অল্প কইরা হইলেও একটা চেঞ্জের ভিতর দিয়া যাইতেছে। আমি খেয়াল করছি, এবং শুধু আমি না আমার বন্ধু বান্ধবও খেয়াল করছে যে বিশ বছর আগে, দশ বছর আগে এবং আজকে আমার কাজের সাথে ইসরায়েলের রিলেশনের একটা বড় পার্থক্য তৈরি হইছে। আমি বিশ্বাস করি এইটা শুধু যে এই কারণে ঘটছে যে কিছু লোক আমার বইটই পড়তেছে তা না, বরং এই কারণেও যে ইসরায়েলী কালচারাল ফিল্ড একটা বড় রকমের ট্রান্সফর্মেশনের ভেতর দিয়া গেছে।

ইসরায়েলী কালচারের এই ট্রান্সফর্মেশন, আমার সাবজেক্টে আবার ফিরা আসি, অন্তত দুইটা মেজর ভায়োলেন্সের সাথে রিলেটেড যেইটা কিছুদিন আগে পর্যন্তও দমায় রাখা হইত, বা বলা ভালো, যেগুলি নিয়া ওপেন আলাপ গজাইতে দিতো না, এক হইল শোয়াহ-র ভায়োলেন্সের টপিকটা, কারণ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জাস্টিফিকেশন হিসাবে শোয়াহ-রে ইউজ করা হইত। সকল কিছুই যা ইহুদির প্রতি হুমকিস্বরূপ, ইহুদিরে কতল করছে, টর্চার করছে, মারছে, নিশ্চিহ্ন করছে সেই টপিকটাই -এইটারে কেমনে বলা যায়- খারিজ হইয়া গেছে। এছাড়াও যুদ্ধের আগে ও যুদ্ধের সময় ইহুদিদের ওপর যে ভায়োলেন্স তারেও চাপা দেয়া হইছে। এবং আরেকটা ভায়োলেন্স হইল ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, যেইটা (যেইটা আমি তেল আবিবে ওইদিন বলতেছিলাম) যে কোন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময়ই হইতে পারে, কিন্তু ইসরায়েলের ক্ষেত্রে সেইটা একটা ভিন্ন এক্সটেন্টে গিয়া গড়াইছে, সেইটা হইল ফিলিস্তিনীদের ওপর ব্যাপক ভায়োলেন্স, এইটা হইল ইন্টার্নাল ভায়োলেন্স। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটা এমন এক ঘটনা যেইটা এখনও শেষ হইতে পারেনাই, এবং যেইটা ব্যাপক ভায়োলেন্ট। এবং এই প্রতিষ্ঠাকালীন, ফান্ডামেন্টাল ভায়োলেন্সের জায়গাতেও মেমোরির শিফট হইতেছে।

এই দুই ভায়োলেন্সের ক্ষেত্রেই, পঞ্চাশের দশকে, সত্তরের দশকে, আশির দশকে থাইমা থাইমা রিপ্রেশন গেছে, বলা যায়, রিপ্রেশনের ভেতর দিয়া বাতিল কইরা দেয়া, এই রিপ্রেশনগুলিরে সাইকোএনালিটিক টার্মে শোকেরই সাইড এফেক্ট বলা যাইতে পারে। এবং এখন এই পরিবেশটা বদলাইতেছে, এবং এখন আবারও সম্ভব হইতেছে, যেইটা আপনে বললেন, সেই সকল জার্মানরে নিয়া কথা বলা, কশাইরে নিয়া কথা বলা। এদের নিয়া কথা বলা এখন সম্ভব; কিন্তু একই সাথে ইসরায়েলী ভায়োলেন্স নিয়া কথা বলাও একভাবে সম্ভব হইতেছে, আমি দুইটার কোন তুলনা করতে চাই না, কিন্তু দিন শেষে বলা যায়, ভায়োলেন্সের এই দুইটা কেসই আছে। এবং সাথে সাথে আমরা কিছু নির্দিষ্ট ডিসকোর্সেও ঢুকতে পারতেছি, যেগুলা এই কিছুদিন আগে পর্যন্তও দুর্বোধ্য, বা অদরকারি, বা হুমকি হিসাবে গণ্য করা হইত। ডিকনস্ট্রাকশনও, আনফরচুনেটলি, হুমকিস্বরূপ দেখা হইত, শুধু ইসরায়েলেই না, অন্য অনেক জায়গাতেই। আমাদের এই জায়গাটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে, ব্যাখ্যা করতে পারতে হবে যে কেন ডিকনস্ট্রাকশনরে হুমকি মনে করার চল ছিল। কিন্তু সেইটা আরেক আলাপ। থ্যাংক ইউ।

বেন-নাফতালি: থ্যাংক ইউ।

Series Navigation<< এলিস মুনরো’র ইন্টারভিউ (সিলেক্টেড অংশ)মিডিয়ার আসলে কাজ হইতেছে সুন্দর রকমের ডিসটরশন তৈরি করা – জ বদ্রিয়া >>

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →