Main menu

একটা ভালো রোমান্স ফিল্ম সবসময় নিঃসঙ্গতার ফিলিংটার উপর নির্ভর করে – ওং কার ওয়াই

This entry is part 14 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

[লিবার্টি টাইমসের এডিটরের নোট: একটা মনকাড়া ফিল্ম হইলো অনেকগুলা ভিন্ন ভিন্ন আর্টিস্টিক এসপেক্টের মিক্স আর ম্যাচের রেজাল্ট, ক্রিয়েটরের ট্যালেন্ট আর স্টাইল একসাথে দানা বাঁইধা এর জন্ম দেয়। আজকে আমরা একটা ইন-ডেপথ ইন্টারভিউ ছাপতেসি ফিল্ম ক্রিটিক ল্যান সু-ওয়েই আর হংকংয়ের ফিল্ম ডিরেক্টর ওং কার-ওয়াইয়ের। তারা তার নতুন কাজ ২০৪৬ নিয়া আলাপ শুরু করে, তারপর তারা ওংয়ের সিনেমায় চাইনিজ লিটারেচারের রেফারেন্স, উনি কিভাবে ভিজুয়াল স্পেসের সেন্স ক্রিয়েট করে, ফিল্মে স্পেস এ্যান্ড টাইমের ব্যাকগ্রাউন্টা কি, আর সাউন্ডট্র‍্যাক ইত্যাদি নিয়া আলাপ আগায়। ক্রিয়েটর আর ভিউয়ারের এই ডায়লগের মধ্য দিয়া ল্যান আর ওং দুইজন দুইজনের ফিল্ম টেক্সটের এস্থেটিক্সরে চ্যালেঞ্জ করেন। এই ইন্টারভিউ ডিরেক্টরের স্টাইল রিভিল করে: সমৃদ্ধ তবু অস্পষ্ট, রেট্রো-রিয়ালিজম তবু এবস্ট্রাক্টরকমের ইম্যাজিনেটিভ।]

ওং কার-ওয়াই রোম্যান্টিক ফিল্মের একজন প্রধান রাইটার। আবার কমার্শিয়াল সেলার হিসেবেও উনি তুঙ্গে। একটা প্লেস বা কোনো স্টাররে বেচার জন্য ওনার ফিল্মগুলা সবচেয়ে ইউনিক ইমেজ ইউজ করে, যেমন চাংকিং এক্সপ্রেসের ল্যান কোয়াই ফং আর সিম শা সুই, বা হ্যাপি টুগেদারে লিয়াওনিং স্ট্রিট নাইট মার্কেট আর টাইপেইয়ের মুঝা লাইন। ওংয়ের ফিল্মগুলা মুডের উপর এম্ফাসাইজ করে। উনি প্রচুর অসাধারণ আর ফিলোসফিকাল প্রেমের বয়ানের মাধ্যমে নিজস্ব একটা ইয়্যি-জিং (Yi jing: আর্টিস্টরা কিভাবে অবজেক্টিভ অবজারভেশন আর সাবজেক্টিভ ইমোশনের মিশেল ঘটায়া একটা নিজস্ব আর্টিস্টিক ওয়ার্ল্ড ক্রিয়েট করেন তার একটা চাইনিজ কনসেপ্ট) ক্রিয়েট করেন। ইন দ্য মুড ফর লাভে ১৯৬০ দশকের হংকংয়ের বিউটি ফুটায়া তোলার জন্য উনি পুরানা প্রপ, কিপাও (qipao: ১৯২০ দশকের ক্লাসিকাল চাইনিজ জামা), পুরান এপার্টমেন্ট, অন্ধকার অলিগলি এইসব ইউজ করার পাশাপাশি ওং ১৯৬০এর দশকের রাইটার লিউ ইয়্যিচ্যাংয়ের ইন্টারসেকশন হইতেও এডাপ্ট করসেন। ইন্টারসেকশনে, লিউ একটা বেটা আর এক মহিলার হংকংয়ের রাস্তায় ঘোরার কথা লেখেন, আর দেখান দুইজন রাস্তায় যা যা দেখে তার প্রতি তাদের রিফ্লেকশন কত ডিফরেন্ট। লিউ দেখাইতে চাইসিলো ভিন্ন ভিন্ন মানুষ স্পেস আর টাইমরে কেমন আলাদাভাবে এক্সপেরিয়েন্স করে, আর দুনিয়াবি মানুষের কামনা-বাসনার কথা।

ওই এসে’র কয়েকটা লাইন যেন ইন দ্য মুড ফর লাভের একদম এসেন্স বইলা দেয়:

Those disappeared times,
Are obscured by a dust-covered glass,
Could be seen, couldn’t be reached.
He has been reminiscing everything of the past.
If he could break through that dust-covered glass,
He would return to those disappeared times.

ওং বলেন, “লিউ ইয়্যিচ্যাংয়ের মত রাইটাররা হংকংরে যেইভাবে দেখসে ও চিনসে, অডিয়েন্সরেও তা ওইভাবে চেনাইতে পারাটা আমার জন্য সবচাইতে খুশির জিনিস ছিল।” ওং কার-ওয়াই আমারে বলসিলেন চার বছর আগে ইন দ্য মুড ফর লাভ রিলিজ হওয়ার পরে হংকংয়ের কিছু লোক লিউ ইয়্যিচ্যাংয়ের লিটারেচার আর হিস্টরিকাল গুরুত্ব রিভিজিট করার জন্য একটা সিম্পোজিয়াম বানাইসিলেন। ইন্টারসেকশন এসেটা অরিজিনালি লিউ ইয়্যিচ্যাং সমগ্রে ছিল, কিন্তু সিম্পোজিয়ামের পর ওইটা আলাদা বই হিসেবে আবার প্রিন্ট করা হইসে। “সবচাইতে সেরা ঘটনা হইলো ফ্রান্সের এক পাব্লিশার ইন দ্য মুড ফর লাভ দেখার পর লিউ ইয়্যিচ্যাংরে চিনলো। পরে সে তার লেখাপত্র ফ্রেঞ্চে অনুবাদ করায়া ছাপলো। এতে আমার মুরুব্বি গুরু (লিউ) অনেক খুশি হইসিলেন।” অনেক একসাইটেডলি জানান ওং কার-ওয়াই, তার অন্ধকার চশমার তলে চোখের জ্বলজ্বল স্পষ্ট দেখা গেলো।

২০০৪-এর অক্টোবরে ২০৪৬ এর রিলিজের পর, এন্ড ক্রেডিটে লিউ ইয়্যিচ্যাংরে সম্মান জানানো হয়। যারা ওনার লেখার সাথে পরিচিত তারা পয়লা স্ক্রিনের টেক্সটটা চিন্যা থাকবেন, “All memories are traces of tears.” আর তারপর এ্যালকোহলিক হইতে আরো কিছু কোটেশন। লিউরে নিয়া ওংয়ের এই অবসেশনের হেতু কি? লিউয়ের লেখার কি এমন জাদু আছে যে তা ওংরে ইন্সপায়ার করে শব্দ আর ইমেজ মিলায়া নতুনরকমের আর্টের জন্ম দিতে।

রিসেন্টলি ওং তাইওয়ানে আসছিলো, তো আমরা ইন্টারভিউটা শুরু করলাম লিউয়ের কাজ নিয়া প্রশ্ন কইরাই। আস্তে আস্তে আমরা এই রোম্যান্টিসিজমের গুরুঠাকুরের ক্রিয়েটিভ প্রসেসটা বাইর করলাম।

টোনি ল্যান

টোনি ল্যান: ইন দ্য মুড ফর লাভে আপনি লিউ ইয়্যিচ্যাংয়ের ইন্টারসেকশনের একটা রেফারেন্স টানসেন, আর পাবলিকালি তারে সম্মানও জানাইসেন। আবার, ২০৪৬-এ আপনি লিউয়ের এলকোহলিকের রেফারেন্স টানসেন। আপনি আপনার ফিল্মগুলার মাধ্যমে ওনার সাথে একটা ডায়লগ ক্রিয়েট করতে চাইতেসেন। কেন?

ওং কার ওয়াই: ইন দ্য মুড ফর লাভ আর ২০৪৬-এর চাও মো-ওয়ান ক্যারেক্টারটা লিউ ইয়্যিচ্যাংয়ের থিকা নেয়া। উনি ওই বিশৃঙ্খলার মধ্যে শ্যাংঘাই হইতে হংকংয়ে আসছিলেন। আগে থিকা ওনার বেশ ফেম থাকলেও, ওনার টাকা কামানোর কোনো নতুন উপায় খোঁজা লাগসিলো। সাহিত্যের লোক হইয়া কামানোর উপায় কি? উত্তরটা সহজ: লেখালেখি কইরা। ফলে ওনার সব জনরায় লেখা লাগসে। এমনকি তার ভোর হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেইখা যাওয়া লাগসে। তারপরেও, তার জন্য খাইয়াপইরা বাঁচা খুব টাফ ছিল। ওনার সাথে যখন ফার্স্ট দেখা হয়, দেখসিলাম উনি প্রত্যেকদিন কি প্রচণ্ড হার্ডওয়ার্ক করেন। বিছানা থিকা উইঠাই লেখা শুরু কইরা রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত চালায়া যাইতেন। জীবনে তার সুখ বলতে ছিল সিনেমা দেখতে যাওয়া আর বউরে নিয়া মাঝে মাঝে একটু হাঁটতে বাইর হওয়া।

ফিল্মের চাও মো-ওয়ান ১৯৬০য়ের একজন রাইটার। লিউ’র লেখাপত্রে ওই আমলের রাইটারদের ডেইলি লাইফের ব্যাপারে অনেককিছুই জানা যায়। ইন দ্য মুড ফর লাভের শুরুতে আমি ওনার ইন্টারসেকশনের কিছু লাইন ইউজ করসিলাম। ২০৪৬-এ আমি এলকোহলিকের কিছু রেফারেন্স ইউজ করসি, যেমন “All memories are traces of tears” এইরকম আরো কিছু লেখা কোট কইরা। এইটার মেইন পার্পোজ ছিল ১৯৬০য়ের হংকংয়ের ইন্টেলেকচুয়ালদের প্রতি একটা রেসপেক্ট শো করা। ওইসময়কার হংকংয়ের লিটারেচার ফলো করলেই বুঝা যায় তখনকার লেখকদের দিনে অনেক লেখতে হইতো। পেটের দায়ে লেখা লাগতো, কোনো “মহৎ আদর্শের তাগিদে” লেখার সুযোগ তারা পাইতেন না। এরোটিকা বা ফ্যান্টাসিমার্কা জিনিসপাতিও লেখা লাগতো। তাদের নিজেদের বিবেক আর রিয়েলিটির ভিতর সবসময় একটা দ্বন্দ্ব চলতো। এইসব লেখা দেখলে বুঝা যায় তাদের লাইফের ব্যাপারে তাদের কোনো চয়েস ছিল না। তবে কিছু রাইটার ছিল যারা বাজারি সস্তা ফিকশন লেখার পাশাপাশি এমনকিছুও লিখতেন যা নিয়া তারা প্রাউড থাকতে পারেন। লিউ ওই টাইপের রাইটারদের মধ্যে অন্যতম।

টোনি: এতই ভাল্লাগলে আপনি সোজাসুজি লিউ’র লেখা এডাপ্ট করলেন না কেন? আপনি অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লে লিখতে গেলেন কেন?

ওং: এলকোহলিক এডাপ্ট করার একটা ইচ্ছা আমার ছিল, কিন্তু ওইটার রাইটস লিউ অলরেডি আরেক পাটিরে বেইচা দিসেন। এইজন্য আমি বাইছা বাইছা এইখান থিকা-ওইখান থিকা একটু একটু কইরা ডায়লগ টুকসি, ইয়াং পোলাপানরে আমার ফিল্মের মাধ্যমে লিউ’র সাথে ইন্ট্রোডিউস করানোর আশায়। তারপর ওরা ওনার কাজ পইড়া দেখবে।

লিউ’র লেখাগুলা অনেক রেফারেনশিয়াল। ওনার লেখা পড়লে এক সিনের পর আরেক সিন ভিজুয়ালাইজ করা যায়, ওর রাইটিং অনেক ইমাজিনেটিভ। ওই টাইমের রাইটারদের জীবন খুবই টাফ ছিল, উনারা খুব লুকায়াছুপায়া থাকতেন। কোনো নালিশ ছাড়া লিখতেন ওনারা। একবার লিখতে বইসা উনারা নিজেদের অজান্তেই লাখ লাখ শব্দ লেইখা বসতেন।

রিসেন্টলি লিউ তার পুরানা লেখাগুলারে আবার এডিট করতে গেসিলেন। আমি তখন মানা করলাম। ওই কাজগুলা ওইসময়ের একটা নির্দিষ্ট কন্ডিশনে সৃষ্টি হইসিলো। তখন ওনার লেগাসি রাইখা যাওয়ার চিন্তা ছিল না। ওই যুগে লেখালেখির মোটিভেশন যাই হইয়া থাকুক না কেন, এই যুগের রিডারদের এইটুকু বুঝতে দেয়া উচিৎ যে আগেকার রাইটারদের কোনো চয়েস বা ডিগনিটিটুকুও ছিল না। ওই কাজগুলার পিছনের এই রিয়ালিটিটা বজায় রাইখা দেয়াই সবচেয়ে রিয়ালিস্টিক হবে।

টোনি: আপনার ফিল্মগুলা সিক্সটিজ নিয়া একদম অবসেসড। এইটা কি এইজন্য যে ওই টাইমেই আপনি হংকংয়ে মুভ করসিলেন, আর এই নিউ লাইফ এক্সপেরিয়েন্সগুলা আপনারে অনেক মেমরি দিসে যা ভুলার মত না?

ওং: হ, আমার ফ্যামিলি যখন প্রথম হংকংয়ে আসলো, আমরা তখন স্রেফ এক রুম ভাড়া নিয়া থাকতাম। ইন দ্য মুড ফর লাভে ওই ছোট্ট জায়গাটায় দুনিয়ার সব কোণার মানুষ আইসা জোটে। আমার নিজের জীবনেই আমি অনেক ভ্যারাইটির মানুষের সাথে থাকসি। আমার খুব ক্লিয়ারলি মনে আছে আমাদের পাশের বাসায় এক রাইটার থাকতো। প্রতিদিন মদ খাইয়া টাল থাকতো। রাইটারদের লাইফটা যে কি একঘেয়ে তা কল্পনাও করা যায় না। পরে জানসিলাম শ্যাংঘাইতে এই লোক অনেক ফেমাস জার্নালিস্ট ছিল। উনি আর অন্যরা যখন হংকংয়ে আইসা পড়লো, ওনাদের অবস্থা ছিল অনেকটা রেফিউজিদের মত। তারা খুবই চাপা একটা লাইফ লিড করতো কারণ তাদের একটা ছোট্ট, নোংরা রুমের মধ্যেই বন্দি থাকতে হইতো। আর বাঁইচা থাকার জন্য তাদের সব জনরায় লেখা লাগতো। পেট চালানোর জন্য তাদের বাজারি হওয়াই লাগতো। বাজাররে খুশি রাখতে যখন যা ডিমান্ডে ছিল তাই লেখতো। তাদের জীবন আর চিন্তাভাবনা সব ফ্রাস্ট্রেশন আর একঘেয়েমিতে ভরা ছিল।

টোনি: ইন দ্য মুড ফর লাভে একটা ছোট্ট স্পেসে মানুষের ভিতরকার সম্পর্কগুলা আপনি অসাধারণভাবে মাস্টার করসেন। আবার ২০৪৬-এ আপনি স্পেস নিয়া অন্যভাবে ডিল করসেন। ফ্রেমগুলা আরো চওড়া, ফলে স্পেসটা আরো বড় হইসে; তা ছাদের সাইন হোক বা পাবলিক টেলিফোন কাউন্টার, ২০৪৬ ট্রেইন কম্পার্টমেন্টের করিডোর, বা সিক্রেট লেনদেন করার জায়গা। প্রত্যেকটা কারেক্টার একটা ওয়ালের পিছনে ঢাইকা যায় আর একটা কর্ণারে কোণঠাসা হইয়া থাকে। এইজন্য ফিল্মটায় একটা অনেক লার্জ স্পেস ক্রিয়েট হইসে, অন্যদিকে আবার কোণঠাসা ফিলিংটাও বাইড়া গেসে। এইখানে আপনার এস্থেটিক চয়েসটা কি ছিল?

ওং: একটা ঘিঞ্জি স্পেস দিয়া আপনি কোণঠাসা ফিলিং আনতে পারবেন, আবার বড় স্পেস দেখানোর মাধ্যমে একটা স্বাধীন স্বাধীন ফিল আনা যায়। কিন্তু, যখন আপনি একটা ঘিঞ্জি স্পেসের সাথে খোলা স্পেসের কন্ট্রাস্ট টানবেন, তখন আপনি ওই স্বাধীন স্পেসের কারণে কোণঠাসা ফিল করার ব্যাপারটা আনতে পারবেন। এই ট্যাকটিকটা ভিড়ের মধ্যেও মানুষের একাকিত্ব আর লোনলিনেসটারে ধরতে পারে। ইন ফ্যাক্ট আমার বানানো প্রত্যেকটা সিনেমায় আমি একটা জিনিস এচিভ করতে চাই, তা হইলো ফিল্মের প্রোটাগোনিস্টদের ক্যারেক্টার না, স্পেস হিসেবে কল্পনা করতে পারাটা। যদি স্পেসরেও ক্যারেক্টার বানায়া ফেলা যায়, মানে ধরেন স্ক্রিনের ছাদটারে যদি ক্যারেক্টার হিসেবে ভাবা যায়, তাইলে সেও একটা সাক্ষী। সেও দেখতেসে ওইখানে কি ঘটতেসে। অনেকটা ছাদের উপরে একটা ক্যামেরা ফিট করার মত–সে লাইফরে দেখতে আর রেকর্ড করতে পারবে।
২০৪৬-এ আমি একটা নতুন ভিজুয়াল এফেক্টে নিয়া এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইসি। আগে আমি স্ট্যান্ডার্ড লেন্স ইউজ করতাম ১.৬৬ (রেশিও এস্পেক্ট) আনতে। হংকংয়ের স্পেস অনেক ছোট, তাই ডিমেনশনটা ভার্টিকাল। এই ফিলিংটা দেখানোর জন্য স্ট্যান্ডার্ড এসপেক্ট রেশিওই সবচেয়ে স্যুটেবল। এইবার আমি বিগ স্ক্রিনে সিনেমাস্কোপ ইউজ করসি যাতে ডিমেনশনটা হরিজোন্টাল হয়। স্ক্রিনের সব স্পেস এখন হঠাৎ বিশাল হইয়া গেসে, তবে একচুয়াল স্পেস এখনও ওই ছোটই। এই টেকনিকে ভিজুয়াল এক্সপ্রেশনটা হাইলাইট হয়, কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফি আর সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ দাঁড় করায়। আমাদের (ক্রো’দের) দাঁড়ানোর মত তেমন কোনো জায়গা ছিল না, সহজেই আমরা ক্যামেরায় চইলা আসতাম। এইজন্য এবার আমাদের অনেক স্টেশনারি ক্যামেরা শট নিতে হইসে, আমরা বেশি নড়তেচড়তে পারিনাই।

টোনি: প্রেম আর ডিজায়ার নিয়া আপনার আগের গল্পগুলা খুব ছোট্ট স্পেসে দেখানো হয়, কিন্তু এইবার ২০৪৬-এ আপনি সবাইরে এক্কেবারে খোলা ছাদে নিয়া গেলেন। আপনি অডিয়েন্সরে একটা নতুন ভিজুয়াল দুনিয়া দেখাইলেন। আপনার চিন্তাটা কি এইখানে?

ওং: আমি এইটা ওইভাবে ভাবিনাই; এইটা খুব ন্যাচরালি আসছে। লোকেশনটা অরিজিনালি ছিল একটা জেলখানা যেইখানে ১৯৬০য়ের হংকং রায়োটের সময়কার রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের আটকায়া রাখা হইসিলো। লোকেশনটা এখনও ওরম রাখা আছে। ফিল্মটা শুট করার সময় আমি জেলখানাটারে সরাইখানা বানায়া নিসি। আমার জন্য ছাদ একটা নস্টালজিক জায়গা। আমি ছোট থাকতে আমরা সবাই ছাদে যাইতাম খেলতে। ওইখানে বইসা আমরা আড্ডা দিতাম বা লুকায়া থাকতাম। কিন্তু এখন ছাদের এই কনসেপ্টটা যেন হারায়া যাইতেসে।

ইন দ্য মুড ফর লাভে টোনি লেউংয়ের (চাও মো-ওয়ানের এক্টর) একটা ঘর থাকে। তার সব এক্টিভিটি ওই ঘরেই ঘটে। ২০৪৬-এ তার সব এক্টিভিটি হয় একটা সরাইখানায়। কিন্তু সরাইখানা তো পাবলিক প্লেস। প্রাইভেট স্পেস খোঁজাটা অনেক টাফ। এই ক্ষেত্রে ছাদই সবচেয়ে বেস্ট এরেঞ্জমেন্ট। ছাদটাই এইখানে ওদের প্রাইভেট স্পেস।

টোনি: ছাদের স্পেসটার কথা বলায় মনে পড়লো, আপনার ছাদের প্রত্যেকটা সিনে আপনি ফেমাস ইটালিয়ান অপেরা কম্পোজার ভিন্সেঞ্জো বেল্লিনির লেখা কাস্তা দিভা অফ নর্মা ইউজ করসেন। প্রেলিউডের মিউজিক হইতে মহিলা সোপ্রানোর কণ্ঠ মিলায়া একটা অপূর্ব কম্বিনেশন। ফিল্ম স্কলাররাও এইটা এডিটেড সেগমেন্টে টের পাইসে, আপনি মিউজিক দিয়া ক্যারেক্টারগুলার ইমোশন শো করসেন। আপনি নিখুঁতভাবে এই দুনিয়াটার সাথে ইমোশনের ড্রামার অসাধারণ মেলবন্ধন ঘটাইসেন, এতে ফিল্মটার ইম্যাজিনেটিভ কোয়ালিটিও রিচ হইসে। মিউজিকটা কি শুরু থিকাই রাখসিলেন? নাকি পোস্টপ্রোডাকশনের সময় ঢুকাইসেন?

ওং: ২০৪৬-এর আসল স্টোরি শুরুতে এত কমপ্লিকেটেড ছিল না। আমি ২০৪৬ নাম্বারটা ইউজ করতে চাইসিলাম তিনটা স্টোরি বলার জন্য—প্রত্যেকটার একটা অপেরা মিউজিক থিম। ওগুলা ছিল তোস্কা, নর্মা, মাদামা বাটারফ্লাই। ওয়েস্টার্ন অপেরায় কিছু কমন থিম থাকা লাগে। শেষমেষ, বেল্লিনির নর্মা ওয়াদা আর বিশ্বাসভঙ্গের কথাই বলে। আমরা সিনেমাটায় ওয়াদা নিয়া এমনই ভাবতেসিলাম শুরুতে। পরে আরেকটু আগানোর পর তিনটা অপেরার মধ্যে শুধু নর্মাই রাখা হইলো। তার কারণ এই অপেরার কাহিনীটা অনেকটা ফে ওয়্যাংয়ের প্লটের কাছাকাছি। ইন ফ্যাক্ট, মিউজিকটাই আগে আসছে, তারপর ছাদ। আর ছাদ আনার কারণেই পরে ফে ওয়্যাংরে আনা হইলো।

কাস্তা দিভা ইন নর্মা ইউজ করার দুইটা সিম্পল রিজন আছে: ছাদটা একটা স্টেজের মত। ২০৪৬-এর প্রত্যেকটা কারেক্টারের স্টোরি অনেকটা মঞ্চনাটকের মত চলে। আর দ্বিতীয়ত, নর্মার একদম শুরুর দিকে, যাজিকাটা ব্যালকনিতে আইসা চাঁদের কাছে পাপস্বীকার করে। সে নিজের লোক আর প্রেমিকের জন্য দোয়া করে। যেহেতু আমি মনে করি ছাদটাই এইখানে প্রোটাগোনিস্টদের প্রাইভেট স্পেস, ফলে ছাদটা প্রত্যেকটা ফিমেল কারেক্টারের পোর্ট্রেয়াল হইয়া দাঁড়ায়। সিনেমার তিনোটা ফিমেল কারেক্টারই ছাদে যায়: ফে ওং এক্সপ্রেসিভ, ঝ্যাং জিয়্যি হোপলেস ফিল করে; ডং জি (যে ফে ওংয়ের ছোটবোন প্লে করে) আশাবাদী। ডং ছাদে একটু হাঁটতে যায়, ওর মন থাকে আশায় ভরপুর।

টোনি: আপনার সিনেমায় অনেকগুলা নাম্বার কোড আছে। অনেকে মনে করে ২০৪৬ একটা পলিটিকাল সিনেমা কারণ ২০৪৬ নাম্বারটা অনেকের কাছে কিছু মিন না করলেও, হংকংয়ের লোকেদের প্রতি চাইনিজ কম্যুনিস্ট পার্টির ওয়াদার একটা সিম্বল। পার্টি ওয়াদা করসিলো যে ১৯৯৭ হইতে ২০৪৬ পর্যন্ত হংকংয়ের শাসনব্যবস্থা আগের মতই থাকবে। তো এইদিক দিয়া দেখলে, ২০৪৬ কি একটা পলিটিকাল কোড যা আপনি সিনেমার মধ্যে লুকায়া রাখসেন? প্রেমের বয়ানটা ছাড়াও, ২০৪৬রে কি পলিটিকালি কনশাস সিনেমা হিসেবে রিড করা যায়?

ওং: আমি অস্বীকার করবো না যে ২০৪৬-এর ইন্সপিরেশন একটা পলিটিকাল ল্যাঙ্গুয়েজ হইতেই আসছে, কিন্তু ল্যাঙ্গুয়েজটারে আমি একটা ডিফরেন্ট কনটেক্সটে রাখসি: পলিটিক্স না, প্রেম। ১৯৯৬ সালে আমি হ্যাপি টুগেদার শুট করার জন্য অতদূর আর্জেন্টিনায় কেন গেলাম? আমি ডিনাই করবো না যে ওই যুগে হংকং আবার চায়নার অংশ হওয়া আর এর ভবিষ্যৎ নিয়া আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় পলিটিকাল ইনফ্লুয়েন্স একজন মানুষের জীবনে অনেক লম্বা একটা ছায়া ফেলে। এর রিয়াল এফেক্ট আজকেই বোঝা যাবে না। সাথে সাথেই এর ইনফ্লুয়েন্সটা বোঝা যায় না। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় কাটলে পর এই ইনফ্লুয়েন্সটা স্পষ্ট হয়। অবশ্যই হংকং আবার চায়নার অংশ হওয়া নিয়া সবাই অনেক চিন্তিত, ফলে সবাই অনেক পলিটিকালি সেন্সিটিভ হইয়া পড়সি। আমরা জোরালোভাবে চাই হংকং যেন না বদলায়, কিন্তু এইটা অসম্ভব কারণ গোটা দুনিয়াটাই বদলাইতেসে। যদি আপনে না বদলান, তাইলে আপনে পিছে পইড়া যাবেন, এইজন্য আপনারে বদলটা ফলো করতে হবে। শুরুতেই, আমি ২০৪৬ নাম্বারটা চুজ করলাম কেন? কারণ আমরা সবাই বলি ২০৪৬ পর্যন্ত হংকং আনচেঞ্জড থাকা অনেক ইম্পর্টেন্ট। এইটা অনেক সিরিয়াস পলিটিকাল টপিক। কিন্তু সমস্যাগুলা হইসে: প্রথমত, কোনোকিছু চেঞ্জ হবে কিনা তা আমাদের হাতে নাই। সেকেন্ড, আমরা জানিও না কি চেঞ্জ হবে। এইজন্য আমি এই নাম্বারটা দিয়া একটা লাভ স্টোরি বানাইলাম। সবার জন্য ‘আনচেঞ্জড’ মানে কি? আমরা যখন কিছু ভালোবাসি, আমরা চাই এইটা আর না বদলাক, বা আমরা যদি কোনোকিছু হারায়া থাকি, তখন আমরা ভাবি ওইটা আজীবন একরকম থাকলেই ভালো হইতো। এইজন্য আমি ২০৪৬ বইলা একটা জায়গা ইনভেন্ট করলাম। এই জায়গায় কোনোকিছুই বদলায় না কখনো। কারণ একটা লাভ স্টোরিতে সবচেয়ে সেন্সিটিভ আর ইম্পর্টেন্ট প্রশ্ন হইলো প্রেমিক/প্রেমিকা চেঞ্জ হইয়া যাবে কিনা। আমরা আমাদের পার্টনাররে অনেককিছু ওয়াদা করি, কিন্তু আমরা গ্যারান্টি দিতে পারিনা আমরা শেষ পর্যন্ত এরকমই থাকবো। আপনি কি আজীবন একরকম থাকতে পারবেন? ইন্টেরেস্টিং হয় না যদি সিনেমাটা এই প্রশ্ন দিয়া শুরু হয়: প্রেমিক/প্রেমিকারা কি আজীবন একরকমই থাকে?

 

পার্ট-২

টোনি: আপনি প্রতিটা সিনেমায়ই প্রেম নিয়া কিছু বয়ান রাখেন। এতে বেশ ফিলোসফিকাল একটা “ওং স্কুল” স্টাইল তৈরি হইসে। কেন?

ওং: লাভ স্টোরি হচ্ছে ফিল্মের সবচেয়ে সার্ফেস লেয়ার। এইটার রেলেভেন্ট ম্যাসেজ সবাই ইজিলি রিসিভ কইরা ফিল্মটা বুঝতে পারে। কিন্তু একটা লাভ স্টোরি কেবল একটা ছেলে আর মেয়ের ঘটনা না, এইটা বরং দুইটা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যকার ইমোশনেরও ব্যাপার। আমার সিনেমা দেখার পর অডিয়েন্স নর্মালি আমারে অন্য কোনো ডিরেক্টরের সাথে কম্পেয়ার করবে না। বদলে তারা আমার সিনেমা আমারই অন্য সিনেমাগুলার সাথে কম্পেয়ার করে। কখনো হয়তো আগের সিনেমাটা তাদের বেটার লাগে, কখনো এখনেরটা। এই সেন্টিমেন্টটা অনেকটা চাও মো-ওয়ানের সিচুয়েশনের মত। তার ইম্প্রেশন আর মেমরিতে মনে হয় আগের রিলেশনশিপগুলা অনেক সুইট মেমরি আনসিলো। কিন্তু যখন বর্তমান রিলেশনশিপটাও পাস্ট হইয়া যায় তখন সে পাস্টের ব্যাপারে অনেক সাবজেক্টিভ অপিনিয়ন আর রিগ্রেট এড করে। একজন ডিরেক্টর তার আগের ফিল্মগুলা ভুলতে পারেনা, তাইলে তারা নিজেদের বর্তমান সিচুয়েশন এনকাউন্টার করবে কেমনে?

টোনি: আপনি যেন আপনার আগের সিনেমা আর সাউন্ডট্র‍্যাকগুলা ভুলতেই পারেন না। ২০৪৬-এ একই সাউন্ডট্র‍্যাক বহুবার রিপিট হয়। যখনই মিউজিকের একটা শর্ট সেগমেন্ট শুরু হয়, মনে হয় যেন সৌন্দর্য ছিটকায়া পড়তেসে বা কোনোকিছুর টেম্পটেশন দেখানো হইতেসে। শর্ট সেগমেন্টটা অডিয়েন্সরে একটু গুতা দিয়া থাইমা যায়। যখন একই সেগমেন্ট বারবার বারবার বাজতেই থাকে, তখন অডিয়েন্স মিউজিকটার সাথে পরিচিত হইয়া যায়।৷ তারপর মানুষজন স্বাভাবিকভাবেই ব্রেইনওয়াশড হইয়া আপনার মিউজিকাল এস্থেটিক্সরে এপ্রিশিয়েট করতে থাকে। আপনি কি এইটাই করতে চাইসিলেন?

ওং: আমি একচুয়ালি একজন ডিজের মত। অন্যরা মিউজিকের ডিজে, আমি ফিল্মের ডিজে। কিন্তু উদ্দেশ্য একই। আমার যদি কোনো মিউজিক ভাল্লাগে, আমি যতভাবে পারি ওইটারে ফিল্মে ইউজ করবোই। অন্যরা হয়তো মনে করে এইটা অনেক রিপিটেটিভ, কিন্তু রিপিটেটিভ হইলেও আমার কাছে সমস্যা মনে হয় না। অবশ্যই আমি সেলফ-কনশাস যে মাঝে মাঝে মিউজিকের ইউজের বেলায় আমি অতিরিক্ত করি। এইটা অনেক ডেঞ্জারাস একটা নেশা। আমি এইটা এড়ানোর ট্রাই করি। ২০৪৬-এর কান্স কাটের জন্য আমরা সিনেমাটা মাঝখান দিয়া এডিট করতে বসলাম পরে দেখি সাউন্ডট্র‍্যাকের লেংথটা একুরেটলি এস্টিমেট করা খুব কঠিন হইয়া যাইতেসে। কিছু কিছু মেলোডি আর রিদম খুববেশি মিশ্যা গেসিলো। এইটা নিয়া আমি খুব অখুশি ছিলাম। এইজন্য পরে যখন আবার ফিল্মটা এডিট করলাম তখন আমরা সাউন্ডট্র‍্যাকটা রিমিক্স করি। আমি খুব কইরা প্রেশার দিসিলাম যে মিউজিকাল এরেঞ্জমেন্ট যেন প্রথম থিকা শুরু করা হয়। আমার আগের আটটা সিনেমার মধ্যে ২০৪৬-এর সাউন্ড আর মিউজিক সবচেয়ে জটিল ছিল। এইগুলা নিয়া আমার অনেক এফোর্ট দেয়া লাগসে। মিউজিকাল এরেঞ্জমেন্ট নিয়া আমার আগে কিছু বেসিক প্রিন্সিপল ছিল। যেমন, ডেইজ অফ বিইং ওয়াইল্ডে খুব অল্প মিউজিক আছে। স্রেফ কিছু ইম্পর্টেন্ট মোমেন্টেই মিউজিক বাজে, বাকিসময় কোনো মিউজিকই নাই। আবার চাংকিং এক্সপ্রেসে ফিল্মের সত্তুর পার্সেন্টেই মিউজিক ছিল। কিন্তু ওইটায় আবার ইম্পর্টেন্ট মোমেন্টগুলায় কোনো মিউজিক ছিল না। ইন দ্য মুড ফর লাভে আমি শিগেরু উমেবায়াশি আর ন্যাট কিং কোলের (আর মাইকেল গ্যালাসো) মিউজিক ইউজ করসি। ২০৪৬-এ আমি এইসব প্রিন্সিপল বাদ দিতে চাইসি। সারফেসে দেখলে লাগে কিছু মিউজিক কিছু সার্টেন ক্যারেক্টারের জন্য, কিন্তু মিউজিকগুলা অন্য ক্যারেক্টারদেরও রিফ্লেক্ট করে। যেমন, কারিনা লাউয়ের এন্ট্রেন্সের সাথে আমি পার্ফিডিয়া ইউজ করসি কারণ ডেইজ অফ বিইং ওয়াইল্ডেও ইটা ইউজ করসিলাম (কারিনা লাউ দুইটা সিনেমাতেই সেম রোল প্লে করে)। কিন্তু ফে ওংয়ের এন্ট্রেন্স পর্যন্ত আমি এই মিউজিকই ইউজ করতে থাকসি। কেন? কারণ এই দুইটা ক্যারেক্টারই বেসিকালি সেম ক্যাটেগরিতে পড়ে—দুইজনেরই প্রেমের প্রতি একটা জোরালো এটিটিউড আছে। তারা কেউই সহজে হার মানেনা, তাই আমি সেম মিউজিক ইউজ কইরা তাদের একসাথে কানেক্ট করসিলাম।

টোনি: ইন দ্য মুড ফর লাভ বানানোর পর আপনি ভিউয়ারদের ওই যুগটা স্রেফ দেখাইলেনই না, ওই যুগটা শুনাইয়াও দিলেন। আপনার ওই যুগটার টাইম রেফারেন্স দেখানো লাগসিলো, আর ফিল্মটার জন্য আপনার একটা স্যুটেবল রিদম ইউজ করা লাগসিলো। এই কনসেপ্টটা ২০৪৬-এ আরো আগায়া নিয়া গেসেন মনে হইলো। যেমন, ন্যাট কিং কোলের “দ্য ক্রিসমাস সং” বা কনি ফ্রান্সিসের “সিবোনে” দুইটাই ১৯৬০’র একটা মুড এক্সপ্রেস করে আর ক্যারেক্টারগুলার ইমোশনও রিফ্লেক্ট করে। আবার, ইন দ্য মুড ফর লাভে আপনি জাপানিজ কম্পোজার শিগেরু উমেবায়াশির সেইজুন সুজুকির জন্য বানানো মিউজিক হইতে এডাপ্ট করলেন। ২০৪৬-এ আপনি ত্রুফো, ফ্যাসবাইন্ডার আর কিয়েস্লোস্কির সাউন্ডট্র‍্যাকের সাথে আবার উমেবায়াশির সাউন্ডট্র‍্যাক ইউজ করলেন। কেন?

ওং: আমার সিনেমা দেখতে ভাল্লাগে, আর সিনেমার সাউন্ডট্র‍্যাক নিয়া আমার আগ্রহ। ত্রুফো, ফ্যাসবাইন্ডার আর কিয়েস্লোস্কি আমারে খুব গভীরভাবে টাচ করসে। ২০৪৬-এ আমি তাদের সাউন্ডট্র‍্যাক ইউজ করসি কারণ আমার মনে হইসে তাদের মিউজিক আমার ফিল্মগুলার জন্যেও অনেক স্যুটেবল, এর মাধ্যমে আমি ওই মাস্টারদের প্রতি আমার রেসপেক্ট শো করতে চাইসিলাম। কিন্তু তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হইসে এরা প্রত্যেকে রোম্যান্সের এক্সপার্ট; এরা প্রত্যেকেই প্রেমরে একটা নতুন এঙ্গেল দিয়া ইনভেন্ট করসে। এদের মিউজিক এডাপ্ট করার ফলে কি আমার ফিল্মে নতুন কোনো বিক্রিয়া ঘটবে? আমি তাই চাইতেসি।

টোনি: ইন দ্য মুড ফর লাভে, আপনি উমেবায়াশির ওয়ালৎজ আর ট্যাঙ্গো ইউজ কইরা লাভারদের মধ্যকার সম্পর্ক আর পাওয়ার স্ট্রাগলরে সিম্বোলাইজ করসেন। তো এইবার যখন উমেবায়াশি ২০৪৬-য়ের থিম মিউজিক লিখতে বসলো, আপনি তারে কি এমন নির্দেশনা দিসিলেন যাতে ২০৪৬ পুরাপুরি ইন দ্য মুড ফর লাভের থিকা আলাদা হইয়া দাঁড়াইতে পারে?

ওং: আমি আবারও উমেবায়াশির কাছে গেসি তার মেইন কারণ এইটার মেল প্রোটাগনিস্টও ইন দ্য মুড ফর লাভ হইতে আসা, তো একটা রিলেশন আছে আরকি। এইজন্য আমি উমেবায়াশিরে বললাম মেইন থিমটা কইরা দিতে। আমি জাস্ট তারে বলসিলাম ইন দ্য মুড ফর লাভের মিউজিকটা যদি চেম্বার মিউজিক হইয়া থাকে, তাইলে এইটার স্ট্রাকচার হবে আরো অনেক গ্র‍্যান্ড। বেসিকালি মিউজিকটা একটা জার্নির কথা বলে। যেমন, আমি তারে তিনটা ফিমেল ক্যারেক্টার (গং লি, ঝ্যাং যিয়্যি, আর ফে ওং) দিয়া বলসিলাম তিন ধরণের মিউজিক কম্পোজ কইরা দিতে। আমার কাছে লাগে, এই তিন মহিলা পাস্ট, প্রেজেন্ট আর ফিউচাররে রেপ্রেজেন্ট করে। কিন্তু আমি ওনারে বললাম ড্যান্স ফিলিংয়ালা একটা মিউজিক কইরা দিতে। স্ট্রং রিদমওয়ালা কিছু। উনি অনেকগুলা ভার্শন বানায়া দিলেন। আমি ট্যাঙ্গো আর চা-চা ইউজ করিনাই কারণ ওগুলা ইন দ্য মুড ফর লাভের মত হইয়া গেসিলো, অলরেডি ইউজড রিদম আবার রিপিট হইতেসিলো। ২০৪৬-এ আমি রুম্বা আর পোলোনেইজ ডান্সের রিদক ইউজ করসি। কিন্তু উমেবায়াশির ফাইনাল কম্পোজিশনটা কোনো একটা ক্যারেক্টারে আটকানো না, আমার মনে হয় উনি পুরা সিনেমা ধইরাই চেঞ্জ করতে করতে একটা টোটাল থিম কানেক্ট কইরা ফেলসেন। শুরুতে গানের মুডটা ছিল অনেক তীব্র, লাউড, অনেকটা অপেরার মত ফিল। তারপর এইটা রুম্বার ফিলিং ধারণ করলো—অনেক সিডাক্টিভ, মাতাল হওয়ার মত ঘোর। আর শেষমেষ আইসা এইটা পোলোনেইজ ড্যান্সের ফিলিংটা নেয়: শুরুতে অনেক হাল্কা লাগে, বাট তারপর আস্তে আস্তে খুব স্যাড আর সেন্টিমেন্টাল হইয়া যায়।

টোনি: আপনি চান না কেউ ২০৪৬রে ইন দ্য মুড ফর লাভের সিকুয়েল বলুক, কিন্তু এইটার ক্যারেক্টার আর প্লটের মধ্যে ইন দ্য মুড ফর লাভ আর ডেইজ অফ বিইং ওয়াইল্ডের রেফারেন্স স্পষ্ট। তো অডিয়েন্স এইটারে কেমনে নিবে?

ওং: ইন দ্য মুড ফর লাভের শেষে দেখায় টোনি লেউং এংকর ওয়াটের একটা গাছের ফুটায় কিযেন একটা সিক্রেট বলতেসে। ২০৪৬ এই ফুটা দিয়াই শুরু হয়। এই দুইটা সিনেমা অবশ্যই কানেক্টেড। কিন্তু আমি অডিয়েন্সরে বলবো উলটা কইরা দেখতে—মানে ২০৪৬ দিয়া শুরু করেন। ওইখান থিকা হয়তো আপনি দেখতে পাবেন টোনি লেউং একসময় এক ম্যারিড মহিলার প্রেমে পড়সিলো। তারপর হয়তো আপনার ট্যাক্সির ম্যাগি চেউংরে নিয়া জানতে ইচ্ছা করবে। তারপর যখন আপনি ইন দ্য মুড ফর লাভ দেখবেন, তখন ম্যাগি চেউংয়ের কাহিনীটা পাবেন। একইরকম, যদি আপনার কারিনা লাউয়ের ক্যারেক্টারটা নিয়া আগ্রহ জাগে, তাইলে ডেইজ অফ বিইং ওয়াইল্ডের মধ্যে কিছু কানেকশন পাবেন। আমার জন্য, ২০৪৬ একটা ফাইনাল সামারি। প্রত্যেকটা ক্যারেক্টাররে একটা চাপ্টার হিসেবে দেখা যায়। এই তিনটা সিনেমা আমি বানাইসিলাম ১৯৬০ দশকের একটা ট্রিলজি হিসেবে, আর এইটা এখন করা শেষ। এই টপিকে অন্য কোনো পারসপেক্টিভে আবার আলাপ করার জন্য হয়তো আমি আরো বহু, বহু বছর ওয়েইট করবো।

টোনি: আপনি মহিলাদের সাথে তাদের জামাকাপড়ের রিলেশন দেখাইতে অনেকগুলা ক্লোজাপ এঙ্গেল নিসেন, এতে প্রত্যেকটা এক্ট্রিসের আলাদা স্টাইল আর ন্যারেশন তৈরি হইসে।
আপনি তাদের কোয়ালিটিগুলা ক্যাটেগোরাইজ করেন কেমনে?

ওং: এগুলা সব এক্ট্রিসগুলার নিজেদের কোয়ালিটি হইতেই আসে। ফে ওংয়ের স্ট্রেংথ হইলো তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, যেইটা অতিরিক্ত ভালো। আপনি তারে একটা সিম্পল একশনের মাধ্যমে একটা ফিলিং এক্সপ্রেস করতে দেন, দেখবেন উনি বিশ লাইন ডায়লগের চেয়ে ভালোমত তা করতে পারতেসে। সে মুভ করার সময়ই সবচেয়ে সেরা অভিনয় করে। এইজন্য ওরে যখন সিনেমায় ইন্ট্রোডিউস করলাম সিনেমায়, প্রথম সিনটাই ওর পা নিয়া। ও যখন জুতাটা পায়ে দেয়, তখন ওর পায়ের সৌন্দর্যের পাশাপাশি জুতাটাও কেমন জ্যাতা হইয়া ওঠে। আমি যখন ঝ্যাং যিয়্যির পা শুট করতেসিলাম, আমি ওরে পুরা ল্যাংটা হইতে বলসিলাম। এতে অন্যদের মধ্যেও একটা সেন্সুয়াল ফিলিং কাজ করে। আমি এরকম করসিলাম কারণ আমি নারী-সৌন্দর্যের প্রতি অনেক সেন্সিটিভ। এই ব্যাপারে আমার অনেক প্রেজুডিস আছে। আমি মনে করি একটা মহিলার সবচাইতে সেক্সি অঙ্গ তার পা, এইজন্য পা’টারে স্ক্রিনে সুন্দর দেখাইতে হবে। আর এছাড়াও যেহেতু আমি প্রতিটা এক্ট্রিসের কোয়ালিটি জানি আর তাদের স্ট্রেংথের জায়গাগুলাও বুঝি, আমি তাদের এই জায়গাগুলা ইউজ কইরা তারা যখন স্ক্রিনে আসে তখন আরো বেশি কইরা এটেনশন টাইনা নেই।

টোনি: একটা ভালো রোমান্স ফিল্ম সবসময় নিঃসঙ্গতার ফিলিংটার উপর নির্ভর করে। ২০৪৬-এ আপনি ১২২৪ আর ১২২৫ নাম্বার কোড হিসেবে ইউজ কইরা দেখাইসেন কিভাবে ক্রিসমাসের ছুটিতে নিঃসঙ্গ হৃদয়গুলা ভালোবাসার আশায় বইসা থাকে, একটু উষ্ণতা চায়, প্রেমের জোরে কিছু ইনটেন্স ইমোশন ফিল করতে চায়, কিন্তু এই সিনে আপনি একদম গুরুগম্ভীর একটা গান “দ্য ক্রিসমাস সং” ইউজ করসেন, ছুটির দিনগুলার নিঃসঙ্গতার ফিলিংটা ক্রিয়েট করতে। এর কারণ কি আপনি যখন দুঃখী আর একলা ফিল করেন, তখন আপনার মধ্যে একটা ইচ্ছা জাগে নিজের একাকিত্বরে ঢাকার জন্য কোনো ভিড়ের মধ্যে মিশ্যা গিয়া আরো অদ্ভূত আর বিপুল এক একাকিত্বের ঠাঁই নেয়ার?

ওং: একদম। একজন মানুষ যত দুঃখী, তার একলা থাকা ততটাই অনুচিত। ভিড়ের মধ্যে মিশতে পারলে আপনি নিজের এই দুঃখ আর একাকিত্বের ফিলিংটা আরো অনেক প্রবলভাবে টের পাবেন, আর এইটাই এইখানে বেস্ট ঔষধ। যেমন, খুব বেশি কান্দার পর ব্যথাটা আস্তে সাইরা যায়।

Series Navigation<< যেকোনো চিন্তা, পোয়েটিকাল বা অন্যকিছু, যেকোনো চিন্তাই অনেককিছুর জোট হইয়া তৈয়ার হয় – রবার্ট ফ্রস্টসমাজের উন্নতি করা বা সমাজ পরিবর্তনের উপায় বাতলাইয়া দেওয়া ক্রিটিসিজমের কাজ না – হ্যারল্ড ব্লুম (পার্ট ১) >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

মাহীন হক

মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →