Main menu

একজন লেখকরে রিস্ক নিতে হয়, সে যা দেখে সবকিছুরেই লিখতে পারার বিষয়ে – জেমস বল্ডউইন

This entry is part 22 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

১.
জেমস বল্ডউইন জন্মাইছিলেন ২ আগস্ট, ১৯২৪। আজকে থেকে প্রায় একশো বছর আগে। একশো বছর আগে আম্রিকার অবস্থা কেমন ছিল? সেইটা সম্ভবত আঁচ করা যায় বল্ডউইনের এই ইন্টারভিউটা পড়লে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন বিচ্ছিন্নতা এবং রেসিয়াল অপ্রেশনের বাস্তবিকতায় আইন জারি করার পক্ষে যে আন্দোলন এবং প্রতিবাদ শুরু হইছিল বিশ শতকের শুরুতে তার শেষ দশ বছরের মাথায় বল্ডউইন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। বল্ডউইন আম্রিকান রেসিয়াল অপ্রেশনের রগরগে পরিণতির সাক্ষী হইছিলেন। ওনার বন্ধুর ব্রিজ থিকা লাফ দিয়া আত্মহত্যা করা, চল্লিশ ডলার নিয়া প্যারিসে চইলা আসা। এগুলা তো এক ধরণের ঘটনাই। সম্ভবত একজন লেখক তৈরী হয় তার সমাজের নানান ঘটনার ভেতর দিয়া, একটা এগজিস্টিং বাস্তবতা এবং পরে সম্ভাবনাময় এক বাস্তবতার ভেতর দিয়া। বল্ডউইন তো অন্য যেকোনো কিছুই হইতে পারতেন, যেমনটা উনি ইন্টারভিউতে বলতেছিলেন। তবু লেখকই হইলেন এবং একজন এংরি ইয়ং ম্যান।

২.
বল্ডউইন তার বাস্তবতারে ফিকশনালাইজ করছেন। ওনার আত্মজিজ্ঞাসা, সোসাইটির সাথে তার নিজের সম্পর্ক, নানান ডিলেমা এবং মানসিক জটিলতার ভেতর দিয়া যে উনি গেছেন, সেইগুলাই উনি ডিল করছেন তার লেখায়। অই সময়ের মেসকুলিনিটি, সেক্সুয়ালিটি, রেস এবং ক্লাস নিয়া যে সোশ্যাল ন্যারেটিভ তার বিপরীতে একজন সোশ্যাল অবজারভার হিশাবে তার খ্যাতি “সিভিল রাইটস মুভমেন্ট” ও “গে লিবারেশন মুভমেন্ট” এর সময় দেখা যায়। তার উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট একচেটিয়াভাবে শুধু আফ্রিকান আম্রিকান না, র‍্যাদার গে, বাইসেক্সুয়াল কারেক্টারও যা আসলে অই সময়ের বাস্তবতাটারেই রিফ্লেক্ট করে।

৩.
মরিস ব্লাশোর ‘লিটারেচার এন্ড দ্য রাইট টু ডেথ’ যেইটা মূলত ফ্রয়েডের ‘আনকনশাস’ এর উপর বেস করে লেখা। সেইখানে তিনি বলতেছেন, কেউ লেখালিখি শুরু করেন একটা প্রশ্ন থিকা, একটা জিজ্ঞাসা থিকা। কিন্তু আপনি যখন লিখতে বসেন এবং শেষপর্যন্ত আপনার লেখা হয়ে যায়, কিন্তু লেখার পরে আপনি সেই প্রশ্নের উত্তর আর খুঁজে পান না। যেমনটা বল্ডউইন বলতেছেন যে, লেখালিখির ব্যাপারটাই হইতেছে কিছু একটা খুঁজে বের করা, কিন্তু আপনি সেইটা আসলে আর খুঁজে পান না। সেই প্রশ্নাতীত একটা জায়গা থিকা তিনি তার অভিজ্ঞতাগুলারেই লিখছেন। এবং পরবর্তীতে ‘জিওভানিস রুম, ‘গো টেল ইট অন দ্য মাউনটেইন’ এর মতো ফিকশনসহ নন-ফিকশন ‘দ্য ফায়ার নেক্সট টাইম’, ‘নোটস অফ এ নেটিভ সন’ এর মতো বইগুলা ছিল তার সোশ্যাল-পলিটিক্যাল কনশাসনেসের ভেতর দিয়া আম্রিকান আধাসত্য, ব্লাশফেমি এবং মিথ্যার বিপরীতে একধরণের পাল্টা বয়ান তৈরী করা, অপ্রেসড এবং অপ্রেসর উভয়েরই মানসিক প্রভাবরে ডিল করা যা অই সময়ের আত্মাভিমানী সমাজের কাছে এক ধরণের অস্তস্তিকর সত্যের প্রকাশই ছিল।

৪.
একটা ইন্টারভিউ মূলত একজন লেখকের থট-প্রসেসটারে ধরতে কিছুটা সাহায্য করে। কিভাবে একজন লেখক কিছু জিনিস এডপ্ট করতেছে আর কিভাবে কিছু জিনিসরে বাতিল করতেছে সেইদিকে নজরটারে নিয়া যায়। বল্ডউইন এইখানে নানান বিষয় নিয়াই আলাপ করছেন। তার আর্লি এইজ, স্ট্রাগলিং সময়ের কথা, অন্য রাইটারের সাথে তার ভালো-মন্দ সম্পর্ক, ইভেন ফিকশন লেখার নানা টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়াও ডিটেইল আলাপ আছে। সব মিলায়ে, অই সময়ের ইউরোপ-আম্রিকার রেসিয়াল কনটেক্সটারে বোঝা যাবে ভালো।

সাঈদ শ’
এপ্রিল, ২০২৩

এই ইন্টারভিউ দুইটা নেওয়া হইছে লেখক হিশাবে জেমস বল্ডউইনের সংগ্রামের পছন্দের দুই জায়গায়। প্রথমে আমরা প্যারিসে দেখা করছিলাম, যেখানে উনি লেখক হিশাবে বাইড়া ওঠার প্রথম নয় বছর কাটাইছে এবং তার প্রথম দুইটা উপন্যাস লিখছেন, গো টেল ইট অন দ্য মাউন্টেইন আর জিওভানিস রুম। পাশাপাশি তার সবচে পরিচিত প্রবন্ধ সংগ্রহ, নোটস অফ এ ন্যাটিভ সন। উনি বলেন, প্যারিসেই উনি প্রথম নিজের সাথে এবং আম্রিকার সাথে তার বিদীর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে পরিচিত হন। আমাদের পরের আলাপটা হইছিলো সেন্ট পলে ডি ভেন্সের বল্ডউইনের বাড়িতে পাউট্রেস-এন্ড-স্টোনে, যেখানে লাস্ট দশ বছর ধইরা সে তার বাড়িটা বানাইছে। আমরা আগস্টের এক সপ্তাহে একসাথে লাঞ্চ করছিলাম তার মরশুমি গেস্ট ও সেক্রেটারি সহ। শনিবারে, অসহনীয় গরম আর আর্দ্রতার মধ্যে একটা ঝড় উঠছিলো, যার ফলে বাতজনিত কারণে তার লেখার হাত (বাম) এবং কব্জিতে ব্যথা হইছিলো। ঝড়ের কারণে অনিয়মিত বিদ্যুতের ঘাটতি আমাদের পাশের টেপ-মেশিনটার ব্যাঘাত ঘটাইছে। ব্ল্যাকআউটের সময় এলোমেলোভাবে বিষয়গুলা নিয়া আলাপ করতাম বা ড্রিংকে চুমুক দেওয়ার সময় নীরব হয়া থাকতাম।

বল্ডউইনের আমন্ত্রণে রবিবার ফিরা আসি, সূর্য জ্বলতেছিলো এবং বাইরে আমরা একটা পিকনক টেবিলে লাঞ্চ করতে সক্ষম হইছি, কুঞ্জছায়াঘেরা বিস্তৃত জমি যেইখানে ফলের গাছগুলা আর দেখার মতো ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী দৃশ্য। বল্ডউইনের মেজাজ আগেরদিনের চাইতে অনেকটা প্রফুল্ল হয়া উঠছে, এবং আমরা তার অফিসে ঢুকি আর পড়াশুনা করি যেইটারে তিনি তার “টর্চার চেম্বার’ হিশাবে বইলা থাকেন। বল্ডউইন স্ট্যান্ডার্ড লিগ্যাল প্যাডে লঙহ্যান্ডে লিখতেছেন, (‘আপনি সংক্ষিপ্ত ঘোষণামূলক বাক্যগুলি অর্জন করেন’) যদিও একটা বড়, পুরানা এডলার ইলেকট্রিক তার ডেস্কের একপাশে বইসা আছে — একটা আয়তকার ওক তক্তা যার দুইপাশে বেতের চেয়ার বসানো। একটা লেখার জায়গা এবং বেশ কয়েকটা খসড়া দিয়া স্তূপ করা হইছে; একটা উপন্যাস, একটা নাটক, আঁকা ছবি, আটলান্টা শিশুর হত্যার উপরে প্রবন্ধ, এগুলা সর্বশেষ ‘দ্য এভিডেন্স অফ থিংস নট সিন’-এ সংকলিত। তার রিসেন্ট কাজের মধ্যে আছে দ্য ডেভিল ফাইন্ডস ওয়ার্ক, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জাতিগত পক্ষপাত ও ভয়ের বিরুদ্ধে এক ধরণের আক্রমণ, একটা নোবেল, জাস্ট এবভ মাই হেড, যা ১৯৬০-এর দশকে সিভিল-রাইটস এক্টিভিস্ট হিশাবে তার অভিজ্ঞতা থিকা লেখা।

জর্ডান এলগ্রাবলি
১৯৮৪

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি বলবেন কিভাবে স্টেট ছাইড়া আসলেন?

বল্ডউইন: আমি ভাইঙা পড়ছিলাম। আমি প্যারিসে আসছিলাম চল্লিশ ডলার নিয়া, কিন্তু আমারে নিউ ইয়র্ক থিকা বাইর হইতে হইছিল। আমার অবস্থা তখন নানান মানুষের দুরবস্থায় পীড়িত ছিলো। একটা সময়, পড়াশুনা আমারে লম্বাসময়ের জন্য দূরে নিয়া গেছিলো। তখনো আমারে রাস্তাঘাট, অথরিটি আর ঠাণ্ডার সাথে ডিল করতে হইছে। আমি জানতাম শাদালোক হওয়ার অর্থ কি, আমি জানতাম একটা নিগ্রো হওয়ার অর্থই বা কি এবং আমি জানতাম আমার লগে আসলে কি ঘটতে যাইতেছিল। আমি আমার ভাগ্য হারায়া ফেলছিলাম। আমি জেলে যাইতেছিলাম, আমি কাউরে খুন করতে যাইতেছিলাম অথবা খুন হইতে। জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ থিকা লাফ দিয়া আমার বেস্টফ্রেন্ড দুই বছর আগে সুইসাইড করছিল।

১৯৪৮ সালে যখন প্যারিসে আসি, ফরাসি ভাষার একটা শব্দও আমি জানতাম না। আমি কাউরে চিনতাম না আর কাউরে চিনতেও চাই নাই। পরে, যখন আমি অন্য আম্রিকানদের সামনাসামনি হইতাম, আমি তাদের এড়ায়ে চলা শুরু করছিলাম কারণ ওরা ছিলো আমার থিকা পয়সাওয়ালা আর আমি নিজেরে সুবিধাভোগী ভাবতে চাই নাই। যেই চল্লিশ ডলার নিয়া আমি আসছিলাম, আমার মনে আছে, তা দিয়া দুই তিন দিন চলতে পারছিলাম। আমি যখনই পারতাম টাকা ধার করতাম — প্রায়ই শেষ মূহুর্তে, এক হোটেল থিকা আরেক হোটেলে যাইতাম, আমি জানতাম না আমার লগে কি ঘটতে যাইতেছে। পরে, আমি অসুস্থ হয়া গেছিলাম। আশ্চর্য যে, আমারে হোটেল থিকা বাইর করে দেওয়া হয় নাই। এক কোর্সিকান (ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপের ফ্রান্সের এক ধরণের স্থানীয়) ফ্যামিলি, আমি জানি না কেন তারা আমার যত্ন-আত্তি করছিল। একটা বুড়ি, বুড়ি মহিলা, একজন গ্রেট ম্যাট্রিয়ার্ক (কোনো গোষ্ঠী বা পরিবারের প্রধান নারী বিশেষ), তিনমাসে আমারে সুস্থ কইরা তুলছিল পুরানা আমলের চিকিৎসা দিয়া। এবং আমি বাঁইচা আছি কিনা দেখতে প্রত্যেক সকালে পাঁচতলা সিঁড়ি টপকায়া আসতো আমার কাছে। অই সময়টা আমি খুব একা ছিলাম আর থাকতেও চাইছিলাম। আমি কোনো কমিউনিটির অংশ ছিলাম না, পরে নিউইয়র্কের এংরি-ইয়ং-ম্যান হওয়ার আগ পর্যন্ত।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কেন ফ্রান্স বাইছা নিলেন?

বল্ডউইন: এইটা আসলে বাইছা নেওয়ার মতো বিষয় ছিল না। এইটা আম্রিকা থিকা বাইর হওয়ার একটা বিষয় ছিল। আমি জানতাম না ফ্রান্সে আমার লগে কি ঘটতে যাইতেছে, কিন্তু আমি জানতাম আম্রিকায় আমার লগে কি ঘটতে যাইতেছিল। আমি যদি অইখানে থাকতাম, আমার ফ্রেন্ডের মতো জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজের নিচে চইলা যাইতাম।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি বলছেন, শহর তারে পিটায়া মারছে। এইটা কি মেটাফোরিক্যালি বুঝাইছেন?

বল্ডউইন: একদমই মেটাফোরিক্যালি না। থাকার জন্য জায়গা খোঁজা, চাকরি খোঁজা। আপনি যখন আপনার বিচার-বিবেচনারে সন্দেহ করতে শুরু করেন, আপনি সবই সন্দেহ করতে শুরু করেন আসলে। আপনি আউলায়ে যান। আর তখনি আপনি নিচে নামতে শুরু করেন। আপনারে মারধর করা হইছে এবং জাইনা-শুইনাই করা হইছে। পুরা সমাজ এক হয়া আপনারে একটা ‘নাথিং’ বানাইছে। এবং তারা জানেই না যে, তারা এইটা করতেছে।

ইন্টারভিউয়ার: লেখালিখি কি এক ধরনের রেহাই দিছে আপনারে?

বল্ডউইন: আমি শিওর না। আমি আসলে শিওর না যে, আমি কোনো কিছু থিকা রেহাই পাইছি। এখনো কেউ না কেউ এইসবের সাথে বাঁইচা আছে, অনেকভাবেই। এইসবই আমাদের চারপাশে ঘটতেছে, প্রতিদিন। এইটা একইভাবে আমার সাথে ঘটতেছে না, কারণ আমি জেমস বল্ডুউইন। আমি সাবওয়েগুলাতে চড়তেছি না, না আমি থাকার জায়গা খুঁজতেছি। কিন্তু এইটা এখনো ঘটতেছে। তো এই প্রেক্ষিতে ‘রেহাই’ শব্দটা ব্যবহার করা কঠিন আসলে। ওদের সাথে বাঁইচা থাকার জন্য আমি একরকম বাধ্যই হইছিলাম আমার পরিস্থিতির ব্যাপারে তাদের বলতে। এইটা তাদের মাইনা নেওয়ার মতো একই ব্যাপার ছিল না।

ইন্টারভিউয়ার: এইটা কি হুট করেই জানতেন যে আপনি লিখবেন, অন্য কিছু না হইয়া একজন রাইটারই হবেন?

বল্ডউইন: হ্যাঁ। আব্বার মারা-যাওয়া। আব্বা মারা-যাওয়ার আগে আমি ভাবতাম, আমি অন্যকিছু করব। আমি মিউজিশিয়ান হইতে চাইছিলাম। ভাবছিলাম পেইন্টার হবো, এক্টর হবো। এইগুলা সব আমার উনিশ বছরের আগে। এই দেশের শর্তমতে একজন ব্ল্যাকম্যান-এর রাইটার হওয়া অসম্ভব ছিল। আমি যখন ছোট্ট ছিলাম, মানুষ ভাবছিল, আপনি একটা ডিজিজ হিশাবে অতোটা নচ্ছার না, ওরা আপনারে ছাইড়া দিছে। আমার আব্বা ভাবে নাই এইটা সম্ভব ছিল। উনি ভাবছিলেন, আমি খুন হবো, আমি মারা যাবো। উনি বলছিলেন, আমি হোয়াইট-ম্যানদের ডেফিনিশন নিয়া তর্ক-বিতর্ক করতেছি। যা একদমই ঠিক ছিল। তবে আমি আমার আব্বার কাছ থিকাও শিখছি, উনি হোয়াইট-ম্যানদের ডেফিনিশন নিয়া কি ভাবতেন। উনি ভালো-মানুষ ছিলেন, খুব পরহেজগার আর কিছু দিক দিয়া ছিলেন খুব সুন্দর, আবার কিছু দিক দিয়া একজন ভয়ংকর মানুষ। উনি মারা গেছিলেন যখন ওনার শেষ সন্তানের জন্ম হয় এবং আমি বুঝতে পারছিলাম আমারে একটা লাফ দিতে হবে—এ লিপ। চৌদ্দ থিকা সতেরো বছর পর্যন্ত আমি ছিলাম বয়াতি (preacher)। অই তিনটা বছরই সম্ভবত আমারে লেখিলিখিতে আনছে।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি পালপিট (গির্জায় যে সামান্য উঁচু বেদি থিকা পুরোহিত ধর্মোপদেশ দেয়) থিকা যে খুতবা পড়তেন, তা কি ঠিক করা থাকতো নাকি আপনার মাথায় যা আসতো তা-ই পড়তেন?

বল্ডউইন: আমি টেক্সট থিকা ইম্প্রোভাইজ করতাম। একজন জ্যাজ মিউজিশিয়ান যেমন থিম থিকা ইম্প্রোভাইজ করে! আমি কখনো খুতবা লিখি নাই। টেক্সটগুলাই পড়ছি। আমি কখনো বক্তৃতাও লিখি নাই। আমি বক্তৃতা পড়তে পারি না। এইটা এক ধরনের গিভ-এন্ড-টেইক এর মতো। আপনি যাদের সাথে কথা বলতেছেন তাদের বুঝতে হবে। তারা যা শুনবে তার জবাব দিতে হবে আপনারে।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার মাথায় কি একজন রিডার থাকে যখন আপনি লেখেন?

বল্ডউইন: না, আপনি রাখতে পারেন না।

ইন্টারভিউয়ার: তো, এইটা কি বয়াতি (preacher) হিশাবে খুতবা পড়ার উল্টা?

বল্ডউইন: পুরাপুরিই। দুইটা রোল পুরাই আলাদা। আপনি যখন পালপিটে দাঁড়াইতেছেন, আপনারে শোনাইতে হবে এমন যেন আপনি জানেন যে আপনি কি বিষয়ে কথা বলতেছেন। যখন আপনি লিখতেছেন, আপনি এমন কিছু খোঁজার চেষ্টা করতেছেন যা আপনি জানেন না। আমার কাছে সমস্ত লেখালিখির ব্যাপারটা হইতেছে, খুঁজে বাহির করা যে, যা আপনি জানতে চান না, যা আপনি খুঁজে পাইতে চান না। কিন্তু কিছু একটা আপনারে বাধ্য করে।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি লেখক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিছেন, নিজেরে খোঁজার জন্য?

বল্ডউইন: আমি শিওর না যে আমি সিদ্ধান্ত নিছি। এইটা এমন হইতে পারে, অথবা এমন কিছুই না। যেহেতু নিজের কাছে আমি ছিলাম ফ্যামিলির বাপ। তারা এইটা এইভাবে দেখছিল— তা না কিন্তু তবু আমি ছিলাম বড় ভাই, এবং আমি এইটা সিরিয়াসলিই নিছিলাম। আমারে একটা এক্সাম্পল দাঁড় করাইতে হইছিলো। আমি নিজেরে আর কিছু হইতে দিতে পারি নাই, কারণ পরে তাদের কি হবে? আমি একটা নেশাখোর হইতে পারতাম। যেই রাস্তাগুলায় আমি চলাফেরা করছি, দৌড়াইছি, নিউইয়র্কে আমার মতো একটা ছেলের সাথে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারতো। ছাদে এবং সাবওয়েগুলাতে ঘুমানো। এখনো পর্যন্ত আমি পাবলিক টয়লেট ভয় পাই। যেমনেই হোক… আমার আব্বা মারা গেছে। এবং আমি বইসা বইসা ভাবতাম আমারে কি করা লাগবে!

ইন্টারভিউয়ার: লেখার সময় পাইতেন কখন?

বল্ডউইন: আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। কিছু চাকরির পাশাপাশি আমি লিখতে পারতাম। একটা সময় আমি ওয়েটার ছিলাম। যেমন ছিলেন জর্জ অরওয়েল, পারিসের ভিতরে, বাইরে এবং লন্ডনে। আমি অইটা করতে পারি নাই। আমি লোয়ার ইস্ট সাইডে কাজ করছি এবং এখন যেইটারে আমরা সোহো বলি।

ইন্টারভিউয়ার: আপনারে গাইড করার জন্য কেউ ছিল?

বল্ডউইন: আমার মনে আছে মফস্বলের ভিতরে এক রাস্তার পাশে ব্ল্যাক-পেইন্টার বিউফোর্ড ডেলানির সাথে সিগন্যালের লাইট চেইঞ্জের জন্য ওয়েট করতেছিলাম। উনি নিচের দিকে ইশারা কইরা বললেন, ‘দেখেন’। আমি তাকায়ে দেখলাম পানি। এবং উনি বললো, ‘আবার দেখেন’ আমি আবার তাকাইলাম, এবং আমি দেখলাম পানির উপরে তেল আর ডোবার জলে সিটিটা রিফ্লেক্ট করতেছে। এইটা ছিল আমার কাছে এক গ্রেট র‍্যাভেলেশন। আমি সেইটা ব্যাখ্যা করতে পারবো না। উনি আমারে শিখাইছেন কিভাবে দেখতে হয় এবং কিভাবে দেখাটারে বিশ্বাস করতে হয়। পেইন্টাররা প্রায়ই লেখকদের শিখাইছে কিভাবে দেখতে হয়। এবং একবার সেই অভিজ্ঞতাটা হইলে, আপনি এরপর থিকা অন্যভাবে দেখবেন।

ইন্টারভিউয়ার: আপনার কি মনে হয় পেইন্টাররা অন্য লেখকদের থিকা একজন ইয়াং রাইটাররে বেশি হেল্প করবে? আপনি এইরকম কিছু পড়ছেন?

বল্ডউইন: আমি সবকিছুই পড়ছি। আমি তেরো বছর বয়সে হারলেমের দুইটা লাইব্রেরিতে পড়ে বের হয়ে আসছিলাম। যে কেউ এইভাবে লেখার বিষয়ে অনেক কিছুই শিখতে পারে। প্রথমত, আপনি যত কম জানেন তা শিখেন। এইটা সত্য যে, একজন যত কম জানে তত বেশি শিখে। আমি এখনো শিখতেছি কিভাবে লিখতে হয়। আমি জানিনা টেকনিকটা কি। আমি যা জানি তা হইলো, আপনারে পাঠকদের দেখাইতে হবে। আমি এইটা শিখছি দস্তয়েভস্কি থিকা, বালজাকের থিকা। আমি নিশ্চিত যে, বালজাকের সাথে দেখা না হইলে ফ্রান্সে আমার জীবন খুব অন্যরকম হইতো। যদিও এইটা আমি কখনো ফিল করি নাই, স্টাফ, সমস্ত ফরাসি প্রতিষ্ঠানগুলা আর তাদের লোকেদের দিয়া কিছুটা বুঝতে পারছিলাম। কিভাবে অই দেশ আর তার সমাজটা চলতেছে। কিভাবে এর ভিতর আমার পথ খুঁইজা পাবো, হারায়ে না গিয়া, নিজেরে বাতিল না ভাইবা। ফরাসিরা আমারে দিছে যা আমি আম্রিকায় পাই নাই। যার অনুভূতিটা ছিল এইরকম ‘যদি আমি কিছু করতে পারি, করতে পারবো’। আমি জেনারালাইজ করতে চাই না। কিন্তু যেই বছরগুলাতে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় হইছি, আমি তা করতে পারি নাই। আমি সেইটা আগেই ডিফাইন করছি।

ইন্টারভিউয়ার: আপনি যা লিখতে চাইছিলেন তা কি শুরু থিকাই আপনার কাছে সহজভাবে হাজির ছিল?

বল্ডউইন: একটা ভয়াবহ লজ্জা থিকা আমারে মুক্তি পাইতে হইছিলো। একটা ইল্যুশন যা আমি যে কারো কাছ থিকাই লুকাইতে পারতাম।

ইন্টারভিউয়ার: আমি মনে করি, যে একটা সময় ধইরা কোনো নোট ছাড়াই লোকের সামনে খুতবা পড়তে পারে, সে আর কখনো লজ্জা পাইতে পারে না।

বল্ডউইন: আমি তখনো ভয় পাইতাম, এখনো পাই। কমুনিকেশন একটা দুইমুখা রাস্তা। এইটা একে অপররে শোনার বিষয়। সিভিল-রাইটস মুভমেন্টের সময় আমি আর এক যাজক, তালাহাসির (tallahassee) একটা গীর্জার পিছনে ছিলাম। যে আমারে চিনতে পারছিল, আমার নাম ধইরা ডাইকা আমারে কিছু খুতবা বলতে বলছিল। আমার বয়স তখন চৌত্রিশ এবং সতেরো বছর আগে পালপিট (গির্জায় যে সামান্য উঁচু বেদি থেকে পুরোহিত ধর্মোপদেশ দেন) ছাড়ছিলাম। যেই মুহূর্তে আমারে দাঁড়াইতে হইছিলো এবং আসনগুলার সামনে দিয়া হাঁইটা পালপিটের উপর দাঁড়ানো যা ছিলো অই সময়ের সবচে আশ্চর্য মুহূর্ত, আমার জীবনের। আমি গেছিলাম এবং যখন পালপিট থিকা নাইমা আসতেছি, জমায়েতের এক বুড়ি কালো ভদ্রমহিলা তার এক বন্ধুরে বলতেছিলো, ‘সে ছোট কিন্তু গলায় তেজ আছে’।

[বাকি অংশ বইয়ে ছাপা হবে…]

Series Navigation<< আপনার যেইটা বলা লাগবে সেইটাই আপনার ফর্মটা ঠিক করে দিবে – ডোরিস লেসিংএকজন ভালো লেখকের তার নিজস্ব স্টাইল থাকতে হয় – কেনজাবোরো ওয়ে >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

সাঈদ শ’

গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা; আব্বুর চাকরি সুবাদে বেড়ে ওঠা এবং থাকা চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশুনা এবং পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কবিতা লেখেন।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →