Main menu

স্বাধীনতার ঋণ কোনদিন গোলামি দিয়া শোধ করা যায় না (পলিটিক্যাল ডাইরি: মার্চ – এপ্রিল, ২০২১)

[২০২১ সালের ২৬শে মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের কারণে ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরে আসার কথা ছিল। তার সফরের বিরুদ্ধে মাদরাসার স্টুডেন্টরা মিছিল-মিটিং করতে গেলে গুলি চালায়া ১৭ (বা২২) জন মানুশরে খুন করে পুলিশ। অই সময়ের ঘটনা নিয়া কিছু জিনিস লেখছিলাম আমি। এইখানে অই লেখাগুলা রাখা হইলো। – ই. হা.]

মার্চ ১৮, ২০২১

বাংলাদেশে ‘দাঙ্গা’ হওয়ার কোন চান্স আছে বইলা মনেহয় না, যা হয়, সেইটা হইতেছে খুন। (এবং বেশিরভাগ সময়ই সরকারি মদদে।) ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোদি সরকার যখন ইন্ডিয়াতে মুসলমানদের খুন করতেছিল তখন এই কথা মনে হইছিল।*

বাংলাদেশে যখন নরেন্দ্র মোদি ভিজিটে আসতেছেন, তার আগে এই রব মনেহয় উঠতেছে সেক্যুলার মিডিয়া’তে। বাংলাদেশে ‘দাঙ্গা’র নামে যা হয়, সেইটা হইতেছে হিন্দু সম্পত্তি-দখল। এই ‘দাঙ্গা’র নাম কইরা ১৯৪৭’র পর থিকা এতো হিন্দু-সম্পত্তি দখল হইছে যে, বাংলাদেশে টাকা-পয়সাঅলা হিন্দুদের নাম্বার এখন যে কোন এলাকাতেই হাতে-গোণা হওয়ার কথা। যেই কারণে ‘দাঙ্গার’ ঘটনা বাংলাদেশ ১৯৯০’র পর থিকা আর খুবএকটা ঘটে না। (ইলেকশনের আগে-পরে ধোঁয়া উঠতো কিছুদিন, কিন্তু এখন যেহেতু ইলেকশনই নাই, দরকার পড়ে না।) কারণ দখল করার মতো হিন্দু-সম্পত্তি নাই তেমন। তারপরও ‘দাঙ্গা’র রব উঠে, যখন দিল্লী’র গোলামির ইস্যু আসে। পলিটিক্যালি এখনো কিছু পারপাস সার্ভ করতে পারে, এই ‘দাঙ্গা’।আমি বলতেছি না, বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে না; কিন্তু এর পলিটিক্যাল সিগনিফিকেন্সরে এড়ায়া যাওয়া’টা একটা লিবারাল চুতিয়ামিরই ঘটনা।


* টার্ম’টা ইম্পর্টেন্ট। দাঙ্গা হয় যখন দুইদল দুইদলরে মারে। দিল্লী’তে মোদির সরকার মুসলমানদেরকে খুন করছে। এই ঘটনা দাঙ্গা কেমনে হয়? [ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০]

 

মার্চ ২১, ২০২১

পলিটিক্যাল আলাপ:  সমাজ সংগঠন তৈরি করা কেন পলিটিক্যাল মুভমেন্টের চাইতেও জরুরি জিনিস

মেহরাব ইফতি দুনিয়াতে একমাত্র লোক না হইলেও মোটামুটি দুয়েকজন লোকের মধ্যে একজন যে মনে করে যে, কবিতা লেখার বাইরেও পলিটিক্স নিয়া কিছু চিন্তা আমার আছে, বা আমি করতে পারি। 🙂  তো, যখনই অর লগে দেখা হয়, পলিটিক্যাল আলাপ শুরু করে আমার লগে।

ও তো ইন্ডিয়াতে পড়াশোনা করে, ওয়েস্ট বেঙ্গলে; তো, অইখানকার সিচুয়েশন নিয়া সে খুব চিন্তিত; যে ওয়েস্ট বেঙ্গলে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে কি হবে তাইলে? ও শুরু করলো, জিজেকের আলাপের রেফারেন্স দিয়া, যে ট্রাম্প জিতার সময়ে জিজেক কইছিল হিলারি না জিইতা ট্রাম্প জিতলে আসলে ভালো কারণ লিবারাল সিস্টেমটা যে ফাংশন করতেছে না, সেইটা আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যাবে, ভালো হবে সেইটা। কিন্তু ইন্ডিয়াতে তো রাষ্ট্র-ব্যবস্থার ৩টা পিলার – আইন-আদালত, ইলেকশন কমিশন, আর ভার্সিটিগুলা ইন্ডিপিন্ডেড ছিল; এখন বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে আইন-আদালত’রে কন্ট্রোল করা শুরু করছে, ভার্সিটিগুলাতে নিজেদের লোকজন ঢুকাইতেছে, ইলেকশন কমিশনরে দখল না করলেও ডর-ভয় দেখায়া ফেভারে কাজ করানোর চেষ্টা করতেছে। এখন ওয়েস্ট বেঙ্গলে যদিও জরিপগুলা বলতেছে, বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না, কিন্তু পাবলিকের সাথে কথা বইলা মনে হইছে, চইলা আসবে আসলে। তখন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হবে না? মুসলমানদের পুশ-ব্যাক করবে না? বাংলাদেশেরও তো সাফার করা লাগবে? ওয়েস্ট বেঙ্গলে বিজেপি ক্ষমতায় আসাটা ভালো কেমনে হয়? জিজেক যেইরকম বলছেন। একটা এনার্কি কি এর সমাধান দিতে পারবে?

আমি কইলাম, জিজেকের প্রিমাইজটারে নিয়েন না। আমি বরং আরেকটা গ্রাউন্ড সাজেস্ট করি আপনারে। আপনি ইর্ম্পটেন্ট একটা ফ্যাক্টররে বাদ দিছেন, সেইটা হইতেছে, মিডিয়া। বিজেপি সবচে আগে মিডিয়া-কালচার-বলিউড… এইসব জায়গারে আগে দখল করছে। উনাদের কেন্ডিডেট দেখবেন, বেশিরভাগই সেলিব্রেটি, সিনেমার, সিরিজের নায়ক-নায়িকা, ক্রিকেটার, গায়ক-অভিনেতা, এই-সেই। তো, এইখানে, মিডিয়ার ফাংশন’টা কি? মিডিয়া হইতেছে, আমাদের সামনে পলিটিক্যাল রিয়ালিটি’টারে তৈরি করে, বা ডিসরটেড রিয়ালিটি’টারে বারবার প্রজেক্ট করতে থাকে। এইটা আরো স্ট্রং ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারে কারণ সমাজে কানেক্টিভিটির জায়গাগুলা মিসিং, মিডিয়া অই ভ্যাকুয়ামটারে একতরফাভাবে ম্যানিপুলেট করতে পারে। করতে পারে, আরো দুইটা কারণে। এক হইলো, আপনি যেই লিবারাল ইন্সটিটিউশনগুলার কথা কইতেছেন, অইগুলা সমাজের কমন পিপলদের পারপাস সার্ভ করতে পারে নাই, বা পারে না। ইভেন আমার মতো ‘শিক্ষিত’ মানুশও চাইবো যে কোন সিচুয়েশনে আইন-আদালত এড়ায়া চলতে, কারণ খামাখা উকিল ধরো, আদালতে যাও, মামলার ডেইট পড়বে, সিস্টেম-টিস্টেম কিছুই তো জানি না, এর চে ভালো ক্ষতি যদি বেশি না হয়, চাইবো আদালতের বাইরেই জিনিসগুলারে সেটেল কইরা ফেলতে। এইরকম অন্য লিবারাল ইন্সিটিটিউশনগুলার ব্যাপারেও বলা যায়, যতগুলা ক্রিমিনাল আছে সমাজে, মানুশের হক মাইরা খায় এরা তো সব ভার্সিটি পড়া লোকজনই। এইরকম। মানে, পাবলিক সচেতন না, লিবারাল ইন্সটিটিউটের বাইরে রেসিয়াল/সাম্প্রদায়িক শক্তিরে সার্পোট করতেছে – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং লিবারাল ইন্সিটিটউটগুলা ফেইল মারছে বইলা এইখানে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ স্ট্রং হয়া উঠতেছে।

আর এইখানে মিডিয়ার মদদে এইটা হইতে পারতেছে কারণ আমাদের সমাজে সমাজ-সংগঠনের কোন অস্তিত্বই এখন আর নাই। ৩০/৪০ বছর আগের কথাই চিন্তা করেন, ধরেন, পাশাপাশি দুইটা গ্রামের ঘটনা, এক গ্রামের একজন আরেক গ্রামে গিয়া একটা ক্রাইম করছে, ধরেন, চুরি-ডাকাতিই করছে, অই গ্রামের লোকজন কিন্তু তারে পিটানি দিলেও মাইরা ফেলতে পারবে না, কারণ জানে, গ্রামের একটা সমাজ আছে, সে যেই গ্রামের লোক সেইখানের লোকজনরে আগে ডাকাবে, তারপরে তার বিচার করবে; যদি না ডাইকা এইটা করে, গ্রামে-গ্রামে খুনাখুনি লাইগা যাবে; এইটা খালি অন্যায় আর বিচারের ঘটনা না, সে অই গ্রামের লোক, তাদের একটা রেসপন্সিবিলিটি আছে; কেউ যদি খারাপ কাজ করে, তার দোষ তাদের উপ্রেও পড়ে; যে সবাই এইটা খেয়াল করতে পারে নাই। এখন, এই সমাজ-সংগঠন একবারেই নাই হয়া গেছে আমাদের সমাজে। একটা কৃষক-সমাজ, একটা ছাত্র-সমাজ, একটা পাড়া-মহল্লার সমাজও নাই।

একজন ছাত্রের পকেটে ইয়াবা ঢুকায়া পুলিশ থানায় ধইরা নিয়া গেলে এলাকার ছাত্ররা আসবে না তারে বাঁচাইতে। কারণ ধরেন, ডেমরা’তে, যাত্রাবাড়ি’তে ১০০ জনের কোন ছাত্র-সংগঠন নাই, যাদের কেউ একজনরে ধইরা নিয়া গেলে বাকি ৯৯ জন আগায়া আসবে। কোন (বালের) বিপ্লব, রেভিউশন করার দরকার নাই, জাস্ট এইটুক করবে, এইটা নাই! আর এইরকমের কোন কিছু যেহেতু নাই, একটা ‘ঐক্য’ তো আমাদের লাগবে, সেই ভ্যাকুয়ামটা মিডিয়া ফিলাপ করে, ‘আমরা হিন্দু’ ‘আমরা মুসলমান’ – এইসব প্রপাগান্ডা দিয়া।

সমাজ-সংগঠনের যেই কাজ সেইটা পলিটিক্যাল সংগঠন দিয়া হবে না। কালচারাল সংগঠন দিয়াও হবে না। সমাজে যদি সমাজ-সংগঠন না থাকে পলিটিক্যাল সংগঠনগুলাও ঠিকমতো ফাংশন করবে না। সমাজ-সংগঠন হইতেছে, পলিটিক্যাল সংগঠনের বেইজটার মতন অনেকটা।

খুলনার পাটকল আন্দোলন কেন সাকসেসফুল হয় নাই? বা যে কোন পলিটিক্যাল মুভমেন্টই কেন বাংলাদেশে সাকসেসফুল হইতে পারবে না, এই সমাজ-সংগঠনের জায়গা থিকা এইটা বুঝতে পারবেন। ধরেন, একটা বিল্ডিংয়ে আগুন লাগছে, এখন দুয়েক বালতি দিয়া পানি ঢাইলা আপনি কি সেই আগুন নিভাইতে পারবেন? বরং আগুনরে আরো তাতায়া দিবেন, সে আরো আগায়া আসবে এইদিকে। তো, সমাজ-সংগঠন ধরেন, বালু’র মতন অনেকটা, আপনি ছোটখাট বালুর ব্যারিকেড যদি দিতে পারেন আগুন’টা আটকায়া যাবে; আগুন’টা থাইমা যাবে না, অন্যদিকে গিয়া পুড়াবে। পলিটিক্যাল সংগঠন আপনার লাগবে, কিন্তু সমাজ-সংগঠনের কোন জায়গা বা স্ট্রং বেইজ যদি না থাকে সেইটা পলিটিক্যাল মুভমেন্টগুলারে সাকসেসের দিকে নিয়া যাইতে পারবে না। সমাজ-সংগঠনগুলা না থাকলে সেই ফোর্সটা সারভাইব করতে পারবে না।

উল্টা দিক দিয়া দিল্লীর কিশান মুভমেন্টও দেখেন একটা ইমপ্যাক্ট তো তৈরি করতে পারতেছে অবশ্যই, কিন্তু পলিটিক্যালি সাকসেসফুল হইতে পারতেছে না, কারণ সমাজ-সংগঠন আর পলিটিক্যাল-সংগঠন একই জিনিস না, উনারা পলিটিক্যাল এফিলিয়েশনটা ক্রিয়েট করতে পারতেছেন না। পলিটিক্যাল দাবি আদায় করাটা সমাজ-সংগঠনের পক্ষে সম্ভব না। সমাজ-সংগঠনের কাজ অই পলিটিক্যাল জায়গাটারে তৈরি করা, যেইখান থিকা পলিটিক্যাল দাবি আদায় করাটা পসিবল।

এইটা আরো টের পাইবেন মাওলানার ভাসানীর কথা’তে, উনি ভুল কইরা দাবি করছেন যে, বাংলাদেশে উনি পলিটিক্যাল সংগঠন তৈরি করছেন, কিন্তু উনি যেইটা করছেন, পলিটিক্যাল কনশাসনেসের জায়গা থিকা সমাজ-সংগঠন বানাইছিলেন কৃষকদের; যেইটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিউজভাবে কন্ট্রিবিউট করছে। (আমার আশা আছে, বাংলাদেশে এইরকম এনথ্রোপলিজস্ট আমরা পাবো, যারা জিনিসটারে থিওরেটিক্যাল জায়গা থিকা এক্সপ্লেইন করতে পারবেন।)

যদি সংগঠনের কথা ভাবেন, এইখানে তিনটা ইন্টারসেক্ট আছে – সোশ্যাল-সংগঠন, পলিটিক্যাল-সংগঠন এবং কালচারাল-সংগঠন। কালচারাল-সংগঠনগুলা কম-বেশি পলিটিক্যাল এফিলিয়েশনের কাজটাই করে, সমাজে। বিজেপি’র ব্যাপারে বলিউড যেমন করছে। বাংলাদেশে নয়া বাকশালের ব্যাপারেও অর্গনাইজড মিডিয়া ও সলিমুল্লাহ খানদের কন্ট্রিবিউশনটারে ছোট কইরা দেখার কোন উপায় আছে বইলা আমি মনে করি না। এইটা স্ট্রাকচার-সুপারস্ট্রাকচারের মামলা না, বরং ইন্টার-কানেক্টিভিটির ঘটনা।

তো, বাংলাদেশে সমাজ-সংগঠনের জায়গাগুলা নাই হয়া গেলো কেমনে? যে কোন সোশ্যাল স্ট্রাকচারই তো ইকোনমিক অবস্থার লগে রিলেটেড। যখন এগ্রি-কালচার বেইজড ইকোনমি ছিল, গ্রাম বলেন, এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি বলেন, দরকারি ব্যাপার ছিল; তারপরে যখন প্রডাকশন-বেইজ ইকোনমিতে আমরা আসছি সিঙ্গেল বা ইন্ডিডিপেন্ডেড ফ্যামিলি স্ট্রাকচার আমরা পাইতেছি; এমনকি এখন যখন ২৪/৭ সার্ভিসের সময়ে আসছি ওয়ার্কলাইফ-ফ্যামিলিলাইফ ব্যালেন্স করাটা বরং টাফ, ইন্ডিভিজ্যুয়াল হইলেই ভালো; যার ফলে সিঙ্গেল-ইন্ডিভিজ্যুয়ালই (পুরুষ বা নারী যেইটাই হোক) বেটার; ফ্যামিলি ‘ব্যাকডেটেড’ একটা ঘটনা এখন। কারণ ইকোনমিক স্ট্রাকচারের লগে এইটা মিলে না।

এই কারণে সমাজ-সংগঠন মানে পুরাতন গ্রাম-ব্যবস্থায় ফিরা যাওয়া না। বরং নতুন ইকনোমিক স্ট্রাকচারের ভিতরে এলিনেশন বা ইন্ডিভিজ্যুয়ালিজমের ভ্যাকুয়ামে মিডিয়া-রিয়ালিটিরে মহান না কইরা তুইলা কেমনে সমাজ-সংগঠনের স্পেইসগুলারে ক্রিয়েট করা যাইতে পারে, সেইটা নিয়া ভাবতে পারাটা দরকার।

আর মনে রাখা দরকার, চিন্তা করা আর কাজ করা, থিওরি আর প্রাকটিস দুইটা আলাদা ঘটনা। একটা আরেকটাতে কন্ট্রিবিউট করে, কিন্তু খুব কমই সাপ্লিমেন্ট করে বা করতে পারে আসলে।

তো, কার্ল মার্কস যে পলিটিক্যাল সংগঠনের উপ্রে জোর দিছেন, এইটা ভুল – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং আমি মনে করি, উনার চিন্তার ইন্টারপ্রিটেশনরে পলিটক্যালি রিলিভেন্ট কইরা তুলতে আরো ফেইলওর হইতেছি আমরা।

বাংলাদেশে কমিউনস্ট রাজনীতি একটা ইউরোপিয়ান ইন্ডিভিজ্যুয়ালিজমের মড়া ছাড়া আর কিছুই হইতে পারে নাই। ‘আমি কমিউনিস্ট রাজনীতি করি’ মানে আমি কিন্তু ভাই একটু ডিফরেন্ট, এইরকম ‘ছাল নাই কুত্তার বাঘার ডাক’র বাইরে কিছুই হয় নাই, হওয়ার কোন এক্সপেক্টশনের মধ্যেও নাই। পলিটিক্যালি অর্থব হওয়ার কারণে ক্ষমতার পা-চাটতে চাটতে রিলিভেন্ট হয়া ছিল আর থাকতে চাইতেছে। আর সবচে বাজে জিনিস হইলো, কালচারালি একটা ডিসকানেক্টেড সেলফ’রে অরা ‘কমিউনিস্ট’ বানায়া তুলছে; যেই কমিউনিস্ট ফলস বিপ্লব করার ড্রিমের ভিতর দিয়া ক্যাপিটালিজমের সবচে সাচ্চা গোলাম হিসাবে নিজেরে বাঁচায়া রাখে।

(একটু ইলিরিভেন্ট হইলেও) এই আলাপে উনাদেরকে ‘জম্বি কমিউনিস্ট’ হিসাবে মার্ক কইরা রাখতে চাই আমি, কারণ যে কোন সমাজ-সংগঠনের বিরোধিতা করাটারেই ‘কমিউনিস্ট’ হওয়ার একটা ঘটনা বানায়া রাখছেন উনারা। আর এই সমাজ-সংগঠনরে গায়েব কইরা দেয়ার ঘটনাতে ক্যাপিটালিস্ট ইকনোমিক স্ট্রাকচারের লগে সো-কল্ড “কমিউনিস্ট কালচার”-ও একটা রিলেটেড ঘটনা বইলা আমি মনে করি।…

 


মার্চ ২৩, ২০২১

বিপ্লব-স্পন্দিত বুকে মনেহয় আমিই ছাত্রলীগ #নরেন্দ্রমোদী

 


মার্চ ২৪, ২০২১

ইসলামিস্ট ভার্সেস নাস্তিক – এই (আজাইরা) তর্কটার উপ্রে বেইজ কইরাই আসলে নয়া বাকশালের নৌকা এখনো ভাইসা আছে। মানে, এমন না যে, সো-কল্ড ‘নাস্তিক’রা এই রিজিমের বিরোধিতা করতেছে এবং ‘ইসলামিস্টরা’ বিরোধিতা করতেছে না; বরং আমি দেখি যে, এর ভিতর দিয়াও একসাথে এক্ট করতে না-পারাটা, এই তর্কটারে আজাইরা প্রমাণ না করতে পারার একটা ঘটনা।

এখন অই গ্রাউন্ডটাতে পৌঁছাইতে পারতে হবে আমাদেরকে যেইখানে ‘ইসলামিস্ট’ ও ‘নাস্তিক’ – এই ক্যাটাগরি’টা আর ফাংশন করতে পারবে না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, দুনিয়াতে বা বাংলাদেশে ‘নাস্তিক’ ও ‘ইসলামিস্ট’ বইলা কিছু নাই, বরং খেয়াল করতে পারাটা দরকার এই ক্যাটাগরিটারে জ্যান্ত রাখার ভিতর দিয়া নয়া বাকশালের ন্যারেটিভ’টা নিজেরে কেমনে বাঁচায়া রাখতেছে।

আরেকটু ঘুরায়া বলি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধী কেউ ছিল না – তা তো না, বা ধরেন, ধর্ম মানেন না – এইরকম লোকজন যে নাই, তা-ও তো না; (একটা সমাজে ১০১টা ক্রাইসিস থাকে) কিন্তু এইটা কেন আর কিভাবে বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ক্রাইসিস হইতে পারে? এইটা বাংলাদেশের ‘মূল সমস্যা’ না; বরং সমস্যা হিসাবে জিইয়ায়া রাখা হইতেছে।

তো, এই জায়গাটারে ইনভ্যালিড না কইরা কোন পলিটিক্যাল আলাপই কোন মিনিং তৈরি করতে পারবে না।

২.
সেকেন্ড আরকটা জিনিস মনে হইলো, ঈশা খাঁ ও বারো ভূঁইয়া’র ব্যাপারে; যারা কিছু সময়ের জন্য দিল্লি’র দখলদারি মানেন নাই। উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়াতে চোখ বুলাইলে কয়েকটা জিনিস চোখে পড়ার কথা।

এক হইলো, বারো ভূঁইয়া মানে বারোজন না; বারো-ভাতারি বা বারো-রকমের মানুশ এইরকম জায়গা থিকা আসছে যে, অনেক… একটা মাল্টিপল (বারোমাইস্যা থিকা আসার কথাও হয়তো); তো, এইটা হইলো শব্দরে, ঘটনারে লিটারারি মিনিংয়ের ভিতরে আটকায়া ফেলার ঘটনা। যে ধরেন, অন্য দেশের প্রাইম-মিনিস্টার আসতেছে কি সমস্যা! আমরা কি ‘মেহমানদারি’ দেখাবো না! ইন্ডিয়া কি আমাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হেল্প করে নাই! এইগুলা হইতেছে ‘লিটারারি মিনিংয়ের’ ভিতরে আটকায়া ফেলার ঘটনা। এইটা ভয়াবহ একটা ট্রাপ। (বাংলাপিডিয়া আবার লিখছে ইশা খান, খাঁ না, বাইনচোতেরা!)
সেকেন্ড হইলো, এই বারো বা অনেক কেমনে তৈরি হইছে? ইশা খাঁ মুসলমান ছিলেন বইলা এইটা ‘ইসলামিস্ট’ কোন মুভমেন্ট না; এইখানে মুসলমান ও হিন্দু – দুই ধর্মের ভূঁইয়া’রাই ছিলেন। মানে, আপনি মুসলমান বইলা দিল্লীর শাসন মানতে হবে, বা হিন্দু বইলা এর এগেনেস্টে যাইতেছেন, ব্যাপারটা কখনোই এইরকম ছিল না। ধর্ম পরিচয় অবশ্যই ছিল এবং আছেও; কিন্তু এইটা দিয়া আপনি ফাইট করতেছেন না, এবং অবশ্যই ‘নাস্তিকতা’ নামের কোন সুপরিয়রিটি দিয়াও।

এই দুইটা জিনিস চিন্তা করতে রাজি হইতে পারলে আমার ধারণা, এই তর্কের জায়গাটা যে এতোটা ম্যাটার করে না, অই পলিটিক্যাল কনশাসনেসের জায়গাতে যাইতে পারবো আমরা।

৩.
ধর্ম ও ন্যাশনালিটির পলিটিক্যাল জায়গাটা নিয়া আরেকটা ছোট কথা হইলো, দিল্লীর মোগল’রা মুসলমান হইলেও এই অঞ্চলের মুসলমান’রা তাদেরকে ‘ভাই’ বইলা কখনোই ভাবতে পারে নাই, অরাও ভাবে নাই। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ছোট একটা বই আছে, “আমার কথা” নামে অইখানে পাইবেন কিছু ঘটনা; বা পাকিস্তানি’রাও তো মুসলমান-ই ছিল, কিন্তু অরাও তো ভাবতো (এবং মেবি এখনো ভাবে যে) বাঙালি’রা তো এতোটা মুসলমান না! এখন আপনি কপালে দাগ ফেইলা এইটা প্রমাণ করতে পারবেন না। কালচারালি অই দুইটা এলাকার লোকজন যেইটারে ‘ইসলাম’ বইলা ভাবে, ইসলাম’রে এইরকম রিজিড ও রেস্ট্রিক্টেডভাবে এই এলাকার লোকজন নেয় নাই, নিবেও না। আর এইটা কোন ইনফিরিয়রিটি’র (বা সেক্যুলারিজমেরও) ঘটনা না।…

আর এইটা খালি মুসলামনদের ঘটনা না; হিন্দুদেরও বেলাতে কম-বেশি একই জিনিস ঘটছে, ঘটতেছে। নর্থ ইন্ডিয়ান হিন্দু’রা যতোটা ‘আর্য’ বা ‘কুলীন’ আমাদের হিন্দুরা তো তার চাইতে অনেকবশি ‘লো-কাস্ট’; এই ন্যারেটিভ তো বহুদিন ধইরাই চালু আছে। ইংরেজি শিক্ষা আইসা তাদেরকে জাতে তুলে নাই, অই ব্রাহ্মণবাদরে ইনভ্যালিড কইরা তোলে নাই। এই এলাকার হিন্দুরাও দিল্লী’র হিন্দুদের কাছে এনাফ হিন্দু না। এইরকমের একটা পারসপেক্টিভ আছে, যেইটা নিয়া কথা কম হয়, কিন্তু তাই বইলা নাই, তা না।

তো, এই হেইট্রেট বাংলাদেশে একটা মুসলমান-হিন্দু ঐক্যের দিকে নিয়া যাবে – এইটা আমার কথা না। আমার কথা হইতেছে, এই আইডেন্টি’র জায়গা থিকা এক্ট করতে গেলে, পলিটিক্যালি এফেক্টিভ হওয়া যাবে না। কারণ, এইটা রেসিয়াল ইনফিরিওরিটি’র কোন ঘটনা না, বরং অনেক বেশি ফ্রিডম ও জাস্টিসের ঘটনা।…

 


মার্চ ২৫, ২০২১

বাংলাদেশে যে কোন মুভমেন্ট/আন্দোলন/লড়াই যতক্ষণ না পর্যন্ত মিডিয়া-রিয়ালিটির বাইরে যাইতে পারতেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেইটা এফেক্টিভ হইতে পারবে না।

২.
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভাষণগুলা শুনতেছিলাম কয়দিন আগে, অইখানে দেখবেন মনে হবে উনি যেন সুরে সুরে ওয়াজ করতেছেন খ্রিস্টান পাদ্রিদের মতো; উনার কথা হইতেছে, আমরা কালা’রা তো খ্রিষ্টান, যিশু’রে বিশ্বাস করি আর খ্রিষ্টধর্মে তো সব মানুশ সমান, আম্রিকার সংবিধানেও, তাইলে আমাদের সমান রাইটস দেয়া হবে না কেন! মানে, খ্রিষ্টধর্মের জায়গা থিকাও উনি দাবিটা জানাইতেছেন।

তারপরে, ইউক্রেনের ২০১৩/১৪ সালের মুভমেন্ট নিয়া একটা ডকুমেন্টারি দেখলাম, অইখানে মুভমেন্টের লোকজন গির্জাতে গিয়া শেল্টার নিতেছে, পাদ্রিরা আইসা তাদেরকে প্রটেক্ট করতেছে, বাইবেল পড়তেছে।…

মানে, যারা যেই ধর্মের লোক, সেই ধর্মবিশ্বাসের জায়গা থিকাই জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতেছেন। যার যার ধর্মবিশ্বাস (বা নাস্তিকতাও) এইখানে প্রব্লেম না, বরং অই বিশ্বাসের জায়গাতে দাঁড়ায়া জুলুমের এগেনেস্টে ফাইট করাটা জরুরি একটা ব্যাপার।…

 


মার্চ ২৬, ২০২১

ব্যাপারটা এইরকম না যে, কোন একটা ফ্রিডম এচিভ করা লাগবে আমাদের; এইটা বরং একটা ট্রাপ, একটা গোলামির ঘটনা। আমাদের সাহস থাকা দরকার সবসময় নিজেদের ফ্রিডমরে রি-ডিফাইন করতে পারার।

২.
স্বাধীনতা তুমি শামসুর রাহমানের ফ্লাওয়ারি কথা-বার্তা #স্বাধীনতা তুমি

৩.
পাবলিকের টাকায় কেনা গুলি দিয়া পাবলিকের টাকায় বেতন নেয়া পুলিশ পাবলিক’রে গুলি কইরা ‘স্বাধীনতা’র ৫০ বছর উপযাপন করতেছে! আজকে ২৬শে মার্চ, ২০২১ সাল।

৪.
অনেকে আছেন, বলেন যে, ইন্ডিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় হেল্প করছে, ইন্ডিয়ার ঋণ শোধ করতে হবে, ইন্ডিয়া-বিরোধী হওয়া যাবে না; তো, ইন্ডিয়ার কাছে বাংলাদেশের যদি কোন ঋণ থাকে সেইটা কড়ায়-গন্ডায়, সুদে-আসলে খালি শোধ-ই করা হয় নাই, দিনে দিনে নতুন ঋণ জমা হইতেছে আমাদের; ফেলানির লাশের, আবরারের রক্তের, হাজার হাজার বর্ডার কিলিংয়ের।…

আর মনে রাখবেন, স্বাধীনতার ঋণ কোনদিন গোলামি দিয়া শোধ করা যায় না।

বাংলাদেশের এই সরকার ফ্যাসিস্ট সরকার না, ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা ন্যাশনালিজম থাকে, দেশ থাকে। এই সরকার হইতেছে দিল্লী’র গোলাম। এই গোলামি থিকা আমাদের আযাদি, স্বাধীনতা ও ফ্রিডম দরকার। সবার আগে, সবকিছুর আগে।

৫.
একটু আগে, ইন্ডিয়ার গোলাম, জনগণরে ভোট না দিতে দেয়া, নয়া বাকশাল সরকার ফেসবুক ব্লক করে দিছে বাংলাদেশে। মনে রাখবেন, এইটা আমাদের স্বাধীনতা!

হাটহাজারি’তে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া
ওহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, মেরাজুল ইসলাম আর নাসরুল্লাহ আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর।

বাংলাদেশের পুলিশ আজকে হানাদার, নিজের দেশের মানুশদেরকে মারতেছে, খুন করতেছে; ছাত্রলীগ আজকে রাজাকার; আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরের দিনে আমরা নতুন কইরা স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করলাম।

৬.
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের দিনে

ইন্ডিয়ার দালাল, জনগণরে ভোট না দিতে দেয়া সরকারের পুলিশ হাটহাজারি’তে ওহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, মেরাজুল ইসলাম আর নাসরুল্লাহ’রে খুন করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া’তে গুলি চালাইছে। যাত্রাবাড়িতে গুলি চালাইতেছে। নিজের দেশের মানুশরে খুন কইরা “স্বাধীনতার” ৫০ বছরের এই দিনটা সেলিব্রেট করতেছে আজকে, এই নয়া বাকশালি, নন-ইলেক্টেড, জালিম সরকার।

নিজের দেশের মানুশের ইচ্ছারে আমলে না নিয়া, নিজের দেশের মানুশরে দূরে রাইখা, নিজের দেশের মানুশরে খুন কইরা আজ পর্যন্ত কোন দেশে কোন সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই।

অনেক মানুশ খুন করা হইছে, অনেক মানুশ গুম করা হইছে, অনেক রক্ত ঝরানো হইছে, অনেক কথা চুপ করানো হইছে। কোন শহিদের স্মৃতি মুছে যাবে না, কোন অবিচার চাপা থাকবে না, কোন রক্তের দাগই মুছে যাবে না। যেই কথা আজকে বলতে দেয়া হইতেছে না, হাজার হাজার মানুশের চিৎকার হয়া ফিরা আসবে তারা। জালিমের শাসন যতো দীর্ঘ-ই হোক, যতো ভারী-ই হোক, দেশের মানুশের বুকের উপরে পা দিয়া চিরকাল দাঁড়ায়া থাকতে পারবে না।

মেবি এইবার কিছুই হবে না। কয়দিন পরে ফেসবুকের ব্লক খুইলা দিবে। আরো ১০টা, ১০০ টা মানুশরে গুম করা হবে। আরো ১০০ টা লাশ হবে। আমরা জানতেও পারবো না। এর আগেও তা-ই হইছে।

মেবি এর পরেরবারও হবে না। আরো ১০ বার হবে না। আরো ১০০ বার হবে না। কিন্তু দুনিয়াতে কোন জালিম সরকারই চিরদিন টিকে থাকে নাই। ৫০ বছরে হয় নাই, হয়তো সামনের ৫০ বছরেও বাংলাদেশের মানুশ তাদের স্বাধীনতা পাবে না! কিন্তু মানুশ তার স্বাধীনতার, আযাদির, ফ্রিডমের লড়াই কোনদিনই ছাইড়া দিবে না। মানুশ মারা গেলেও মানুশের স্বাধীনতার লড়াই থাইমা থাকবে না।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে, মানুশের এই হার-না-মানা স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা যেন মনে রাখি আমরা।

ইনকিলাব জিন্দাবাদ!

 


মার্চ ২৭, ২০২১

যারা খুন করে আর যারা খুন হয় – দল হিসাবে তারা আলাদা। খুনীদের দলের লোক হইয়েন না।

২.
হেফাজত যদি রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আজকে উঠে আসতে থাকে, রিলিভেন্ট হয়া উঠে, এর আসল কারণ হইতেছে, আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হইছেন, স্যার আনু মুহাম্মদ!

দেশের মানুশের মুখের কথা আপনারা বলতে পারেন নাই, বুকের ব্যথা আপনারা বুঝেন নাই!

এখন আপনাদের এই ব্যর্থতারে জালিমের ক্ষমতায় থাকার যুক্তি হিসাবে হাজির কইরেন না। তাইলে সেইটা আর ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসাবে থাকবে না, ইট উইল বি অ্যা শেইম।

৩.
দুনিয়াতে কোন আন্দোলন-সংগ্রাম একদিনে শেষ হয় নাই, একবারে সফল হয় নাই। বড় লড়াইয়ে জিতার আগে ছোট ছোট লড়াইয়ের জায়গাগুলাতে জিততে হয়। অনেক পথ পার হয়া, অনেক বাঁক ঘুইরা আসতে হয়।

আমাদেরকে বুঝতে পারতে হবে, মানতে পারতে হবে বাংলাদেশে “সাম্প্রদায়িক” আর “নাস্তিক” হওয়াটা আসল বিভেদের জায়গা না। আসল বিভেদ হইতেছে – যে কোন উপায়ে জুলুমের পক্ষে থাকা আর না-থাকা; খুন-গুম-অত্যাচার’রে সার্পোট করা আর না-করা, জুলুমরে জাস্টিফাই করা আর না-করা; ‘আর কোন অপশন তো নাই’ বইলা তারে টিকায়া রাখা আর তারে মানতে রাজি না-হওয়া।

আজকে বাংলাদেশে অবশ্যই দুইটা দল আছে; তবে এই দুই দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপি না, হেফাজত আর বাম না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আর বিপক্ষের শক্তি না, উন্নয়ন চায় আর হরতাল দেয় – এইরকম না। ক্লিয়ারলি আজকে বাংলাদেশে দুইটা দল আছে, একদল যারা নিজের দেশের মানুশরে খুন করে, খুনরে জাস্টিফাই করে আর আরেকদল মানুশ আছে যারা মরতেছে, মানুশ মারার বিপক্ষে আছে।

আপনার জানের ডর আছে, আপনি রিভোল্ট করতে চান না, কথা বলতে চান না; কিন্তু খুনিরে সার্পোট কইরেন না, খুনের মদদ দিয়েন না।

গত ১২/১৩ বছরে এই নন-ইলেক্টেড সরকার হাজার হাজার মানুশরে গুম-খুন করছে। (একটা জায়গায় দেখলাম একজন বলতেছেন ৪০ হাজার!) আর কতো রক্ত! আর কতো লাশ জমা হইলে, আপনার মনে হবে, এনাফ! আর কতো মানুশ মরলে পরে আমরা বলবো, আর না!

যেই সরকার দেশের স্বাধীনতার দিনে নিজের দেশের মানুশরে খুন করে, তারে (উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কারণে, সাম্প্রদায়িকতার ডরে) সার্পোট কইরেন না। এইটুক করা বা না-করা’র স্বাধীনতা আপনার আছে। আর যদি না থাকে, নিজেরে জিগান, আপনি মানুশ কিনা!

 


মার্চ ২৮, ২০২১

অনেকে আছেন, বলেন যে, ফেসবুকে ‘বিপ্লব’ করা যাবে না! যদি প্রতিবাদ করতে চান, রাস্তায় নামেন! আপনি যখন রাস্তায় নামবেন, তখন অরা হাসবে, বলবে, বলছিলাম না, এরা ২/৪ জন লোক! পিকনিক করতেছে! তারপরে আপনি যদি পুলিশের মাইর খান, তখন বলবে, ‘সংগঠিত’ না হয়া আন্দোলন করতে কেন গেছে! ‘তোমরা তো সাম্প্রদায়িক, নাস্তিক, তোমাদের আন্দোলন হবে না!’ আপনি যদি মারাও যান, এরা আপনার দোষ ধরতে আসবে, বলবে, সময়মতো নিজেরে বাঁচাইতে পারে নাই, বোকা বইলা মরছে! (যেন অরা কোনদিন মরবে না।) যেন পুলিশ গুলি করে নাই! যেন প্রতিবাদ করার রাইটস আপনার নাই!

এরা হইতেছে, অই ধরণের রাজাকার, যারা পাকিস্তানি মিলিটারিদেরকে আগায়া নিয়া আসছিল, মদ-মুর্গি সাপ্লাই দিছিল, এরা হইতেছে অই ধরণের রাজাকার যারা ইন্ডিয়ার দালালদের কাছে আপনার ফেসবুক আইডি দিয়া বুলিং করতে বলে, এরা হইতেছে অই রাজাকার, যারা মনে করে দুনিয়াতে যা আছে, তা-ই চলতে থাকবে, আর যা চলতেছে তা-ই নিয়ম, তা-ই ঠিক! অরা হইতেছে অই রাজাকার, যারা নিজেরা পাদ দিতেও ডরায়, মনে করে পাদ দিলেও পুলিশ আইসা ধইরা নিয়া যাবে, আর পুলিশরে বলবে, ভাই, মাফ কইরা দেন!

মনে রাখবেন, ৭ কোটি বাঙালি অস্ত্র দিয়া যুদ্ধ করে নাই, কিন্তু ৭ কোটি বাঙালি মনে-প্রাণে যুদ্ধ করছে, পাকিস্তানি হানাদার’রে মাইনা নেয় নাই। আজকে বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুশ’রে ডিসিশান নিতে দেন এই ইন্ডিয়ার দালাল, ভোট না দিতে দেয়া, মানুশ খুন করা সরকার’রে ক্ষমতায় রাখবে কি রাখবে না! আজকে স্বাধীন দেশে বাংলাদেশের মানুশের এই অধিকার নাই।

আজকে বাংলাদেশের মানুশের ডিসাইড করার, রায় দেয়ার রাইটস নাই, কে হবে, কি হবে তাদের গর্ভমেন্ট। এই কথা বলতে গেলে, গুম হইতে হয়, খুন হইতে হয়। আর রাজাকারের বাচ্চা’রা বলে যে, “ফেসবুকে বিপ্লব হবে না!”

হে ‘ফেসবুকে বিপ্লব হবে না’ ভাই, বইন ও বন্ধুরা, আপনার কথা বলতে ডরান – ঠিকাছে! কিন্তু সাহস কইরা একটা পাদ দেন! দেখেন, পুলিশ ধরতে আসে কিনা! ২০ কোটি মানুশরে জেলে রাখতে পারবে না। ১ লাখ মানুশরেও পারবে না। আপনার কথা-না-বলতে-পারা’র জেলখানার ভিতরে আপনি আছেন। সবাই থাকবে না!

শুরুতে, হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুশ অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে না, হাজার হাজার লাখ লাখ মানুশ জালিমের ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস করবে না, দুনিয়াতে সব সময় অল্পকিছু মানুশ-ই সব মানুশের জন্য ফাইট’টা শুরু করে তাদের চিন্তা দিয়া, তাদের কাজ দিয়া, তাদের দরদ/প্যাশন দিয়া, তাদের ভালোবাসা দিয়া, তাদের জান দিয়া।

মানুশের কাছে মানুশের ক্ষমতা ফিরায়া দিতে হবে। এইটা সহজ কাজ না। একদিনের কাজ না। এইটা মানার জন্য নিজেরে রাজি করান আগে।

তখন বুঝতে পারবেন, এইটা বিপ্লব না! এইটা বেসিক হিউম্যান রাইটস! মানুশ হিসাবে আমার, আপনার, আমাদের ন্যায্য পাওনা। নদীর পানির মতো, শ্বাস নেয়ার বাতাসের মতো, সূর্যের আলোর মতো এই রাইটস, এইটা কাইড়া নেয়া যায় না।

এইটা নিয়া কথা বলা বিপ্লব না। এইটা নিয়া কথা বইলা নিজের কাছে (একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল হিসাবে), সমাজের কাছে (একজন সমাজের লোক হিসাবে), একটা হিউম্যান এগজিসটেন্সের কাছে (মানবজাতির একজন হিসাবে) নিজের দায় মেটান আপনি।

আপনার কথা অন্য কেউ বইলা দিবে না। আপনার কথা আপনারেই বলতে হবে। ফেসবুকে কথা-বলা’টা যদি ‘বিপ্লব’ হয়া থাকে, তাইলে সেইটা নিয়া টিটকারি মারার আগে একটু চিন্তা কইরা দেইখেন, কি ঘোর অমানিশার ভিতরে, কি ঘোর অন্ধকারের ভিতরে আমরা আছি!

২.
আরো ১০টা লাশ পড়লেই গর্ভমেন্ট ফল করবে, বা এইবারের মতন টিইকা যাবে – এইটা পয়েন্ট না, বরং ভাবেন, ২/৪টা লাশ না পড়লে কেন আপনার-আমার হুঁশ হয় না? মনেই হয় না যে, অন্যায় কিছু ঘটতেছে?

কারণ, অনেক ছোট ছোট অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার জমা হইতে হইতে আজকের এই অবস্থা তৈরি হইছে। শত শত হাজার হাজার মানুশ খুন করার পরে একটা গর্ভমেন্ট ভাবতে পারে দুই-চাইরটা মানুশ খুন করা যাইতেই পারে! আর আমাদের মনে হইতে পারে, মানুশগুলা কেন মরতে গেলো, খামাখা!

অথচ আমাদের দরকার হইতেছে, শুকরিয়া আদায় করা, যে আমাদের সমাজে এখনো এইরকম মানুশ আছেন যারা মনে করেন, অন্যায়-অত্যাচার-জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাইতে পারে, মইরা যাওয়া যাইতে পারে, ‘খামাখা’!

এই বেকুবি অনেক দামি জিনিস! এই বেকুবি যদ্দিন আছে, ততদিন আমাদের আশা আছে। আমাদের আশা থাকবে।

এই মানুশগুলা যে মারা গেলো, উনারা নিজের জন্য মরেন নাই, কারো স্বার্থ-রক্ষার জন্য, কাউরে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মরেন নাই; উনারা আপনার-আমার মতো স্মার্ট না এবং ‘বেকুব’ বইলা মরেন নাই! উনারা ভাবছেন, অন্যায়-অত্যাচার-গুম-খুনের প্রতিবাদ করার অধিকার আমার আছে। আর এর জন্য আমারে খুন করা যায় না।

আপনি হেফাজতের সরকার চান না, নাস্তিকদের সরকার চান না, বিএনপি’র সরকার চান না; কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলে, কথা বলতে গেলে মানুশ খুন করে, এইরকম সরকার’রে চান? তারে জাস্টিফাই করেন, কেমনে?

আপনার এই দালালি’রে আপনার স্মার্টনেস বইলা ভাইবেন না!

৩.
এই আন্দোলন হেফাজতের, ‘ইসলামিস্টদের’, মাদরাসা’র স্টুডেন্টদের বইলা প্রপাগান্ডা চালাইতেছে মিডিয়া। (যেন বামদের ছাত্র-সংগঠনগুলা, ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাফরউল্লাহ’রা মোদি’র বিরোধিতা করেন নাই।) কারণ যাতে ‘নাস্তিক’ হিসাবে, বাম হিসাবে, ভার্সিটির স্টুডেন্ট হিসাবে, বিএনপি হিসাবে আপনি এই জালিম সরকারের বিরোধিতা না করতে পারেন, আর করতে পারতেছেনও না। এখন আপনি যে পারেন না – এইটা হেফাজতের দোষ না, ইসলামিস্টদের দোষ না, মাদরাসার স্টুডেন্টদের দোষ না। (বরং আপনি মিডিয়া-রিয়ালিটির বাইরে যাইতে রাজি না, আপনি এর গোলাম হয়া, কনজিউমার হয়া থাকতে চান।)

আজকে আপনি ‘নাস্তিক’ হয়া, বাম হয়া, বিএনপি হয়া কেন এই সরকারের গুম-খুনের প্রতিবাদ করতে পারেন না? যদি পারতেন, যদি এখনো পারেন তাইলে ‘হেফাজতের আন্দোলন’ বইলা ডরাইতেন না, ডরাইবেন না।

আপনি এই কারণে ডরান না যে, এই গর্ভমেন্ট গেলে একটা ‘সাম্প্রদায়িক সরকার’ ক্ষমতায় আসবে; আপনি এই কারণে ডরান না যে, আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসবে; আবার মিলিটারি’র নামে কেয়ারটেকার সরকার আসবে। বরং আপনি বিশ্বাসই করতে পারেন না, মানতে পারেন না কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ – সেইটা ডিসাইড করার হক, ডিসাইড করার ক্ষমতা দেশের মানুশের আছে!

যদি দেশের মানুশের এই অধিকারে আপনার বিশ্বাস থাকে, হেফাজত, নাস্তিক, বাম, বিএনপি, জামাত নিয়া ডরানোর কথা না। যারা মানুশরে কথা বলতে দেয় না, কথা বলতে গেলে, প্রতিবাদ করতে গেলে গুম করে, খুন করে তাদেরকে জিগানোর কথা, কোন অধিকারে তারা স্বাধীন দেশে মানুশরে মিছিল-মিটিং করতে দেয় না! কোন অধিকারে স্বাধীন দেশের মানুশরে খুন করে তারা!

আপনার কাছে যা ভালো, আপনার কাছে যা মন্দ, তার কথা আপনি বলেন, জনতার দরবারে আপিল করেন! কিন্তু লেট দ্য পিপল ডিসাইড!

জনগণের বিচার ১৯৭১-এ ভুল হয় নাই! জনগণের বিচার ১৯৯০-এ ভুল হয় নাই! জনগণের বিচার কোনদিন ভুল হয় না! যদি ভুল হয়ও, সেই ভুল ঠিক করার ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরায়া দেন!

একজন ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে, একজন এক্টিভিস্ট হিসাবে, একজন টিচার হিসাবে, একজন স্টুডেন্ট হিসাবে, একজন কমিউনিস্ট হিসাবে, একজন মাওলানা হিসাবে, একজন মুসলমান হিসাবে, একজন হিন্দু হিসাবে, একজন নাস্তিক হিসাবে, একজন মানুশ হিসাবে আপনার পয়লা কাজ হইতেছে মানুশের কথা বলার, প্রতিবাদ করার, ভোট দেয়ার অধিকার মানুশকে দেয়া।

যদি সমাজে-রাষ্ট্রে মানুশের এই হক না থাকে, যদি এই অধিকারের পক্ষে দাঁড়াইতে আপনার অস্বস্তি হয়, দোনোমোনা লাগে, বুঝবেন সেইটা মানুশের দোষ না, জনগণের দোষ না, আপনার আইডিওলজির, আপনার আইডেন্টিটির সমস্যা সেইটা।

আপনার আইডিওলজি, আইডেন্টিটি’রে প্রশ্ন করেন কেন দেয় না? জুলুমের এগেনেস্টে কথা বলতে গেলে আজকে যদি আপনারে ‘হেফাজত’ হয়া যাইতে হয়, মনে রাখবেন, তার কারণ হইতেছে, অন্য কোন আইডিওলজি, অন্য কোন আইডেন্টিটি এই কাজটা করতে পারতেছে না। আপনার আইডিওলজিরে, আপনার আইডেন্টিটিরে মানুশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে নিয়া আসেন! যদি পারেন, তাইলে মানুশের হকের, অধিকারের, দাবির পক্ষে দাঁড়াইতে ডরাইবেন না। আপনারে ‘হেফাজত’ বানাইলো না ‘নাস্তিক’ বানাইলো সেই মিডিয়া-রিয়ালিটি নিয়া মাতামাতি’র টাইমও পাইবেন না।

৪.

গান ২৫

আমরা কথা বলি, কারণ
আমরা এখনো মরে যাই নাই

আমরা কথা বলি, কারণ
আমাদের আত্মা আমরা ভয়ের কাছে বেইচা দেই নাই

আমাদের কথা জালিমের কথার সাথে
সুর মিলায় না, আমাদের কথা
আমাদের বাঁচায়া রাখবে – এই আশা’তে
আমরা কথা বলি না; আমরা জানি
মইরা গেলে, আমরা আর কথা
বলতে পারবো না, আর
মরা আইডিয়ার মতো, মরা শব্দগুলার মতো
মরা একটা ভাষার মতোই
আমাদের কথাগুলাও মারা যাবে একদিন

কিন্তু আমাদের আত্মা জানে
যা কিছু সত্যি, আমাদেরকে তা বলে যাইতে হবে

আর যদি তা সত্যি হয়,
গান গাইতে থাকবে আমাদের কথাগুলিরে, বাতাসরে বলবে

শোনো! এই কথাগুলি হইতেছে গান, আমাদের…

৫.
বাংলা-মিডিয়ামের ‘মাদরাসা-ট্যাবু’ হইতেছে কলোনিয়াল লিগাসির একটা ঘটনা

মিডল-ক্লাস ফ্যামিলিতে বড় হইছেন কিন্তু ‘বস্তি লোকদের মতো কথা বলতেছে’ টাইপ কথা শুনেন নাই – ব্যাপারটা রেয়ার হওয়ার কথা। মানে, একটু গলা উঁচা কইরা কথা কইতেছেন, বা একটা গাইল দিতেছেন মানে হইতেছে ‘বস্তির লোকদের মতো’ কথা বলতেছেন মিডল-ক্লাস ফ্যামিলি’তে থাইকা এইরকমভাবে কথা তো আপনি বলতে পারেন না!

তো, বাংলাদেশের এই মিডল-ক্লাস যতোটা না একটা ইকনোমিক পজিশন না, তার চাইতে বরং একটা কালচারাল আইডেন্টিটি। এই ক্লাস’টা এমার্জ করছে ১৯৪০ থিকা ১৯৭০ এই সময়ের মধ্যে, মেইনলি ঢাকা শহরে, তবে কলকাতারে সেন্টার মাইনা, আইকন মাইনা। (এইটা বেটার বুঝা যাবে মুহাম্মদ শহীদুল্লা’রা যখন ১৯৬৪/৬৫ সালে বাংলা একাডেমি থিকা ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ বাইর করেন, বাংলা ডিকশনারি না বানায়া; কারণ কলকাতাতে তো আছেই একটা!)

১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী কলকাতা থিকা দিল্লীতে ট্রান্সফার হওয়ার ভিতর দিয়া কলকাতার পলিটিক্যাল গুরুত্ব শেষ হয়। ঢাকা, যা মোগল আমলের একটা সেন্টার – এই অঞ্চলের, কলোনিয়াল আমলে কলকাতার একটা রিজিওনাল প্রটো-টাইপ হয়া-ই ছিল। তো, ঢাকার যেই মিডল-ক্লাস কালচার সেইটা তৈরি হইছে কলোনিয়াল কলকাতার ছাঁচ দিয়াই। যার ফলে ১৯৪৭’র সময় এবং তার পরেও রাষ্ট্র হিসাবে আলাদা হইলেও ‘ভালো বাংলা’ ‘শুদ্ধ বাংলা’ বলতে কলকাতারেই বুইঝা আসতেছি আমরা। (শেইম!)

কলকাতার লোকজন খারাপ বা অইখানের শিল্প-সাহিত্যের লোকজন হিন্দু – এইগুলা কোন ইস্যু না, বরং খেয়াল করার ঘটনা হইতেছে এসথেটিক্যালি কোন জিনিসগুলারে উনারা হাইলাইট করেন। হিন্দুধর্মের লোক হিসাবে উনারা উনাদের কালচারের জিনিসপত্র পূজা করা, ধূতি পরা, সিঁদুর দেয়া – এইসব জিনিসরেই হাইলাইট করবেন, কারণ উনাদের ডেইলি লাইফে এইগুলা আছে। কিন্তু দেখবেন বাংলাদেশের ‘শিক্ষিত মিডল-ক্লাসের’ কাছে নামাজ পড়ার চাইতে পূজা করা’রে সফিটটিকেটেড ও সেক্যুলার জিনিস বইলা মনেহয়, লুঙ্গির চাইতে ধূতি’রে এলিট লাগে এবং অবভিয়াসলি শাখা-সিদুঁর গোলামির সাইন না এতোটা যতোটা হিজাব! মানে, ‘খাঁটি মুসলমান’ হওয়ার পরেও হিন্দু কালচারের জিনিসগুলা যে সুপিরিয়র লাগে আপনার কাছে এইগুলা জাস্ট ‘ভাল্লাগার’ ব্যাপার না, বরং এসথেটিক্যাল একটা কন্সট্রাকশন।

আমাদের ন্যায়-নীতির ধারণা এই এসথেটিকসের উপর ভর দিয়াই তৈরি হয়। যেমন ধরেন, যেইটারে আমরা বলি ধর্মের আচার, রিচুয়াল সেই জিনিসগুলা ধর্ম থিকা আলাদা কোন জিনিস না, বরং ধর্মরে অই জায়গাগুলা দিয়াই পারসিভ করি আমরা। তো, এইরকম না যে, ধর্ম হইতেছে এথিকস আর ধর্মের রিচুয়ালস হইতেছে এসথেটিক্স। একটা কালচারে জিনিসগুলা বরং উল্টা; আপনার এসথেটিক্স, ভালোলাগা/খারাপলাগা সরাসরি না হইলেও একভাবে তৈরি কইরা দেয় নৈতিকভাবে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, সেই বিচারের জায়গা। (মাদরাসার লোকজন আন্দোলন করতেছে, তাইলে তো ঠিক না! ঢাকা ভার্সিটি’তে করতেছে, ও তাইলে ঠিকাছে! এইরকম।) এই কারণে যে কোন কালচারে এসথেটিক্সটা কোর। আর ধর্মও রিচুয়ালগুলারে চেইঞ্জ করতে পারে, কিন্তু এইরকম প্রাকটিসের ভিতর দিয়াই, এসথেটিক্যাল জায়গার ভিতর দিয়াই অনেকদিন ধইরা সারভাইব কইরা আসতেছে। (এই আলাপ’টা এইখানেই পজ দিলাম।)

তো, কলকাতার এই এসথেটিকস বাংলাদেশে আসছে এবং এস্টাবলিশড হইছে বাংলা-মিডিয়ামের ‘শিক্ষা’র ভিতর দিয়া। আমাদের রাষ্ট্র, মিডিয়া এখন বাংলা-মিডিয়ামে পড়াশোনা করা এই মিডল-ক্লাসের দখলে। উনাদের কালচাররেই কনজিউম করি আমরা। এই বয়সের লোকজন যখন স্কুলে গেছেন, পড়াশোনা করছেন তখনো দেশে ইংলিশ-মিডিয়া আসে নাই, এতোটা ছড়ায়া পড়ে নাই, গত ১০/১২ বছরে যা হইছে। কিন্তু তখনো মাদরাসা ছিল। কেমন ছিল মাদরাসাগুলা?

আমার ধারণা, মিডল-ক্লাসের পারসেপশনে, মাদরাসা হইতেছে এতিম ও গরিবদের ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অ-বৈজ্ঞানিক’ শিক্ষার জায়গা। যারা ‘জানে না’, যারা ‘বুঝে না’, এবং ‘প্রকৃতপক্ষে’ ‘মানুশ’ হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ তারা ‘বাংলা-মিডিয়ামে’ পড়ে নাই। (খুবই আজব ব্যাপার খেয়াল করবেন, মিশনারি স্কুলগুলা কিন্তু ‘খুবই ভালো’! অইখানে ধর্মীয়-শিক্ষা কোন সমস্যা না।) অনেক ‘বাংলা মিডিয়ামের’ এইরকম ধারণাও আছে যে, ব্রিটিশ’রা আসার আগে, আগের দিনের ঘটনা হইতেছে এই মাদরাসা; স্কুল হইতেছে ‘আধুনিক ঘটনা’; অথচ হিস্ট্রিক্যালি এই দুইটা খুবই কাছাকাছি ঘটনাই হওয়ার কথা।… মানে, বাংলা-মিডিয়াম যেহেতু ডমিনেন্ট ধারা বাংলাদেশে, এই ন্যারেটিভগুলাই সমাজে চালু আছে সবসময়।

তো, ঘটনা’টারে ঠিক ‘একমুখী শিক্ষা-ব্যবস্থার’ জায়গা থিকা দেখতে গেলে আরো বড় ভুল করবো আমরা। বরং আমার রিকোয়েস্ট হইতেছে, এসথেটিক্যাল কন্সট্রাকশনের জায়গা থিকা দেখার। বাংলা-মিডিয়াম যেই এসথেটিক্যাল জায়গা থিকা অপারেট করে, দুনিয়ারে দেখে, রিয়ালিটি বইলা বুঝে মাদরাসা-শিক্ষার জায়গাতে ঘটনাগুলা একইরকম না। অবভিয়াসলি, দুইটা জায়গাই অনেক চেইঞ্জের ভিতর দিয়া গেছে এবং যাবে। কিন্তু আমার পয়েন্ট হইতেছে, দুইটা আলাদা আলাদা এসথেটিকসের জায়গা। এইটা এক নাম্বার পয়েন্ট।

সেকেন্ড পয়েন্ট হইতেছে, এই ডিফরেন্সের জায়গাগুলারে কেমনে মোকাবিলা করা হয়, সেইটা নিয়া। শুরু’র দিকে যেইটা বলতেছিলাম, কলকাতার এসথেটিকসটারেই কিন্তু নিছে ঢাকার লোকজন, এই কারণে না যে অইটা বেটার; বরং যেইটারে আমরা ‘ভালো’ ‘বেটার’ এবং ‘রুচিশীল’ বইলা ভাবি সেইটা অই কলকাতার এসথেটিক্যাল একটা ঘটনা। কারণ অই লিগাসি’টারে আমরা ধইরা নিছি, রিড করি একটা ‘ইতিহাসের ধারা’ হিসাবে। যেই ট্রাপ’টা থিকা আমরা এখনো বাইর হইতে পারি না।

তো, আমার ডর’টা হইতেছে, এই মাদরাসা-পিপল, যারা ডমিনেন্টেড হইতেছে, কালচারালি অপ্রেসড হইতেছে ‘বাংলা-মিডিয়াম’ দিয়া তাদের এসথেটিক্যাল জায়গায় ‘ভালো’ ‘বেটার’ ও ‘রুচিশীলতার’ এক্সাম্পল হিসাবে এইরকম একটা জায়গারেই নিজেদের মঞ্জিলে মাকসুদ বানায়া নেন কিনা; আর যদি এইরকমই হয়, সেইটা হবে (মেবি হইতেছেও ) খুবই সুইসাইডাল একটা ঘটনা।

মানে, ঘটনা’টা এইটা না যে, কলকাতার এসথেটিক্স খারাপ, কিন্তু সেইটা ঢাকার এসথেটিক্স কেমনে হয়? হইতেছে, কারণ কলোনিয়াল লিগাসির জায়গা থিকা আমরা বাইর হইতে পারতেছি না। এই কলোনিয়াল লিগাসির জায়গা থিকাই বাংলা-মিডিয়াম মনে করে মাদরাসা একটা ‘পশ্চাতপদতার’ (কলোনিয়াল বাংলা!) জায়গা।

এখন ঢাকার যেমন কলকাতার কাছে খারাপ-ভালো প্রমাণ করার, সার্টিফিকেট নেয়ার কিছু নাই, বরং বলতে পারা দরকার তোমাদের ভালো আর আমাদের ভালো একই জিনিস না, একইভাবে মাদরাসারও বাংলা-মিডিয়ামের কছে প্রমাণ করার কিছু নাই, বরং সমাজের ভিন্ন ভিন্ন এসথেটিক্যাল জায়গাগুলা যেন তাদের ডিফরেন্সগুলাসহই টিইকা থাকতে পারে, সেই জায়গাগুলারে স্পষ্ট করা দরকার।

আর এইটা তখনই সম্ভব, যখন সমাজে ‘সব মানুশ এক’ এই ধারণার বিপরীতে ‘সব মানুশই যার যার মতো আলাদা’ – এই বিশ্বাসের জায়গাতে পৌঁছাইতে পারবো আমরা; নতুন একটা এসথেটিক্যাল কন্সট্রাকশনের দিকে যাইতে পারা’র মতো কঠিন কাজটারে কাজ বইলা ভাবতে পারবো আমরা।…

[একটু অগোছালোই হইলো পুরা আলাপ’টা। কিন্তু আমি যা বলতে চাইতেছি, তার কিছুটা হইলেও বলতে পারা গেছে মনেহয়। পরে আরো ডিটেইলে ট্রাই করবো, আবার। আপাতত, ফার্স্ট ড্রাফট হিসাবে থাকলো।]

 


মার্চ ২৯, ২০২১

নুর হোসেন’রে এরশাদ সরকারের পুলিশ গুলি কইরা মারছিল ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর। এরপরে আরো ৩ বছর লাগছিল। বাংলাদেশের মানুশ এরশাদরে ক্ষমতা থিকা নামাইছিল ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ১৯৯৬ সালে পার্লামেন্টে দাঁড়ায়া নুর হোসনের জন্য এরশাদ’রে মাফ চাইতে হইছিল। (সবাই এরশাদের মতো লাকি হয় না।) এরশাদ মারা গেছেন। জাতীয় পার্টি কাগজ-কলমে থাকা একটা দল, দুই দিন পরে মারা যাবে। (মাত্র ৩০/৪০ বছর আগের কথা এইগুলি।)

১৮৭১ সালের প্যারিস কমিউনের সরকার ছিল মাত্র ৭৩ দিনের। এরপরে ৩০ হাজার লোকরে খুন করা হইছিল। Liberté, égalité, fraternité এখনো মরে নাই। দেড়শ বছর পরেও দুনিয়ার মানুশ অই স্বপ্নের কথা ভুলে নাই।

সরকার পতন দিয়া সবসময় আন্দোলনের সফলতা হয় না। লাশের পরে লাশ ফেলে দিয়াও কোন যৌক্তিক আন্দোলনরে মুছে দেয়া যায় না।

একটা মুভমেন্ট মাদরাসার স্টুডেন্ট’রা করলো নাকি ভার্সিটির ছাত্র’রা – সেইটা দিয়া আন্দোলনের সিগনিফিকেন্স মাপা যাবে না, সাম্প্রদায়িক’রা করলো নাকি নাস্তিক’রা – সেইটাও কোন পয়েন্ট হইতে পারে না, বরং কোন অধিকার তারা আদায় করতে চায়, সেইটা দিয়া তারে বিচার করতে হবে।

একটা স্বাধীন দেশে মানুশরে মিছিল-মিটিং করতে দিতে হবে, কথা বলতে দিতে হবে, ভোট দিতে পারার অধিকার ফিরায়া দিতে হবে।

এই কথা বললে গুম কইরা দেয়া যায় না। পুলিশ দিয়া গুলি করানো যায় না। গুন্ডা দিয়া পিটানো যায় না। দুনিয়ার কোন যুক্তি দিয়া, আইডিওলজিক্যাল ইমোশন দিয়া, মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা দিয়া মানুশের এই অধিকারের বিরোধিতা করা যায় না। এই কথা মনে রাখবেন।

বাংলাদেশের মানুশ এরশাদ’রে ক্ষমতা থিকা নামাইছিল, সে আরো বেশি রাস্তা-ঘাট-ফ্লাইওভার বানাইতে পারে নাই বইলা না, বাংলাদেশের মানুশ এরশাদ’রে ক্ষমতা থিকা নামাইছিল, সে আরো দুইটা যমুনা ব্রিজ বানাইতে পারে নাই বইল না; বাংলাদেশের মানুশ এরশাদরে ক্ষমতা থিকা নামাইছিল কারণ বাংলাদেশের মানুশের ভোট ছাড়া, দেশের মানুশের অনুমতি ছাড়া, মান্ডেট ছাড়া সে ক্ষমতায় থাকতে চাইছিল। ৯ বছর ছিল। এর বেশি পারে নাই।

উন্নয়নের ধোঁয়াশা দিয়া, মিডিয়ার আফিম খাওয়াইয়া, সাম্প্রদায়িকতার জুজু দেখায়া মানুশরে ডর দেখানো যাবে, আরো কয়টা দিন ক্ষমতায় থাকা যাবে; কিন্তু স্বাধীনতার জন্য, আযাদির জন্য, ফ্রিডমের জন্য মানুশের লড়াই কোনদিন থাইমা থাকবে না।

মানুশ হিসাবে মানুশের এই লড়াই সবসময় জারি ছিল, থাকবে। মানুশের অধিকারে, মানুশের হকে, মানুশের ক্ষমতার উপরে এই বিশ্বাস যেন আমরা হারায়া না ফেলি।

২.
মনে রাখবেন, যারা বলে, এইগুলা তো হয়-ই, এইগুলা তো নরমাল, কোন দেশে পুলিশ ঘুষ খায় না, মানুশ মারে না! কোন দেশের সরকারি কমর্চারি’রা দুর্নীতি করে না! মানুশ মিছা কথা কয় না, দুই নাম্বারি করে না! সবকিছুই চলে, চইলা আসতেছে, এই সবকিছুই নরমাল – অরা হইতেছে আসল টেররিস্ট!

অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার’রে ‘নরমাল’ কইরা তোলাটা হইতেছে আল্টিমেট টেররের কাজ! আমাদের দেশের বিটিভিগুলা ‘বাতাবি লেবু’ দিয়া করে যেইরকম।

 


মার্চ ৩০, ২০২১

The Act of Killing (২০১২) নামে একটা ডকুমেন্টারি একটা আছে, ইন্দোনেশিয়ার মিলিটারি সরকার ১৯৬৫/৬৬ সালে ৫ লাখ কমিউনিস্টরে খুন করছিল, সেইটা নিয়া একটা কাহিনি। ডকুমেন্টারি যা হয়, খুবই স্লো। কিন্তু আমার দেখা সবচে সুন্দর একটা ডকুমেন্টারি এইটা।…

অইখানে দেখায় যে, পত্রিকা অফিসের দোতলায় ভিক্টিমদেরকে ধইরা নিয়া আসতো, টর্চারগুলা, খুন করা’র কাজগুলা করতো সরকারি গুন্ডারা। তো, অই পত্রিকা অফিসের একজন সাংবাদিক, উনি এইটা কবুল-ই করেন না যে উনি এইটা জানতেন! কারণ আমাদের ইগনোরেন্সের ভিতরই আমরা সবচে ভালোভাবে আমাদের অ্যাক্টগুলারে পাচার কইরা দিতে পারি যে, আরে ভাই, আমি ত জানতামই না এইটা খারাপ কাজ, জানলে কি আর আমি এইটা করি নাকি!

তো, যারা মনে করেন, আমাদের মিডিয়াগুলা সরকারের কাছে, ডিফিএফআইএ’র কাছে জিম্মি, নিজেদের জানের ডরে, চাকরির ডরে কিছু বলেন না, এইটা পুরাপুরি সত্যি না। বরং মিডিয়া এই গুম-খুন-নির্যাতনের একটা কোর অংশীদার; এরা খালি ইনফরমেশন ‘গোপন’-ই করে না, ইনফরমেশন সাপ্লাই দেয়ার কাজটাও করে।

এখনো ১৯৭১’র কথা বলতে গেলে, রেফারেন্স দিতে গেলে অনেকে পত্রিকার কোটেশন দেন বা খোঁজ করেন; অই সময়ে বাংলাদেশে ছাপা-হওয়া পত্রিকা, রেডিও’র খবর, টিভি’র খবরগুলা কম্পাইল কইরা দেখেন, কি পাইবেন অইখানে! পাইবেন ‘নাশকতার’ খবর, মুক্তিযুদ্ধের খবর পাইবেন না। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের পত্রিকা-টিভি-নিউজপোর্টালেও বাংলাদেশের খবর পাইবেন না। রেফারেন্স হিসাবে এই জায়গাগুলা ইনভ্যালিড হয়া গেছে। আর এইটা যতোটা না ভয়-ভীতির ঘটনা, তার চাইতে অনেকবেশি ইন্সটিটিউশন হিসাবে দেউলিয়া ও বিক্রি হয়া যাওয়ার ঘটনা।

মনে রাখবেন, কোন রাজনৈতিক দল, পত্রিকা, মিডিয়া যত পাওয়ারফুল-ই হোক যদি তা পিপলের এগেনেস্টে দাঁড়ায়, পিপলরে বিরুদ্ধে কাজ করে সেইটা টিইকা থাকতে পারে না, কোনদিন পারে নাই, পারবেও না। বাংলাদেশের মিডিয়া তখনই সারভাইব করতে পারবে, এফেক্টিভ হইতে পারবে, নিজেদেরকে বাঁচায়া রাখতে পারবে যখন তারা সরকারের মাউথপিস না হয়া, কোন আইডিওলজি’র কাছে নিজেদের জবান বন্ধক না রাইখা পিপলের কথা বলতে পারবে। এইখানে আর কোন শর্টকাট রাস্তা আসলে নাই।

২.
খেয়াল কইরা দেখবেন জাতি হিসাবে, নিজেদের অপরাধগুলা, ক্রাইমগুলা না-বলার এবং গোপন করার একটা ব্যাপার থাকে, অই ওপেন-সিক্রেট ‘গোপন’টা যেইটা সবাই জানে, কিন্তু ‘গোপন’ রাখে, বলে না; যেকোন জাতীয়তাবাদের এইটা একটা কোর জিনিস।

পাকিস্তানি হিসাবে আপনি যদি ১৯৭১ সালে লাখ লাখ বাঙালি খুন করার কথা বলতে থাকেন, আপনি কিন্তু এতোটা ‘পাকিস্তানি’ থাকতে পারবেন না। তুর্কি’রা ১৫ লাখ আর্মেনিয়দের খুন করছিল, এই কথা তুরস্কে পাবলিকলি কেউ বলে না, ওরহান পামুক বলছিলেন বইলা তার নামে মামলা হইছিল। বাংলাদেশেও হিল-ট্রাকসে, পাহাড়ে খুন-অত্যাচার-জমিদখলের কথা কইলে ‘বাঙালি’ হিসাবে এতোটা প্রাউড কিন্তু ফিল করতে পারবেন না আর আপনি। এইগুলা আপনি জানেন, কিন্তু না-বলাটা একটা নিয়ম।

খালি জাতীয়তাবাদের ঘটনাও না, আইডিওলজির জায়গাতেও এইরকম ঘটে।

স্ট্যালিনের গুলাখ বা শ্রম-শিবিরের কথা যে বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা জানে না – তা কিন্তু না, কিন্তু বলাবলির মধ্যে পাইবেন না। কারণ বললে, এতোটা ‘কমিউনিস্ট’ থাকতে পারবেন না আর আপনি। একইভাবে, গত ১০ বছরে কতো শত শত লোকরে (আমি শুনছি ৪০ হাজার, কেউ নাম্বারটা জানলে বইলেন) খুন করছে এই নন-ইলেক্টেড গর্ভমেন্ট সেইটা বলতে পারবেন না আপনি। বললে, জামাত-শিবির হয়া যাবেন, বললে বিএনপি হয়া যাবেন। এখন মাদরাসা’র স্টুডেন্টদের কেন খুন করলো সেইটা আপনি কইতে পারবেন না, কইলে আর ‘প্রগতিশীল’ থাকতে পারবেন না, ‘সাম্প্রদায়িক’ হয়া যাবেন।

এইগুলা জাতীয়তাবাদের ক্রাইম, আইডিওলজির ক্রাইম।

জাতি’র বিপক্ষে চইলা যাওয়ার ডরে, আইডিওলজির বিপক্ষে চইলা যাওয়ার ডরে আপনারে চুপ কইরা থাকতে হয়। তো, এইরকম ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’, ‘কমিউনিস্ট আইডিওলজির’, ‘প্রগতিশীলতার’ গোলাম হয়া কেন থাকতে হয় আপনারে? এরা আপনারে ভাত খাওয়ায় না, রুটি-রুজির ব্যবস্থা কইরা দেয় না, নিজের চিন্তা নিজেরেই করা লাগে আপনার। কিন্তু আপনি ভাবেন এরা আপনার ‘সমাজ’! এর বিপক্ষে যাওয়া যাবে না! গেলে, ‘একঘরে’ কইরা ফেলবে আপনারে!

কিন্তু মনে রাখবেন, এই ‘সমাজের’ বাইরে পা না ফেলতে পারলে ‘নতুন সমাজ’ আপনি তৈরি করতে পারবেন না। মানুশ হিসাবে একটা ডরের ভিতরে নিজেরে আটকায়া রাইখেন না!

এই সময়ে এটলিস্ট এইটুক করতে পারি আমরা। এর জন্য কেউ আমাদেরকে মাইরা ফেলবে না। নিজের চিন্তা করার স্বাধীনতা’টা একটা আইডেন্টিটির কাছে, একটা আইডিওলজির কাছে বন্ধক রাইখেন না, বেইচা দিয়েন না!

কথা না বলতে পারেন, চিন্তা করাটা থামায়া দিয়েন না! যদি চিন্তা করতে রাজি থাকেন, যদি চিন্তা করতে থাকেন, তাইলে কথা বলার একটা রাস্তাও আপনি পায়া যাবেন একদিন। নিজেরে আটকায়া ফেইলেন না!

 


এপ্রিল ০১, ২০২১

লক-ডাউন দেয়ার মতন সাহস এই গর্ভমেন্টের নাই।

লক-ডাউন দেয়া উচিত ছিল গত মাসের ২০ তারিখে। আজকে যখন করোনা সেকেন্ড টাইম ছড়ায়া পড়ছে, যখন হসপিটালে আইসিও’র বেড খালি নাই, যখন ইন্ডিয়া থিকা আনা টিকা কোন কাজে দিতেছে না, তখনো লক-ডাউন দেয়ার মতন সাহস এই গর্ভমেন্ট করতে পারতেছে না।

এই কারণে না যে, ক্রুশিয়াল ডিসিশান নেয়াটা টাফ, এই কারণে না ইকোনমির কি হবে – এইটা নিয়া খুব চিন্তিত, এই কারণে না যে, পাবলিকরে ফ্রি’তে খাওয়াইতে পরাইতে পারবে না। বরং পাবলিক মরলো কি বাঁচলো – এইটা নিয়া গর্ভমেন্টের কিছু যায় আসে না। ক্ষমতায় থাকতে পারলেই হইলো। এইটা হইতেছে যে কোন ডিসিশান নেয়ার ব্যাপারে আসল চিন্তার বিষয়, ক্রুশিয়াল পয়েন্ট, কন্সিডার করার।

কিছু লোকের করোনা হইলে, কিছু মানুশ মরলে বরং ভালো; ‘রাষ্ট্রিয় শোক পালন’ করা যাবে। করোনার মতো জাতীয় দুর্যোগের সময়েও যারা গর্ভমেন্টের এগেনেস্টে কথা কয়, তাদেরকে ‘জনগণের শত্রু’ বলা যাবে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকার জায়গাটাতে কোন রিস্ক নেয়া যাবে না। বাস-ভাড়া বাড়ায়া দেয়ার নিয়ম করা যাবে, কিন্তু সেইটা কাজ করবে কিনা – সেইটা ভাবা যাবে না। পাঠাও-উবার বন্ধ কইরা দেয়া যাবে, মোটরসাইকেল ধইরা নিয়া নেয়া যাবে, পাবলিক কেমনে কাজকামে যাবে আসবে, সেইটা তো আমার দেখার ব্যাপার না! নিয়ম তো আমি করে দিছি, পাবলিক-ই তো মানে না! এইরকম বিউগল বাজাইতে হবে সারাদিন টিভি-পত্রিকা দিয়া।

এই গর্ভমেন্ট লক-ডাউন দেয় নাই, কারণ পাবলিকের কি হইলো না হইলো – সেইটাতে কিছু যায় আসে না!

পাবলিক হিসাবে ‘যেহেতু কোন বিকল্প নাই’-এর বাইরে গিয়া আপনি যত তাড়াতাড়ি এই জায়গাটা বুঝতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি পাবলিক হিসাবে নিজের ক্ষমতার জায়গাটারে আপনি ক্লেইম করতে পারবেন। মনে রাখবেন, মানুশ হিসাবে আপনার দাবি করার ও দাবি আদায় করার ক্ষমতা অন্য কেউ আপনারে ফিরায়া দিবে না, আপনারে আইসা দিয়া যাবে না।

আনফরচুনেটলি, আমরা এমন একটা সমাজ বানাইছি যেইখানে সত্যি কথা আমরা বলতে পারি না। মনে করি, ক্ষমতাই একমাত্র সত্যি কথা! কিন্তু মনে রাখবেন, সত্যি কথা বলতে পারার ক্ষমতাই হইতেছে আসল ক্ষমতা।

যদি সমাজে সত্যি কথা বলার অভ্যাস আমরা বন্ধ কইরা দেই, কোন দুর্যোগও আমরা ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবো না। আজকে বাংলাদেশে আমরা পারতেছিও না। কিন্তু কোনদিনই পারবো না – এইটা মাইনা নিয়েন না।

মনে রাখবেন, গর্ভমেন্ট আওয়ামী লীগের নাকি বিএনপি’র, ইসলামিস্টদের নাকি কমিউনিস্টদের, তার আগের কথা হইতেছে, গর্ভমেন্ট পাবলিকের কিনা! যদি না হয়, সেই গর্ভমেন্ট কোনদিনও ভালো গর্ভমেন্ট হইতে পারবে না, পাবলিকের খারাপ-ভালো ভাইবা কোন ডিসিশান নিবে না। ‘তবে’ ‘কিন্তু’ ‘তারপরও’ দিয়া এই সত্যি’টারে আপনি বদলাইতে পারবেন না!

২.

তুমি #সেক্যুলার হইতে চাও বইলাই,
আমারে #সাম্প্রদায়িক হইতে হবে কেন?

/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


এপ্রিল ০২, ২০২১

সবচে বড় গোলামি হইতেছে, চিন্তার গোলামি। সবচে বড় গোলামি হইতেছে, রুচি’র গোলামি।

আপনারে সারাক্ষণ চিন্তা করতে পারতে হবে, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হবে – এইটা জরুরি না। এইটা জরুরি না যে, নতুন ফ্যাশন বাইর করতে হবে, পুরানা দিনের গান, পুরানা দিনের সাহিত্য সব বাতিল কইরা দিতে হবে। (এইটা যায়ও না…)

বরং কোন কিছু চিন্তা করতে গেলেই আপনি যদি ভাবেন, এইরকম ভাবা’টা তো ঠিক না! (থ্রি ইডিয়টস সিনেমার ফারহানের মতন, আব্বা নেহি মানে গি!) তাইলে সমস্যা।

মানুশ খালি অভ্যাসের গোলামি করে না। তার চে বেশি করে এইরকম চিন্তার গোলামি। সবাই যেইভাবে চলতেছে, যেইভাবে ভাবতেছে আমারেও সেইটাই করতে হবে – এইটা ‘নরমালিটি’ না, সবসময়।

রাস্তায় মানুশ বামদিক দিয়া হাঁটলে আপনি ডাইনদিক দিয়া হাঁটবেন, সবাই এক কথা কইলে আপনারে আরেক কথা কইতে হবে – এইটা ‘নতুন চিন্তা’ না, এইটা হইতেছে ‘চুতিয়ামি’।

যা কিছুই আপনি করতেছেন, কইরা আসতেছেন, টাইম টু টাইম ভাইবা দেখার সাহস’টা করতে হবে। নিজের চিন্তারে, নিজের ভালো-লাগার, খারাপ-লাগার জায়গাগুলারে বিচার করতে, রিভিউ করতে হবে; নিজেরে জিগাইতে পারতে হবে, হোয়াই? সবাই করতেছে বইলাই?

আজকে মেডিকেল কলেজের ভর্তি-পরীক্ষা নিয়া দেখলাম অনেকে হাসাহাসি করতেছেন, প্যারেন্টদেরকে গালাগালি করতেছেন। কিন্তু এই পরীক্ষা নেয়ার ডিসিশান যে নিছে, সার্কুলার যে দিছে, সেই অথরিটি’রে নিয়া একটা কথা কইতে পারতেছেন না! কেন?

পুলিশ ধইরা নিয়া যাবে, এই কথা কইলে? নাকি পাবলিকরে গাল্লাইতে পারলে, হিউমার করতে পারলে ‘স্মার্ট’ হওয়া যায়, একটু?

যেইখানে ভিক্টিমরে নিয়া হাসাহাসি কইরা, গাইল দিয়া আপনারে ‘স্মার্ট’ হইতে হয়, সেই চিন্তা ও রুচি’র ভেড়া হইয়েন না! এইটা হওয়া বা না-হওয়াটা পুরাপুরিই আপনার হাতে।


এপ্রিল ০৩, ২০২১

জালিমের মোকাবেলায় আমরা সবাই মজলুম।

কিন্তু যারা বলে, আমরাই ‘আসল’ মজুলম;
যারা বলে, আমরাই সব ফাইট করতেছি, যারা বলে,
আমরাই একমাত্র সবাইরে রিপ্রেজেন্ট করার অধিকার রাখি,
যারা বলে, আমাদের ছাড়া হবে না, তোমরা আমাদের দলের লোক না…
মনে রাখবেন, তারাই জালিমের দলের লোক

জালিমের মোকাবেলায় মজলুম আমরা সবাই।
যারা এইটা বুঝতে পারে না, যারা এইটা বুঝতে চায় না
অরা আরেকটা জালিমের দল, জাস্ট ক্ষমতায় আসতে পারতেছে না…

/জালিম ও মজলুম

২.
আলাপের পয়েন্ট হেফাজত না, আলাপের পয়েন্ট হইতেছে পাবলিকরে গুম-খুন করা, ইলিগ্যাল গর্ভমেন্ট। আলাপের পয়েন্ট নাস্তিক না, আলাপের পয়েন্ট হইতেছে যেই মিডিয়া-রিয়ালিটি সবসময় “হেফাজত নাইলে নাস্তিক” “আওয়ামী লীগ নাইলে বিএনপি” “ইসলামিস্ট নাইলে কমিউনিস্ট” – এই বাইনারি বানায়া রাখতে চায়, তারে নিয়া!

দেশে কোন আইন নাই, দেশের মানুশ আইন মানে না – এইটা মিছা কথা। বরং দেশে একটা গর্ভমেন্ট আছে যেইটা আইন না মাইনা, পাবলিকের ভোট না নিয়া দেশের ক্ষমতায় বইসা আছে। গর্ভমেন্ট দেশের মালিক না। গর্ভমেন্ট কোন রাজা-বাদশা না। দেশ হইতেছে দেশের মানুশের। অথচ দেশের মানুশরে না বইলা, না জানায়া একের পর এক চুক্তি হইতেছে, ডিসিশান হইতেছে; কি হইতেছে দেশে – দেশের মানুশ জানে না।

এইগুলা কইলে, আপনি হেফাজত হয়া যান না! এইগুলা কইলে আপনি বিএনপি হয়া যান না! এইগুলা কইলে আপনি জামাত-শিবিরও হন না! বরং এইগুলা না কয়া যদি আপনারে নাস্তিক হইতে হয়, এইগুলা না কয়া যদি আপনারে প্রগতিশীল হইতে হয়, এইগুলা না কয়া যদি আপনারে কমিউনিস্ট হইতে হয়; তাইলে মনে রাখবেন, আপনি নাস্তিক, প্রগতিশীল এবং কমিউনিস্টও হইতে পারেন নাই! আপনার হওয়া বা না-হওয়া আপনার হাতে নাই আর!

মিডিয়া-রিয়ালিটির গোলাম হয়া আছেন। নিজের গোলামির চিন্তা থিকা বাইরে হন আগে।

একমাস আগে না দিতে পারা লক-ডাউন একমাস পরে দিছে; ৭ দিনের ‘লক-ডাউন’ দিছে গর্ভমেন্ট। গতবছরও দিছিলো। কিন্তু মানুশের লাইগা কি করছিলো? এই ৭ দিনের কি প্ল্যান? যারা দিন আনে দিন খায়, যাদের আজকে ব্যবসা-পাতি নাই, দোকানে বেচাকেনা নাই, তাদের লাইগা কি করবে? কোনকিছু করার কথা কেন বলে না, ভাবে না? কেন ভাবার দরকার পড়ে না?

হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু বানানো যায়, ফ্লাইওভার বানানো যায়, ব্যবসায়ীদের সাবসিডি দেয়া যায়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো যায়; ৭ দিনের লক-ডাউন দেয়ার সময়, এক বছর পরেও কোনকিছু করার কথা কেন ভাবতে হয় না?

এই কোশ্চেন গর্ভমেন্টরে না জিগাইতে পারেন, নিজেরে জিগান! (উত্তর’টা আমি যেমন জানি, আপনিও জানেন।)

উত্তর দেয়ার দরকার নাই। কিন্তু মনে রাখবেন, সমাজের, রাষ্ট্রের অথরিটিরে কোন কথা জিগানো যদি সাহসের ঘটনা হয়া উঠে, তাইলে আমরা আমাদের সমাজ বানাইতে পারি নাই, রাষ্ট্র বানাইতে পারি নাই। এইটা বানাইতে হবে। প্রশ্ন করতে পারতে হবে, বস!

মানুশরে তার প্রশ্ন করতে পারার অধিকার ফিরায়া দিতে হবে!

৩.
মিডিয়াগুলা হইতেছে সরকারের পা-চাটা গোলাম। গোলামের কাজ হইতেছে মালিকরে বাঁচানো, আর অন্য কিছুই না। সত্য-মিথ্যা এইখানে কোন ঘটনাই না।


এপ্রিল ৪, ২০২১

মিডিয়া যে “হেফাজত” বা কওমী মাদরাসার স্টুডেন্টদেরকে ভিলেন বানাইতে চায়, তাদেরকে দিয়া “সাম্প্রদায়িকতার” ডর দেখাইতে চায় এর একমাত্র কারণ হইতেছে বাংলাদেশের সমাজে এখন এই কওমী মাদরাসার স্টুডেন্টরাই হইতেছে একমাত্র রেজিমেন্টেড ফোর্স বা সংগঠিত শক্তি।*

আজকে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিগুলা বন্ধ এক বছরের উপর; বাংলা-মিডিয়ামের স্টুডেন্টদের একলগে হওয়ার কোন উপায় নাই। যদি থাকতো তাদেরকেও ভিলেন বানাইতো। এখনো “দুব্বল” হিসাবে দেখানো হয় যে, এরা ছাত্রলীগের মাইর খায়। ছাত্র অধিকার পরিষদের কোন শক্তি এখন নাই কারণ ভার্সিটিগুলার স্টুডেন্টরা একসাথে, একটা জায়গাতে নাই।…

এই পুলিশ-মিলিটারি-আমলাদের গর্ভমেন্ট ভালো কইরা জানে, বিএনপি’র আন্দোলন করার মতো কোন অবস্থা নাই। আন্দোলন-মুভমেন্ট হবে সোশ্যাল স্পেইসগুলি থিকা। যে-ই করবে, তারে ভিলেন বানাইতে হবে। এই কাজ করে তাদের দালাল মিডিয়া। কিন্তু ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন যদি হয় দেশে, সবাই ভালো কইরাই জানেন, বিএনপি ছাড়া অন্য কাউরে ভোট দেয়ার অপশন পাবলিকের নাই। বিএনপিও জানে এইটা। “সাম্প্রদায়িক শক্তি” বইলা যারে টার্গেট বানাইছে মিডিয়া, এইরকম কিছু ভোটে দাঁড়াইতেই পারবে না! (কারণ কারেক্টারের দিক থিকা এইটা পলিটিক্যাল দল না। বরং উনাদের ফাইট’টা হইতেছে সোশ্যাল রিকগনিশনের জায়গাটাতে। বিপ্লব করা, গর্ভমেন্ট ফল করানো উনাদের কাজ না। বাংলাদেশের বামে’রা বিপ্লবের গাঞ্জা খাওয়াইয়া এই জায়গাগুলারে নষ্ট করছে, করতেছে।… )

তারপরেও মাদরাসার স্টুডেন্টদেরকে “উগ্র” “শয়তান” ও “নারী-বিরোধী” হিসাবে দেখানোর কারণ হইতেছে, উনারা রেজিমেন্টেট একটা ফোর্স। যেইটা বাংলাদেশে কোন পলিটিক্যাল দলের, কোন স্টুডেন্ট, লেবার, পাবলিক সংগঠনের মধ্যে এখন নাই। এইটাই মেইন কারণ তাদেরকে টার্গেট করার।

আর মিডিয়া এইটা করে “ব্রাহ্মণবাদী” একটা জায়গা থিকা, যেইখান থিকা মাদরাসার স্টুডেন্টদেরকে নিম্ন-বর্ণের হিন্দুদের মতন আউটকাস্ট বা “অচ্ছুৎ” কইরা ভাবা হয়। যেন এরা খালি “গরিব-দুখী”-ই না, এরা তো “অশিক্ষিত, কুসংস্কারচ্ছন্ন” এবং “বিজ্ঞান-শিক্ষায় শিক্ষিত” না! এই কারণে, এদের কথা বলার কোন রাইটস নাই!

সমাজে কাউরে আউটকাস্ট বানায়া রাইখা সামাজিক অধিকারের জায়গা নিয়া কথা বলা যায় না! আজকে শহুরে, বাংলা-মিডিয়াম, মিডল-ক্লাস সমাজ যাদেরকে আউটকাস্ট বানায়া রাখতে চায়, অরা নিজেরাই নিজেদের এই ‘পাপ’রে ডরায়। যে, অরা যদি সমাজে এস্টাবলিশড হয়া যায়, তাইলে তো আমাদেরকে আউটকাস্ট বানায়া ফেলবে!

আর সবচে বড় পয়েন্ট হইতেছে, নারী-অধিকার তো থাকবে না! (যেন এখন খুব আছে! যেন এখন সব রেইপ মাদরাসার স্টুডেন্টরা করে, ছাত্রলীগ করে না!) এইগুলা হইতেছে, মিডিয়ার কালচারাল টেররিজম!
(কারো অধিকার কেউ কাউরে দেয় না। ক্ষমতার সাথে আতাঁত কইরা, ক্ষমতার কোলে বইসা কোন অধিকার আদায় হয় না। সব অধিকারই আদায় কইরা নিতে হয়। সমাজের মানুশরে সাথে নিয়া, সমাজের মানুশদেরকে কনভিন্স কইরা করতে হয়; তাদেরকে বাতিল কইরা দিয়া না। আপনি যদি কাউরে তার সামাজিক অধিকার না দেন, বাতিল কইরা দেন, আপনি সেই ডরের মধ্যে থাকেন যে, আপনার লগেও এই কাজ করবে মনেহয়।…)

এই টেররিজমের শিকার হইয়েন না! অন্য কারো লগে ক্ষমতা দেখায়া কেউ অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার করলে হাততালি দিয়েন না। মনে রাইখেন, এই গর্ভমেন্টের এগেনেস্টে কথা কইলে ক্ষমতার গু-খাওয়া মিডিয়া আপনার প্রাইভেট লাইফ’রেও ছাইড়া দিবে না!

২.

টিভি’তে, একটা ঘোড়া
টগবগ টগবগ কইরা দৌড়াইতেছে

আমরা দেখতে দেখতে ভাবতেছি,
ঘোড়া’টা যদি না থামে, ডিম’টা কি
পাড়তে পারবো আমরা?

/ঘোড়ার ডিম
(#মিডিয়ারিয়ালিটি ১)

৩.
রুচি না বদলায়া পলিটিক্স বদলাইতে পারবেন না!


এপ্রিল ৫, ২০২১

“পাবলিক তো লক-ডাউন মানে না! পাবলিক খারাপ!” – এই টাইপের বাল-ফালানি আলাপগুলা কি মিডিয়া’তে শুরু হয়া গেছে? না হইলেও, আমার ধারণা, দুয়েকদিনের ভিতরে শুরু হওয়ার একটা চান্স আছে।

এই আলাপের সমস্যা’টা আসলে একদম গোড়াতে। এইটা যে আসলে ‘লক-ডাউন’ না, বরং একটা সরকারি হরতাল – এই রিকগনিশন’টা, আলাপ’টা, আলাপের দরকার’টা শুরু থিকাই নাই!

এই কারণে দেখবেন, অফিসিয়ালি কখনোই ‘লক-ডাউন’ শব্দটা ইউজ করা হয় না, মিডিয়া’রে দিয়া বলায়।

যেমন ধরেন, গত বছর ইন্ডিয়াতে মোদি’র গর্ভমেন্ট যখন মুসলমান খুন করতেছিল, তখন তার দেশের মিডিয়ারে দিয়া বলাইছিল, “দাঙ্গা”। যেইরকম বাংলাদেশে সরকারি দলের লোকজন হিন্দুদের জায়গা-জমি-বিজনেস দখল করার সময় ইস্যু বানায় – ‘সাম্প্রদায়িকতা’! পুলিশের আগুন লাগানোর ছবি থাকার পরেও কয়, ‘নাম না জানা দুস্কৃতিকারী”।

এইরকম সরকারি হরতাল’রে “লক-ডাউন” নাম দিয়া মিডিয়া বলবে, “এই দেশে লক-ডাউন দিয়া কোন লাভ নাই! কেউ মানে না!” এইটা যখন শুরু হবে, ধইরা নিবেন, “সরকারি হরতাল” শেষ হওয়ার সময় চইলা আসছে তখন

২.
এইটা লক-ডাউন না। লক-ডাউন দিলে গর্ভমেন্ট দেশের পাবলিকের খাওয়া-পরা নিয়া চিন্তা করবে, কোন একটা ব্যবস্থা নিবে। অথচ এইটা নিয়া কোন কথা নাই।

এইটা হইতেছে পাবলিকের এগেনেস্টে গর্ভমেন্টের হরতাল!

জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড বসায়া, পুলিশ দিয়া এই হরতাল ‘সফল’ করার ব্যবস্থা নিছে গর্ভমেন্ট। রাস্তায় বাস নাই, সিএনজি কয়েকটা, রিকশা কম। তারপরও মানুশ রাস্তায় বাইর হইছে, রাস্তায় নামছে। রাস্তায় না নাইমা কোন উপায় নাই মানুশের। দোকান-পাটও খোলা শুরু করবে, ধীরে ধীরে।

এই হরতাল পাবলিক মানবে না। এই হরতাল পাবলিকের মানার কোন কারণ নাই।

পুলিশ দিয়া, বিজিবি দিয়া, হরতাল দিয়া করোনা কন্ট্রোল হবে না। করোনা ‘বিরোধী দল’ না, করোনা বিএনপি না, করোনা হেফাজত না। মিডিয়া দিয়া বদনামি কইরা, পুলিশ দিয়া পিটায়া, লক-ডাউনের নামে হরতাল দিয়া এর মোকাবেলা হবে না। পাবলিকের হেনস্তা হবে। আর সেইটাই হইতেছে আজকে।


এপ্রিল ৬, ২০২১

এই বয়ান বা ন্যারেটিভ’টা খুবই বাজে যে, কওমী মাদরাসা’র স্টুডেন্টদেরকে ইউজ করা হইতেছে, উনারা জানে না, বুঝে না কি করতেছে। এইটা হইতেছে, সো-কল্ড বামপন্থী এবং ‘ব্রাহ্মণবাদী’ মিডিয়ার আলাপের বেইজ পয়েন্ট, কওমী মাদরাসা নিয়া। একশ বছর আগে কলকাতার ইন্টেলেকচুয়ালরা ‘পুব-বাংলা’ নিয়া এইরকমভাবে কথা কইতো।

এই আলাপের মেইন সমস্যাটা হইতেছে, উনারা ধইরা নেন যে, মানুশ হইতেছে ইতিহাসের খেলার পুতুল, চাইলেও নিজেরা কিছু করতে পারে না, সে তার ‘ঐতিহাসিক অবস্থার দাস’; প্রডাকশনে যেমন লেবার লাগে, এইরকম ‘বিপ্লব’-এর কাঁচামাল হইতেছে মানুশ। তো, এইটা খুবই মিছা কথা, ভুল ধারণা।

মানুশ হইতেছে ইতিহাসের এক্টিভ ফোর্স। মানুশ ইতিহাস বানায়। হিস্ট্রি’তে এমন ঘটনা আছে যে, মানুশ পারে নাই। কিন্তু মানুশ রিভোল্ট করে নাই – এই ঘটনা নাই।

সমাজের ক্ষমতাবানরা, এলিট-গোষ্ঠীরা যাদেরকে ‘অচ্ছুৎ’ কইরা রাখতে চায়, বাদ দিয়া চলতে চায়, তাদের রেজিসট্যান্সের ভিতর দিয়াই নতুন সমাজ তৈরি হয়, সবসময়।

এখন এই ফোর্স’টারে (হোক মাদরাসার স্টুডেন্ট, হোক গার্মেন্টসের লেবার, হোক পাহাড়ের লোকজন) ইউজ করা হইতেছে – এইগুলা হইতেছে রেজিসট্যান্সের জায়গাটারে গোড়া থিকা অস্বীকার করার, মানতে না চাওয়ার একটা আলাপ। এই পজিশনটা হইতেছে ক্ষমতার বিরুদ্ধে রেজিসট্যান্স’রে, রুখে দাঁড়ানো’টারে, রিভোল্টের জায়গাটারে আটকানোর একটা আলাপ।

মনে রাখবেন, ইতিহাস এইরকম সিডাকশনের জায়গাও। কিন্তু এইরকম সিডিউস করার ভিতর দিয়া ‘রিপ্রেজেন্টশনের অধিকার’ পাওয়া যায় না। রিপ্রেজেন্টেশন হয়ও না। একজন আউট-সাইডার হিসাবে আপনি বলতে পারেন কোনটা ঠিক হইতেছে, কোনটা ঠিক হইতেছে না, আপনার ধারণার জায়গা থিকা। আপনি ফুঁসলাইতে পারেন, সাজেস্ট করতে পারেন, কিন্তু ডিসাইড কইরা দিতে পারেন না। এইটা কাজ করে না।

আপনি যদি মানুশের ইতিহাসে কোন এক্টিভ রোলে থাকতে চান, এইটা সবসময় হইতেছে – জালিমের বিরুদ্ধে থাকা, জুলুমের বিরুদ্ধে থাকা, রেজিসট্যান্সের পক্ষে থাকা, মজলুমের পক্ষে থাকা। এইখানে কোন মিডল-গ্রাউন্ড নাই, কোন মধ্য-পন্থা কাজ করে না। এনালাইসিসের জায়গা এইটা না, এইটা ডিসিশান নেয়ার ঘটনা। আর আপনার ন্যারেটিভ সবসময় আপনার ডিসিশানের জায়গাটারে স্পষ্ট করে। এইটা লুকায়া রাখা যায় না।

২.
খালেদা জিয়ার এগেনেস্টে কালচারাল মিডল-ক্লাসের মেজর বা পপুলার সমালোচনা’টা কি ছিল? আমার যদ্দূর মনে আছে, আলাপের ইস্যু ছিল উনার চোখের ভ্রু নাই, পেন্সিল দিয়া ভ্রু আঁকেন, মেকাপ বেশি করেন, রঙচঙা পাতলা শাড়ি পরেন, উনি এইট পাশ মহিলা… এইসব আলাপ-ই শুনছি আমরা। মানে, উনি যে ‘রাবীন্দ্রিক নারী” না, এইটা উনারে “পাকিস্তানের দোসর” বইলা “প্রমাণ” করতে চাওয়ার একটা বড় কারণ। (আমি খেয়াল কইরা খুবই সারপ্রাইজড হইছিলাম, রেহনুমা আহমেদের মতন ইন্টেলেকচুয়ালও উনার “সিপি গ্যাং-এর “বেশ্যা” ব্যানার” বইটাতে মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভে খালেদা জিয়া’রে যেইভাবে ভিক্টিমাইজ করা হয়, সেইটা নিয়া একটা লাইনও বলতে পারেন নাই!) এইটা বলাবলি’র ভিতরে নাই, কিন্তু টের না পাওয়ার কোন কারণও মনেহয় নাই। মানে, খালেদা জিয়া “রাবীন্দ্রিক নারী”র নর্মস মানে না – এইটা উনার ‘খাঁটি বাঙালি’ না হইতে পারার একটা নমুনা!
রুনা লায়লা’র লগেও এইরকমের ঘটনা আছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান থিকা বাংলাদেশে পারমানন্টেলি চইলা আসার পরে উনারে ‘বাংলাদেশ বেতারে’ অডিশন দিতে বলা হইছিল; কিন্তু উনার যেহেতু ঢাকার “কালচার সমাজ”রে গোণায় ধরার দরকার ছিল না, এইগুলা উনার ফেইমরে আটকাইতে পারে নাই; কিন্তু অবস্টেকলগুলা ছিল, একইরকম রুচি’র জায়গা থিকা। এখনো আছে।

আরেকটা ঘটনা দেখেন, রিকশাঅলা’রা যে লুঙ্গি পিন্দে, এইটা তো ‘গরিব’ হওয়ার একটা সিম্বল। অথচ উনারা ‘গরিব’ এই কারণে লুঙ্গি পরেন – তা কিন্তু না, বরং প্যান্ট পিইন্দা প্যাডেল মারা সম্ভব না, উরাত ছিইলা যাবে, এই কারণে পরতে পারার কথা-ই না। কিন্তু যেহেতু রিকশাঅলারা লুঙ্গি পিন্দে (খুব দামি লুঙ্গি না পিইন্দা), এইটারে ‘গরিব’ – এই মিনিংয়ের বাইরে নিয়া যাওয়াটা সম্ভবই না!

(গত টার্মের ডাকসু ভিপি) নুরুল হকের কথাও খুব একটা যে ভাল্লাগে না, বা গুরুত্ব দিতে হয় না, এর একটা কারণ এইটাও যে, (যদিও চেষ্টা করে, কিন্তু) সে তো ‘শুদ্ধভাবে’ (মানে, বুকিশ শব্দ দিয়া) কথা বলতে পারে না!কিন্তু দেখবেন এখন অবস্থা এইরকম হইছে যে, যা বলতে চান বালের এই ‘শুদ্ধ ভাষা’ দিয়া সেইটা বলতেই পারবেন না আপনি! অথচ এইটারে, এইসব ‘রুচি’রে ভালো-খারাপের স্ট্যান্ডার্ড বানায়া রাখতেছি আমরা।

এইটা যে আমরা খেয়াল করি না – তা না, কিন্তু অভ্যাসের কারণে এর বাইরে যাইতে পারি না, এবং চাইও না। তো, একইরকমের অভ্যাসগুলা অন্য মানুশজনের মধ্যে আছে বইলাই উনারা ভালো-মানুশ বা খারাপ-মানুশ হয়া যান না।

যদি কোনকিছু আপনি অপছন্দ করেন, হেইট করেন, ভাইবা দেখা দরকার কেন অপছন্দ করতেছেন বা খারাপ বইলা ভাবতেছেন। আপনার রুচি’র লগে মিলে না বইলা? আপনার আইডিওলজিরে সার্পোট করে না বইলা? এর লাইগাই কেউ খারাপ বা ভালো হয়া যাইতে পারে? মানে, চিন্তা কইরা দেখেন, সমাজে যদি সবাই একই রুচি’র লোক হয়, কি ভয়াবহ অবস্থা হবে সেইটা!

কেউ নামাজ পড়ে বইলা ভালো না, বা নামাজ পড়ে বইলাই খারাপ না। কেউ সৎ ও নীতিবান মানুশ বইলা নিজের বাচ্চাদেরকে মাইরধর করে না – এইরকম না। এই কারণে সে সৎ হইতে পারবে না – তাও না। জিনিসগুলা যে ইন্টার-রিলেটেড না – এইটা আমার দাবি না; কিন্তু বিচারের জায়গাগুলারে ঠিক করতে পারা দরকার। একজন মানুশের কোন কাজটারে বিচার করবেন আপনি, আর কিসের বেসিসে করবেন। (একটা লাইন টানতে পারাটা জরুরি।)…

মানুশ আলাদা আলাদা রকম হবে, আলাদা আলাদা জিনিস তাদের লাইফের প্রায়োরিটি হবে; আর এই কারণে যদি কাউরে আপনার ভালো বা খারাপ মনেহয়, এইটা খালি রুচি’র সমস্যা না, চিন্তারও সমস্যা।
নিজের ভিতরের এই ফ্যাসিস্টরে মোকাবেলা করেন, থামান আগে!

৩.
আরেকটা ডরের ভয়ে
এই ডর’টারে আমরা ভালোবাইসা ফেলবো
বলবো, “আরে, আমরা ডরাই নাকি!
আমরা ন্যায় ও প্রগতির পক্ষে কথা বলতেছি তো!”

তারপরে ডর’টার ভিতরে
গুটিশুটি হয়া শুইয়া থাকবো
নিজেদেরকে বলবো, কথাদেরও কান আছে, বুঝছো!

আমরা ডরাই না, কিন্তু আরেকটা ডরের ভয়ে সবসময় আমরা থাকবো চুপ হয়া থাকবো!

/আরেকটা ডরের ভয়ে


এপ্রিল ৭, ২০২১

সুন্দর একটা সকাল, শেষ বসন্তের।
রাস্তায় কুত্তাগুলা ঝিমাইতে ঝিমাইতে ঘুমায়া পড়তেছে,
কবরস্থানের গাছগুলাতে বইসা পাখিগুলা কথা বলতেছে,
বাচ্চাগুলা খেলতে খেলতে ঘর থিকা বাইর হয়া আসতেছে,
সামনের একটা প্লটে, কন্সট্রাকশনের কাঠ ও লোহা পিটাইতেছে লেবার’রা,
রইদ আইসা দাঁড়াইতেছে বারান্দার টবের কাছে,
বাতাস বলতেছে, হেই সকাল হইছে!

আমাদের রাতের ঘুম কাটতেছে না,
আমাদের সকাল কোনদিনও হবে – আমরা ভাবতে পারতেছি না

সারাক্ষণ তাহাজ্জুদের নামাজের সময়ের অন্ধকারের
একটা ডরের ভিতর আমরা থাকি,
আমাদের সকাল হয় না, আমরা সকাল দেখতে পারি না

সকাল’টা তখন কুত্তাদের ঘুমের ভিতর,
চুপ-হয়া আসা পাখিদের কথা’র ভিতর
ঘরে ফিরা যাওয়া বাচ্চাদের নিরবতার ভিতর
কন্সট্রাকশনের উন্নয়নের আওয়াজের ভিতর
হারায়া যায়; আর আমরা বলি, আমাদের কোনদিনও সকাল হবে না…

/সকাল

২.

সামনের ফাল্গুনে আমরা কিন্তু আরেকটু কম ভয় পাবো

#জহিররায়হান

এপ্রিল ৮, ২০২১

আমরা বিচার’রে, আদালতে রায়’রে ডরাই না। মামলা দেয়া’টারে ডরাই। কারণ, মামলা দিতে পারলেই তো এনাফ! পুলিশ রিমান্ডে নিয়া পিটায়া তক্তা বানায়া ফেলবে। বিচার পর্যন্ত যাওয়ারই দরকার নাই। যদি যায়ও, আদালতের কি রায় দেয়ার ক্ষমতা আছে? একজন না মরলে আরেকজনরে তো জামিনও দিতে পারে না। খুনের কোন মামলা হয় না, ভাংচুরের মামলার আসামী হয় হাজার হাজার।

দেশে এখন আইন নাই, বিচার নাই, ভোট নাই। কিন্তু ‘সাম্প্রদায়িকতা’ আছে, ‘ধর্মান্ধ ইসলামিস্টরা’ আছে, পর্ণ-নিউজ আছে, জিডিপি গ্রোথ আছে। (২০ কোটি মানুশের দেশে ২ লাখ করোনার টিকা দিয়া ‘করোনা মোকাবেলা’ করা হইছে।)

আর এইগুলার গোড়া’তে পানি ঢালতেছে এই কথা যে, পাবলিক তো তার ভালো’টা বুঝে না! ভোট দিলে তো বিএনপি’রে দিবে, হেফাজতরে দিবে! এই কারণে ‘ভোটের অধিকার’ দেয়া যাবে না!

যেই রাইটস আপনি পাবলিকরে দিতে চান না, সেই রাইটস আপনার কেমনে থাকে? থাকে না তো। আর এই কারণেই থাকে না।

কারণ, আপনি মনে করেন, আপনেরা ‘শিক্ষিত’ আপনাদেরকে কথা বলতে দিতে হবে, আর পাবলিক ‘অশিক্ষিত’, ‘শুদ্ধ-ভাষায়’ কথা কইতে পারে না! অদেরকে কথা বলতে দিলে তো সমস্যা!

যেই অধিকার আপনি মানুশরে দিতে চান না, মানুশ হিসাবে সেই অধিকার আপনারও থাকে না।

সামাজিক অধিকার সিলেক্টিভ কোন জিনিস না! থাকলে সবার থাকে। না থাকলে কারো থাকে না।

আজকে আপনি কথা বলতে পারেন না, কারণ সবার কথা বলার অধিকার আপনি দিতে চান না। আজকে আপনি ভোট দিতে পারেন না কারণ মানুশের বিচার-বুদ্ধি-ভোটে আপনি বিশ্বাস করেন না। মনে করেন, জালিম’রে সার্পোট করেন বইলা, জুলুম’রে সার্পোট করেন বইলা এইসব অধিকার আপনার আছে! কিন্তু জালিমের কাছে আপনি মজলুমই। আর মজুলমরে অধিকার না দিলে, সেই অধিকার আপনারও থাকে না।

মানুশের উপরে বিশ্বাস রাখেন, মানুশ আপনারে বিশ্বাস করবে। মানুশের অধিকারে বিশ্বাস রাখেন, আপনিও সেই অধিকার পাবেন। এর বাইরে অন্য কোন রাস্তা নাই।

এপ্রিল ৯, ২০২১

কি যে রইদ পড়ছে!
কাক’টা দেখলো
একটা কলসি আছে,
আর পাশে কিছু পাথর,
আর আগের কাহিনি’টাও
সে জানতো

এই কারণে ঠোঁটে নিয়া
পাথরগুলা সে ফেলতেছিল
কলসি’টার ভিতর

সব পাথর ফেলার পরে
দেখলো সে, কলসিতে
কোন পানি-ই ছিল না
আসলে

/পলিটিক্যাল এনালাইসিস

২.
যে কোন বড় সমস্যারই ইমিডিয়েট কোন সমাধান নাই। ইজি কোন সলিউশন নাই। ইমিডিয়েট সমাধানের পথে গেলে আরো বড় সমস্যাই ক্রিয়েট করা হয়, বেশিরভাগ সময়।

বাংলাদেশের পলিটিক্যাল সমস্যা হইতেছে যে, এই দেশে একটা পলিটিক্যাল কালচার নাই, একটা সিস্টেম নাই, যেইখানে কোন মানুশ চাইলেই কোন পলিটিক্যাল পার্টিতে জয়েন কইরা তার নিজের কথা বলতে পারবে, তার মতো কাজ করতে পারবে। পলিটিক্সে পিপলস পার্টিসিপেশনের কোন রাস্তা খোলা নাই। কোন ‘বড় ভাই’ ধরতে হবে আগে, কোন নেতার মুরিদ হইতে হবে।…

এই যে পাবলিক’রে পলিটিক্স করতে দেয়া হয় না, পলিটিক্স করার জায়গাগুলারে বন্ধ কইরা রাখা হইছে, সেইটারে দেখানো হয় এইভাবে যে, পাবলিক পলিটিক্স করা পছন্দ করে না! অথচ পছন্দ-অপছন্দ করার কোন অপশনই নাই!

আজকে বাংলাদেশে একটা পলিটিক্যাল দল নাই, একটা সংগঠন নাই যেইখানে সমাজের একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল মানুশ হিসাবে আপনি জয়েন করতে পারবেন, গিয়া নিজের কথা বলতে পারবেন। যেই পলিটিক্যাল দল-ই করেন, সেইখানে ‘হাই-কমান্ডের’ কথা শুনতে হবে। তাদের ‘হ’-তে হ, ‘না’-তে না বলতে হবে। না বলতে পারলে টিকতে পারবেন না। দল থিকা বাইর কইরা দেয়া হবে।

তো, এই পলিটিক্যাল স্লেভারি’র কি দরকার! এমনিতেই কম গোলামি করতে হয় না আমাদেরকে, দুনিয়ায়। নতুন একটা গোলামি’তে কেন যোগ দিবেন!

কেউ যদি নিজেদেরকে জনগণের দল বইলা দাবি করতে চান, তাইলে পলিটিক্যাল দলের ভিতরে এই গোলামির জায়গাটারে সরাইতে হবে, বাদ দিতে পারতে হবে। এই গোলামি বাদ না দিতে পারলে, কোন পলিটিক্যাল দলেই পিপলের পার্টিসিপেশন তৈরি করা যাবে না। আর রাজনীতি’তে মানুশ না আসলে মানুশের দল কোনদিনও তৈরি হবে না। দেশের মানুশের গর্ভমেন্টও আমরা পাইতে পারবো না।

(বাংলাদেশে বারবার বাকশাল ফিরা আসে এই রাস্তা দিয়াই। পাবলিকের পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন বন্ধ করার ভিতর দিয়া।)

কাজ’টা বাইরের না, ভিতরের। গোড়া’তে একদম। আর এইটা কোন ‘বিকল্প’, কোন ‘অপশন’ না। বরং যেইসব অপশন আমাদের সামনে ‘বিকল্প’ হিসাবে, ‘অপশনের’ মূলা হিসাবে ঝুলানো হইতেছে, তার বাইরে না বাইর হইতে রাজি না হইলে রাস্তাটাই আমরা খুঁইজা পাবো না।

ঘটনা এইটা না যে, কোন ‘বিকল্প’ বা ‘অপশন’ নাই, বা আমরা চিনতেছি না বা বাছাই করতে পারতেছি না; বরং আমাদেরকে ‘অপশন’টা ক্রিয়েট করতে পারতে হবে। নিজেদের রাস্তাটা বানানোর, ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র তৈরি করার কাজটা করতে হবে।

এইটা একদিনের কাজ না, এইটা একজনের কাজ না।

এই গোড়া’র কাজগুলা নিয়া যখন আমরা কথা বলা শুরু করতে পারবো, কাজ করা শুরু করতে পারবো, সমাজের পলিটিক্যাল নীতি হিসাবে এস্টাবলিশ করতে পারবো, তখন অপশনগুলারে আমরা আমাদের সামনে দেখতে পাবো। তখন পাবলিকের কথা ভাবে – এইরকম গর্ভমেন্ট আমরা পাইতে পারবো; দেশের মানুশের কথা ভাবে – এইরকম গর্ভমেন্ট আমরা পাবো।

মনে হইতে পারে অনেক জটিল জিনিস এইটা, অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু যদি আমরা সত্যের পথে হাঁটতে শুরু করি, যদি মানুশের পক্ষে থাকতে রাজি হইতে পারি, এইটাই হইছে পথ।

এইটা সহজ পথ না, কিন্তু এইটা সত্যরে খোঁজার পথ। এইটা ক্ষমতায় যাওয়ার পথ না, কিন্তু এইটা মানুশের রাজনৈতিক অধিকার ফিরায়া দেয়ার পথ। এইটা রাজনৈতিক সমাধান না, কিন্তু এইটাই রাজনৈতিক সমাধানের পথ।


এপ্রিল ১০, ২০২১

দেশের ১৭ টা থানায় বাঙ্কার বানায়া মেশিনগান বসানো হইছে। কারণ, ‘হেফাজত’ থানায় এটাক করতে পারে – এই ভয় থিকা। তো, এই কথা আসলে কতোটা সত্যি?

স্টেপ বাই স্টেপ আসেন। ফার্স্ট কথা হইতেছে, ‘হেফাজতের’ কাছে কি বন্দুক-পিস্তল-বোমা আছে? এতোকিছু লিক হইছে, হইতেছে… বোমা-টোমা মাইরা থানা উড়ায়া দেয়ার কোন ‘ফোনালাপ ফাঁসের খবর’ তো আমরা এখনো পাইতেছি না। কিছু দরকার না এখন? এইটা ছাড়া মনে হইতে পারে পুলিশ আসলে ‘হেফাজত’ না, পাবলিক থানা এটাক করতে পারে বইলা ডরাইতেছে।…

সেকেন্ড হইতেছে, ‘হেফাজত’ কেন থানায় এটাক করবে? পুলিশ কি করছে? এর আগে এরশাদের আমলে, বিএনপি’র আমলেও তো আন্দোলন-সংগ্রাম হইছে, পাবলিক খেপছে পুলিশের উপ্রে, কিন্তু থানা তো এটাক করে নাই। পুলিশও একটা লিমিটের পরে পাবলিকের এগেনেস্টে যায় নাই। তো, গত কয়েকদিনে পুলিশ গুলি চালায়া কতোজন মাদরাসার স্টুডেন্ট খুন করছে আসলে? গত কয় বছরে পুলিশ কতো মানুশ মারছে, অন্যায়ভাবে নির্যাতন করছে, মামলা দিছে? মানে, কেউ যদি আপনারে মারতে আসে, কেন মারতে আসবে? এর আগে কি ঘটছে? অইগুলাও খোলাসা কইরা বলা দরকার না?

থার্ড হইতেছে, গতবারের ইলেকশনের ভোট যেহেতু পুলিশ দিছে, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা’ কইরা গর্ভমেন্টও যেহেতু চালাইতেছে, পুলিশরে তো প্রটেকশন দিতে হবে! কিন্তু পুলিশের কাজ তো পাবলিকরে প্রটেক্ট করা বইলা জানি আমরা। পাবলিকও তো পুলিশরেই বাঁচানোর কথা, ‘আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে’। কিন্তু এখন, তাদের নিজেদেরকে আলাদা কইরা প্রটেক্ট করা লাগতেছে কেন?

এতোদিন ধইরা, পুলিশরে পাবলিকরে শত্রু বানাইছেন। এখন পাবলিকরে পুলিশের শত্রু বানাইয়েন না। খুব বড় ভুল হবে এইটা।


এপ্রিল ১২, ২০২১

আবারো লম্বা ‘লক-ডাউন’ শুরু হইতে যাইতেছে। আবারো মানুশ মরতেছে করোনায়, আমাদের চারপাশে। (নিউজে কয়, আজকে ৫০ জন মারা গেছে, আজকে ৬০ জন মারা গেছে। কিন্তু আমরা টের পাই, একচুয়াল নাম্বার আরো বেশি। যা বলা হইতেছে তার চাইতে আরো অনেক বেশি মানুশ এফেক্টেড হইতেছে।)

দেশের গর্ভমেন্ট, যার দেশের মানুশের কথা ভাইবা ডিসিশান নেয়ার কথা, আজকে তারা ডিসিশান নিতে পারতেছে না। নিজেরা কেমনে ক্ষমতায় টিইকা থাকতে পারবে – এই ভাইবা ডিসিশান নিতেছে। যার ফলে করোনা আরো বাড়তেছে। আরো বাড়বে। মানুশ মরলে গর্ভমেন্টের কিছু যায় আসে না। লোক-দেখানি ‘লক-ডাউন’ আরো লম্বা হবে। কিন্তু মানুশের খাওয়া-পরা’র কোন ব্যবস্থা গর্ভমেন্ট নেয় নাই, নিবে না।

গত বছরের কথা যদি মনে রাখেন, অনেক মানুশ বাঁইচা ছিল মানুশের দয়া-মায়া’র উপরেই। এখনো মানুশ, মানুশের কাছেই হেল্প চায়। গর্ভমেন্ট দুই-চাইর টাকা ভাতা দেয়, যেইটা তাদের লোকজন মাইরা খাওয়ার পরে খুব কম লোক-ই পায়। সমাজ ভালো হোক আর খারাপ হোক, শেষমেশ সমাজের মানুশই মানুশজনের পাশে আইসা দাঁড়ায়, বাঁচায়া রাখে। গর্ভমেন্ট মহামারি থিকা বাঁচাইতে পারে না; কিন্তু যতটুক করার কথা, যতটুক করতে পারার কথা, সেইটা করতেছে না।

আর না কইরা, গর্ভমেন্টের মিডিয়া, দালাল’রা দেশের মানুশেরই মানুশের দুশমন বানাইতে চায়। কথায় কথায় দেখবেন এইসব কয় যে, দেশের মানুশ খারাপ, মানুশের চরিত্র ভালো না, সব দোষ বাঙালির, সব দোষ মানুশের। অথচ ঘটনা হইতেছে, মানুশরে মানুশের দুশমন না বানায়া কোন জালিম ক্ষমতায় টিইকা থাকতে পারে না।

যারা মানুশরে গাইল্লাইতে চায়, মানুশরে গাইল্লাইতে বলে; অরা জালিমের পারপাসই সার্ভ করে। অরা মানুশের দোষ দেখে, একটা অবৈধ গর্ভমেন্টের কোন দোষ খুঁইজা পায় না, বা পাইলেও সেইটারে মনে করে, কোন ঘটনা না।

এইভাবে করোনার মহামারি আরো ভয়াবহ হয়া উঠবে, জুলুম আরো বাড়বে, মানুশরে আরো বেশি মানুশের শত্রু বানানো হবে। কারণ তা নাইলে জালিমের শাসন জায়েজ করা যাবে না। একটা জুলুমরে জাস্টিফাই করার লাইগা আরো বড় বড় জুলুম শুরু করতে হয়। এইটা বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে, যতদিন না এই জুলুমের শেষ হবে।

আর এই জুলুমের শেষটার শুরু তখনই হবে, যখন আপনি মানুশরে হেইট না কইরা, জালিমের ভোকাবুলারির সহযোগি না হয়া, এরে মোকাবেলা করতে রাজি হবেন।

আমাদের সামনে যা দেখানো হয়, যা বলা হয় তারেই সত্য বইলা মাইনা নিলেই আমাদের লাইফ সহজ হয়া উঠবে না। মানুশরে ঘৃণা করাটা মানুশ হিসাবে আপনারে জালিমের জুলুম থিকা বাঁচাবে না।

করোনার টাইমে খাইতে না পারা মানুশরে হেল্প করাটারে যেমন আপনার দায়িত্ব হিসাবে নেন, এইরকম যারা আজকে বাংলাদেশে জুলুমের শিকার তাদেরকে গালিগালাজ করা না, বরং তাদের পাশে দাঁড়ানো আপনার দায়িত্ব। এই কথা মানতে, এইটা ফিল করতে আপনি যত দেরি করবেন, দেশের মানুশ ততো বেশি সাফার করবে। আর আপনি-আমিও এর বাইরের কেউ না।

২.

বাবুই পাখিগুলারে কে মারলো?
বাবুই পাখিগুলারে কেন মারলো?

মানুশ’রা কি সব সাইকো হয়া যাইতেছে?
মানুশ না মাইরা মানুশগুলা বাবুই পাখি কেন মারতেছে?

বাবুই পাখির সংখ্যা তো দিন দিন কমে যাইতেছে
মানুশ তো এমনিতেই বেশি দেশে,
দশ-বিশ লাখ মানুশ তো মরা দরকার

মানুশ হইতেছে দুনিয়ার ভাইরাস

বাবুই পাখি তো বাসা বান্ধে
ধানের খেতের পোকা-মাকড় খায়
পরিবেশ বাঁচায়া রাখে

গরিব-অশিক্ষিত মানুশেরা বাবুই পাখি কেন মারে?
সরকার এদেরকে গ্রেফতার করে না কেন?
গুলি কইরা মারে না কেন?
দুই-চাইরটারে মারলেই
বাবুই পাখিগুলারে বাঁচায়া ফেলতে পারতাম আমরা

আচ্ছা, বাবুই পাখিরা কি খালি বাসা-ই বান্ধে,
তৃণলতা মুখে নিয়া খালি উড়ে উড়ে যায়…
নাকি গানও গায়?

আসো, বাবুই পাখিদের জন্য
সেইফ একটা দুনিয়া বানাই আমরা,
মানুশ কিছু করোনায় মইরা সাফ হইলেই
আমরা এইটা করবো

বাবুই পাখি, আমরা সরি!
মানুশ হিসাবে আমাদের অপরাধ তোমরা মাফ কইরা দাও!

কিছু মানুশ গুলি কইরা মারা হইছে
আরো কিছু মানুশ করোনায় মরবে

এরপরে, সবকিছু যখন কাম অ্যান্ড কোয়াইট হবে
একটা বাবুই পাখির অভয়ারণ্য বানানোর প্রস্তাবও
সংসদে তোলার জন্য নিউজ করবো আমরা

একটা ফটো মিউজিয়াম বানাবো আমরা, সুন্দর সুন্দর ফটো দিয়া
একটা বই ছাপাবো আমরা বাবুই পাখির বাসার ম্যাটেরিয়াল দিয়া, বাই-লিঙ্গুয়াল
মানুশ দেখবে, আমরা আসলে এতোটা অ-মানবিক না

যারা বাবুই পাখিদের বাসা পুড়ায়া দিছে, খুন করছে
তাদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে

এই যে কবিতা লেইখা গর্ভমেন্টের কাছে
বিচার দিতেছি এখন, তারপরে পত্রিকায় ছাপা হইলে
বিরাট হই-চই হবে, বিদেশিরাও কথা বলবে
একটা সোশ্যাল মুভমেন্ট শুরু হয়া যাবে…

বাবুই-পাখি, তোমাদের হত্যার প্রতিশোধ আমরা নিবো

গরিব-অশিক্ষিত, ছোটলোক, এনভায়রনমেন্ট বুঝে না – এইরকম
মানুশদেরকে মাইরা ফেলা হোক, আমরা কোন কথা বলবো না
তোমাদের মৃত্যু’তে এই শোক পালন করবো আমরা
(কারণ, তোমরা তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং সেক্যুলারও, রাইট?)

আর আমাদের দাবি, একটা আইসিও বানানোর টাকা দিয়া
সংসদ ভবনের চিপায় চাপায়
কয়টা বাবুই পাখির বাসা বানায়া দেয়া হোক!
আজকের দিন’টাকে “বাবুই পাখি দিবস” ঘোষণা করা হোক!

মানুশ খুন করা যাবে,
কিন্তু বাবুই পাখিদেরকে কেন খুন করা হবে?
এর বিচার আজ বাংলার মাটিতেই হোক!

/বাবুই পাখির জন্য এলিজি

The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →