Main menu

বইয়ের ইন্ট্রু: যা দরকার… তা হইতেছে… একটা শক্তিশালী লোকাল কালচার উদ্ভাবন করা – ওরহান পামুক

This entry is part 4 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

১.
বিখ্যাত ফরাসি পেইন্টার এদগার দেগার শেষজীবনে কবিতার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিলো। দেগা দিনরাত কবিতা লেখার চেষ্টা করলো। কয়েকদিনের জোর চেষ্টাতেও তেমন কিছু হইতেছে না দেইখা, দেগা তার কবিবন্ধু স্তেফান মালার্মেরে চিঠিতে লিখলো, আমার মাথা অসাধারণ সব কবিতার আইডিয়ায় ভর্তি। অথচ আমি অনেক চেষ্টা কইরাও একটা ভালো সনেট লিখতে পারতেছি না। সমস্যাটা কী?’ [pullquote][AWD_comments][/pullquote]

স্তেফান মালার্মে জবাবে কইলেন, আমার মাথায়ও দারুণসব ল্যান্ডস্কেপের আইডিয়া আসে। অথচ আমি আঁকতে পারি না, কারণ রঙতুলির ব্যবহার আমি ভালোমতো জানি না। দেগা, তুমি খালি আইডিয়া দিয়া কবিতা লিখতে পারবা না। শব্দ দিয়া লিখতে হবে।     

দেশে রাইটিং ক্র্যাফট নিয়া কোনো আলাপ দেখলেই দেগামালার্মের এই পত্রালাপ আমার মনে আসে।  পেশাদারি সিস্টেমে বইয়ের লেখালেখি বা বেচাবিক্রি দেশে না থাকায় কয়েকটা বাজে ফল হইছে। একটা হইতেছে, রাইটিং ক্র্যাফট নিয়া সাধারণত তেমন আলাপ দেখা যায় না। আবার পাঠকদের মুগ্ধতা কইমা যাইতে পারেএই আশংকা থিকা বা অন্য যে কারণেই হউক, পপুলার লেখককবিরা রাইটিং ক্রাফট নিয়া এমনভাবে বাৎচিত দেন যে তাতে মনে হইতে পারে, লেখা জিনিসটায় শেখার কিছু নাই, লেখালেখির পুরাটাই স্পেশাল প্রতিভার ব্যাপার; শিল্পকর্ম, পুরাটাই আকাশ থিকা শিল্পীর উপ্রে নাজিল হয় অথবা কাব্যলক্ষ্মী স্বপ্নে আইসা দিয়া যায়।   ফলে, প্রতিভার বাইরেও লেখকের যে টেকনিক্যাল প্রস্তুতির দরকার আছে এই ব্যাপারে আলাপ আমি খুব একটা হইতে দেখি না।

তো, পামুক এই ইন্টারভিউতে জানাইছেন, তিনি কেমনে প্রস্তুতি নেন। কিভাবে বড় একটা কাহিনীরে আগেই পুরাপুরি আউটলাইন করে নেন বা পুরা বইটারে অনেকগুলা অধ্যায়ে ভাগ করেন। স্নো উপন্যাসটা লেখার আগে কিভাবে কয়েক বছর ধইরা ফিল্ডওয়ার্ক করছেন। সেই ফিল্ডওয়ার্কের প্রস্তুতি পদ্ধতি নিয়া কথা বলছেন। এমন না যে শুধু ক্র্যাফট নিয়াই শুধু কথাবার্তা বলছেন পামুক ইন্টারভিউতে।   

২.
পামুকের আরও অনেক ইন্টারভিউ নেটে পাওয়া যায়। প্রায় সবগুলাই আমি পড়ছি। পইড়া মনে হইছে, সেগুলার তুলনায় প্যারিস রিভিউএর সাথে এই আলাপে ব্যক্তিগত জীবন নিয়া অনেক বেশি ওপেন হইছেন পামুক। অবাক হইছি পিঠাপঠি বড় ভাইয়ের সাথে তার যে ফ্রয়েডিয়ান সম্পর্ক, জেলাসি আর সেই সম্পর্ক তার সাহিত্যে কিভাবে আসছে সেসব নিয়া যেভাবে বিশদে বলছেন পামুক, আর কোনো ইন্টারভিউয়ে তারে এতোটা অন্তরঙ্গ হয়া কথা কইতে দেখি নাই। 

তার শৈশব, বেড়ে ওঠা, যৌবনে তার সাহিত্যিক হইতে চাওয়াজনিত জটিলতাসহ জীবনের অন্তরঙ্গ বহিঃরঙ্গের নানান দিক উঠে আসছে যা নোবেলজয়ী এই লেখকের ব্যাপারে পাঠকের কৌতূহল পুরাপুরি যদি নাও মেটায়, তার সাহিত্যের ব্যাপারে অন্তত যথেষ্ট আগ্রহী কইরা তুলবে।

৩.
এই ইন্টারভিউয়ের আরেকটা ভালো দিক আমার কাছে মনে হইছে পামুকের রাজনীতির জায়গাটা বুঝতে পারে। লেখকদের, স্পেশালি এই দেশের মতো গরিব দেশের লেখকদের, আইডিওলগ আর প্রপাগান্ডা মেশিন হয়ে ওঠার নানান ইন্সেন্টিভ থাকে সমাজে। সেই ইন্সেন্টিভরে রেজিস্ট করাটা যে কঠিন সচেতন কাজ তার ইশারা পামুকের ইন্টারভিউতে আছে। ফ্ল্যাট রিয়ালিস্টদের ব্যাপারে পামুক বলতেছেন, ‘সেইসব লেখক যারা ভাবছে সাহিত্যের নৈতিক ও রাজনৈতিক  দায়বদ্ধতা আছে। তারা ফ্ল্যাট রিয়ালিস্ট, নিরীক্ষাধর্মী না। অনেক গরিব দেশের লেখকদের মতো তারা তাদের প্রতিভা খোয়াইছে জাতির সেবায় নিয়োজিত হইতে গিয়া।‘ 

আলাপে উঠে আসছে, তুর্কি জাতির পূর্ব আর পশ্চিমের ভাব ও চিন্তা এবং কালচারাল ইতিহাসের দোলাচালে থাকার ব্যাপারটা। তুর্কিরা আমাদের মতো প্রায় দুই শ বছর কলোনাইজড হয়ে  কখনই থাকে নাই, কিন্তু পূর্ব আর পশ্চিমের কতটুকু গ্রহণ বা বর্জন করা যাবে, কিভাবে বাছবিচার করা যাবে বা অন্ধ অনুকরণের সমস্যা ইত্যাদি নিয়া দ্বন্দ্ব আর দোলাচালে বাংলাদেশের সাথে পামুকের তুর্কির কিছু মিল আছে। কালচারাল পলিটিক্সে যা তুরস্কের জন্যে দরকারি বলে পামুক মনে করেন, বাংলাদেশের জন্যেও তা প্রযোজ্য বলে আমার মনে হয়ঃ  একটা শক্তিশালী লোকাল কালচার উদ্ভাবন করা। 

যা হোক, ইন্টারভিউয়ের একটা ছোট বইয়ের ভূমিকা লম্বা হইলে দৃষ্টিকটু লাগে। অতএব, শুরুর বিষয়ে ফিরে আইসা ভূমিকা শেষ করি। 

খালি পামুকের এই ইন্টারভিউটা না, প্রিন্ট পোয়েট্রির পুরা ইন্টারভিউ সিরিজটার ক্ষেত্রে আমি বলবো, লেখক জীবনের নানান দিকের প্রতি পাঠকদের কৌতূহল মেটানোর পাশাপাশি, নিশ্চয়ই ইহাতে লেখকদের/ওয়ানাবি লেখকদের জন্যে রহিয়াছে চিন্তার খোরাকি। আমার এই দাবির সঠিকতা বা বেঠিকতা বিচারের জন্যে পাঠকেরা তো আছেনই।

হ্যাপি রিডিং।   

কে এম রাকিব

২৯  অক্টোবর ২০১৯মিরপুর | ঢাকা

……………………………………………………………..

বইটা রকমারিতে প্রি-অর্ডার করতে এইখানে ক্লিক করেন:
https://www.rokomari.com/book/191550/the-art-of-fiction

এই বইটাসহ বাছবিচার ও প্রিন্ট পোয়েট্রি ইন্টারভিউ সিরিজের পয়লা কিস্তির ৬টা বই প্রি-অর্ডার করতে পারেন এই লিংকে:
https://www.facebook.com/103006071146144/posts/103248241121927/

Series Navigation<< বইয়ের ইন্ট্রো: জীবনের মতোই আর্ট দিয়া সবাইরে খুশি করতে পারে না কেউ – পাবলো নেরুদা।বইয়ের ইন্ট্রু : একটা কালচার যদি নিজের ক্রিয়েটিভ শক্তিটারে বাঁচায়া রাখতে চায়, তাইলে বিদেশি কালচারের ব্যাপারে উদার থাকা লাগবে – ইতালো কালভিনো। >>
The following two tabs change content below.

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →