Main menu

এমন এক অডিয়েন্স থাকে যারা আসলে কোথাও এগজিস্ট করে না – হা জিন

This entry is part 25 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

হা জিনের জন্ম চায়নাতে, কিন্তু লেখক হয়া উঠসেন আমেরিকা আইসা। ১৯৮৯ সালে চীনে তিয়েনানমেন স্কয়ারে প্রতিবাদকারীদের উপর সরকারি বাহিনির হামলা না হইলে হয়ত কখনোই তিনি রাইটার হইতেন না। হামলায় কতোজন মারা গেছে সেইটার হিসাব এক্সাক্টলি কারো জানা না থাকলেও বিভিন্ন সোর্স অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা হাজার জনের উপরে। এই ঘটনা স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় আসা হা জিনরে গভীরভাবে নাড়া দেয়। ঘটনার পরে তিনি ঠিক করলেন আমেরিকাতেই থাইকা যাবেন তিনি। এই ম্যাসাকারের পরেই সিরিয়াসলি ইংলিশে লিখতে শুরু করেন। কোনো একটা সিগনিফিকেন্ট ইভেন্ট যে মানুষরে কোর থেকা পাল্টায়া দিতে পারে তার একটা এক্সামপল হা জিন।

হা জিনের জন্ম ১৯৫৬ সালে উত্তর-পূর্ব চায়নার লিয়াওনিং প্রদেশে। বাপ ছিলেন রেভল্যুশনারি আর্মির একেবারে প্রথমদিককার মেম্বার। আম্মা ছিলেন সিভিলিয়ান। নানা জমির মালিক ছিল দেইখা বিপ্লবের পর কিছুদিন তার মা’রে গারবেজ কালেক্টর বানায়া রাখা হইসিল পানিশমেন্ট হিসেবে। মিলিটারি বাপের ঘন ঘন ট্রান্সফারের কারণে অনেকগুলা প্রদেশে তার থাকা হইসে।

চায়নায় কালচারাল রেভল্যুশন স্টার্ট হওয়ার টাইমে জিনের বয়স ছিল দশ। ফ্যান্সি একটা স্কুলে পড়তেসিলেন তিনি, কিন্তু রেভল্যুশনের কারণে তারটা সহ দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়া যায়। চোদ্দ বছর বয়সে জিন নির্ধারিত বয়সের আগেই চিপাচুপা দিয়া আর্মিতে জয়েন করেন। তার পোস্টিং পড়সিল বর্ডার এলাকায়, যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে চায়নার ছাড়া ছাড়া সংঘর্ষ চলতেসিল। উনিশ বছর বয়সে মিলিটারি ছাইড়া ফেরত আসেন হা জিন। পাঁচ বছরের মিলিটারি সার্ভিসে তিনি লাইফের হার্ডশিপ এবং চাইনিজ লাইফের কমপ্লেক্সিটি এক্সপেরিয়েন্স করার সুযোগ পান, যেগুলার অনেককিছুই পরে তার লেখায় দেখা যায়।

মিলিটারি ছাইড়া আসার পর জিন হেইলংজিয়াং ইউনিভার্সিটি থেকা ইংলিশ স্টাডিজে ব্যাচেলর আর শ্যানডং ইউনিভার্সিটি থেকা অ্যাংলো-আমেরিকান লিটারেচার নিয়া মাস্টার্স করেন। তারপর তিনি স্কলারশিপে আমেরিকার ব্র্যান্ডেইস ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যান। ঐখানে পড়ার সময়েই চীনে তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকার হয়। পরে হা জিন ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়া MFA এবং একটা PhD ডিগ্রিও নেন। আমেরিকায় আসার পর বিভিন্ন জব করার পর তার ক্যারিয়ার সেটল হয় ইউনিভার্সিটির মাস্টার হিসেবে। বর্তমানে হা জিন ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে লিটারেচার এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর ওপর মাস্টারি করেন।

রাইটিং স্টাইল আর গল্পের থিম নিয়া পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য কনটেম্পোরারি লিটারেচারে হা জিন আলাদা জায়গা বানায়া নিতে পারসেন। মিনিমালিস্ট গদ্য, ইনসাইটফুল ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট আর মানুষের রিলেশনশিপের জটিলতার জায়গাগুলা এক্সপ্লোর করা তার লেখালিখির অন্যতম বৈশিষ্ট। হা জিনের বেশিরভাগ গল্প-উপন্যাস লেখা হইসে চায়নার বিশৃঙ্খল ইতিহাস আর আমেরিকায় বাস করা একজন ইমিগ্র্যান্টের এক্সপেরিয়েন্সের কনটেক্সট থেকা।

সাধারণ মানুষ এবং তাদের লাইফে পলিটিকাল ও সোশাল পাওয়ারগুলার প্রভাব নিয়া এক্সপ্লোরেশন তার কাজের আরেক বৈশিষ্ট্য। চীনের বিশৃঙ্খল ইতিহাস আর কালচারাল রেভল্যুশনরে কেন্দ্রে রাইখা অনেকগুলা গল্প তিনি লিখসেন। হা জিনের হিস্টোরিকাল উপন্যাস War Trash একজন ইয়াং চাইনিজ সোলজারের গল্প যারে কোরিয়ান যুদ্ধে ‘ভলান্টিয়ার’ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে পাঠানো হইসিল। তিনি সাধারন সিটিজেনদের জীবন তুইলা ধরেন তার লেখায়, যারা পলিটিকাল ইডিওলজি আর সরকারি পলিসির মাঝখানে পইড়া ধরা খায়। The Crazed উপন্যাস লেখা হইসে ১৯৮৯ সালে মানুষের ওপর চায়নার তিয়েনানমেন স্কয়ার বিক্ষোভের গভির এবং স্থায়ি প্রভাব নিয়া। উপন্যাসের নায়ক জিয়ান এক বুড়া প্রফেসরের দেখাশোনা করে। অসুস্থ প্রফেসর বিক্ষোভের দ্বারা ট্রিগার্ড হয়া নিজের মানসিক ভারসাম্য হারায়া ফেলেন, আর হয়া উঠেন লাগামছাড়া জবানের একজন মানুষ। ইডিওলজি আর পলিটিকাল পাওয়ারের কাছে নিপিড়িত হইতে থাকা মানুষের এই অবস্থার ইমেজ তার লেখারে কইরা তোলে ইউনিভার্সাল।

মানুষের রিলেশনের জটিলতাগুলারে তুইলা ধরা হা জিনের লেখার আরেক বৈশিষ্ট্য। মানুষের আবেগের জটিল বন্ধনগুলারে ফুটায়া তুলতে তিনি পারদর্শী, যে বন্ধনগুলা তার ক্যারেক্টারদের একজন আরেকজনের সাথে বাইধা রাখে। Waiting উপন্যাসটা লেখা হইসে কালচারাল রেভল্যুশন পরবর্তী চায়নায় লিন কং নামের একজন মিলিটারি ডাক্তারের জীবনের ওপর। এই লোক তার ভালোবাসার মানুষরে বিয়ে করার জন্য প্রথম ম্যারেজ থেকা ডিভোর্সের জন্য আঠারো বছর অপেক্ষা করেন। ছোটগল্পের বই The Bridegroom-এ থিম হিসেবে হা জিন বাইছা নিসেন কনটেমপোরারি চায়নার কনটেক্সটে ভালোবাসা, ফ্যামিলি আর পারসোনাল রিলেশনশিপের ওপর। বইতে হা জিন এক্সপ্লোর করসেন দ্রুত বদলায়া যাইতে থাকা একটা সমাজ, যেখানে ট্রেডিশনের সাথে মডার্নিটির ক্ল্যাশ হয় এমন একটা জায়গাতে রিলেশনগুলা কিভাবে ফাংশন করে। বাজে একটা বিয়ের সম্পর্ক কিংবা দুইটা মানুষের অস্বাভাবিক বন্ধুত্ব, টপিক যেটাই হউক, হা জিনের লেখা মানুষের ইন্টার‍্যাকশনগুলারে মাঝখানে রাইখা।

হা জিনের লেখা ডিসপ্লেসমেন্ট কিংবা বিচ্ছিন্নতার একটা বোধ ক্যারি করে, যেটা আসতে পারে ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে তার নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকা। ইমিগ্র্যান্ট লাইফের স্ট্রাগল আর জটিলতাগুলা হা জিন তার অনেক লেখায় ফুটায়া তুলসেন। A Free Life উপন্যাস লেখা হইসে তিয়ান নামের এক চাইনিজ যুবকের আমেরিকায় আসার পরের ইমিগ্র্যান্ট লাইফ নিয়া। তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকারের পর সে ঠিক করে সে আর চায়না ফিরা যাবে না। বিদেশের মাটিতে একজন ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে তার নিজের একটা লাইফ গইড়া তোলা, নিজের আইডেন্টিটির সন্ধান আর কবিতা নিয়া তার প্যাশন ফলো করার মতন স্ট্রাগলগুলা এই উপন্যাসে এক্সপ্লোর করা হইসে। ছোটগল্পের বই A Good Fall-এর গল্পগুলাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো চাইনিজ ইমিগ্র্যান্টদের অভিজ্ঞতাগুলা নিয়া এক্সপ্লোর করসেন হা জিন। বইটার মেইন থিম হিসেবে হা জিন বাইছা নিসেন কালচারাল আইডেন্টিটি, আমেরিকান ড্রিমের পিছে ছোটা আর পুরানা এবং নতুন দুনিয়ার ভেতরকার ক্ল্যাশ। A Good Fall-এর গল্পগুলা নস্টালজিয়া, স্বদেশের প্রতি টানের মতো বিষয়গুলার জন্য আলাদা হয়া উঠতে পারসে, একইসাথে এই বই মাইনরিটি গোষ্ঠীর মেজরিটির কালচাররে নিজের কইরা নেয়ার প্রসেসে জটিলতাগুলার উপরও ফোকাস করসে।

হা জিনের লেখার আরেক উল্লেখযোগ্য দিক হইল ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা আর সামাজিক এক্সপেক্টেশনের সাথে লড়াই করা মানুষদের স্ট্রাগলের ওপর তার ফোকাস। তার ক্যারেক্টাররা প্রায়ই মরাল এবং এথিকাল ডিলেমা ফেইস করে আর তাদের পার্সোনাল চয়েসগুলার পরিণতি অনেক গভীর পর্যন্ত পৌছায়া যায়। হা জিনের প্রথম উপন্যাস In the Pond-এর মেইন ক্যারেক্টার শাও বিন, একজন ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার, একটা করাপ্ট আর বিউরোক্রেটিক সিস্টেমের ভেতর থাইকা নিজের ইন্টেগ্রিটি ধইরা রাখতে চায়। হা জিনের প্রথম ছোটগল্পের বই Ocean of Words-এর গল্পগুলার পটভূমি কালচারাল রেভল্যুশনের সময়কার চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি। সৈন্যদের ব্যক্তিগত খায়েশ আর কালেক্টিভ ডিউটির ভেতরকার কনফ্লিক্ট তার এই গল্পের বইতে বারবার আসছে। বইতে মানুষরে অবদমিত কইরা রাখে এমন একটা রেজিমের কাছে বন্দি থাইকা ভালোবাসা আর কানেকশনের জন্য আকুল ইন্ডিভিজুয়ালদের পেরেশানির ছবি ফুটায়া তুলসেন হা জিন। Under the Red Flag ছোটগল্পের বইতেও অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত একটা সোসাইটির কনটেক্সটের ভেতর থাইকা কনফরমিটি আর ইন্ডিভিজুয়ালিটির মতো টপিকগুলা থিম হিসেবে হা জিন বাইছা নিসেন।

কবিতার বেলাতেও হা জিনের রাইটিং স্টাইল তীক্ষ্ণ আর মিনিমালিস্ট। নির্বাসন, আইডেন্টিটি আর কালচারাল ডিসপ্লেসমেন্ট তার কবিতার মেইন থিম। কবিতায় ভাষার ব্যবহারে সংযম, থিমগুলার ইমোশনার ডেপথ আর তীব্র ইমেজ তার কবিতার স্থায়ি প্রভাব তৈরিতে অবদান রাখসে। এই জিনিসগুলার ব্যবহার ন্যাশনালিটি আর এথনিসিটির বাউন্ডারির বাইরে গিয়া ডাইভার্স পাঠকশ্রেণির কাছে তার কবিতার মিনিং তৈরি করে।

হা জিনের এই ইন্টারভিউটা রেলেভেন্ট, কারণ মানবজাতির ইতিহাস মাইগ্রেশনের ইতিহাস। নানা কারনে মানুষ নিজে কিংবা ফ্যামিলিসহ এক জায়গা ছাইড়া আরেক জায়গায় মাইগ্রেট করসে। ওয়ার্ল্ড লিটারেচারে এমন অনেক রাইটার খুইজা পাওয়া যাবে যাদের সেরা কাজগুলা হইসে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজে। স্যামুয়েল বেকেট, ভ্লাদিমির নবোকভ, ঝুম্পা লাহিড়ী, জোসেফ কনরাডসহ আরো এই লাইনে কমন নাম। হা জিনও এই তরিকার একজন রাইটার, যিনি নিজের ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ ছাইড়া বিদেশের মাটিতে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশে লেইখা রাইটার হিসেবে নাম কামাইসেন। ঘরে কিছু করার নাই বইলা নির্ধারিত বয়সের দুই বছর আগেই আর্মিতে জয়েন করা এক চাইনিজ টিনেজার ক্যামনে আমেরিকায় পড়তে আইসা একটা ইভেন্ট দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হয়া রাইটার হয়া উঠলো সেই জার্নিটা পুরা ইন্টারভিউ জুইড়া ফুইটা উঠসে। ইন্টারভিউতে একজন ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে বিদেশের মাটিতে থিতু হইতে তার স্ট্রাগলের জায়গাগুলার সাথে আমরা পরিচিত হইতে পারি। হা জিনের লেখালিখির একটা পোস্টমর্টেমের চেষ্টাও এই ইন্টারভিউতে করা হইসে।

কাউসার হামিদ জাওয়াদ
নভেম্বর, ২০২৩

ভাই-ব্রাদার এবং কলিগদের কাছে হা জিন তার সার্টিফিকেট নেইম জুফেই (Xuefei) নামে পরিচিত। মানুষ হিসেবে তিনি নিজের অস্থিরতায় ভরা ডার্ক ভাইবের ফিকশনগুলার একেবারে উল্টা, অমায়িক একজন ব্যক্তি। কমফোর্টেবল একজন মানুষ। বেশ আনন্দ নিয়াই ম্যাসাচুসেটসের শহরতলী এলাকা ফক্সবোরোতে তার বাড়ি আমাদের ঘুরায়া দেখাইতেসিলেন। দেখাইতে দেখাইতে আমাদের বলতেসিলেন যে, জায়গাটা এদিককার প্রিজার্ভ করা জঙ্গলের একেবারে সীমানা-ঘেষা বইলাই উনার ওয়াইফ উনারে কিনতে জোর করসিলেন। “এইখানে আমরা পিওর বাতাস পাই,” হাসতে হাসতে তিনি আমাদের বলসিলেন, “রোদেরও কোনো অভাব নাই। ওর (উনার ওয়াইফ) জন্য এইটা ইম্পর্টেন্ট।”

জিন তার বাসার ভেতরকার বর্ণনা দিসিলেন “কাজ চালায়া নেয়ার মতন” বইলা। রান্নাঘর বেশ পরিষ্কার। লিভিংরুম ডেকোরেট করা হইসে মাত্র একটা চেয়ার ও সোফা দিয়া। দুইটাই চাদর দিয়া ঢাইকা রাখা হইসে ওগুলার সিট কভাররে প্রটেকশন দেয়ার জন্য। স্টাডিরুম বাসার বাকি অংশ থেকা আলাদা। এই জায়গাটাও “কাজ চালায়া নেয়ার মতন।” রুমে ডেস্কের সংখ্যা দুই। ফ্লোরে একটা লো-ডেস্ক, যেখানে তিনি ম্যানুস্ক্রিপ্ট আর বইগুলা রাখেন। আরেকটাতে বইসা জিন লেখালিখি করেন। আর আছে একটা কইরা চেয়ার ও বসার টুল। একমাত্র জানালা দিয়া তাকাইলে উঠানের দিকে নজর পড়ে।

জিনের ছোটগল্পগুলাতেও যেন তার বাসার মতোই বড়সড়, খোলামেলা ভাবটা ফিল করা যায়। জিনের ছোটগল্পের বই চারটা (Ocean of Words, Under the Red Flag,¨The Bridegroom, এবং A Good Fall)। বর্ণনার স্টাইল এবং আয়রনির ব্যবহারে তীব্রতার জন্য বইগুলা আলাদাভাবে নাম কামাইতে পারসে। তার উপন্যাসগুলা (In the Pond, Waiting, The Crazed, War Trash, এবং A Free Life) আরো সাটল. উপন্যাসের নায়কদের প্রায়ই আমরা জটিল, আউট অফ কন্ট্রোল সিচুয়েশনে পড়তে দেখি। সিচুয়েশন তাদের বাধ্য করে সবধরনের নীতি-নৈতিকতার বাউন্ডারির বাইরে আইসা এক্ট করতে। A Free Life বাদে সবগুলা উপন্যাস ইংলিশে লেখা হইলেও তাদের পটভূমি হইলো চায়না। উপন্যাসগুলাতে ধীরগতির ন্যারেটিভ জিনের স্ট্রেট-ফরোয়ার্ড গদ্যরে আরো জীবন্ত কইরা তুলসে।

জিনের জন্ম উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশে ১৯৫৬ সালে। বাবা রেড আর্মির অফিসার হওয়াতে তার শৈশব এক জায়গায় কাটে নাই। বাবার পোস্টিং পরিবর্তনের সাথে সাথে জিনের এলাকাও চেইঞ্জ হইতো। মাও সেতুং যখন কালচারাল রেভল্যুশনের ডাক দিলেন, জিনের বয়স দশ বছর। সারাদেশে স্কুলগুলাতে তালা ঝুললো। বিপ্লবের পবিত্রভূমি থেকা সবরকম ইন্টেলেকচুয়াল ডাইভার্সিটি মুইছা দেয়ার ক্যাম্পেইনে মূল টার্গেট ছিল চাইনিজ ইয়াং জেনারেশন। জিনের জেনারেশনের অন্যান্যদের জন্য কালচারাল রেভল্যুশনের ট্রমা ছিল তাদের জীবনের সবচে বড়ো ঘটনা। জিনের রিয়্যাকশন ছিল অন্যদের তুলনায় ইমোশনলেস। ছোটবেলা থেকাই দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতা হয়ত তার অন্তররে আরো শক্ত কইরা তুলসে।

জিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৮৫ সালে স্টুডেন্ট ভিসায়। ব্র্যান্ডেইস ইউনিভার্সিটিতে আমেরিকান লিটারেচার নিয়া পড়তে। বছরখানেক পর স্কলারশিপের মেয়াদ শেষ হইলে তিনি নাইট ওয়াচম্যান, পাহারাদার, রেস্টুরেন্টে টেবিল-বাসন পরিষ্কারসহ বিভিন্ন জব করেন। দেড় বছর পর উনার ওয়াইফ বিয়ান আমেরিকায় আইসা তার সঙ্গে যোগ দেন। এখানে আইসা তিনিও বিভিন্ন জব করতে লাগলেন এবং দিনের শেষে টিভিতে সোপ অপেরা দেইখা ইংলিশ শেখা শুরু কইরা দিলেন।

জিন সিরিয়াসলি ইংলিশে লিখতে শুরু করেন ১৯৮৯ সালে তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকারের পর। এই সময়টারেই সকল গ্যাঞ্জামের উৎস, নিজের রাইটার জীবনের শুরু হিসেবে আইডেন্টিফাই করেন তিনি। ব্র্যান্ডেইসে একটা পোয়েট্রি ওয়ার্কশপের জন্য তিনি প্রথম ইংলিশে The Dead Soldier’s Talk নামে একটা কবিতা লিখসিলেন। সেইখানের প্রফেসর, কবি ফ্র্যাঙ্ক বিডার্ট কবিতাটা The Paris Review’র কবিতা বিষয়ক সম্পাদক জোনাথন গ্যালাসিরে দেখান। পড়া মাত্রই গ্যালাসি পত্রিকায় সেইটা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিডার্টের উৎসাহে জিন বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে ফিকশনের ওপর MFA প্রোগ্রামে ভর্তি হন। পরে তিনি আটলান্টায় ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে মাস্টারির চাকরি পান। ঐখানে মাস্টারির সময়কালে লেখা ছোটগল্প এবং উপন্যাসগুলার জন্য তিনি অনেকগুলা অ্যাওয়ার্ড জিতেন (PEN/Faulkner Award, the Flannery O’Connor Award for Short Fiction, a Guggenheim fellowship, এবং National Book Award)।

আমাদের ইন্টারভিউ’র বেশীরভাগ অংশই নেয়া হইসে জিনের বোস্টন ইউনিভার্সিটির অফিসরুমে। তিনি এইখানে লিটারেচার এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর ওপর তালিম দেন। প্রতিদিন বিকালে কয়েকঘন্টার জন্য আমরা তার অফিসে গিয়া দেখা করতাম। জিনকে আমরা একবারও পানির বোতলের দিকে হাত বাড়াইতে কিংবা কোনোরকম রিফ্রেশমেন্টের জন্য অস্থির হইতে দেখি নাই।

সারাহ ফে
২০০৯

ইন্টারভিউয়ার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর কোন ব্যাপারটা আপনার সবচে বেশি মনে আছে?

হা জিন: এখানে কেমিক্যাল কেমিক্যাল একটা গন্ধ ছিল। খুবই আজিব, একেবারে মাথা আউলায়া দেয়া একটা গন্ধ। এইটা ছাড়াও অনেক মানুষ পারফিউম ইউস করতো। আমার পরিচিত এক মহিলা চায়না থেকা এখানে আসছিল আমার মতোই। উনি আমারে বলসিলেন, নতুন নতুন এখানে আইসা উনার ঘনঘন বমি পাইতো।

ইন্টারভিউয়ার: ট্রিপটা নিয়া কি আপনার মনে কোনোরকম কনফিউশন ছিল?

জিন: না। চায়না থাকতেই আমি ট্রান্সলেটর হওয়ার তালিম নিতেসিলাম। ঐখানে লেখাপড়াও আমারে ইংলিশেই করতে হইসে। শ্যানডং ইউনিভার্সিটিতে আমি আমেরিকান কবিতা নিয়া পড়াশোনা করসি। বিয়েট্রিস স্পেড (Beatrice Spade) নামে ঐখানে একজন ফুলব্রাইট প্রফেসর ছিলেন। উনি আমারে আমেরিকান লিটারেচার পড়তে ব্র্যান্ডেইস (ইউনিভার্সিটি) যাওয়ার পরামর্শ দিসিলেন। ব্যাপারটা আমার লেখাপড়ারই একটা পার্ট ছিল। তখন অনেক মানুষের মুখেই শুনসি তারা বিদেশে গিয়া পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু এইটা নিয়া আমার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। বেশিদিন বিদেশ থাকার কোনো প্ল্যান আমার ছিল না।

ইন্টারভিউয়ার: আসার সময়ে কী কী সাথে নিয়া আসছিলেন?

জিন: একটা স্যুটকেস আর কান্ধে ঝোলানো একটা ব্যাগ। কিছু কাপড়। কয়েকটা বই। এক দুইটা ডিকশনারি।

ইন্টারভিউয়ার: আবার ফিরা গেসেন কতো বছর পরে?

জিন: আমি আর ফিরা যাই নাই।

ইন্টারভিউয়ার: একবারও না?

জিন: চায়নার বর্ডার কখনো ক্রস করি নাই। শুধু তাইওয়ান আর হংকং গেসি। শুরুর দিকে ভাই-ব্রাদার, ফ্যামিলির লোকদের দেখতে খুবই উতলা হয়া থাকতাম। কতো চেষ্টা যে করসি! কিন্তু সাত বছরেও পাসপোর্ট রিনিউ করাইতে পারি নাই। আমেরিকার বাইরে কোথাও যাইতে পারি নাই এই সময়ে। তারপর একদিন গ্রিন কার্ড পায়া গেলাম। ততদিনে পুরা বিষয়টা নিয়াই খুবই হতাশ হয়া গেসি। জাস্ট ইমাজিন যে, আপনার বইগুলা ব্যান করা হইসে ঐখানে—ঐখানে আপনে যাইতে পারবেন কিন্তু আপনার বইগুলা পারবে না। ব্যাপারটা আমি কখনো মাইনা নিতে পারি নাই।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার বইগুলা ব্যান করা হইসিল কেন?

জিন: আমি তো ট্যাবু সাবজেক্টগুলা নিয়া লিখি। তিব্বত, কোরিয়ান যুদ্ধ, কালচারাল রেভল্যুশন, তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকার। তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকারের পর আমি খুব স্পষ্টভাবে কথা বলতে শুরু করসিলাম। চায়নিজ অথরিটি আমার The Crazed, A Free Life, War Trash বইগুলার ওপর খুব খেইপা গেল। সচেতনভাবে আমি কখনো পলিটিকাল জিনিসপত্র লিখতে চাই নাই, কিন্তু আমার বইয়ের কারেক্টাররা সবাই পলিটিক্সের হাতে বন্দি। তাই বলা যায়, পলিটিক্সরে এভয়েড করা কখনোই সম্ভব না। চায়নায় তো আরো না। সরকারি ন্যারেটিভের বাইরে লেখা সত্য গল্পগুলারে চাইনিজ অথরিটি মারাত্মক ভয় পায়।

আমি একজন বেখাপ্পা মানুষ এটাও একটা কারণ। খুবই সোজাসাপ্টা কথা বলি। ইংলিশে লিখি বইলা তারা এইটারে মাতৃভাষার সাথে বেইমানি হিসেবে দেখে। পার্টির এজেন্ডাও আমি সার্ভ করি না। তাদের কাছে মানুষ হিসেবে আমি খুবই নেগেটিভ একটা এক্সামপল।

ইন্টারভিউয়ার: চায়না গিয়া নিজের লেখাগুলা পইড়া শোনানোর ইচ্ছা হইসে কখনো আপনার?

জিন: পাবলিক রিডিং বইলা কোনো জিনিস চায়নায় নাই। কোনো বইমেলায় হয়ত লেখকরা নিজেদের লেখা পড়সিলেন উপস্থিত থাইকা। কিন্তু এইটা শুরু হইসে খুব বেশিদিন হয় নাই। বড়জোর দুই কি তিন বছর। কবিদের নিজের কবিতা আবৃত্তি কইরা শোনানোর ট্রেডিশন আছে, কিন্তু অনেক বছর হইতেসে লোকেরা নিজেদের ঐরকম কইরা এক্সপ্রেস করারও সুযোগ পায় না। আমি যতোদিন ঐখানে ছিলাম, কখনো শুনি নাই যে কোথাও পাবলিক রিডিং হইতেসে।

অনেক বছর যাবত চায়নার বাইরে বসবাস করতেসি বইলা আমার মাঝে সোজাসাপ্টা কথা বলার একটা অভ্যাস গইড়া উঠসে। এখন যদি আমি আবার চায়না ফিরা যাই তাইলে আমার সবসময় সতর্ক হয়া চলতে হবে। ব্যাপারটা মেন্টালি আমারে ভীষণ প্যারা দিতে পারে। মেন্টালি ঐ অবস্থা থেকা ফেরত আসাটা শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করার চেও কঠিন বিষয়।

পলিটিকালি, চায়না একটা পিওর পুলিশি রাষ্ট্র। ই-মেইল থেকা শুরু কইরা সবকিছু ওপর নজরদারি করা হয়। ফোনকলগুলা পর্যন্ত ট্র্যাপ করে এরা। এক দশকেরও বেশি, প্রায় পনেরো বছর ধইরা চায়নায় নিজের বই পাঠাইতে পারি না। বই সেখানে যাওয়ামাত্র সরকারি এক্সামিনার সেগুলা চেক করতো। আগে বইগুলা পাঠাইতাম আমার বৌয়ের নামে, কিন্তু এখন সেইটাও সম্ভব হইতেসে না।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার কোনো বই-ই চায়নাতে এভেইলেবল না?

জিন: শুধুমাত্র Waiting-টা পাওয়া যায়। একটা সময়ের পর আমার মনে হওয়া শুরু হইসে যে ঐখানে আমার বই পাবলিশ হবে এরকম আশা না রাখাটাই উত্তম। তাই আমি আর চেষ্টা করি নাই। Waiting-এর বেলাতেও পাবলিশ করার পর বইটা আবার মার্কেট থেকা উঠায়া নেয়া হইসিলো। পরে যে ভার্সনটা মার্কেটে আসছে, ঐটা তাদের এডিট করা ভার্সন।

ইন্টারভিউয়ার: আপনে যদি চায়নাতেই থাইকা যাইতেন, তাইলে কী করতেন?

জিন: ট্রান্সলেটর হইতাম। ১০০% শিওর। হয়ত কোনো ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশের প্রফেসর হওয়ার জন্য খাটাখাটনি করতাম।

ইন্টারভিউয়ার: নিজে লিখতেন না?

জিন: না, না।

ইন্টারভিউয়ার: আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ইংলিশে মেজর করার ডিসিশনের আগে থেকাই কি আপনে ইংলিশ জানতেন?

জিন: কয়েকটা শব্দ ছাড়া কিছুই জানতাম না। এডমিশন টেস্টের আগে রেডিওতে একটা ইংলিশ শেখার প্রোগ্রাম শুনতাম আমি। কিন্তু ইংলিশ বলতে পারে এমন কোনো লোকের সাথে কখনো আমার দেখা হয় নাই। প্রত্যেক পরিক্ষার্থির সুযোগ ছিল মেজরের জন্য পছন্দের পাঁচটা সাবজেট চুস করার। আমি ইংলিশ রাখসিলাম লিস্টে সবার নিচে, কিন্তু যারাই পছন্দের লিস্টে ইংলিশ রাখসে সবাইরে আলাদা এক্সাম দেয়া লাগসে। আমাদের শহর জিয়ামুসিতে মানুষ ছিল তখন প্রায় আড়াই লাখ, কিন্তু ইংলিশ পরিক্ষা দিতে আসছিল মাত্র ষোলজন। পরিক্ষায় একদম টাইনাটুইনা পাশ করসিলাম আমি, কিন্তু নিশ্চই আমার রেজাল্ট বাকিদের চে ভালো ছিল তাই আমারে চুস করা হইসিল ইংলিশে মেজর করার জন্য। ল্যাঙ্গুয়েজটারে আমি একটা টুল হিসেবেই দেখতাম। আমার কাছে ইংলিশ ছিল ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়েল পড়ার ল্যাঙ্গুয়েজ, জ্ঞান অর্জনের ভাষা না।

ইন্টারভিউয়ার: ল্যাঙ্গুয়েজটা শেখা কি আপনার জন্য কঠিন ছিল?

জিন: ইংলিশে কথা বলাটা খুবই পেইনফুল ছিল আমার জন্য। চাপা, জিহবা, গলা সব ব্যাথা করতো। ব্যাথা কমাইতে আমার কয়েকজন ক্লাসমেট পেইনকিলার পর্যন্ত নিতো। কাজেই ইংলিশ শেখাটা আমার জন্য সহজ ছিল না। তবে খুব একটা পরিশ্রমও আমি করি নাই। পুরা ইউনিভার্সিটি লাইফ আমি ছিলাম সবচে নিচের সারির স্টুডেন্ট। খুবই শরমের একটা ব্যাপার ছিল এইটা। থার্ড ইয়ারের পরে আমি বুঝতে পারলাম যে আমেরিকান লিটারেচার নিয়া পড়তে চাই আমি। এই লাইনে ভালো কোনো প্রোগ্রামে ঢুকতে বিরাট এক ইংলিশ টেস্ট দিতে হইতো আমারে। এটাই ছিল বেসিক রিকোয়ারমেন্ট। যখন বুঝতে পারলাম যে, আমি হেমিংওয়ে আর ফকনার পড়তে চাই, ভাষাটা রপ্ত করতে কঠিন পরিশ্রম দিতে শুরু করলাম।

ইন্টারভিউয়ার: পুরাপুরি ইংলিশে চিন্তা করা শুরুর আগে আপনে কতোদিন যুক্তরাষ্ট্র ছিলেন?

জিন: লম্বা একটা সময় পর্যন্ত মাথার ভেতর চিন্তাগুলা আমি অর্ধেক করসি চাইনিজে, অর্ধেক ইংলিশে। এখানে আসার ২/৩ বছর পর থেকা বেশিরভাগ চিন্তা আমি ইংলিশেই করতে শুরু করি। যখন আমি র‍্যাশনাল চিন্তা করতাম, ইংলিশ ছিল আমার চিন্তার ল্যাঙ্গুয়েজ। কিন্তু আমি যখন ইমোশনাল থাকতাম, মাথার ভেতর শুধু চাইনিজ ওয়ার্ডই ঘোড়াফেরা করতো। আজকে যদি আমি চাইনিজে কিছু পড়ি কিংবা চাইনিজ নিউসপেপার দেখি, তাইলে আমি চাইনিজেই চিন্তা করবো। মাস্টারি করানোর সময়ে খুব বেশি চাইনিজ আমি পড়তে পারি না কারণ ব্যাপারটা আমারে কনফিউজ কইরা ফেলে। নিজেরে ইংলিশের বাউন্ডারির ভেতর রাখাটারেই বেটার মনে হয় আমার কাছে। কিন্তু এখনো চাইনিজে লেখার সময় আমি বেশি কনফিডেন্ট ফিল করি। চাইনিজ এখনো আমার ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ।

ইন্টারভিউয়ার: ইংলিশে লেখার ডিসিশন কেন নিসিলেন?

জিন: আমি চাইসিলাম চাইনিজ সরকারের সাথে এফিলিয়েটেড এমন সবকিছু থেকা নিজেরে আলাদা রাখতে। চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রচুর পলিটিকাল জার্গনে ভরা। আপনে লম্বা সময় নিয়া কথা বইলাও আসলে তেমন কিছুই না বইলা থাকতে পারবেন, কারণ এই পলিটিকাল জার্গনগুলা এখন পাবলিক স্পিকিংয়ের ফর্মুলা হয়া গেসে। জিনিসগুলা মানুষের চিন্তাভাবনার অংশ হয়া গেসে। লোকেরা তাদের কথাবার্তার মিনিং নিয়া প্রশ্ন তোলে না বললেই চলে।

ইংলিশে যখন লিখতে শুরু করলাম, তার আগে চাইনিজ ভাষায় আমি কবিতা লিখসি, আর একটা দুইটা ছোটগল্প লিখসি। তবে আমার লেখা তখনো কোথাও পাবলিশ হয় নাই। আমি যদি চাইনিজে লেখালিখি চালায়া যাইতাম, তাইলে আমার লেখাপত্র কই পাবলিশ হইতো? চায়নাতেই আমার লেখাপত্র পাবলিশ করা লাগতো আর প্রোপাগান্ডা অফিসাররা আমার লেখারে সেন্সর করতো। ঐখানে ম্যানুস্ক্রিপ্ট পাঠাইলে নিজের লেখার এডিটিং প্রসেস নিয়া আমি নিজেই কিছু বলতে পারতাম না। আমার তখন সেন্সরশিপের কাছে গিয়া নিজের মাথা নোয়াইতে হইতো।

ইন্টারভিউয়ার: দুইটা ল্যাঙ্গুয়েজের ভেতর ডিফারেন্সের জায়গাগুলা কী কী?

জিন: ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ইংলিশের ফ্লেক্সিবিলিটি চাইনিজের চে অনেক বেশি। ফ্লেক্সিবল একটা ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়ায় ইংলিশরে আপনে যেভাবে ইচ্ছা শেইপ দিতে পারবেন, ইচ্ছামতো এক্সপ্রেশন দিতে পারবেন। ঐ অর্থে ল্যাঙ্গুয়েজটারে খুবই ন্যাচারাল মনে হয়। ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে চাইনিজ অতোটা ন্যাচারাল না। চাইনিজের রিটেন ফর্ম ন্যাচারাল স্পিচগুলার জন্য কোনো জায়গা রাখে না। মৌখিক চাইনিজে আলাদা অনেকগুলা ডায়ালেক্ট থাকলেও সেগুলার লিখিত রূপ একটাই।

যেকোনো ডায়ালেক্টের শব্দের জন্য চাইনিজে লিখিত রূপ একটাই, অথচ মানুষের জবানে একই শব্দের শত শত রূপের দেখা পাওয়া যায়। এই রিটেন ফর্মের ন্যাচারাল কোনো রিদম নাই। ঐ অর্থে রিটেন চাইনিজ অনেকটা ল্যাটিনের মতো। লোকজন যেভাবে কথা বলে এই ভাষায় সেটা ফোটায়া তোলা সম্ভব না। মানুষের একসেন্ট এবং ব্যাকরণের বাইরের ব্যাপারগুলা ফোটায়া তোলা সম্ভব না চাইনিজে লেইখা। ইংলিশের মতন আপনে অক্ষরের (character) রদবদল কইরা নির্দিষ্ট এলাকার বুলি বোঝাইতে স্পেসিফিক ডায়ালেক্টে লিখতে পারবেন না কারণ চাইনিজে প্রতিটা অক্ষরের (character) মিনিং ফিক্সড।

প্রথম সম্রাট যখন পুরা চায়না এক করতে চাইলেন, তার প্রধান পলিসিগুলার একটা ছিল সবার জন্য সেইম লিখিত লিপি (written sign) তৈরী করা। শক্ত হাতে তিনি অন্য সব লিপি তিনি ধ্বংস করেন। একটা লিপিই হয়া উঠলো অফিশিয়াল লেখালিখির জন্য ব্যবহৃত লেখার ভাষা। বাকি লিপিগুলা ব্যান করা হইলো। যারাই অন্য লিপিতে লিখতো, তাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হওয়া লাগতো। প্রতিটা অক্ষরের মিনিং শতশত বছর ধইরা সেইম রাখা হইসে পলিটিকাল প্রসেসের অংশ হিসেবে। কাজেই, একেবারে শুরু থেকাই লিখিত চাইনিজ ছিল পাওয়ারফুল একটা পলিটিকাল টুল।

ইন্টারভিউয়ার: আপনে লিখতে শুরু করসেন কখন?

জিন: তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকারের পর আমি আমেরিকাতেই থাইকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিসিলাম, কিন্তু লাইফে কী করবো না করবো তখনো এগুলা কিছুই জানতাম না। আমি চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ রিলেটেড জবগুলাতে নজর রাখতে শুরু করলাম। কিন্ত প্রত্যেকটা ভাষা শিক্ষা আর নিউসপেপারের হয়া ট্রান্সলেটরের জবগুলাতে শতশত মানুষ এপ্লাই করতো। তাদের বেশিরভাগেরই চাইনিজে ডিগ্রি ছিল। কিন্তু আমার ডিগ্রি তো সবগুলাই ইংলিশে।

আমি চাইতেসিলাম ইংলিশে লেখালিখি শুরু করতে, কিন্তু এই ব্যাপারে ঠান্ডা মাথায় ডিসিশান নিতে নিতে বছরখানেক লাইগা যায়। বেশ ভয়ই পাইতেসিলাম এইটা নিয়া। একজন লিটারারি রাইটার হওয়া মানে তো খালি একটার পর একটা বই ছাপায়া যাওয়া না, বরং ভাষার মাঝে নিজের জন্য একটা নিশ এরিয়া খুঁইজা বের করাও। এইটা নিয়াই ভয়ে ছিলাম। মানুষরে ছোট কইরা রাখতে চায়, দমায়া রাখতে চায় এমনসব শক্তির প্রেজেন্স থাকা সত্ত্বেও রুজিরুটি কামানোর প্র্যাক্টিকাল লাইফের বাইরে মিনিংফুল একটা এক্সিসটেন্স ধইরা রাখার ইচ্ছা আমার ভেতর ছিল। এই অর্থে, লেখার ব্যাপারটা আমার কাছে সাফার করাই। কিন্তু এই সাফারিংয়ের মিনিংটা এতো বেশি যে পাতায় পাতায় নিজের যুদ্ধটা আমার চালায়া যাইতে হবে।

ইন্টারভিউয়ার: প্রথমে আপনে কী লিখসিলেন?

জিন: ইংলিশে আমার প্রথম কাজ ছিল ব্র্যান্ডেইসে ফ্রাঙ্ক বিডার্টের (Frank Bidart) পোয়েট্রি ওয়ার্কশপের জন্য। আমি ছিলাম আমেরিকান লিটারেচার নিয়া পড়া গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট। ফ্রাঙ্ক বিডার্টের ওয়ার্কশপ কোনো ক্রেডিট কোর্স হিসেবে আমার কারিকুলামে এলাউড ছিল না। এবং আরেকটা ক্লাসের টাইমে পইড়া যাওয়াতে আমি কেবল প্রতি দুই সপ্তাহে একবার ওয়ার্কশপে এটেন্ড করতে পারতাম। কিন্তু ওয়ার্কশপের হোমওয়ার্কগুলা আমার জমা দেয়া লাগতো। এভাবেই ইংলিশে আমার লেখালিখি শুরু। “The Dead Soldier’s Talk” ছিল ইংলিশে আমার প্রথম ক্রিয়েটিভ কাজের চেষ্টা। কবিতাটা The Paris Review পাবলিশ করসিলো।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার কি মনে হয় প্রথম দিককার ঐ কবিতাগুলা আপনে পারটিকুলার কোনো অডিয়েন্সের জন্য লিখসিলেন?

জিন: জন ব্যারিম্যান-রে (John Berryman) প্রশ্ন করা হইসিলো উনি কাদের জন্য লিখেন। উত্তরে তিনি বলসিলেন, “সেই মৃতদের জন্য, যাদের আপনে ভালোবাসতেন” (“for the dead whom thou didst love.”)। কবিদের কাছে এইটা খুবই ক্লিয়ার যে তাদের এমন এক অডিয়েন্স থাকে যারা আসলে কোথাও এগজিস্ট করে না।

[ইন্টারভিউ’র একটা পার্ট]

Series Navigation<< সাহিত্য কোনো মোরাল বিউটি কনটেস্ট না – ফিলিপ রথসাহিত্য এবং আর্টে কিছু ভড়ং, কিছু মহৎ এটিচিওড ঢুকে গেছে, যেগুলা ডেনজারাস – চেসোয়াফ মিয়শ >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

কাউসার হামিদ জাওয়াদ

পরিচিত লোকজনের কাছে জাওয়াদ নামেই পরিচিত। ৩ শব্দের নাম নিয়া বিপদে আছেন। ঢাবি থেকে পাশ করসেন (লেখাপড়া থেকা মুক্তি পাইসেন)। আইলসামি, ঘুম, আড্ডা, ইউরোপিয়ান ফুটবল ভালো লাগে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে GOAT মানেন।
Avatar photo

Latest posts by কাউসার হামিদ জাওয়াদ (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →