Main menu

পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ।। সৈয়দ মুজতবা আলী।। শেষ কিস্তি।।

This entry is part 14 of 22 in the series লেখার ভাষা

কিস্তি ১ ।। কিস্তি ২ ।। কিস্তি ৩ ।।

১৯৪৭ সালের ৩০ শে নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়া আলাপ হয়, সৈয়দ মুজতবা আলী সেইখানে বাংলা ভাষার পক্ষে একটা লেকচার দেন। উনার এই লেকচার নিয়া অনেক তর্ক বিতর্ক হয়। সৈয়দ মুজতবা আলী তখন বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। বলা হয়, এই ঘটনার পরে উনার বিরোধীপক্ষ গর্ভমেন্টের কাছে বিচার দেন আর এডুকেশন মিনিস্ট্রি থিকা উনারে শোকজ করা হয়। উনার বড় ভাই সৈয়দ মুতর্জা আলী, যিনি এইটা নিয়া কথা কইতে গেছিলেন, তারেও তার পজিশন থিকা ডিমোশন দিয়া ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বানায়া চিটাগাংয়ে ট্রান্সফার কইরা দেয়। সৈয়দ মুজতবা আলী এইসব দেইখা ইন্ডিয়াতে চইলা যান।

পরে ১৯৫৬ সালে আল ইহসান পত্রিকায় উনার এই ভাষণ প্রবন্ধ হিসাবে ছাপা হয়। অই বছরই বই হিসাবেও ছাপা হয়, আলাদা কইরা।

মজার ব্যাপার হইলো, কলকাতার মিত্র অ্যান্ড ঘোষ পাবলিকেশন কোম্পানি থিকা ১১ খন্ডে সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাসমগ্র ছাপানো হইছে, উনার পাবলিশড, আনপাবলিশড অনেক লেখা সেইখানে আছে, কিন্তু এই বইটা নাই। 🙂  মানে, রচনাসমগ্র দেইখা আপনার মনে হবে, সবকিছুই আছে এইখানে, কিন্তু সবকিছুর ভিতরে অল্প কিছু জিনিসরে যে গোপন করা হয়, সেইটা চাতুরির ঘটনা না খালি সাবভারসিভ একটা জিনিসও।

২.
সৈয়দ মুজতবা আলী যখন এই আর্গুমেন্টগুলা হাজির করতেছেন, তখন পাকিস্তান রাষ্ট্র যে বানানো হইছে, সেইটার ৬ মাসও হয় নাই। রাষ্ট্র নিয়া অবশ্যই অনেক এক্সপেক্টশন থাকতেছে তখন, নানান আলাপ চলতেছে নানান জায়গায়।

ব্রিটিশ আমলে ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রভাষা ছিল ইংলিশ, হিন্দি আর উর্দু। ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান দুইটা রাষ্ট্র হওয়ার পরে, হিন্দিরে ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হইছিল, কিন্তু যেহেতু ইন্ডিয়ার সব জায়গায় হিন্দি চালু নাই, বলা হইছিল হিন্দির পাশাপাশি ইংলিশও থাকবো। তো, ইন্ডিয়াতে যেহেতু ইংলিশ বাদ দিয়া হিন্দি চইলা আসছে, পলিটিশিয়ানদের ধারণা ছিল, পাকিস্তানেও তো উর্দুই হওয়ার কথা!

সৈয়দ মুজতবা আলী এইসব কথা বলার আগে, ১৯৪৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর তমুদ্দীন মজলিসের  পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু?  পাবলিকেশনে কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমেদ ও প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমও পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা করার পক্ষে লেখেন। এরপরে ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে জিন্নাহ ঢাকা ইউনির্ভাসিটিতে আইসা উর্দুরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বইলা ঘোষণা দেন, এক স্টুডেন্ট নো বলেন। আন্দোলন, মুভমেন্টের পরে ১৯৫৬ সালে উর্দুর লগে বাংলারেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়। এইগুলা নিয়া কমবেশি আলাপ তো চালু আছেই।

৩.

ভাষা তো পাওয়ারের লগে রিলেটেড একটা ঘটনা। ব্রিটিশ আমলে ইংলিশ যে সরকারি দফতরের ভাষা আছিল, সেইটা তো পাওয়ারের কারণেই। তো, ব্রিটিশরা যখন নাই তখন তো আরেকটা ভাষার দরকার।

ইন্ডিয়া চাইলো, হিন্দি ভাষারে এস্টাবলিশ করতে, না পাইরা ইংলিশটারে রাইখা দিয়া হিন্দিরেও প্রমোট করলো। এখন ইন্ডিয়াতে যতদিন হিন্দি চালু আছে ততদিন দিল্লীতে নর্থ ইন্ডিয়ানদের পাওয়ার কমার কোন কারণ আসলে নাই। (খালি ভাষাই না, ভাষার ভিতরে অ্যাকসেন্ট আর ডায়ালেক্টের ব্যাপারও আছে, কুষ্টিয়া-খুলনার দিকের কথারে যত বাংলা লাগে, সিলেট-চিটাগাংয়ের ডায়ালেক্টরে তো এতোটা লাগে না। এইরকমের ব্যাপারগুলা আছে।) আর এই পাওয়ারের কারণেই দেখবেন, পশ্চিমবঙ্গের সোকল্ড শিক্ষিত লোকজন হিন্দিরে যতোটা হেইট করেন, ইংলিশরে এতোটা না। কারণ উনারা ইংলিশ তো জানেন কিছুটা কলোনিয়াল আমল থিকা, কিন্তু নতুন কইরা হিন্দি শিখাটা তো পসিবল না! বা ইংরেজদের নিজেদের মালিক বইলা মানতে যতোটা রাজি আছিলেন, সেই জায়গায় অন্য নেটিভ ইন্ডিয়ানদের মালিক বইলা ভাবাটাও মুশকিলেরই হওয়ার কথা।…

পাকিস্তানেও একইরকমের সিচুয়েশনই ছিল, ইংলিশের জায়গায় কোনটা আসবো, এই কোশ্চেনটা উঠছিল। রাষ্ট্র যেহেতু সেন্ট্রালাইজড একটা জিনিস, একক একটা জিনিস তো থাকা লাগবে। মানে, ইংলিশের বিপরীতে আরেকটা অপশনের কথাই উঠছিল।

জিন্নাহ কিন্তু ইংলিশেই কইছিলেন – উর্দু’রে স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ করার কথা; উর্দুতে কন নাই। আর যেই স্টুডেন্ট এইটার প্রতিবাদ করছিলো, সে কিন্তু ‘না’ কয় নাই; ‘নো’-ই কইছিলো! ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না? যেই দুইটা ভাষা’র লাইগা ফাইটটা চলতেছে, সেই দুইটাই নাই; এইটা নিয়া কথা হইতেছে অন্য আরেকটা ভাষাতেই।

জিন্নাহ আসলে ইংরেজি জানা লোকদেরকেই শুনাইতে চাইতেছিলেন (উনার উর্দু না বলতে পারা’র কথা মনে রাইখাই বলতেছি)। যারা খালি বাংলা জানে, ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়া উনারা কিছু কইতে পারবে এইরকম গণতন্ত্রে উনি বিলিভই করেন নাই আসলে। যিনি রিভোল্ট করলেন, উনিও জিন্নাহরে জানাইতে চাইছিলেন, বাংলা তো আমরা জানি, ইংরেজির ভিতর দিয়াই। উনি জিন্নাহরে প্রটেস্টই করছেন, অথরিটি’টারে যে উনি চিনেন এইটা জানাইছেন।

মজার ব্যাপার হইলো, “অরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়…” গানটা নিয়া; ‘কাইড়া’, কি রকম অদ্ভূত বাংলা! লিখতে গেলেও ফানি লাগে না একটু, ব্যাপারটা! এই বাংলা-ভাষা ভাষা আন্দোলনের ‘নো’ বেঙ্গলিরা চাইছিলেন বইলা মনে হয় না। এইখানে পাওয়ারের ঘটনাটা আরো ক্লিয়ার হওয়ার কথা আসলে।

তো, সৈয়দ মুজতবা আলী তার আর্গুমেন্টের ভিতরে বারবার ভাষা কেমনে অন্য সব সোশিওপলিটিক্যাল জায়গাগুলাতে দখলের জায়গাগুলা জারি রাখে, সেই জায়গাগুলারে খোলাসা করতেছিলেন।  এই জায়গা থিকা দেখতে গেলেও, এইটা ইন্টারেস্টিং একটা লেখা।

৪.
এই পোস্ট’টা পড়া আগে আগের দুইটা কিস্তিগুলা পইড়া নিলে ভালো। কারণ এইটা একটা লেখারই কন্টিনিউয়াস পার্ট। আর পড়ার সময় লেখার কনটেক্সট’টা মাথায় রাখতে পারলে বেটার। বাংলা-ভাষা নানান সময়ে নানান তর্কের ভিতর দিয়া গেছে। এইটা এইরকম একটা মোমেন্টের কথা। অই সময়টা আমরা পার হয়া আসছি। কিন্তু পার হয়া আসছি বইলাই অই আলাপ-আলোচনাগুলারে ভুইলা যাওয়াটা ঠিক হবে না। বরং এখনকার যেই বাংলা-ভাষা সেইটার বেইজ এইরকমের আলাপগুলাই। যেইগুলা আমরা আসলে আমলে নিতে পারি নাই, বা  নতুন কইরা রিলিভেন্ট কইরা তুলতে পারি নাই। এই কারণে এই ধরণের লেখাগুলা রিভিউ করার দরকার আছে। আবারো ছাপাইতেছি আমরা।

ই. হা.

আমি যে শিক্ষা-ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছি তাতে দেশের শতকরা নব্বই জন মাইনর, ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়বে। এবং সে মাইনর, ম্যাট্রিকের শিক্ষাদান অনেক বেশী উন্নত পর্যায়ের হবে। ইংরেজী বা উর্দুর জন্য জান পানি করবে না বলে তারা অতি উত্তম বাংলা শিখবে এবং ইংলণ্ড, ফ্রান্স, মিশর, ইরানে যে রকম সাধারণ শিক্ষিত লোক মাতৃভাষায় লেখা দেশের শ্রেষ্ঠ পুস্তক পড়তে পারে এরাও ঠিক তেমনি দেশের উন্নততম জ্ঞানচর্চার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। দেশের তাবৎ লোকই যে উত্তম উত্তম পুস্তক পড়বে সেকথা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়—কারণ সকলেই জানেন জ্ঞানতৃষ্ণা কোনো বিশেষ শ্রেণী বা সমাজের মধ্যে নিবদ্ধ নয়, এমনকি উচ্চশিক্ষা পাওয়া না পাওয়ার উপরও সে জিনিস সম্পূর্ণ নির্ভর করে না, কত বি-এ, এম-এ, পরীক্ষা পাশের পর চেক্ বই ছাড়া অন্য কোনো বইয়ের সন্ধানে “সময় নষ্ট” করেন না, আর কত মাইনরের ছেলে গোগ্রাসে যা পায় তাই গেলে—কিন্তু মাতৃভাষা দেশের সর্বোত্তম প্রচেষ্টার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। এর সত্যতা সপ্রমাণ হয় আরেকটি তথ্য থেকে—ইউরোপের বহু সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক আবিষ্কর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন না করেও যশস্বী সৃষ্টিকার হতে সমর্থ হয়েছেন।

সেই তাই দেখতে হবে, মাতৃভাষার যে নির্ঝরিণী দিয়ে বিদ্যাভ্যাস আরম্ভ, নির্ঝরিণীই যেন বিশাল এবং বিশালতর হয়ে বিশ্ববিদ্যার অগাধ সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছয়। মাঝখানে ইংরেজী বা উর্দুর দশ হাত শুকনো জমি থাকলে চলবে না।

বিশেষ করে উর্দুওয়ালা মৌলবী-মৌলানাদের এ কথাটি বোঝা উচিত। বাংলাতে ধর্মচর্চা না করার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মুসলিম ধর্মের কুসংস্কারে নিমজ্জিত। ডান দিক থেকে বাঁ দিকে ছাপা বই দেখলেই সে ভয়ে ভক্তিতে বিমূঢ় হয়ে যায়—তা সে গুল-ই-বাকাওলির কেচ্ছাই হোক আর দেওয়ান-ই চিরকীন্‌ই হোক্। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করবার জন্য তাকে শেখাতে হবে :

১. ইসলামের ইতিহাস*, [* পাকিস্তানকে theocratic রাষ্ট্র করার কথা উঠছে না। আমার ব্যক্তিগত দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মের নামে যে রাজনৈতিক ধাপ্পা, অর্থনৈতিক শোষণ চলে তার শেষ কোনোদিনই হবে না, যতদিন না দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় ধর্মালোচনায় প্রবৃত্ত হন। ভারতীয় ইউনিয়ন সম্বেন্ধেও এই নীতি প্রযোজ্য।] এবং বিশেষ করে শেখাতে হবে এই তথ্যটা যে সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করা অসম্ভব। আব্বাসী ওম্মাই যুগের ভেতর দিয়ে মুসলিম সংস্কৃতি যে-রূপ নিয়েছে সে-রূপ পূর্ব পাকিস্তানে আবার নেবে না। অথচ ইসলামের গণতন্ত্রের খুঁটি এবং ধনবণ্টনে সমতার নোঙ্গর জোর পাকড়ে ধরে থাকতে হবে।

২. শত শত বৎসরের জ্ঞানবিজ্ঞানচর্চা করে ইয়োরোপ যে শক্তি সঞ্চয় করতে, মিশর দমস্ক আজ তাই শিখতে ব্যস্ত। প্রাচীন ঐতিহ্য যেরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে গ্রহণ করা যায় না, ইয়োরোপীয় কর্ম এবং চিন্তাপদ্ধতি ঠিক সেই রকম বিনা বিচারে গ্রহণ করা চলবে না।

৩. ইসলাম আরবের বাইরে যেখানেই গিয়েছে সেখানেই তথাকার দেশজ জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্পকলাকে গ্রহণ করে নূতন সভ্যতা-সংস্কৃতি নির্মাণ করেছে। ইরানের সুফীতত্ত্বের যশ কোন দেশে পৌঁছায় নি? তাজমহল এই করেই নির্মিত হয়েছে, উর্দুভাষা এই পদ্ধতিতেই গড়ে উঠল, খেয়াল গান এই করেই গাওয়া হল, মোগল ছবি এই করেই পৃথিবীকে মুগ্ধ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের ভারতীয় ঐতিহ্য নগণ্য নয়, অবহেলনীয় নয়। পূর্ববঙ্গের বহু হিন্দু ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বনামধন্য হয়েছেন, তাঁদের বংশধরগণ যেদিন নবীন রাষ্ট্রে আসন গ্রহণ করে সভ্যতাকৃষ্টি আন্দোলনে যোগ দেবেন সেদিনই উভয় সম্প্রদায়ের অর্থহীন তিক্ততার অবসান হবে। (এস্থলে অবান্তর হলেও বলি ঠিক, তেমনি ভারতীয় ইউনিয়নের মুসলমানদের অবহেলা করেও সে রাষ্ট্র পরিপূর্ণতায় পৌঁছতে পারবে না।) একথা কিছুতেই ভুললে চলবে না যে মামুন, হারুনের সময় যখন আরবেরা ‘জ্ঞান-গরিমায় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান ঠিক তখনই তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ‘চরক’ ‘সুশ্রুত’ ‘পঞ্চতন্ত্র’ আরবীতে অনুবাদ করেছিল, গজনীর মাহমুদের আমলে ঐতিহাসিক আল-বীরুনী কী বিপুল পরিশ্রম করে সংস্কৃত শিখে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে প্রামাণিক গ্রন্থ লিখেছিলেন।

আরবেরা সমুদ্র উত্তীর্ণ হয়ে ভারতীয় সভ্যতার অনুসন্ধানে এদেশে এল, আর আজ পূর্ব পাকিস্তানের লোক বাংলা ভাষার গায়ে বৈষ্ণব নামাবলী দেখে ভড়কে যাচ্ছে! কিমাশ্চর্যমতঃপরম্?

কত গবেষণা, কত সৃজনীশক্তি, কত শাস্ত্রাশাস্ত্র বৰ্জন গ্রহণ, কত গ্রন্থ নির্মাণ, কত পুস্তিকা প্রচার, কত বড় বিরাট, সর্বব্যাপী, আপামর জনসাধারণ সংযুক্ত বিরাট অভিযানের সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তান!

এর উৎসাহ অনুপ্রেরণা যোগাবে কে?

প্রধানত সাহিত্যিকগণ। এবং আমি বিশেষ জোর দিয়ে জানাতে চাই সে সাহিত্য-সৃষ্টি মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য কোনো ভাষাতে হতে পারে না।

আবার ইতিহাস থেকে নজীর সংগ্রহ করি।

ফ্রান্স এবং ইংলণ্ডে আঠারো মাইলের ব্যবধান। প্রতি বৎসর হাজার হাজার ইংরেজ প্যারিসে বেড়াতে আসে। বায়রন শেলি উত্তম ফরাসী জানতেন কিন্তু কই, আজ পর্যন্ত তো একজন ইংরেজ ফরাসী সাহিত্যে নাম অর্জন করতে পারেন নি, আজ পর্যন্ত একজন ফরাসী ইংরেজী লিখে পাঁচজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন নি। অথচ বাংলা উর্দুতে যে পার্থক্য ফরাসী-ইংরেজীতে পার্থক্য তার চেয়ে ঢের কম। ফ্রেডরিক দি গ্রেটের যুগে বার্লিন এবং ভিয়েনার শিক্ষিত লোক মাত্রই ফরাসীচর্চা করত (আমরা যতটা ইংরেজী করি তার চেয়ে ঢের বেশী), কিন্তু তবুও তো একজন জর্মন ভাষাভাষী ফরাসী লিখে নাম করতে পারেন নি, তুর্গেনিয়েফ, তলস্তয়ের আমলে রুশ অভিজাত মাত্রই ফরাসী গভর্ণেসের হাতে বড় হতেন, বাল্যকাল হতে ফরাসী লিখতেন (তলস্তয়ের রুশ পুস্তকে যে পরিমাণ পাতার পর পাতা সির্ফ ফরাসী লেখা আছে সে রকম ইংরেজী-ভর্তি বাংলা বই আমাদের দেশে এখনো বেরোয় নি) কিন্তু তৎসত্ত্বেও একজন রুশ ফরাসীতে সার্থক সৃষ্টিকার্য করতে পারেন নি।

অত দূরে যাই কেন ? সাত শত বৎসর ফার্সীর সাধনা করে ভারতবর্ষের সাহিত্যিকেরা এমন একখানা বই লিখতে পারেন নি যে বই ইরানে সম্মান লাভ করেছে। যে গালিব আপন ফার্সীর দম্ভ করতেন তাঁর ফার্সী কবিতা ইরানে অনাদৃত, অপাঙক্তেয়, অথচ মাতৃভাষায় লেখা তাঁর উর্দু কবিতা অজর অমর হয়ে থাকবে।

আরো কাছে আসি। মাইকেলের মত বহু ভাষায় সুপণ্ডিত দ্বিতীয় বাঙালী এদেশে জন্মান নি। তাঁর পূর্বে বা পরে কোনো বাঙালী তাঁর মত ইংরিজি লিখতে পারেন নি, তবু দেখি আপ্রাণ চেষ্টা করে তিনিও ইংরিজী সাহিত্যের ইতিহাসে এতটুকু আঁচড় কেটে যেতে পারেন নি। অথচ অল্পায়াসে লেখা তাঁর ‘মেঘনাদ’ বাংলা সাহিত্য থেকে কখনও বিলুপ্ত হবে না।

আরো কাছে, একদম ঘরের ভেতর চলে আসি। লালন ফকীরও বলেছেন, ‘ঘরের কাছে পাইনে খবর, খুঁজতে গেলেম দিল্লী শহর।’ পূর্ব পাকিস্তানের আপন ঘরের মৌলবী-মৌলানারা যে শত শত বৎসর ধরে আরবী, ফারসী এবং উর্দুর চর্চা করলেন, এসব সাহিত্যে তাঁদের অবদান কি? গালিব, হালী, ইকবালের কথা বাদ দিন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে একজন দুসরা দরজার উর্দু কবি দেখাতে পারলেই আমরা সন্তুষ্ট হয়ে যাব।

মৌলবী-মৌলানাদের যে কাঠগড়ায় দাঁড় করালুম তাঁর জন্য তাঁরা যেন আমার উপর অসন্তুষ্ট না হন। নও-জোয়ানরা তাঁদের শ্রদ্ধা করুক আর নাই করুক, আমি তাঁদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখি উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের (‘হিন্দুস্তানের’) বহু মৌলবী-মৌলানার সংস্রবে এসে আমার এ বিশ্বাস আরো বদ্ধমূল হয়েছে যে, পূর্ববঙ্গের আলিম সম্প্রদায় শাস্ত্রচর্চায় তাঁদের চেয়ে কোনো অংশে কম নন। যেখানে সম্পূর্ণ বিদেশী ভাষা নিয়ে কারবার যেমন মনে করুন আরবী- -সেখানে পূর্ববঙ্গের আলিম অনেক স্থলেই ‘হিন্দুস্তানের’ আলিমকে হার মানিয়েছেন কিন্তু উর্দুতে সাহিত্য সৃষ্টি তো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। যে স্পর্শকাতরতা, সূক্ষ্মানুভূতি, হৃদয়াবেগ মাতৃভাষার ভেতর দিয়ে পরিস্ফুট হয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করে সেসব তাঁদের আছে কিন্তু উর্দু তাঁদের মাতৃভাষা নয় বলে তাঁদের সর্বপ্রচেষ্টা পঙ্গু, আড়ষ্ট ও রসবর্জিত হয়ে যে রূপ ধারণ করে তাকে সাহিত্য বলা চলে না। বিয়ের ‘প্রীতি-উপহারেই’ তার শেষ হদ্।

অথচ দেখি, অতি যৎসামান্য আরবী-ফার্সীর কল্যাণে কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যে কী অক্ষয় খ্যাতি অর্জন করলেন। মুসলমানও যে বাংলাতে সফল সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারে সে তথ্য একা কাজী সাহেবেই সপ্রমাণ করে দিয়েছেন।

তাই পুনরায় বলি, মাতৃভাষার সাহায্য ব্যতিরেকে কেউ কখনো, কোনো দেশে সার্থক সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন নি। আজ যদি আমাদের সাহিত্য প্রচেষ্টা উর্দু স্বর্ণমৃগের পশ্চাতে ধাবমান হয় তবে তার চরম অবসাদ হবে অনুর্বর মরুভূমিতে। সমস্ত ঊনবিংশ ও এ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রগতির দিকে ছুটে চলল; অর্থাভাবে, শিক্ষার অভাবে, দুঃখের তাড়নায় বাঙালী মুসলমান সে কাফেলাকে এগিয়ে যেতে দেখল কিন্তু সঙ্গী হতে পারল না। এখনো কি সময় হয় নি যে সে তার সৃজনশক্তির সদ্ব্যবহার করার সুযোগ পায়?

অথচ দেখি, অশিক্ষিত চাষা এবং অর্ধশিক্ষিত মুন্সীমোল্লা আপন সাহিত্য সৃষ্টি করে গিয়েছেন। পূর্ববঙ্গের লোকসাহিত্য যখন বিশ্বজনের সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করল তখন দেশবিদেশে বহু রসিকজন তার যে প্রশংসা করলেন সে প্রশংসা অন্য কোনো দেশের লোকসাহিত্যের প্রতি উচ্ছ্বসিত হয় নি। ভাষার বাজারে বহু বৎসর ধরে এ অধম বড় বড় মহাজনদের তামাক সেজে ফাই-ফর্মাস খেটে দিয়ে তাঁদের আড়তের সন্ধান নিয়েছে, এবং সে হলপ খেয়ে বলতে প্রস্তুত, লোকসাহিত্যের ফরাসী, জর্মন, ইতালি, ইংরেজী আড়তের কোনোটিতেই পূর্ববঙ্গ লোকসাহিত্যের মত সরেস মাল নেই।

আমাদের ভাটিয়ালি মধুর কাছে ভলগার গান চিটেগুড়—হাসন রাজা, লালন ফকীর, সৈয়দ শাহনূরের মজলিসে এসে দাঁড়াতে পারেন এমন একজন গুণীও ইয়োরোপীয় লোকসাহিত্য দেখাতে পারবে না।

অথচ কী আশ্চর্য, কী তিলিস্মাৎ, পূর্ববঙ্গের মুসলিম শিক্ষিত সম্প্রদায় কিছুই রচনা করতে পারলেন না! ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গে শিক্ষিত বলতে বোঝাত উর্দুসেবীগণ, তারপরের দুঃখ-দৈন্যের ইতিহাস তো পূর্বেই নিবেদন করেছি । কাজেই যাঁরা শত শত বৎসর ফার্সী এবং উর্দুর সেবা করে কোনো সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন নি, অন্তত তাঁদের মুখে একথা শোভা পায় না যে বাঙালী মুসলমান বাংলা সাহিত্যের সেবা করে সে ভাষাকে আপন করে নিতে পারে নি।

কিন্তু কার দোষ বেশী, আর কার দোষ কম সেকথা নিয়ে এখানে আর আলোচনা করব না। এখানে শুধু এইটুকু নিবেদন করি: যে দেশের চাষী-মাঝি ভুবনবরেণ্য লোকসঙ্গীত রচনা করতে পারল সে দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় সফল সাহিত্য রচনা করতে পারবে না সেকথা কি কখনো বিশ্বাস করা যায়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে বাধো বাধো ঠেকে। কিন্তু না বলে উপায় নেই, তাই অতি সবিনয় নিবেদন করছি, খুদাতা’লা এ অধমের জন্য বহু দেশে রুটি রেখেছিলেন। আরব, মিশর আফগানিস্থান, ফ্রান্স, জর্মনী প্রভৃতি নানা দেশে নানা পণ্ডিত নানা সাহিত্যিকের সেবা করে এ অধমের ধ্রুব বিশ্বাস জন্মেছে পূর্ববঙ্গে সাহিত্য সৃষ্টির যে উপাদান আছে এবং পূর্ববঙ্গবাসীর হৃদয়মনে যে সামান আছে তার বদৌলত একদিন সে অতি উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সৃষ্টি করবে।

সোয়া চার কোটি মানুষ সাহিত্য সৃষ্টির জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। বহুশত বৎসর ধরে তাদের আতুর হিয়া প্রকাশের জন্য আকুলি-বিকুলি করেছে, কখনো ফার্সী, কখনো উর্দুর মরু পথে তাদের ফল্গুধারা উষ্ণবাষ্পে পরিণত হয়ে গিয়েছে, আজ সেসব হৃদয় শুধু মর্মবাণীরই সন্ধানে নয়, আজ নবরাষ্ট্র নির্মাণের প্রদোষে তারা ওজস্বিনী ভাষায় দেশের জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে চায়। হাঙ্গেরীর জাতীয় সঙ্গীতে আছে :

দেশের দশের ডাক শোনা ঐ ওঠো ওঠো মাডিয়ার
এই বেলা যদি পারো তো পারিলে না হলে হ’ল না আর।

আমি বলি;

দেশের ভাষার ডাক শোনো ঐ হে তরুণ বাংলার
এই বেলা যদি পারো তো পারিলে না হলে হ’ল না আর।

এই বিরাট সাহিত্য নির্মাণের সম্মুখে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানী তরুণ যেন সাহস না হারায় । সে যেন না ভাবে যে উর্দু গ্রহণ করলে তার সব মুশকিল আসান হয়ে যেত । সাহিত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান বাবদে ইংরেজী ঢের বেশী মুশকিল আসান। উর্দুতে আছে অল্প বিস্তর মসলা-মাসাইলের কেতাব, এন্তার দোয়া-দরুদের বই। তুমি যে রাষ্ট্র নির্মাণ করতে যাচ্ছ তার মালমসলা উর্দুতে যা পেতে সে জিনিস সৃষ্টি করতে তোমার পাঁচ বছরও লাগবে না। ইরান দেশ যে রকম একদিন ইরানী সভ্যতা নির্মাণ করে ফিরদৌসী, রুমী, হাফিজ, সাদী, খৈয়ামের জন্ম দিয়েছিল সেই রকম তুমিও সম্মুখে আদর্শ রাখবে পূর্ব পাকিস্তানে এক নূতন সভ্যতা গড়বার। ইরান আরবী এবং ফার্সী দুই মিলিয়ে তার সাহিত্য-সংস্কৃতি গড়েছিল, তুমি আরবী বাংলা, ফার্সী, সংস্কৃত, উর্দু, ইংরেজী মিলিয়ে ব্যাপকতর এবং মধুর সাহিত্য-সংস্কৃতি সৃষ্টি করবে।

অন্যান্য সম্প্রদায় যেন অযথা ভয় না পান। বৌদ্ধচর্যাপদের সূতিকাগৃহে যে শিশুর জন্ম, বৈষ্ণবের নামাবলী যে শিশুর অঙ্গে বিজড়িত, আরবী ফারসীর রুটি গোস্ত যে শিশু বিস্তর খেয়েছে, ‘গীতাঞ্জলি’র একেশ্বরের বন্দনা গেয়ে গেয়ে যে শিশু যৌবনে পৌছল, সে যুবক ইসলামের ইতিহাসচর্চা করলে কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। রাধাকৃষ্ণন, সুরেন দাশগুপ্ত যেসব দর্শনের কেতাব ইংরেজীতে লিখেছেন তাতে বিস্তর সংস্কৃত শব্দ আছে, মার্গোলিয়াত মুইর ইসলাম সম্বন্ধে যেসব গ্রন্থ ইংরেজীতে লিখেছেন তাতেও বিস্তর আরবী শব্দ আছে, তাই বলে ইংরেজী ভাষার জাত যায় নি। ভারতচন্দ্র তাঁর কাব্যে যে পরিমাণ আরবী ফার্সী শব্দ প্রয়োগ করেছেন সে পরিমাণ যদি পুনরায় কাজে লাগে তা হলে আপত্তি কি? ‘আলালের ঘরের দুলাল’ও তো বাংলা বই।

রামমোহন রায় বাংলা ভাষায় যে চিন্তাধারা প্রবর্তন করেছিলেন তার বিরুদ্ধে সেযুগে গোঁড়া হিন্দুরা প্রবল আপত্তি তুলেছিলেন, রামকৃষ্ণদেবকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষায় যে নবচেতনার উৎপত্তি হয়েছিল তখনকার বিদগ্ধ (প্রধানত ব্ৰাহ্মণ) সমাজ সেটাকে গ্রহণ করতে চান নি, এবং রবীন্দ্রনাথ সনাতন ঐতিহ্যপন্থী নন বলে তাঁকে পর্যন্ত সুরেশ সমাজপতি, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শরৎ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছিল। আজ এসব সংগ্রামের কথা লোকে ভুলে গিয়েছে, এবং বাংলা সাহিত্যে এখন যদি মুসলিম সংস্কৃতির (এবং সেইটেই যে তার একমাত্র প্রচেষ্টা হবে তাও নয়) আলোচনা হয় তা হলে বিচক্ষণ লোক বিভীষিকা দেখবেন না।

আমার মত অজ্ঞ লোককে বহু হিন্দু-মুসলমান যখন বাংলাতে মুসলিম সংস্কৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করতে অনুরোধ জানিয়ে থাকতে পারেন তখন যোগ্যজন এ কর্মে নিয়োজিত হলে যে বহুলোক তাঁকে আশীর্বাদ করবেন তাতে আর কি সন্দেহ?

পূর্ব পাকিস্তানে তা হলে উর্দুর স্থান কোথায়?

প্রথমত বলে রাখা ভালো যে, বর্তমানে আমাদের দেশে যে শিক্ষাপদ্ধতি প্রচলিত আছে তার সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনার শিক্ষাপদ্ধতির কোনো তুলনাই হতে পারে না। উপস্থিত দেখতে পাই, ইস্কুলে চার বৎসর এবং কলেজে চার বৎসর একুনে আট বৎসর পড়েও সাধারণ ছাত্র চলনসই আরবী বা সংস্কৃত শিখতে পারে না। কাজেই যখন বলি উর্দু অপ্‌শনাল ভাষা হিসেবে ম্যাট্রিকের শেষের চার শ্রেণীতে পড়ানো হবে তখন উর্দুওয়ালারা যেন না ভাবেন যে ছাত্রদের উর্দুজ্ঞান আমাদের গ্রাজুয়েটদের ফার্সী জ্ঞানেরই মত হবে। কলেজেও উর্দুর জন্য ব্যাপক বন্দোবস্ত থাকবে। একথা ভুললে চলবে না যে পাকিস্তানের কলেজে ‘ভারতীয় মুসলিম সংস্কৃতি’ নামক এক বিশেষ বিয়য়বস্তু পড়ানো হবে। মোগল স্থপতি, চিত্রকলা, সঙ্গীত যে রকম সকলেরই গর্বের বিষয় (কোনো ইংরেজ বা মার্কিন যখন তাজমহলের প্রশংসা করে তখন কোনো হিন্দু তো তাজমহল মুসলমানের সৃষ্টি বলে নিজেকে সে দায় থেকে মুক্ত করেন না, রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ পাওয়া সম্বন্ধে কথা উঠলে কোনো বাঙালী মুসলমানকে ‘রবীন্দ্রনাথ হিন্দু’ বলে নতশির হতে তো দেখি নি; অবনীন্দ্রনাথ মোগল শৈলীতে ছবি আঁকেন, তাঁর শিষ্য নন্দলাল অজন্তা শৈলীতে, তাই বলে একথা কারো মুখে শুনি নি যে নন্দলাল গুরুর চেয়ে বড় চিত্রকার) ঠিক তেমনি উর্দু ভাষা এবং সাহিত্য হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই শ্লাঘার সম্পদ। যেসব ছাত্র ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব অথবা আরবী ফারসী সাহিত্য অধ্যয়ন করবে তাদের বাধ্য হয়ে উর্দুর প্রতি মনযোগ দিতে হবে। বেশীরভাগ রাজনৈতিক এবং কেন্দ্রীয় পরিষদে জানেওয়ালা সদস্য এইসব বিষয়ের সঙ্গে ছাত্রজীবনে সংযুক্ত থাকবেন বলে উর্দুর সঙ্গে তাদের যথেষ্ট পরিচয় হবে। যাঁরা ভাষা ব্যাপারে অসাধারণ মেধাবী তাঁরা হয়তো করাচীতে উর্দুভাষায় বক্তৃতা দেবেন কিন্তু অধিকাংশ সদস্যকে কেন বাংলাতেই বক্তৃতা দিতে হবে এবং সেজন্য যে ‘অসুবিধা’ হবে সেটা কি করে সরাতে হবে তার আলোচনা প্রবন্ধের গোড়ার দিকেই সবিস্তর করেছি।

কেন্দ্রের চাকরি সম্বন্ধে বক্তব্য, যেদিন পূর্ব-পশ্চিম উভয় পাকিস্তান থেকে ইংরেজী অন্তর্ধান করবে সেদিন পাঞ্জাবী মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে যে প্রকার চাকরি করবে পূর্ব পাকিস্তানের লোক ঠিক সেই প্রকারেই কেন্দ্রে চাকরি করবে। এবং একথা তো কেউ অস্বীকার করবেন না যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদৌলতে আমরা আবরী ফারসীর ভেতর দিয়ে উর্দুর সঙ্গে যুক্ত আছি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়েও থাকব কিন্তু পাঞ্জাবী সিন্ধীর সে রকম বাংলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো ঐতিহ্য নেই। কাজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা হারব কেন? কিন্তু এ বিষয়ে অতিরিক্ত বাক্য ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। উর্দুওয়ালারাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সকল অবস্থাতেই বাঙালীর জন্য করাচীতে ওয়েটেজ থাকবে । অর্থাৎ স্বয়ং উর্দুওয়ালারাই মেনে নিচ্ছেন যে আমরা প্রাণপণ উর্দু শিখলেও পশ্চিম পাকিস্তানী উর্দুভাষাভাষীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারব না। তাঁদের এই মেনে নেওয়াটা খুব সম্ভব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রসূত। আমরাও বলি, আমাদের আলিম-ফাজিলগণ যখন উর্দুতে যুক্তপ্রদেশের মৌলবীগণকে পরাজিত করতে পারেন নি, তখন আমাদের মত ‘তিলে মক্তব্’, ‘কমসীনদের’ দিয়ে কোন্ জঙ্গ ই-জবান্ জয় সম্ভবপর?

এ সম্পর্কে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো। পরাধীন এবং অনুন্নত দেশেই চাকরি নিয়ে মাথা-ফাটাফাটি খুন-রেজী। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকলা, কৃষি-খনিজ, দুগ্ধ-ঘৃত উৎপাদন করে যে-দেশ সমৃদ্ধশালী সে-দেশে চাকরি করে অল্প লোক, তাদের সম্মানও অনেক কম। দৃষ্টান্তস্বরূপ অঙ্গুলি নির্দেশ করি চাটগাঁয়ের দিকে। পাকিস্তান হয়েছে মাত্র এক বছর-এর মাঝেই শুনতে পাই চাটগাঁয়ের কোনো কোনো বড় সরকারী কর্মচারী নোকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। দেশ সমৃদ্ধশালী হলে কটা লোক বিদেশ যায়, তাও আবার চাকরির সন্ধানেই? দেশের ভেতরেই দেখতে পাই, যে বৎসর খেত-খামার ভালো হয় সে বৎসরে শহরে বাসায় চাকরের জন্য হাহাকার পড়ে পড়ে যায়।

মুসলিম ঐতিহ্যও চাকরির প্রশংসা করে নি, প্রশংসা করেছে ব্যবসা বাণিজ্যের। ইসলাম দেশদেশান্তরে বিস্তৃতিলাভ করেছে ধর্মপ্রচারকদের কর্মতৎপরতায় এবং সদাগরদের ধর্মানুরাগে। এখনো মধ্য আফ্রিকায় ক্রীশ্চান মিশনারিদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে হাতীর দাঁতের ব্যবসায়ী মুসলমান সদাগরেরা। ক্রীশ্চান মিশনারিরা সবাই মাইনে পায়, তারা চাকুরে। তাদের দুঃখের অন্ত নেই যে তারা সদাগরদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।

পূর্ব পাকিস্তানের আদর্শ কি সে সম্বন্ধে বিচার করার সময় উর্দুওয়ালা একটা ভয়ঙ্কর জুজুর ভয় দেখান। তাঁরা বলেন, পূর্ব পাকিস্তান যদি উর্দু গ্রহণ না করে তবে সে পশ্চিম পাকিস্তান তথা কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং তারি সুযোগে ভারতীয় ডোমিনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানটিকে বিনা নুন-লঙ্কায় কপাৎ করে গিলে ফেলবে।

ভারতীয় ইউনিয়নে এবং পাকিস্তানে লড়াই হবে কিনা, হলে কবে হবে এ আলোচনায় এত ‘যদি’ এবং ‘কিন্তু’ আছে যে সে আলোচনা যুক্তি তর্কের বিষয়বস্তু না হয়ে ফলিত জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণীর জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ফলিত জ্যোতিষ জানিনে, উপস্থিত আমরা ধরে নিচ্ছি যে লড়াইটা লাগবে, কারণ সেটা ধরে না নিলে জুজুর ভয় ভাঙানো যাবে না। অন্ধকার ঘরে বাচ্চা ছেলেকে ‘ভূত নেই’ বললে তার ভয় যায় না, বরঞ্চ ভূত মেনে নিলেও আপত্তি নেই যদি, সঙ্গে সঙ্গে আলো জ্বালানো হয়। তাই আলোর সন্ধানই করা যাক।

কে মিত্র, কে শত্রু সে কি ভাষার উপরই নির্ভর করে? আমিরিকা, ফ্রান্স, রুশ, লড়ল জর্মন, ইতালির বিরুদ্ধে। আমেরিকা ফ্রান্স এবং রুশ তাই বলে কি একই ভাষায় কথাবার্তা কয়, না জর্মনী ইতালির ভাষাই বা এক? আজ বলছি রুশের বিরুদ্ধে ধনতান্ত্রিক ফ্রান্সের একমাত্র ভরসা মার্কিন সাহায্য। আজ যদি উর্দুওয়ালাদের কায়দায় ফ্রান্সকে বলা হয়, “তোমরা যদি ইংরেজী গ্রহণ না করো তবে তোমরা আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, এবং রুশ ফ্রান্সটিকে বিনা মাস্টার্ডে কপাৎ করে গিলে ফেলবে, তা হলে কি ফ্রান্সের লোক মাতৃভাষা বর্জন করে মাথায় গামছা বেঁধে ইংরেজী শিখতে লেগে যাবে?

পক্ষান্তরে এক ভাষা হলেই তো হৃদ্যতা চরমে পৌঁছয় না। আমেরিকা যখন ইংরেজের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছিল তখনো সে ইংরেজী বলত। আইরিশমেনের মাতৃভাষা ইংরেজী, তাই বলে সে কি ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়ে নি? পশতুভাষী মুসলিম পাঠানের একদল লড়ল সুভাষচন্দ্রের ঝাণ্ডার নীচে দাঁড়িয়ে জাপানের হয়ে, আরেকদল লড়ল ইংরেজের ঝাণ্ডার নীচে দাঁড়িয়ে তাদের হয়ে।

তার চেয়েও ভালো উদাহরণ আছে আরব দেশে। আরবের লোক কথা বলে আরবী ভাষায়, তারা সকলেই এক এক গোষ্ঠীর লোক (একবর্ণ), তারা সকলেই মুসলিম অথচ আজ সে দেশ (১) ইরাক, (২) সিরিয়া, (৩) লেবানন, (৪) ফলস্তীন, .(৫) ট্রান্স-জর্ডন, (৬) সউদী-আরব, (৭) য়েমেনে খণ্ডিত বিখণ্ডিত (এগুলো ছাড়া আরবী-ভাষাভাষী মিশর, টুনিস, আলজেরিয়া, মরক্কোও রয়েছে)।

এই সাত রাষ্ট্রের মধ্যে মন-কষাকষির অন্ত নেই। ইবনে সউদ এবং মক্কার শরীফের মধ্যে যে লড়াই হয়েছিল সে তো আমাদের সকলেরই স্পষ্ট মনে আছে। তার জের এখনো চলছে আমীর আব্দুল্লা এবং ইবনে সউদের শত্রুতার মধ্যে আজ যে ফলস্তীন অসহায় হয়ে ইহুদির হাতে মার খাচ্ছে তার প্রধান কারণ এই যে ইবনে সউদ আর আব্দুল্লার মধ্যে ঠিক ঠিক মনের মিল হচ্ছে না। আরব লীগের সর্বপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে—অথচ সকলেই জানেন যে উপযুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমঝাওতা হয়ে গেলে দশ দিনের ভেতর ইহুদিদের রাজ্যলিপ্সা ‘ফি নারি জাহান্নামে’ পাঠানো সম্ভবপর হবে।

পক্ষান্তরে সুইজারল্যাণ্ডে তিনটি (চতুর্থটির লোকসংখ্যা অত্যন্ত কম) ভাষা, বেলজিয়ামে দুইটি, চেকোশ্লোভাকিয়ায় দুইটি, যুগোশ্লোভাকিয়ায় গোটা চারেক, কানাডায় দুইটি ইত্যাদি ইত্যাদি। সুইজারল্যাণ্ডের দৃষ্টান্ত বিশেষ করে দ্রষ্টব্য। সে দেশের প্রধান দুই অংশ জর্মন এবং ফরাসী বলে। বন্দোবস্ত থাকা সত্ত্বেও একে অন্যের ভাষা সাধারণত রপ্ত করতে পারে না (ভাষা শেখা বাবতে সুইরা বড়ই কাহিল), অথচ ফ্রান্স এবং জর্মনীতে যখন লড়াই লাগে তখন ফ্রেঞ্চ সুইস্রা একথা কখনো বলে নি যে তারা ফ্রান্সের হয়ে লড়বে, জর্মন সুইসরাও অনুরূপ ভয় দেখায়। নি। গত যুদ্ধে দুজনে মিলে নিরপেক্ষ ছিল এবং হিটলার জানতেন যে সুইস্-জর্মন যদিও তাঁর জাতভাই তবু তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না।

তাই বলি unity (ঐক্য) ও uniformity (সমতা) এক জিনিস নয় । সমতা হলেই ঐক্য হয় না। আর যারা সমতা চায় তাদের জেদ-বয়নাক্কার অন্ত নেই । আজ তারা বলবে ভাষায় সমতা চাই, পূর্ব পাকিস্তান উর্দু নাও; কাল বলবে পোশাকের সমতা চাই, শেলওয়ার কুর্তা পাগড়ী পরো; পরশু বলবে খাদ্যের সমতা চাই, মাছ ভাত ছেড়ে গোস্ত রুটি ধরো; তার পরদিন বলবে নৌকা বদ্‌দ্ধদ্ জিনিস, তার বদলে গোরুর গাড়ী চালাও। তারপর যদি একদিন পূর্ব পাকিস্তানী পাঞ্জাবীদের বলে, দৈর্ঘ্যের সমতা হলে আরো ভালো হয়, লড়াইয়ের জন্য য়ুনিফর্ম বানাতে তা হলে সুবিধে হবে, কিন্তু তোমরা বড্ড উঁচু, তোমাদের পায়ের অথবা মাথার দিকের ইঞ্চি তিনেক কেটে ফেলো, তা হলেই হয়েছে!

ঐক্য বা য়ুনিটি অন্য জিনিস! প্রত্যেকে আপন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে যখন সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষ একই স্বার্থ, একই আদর্শের দিকে ধাবমান হয় তখনই তাকে বলে ঐক্য। তুলনা দিতে গিয়ে গুণীরা বলেছেন, বীণার প্রত্যেক তারের আপন আপন ধ্বনি আছে—সব তার যখন আপন আপন বিশিষ্ট ধ্বনি সপ্রকাশ করে, একই সুরের ভেতর দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তখনই সৃষ্ট হয় উচ্চাঙ্গের সঙ্গীত। সব কটা তারই যদি এক ধরনের বাঁধা হয় তবে বীণায় আর একতারায় কোনো তফাৎ থাকে না। সে যন্ত্র বিদগ্ধ সঙ্গীত প্রকাশ করতে অক্ষম।

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে আপন আপন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে, কী প্রকারে এক আদর্শের রাখী বেঁধে সম্মিলিত করা যায় তার সাধনা করবেন রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ। উপস্থিত শুধু আমরা এইটুকু বলতে পারি, পূর্ব পাকিস্তানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি তার ঘাড়ে উর্দু চাপানো হয় তবে স্বভাবতই উর্দু-ভাষাভাষী বহু নিষ্কর্মা শুধু ভাষার জোরে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করার চেষ্টা করবে। এ জিনিস অত্যন্ত স্বাভাবিক, তার জন্য উর্দু-ভাষাভাষীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই—এবং ফলে জনসাধারণ একদিন বিদ্রোহ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বর্ণের কৌলীন্য যেমন শোষণের কারণ হতে পারে, ভাষার কৌলীন্যও ঠিক সেই রকম। শোষণপন্থা প্রশস্ততর করে দেয়।

তারি একটি মর্মন্তুদ দৃষ্টান্ত নিন : তুর্কী একদা তাবৎ আরবখণ্ডের উপর রাজত্ব করত। তুর্কী সুলতান সর্ব আরবের খলিফাও ছিলেন বটে। তৎসত্ত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সমস্ত আরব ভুখণ্ড খলিফার জিহাদ ফরমান উপেক্ষা করে নসারা ইংরেজদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তুর্কীকে পর্যুদস্ত করল। আমাদের কাছে এ বড় বিস্ময়ের কথা,—খলিফার জিহাদ হুকুমের বিরুদ্ধে লড়া মানে তো কাফির হয়ে যাওয়া। যে আরবদের ভেতর দিয়ে ইসলাম প্রথম সপ্রকাশ হলেন তারা ধর্মবুদ্ধি হারালো?

তাই আমাদের সবিনয় নিবেদন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান যেন কোনো মহত্তর আদর্শের অনুপ্রেরণায় ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয়। পূর্বেই নিবেদন করেছি, গুণীরা সে আদর্শের সন্ধান করবেন। আমার জ্ঞান-অভিজ্ঞতা অত্যল্প কিন্তু নানা দেশের গুণীদের মুখে শুনেছি, নানা সৎ গ্রন্থে পড়েছি, দীন ইসলাম বলেন, সে আদর্শ হবে রাষ্ট্রের দীনদুঃখীর সেবা করা। উভয় পাকিস্তান যদি এই আদর্শ সামনে ধরে যে তাদের রাষ্ট্রভিত্তি নির্মিত হবে চাষামজুরকে অন্ন দিয়ে, দুঃস্থকে সেবা করে, অজ্ঞকে জ্ঞানদান করে, এককথায় ‘সাইল’কে (অভাবে আতুরকে) ‘গুণী’ (অভাবমুক্ত) করে, তা হলে আর ভয় নেই, ভাবনা নেই । উভয় প্রান্তে গণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা যে ঐক্যসূত্রে সম্মিলিত হবে সে সূত্র ভিন্ন হওয়ার ভয় নেই।

সেই মহান আদর্শের দিকে উদ্দীপ্ত উদ্বুদ্ধ করতে পারে সতেজ সবল সাহিত্য। সে জাতীয় সাহিত্য মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য কোনো কেউ কখনো নির্মাণ করতে পারে নি। জনগণের মাতৃভাষা উপেক্ষা করে গণরাষ্ট্র কখনই নির্মিত হতে পারে না।

উপসংহারে বক্তব্য : যুদ্ধ কাম্য বস্তু নয়। অন্যের বিনাশ বাসনা সর্বথা বর্জনীয় পাকিস্তান বিনষ্ট হলে ভারতীয় ইউনিয়নের লাভ নেই, ভারতীয় ইউনিয়ন বিনষ্ট হলে পাকিস্তানের লাভ নেই উভয় রাষ্ট্র সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে বিত্তমান হোক, এই আমাদের প্রধান কাম্য। ইয়োরোপের তাণ্ডবলীলা থেকে আমরা কি কোনো শিক্ষা গ্রহণ করব না?

শিক্ষাগ্রহণ করি আর নাই করি, কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার ভয় অহরহ বুকে পুষে সেই দৃষ্টিবিন্দু থেকে সর্ব সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করা মারাত্মক ভুল । বাড়ীতে আগুন লাগার ভয়ে অষ্টপ্রহর চালে জল ঢালা বুদ্ধিমানের কর্ম নয়।

আজ যদি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় মাতৃভাষা বর্জন করি তবে কাল প্রাণ যাওয়ার ভয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হব।

 

Series Navigation<< পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ।। সৈয়দ মুজতবা আলী।। কিস্তি ৩।।আমাদের ভাষা ।। আবুল মনসুর আহমেদ ।। ১৯৫৮ ।। >>
The following two tabs change content below.

বাছবিচার

এডিটর, বাছবিচার।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →