Main menu

আমরা আসলে যেখানেই যাইতে চাই, ঘোরের একটা এফেক্টের বাইরে যাইতে পারি না

জঁ বদ্রিয়াঁ (Jean Baudrillard,১৯২৯ – ২০০৭) ১৯৭৭ সালে “ফরগেট ফুকো” নামে একটা লেখা ‘ক্রিটিক’ পত্রিকাতে ছাপানোর লাইগা পাঠান, মিশেল ফুকো তখন ওই পত্রিকার এডিটিং প্যানেলে আছিলেন। সেই লেখা ক্রিটিক-এ ছাপা হয় নাই আর ফুকো লেখাটার কোন রেসপন্সও করেন নাই। পরে বদ্রিয়াঁ ছোট বই বানাইয়া লেখাটা ছাপান। ১৯৮৩ সালে ‘ফরেন এজেন্টস’ সিরিজের আন্ডারে সেমিওটেক্সট পাবলিকেশন এইটা ইংলিশে ট্রান্সলেট কইরা ছাপানোর প্ল্যান করে, কিন্তু ১৯৮৪-তে ফুকো মারা যাওয়ার কারণে একটু লেইট কইরা ১৯৮৭ সালে একটা বই ছাপানো হয়; ‘ফরগেট ফুকো/ফরগেট বদ্রিয়াঁ নামে। বইয়ের একদিক দিয়া বদ্রিয়াঁ’র লেখা আরেকদিক দিয়া  কয়েকটা পার্টে বদ্রিয়াঁ’র একটা বড়সড় ইন্টারভিউ, ৫টা পার্টে। এই ইন্টারভিউ’টা অইগুলার একটা পার্ট।  (আরেকটা পার্ট এইখানে পড়তে পারেন।)

ফরাসি ফিলোসফারদের মধ্যে উনারে নিয়া মাতামাতি’টা একটু কম, একাডেমিক জায়গাগুলাতেও। এর একটা কারণ মেবি উনার থিওরি’র পলিটিক্যাল আসপেক্টটারে আর্টিকুলেট করাটা ঝামেলার, আমাদের দেখাদেখির যেই নজর’টা আছে সেইটারেই বাতিল কইরা দিতে হয়, এই কারণে উনারে মিডিয়া-থিওরিস্ট হিসাবে পরিচয় করানোটা নিয়ম। কিন্তু আমি দেখি যে, উনার খুবই রেডিক্যাল একটা পলিটিক্যাল পজিশন আছে; (আমি যদ্দূর বুঝতে পারছি) উনি বলতেছেন যে, একটা ‘রিয়ালিটির’ জায়গা থিকা ঘটনাগুলারে দেখা যাবে না, দেখতে হবে একটা ‘সিডাকশনের’ বা ছল-চাতুরির জায়গা থিকা। এইটা ফুকোর ক্ষমতা-সম্পর্কের অল্টারনেটিভ কোন প্রপোজাল না, বরং অই গ্রাউন্ডটারেই বাতিল কইরা দেয়। যার ফলে, উনার চিন্তারে অনেক প্যারাডক্সিক্যাল লাগে। কারণ “কি আছে?” – এইটা উনার ফোকাস পয়েন্ট না, বরং “কিভাবে জিনিসগুলা চেইঞ্জ হইতেছে” তারে সেন্টার করতে বলেন। এই কারণে মনে হইতে পারে, বদ্রিয়াঁ যেন বলতেছেন, কিছু নাই, শূণ্যতাই আছে বা অন্য কোন রিয়ালিটি আছে, আর আমরা কিছু করতে পারি না, এই সেই… কিন্তু আমার কাছে উনার পজিশন এইরকম ‘নিহিলিস্ট’ কোন কিছু বইলা মনেহয় না। বরং আমি দেখি যে, উনার থিওরি’রে পলিটিক্যাল স্পেইসে কেমনে ডিল করবো আমরা, সেই আলাপ’টা করা হয় নাই। 

বদ্রিয়াঁ’র বয়ান’টা এইরকম না যে, হিস্ট্রি বইলা কিছু নাই, বরং একটা সিস্টেম যখন এক্টিভ থাকে এইরকম ফুলফিলিং একটা জায়গাতে অপারেট করতে থাকে যে, যেন এর বাইরে আর কিছু নাই! আমার ফেভারিট এক্সাম্পল হইতেছে, আল-কেমি আর কেমেস্ট্রি; হিস্ট্রিক্যালি আল-কেমি থিকাই কেমেস্ট্রি আসছে, কিন্তু যখন কেমেস্ট্রির বেইজটা শুরু হইছে, আল-কেমির জায়গাগুলা পুরাপুরি ইনভ্যালিড হয়া গেছে। রেফারেন্স পয়েন্টগুলা এইভাবে একটা এবসুলেট এবং একটা সময় পরে গিয়া অবসুলেটও হয়া উঠে। এইরকম ক্ষমতা-সম্পর্কের জায়গাগুলা, রেফারেন্স পয়েন্টগুলা, দেখার, বুঝার ও জানার নজরগুলা যখন চেইঞ্জ হয়, আমাদের কাছে মনেহয় হঠাৎ-কইরা-ঘটা একটা ঘটনা, একটা গজব, আন-রিয়েল একটা এক্সপ্লোরেশন এবং এক্সপেক্ট করি যে, একটা ‘স্থিরতা’র জায়গাটাতে গিয়া সেটেল হবো আমরা, আবার। তো, পলিটিক্যালি এই ন্যারেটিভটা ঝামেলার। বদ্রিয়াঁ’র কথা যদি শুনেন, উনার কথা যদি মানেন, এইরকম জায়গা থিকা দেখলে হবে না, বস! দিস থিঙ্কস আর ডেড!

তো, বদ্রিয়াঁ’র এই ইন্টারভিউ’টা উনার চিন্তা-ভাবনার একটা ইন্ট্রো হিসাবে পড়তে পারেন। উনার চিন্তা এন্টারটেইনিং না হইলেও, ইন্টারেস্টিং।

ই. হা.   

…………………………………….

 

সিলভা লট্রিঞ্জার: ‘শেষ’ থেকে শুরু করা যাক, কিংবা আরও ভাল করে বললে, ‘শেষগুলা’ থেকে। প্রোডাকশনের ইন্তেকাল, ইতিহাসের ইন্তেকাল, পলিটিকালের ইন্তেকাল। আপনার এনালাইসিস শুরু হয় এইরকম বহুকিছুর শেষ হয়ে যাওয়া, নাই হয়ে যাওয়া দিয়া। তাহলে কি আমাদের ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনকে মোমের জাদুঘরে উঠায়ে রাখার সময় আসছে? এখন কি সবকিছুই তাহলে বিক্রি হওয়ার জন্য?

জ্য বদ্রিয়া: আমি জানি না, এই প্রশ্নটা আসলে ‘শেষ’ হওয়ার প্রশ্ন কিনা। এই শব্দ এখন যেকোন কেসেই মিনিংলেস, কারণ আমরা কোনভাবেই শিওর না লিনিয়ারিটি বলে কিছু আছে কিনা। যদিও কথাটা অনেকখানি সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনাবে, তাও আমি বরং ইলিয়াস কানেট্টির (Elias Canetti) দ্য হিউম্যান প্রভিন্স বইয়ের একটা কোটেশন দিয়া শুরু করি। খুব রিসেন্ট একটা বই। তিনি বলতেছেন- তার কাছে এমন একটা মুহূর্তের কথা কল্পনা করবার আইডিয়া খুব পেইনফুল লাগে, যেখান থেকে শুরু করা খুব সম্ভব, যেই মুহূর্তে হিউম্যান রেস, ইতিহাস থেকে সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেল। এমনকি উধাও হওয়ার ফলে যে চেইঞ্জটা ঘটল, তার ব্যাপারে আমরা পুরাপুরি আনকনশাস, এবং আমরা হুট করে এক সময়ে রিয়ালিটি ছেড়ে যাত্রা শুরু করলাম। এখন যেইটা করতে হবে, কানেট্টি বলতেছেন, আমাদের সেই ক্রিটিকাল পয়েন্টটা খুঁজে বাইর করতে হবে, সময়ের সেই ব্লাইন্ড স্পটটা খুঁজতে হবে। তা না হলে, আমরা নিজেদের ধ্বংস করার এই জার্নিগুলোর ভিতরেই থাকব। আমার এই হাইপোথিসিসটা খুব পছন্দ হইছিল, কারণ কানেট্টি কোন ‘শেষ’ এর চিন্তা করতেছেন না, বরং আমি বলব তিনি এক ধরণের সর্বোচ্চ অর্থে ‌’নির্বাণ’ এর কথা চিন্তা করছেন। এমন একটা প্যাসেজে তিনি একই সময়ে একই সাথে আকার ও নিরাকার থাকার কথা ভাবছেন।

লট্রিঞ্জার: ইতিহাস এর ভিতরকার শূন্যতা টাইনা নিয়া চলে। কিন্তু কোথাও যেন এর স্পিরিট কেড়ে নেয়া হইছে।

বদ্রিয়া: ইতিহাসের আসলে ইন্তেকাল ঘটে নাই। ইতিহাস বরং সিমুলেশনের মধ্যে আছে। অনেকটা সবসময় কোমায় থাকা একটা দেহের মতন। এই কোমা থেকে বাইর হওয়া যায় না। এবং এই কোমার ভিতরে বডি আগের মতই ফাংশন করতেছে, সব ঠিক আছে, এবং মাঝে মাঝে তা ‘ইতিহাসের’ মতো সবকিছু জড়োও করতেছে। এবং তারপরেই খুব সন্দেহ জাগে, সবকিছু হয়তো আর রিয়েল (Real) না অথবা সত্য না। এবং তখন কিন্তু কোনোভাবে আমরা এই সত্যিটা ডিসাইড করবার মতো পজিশনে থাকব না। 

লট্রিঞ্জার: আপনি যে ‌‌’শেষ’ নিয়া কথা বলতেছেন তা সম্ভবত সমস্ত ‘শেষ’-এর ‘শেষ’ হইয়া উঠবে। এবং সবকিছু মিলে কোন ‘শেষ’ এর রিসার্জেন্সের সম্ভাবনারে আরও নষ্ট করবে, শেষ কইরা দিবে।

বদ্রিয়া: দেখেন, গড ইজ ডেড কিংবা হিস্টোরি ইজ ডেড কথাতে কিন্তু কোন ‘ইন্তেকাল’ অর্থে শেষ বোঝায় না। আমি কোন হতাশ কিংবা পুরাপুরি ইউজলেস কিসিমের নবীর রোল প্লে করতে চাই না। এই ঘটনা কোন ট্র্যাজিক কিংবা ইমোশনালি চার্জড ঘটনা না যেইটার জন্যে আপনি শোক করতে পারবেন, ভাববেন এইটা এড়ানোর জন্য যদি কিছু করা যাইতো। যা ঘটছে- হঠাৎ করে রাস্তায় একটা কার্ভ তৈরি হইছে, একটা মোড় তৈরি হইছে। কোথাও রিয়েল দৃশ্যটা হারায়ে গেছে, সেই দৃশ্যটার জন্য হয়তো আপনার কাছে গেইমটা খেলার রুলসগুলা থাকত কিংবা কোন সলিড কিছু যার উপর সবাই নির্ভর করতে পারত। এখন আর সেইটা নাই।


ছবি, গুগুল সার্চ থিকা নেয়া

 


লট্রিঞ্জার:
এইটা কীভাবে ঘটল? এইটা কি আসলেই ঘটছে?

বদ্রিয়া: এইটা ফিকশন। ইতিহাস মিনিংফুল হওয়া বন্ধ কইরা দিছে, কোনকিছু রেফার করার জায়গাটারে- আপনি সেইটারে সোশ্যাল স্পেস কন কি রিয়েলই কন। আমরা এখন এমন একধরণের হাইপাররিয়ালে আছি যেখানে সবকিছুই রিপ্লে হইতেছে বারবার, সবসময়ের লাইগা।

লট্রিঞ্জার: ট্র্যাডিশনাল সোসাইটির কিন্তু কোন হিস্টোরি নাই, তবে তাদের মিথোলজি আছে; এখন আমরা আবিষ্কার করতেছি খোদ ইতিহাসই হয়তো আমাদের নিজের মিথোলজি। যদি আমরা ইতিহাসে বিশ্বাস করা বন্ধ কইরা দিই, তখন হয়তো সেই ইতিহাস যতটা ফ্যাক্ট হিসাবে ডিল করে তার থেকে বেশি ‘বিশ্বাস’ হিসাবে ডিল করে।

বদ্রিয়া: কিন্তু তারপরেও, এই ‘বিশ্বাস করা’-টা কী মিন করে? ‘বিশ্বাস করা’-টা মিন করতে পারে ধরেন, বিভিন্ন জিনিসের ভ্যালিডিটি তৈরির জন্য এক ধরণের সাবজেক্টিভিটি মেইনটেইন করা। এখন যদি এই বিভিন্ন জিনিসরে আমরা যে মিনিং দিই, সেইগুলার উপরেই এই সমস্ত জিনিসের ক্রেডিবিলিটি নির্ভর করে তখন তো আমরা ইমাজিনারি কিছুর মধ্যেই আটকায়া রইলাম।

যেইটা আমারে ভাবায় বরং (এখনও কি এইটারে ইতিহাস বলা যায়?) তা হইতেছে এমন কোন পিওর ঘটনা সম্ভব কিনা, যে ঘটনাকে ম্যানিউপুলেট করা যায় না, ইন্টারপ্রেট করা যায় না, কিংবা কোন ঐতিহাসিক সাবজেক্টিভিটির জায়গা থেকে পাঠ করা যায় না। 

লট্রিঞ্জার: সেই ঘটনা কি ব্যক্তির সাবজেক্টিভিটিরে ছিন্নবিচ্ছিন্ন কইরা দিতে পারে?

বদ্রিয়া: সাবজেক্টের প্রবলেমাটিক জায়গাটা হইতেছে, সাবজেক্ট ধইরাই নেয় রিয়ালিটিরে এখনও রিপ্রেজেন্ট করা যাইতে পারে, এবং বিভিন্ন জিনিস বিভিন্ন চিহ্ন (Sign) দেয় যা দিয়া তাদের অস্তিত্ব  এবং গুরুত্বের নিশ্চয়তা বোঝা যাইতে পারে – ছোট কইরা বলা যাইতে পারে, এইখানে একটা রিয়ালিটির সূত্র কাজ করে। বর্তমানে এই সকল কিছু- সাবজেক্টের ভেঙে পড়বার সাথে সাথে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তেছে। এইটাই সেই বিখ্যাত “ক্রাইসিস অফ রিপ্রেজেন্টেশন”। কিন্তু এখন এই ভ্যালুর সিস্টেম ন্যাংটা হইয়া প্রকাশ পাইতেছে- আবার এই একই সিস্টেম রাজনৈতিক এবং থিয়েটারের মঞ্চগুলারেও সাপোর্ট দেয়- এর মানে এই না আমরা একটা মহাজাগতিক শূন্যের মধ্যে হাবুডুবু খাইতেছি। উল্টা আমরা এখন এর চেয়েও র‍্যাডিকাল একটা সিচুয়েশনের মুখোমুখি হইয়া পড়ছি।

লট্রিঞ্জার: কালচারের মধ্যে যা যা পটেনশিয়ালিটি আছে তা এই ট্যাবুলা রাসা বাইর কইরা নিয়া আসে। এই জিনিসটা আমাদের গ্রাউন্ড ক্লিয়ার কইরা দেয়। কিন্তু, এই শূন্যতা আর বিচ্ছিন্নতার মাপেও কিন্তু চড়া মূল্য দিতে হয়। যেখানে আপনি সকল টেম্পটেশনরে ঘৃণা করেন, আবার একই সাথে নিহিলিজমের স্যাডনেসেও আক্রান্ত হন। 

বদ্রিয়া: এইটা সত্য যে কেবল যুক্তি দিয়া চিন্তা আপনাকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যায়। আমরা এই নিহিলিজম বা অন্য কিছু দিয়া নেগেটিভিটির একটা লম্বা রাস্তাতেই পা ফেলতেছি। কিন্তু যদি এইভাবেও দেখেন তাহলে কি আপনার মনে হয় না, একইসাথে এক্সাইটিং একটা পৃথিবীর দরজাও খুলে যাইতেছে? যদিও এই পৃথিবী নতুন কোন আশ্বাস তৈরি করতেছে না কিন্তু এই পৃথিবীর দরজা খুলে যাওয়ার ঘটনা ভয়াবহরকমের থ্রিলিং। এমন একটা পৃথিবীতে আপনি আছেন যেইখানে গেইমের নামনিশানা সবসময় গোপন থাকতেছে। যে পৃথিবীর নকশা আগে থেকে আঁকা নাই, আনপ্রেডিক্টেবল এবং যারে সবসময় পাল্টায়া দেয়া যাইতে পারে…

লট্রিঞ্জার: এইটা খুব র‍্যাডিকাল; এই পৃথিবী কোন সূত্র রাইখা যায় না।

বদ্রিয়া: র‍্যাডিকালিটি থিওরির কোন মহান গুণ না। এইটা বোঝায় এমন এমন সব জায়গায় নিজেরে আইসোলেট করে ফেলা যে সমস্ত জায়গা ইন্টারপ্রিটেশনের জন্য ওপেন, যে জায়গাগুলারে মিনিং দিয়া বোঝাই করে ফেলা যায়। এইরকম এনালাইসিস থেকে আমি যে খুব ডার্ক প্লেজার পাই, এইরকম না; বরং আমি তখন এক ধরণের আবছা ঘোরের ভিতর ঘুরপাক খাইতে থাকি বলে মনে হয়, ধীরে ধীরে হারায়ে যাইতেছি…

লট্রিঞ্জার: কিন্তু এইখানে ‘আবছা আবেশের ভিতর’ ফিল করার মতো আর কেউ কি এক্সিস্ট করে? নিজের হারানোর ভিতর সুখ খুঁজে পাওয়াটাও কিন্তু সাবজেক্টিভিটির আরেকটা ধরণ। এই পজিশনটা কিন্তু অনেকটা প্যারাডক্সিকাল। আপনি যদি কোনকিছুকে কেবল অর্থ দিয়েই ভাসায়া দেন তাহলে ফিল করবার মতো আর কিইবা বাকি থাকে?

বদ্রিয়া: যা থাকে, তা একজনের জন্য উল্লেখ করার মতোই না। এনার্জির হিসাবেই যদি ধরি, সকল ভ্যালু-সিস্টেম ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকে। 

লট্রিঞ্জার: আপনি দ্য মিরর অফ প্রোডাকশনে মার্ক্সের সাথে বোঝাপড়ায় আসছেন। আপনি একটা মিরর অফ ডিজায়ার লিখে ফ্রয়েডের সাথে বোঝাপড়ায় আসলেন না ক্যানো?

বদ্রিয়া: আমি সাইকোএনালাইসিস নিয়া কিছু লিখার মাধ্যমে নিজেরে সাইকোএনালাইসিসের লেভেলে নিয়া আসতে চাই নাই। সাইকোএনালাইসিসের উপর কিছু লিখে এর ইডিয়োলজি আক্রমণ করা কিংবা এর অর্থহীনতা তুলে ধরাটা আসলে বেকার কাজ হবে। তখন আমার এর নিজের কামের ফাঁদে পা দেয়া হইতো।

লট্রিঞ্জার: ডিজায়ার তো শুরু থেকেই ধরাবান্ধা থাকে। এইটা বরং বলা চলে, যেকোন থিওরির একটা রিএ্যাক্টিভ সাইড। আপনি তখনই একটা ফেনোমেনন বা ঘটনাকে বর্ণনা করতে পারবেন বা প্রকাশ করতে পারবেন যখন এইটা হারায়ে যাওয়ার মতোন অবস্থায় থাকে। হিস্টেরিয়া এখন কোথায়? সবখানেই হিস্টেরিয়া আছে আবার কোথাও হিস্টেরিয়া নাই। খালি কলসির মতন ঠনঠন করে বাজে এমন ফাঁপা মন্দিরের উপরই সাধারণত কনসেপ্টের পর কনসেপ্ট এসে জড়ো হয়। বালির পিরামিডের মতো।

বদ্রিয়া: এপিয়ারেন্স, ডিজএপিয়ারেন্স দুটোকে মূলত একই সাইন নিয়ন্ত্রণ করে। এই একই সাইন দুটোর উপরই কর্তৃত্ব বজায় রাখে। সাইনের নিয়ন্ত্রণের ভিতরেই এই দুইটা নিজেদের মতো ফাংশন করে।  এগুলা ছাড়া আরও ঘটনা থাকতে পারে, কিংবা কোন একটা ইতিহাসও থাকতে পারে।

লট্রিঞ্জার: উদাহরণ হিসেবে দ্য হিস্টোরি অফ সেক্সুয়ালিটির কথা বলা যায়।

বদ্রিয়া: সেক্সুয়ালিটির তো আর এখন কোন গুরুত্ব নাই। এখন এইটা আসলে “অশ্লীলতা”-র পর্যায়ে গিয়া পৌঁছাইছে। কিন্তু সবাই সেক্সুয়ালিটির এই গুরুত্বহীন হওয়ার এই ‘ডিজাপিয়ারেন্স’-কে বিভিন্ন ইল্যুশনের রঙচঙ দিয়া আড়াল কইরা রাখতে চায়।

লট্রিঞ্জার: সাইকোএনালাইসিস এমন ভাব ধরে যে সে সেক্সুয়াল নিউরোসিস সারায়ে তুলতে পারে। কিন্তু এইটা মূলত রিয়ালিটির একটা ডিল্যুশন ইনজেক্ট করতে থাকে। আর ফুকো কী করছেন, ফ্রয়েডিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বহু দূরে সইরা গিয়া, উনি থিওরির এক ধরণের নস্টালজিক পোন্দাপুন্দিতে অংশ নিছেন। আর তা ছাড়া, আপনি যদি সেক্সুয়ালিটির সিলসিলাতে এত বেশি মনোযোগ দেন, তাইলে তো জিনিসটা বুঝায় যে এই ‘সেক্সুয়ালিটি’-র স্টিল একটা স্পেস আছে, অনেকটা গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের মতো যেই স্পেসটা অনেককিছু দিয়ে ভইরা যাওয়ার মতো সম্ভাবনা রাখে।

বদ্রিয়া: আমি আসলে সেক্সুয়ালিটির সিলসিলা খুঁজে বাইর করবার কোন পয়েন্ট দেখি না। কারণ, এইটা এতটাই সত্য, অনস্বীকার্য যে এই ব্যাপারে আর নতুন কিছু বলারও নাই। 

লট্রিঞ্জার: ফুকোর থেকে সবচেয়ে ফুকোডিয়ান হইতেছে আমেরিকান সেক্সুয়ালিটি নিজেই। এইখানকার সেক্স ক্লিনিকে মাস্টারবেশন করাটা একটা ক্যাটাগরিকাল ইম্পারেটিভ (আপনারে করতেই হবে) যদি আপনি সিনথেটিক জেনিটালিয়ায় পৌঁছাইতে চান। আপনার আর ফুকোর পজিশন যে খুব একটা আলাদা তা বলা যায় না। ফুকো আর্কিওলজি অফ থিংস লিখছেন আপনি সেইগুলারে ক্রায়োজিনাইসাইজেশন [Cryogenicization] (মৃত কোনকিছুরে খুব লো টেম্পারেচারে রেফ্রিজারেট করা) করছেন। আপনার দ্য অর্ডার অফ দ্য সিমুলাক্রায় আপনার এপ্রোচ ফুকোর এপ্রোচের খুব কাছাকাছি ছিল বলে মনে হইছে।

বদ্রিয়া: আপনি থ্রি অর্ডারসের কথা বলতেছেন? আমি থ্রি অর্ডারস নিয়ে একটা বই-ই লিখা ফালাইতে পারতাম, যেইখানে অন্যরা উদাহরণ খুঁজতেই ব্যস্ত হইয়া পড়ছে। সোজাসাপ্টা ডিনাই না কইরাও আমি যদি ভাবি, তাইলেও আপনার এই বক্তব্য হালে পানি পায় না। একটা সময়ের জন্য আমি ফুকোডিয়ান সিলসিলায় বিশ্বাস করতাম, কিন্তু সিমুলেশনের যে অর্ডার আমি তুলে ধরছি তা ফুকোর জিনিওলজির প্যারাডক্সিকাল।

লট্রিঞ্জার: একটা অ্যান্টি-জিনিওলজি তাহলে? 

জ্য বদ্রিয়া: না। আপনি যদি এই যুক্তিরে এইটার এক্সট্রিমেও নিয়ে যান, আপনি যেইটা পাবেন তা হলো সকল প্রকার জিনিওলজির একটা সম্মিলন। মূলত এই কারণেই আমি মনে করি না, ফুকো ওই জায়গাতে আলাদা কিছু করতে পারছেন কিংবা অন্যরকম কোনকিছুতে উনি জাম্প দিতে পারছেন। আমার আগ্রহ মূলত ওই রহস্যঘেরা পয়েন্টে— যেইখানে উনি থেমে গেছেন এবং আর বলার কিছু খুঁজে পান নাই। 

লট্রিঞ্জার: আপনি জিল দেলুজ আর ফেলি গাট্টারের অবস্থানের সাথে প্রায়শই ক্রিস-ক্রস কইরা গেছেন। তাদের রিপ্রেজেন্টেশন, ডায়ালেক্টিসরে রিজেক্ট করা, মিনিংরে রিজেক্ট করা, মেটাফরের জায়গাতে আপনি তাদের থেকে ডিফারেন্ট, আবার তাদের যে সাবজেক্টিভিটির পথ সেইখানে তাদের সহচরি হইছেন: তারা সাবজেক্টরে একটা ফ্লাক্স বা প্রবাহের মধ্যে ফেলেন, আর আপনি সেই সাবজেক্টটারেই পুরাপুরি ডিসমিস কইরা দেন। তারা ‘ডিজায়ার’-কে ‘হইয়া উঠা’-র বেসিস হিসেবে চিন্তা করেন, আর অন্যদিকে আপনি ‘হইয়া উঠা’-রে ‘ডিজায়ার’-এর খুনি হিসেবে দাঁড় করান। 

বদ্রিয়া: আমি আসলে ‘ডিজায়ার’ নিয়া কী যে করি। আমি এরে বাদ দিতেও চাই না, আবার গুরুত্বও দিতে চাই না। আমি আসলে জানি না, এই জিনিসটারে আমি কোন জায়গায় রাখব। 

লট্রিঞ্জার: এইটা আপনার জন্য সারপ্রাইজিংও কিছু না। আপনি আপনার শক্তি ভ্যালু-সিস্টেমের ভাঙন থেকেই নিছেন, এখন আপনি যদি ডিজায়াররেও এই ভ্যালু-সিস্টেমের বেসিস বানায়া ফেলেন তাইলে তো মুশকিলই। 

বদ্রিয়া: দেখেন, আমি আসলে ডিজায়ারের ব্যাপারে যে জিনিসটা নিয়ে প্যারা খাই – এই সকল সিস্টেমের ফ্লাক্সের কথা যদি চিন্তা করেন, সব ফ্লাক্সের একদম গোড়ায় একটা এনার্জির আইডিয়া তো আমরা পাই, নাকি? এখন ওই এনার্জির আইডিয়াটা যে ডিজায়ার তা কি আসলে বলা যায়? আমার কাছে মনে হয়, ডিজায়ারের সাথে ওই এনার্জির কোন মামলা নাই আসলে। 

 

বদ্রিয়ার কোটেশন। গুগুল সার্চ থিকা নেয়া।

 

লট্রিঞ্জার: যদি নাই থাকে, তাহলে কোনটার মামলা আছে?

বদ্রিয়া: আপনি এর আগে বিচ্ছিন্নতার কথা আনছিলেন। আরেকটা ইন্টারেস্টিং দিক হইতে পারে— সেডাকশন (Seduction)। এইটা যে ডিজায়ার না তা তো আমরা বললামই। বরং এইটা ‘সেডাকশান’ হইতে পারে। প্রতিটা জিনিস নিজে নিজেই ঘটনা তৈরি করতেছে, কোন মাধ্যম ছাড়াই, একটা ইনস্ট্যান্ট যোগাযোগের মধ্যে দিয়া। মেটাফর বলে আর কিছু নাই, যা আছে তা বরং মেটামরফোসিস। মেটামরফোসিস মেটাফররে ধ্বংস কইরা দেয়, আর এই মেটাফর কিন্তু ভাষার চালিকা মাধ্যম। মেটাফরের মধ্যে দিয়াই কিন্তু আমরা মিনিং আদানপ্রদান করতে পারি। আর অন্য দিকে, সিস্টেমের একটা র‍্যাডিকাল পয়েন্ট হইতেছে এই মেটামরফোসিস। যে পয়েন্টে কোন ল কিংবা সিম্বলিক অর্ডার কাজ করে না। এইটা এমন একটা প্রসেস যেইখানে কোন সাবজেক্ট নাই, মৃত্যু নাই, ডিজায়ার নাই। এইখানে কেবল বিভিন্ন ফর্ম যেমনে তৈরি হয়, সেইগুলার রুলস খেলা করে। অন্যান্য অনেককিছুর মধ্যে সাইকোএনালাইসিস, মিথলজির ব্যাপারে যা যা বলে তা মেটাফরিকাল ভাষার একধরণের এবিউজই লাগে। 

লট্রিঞ্জার: মেটাফর বাদ দিলে তাহলে মিথোলজির ব্যাপারে মেটামরফোসিস কী বলে?

জ্য বদ্রিয়া: ট্রান্সমিউটেশনের (Transmutation) যে সম্ভাবনা: ‘পশু-হওয়া’, ‘নারী-হওয়া’। জিল দেলুজ এই ব্যাপারে যা বলছেন তা আমার কাছে মনে হইছে ব্যাপারটারে খুব ভালো করে ধরতে পারছে।

ভালোবাসা এখন আর কোন অভাবের (Lack) উপর ডিপেন্ড করা কোন ডিজায়ারের প্রেক্ষিতে ব্যাখা করা যায় না। বরং এইটা অবচেতনে চলতে থাকা এক ধরণের ট্রান্সফর্মেশন- আদারের (The Other) সাথে। এবং ওই মেটামরফিক অবচেতনে কোনকিছুরেই দমানো হয় না। মেটাফরের আর অত গুরুত্ব থাকে না। অন্যদিকে মেটাস্ট্যাসিসের (Metastasis) কথা চিন্তা করেন, বডি, অবেসিটি এবং ক্যান্সার যেমনে প্রলিফারেট (Proliferate) করে, এইখানে দুর্ভাগ্যক্রমে কিন্তু কোন সাবজেক্ট এক্সিস্ট করে না। এইখানে ভাষারও কোন গুরুত্ব থাকে না। মেটাফরের আলাপও তাই এইখানে পসিবল না।

লট্রিঞ্জার: তাহলে, সাবজেক্টিভিটি হারায়ে যাওয়ার সাথে সাথে একচুয়ালি কী তৈরি হইতেছে?

বদ্রিয়া: খুব প্যারাডক্সিকাল একটা জিনিস ঘটতেছে। তিনভাবে কোন কিছু হারায়া যাইতে পারে। প্রথমত, সাবজেক্ট একটা ক্লোনিং সিস্টেমের ভিতর দিয়ে হারায়া যাইতে পারে। এবং এইখানে কিন্তু সাবজেক্টের মৃত্যু ঘটলো না এবং এই জিনিসে কোন আনন্দ নাই। এইটা অনেকটা আদার (The Other) যেইভাবে মেটাস্ট্যাটিকভাবে খুব বাইড়া যায়, প্রলিফারেট করে, হারায়ে যায়- ওইরকমভাবে ঘটে। দ্বিতীয়ত, আপনি মৃত্যুর (যেইটা একচুয়ালি সাবজেক্টেরই মেটাফরিকাল ফর্ম) মাধ্যমে হারায়ে যাইতে পারেন। আর এইটা দুইটা বাদে, হারায়ে যাওয়াটা একটা গেইম আকারে হাজির হয়, যারে বলা যাইতে পারে আর্ট অফ ডিজাপিয়ারেন্স

লট্রিঞ্জার: হারায়ে যাওয়ার এই ধরণগুলা যেমন, মেকানিকাল (ক্লোনিং), অর্গানিক (মৃত্যু), রিচুয়াল (গেইম)- এই ধরণগুলা বাদে কেন আমরা হারায়ে যাওয়ার জীবন্ত কোন ধরণ (Live Form) ভাবতেছি না? সাবজেক্ট অনেকসময় এইরকম কিছু রোলে (Role) নিজেরে স্থাপন করলো, যেই রোলের সাথে সে নিজেরে আইডেন্টিফাই করলো না। একজন হারায়ে যাইতে রাজি হইল, কিন্তু এক রোল থেকে হারায়ে গিয়ে সে এমন একটা রোলে নিজেরে আবিষ্কার করলো, যেইখানে সে নিজেরে কখনো কল্পনাই করে নাই।

বদ্রিয়া: আমি দেলুজের মতোই হারায়ে যাওয়াটাকে এবস্ট্র্যাক্টলি দেখি, একটা ফ্লাক্স হিসেবে। যেইটা একইসাথে খুব স্বচ্ছ একটা ব্যাপার।। এইখানে রিয়েলের (Real) হারায়ে যাওয়া, যেইখানে রিয়েলের সাথে একটা চরম দূরত্ব তৈরি হয়। ওই পর্যায়ে এসে আসলে কেউ কোনকিছুরে স্পর্শ করতে পারে না। 

লট্রিঞ্জার: তাহলে আমরা বুঝতেছি, রিয়েলের যে একমাত্র ধরণটা আছে, তা হইলো জিনিসগুলার মধ্যে যে শিফটটা চালু আছে তা। এইটা বাদে হয় আপনি প্যারালাইজড হবেন, না হলে ভ্যাপোরাইজড। প্যারালাইসিস হইতেছে আইডেন্টিটির যে প্যানিকি আর্তনাদ তা। এইটা নিউরোসিসের একটা রূপ- নিজেকে আপনি একটা কনক্রিট জায়গায় নিয়ে যাইতে চাইতেছেন, আর আপনি যতই মুঠো শক্ত করতেছেন ততই জিনিসটা আঙুলের ফাঁক দিয়ে পিছলায়া পড়ে যাইতেছে। ক্লোরোফর্ম বা ইথারের মতো যেন সাবজেক্ট প্যারালাইজড হয়ে উবে যাইতেছে। কোন নিশান না রাইখা হারায়া যাইতেছে। এইটা আপনার হাড়ে কাঁপন জোগায়, আপনারে ঘুমও পাড়াইয়া দেয়।

বদ্রিয়া: মানুষ যে পজিটিভলি, হ্যাপিলি একটা অস্থিরতার মধ্যেও থাকতে পারে, সবসময় ট্রান্স-পিয়ারিং (Trans-pearing) এর ভিতর দিয়ে যাইতে পারে, তা নিউইয়র্কের মতো জায়গায় সম্ভব। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এইটারে এক ধরণের লিকুইড টেররের জায়গা থেকে দেখে।

লট্রিঞ্জার: আচ্ছা, এখন এই টেরর থেকে আমাদের নিজেদের বাঁচাবার জন্য কি সকল ধরণের সাবজেক্টিভিটি বাদ দেয়া উচিত?

বদ্রিয়া: আমরা আসলে এখন আর কোন সত্যিকার অর্জন বা এচিভমেন্টের কোন সিস্টেমের মধ্যে নাই। এখন সকল এচিভমেন্টই আসলে এচিভমেন্টের খাতিরে অর্জন। এই এচিভমেন্টগুলার সাথে একটা রিস্ক-বোনাসও আছে, প্যানিক। ডি-সাবজেক্টিফিকেশন।

লট্রিঞ্জার: আচ্ছা, যদি সাবজেক্টিভিটি বলতেই আর কিছু না থাকে, তা হলে আর রিস্কেরই বা আর কি মূল্য থাকে?

জ্য বদ্রিয়া: আমরা আসলে যেখানেই যাইতে চাই, ঘোরের একটা  এফেক্টের বাইরে যাইতে পারি না। এইটা সকল ইলেক্ট্রনিক গেমসের জন্যেও সত্য। এখন আর আনন্দ বলে কিছু নাই, আগ্রহ বলেও কিছু নাই, কানেকশনগুলা আমাদের যে একধরণের আবেশ দেয়, আচ্ছন্ন করে রাখে, এই আচ্ছন্নতার ভিতর দিয়েই কিন্তু একটা একটা অপারেশন সুইচ হইতে থাকে, আর সাবজেক্ট হারায়া যাইতে থাকে। আপনি যাই-ই চান না কেন, আপনি জানেন না কী তার অবজেক্টিভ, কিন্তু আপনি ম্যানিউপুলেট করে আপনার “চাওয়া”-টারে “চাওয়া” বানান। আর এই নিজের “চাওয়া” বানানোর ভিতরে আপনার ওই পটেনশিয়াল সিস্টেমের র‍্যান্ডম আচ্ছন্নতা থাকেই, যেইটারে আপনি এড়াইতে পারেন না এবং যেই আচ্ছন্নতার ভিতর যে কোনকিছু ঘটতে পারে।

লট্রিঞ্জার: আপনি টেররের থেকে প্যানিকরে পছন্দ করেন বেশি?

বদ্রিয়া: প্যানিক যে নেসেসারিলি আনহ্যাপিই হবে তা কিন্তু না। আমি এইটারে একটা একস্ট্যাসি (Ecstasy) আকারে দেখি। এইটা আসলে সংক্রমণের মতো ছড়ানোর একটা মাধ্যম। আর কত দ্রুত গতিতে এইটা ছড়াইতে পারে- অনেকটা সেই প্রাচীন মেটামরফোসিসের প্রিন্সিপালের মতো এইটা এক ধরণ থেকে আরেক ধরণে কোন দ্রুতগতিতে ছড়াইয়া যায়। এই ছড়ানোটা একটা মিনিং এর সিস্টেমের ভিতর দিয়া ঘটে। এখন এইখানে যে কোন কারণ (Cause) নাই, কেবল প্রভাব (Effect) আছে, এবং এতবেশি প্রভাব আছে যে পুরা জিনিসটা একটা অস্বাভাবিক বিস্তৃতিতে পরিণত হইছে। পল ভিরিলিও (Paul Virilio) (ফরাসি দার্শনিক) যে “স্পিডের” কথা বলেন, তা মূলত প্যানিকের মুভমেন্টের সাপেক্ষে তৈরি হওয়া একটা ইফেক্ট।
এক রকম আছন্নতা। এমনকি নিউজ মিডিয়া একটা ঘটনারে যেমন ফুলায়ে ফাপায়ে তৈরি করে সেইটাও প্যানিক হইতে পারে। সব ধরণের কমিউনিকেশনের থিওরি, এমনকি আমার থিওরিও নতুন করে রিভাইজ দিতে হবে। আমার থিওরিটা এখনও অনেক বেশি মিনিংফুল, এইটা তো সমস্যার। মানুষ এখন আর কোনকিছুকে নিজের করতে চায় না, সেগুলারে ধ্বংসও করতে চায় না। বতেল্লির (Bataille)  “ডেভিল’স শেয়ার” রাজনৈতিক অর্থনীতির যে চরম রোমান্টিসিজম তৈরি করে, সেইটাও কিন্তু ওই পলিটিকাল ইকোনমিরই অংশই ছিল। যদিও সেইটা এখন ভিন্ন কিছু মিন করে।

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

তৌকির হোসেন

জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →