Main menu

একটা ক্যারেক্টার কখনোই ভালো বা খারাপ কিছু করতে পারে না, সে জাস্ট ট্রুথের সাইডে থাকতে পারে বা পারে না – টারানটিনো

This entry is part 11 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

জ্যাকি ব্রাউনের রিলিজ কুয়েন্টিন টারান্টিনোর জন্য অনেক চরম একটা মুহূর্ত। যদি পপ-কালচার টার্মে বলতে যাই, যার সাথে টারান্টিনো নিজে যথেষ্ট পরিচিত, তাইলে বলা যায় ডিরেক্টর হিসেবে তার থার্ড সিনেমা ততটাই এক্সপেক্টেশানের ভার বহন করতেসে যতটা কোনো ফেমাস মিউজিক ব্যান্ডের থার্ড সিডির করা লাগে।

রেজার্ভোয়া ডগস বা পাল্প ফিকশন-এর চেয়ে এইটা আলাদা, কারণ এইটা অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লে না, বরং একটা নভেলের এডাপটেশন। ক্যারেক্টার এস্টাবিলশ করার জন্য এইখানে অনেক পেইন নেয়া লাগসে, আর এইটাতে প্রায়-বার্গম্যানীয় ধৈর্যের সহিত লং টেক নিয়া এক্সপেরিমেন্ট করা হইসে, আর অফ-স্ক্রিন মেসি ভায়োলেন্স এড়ানো হইসে। তবু এইটা টারান্টিনোর ফিল্ম, অন্তত এর ল্যাঙ্গুয়েজের ইউজ হইতেই তা ইন্সট্যান্টলি বুইঝা ফেলা যায়। জ্যাকি ব্রাউন যেইজন্য সবচেয়ে বেশি প্রশংসা বা সমালোচনার শিকার হবে তার মেইন কারণ এর ডায়লগ: এতে রিদম আছে, ফোঁসফোঁসানি আছে, আর আছে হিউমার, টারান্টিনোর কাছে যা যা এক্সপেক্টেড। কিন্তু কেউ কেউ এতে অফেন্ডেডও হবেন, যেমন হইসিলেন আমাদের ইন্টারভিউয়ার, খুব স্বাভাবিকভাবে “নিগার” জাতীয় শব্দের ব্যবহারে, যা পাল্প ফিকশনেও করা হইসিলো।

এরিক বাওয়ার: জ্যাকি ব্রাউন মুভিটাতে আপনি ডায়লগগুলারে রিয়ালিস্টিক করার জন্য বহুকিছু করসেন। এইটা তো আপনি নর্মালি যে স্টাইলাইজড ডায়লগের জন্য ফেমাস তার সাথে অনেক কন্ট্রাস্ট করে।

কুয়েন্টিন টারান্টিনো: আমি এর আগে মাত্র দুইটা সিনেমা বানাইসি, তো এখনই আমারে কোনো বাক্সে ফালাইয়েন না, অন্তত ছয়টা সিনেমা আগে বানায়া নেই। রেজার্ভোয়া ডগস, পাল্প ফিকশন, আর স্ক্রিপ্ট লেখা হইসে ট্রু রোম্যান্স [ডিরেক্টর-টোনি স্কট] আর ন্যাচরাল বর্ন কিলার্সের [ডিরেক্টর-অলিভার স্টোন] জন্য, এগুলা সবই আমার নিজের ইউনিভার্সে ঘটে, কিন্তু তাই বইলা এগুলা ফ্যান্টাস্টিকাল না। এই মুভিটা আমার ইউনিভার্সে ঘটে না–এইটা এল্মোর লেনার্ডের ইউনিভার্স, আর আমার নিজের বানানো ছোট্ট ইউনিভার্সটার বাইরে গিয়া কাজ করা বেশ মজার ছিল। তো এইজন্য আমি একটু আল্ট্রা-রিয়ালিস্টিক হইতে চাইসিল। আমি একটা ভিন্ন লুক আনতে এবার আলাদা একজন সিনেমাটোগ্রাফার হায়ার করসিলাম [গ্যুইলেরমো নাভারো]। এখনও দেখতে জোস লাগে, জাস্ট আরেকটু বেশি ডাউন-টু-আর্থ করসি, হয়তো অত বেশি মুভি মুভি লাগবে না, অনেকটা ওই স্ট্রেইট টাইম এর মত। আমার সেট বিল্ড করতে ভাল্লাগে। কিন্তু জ্যাকি ব্রাউনে আমি এইটা করি নাই। এইখানের প্রত্যেকটা সিন অন লোকেশন শুট করা।

বাওয়ার: এল্মোর লেনার্ডের বই আপনারে কিরকম ইনফ্লুয়েন্স করসে?

টারান্টিনো: উনি আমারে পারমিশন দিসিলেন ক্যারেক্টারগুলারে নিয়া আমার মত কইরা কথা বলানোর। উনি আমারে দেখাইসিলেন যে ক্যারেক্টাররা খুব ছোটখাটো বিষয়েও চেইতা যাইতে পারে, আর এই ছোটখাটো জিনিসগুলাও টোটালি ভ্যালিড। বাস্তব জীবনে মানুষজন যেমনে কথা বলে। আমার মনে হয় আমার উপর ওনার সবচেয়ে বেশি ইনফ্লুয়েন্স ছিল ট্রু রোম্যান্স লেখার সময়। আমি আসলে আমার নিজের মত কইরা এল্মোর লেনার্ডের নভেলরেই স্ক্রিপ্টের রূপ দিতে চাইতেসিলাম। মানে আমি তার লেখা মাইরা দেইনাই, হুবহু কিছুই আমি নেই নাই। জাস্ট একটা ফিলিং, একটা স্টাইল যা আমারে খুব ইন্সপায়ার করসিলো আরকি।

বাওয়ার: জ্যাকি ব্রাউন আপনার অন্যান্য সিনেমার মত প্লট রিভার্সালের উপর অতটা ডিপেন্ড করে না, আর আপনার সিনেমার টুইস্টগুলা বেশিরভাগ সময় ডায়লগের মাধ্যমে আনা হয়।

টারান্টিনো: এই সিনেমাটাতে সবসময়ই কিছু না কিছু আনফোল্ড হইতেসে: মানে এইটার ঘটনা এমন না সিনেমার প্রথম দশ মিনিটেই জ্যাকি ফিগার আউট কইরা ফেলতেসে কিভাবে পাঁচ লাখ ডলার কামাবে আর তা করতে নাইমা যাইতেসে – না! ব্যাপারটা আস্তে আস্তে তার কাছে আসতে থাকে, লাইফ আর সিচুয়েশন বদলায় আর তার সাথে সেও আলাদা আলাদা ডিরেকশনে ছিটকায়া পড়ে। আস্তে আস্তে ইভলভ হয়, আর তারপর ওই পয়েন্ট হইতে যতক্ষণ সে কাজটা কইরা ফেলে ততক্ষণ সোজাসুজি যাইতে থাকে। এইটা অনেক নভেলিস্টিক একটা মুভি, মানে এইটার প্রথম নব্বই মিনিট জাস্ট ক্যারেক্টারাইজেশন। তারপর জাস্ট কাজগুলা ঘটানো, শেষ আধঘণ্টায় তারা জাস্ট ওইসব করতে থাকে, টাকা সুইচ করা আর ওইসব।

বাওয়ার: আপনার জ্যাকি ব্রাউনের স্ক্রিপ্টে আগেকার যেকোনো স্ক্রিপ্টের চেয়ে এক্সপোজিশন অনেক বেশি।

টারান্টিনো: এইটা একদম সত্য, হ। এই প্রথমবার এত বড়ভাবে এক্সপোজিশন নিয়া কাজ করতেসিলাম। এগুলা সবই বইয়ে হয়। এইটা ম্যাক্স আর জ্যাকির রিলেশনশিপের একটা পার্ট: নিজেদের প্রবলেমগুলা নিয়া কথা বলা, একজন আরেকজনের কাউন্সেল হিসেবে কাজ করে, হেল্প করার ট্রাই করে। আর সেকেন্ড হাফে অনেকটা ওর থটসগুলাই জোরে জোরে বলা হইতে থাকে, মেয়েটা অনেকটা নিজের সাথে কথা বলতেসে আরকি।

বাওয়ার: এইটার স্ক্রিনপ্লের জন্য আপনি নিজের জন্য কিরকম গোল সেট কইরা রাখসিলেন?

টারান্টিনো: একটা ফিমেল লিড ক্যারেক্টাররে ফলো করার আইডিয়াটা আমার ভাল্লাগসে। কিন্তু লোকজনরে খুবই আনফেয়ারভাবে অনেক জায়গায় বলতে শুনসি, “আহ কিন্তু ও মহিলাদের ঠিকমত লিখতে পারবে?” তারা এইসব স্রেফ এইজন্য বলতেসে কারণ আমি সবার আগে রেজার্ভোয়া ডগস বানাইসিলাম। কিন্তু চল্লিশের ঘরের এক কালো মহিলার লাইফ ফলো করার আইডিয়াটা আমার কাছে খুবই ইন্টেরেস্টিং লাগসে। আমার আসলেই মনে করি জ্যাকি ব্রাউন আমার। সে এখনও বইতে যেমন ক্যারেক্টার ছিল তেমনই, কিন্তু আমি সিনেমায় তারে কালো বানানোতে তার লাইফ এফেক্টেড হয়, কারণ এতে তার লাইফ এক্সপেরিয়েন্স, ডায়লগ এইসব আলাদা হইয়া যায়।

বাওয়ার: এই কারেক্টারটা করার জন্য কি কোনো রিসার্চ করসিলেন আপনি?

টারান্টিনো: আমি কিছু মহিলারে চিনতাম যাদের দেখলে জ্যাকির কথা মনে পড়তো, তো আমি তাদের ইউজ করসিলাম। আমি জাস্ট নিজের মধ্যে ওরে পাইতে চাইতেসিলাম। আমি এইটা নিয়া ফাইজলামি করি, কিন্তু একচুয়ালি আমি অনেকটাই একটা মেথড রাইটার। কোনো ক্যারেক্টার লেখার সময় আমি নিজে আসলেই সেই ক্যারেক্টারটা হইয়া যাই। ওই পুরা বছরটা আমি ছিলাম অর্ডেল। পুরা মুভির মধ্যে ওর সাথেই সবচেয়ে বেশি আইডেন্টিফাই করতে পারসিলাম। আমি ওর মত কইরা হাঁটতেসিলাম, ওর মত কইরা কথা বলতেসিলাম। আমি ওরে মাথা হইতে বের করতেই পারতেসিলাম না, চাইতেসিলামও না। আর একটা অদ্ভুতভাবে অর্ডেলই পুরা সিনেমাটার রিদম। ও যেমনে কথা কয়, যেমন জামাকাপড় পরে–ওর সবকিছু যেমন পুরা মুভিটারই যেন অমনই হওয়া উচিৎ। ও সোল মিউজিকের সেই ওল্ড স্কুল, ওইটারই পার্সোনিফিকেশন। আমি যদি আর্টিস্ট না হইতাম, তাইলে আমিও হয়তো অরডেলের মতই এক্সাইটেড থাকতাম।

বাওয়ার: কিন্তু এইটা তো তার মুভি না।

টারান্টিনো: না, এইটা জ্যাকির মুভি। কিন্তু জ্যাকির ক্যারেক্টারের ব্যাপারে জোস জিনিসটা হইলো সে একদমই রিভিলিং না। স্টোরির তাগিদে তার সবসময় একদম একটা পোকার ফেসে থাকতে হয়। স্টোরি রিকোয়ার করে যে তার মাথায় কি চলতেসে তা যেন বুঝা না যায়। আর এই এডাপ্টেশনের বেলায় যেই একটা জিনিস আমি ধইরা রাখার ট্রাই করসি তা হইলো যতবার জ্যাকি অর্ডেলের সাথে দেখা করে ততবার ও তারে পুলিশদের ব্যাপারে যা যা জানে সব বইলা দেয়। আর এইটা আমারে সবসময় সারপ্রাইজ করতো, যতবারই করতো ততবারই! মানে ব্যাপারটা হইসে, “মেয়েটা ওরে এত খারাপভাবে চুদতেসে!” ভাবতেসিলাম, “হায় খোদা ও আবার ম্যাক্সরেও চুদতেসে নাকি! হয়তো এবার ও সত্য বলতেসে কিন্তু শিওর তো জানিনা।” ম্যাক্স হইসে অডিয়েন্স–পুরা মুভিটা ম্যাক্সের চোখ দিয়াই দেখি আমরা। ম্যাক্সই মুভিটার কনশিয়েন্স আর হার্ট, আর ও ডেফিনিটলি মুভিটার মেজর হিউম্যান লিঙ্ক। ম্যাক্স হইলো অডিয়েন্স, কিন্তু অর্ডেল সিনেমার রিদম, মুভিটার আত্মা।

 

কিম মরগান

 

বাওয়ার: আপনার সিনেমায় অর্ডেল বইয়ের থিকা বেশ আলাদা। আপনার স্ক্রিপ্টে তারে আরো অনেক বুদ্ধিমান মনে হয়।

টারান্টিনো: অর্ডেল, লুইস আর মেলানির ব্যাপারে আমার আগে থিকাই জানা ছিল অনেকটা কারণ আমার সুইচ পড়া ছিল, আর ওইটাই ছিল আমার পড়া লেনার্ডের প্রথম বই [রাম পাঞ্চ-এর প্রিকুয়েল]। তো রাম পাঞ্চ পড়ারও আগে দিয়া আমি এই ক্যারেক্টারগুলারে চিনতাম, কারণ দ্য সুইচ হইতেই আমি মাথার মধ্যে এদের কিছুটা এডাপ্টেশন কইরা রাখসিলাম।

বাওয়ার: এমন কি কি এলিমেন্ট আছে যা টারান্টিনোর ইউনিভার্সরে ডিফাইন করে?

টারান্টিনো: রাইটিং প্রসেসে আমি খুব বেশি এনালিটিকাল না হওয়ার ট্রাই করি। আমি জাস্ট আমার ব্রেইন হইতে আমার হাতে ফ্লো’টা চলতে দেই, আমি আমার গাট ফলো কইরা মোমেন্টের সাথে সাথে চলতে পছন্দ করি। আর আমার কাছে, ট্রুথ একটা বড় জিনিস। আপনি লিখতেই থাকবেন লিখতেই থাকবেন আর তারপর এমন একটা মোমেন্ট আসে যখন আপনার ক্যারেক্টার এইদিকেও যাইতে পারে, ওইদিকেও, আর তখন আমি নিজের সাথে মিথ্যা বলতে পারি না। বেশিরভাগ হলিউড সিনেমায় আমি এই জিনিসটা দেখি না। বেশিরভাগ সিনেমায় ক্যারেক্টারগুলা সবসময় একটা মিথ্যার মধ্যে থাকে। তারা ওইটা করতে পারবে না কারণ এতে সিনেমাটা ওইভাবে এফেক্টেড হবে, তারা ওইটা করতে পারবে না কারণ ওতে অমুক জনগোষ্ঠী চেইতা যাবে। আমার মনে হয়, একটা ক্যারেক্টার কখনোই ভালো বা খারাপ কিছু করতে পারে না, সে জাস্ট ট্রুথের সাইডে থাকতে পারে বা পারে না।

প্রতিটা স্ক্রিপ্টেই চারটা থিকা ছয়টা বেসিক সিন থাকে যা শিওরলি করা হবে। কিন্তু সিনেমার একদম মিডলের সিনগুলাতেই ঠিকমত লেখা লাগে, কারণ ক্যারেক্টারগুলা ওইখান থিকাই জন্ম নেয়। ওইখানেই তাদের খুঁইজা পাওয়া যায়, ওইখানেই তারা থাকে। আমার মনে হয় একজন নভেলিস্ট এইভাবেই লেখে।

বাওয়ার: বেশিরভাগ স্ক্রিনরাইটারের ক্ষেত্রে দেখা যায় সবটাই প্ল্যান্ড স্ট্রাকচার, স্ট্রাকচার, স্ট্রাকচার।

টারান্টিনো: আমি অমনে করি না–এতে প্রথম এক্টেই বুঝা যায় এইটা কেমনে আগাবে। তাতে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। আপনার নিজের ভয়েসটাই সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট জিনিস, আর স্ক্রিনপ্লেতে এই ভয়েস থাকতে না পারার কোনো কারণ দেখি না! দুনিয়ায় অনেক ফালতু স্ক্রিনপ্লে লেখা হইতেসে, তো আপনি যদি একটা ভালো স্ক্রিনপ্লে লেখেন, তাইলে অনেকেই তাতে রেসপন্ড করবে। কিন্তু আপনি জাস্ট নতুন শুরু করতেসেন এমন যদি হয়, তাইলে আপনার কাজ এপ্রিশিয়েট করার মত লোকের কাছে পৌঁছাইতে অনেক সময় লাইগা যাইতে পারে। আপনার স্ক্রিনপ্লে বারবার ছুঁইড়া ফালায়া দিবে রিডাররা। কিন্তু তারপরও লাইগা থাকলে আপনি একসময় এইসব রিডারদের পার হইয়া তাদের কাছে পৌঁছাইতে পারবেন যারা ফালতু স্ক্রিনপ্লে পড়তে পড়তে বোর হইয়া গেসে, তারা একচুয়ালি নতুনকিছু খুঁজতেসে। আমি যখন শুরু করলাম তখন আমিও এই প্যারাটা খাইসিলাম–আমি সব ডিফারেন্টলি লিখতেসিলাম, আর ওই রিডার মেন্টালিটির লোকজনের কাছে কোনোকিছু ডিফেরেন্টলি করা মানেই ভুলভাবে করা। ডেভিড ম্যামেট এখনকার ডেভিড ম্যামেট হইয়া উঠার আগেও হয়তো লোকজন ভাবতো উনি “Fuck” খুব বেশি বলে।

বাওয়ার: আপনি কি আপনার ডায়লগে কোনো ফ্রেজ বা ওয়ার্ড বারবার রিপিট করেন, ডায়লগের পাওয়ার বাড়ানোর জন্য?

টারান্টিনো: এইটা আমি প্রায়ই করি। আমার মনে হয় আমার ডায়লগে একটা মিউজিক বা পোয়েট্রি আছে, আর তাই কিছু সার্টেইন ওয়ার্ড রিপিট করলে তাতে বিটের এফেক্ট পাওয়া যায়। এইটাও আমি জাস্ট ফ্লোয়ের সাথে করতে থাকি, একটা সিনের রিদম খুঁজতে খুঁজতে।

বাওয়ার: জ্যাকি ব্রাউন সিনেমায় আপনার “নিগার” শব্দটা ইউজ করা নিয়া অনেকেই সমালোচনা করসিলো, তার উত্তরে আপনি বলসিলেন কোনো শব্দের আমাদের কালচারের উপর এতটা পাওয়ার থাকা উচিত না। কিন্তু আমি এইটা খাইতেসি না। আপনি নিজেও তো এই শব্দটা স্ক্রিপ্টে ইউজ করসেন নিজের ডায়লগরে আরেকটু পাওয়ারফুল করতে?

টারান্টিনো: কোনো শব্দেরই “শব্দ-জেলে” থাকা উচিৎ না। সবটা মিলায়াই ভাষা। আর আপনি যা বললেন, আমি যদি তা করতাম, তাইলে হইতো আমি মিথ্যা বলতেসি, যে আমি স্রেফ একটা এফেক্টের জন্য একটা শব্দ ইউজ করসি। পাল্প ফিকশনে “নিগার” শব্দটা বহু লোক বহুবার বলে, আর প্রতিবারই শব্দটা আলাদা কিছু মিন করে। পুরা ব্যাপারটাই ডিপেন্ড করে কোন কন্টেক্সটে শব্দটা ইউজড হইতেসে। যখন রিচার্ড প্রায়োর আর এডি মার্ফি তাদের স্ট্যান্ড-আপ কমেডির সময় “নিগার” বলে তখন আপনারা কেউ চ্যাতেন না, কারণ ওরা নিজেরাই “নিগার”। তো আপনি কন্টেক্সটটা জানেন। তো পাল্প ফিকশনে যখন জুলস হিসেবে স্যামুয়েল জ্যাক্সন “নিগার” বলে ওইটা ল্যান্স হিসেবে এরিক স্টোলৎজের বলার চেয়ে আলাদা, মার্সেলাস হিসেবে ভিং র্রামেসের বলার চেয়ে আলাদা।

টারানটিনো

 

বাওয়ার: অর্ডেলের এই শব্দটার ব্যবহার কেমনে পাল্প ফিকশনের ক্যারেক্টারদের চেয়ে আলাদা?

টারান্টিনো: অর্ডেল মেবি শব্দটা জুলসের মত কইরাই ইউজ করে।
পাল্প ফিকশনে যখন জুলস আর মার্সেলাস এই শব্দটা ইউজ করে, ওরা দুইজনই একই জায়গা থিকা আসতেসে, কিন্তু তবু শব্দটা আলাদা কিছু মিন করতেসে। মার্সেলাসের বলাটা অনেকটা “You’re my nigger now” মানে “তুমি আমার দোস্ত” টাইপ, আর এইটা এমনে ইউজ করার আইডিয়া ভিং রামেসেরই ছিল। অর্ডেলের ব্যাপারটাও অনেকটা এমনই, ও নিজে একটা কালা বেটা যে এই শব্দটা যেইখানে-সেইখানে ইউজ করে, ও এমনেই কথা কয়। আপনি যদি কালোদের ডায়ালেক্টে লিখতে চান, তাইলে তা মিউজিকাল করার জন্য কিছু ওয়ার্ড আপনার ইউজ করতেই হবে, “নিগার” ওগুলার মধ্যে একটা। অইরকম কাউরে নিয়া লিখলে, “মাদারফাকার” এরম আরেকটা শব্দ। স্যাম জ্যাক্সন ওর স্পিচগুলার মধ্যেও বারবার “নিগার” শব্দটা বলতে থাকে, কারণ ও এমনই, ও এইখান থিকাই আসে। তো অর্ডেলও এমনেই কথা কয়। আর আমি একটা সাদাচামড়ার লোক বইলা এই শব্দ ভয় পাই না। আমার ভিতরে ওইসব রেস ইস্যু নিয়া অত গিল্ট বা ন্যাকাচোদামি কাজ করে না। আমারে নিয়া কে কি ভাবে তা নিয়া অত প্যারা খাই না আমি, কারণ আমি মনে করি একটা সাচ্চা মনের লোক আরেকটা সাচ্চা মনের লোকরে এমনিই চিইনা নিতে পারবে।

বাওয়ার: আপনি হিউমার আর ভায়োলেন্সরে যেমনে এক করেন, তা কি অনেক ভাইবাচিন্তা করেন?

টারান্টিনো: অন্য সবকিছু যতটা ভাইবা করি ততটুকুই। আমার এইটা অনেক জোস লাগে। Reese’s এর পিনাট বাটার কাপের মত, দুইটা জোস স্বাদের জিনিস যা এক করলে আরো জোস স্বাদ হয়। আমি খুব প্যারা নিয়া এইটা করি তা না, জাস্ট হইয়া যায়।

বাওয়ার: জ্যাকি ব্রাউনে মেলানি আর লুইসের মধ্যকার ফাইনাল সিনটা হুবহু বইটা হইতে তুইলা নেয়া। আপনি নিজেও তো লিখতে পারতেন সিনটা।

টারান্টিনো: হ, এইটা আমি টের পাইসি। কিন্তু এইটা কত কুল ছিল! আবার ধরেন ওই সিনটা, যেইখানে অর্ডেল লুইসরে মাইরা ফেলে। আমি দেখলাম যে এমিল লেনার্ড অনেকটা আমার মতই লেখে।

বাওয়ার: লেনার্ড তো লুইসের ক্যারেক্টারটারে বিল্ড করার অনেক সময় পাইসিলো যা আপনি পান নাই। বইটাতে তার ভায়োলেন্ট আচরণ তার ক্যারেক্টার বিল্ডিং এর রেজাল্ট হিসেবেই আসে, কিন্তু আপনার স্ক্রিপ্টে তা খুবই শকিং লাগে।

টারান্টিনো: ঠিক, অনেকটা যেমন ভায়োলেন্স আপনার নিজের জীবনে ঘটে: হুট কইরা। রিয়াল লাইফে ভায়োলেন্স খুব কমই বিল্ডাপ হয়, যেমনটা মুভিতে দেখায়। বাস্তবে ভায়োলেন্স হুট কইরা আপনার মুখে ফাটবে। আমার মনে হয় এতে মুভিটায় রিয়ালিটির একটা ডোজ আসছে।

বাওয়ার: কিন্তু সব একশনের একটা বিল্ডাপ দেখানো কি জরুরি না, যাতে মানুষজন বুঝে এইটা ক্যান হইতেসে?

টারান্টিনো: অবশ্যই এইটার বিল্ডাপ আছে, কিন্তু লুইস পুরাপুরি সেম পেজে নাই, ঠিকাসে? আমার মনে আছে ডে নিরোর সাথে রোলটা নিয়া কথা বলতেসিলাম যে, “দেখো, এইটা আমার লেখা অন্যান্য ক্যারেক্টারগুলার মত না” এক্টররা আমার কাজ কইরা মজা পায় কারণ তাদের বলার মত অনেক কুল কথাবার্তা থাকে, আর ওগুলা বলতেও তাদের কুল ফিল হয়। তো আমি ওরে বলসিলাম, “আমি নর্মালি যেইসব ক্যারেক্টার লেখি লুইস কিন্তু তারচেয়ে একদম আলাদা। সে খুব বেশি কথা বলে না। এইটা এমন একটা ক্যারেক্টার যার সবকিছু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়া বুঝানো লাগবে।” আর এগুলা আমি বলতেসিলাম দুনিয়ার সেরা একজন ক্যারেক্টার এক্টররে। এইজন্যই আমি ওরে চাইতেসিলাম, বুঝছেন?

বাওয়ার: আপনার কি মনে হয় মেলানি মারা যাওয়ার সময় অডিয়েন্সের ওর সাথে কোনো এটাচমেন্ট ক্রিয়েট হয়?

টারান্টিনো: আমার মনে মেলানির সাথে অডিয়েন্সের রিলেশনশিপ পুরাই লাভ-হেট টাইপের। মানে এমনে খুন হওয়া কেউ ডিজার্ভ করতে পারে না, কিন্তু ও ডিজার্ভই করে। ও পুরাই একটা আঁতেলচোদা, বিশ্বাসঘাতক আরো কতকি! কিন্তু আবার ওরে আমাদের ভালোও লাগে; কারণ ও অনেক মজার একটা কারেক্টারও।

বাওয়ার: আপনি নিজেই একবার কনসার্ন দেখাইসিলেন যে আপনার নিজের ভয়েস হয়তো একসময় পুরান হইয়া যাবে। এইজন্যই কি আপনি এবার একটা এডাপ্টেশন বানাইলেন?

টারান্টিনো: এইটা কারণ ছিল না, কিন্তু এই পার্পোজটাও সার্ভ হয় ঠিকই। এইটা আমার ডায়লগ রাইটিং, আমার গিফট ধইরা রাখার একটা নাইস উপায়। আমি চাইনা মানুষ আমারে গ্রান্টেড ধইরা নিক। আমার এখনও যা যা দেয়ার আছে আমি তা ওয়েস্ট করতে চাই না। আপনি যখন ডেভিড ম্যামেটের লেখা কিছু দেখবেন, আপনি নগদেই বুইঝা ফেলবেন আপনি ডেভিড ম্যামেটের লেখা ডায়লগ শুনতেসেন। আমি এই জিনিসটা এভয়েড করতে চাই। আমি উডি এ্যালেন বা জন সেইলসের মত হইতে চাই না, তাদের একটা সিনেমা পরের সিনেমার সাথে কেমন মিইশা যায়। তারা তাদের মত কইরা করতেসে, আমি মোটেই তাদের ছোট করার জন্য বলতেসি না। কিন্তু আমি চাই মানুষজন আমার একটা নতুন সিনেমা দেখুক, আগের সিনেমার নতুন ভার্শন না। আমি চাই আমার প্রত্যেকটা সিনেমার আলাদা নিজস্ব একটা প্রাণ থাকবে। তবুও, আরেক পারসপেক্টিভে দেখলে দেখা যাবে সবই কেমন খাপ খাইয়া যাইতেসে।

Series Navigation<< মিডিয়ার আসলে কাজ হইতেছে সুন্দর রকমের ডিসটরশন তৈরি করা – জ বদ্রিয়াআমি সবসময় লিখতে লিখতে অনুবাদ করতে থাকি – অরুন্ধতী রায় >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

মাহীন হক

মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →