বইয়ের ইন্ট্রু: যা দরকার… তা হইতেছে… একটা শক্তিশালী লোকাল কালচার উদ্ভাবন করা – ওরহান পামুক
- বইয়ের ইন্ট্রু: আমার মনেহয় একজন মানুষের ইমাজিনেশন তার রেসের ভিতর থেকে আসা অভিজ্ঞতার রেজাল্ট – আর্নেস্ট হেমিংওয়ে।।
- বইয়ের ইন্ট্রু: একেক জন লেখক একেক তরিকায় লেখেন, আর কামিয়াবি তাদের কাছে একেকভাবে ধরা দেয় -টি.এস. এলিয়ট
- বইয়ের ইন্ট্রো: জীবনের মতোই আর্ট দিয়া সবাইরে খুশি করতে পারে না কেউ – পাবলো নেরুদা।
- বইয়ের ইন্ট্রু: যা দরকার… তা হইতেছে… একটা শক্তিশালী লোকাল কালচার উদ্ভাবন করা – ওরহান পামুক
- বইয়ের ইন্ট্রু : একটা কালচার যদি নিজের ক্রিয়েটিভ শক্তিটারে বাঁচায়া রাখতে চায়, তাইলে বিদেশি কালচারের ব্যাপারে উদার থাকা লাগবে – ইতালো কালভিনো।
- এই সময়ে যে কোন কিছুর চাইতে ভিডিও গেমস ফিকশনের অনেক কাছাকাছি – হারুকি মুরাকামি।
- বই: চিনোয়া আচেবে’র ইন্টারভিউ
- এলিস মুনরো’র ইন্টারভিউ (সিলেক্টেড অংশ)
- দেরিদা অন শোয়াহ
- মিডিয়ার আসলে কাজ হইতেছে সুন্দর রকমের ডিসটরশন তৈরি করা – জ বদ্রিয়া
- একটা ক্যারেক্টার কখনোই ভালো বা খারাপ কিছু করতে পারে না, সে জাস্ট ট্রুথের সাইডে থাকতে পারে বা পারে না – টারানটিনো
- আমি সবসময় লিখতে লিখতে অনুবাদ করতে থাকি – অরুন্ধতী রায়
- যেকোনো চিন্তা, পোয়েটিকাল বা অন্যকিছু, যেকোনো চিন্তাই অনেককিছুর জোট হইয়া তৈয়ার হয় – রবার্ট ফ্রস্ট
- একটা ভালো রোমান্স ফিল্ম সবসময় নিঃসঙ্গতার ফিলিংটার উপর নির্ভর করে – ওং কার ওয়াই
- সমাজের উন্নতি করা বা সমাজ পরিবর্তনের উপায় বাতলাইয়া দেওয়া ক্রিটিসিজমের কাজ না – হ্যারল্ড ব্লুম (পার্ট ১)
- ফিকশন হইলো ফ্রিডম – সুসান সনট্যাগ
- উডি এলেনের ইন্টারভিউ: সমস্যা হইতেছে ক্রিয়েটিভ হওয়ায় কিছু গ্ল্যামার আছে
- আপনি আসলে কে সেইটা ঠিক বুইঝা উঠতে পারার আগে আপনি লিখতে পারবেন না – সালমান রুশদি
- একটা নভেলে যদি লিটেরারি ট্রুথ থাকে ওইটার আর কিছু লাগে না – এলেনা ফেরান্তে
- পলিটিক্স যা করে সাহিত্য তার চাইতেও দীর্ঘস্থায়ী বিষয়ের মামলা – মারিও বার্গাস ইয়োসা
- আপনার যেইটা বলা লাগবে সেইটাই আপনার ফর্মটা ঠিক করে দিবে – ডোরিস লেসিং
- একজন লেখকরে রিস্ক নিতে হয়, সে যা দেখে সবকিছুরেই লিখতে পারার বিষয়ে – জেমস বল্ডউইন
- একজন ভালো লেখকের তার নিজস্ব স্টাইল থাকতে হয় – কেনজাবোরো ওয়ে
- সাহিত্য কোনো মোরাল বিউটি কনটেস্ট না – ফিলিপ রথ
- এমন এক অডিয়েন্স থাকে যারা আসলে কোথাও এগজিস্ট করে না – হা জিন
- সাহিত্য এবং আর্টে কিছু ভড়ং, কিছু মহৎ এটিচিওড ঢুকে গেছে, যেগুলা ডেনজারাস – চেসোয়াফ মিয়শ
- একটা নভেলের জন্ম একটা কবিতা দিয়া শুরু হয় – গুন্টার গ্রাস
১.
বিখ্যাত ফরাসি পেইন্টার এদগার দেগার শেষজীবনে কবিতার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিলো। দেগা দিনরাত কবিতা লেখার চেষ্টা করলো। কয়েকদিনের জোর চেষ্টাতেও তেমন কিছু হইতেছে না দেইখা, দেগা তার কবিবন্ধু স্তেফান মালার্মেরে চিঠিতে লিখলো, ‘আমার মাথা অসাধারণ সব কবিতার আইডিয়ায় ভর্তি। অথচ আমি অনেক চেষ্টা কইরাও একটা ভালো সনেট লিখতে পারতেছি না। সমস্যাটা কী?’ [pullquote][AWD_comments][/pullquote]
স্তেফান মালার্মে জবাবে কইলেন, আমার মাথায়ও দারুণসব ল্যান্ডস্কেপের আইডিয়া আসে। অথচ আমি আঁকতে পারি না, কারণ রঙ–তুলির ব্যবহার আমি ভালোমতো জানি না। দেগা, তুমি খালি আইডিয়া দিয়া কবিতা লিখতে পারবা না। শব্দ দিয়া লিখতে হবে।
দেশে রাইটিং ক্র্যাফট নিয়া কোনো আলাপ দেখলেই দেগা–মালার্মের এই পত্রালাপ আমার মনে আসে। পেশাদারি সিস্টেমে বইয়ের লেখালেখি বা বেচাবিক্রি দেশে না থাকায় কয়েকটা বাজে ফল হইছে। একটা হইতেছে, রাইটিং ক্র্যাফট নিয়া সাধারণত তেমন আলাপ দেখা যায় না। আবার পাঠকদের মুগ্ধতা কইমা যাইতে পারে –এই আশংকা থিকা বা অন্য যে কারণেই হউক, পপুলার লেখক–কবিরা রাইটিং ক্রাফট নিয়া এমনভাবে বাৎচিত দেন যে তাতে মনে হইতে পারে, লেখা জিনিসটায় শেখার কিছু নাই, লেখালেখির পুরাটাই স্পেশাল প্রতিভার ব্যাপার; শিল্পকর্ম, পুরাটাই আকাশ থিকা শিল্পীর উপ্রে নাজিল হয় অথবা কাব্যলক্ষ্মী স্বপ্নে আইসা দিয়া যায়। ফলে, প্রতিভার বাইরেও লেখকের যে টেকনিক্যাল প্রস্তুতির দরকার আছে এই ব্যাপারে আলাপ আমি খুব একটা হইতে দেখি না।
তো, পামুক এই ইন্টারভিউতে জানাইছেন, তিনি কেমনে প্রস্তুতি নেন। কিভাবে বড় একটা কাহিনীরে আগেই পুরাপুরি আউটলাইন করে নেন বা পুরা বইটারে অনেকগুলা অধ্যায়ে ভাগ করেন। স্নো উপন্যাসটা লেখার আগে কিভাবে কয়েক বছর ধইরা ফিল্ডওয়ার্ক করছেন। সেই ফিল্ডওয়ার্কের প্রস্তুতি ও পদ্ধতি নিয়া কথা বলছেন। এমন না যে শুধু ক্র্যাফট নিয়াই শুধু কথাবার্তা বলছেন পামুক ইন্টারভিউতে।
২.
পামুকের আরও অনেক ইন্টারভিউ নেটে পাওয়া যায়। প্রায় সবগুলাই আমি পড়ছি। পইড়া মনে হইছে, সেগুলার তুলনায় প্যারিস রিভিউ–এর সাথে এই আলাপে ব্যক্তিগত জীবন নিয়া অনেক বেশি ওপেন হইছেন পামুক। অবাক হইছি পিঠাপঠি বড় ভাইয়ের সাথে তার যে ফ্রয়েডিয়ান সম্পর্ক, জেলাসি আর সেই সম্পর্ক তার সাহিত্যে কিভাবে আসছে সেসব নিয়া যেভাবে বিশদে বলছেন পামুক, আর কোনো ইন্টারভিউয়ে তারে এতোটা অন্তরঙ্গ হয়া কথা কইতে দেখি নাই।
তার শৈশব, বেড়ে ওঠা, যৌবনে তার সাহিত্যিক হইতে চাওয়া–জনিত জটিলতাসহ জীবনের অন্তরঙ্গ ও বহিঃরঙ্গের নানান দিক উঠে আসছে যা নোবেলজয়ী এই লেখকের ব্যাপারে পাঠকের কৌতূহল পুরাপুরি যদি নাও মেটায়, তার সাহিত্যের ব্যাপারে অন্তত যথেষ্ট আগ্রহী কইরা তুলবে।
৩.
এই ইন্টারভিউয়ের আরেকটা ভালো দিক আমার কাছে মনে হইছে পামুকের রাজনীতির জায়গাটা বুঝতে পারে। লেখকদের, স্পেশালি এই দেশের মতো গরিব দেশের লেখকদের, আইডিওলগ আর প্রপাগান্ডা মেশিন হয়ে ওঠার নানান ইন্সেন্টিভ থাকে সমাজে। সেই ইন্সেন্টিভরে রেজিস্ট করাটা যে কঠিন সচেতন কাজ তার ইশারা পামুকের ইন্টারভিউতে আছে। ফ্ল্যাট রিয়ালিস্টদের ব্যাপারে পামুক বলতেছেন, ‘সেইসব লেখক যারা ভাবছে সাহিত্যের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা আছে। তারা ফ্ল্যাট রিয়ালিস্ট, নিরীক্ষাধর্মী না। অনেক গরিব দেশের লেখকদের মতো তারা তাদের প্রতিভা খোয়াইছে জাতির সেবায় নিয়োজিত হইতে গিয়া।‘
আলাপে উঠে আসছে, তুর্কি জাতির পূর্ব আর পশ্চিমের ভাব ও চিন্তা এবং কালচারাল ইতিহাসের দোলাচালে থাকার ব্যাপারটা। তুর্কিরা আমাদের মতো প্রায় দুই শ বছর কলোনাইজড হয়ে কখনই থাকে নাই, কিন্তু পূর্ব আর পশ্চিমের কতটুকু গ্রহণ বা বর্জন করা যাবে, কিভাবে বাছবিচার করা যাবে বা অন্ধ অনুকরণের সমস্যা ইত্যাদি নিয়া দ্বন্দ্ব আর দোলাচালে বাংলাদেশের সাথে পামুকের তুর্কির কিছু মিল আছে। কালচারাল পলিটিক্সে যা তুরস্কের জন্যে দরকারি বলে পামুক মনে করেন, বাংলাদেশের জন্যেও তা প্রযোজ্য বলে আমার মনে হয়ঃ একটা শক্তিশালী লোকাল কালচার উদ্ভাবন করা।
যা হোক, ইন্টারভিউয়ের একটা ছোট বইয়ের ভূমিকা লম্বা হইলে দৃষ্টিকটু লাগে। অতএব, শুরুর বিষয়ে ফিরে আইসা ভূমিকা শেষ করি।
খালি পামুকের এই ইন্টারভিউটা না, প্রিন্ট পোয়েট্রির পুরা ইন্টারভিউ সিরিজটার ক্ষেত্রে আমি বলবো, লেখক জীবনের নানান দিকের প্রতি পাঠকদের কৌতূহল মেটানোর পাশাপাশি, নিশ্চয়ই ইহাতে লেখকদের/ওয়ানাবি লেখকদের জন্যে রহিয়াছে চিন্তার খোরাকি। আমার এই দাবির সঠিকতা বা বেঠিকতা বিচারের জন্যে পাঠকেরা তো আছেনই।
হ্যাপি রিডিং।
কে এম রাকিব
২৯ অক্টোবর ২০১৯ | মিরপুর–১ | ঢাকা
……………………………………………………………..
বইটা রকমারিতে প্রি-অর্ডার করতে এইখানে ক্লিক করেন:
https://www.rokomari.com/book/191550/the-art-of-fiction
এই বইটাসহ বাছবিচার ও প্রিন্ট পোয়েট্রি ইন্টারভিউ সিরিজের পয়লা কিস্তির ৬টা বই প্রি-অর্ডার করতে পারেন এই লিংকে:
https://www.facebook.com/103006071146144/posts/103248241121927/
কে এম রাকিব
Latest posts by কে এম রাকিব (see all)
- বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ – অমর্ত্য সেন (পার্ট ১) - জানুয়ারি 25, 2024
- পলিটিক্স যা করে সাহিত্য তার চাইতেও দীর্ঘস্থায়ী বিষয়ের মামলা – মারিও বার্গাস ইয়োসা - অক্টোবর 3, 2023
- উডি এলেনের ইন্টারভিউ: সমস্যা হইতেছে ক্রিয়েটিভ হওয়ায় কিছু গ্ল্যামার আছে - জুন 2, 2022