Main menu

কেমনে টাকা কামাবেন আর ভালোবাসা খুঁইজা পাবেন? – কার্ট ভনেগাট

আপনাদের ক্লাসের রিপ্রেজেনটেটিভ মাত্র বললো সে নাকি “যেমন দিনকাল যাইতেসে, আল্লাহ বাঁচাইসে আমি কোনো জুয়ান লোক না” এইরকম কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হইয়া গেসে। এর উত্তরে আমি স্রেফ বলতে পারি, “যেমন দিনকাল যাইতেসে, আল্লাহ বাঁচাইসে আমি কোনো জুয়ান লোক না।”

আপনাদের কলেজের প্রেসিডেন্ট আপনাদের বিদায়ের দিনে কোনো নেগেটিভ কথা বলতে চান না, তাই উনি আমারে বললো এই খবরটা আপনাদের জানায়ে দিতে, “আপনাদের যাদের পার্কিং ফিজ এখনও বকেয়া আছে তা এই কলেজ ছাইড়া যাওয়ার আগে মিটায়া দিয়া যাইয়েন, নাইলে আপনাদের ট্রানস্ক্রিপ্ট নিয়া পরে গ্যাঞ্জাম লাগবে।”

আমি যখন ছোট্ট একটা পোলা ছিলাম, তখন ইন্ডিয়ানোপলিসে এক রম্যলেখক ছিল, কিম হাবার্ড। ইন্ডিয়ানোপলিস নিউজের জন্য সে প্রতিদিনই কয়েকটা লাইন লিখতো। ইন্ডিয়ানোপলিসের তখন যত সম্ভব তত রম্যলেখক দরকার ছিল। কিম হাবার্ড কখনো কখনো অস্কার ওয়াইল্ডের সমান উইটি ছিল। যেমন ধরেন, সে একবার বলসিলো কোনো মদ না থাকার চাইতে মদ নিষিদ্ধ হওয়া বেটার। আবার বলসিলেন “নিয়ার-বিয়ার” নামটা যে দিসিলো তার দূরত্বের সেন্স খুবই খারাপ।

আপনাদের শেখার মত গুরুত্বপূর্ণ যাকিছু আছে তা আমি ধারণা করি গত চার বছরে আপনারা শিইখা ফেলসেন এবং আপনাদের আমার কাছ থিকা শেখার মত নতুন কিছু নাই। যাক তা আমার জন্যই ভালো। আপনাদের বলার মত আমার আসলে একটাই কথা আছে: এইটাই শেষ, আপনাদের শৈশব এইখানেই পুরাপুরি শেষ। “সরি এবাউট দ্যাট,” যেমনটা বলা হইতো ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়।

আপনারা হয়তো আর্থার সি. ক্লার্কের ‘চাইল্ডহুডস এন্ড’ উপন্যাসটা পড়সেন। সাইন্স ফিকশনের ফিল্ডে হাতেগোনা যেই কয়টা মাস্টারপিস আছে এইটা তার মধ্যে একটা। এই ফিল্ডের বাকিসব মাস্টারপিস আমার লেখা। ক্লার্কের উপন্যাসটাতে একটা কারেক্টার অনেক বিশাল ইভোল্যুশনারি চেঞ্জের মধ্য দিয়া যায়। বাচ্চারা তাদের বাপমায়ের চাইতে অনেক ডিফারেন্ট হইয়া পড়ে, অনেক কম ফিজিকাল, বেশি স্পিরিচুয়াল। তারপর একদিন তারা সবাই একটা অদ্ভূত আলোর স্তম্ভের মত কইরা পাক খাইতে খাইতে মহাবিশ্বের সাথে মিলায়া যায়, তাদের গন্তব্য অজানা। বইটা এইখানেই শেষ। আপনারা যারা এইখানে আছেন, আপনারা দেখতে অনেকটাই আপনাদের বাপমায়ের মতই, আর এই সম্ভাবনাও খুব কম যে আপনারা হাতে ডিপ্লোমা পাওয়ার সাথে সাথে আলো ছড়াইতে ছড়াইতে মহাকাশে উইড়া যাবেন। এরচাইতে অনেক বেশি সম্ভাবনা যে আপনারা বুফেলো অথবা রোচেস্টার বা ইস্ট কুয়োগ বা কোহোজে চইলা যাবেন।

আর ধারণা করি আপনাদের প্রত্যেকের চাওয়ার জিনিসগুলার মধ্যে অন্যতম হইলো টাকাপয়সা আর সত্যিকারের প্রেম। আমি বলতেসি কেমনে অনেক টাকা কামাইবেন: প্রচুর পরিশ্রম করেন। আমি বলতেসি কিভাবে প্রেম পাবেন: সুন্দর জামাকাপড় পরবেন আর সবসময় হাসিখুশি থাকবেন। আর লেটেস্ট সব গানগুলার লিরিক্স মুখস্থ রাখবেন।

আর কি এডভাইস দিতে পারি আমি? দানাদার খাবার খাবেন বেশি বেশি, শরীর ভালো থাকবে। আমার বাপ আমারে জীবনে একটাই এডভাইস দিসিলো: “কানের মধ্যে কিছু হান্দাবি না।” আপনার শরীরের সবচাইতে ছোট্ট হাড় আপনার কানে, বুঝছেন? আর আপনার ব্যালেন্সের সেন্সও। তো আপনি যদি আপনার কান নিয়া বেশি ফাইজলামি করেন, তাইলে শুধু যে বয়রা হইয়া যাবেন তাই না, এমনকি একটু পরপর উষ্টাও খাইতে পারেন। সুতরাং, কানগুলারে তাদের মত থাকতে দেন। তারা যেমন আছে ভালো আছে।

ওহ, আর কাউরে খুন কইরেন না। যদিও নিউ ইয়র্ক স্টেট এখন আর মৃত্যুদণ্ড দেয় না।

এই আরকি।

আরেকটা কাজ আপনি করতে পারেন। তা হইলো এইটা মাইনা নেয়া যে ঋতু আসলে চারটা না, ছয়টা। চার ঋতু নিয়া যত কবিতা আছে তা পৃথিবীর এই অঞ্চলে আইসা ভুল হইয়া দাঁড়ায়, এইজন্যই হয়তো আমরা সারক্ষণ এত ডিপ্রেসড হইয়া থাকি। মানে, বসন্তে ঠিক বসন্তের মত ফিল আসে না বেশিরভাগ সময়। নভেম্বরটাও হেমন্তের জন্য ঠিক মানায় না। ঋতুগুলার ব্যাপারে সত্য কথা আমি বলতেসি আপনাদের: বসন্ত হইসে মে আর জুন মাসে! মে আর জুনের চেয়ে বসন্ত ভাব আর কিসে আছে বলেন? গরমকাল হইলো জুলাই আর আগস্টে। তখন বিদিক গরম পড়ে, ঠিক কিনা? হেমন্ত হইসে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর। মিষ্টিকুমড়া দেখতেসেন? ঝরা পাতার স্তূপের ঘ্রাণ পান? এরপরে আসে একটা ঋতু যার নাম হইলো “লকিং”। তখন প্রকৃতি সবকিছু শাটডাউন কইরা ফেলে। নভেম্বর আর ডিসেম্বর মোটেই শীতকাল না। তারা হইলো লকিং। এরপরে আসে শীতকাল, জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি। ভাইরেভাই কি শীত! তারপরে কি আসে? বসন্ত না কিন্তু। তারপরে আসে আনলকিং। প্রকৃতি তখন আবার তার শাটার তুইলা দেয়। এছাড়া এপ্রিল আর কিইবা হইতে পারে?

আরেক টুকরা অপশনাল এডভাইস দেই: যদি কোথাও কোনোদিন আপনার কোনো স্পিচ দিতে হয়, তাইলে একটা জোক দিয়া শুরু করবেন, যদি আপনার জানা থাকে। বহু বছর ধইরা আমি দুনিয়ার সবচাইতে সেরা জোকটা খুঁজতেসি। আমার মনে হয় আমি বাইর করতে পারসি। আমি এইটা আপনাদের বলবো, তবে আপনাদের আমারে হেল্প করতে হবে। আমি যখন এমনে আমার হাতটা উঠাবো তখন আপনারা “না” বলবেন, ঠিকাসে? আমারে হতাশ কইরেন না।

আপনারা কি জানেন ক্রিমের দাম দুধের চেয়ে এত বেশি কেন?

অডিয়েন্স: না।

কারণ গরুরা ওই ছোট্ট বোতলগুলার উপরে চ্যাগায়া বসতে পছন্দ করে না। এইটা আমার জানা সবচাইতে সেরা জোক। এককালে যখন আমি শেনেকটেডিতে জেনেরাল ইলেক্ট্রিক কম্পানির হইয়া কাজ করতাম, তখন আমার মাঝে মাঝে কম্পানির অফিসারদের জন্য স্পিচ লেইখা দিতে হইতো। আমি একবার আমাদের ভাইস প্রেসিডেন্টের এক স্পিচে গরু আর ছোট্ট বোতলের এই জোকটা ঢুকায়া দিসিলাম। উনি স্পিচটা পড়তেসিলেন, আর এর আগে উনি কখনো এই জোক শুনেন নাই। সে হাসতে হাসতে পাগল হইয়া গেসিলো, শেষে নাক দিয়া রক্তটক্ত বের হইয়া বিদিক অবস্থা। পরে তারে ধইরা পোডিয়ামের বাইরে নিয়া যাওয়া লাগসিলো। পরদিন আমারে চাকরি দিয়া বাইর কইরা দেয়া হয়।

জোক কেমনে কাজ করে? প্রতিটা ভালো জোক আপনারে শুরুতেই চ্যালেঞ্জ করবে চিন্তা করতে। আমরা এমনই সহজ-সরল জন্তু। আমি যখন আপনাদের ক্রিমের কথা জিজ্ঞেস করলাম, তখন আপনাদের আর উপায়ই ছিল না। আপনারা একটা সেন্সিবল উত্তর খুঁজতে শুরু কইরা দিসিলেন।

একটা মুরগি কেন রাস্তা পার হইলো? দমকলকর্মীরা কেন লাল বেল্ট পরে? জর্জ ওয়াশিংটনরে কেন পাহাড়ের পাশে কবর দেয়া হইলো?

এবং দ্বিতীয় পার্টে জোকটা জানায়া দিবে যে কেউ আপনার বুদ্ধির দৌড় দেখতে আগ্রহী না, কেউ আপনার অত্যন্ত সেন্সিবল, সুন্দর উত্তরটা শুনতে আগ্রহী না। আপনার অনেক স্বস্তি লাগে এই জাইনা যে অবশেষে কেউ একজন আপনার উপর ইন্টেলিজেন্ট হওয়ার দাবি চাপায়ে দিতেসে না। আপনি আনন্দে হাইসা উঠেন।

ইন ফ্যাক্ট, আমি আজকের পুরা স্পিচটা এমনভাবে ডিজাইন করসি যাতে আপনারা যতটা মন চায় ভোদাই হইতে পারেন। কোনো চাপ নাই, কোনো পানিশমেন্ট নাই। আমি এমনকি আজকের এই অকেশনের জন্য একটা গানও বানায়া আনসি। এইটায় এখনও কোনো সুর নাই। তবে দেশে তো এখন কম্পোজারের কোনো অভাব নাই। কেউ না কেউ সুর বসায়া দিবেনে। লিরিক্সটা এইরকম:

খোদা হাফেয টিচারগণ, বিদায় নিউমোনিয়া।
যদি জানতে পারি পার্টি কোথায়,
জানাবো ফোন দিয়া।
তোমারে এতই ভালোবাসি, সোনিয়া,
তোমার কিন্যা দিব বিগোনিয়া।
তুমিও ভালোবাসো আমারে, বাসো না, সোনিয়া?

দেখসেন, আপনারা গেস করার চেষ্টা করতেসিলেন এরপরের ছন্দটা কি হবে।

আপনে কত বুদ্ধিমান তা দিয়া কারো কিছু আসে যায় না।

আমি এত হাসিঠাট্টা করতেসি কারণ আপনাদের জন্য আমার মায়া লাগতেসে। আমার আমাদের প্রত্যেকের জন্য এত্ত মায়া লাগে!

জীবন আবার অনেক জটিল হইয়া যাবে, এইসব শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। আর যখন আমাদের মাথার উপর দোযখ ভাইঙ্গা পড়বে তখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা মনে রাখা লাগবে তা হইলো আমরা আলাদা জেনারেশনের লোক না। যদিও কেউ কেউ আপনাদের অন্যরকম বুঝাইতে চাবে। এস্কিমো বা অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীদের চাইতে আমরা খুব বেশি আলাদা না। সময়ের দিক দিয়া আমরা সবাই একে অপরের এতই কাছাকাছি যে আমাদের সবার সবাইরে ভাই-বোন বইলা ভাবা উচিত। আমার অনেকগুলা পোলাপান, ঠিক কইরা বললে সাতজন। একটা নাস্তিকের পক্ষে খুববেশি বাচ্চা পয়দা কইরা ফেলসি। যখনই আমার পোলাপানরা আমার কাছে আইসা দুনিয়ারে গাইলায়, আমি বলি, “চুপ করো! আমি নিজেও কিছুই বুঝতেসি না। আমারে তোমাদের কি মনে হয়, মেথুসেলাহ? তোমাদের কি মনে হয় প্রতিদিনের নিউজ তোমাদের চেয়ে আমার শুনতে খুব ভাল্লাগে?” আমরা সবাই আসলে কমবেশি একটা একইরকমের অনিশ্চিত জীবন মোকাবেলা করতেসি।

যারা বয়সে একটু বড় তারা ছোটদের থিকা ঠিক কি চায়? তারা বেশিদিন টিইকা থাকার ক্রেডিট চায়। এবং প্রায়সময়ই, কল্পিত সব দুঃসময়ের কথা তারা টানে, যে তারা সেইসব সময় পার কইরা আসছে। যারা বয়সে ছোট তারা আবার বড়দের এই ক্রেডিট দেয়ার বেলায় অনেক কিপটা।

আর একটু ছোটরা বড়দের কাছ থিকা কি চায়? আমার মনে হয়, তারা সবচেয়ে বেশি চায় বড়দের কাছ থিকা একটু স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি যে তারা এখন পরিণত পুরুষ বা নারী হইয়া উঠসে। আর বড়রাও তাদের এই স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে ভয়ানকরকমের কিপটা।

সুতরাং, আমি এখন নিজ দায়িত্বে এইখানে প্রত্যেকটা গ্র‍্যাজুয়েটরে পরিণত পুরুষ ও নারী ঘোষণা করলাম। আজকের পর থিকা কেউ যেন তাদের বাচ্চাদের মত ট্রিট না করে। এবং তারাও যেন আর কোনোদিন বাচ্চাদের মত আচরণ না করে, কোনোদিনও না। এইটারে বলা যাইতে পারে একটা বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার স্বীকৃতি অনুষ্ঠান। যদিও এখন খুব দেরি হইয়া গেসে, তবু না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো। আমাদের জানামতে প্রত্যেকটা আদিম সভ্যতার এরকম একটা স্বীকৃতি অনুষ্ঠান ছিল বা আছে, যেইখানে শিশুদের একচ্ছত্রভাবে পরিণত নারী বা পুরুষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিছু কিছু ইহুদী কমুনিটিতে এখনও এই প্র‍াকটিসটা ধইরা রাখা হইসে। আর এতে তাদের অনেক লাভও হয়, আমার মনে হয়। কিন্তু আমাদের মত আল্ট্রা-মডার্ন, পুরাপুরি ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড সোসাইটিগুলা এইসব স্বীকৃতি অনুষ্ঠানরে বাদ দেয়াই ভালো মনে করসে, যদি না আপনি ১৬ বছর হইলে পর পাওয়া ড্রাইভার্স লাইসেন্সটারে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার স্বীকৃতি মনে করেন। কিন্তু তাইলে একটা ঝামেলা আছে: যেকোনো জাজ যেকোনো সময় আপনার বয়ঃসন্ধি কাইড়া নিতে পারবে, আপনি আমার মত বুড়া হইয়া যাওয়ার পরও।

আমেরিকান আর ইউরোপিয়ান ছেলেদের জীবনের আরেকটা ঘটনা এই বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে, তা হইলো যুদ্ধে যাওয়া। একটা ছেলে যদি যুদ্ধ হইতে ঘরে ফেরে, বিশেষত যদি অনেক সিরিয়াস ক্ষত নিয়া ফেরে, তখন সবাই এককথায় মাইনা নেয়: এইযে একজন সত্যিকারের পুরুষ। আমি যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি হইতে ইন্ডিয়ানোপলিসে নিজের ঘরে ফেরত আসলাম, আমার এক চাচা আমারে বলসিলো, “আরেব্বাবা, তুমি তো দেখি এক্কেবারে বেটামানুষ হইয়া গেসো!” আমার মন চাইসিলো হালার গলা টিইপা মাইরা ফেলতে। যদি মারতাম, তাইলে সে হইতো আমার হাতে খুন হওয়া প্রথম জার্মান। যুদ্ধে যাওয়ার আগেও আমি বেটামানুষই ছিলাম, কিন্তু এই শালার-বেটা তা মইরা গেলেও স্বীকার করতো না।

আমার মনে হয় যে আমাদের সোসাইটিতে যে বয়ঃসন্ধি অনুষ্ঠান বাদ দিয়া দেয়াটা একটা ধান্ধা, খুব চতুরভাবে এই বুদ্ধি করা হইসে যাতে জুয়ান পোলাপান যুদ্ধে যাইতে উদগ্রীব হইয়া পড়ে, নিজেরে পুরুষ প্রমাণ করতে। সেই যুদ্ধ যতই বিচ্ছিরি আর অন্যায্য হোক না কেন। ন্যায্য যুদ্ধও হয় অবশ্য। এই যেমন আমি যেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলাম সেইটা ছিল একটা ন্যায্য যুদ্ধ।

কিন্তু একটা মেয়ে কখন স্রেফ একটা মেয়ে থিকা নারীতে পরিণত হয়, তার সমস্ত অধিকার আর সুবিধাসহ? এইটার উত্তর আমরা সবাই হাড়ে হাড়ে জানি: যখন সে বিয়া কইরা একটা বাচ্চা পয়দা করে। যদি তার প্রথম বাচ্চাটা বিয়া ছাড়াই হয়, তাইলে তখনও সে ছোট্ট মেয়েই থাকে। এরচাইতে সহজ, স্বাভাবিক আর অবভিয়াস আর কি হইতে পারে? অবশ্য আমাদের আজকের সোসাইটিতে এরচাইতে অন্যায়, ইরিলিভেন্ট আর স্রেফ সোজা বলদামি আর কি হইতে পারে?

আমার মনে হয়, আমাদের নিজেদের সেফটির তাগিদেই আবার বয়ঃসন্ধি অনুষ্ঠানগুলা ফিরায়া আনা দরকার।

আমি শুধু যে আপনাদের পুরুষ আর নারী ঘোষণা করতেসি তাই না। আমার ভিতরে সঞ্চিত সকল ক্ষমতার দোহাইয়ে আমি আপনাদের ক্লার্ক ঘোষণা করতেসি। আপনারা বেশিরভাগই জানেন, আমি শিওর, যে ক্লার্ক নামে সক্কল সাদা মানুষ ইংল্যান্ডের কোনো দ্বীপ হইতে আসছে এবং তাদের বিশেষত্ব ছিল তারা লিখতে আর পড়তে জানতো। আর ক্লার্ক নামে কোনো কালা মানুষ দেখলে বুঝবেন তার কোনো পূর্বপুরুষরে কোনো মজুরি ছাড়া, বেসিক কোনো অধিকার ছাড়া কামলা খাটতে বাধ্য করসিলো ক্লার্ক নামে কোনো সাদা বেটা। এই ক্লার্করা বড়ই মজার এক ফ্যামিলি। আপনারা গ্র‍্যাজুয়েটরা নিশ্চয়ই নানান বিষয়ে স্পেশাল স্কিল অর্জন করসেন। কিন্তু আপনারা আপনাদের জীবনের গত ষোল বা তারও বেশি বছর পার করসেন লেখতে আর পড়তে শিখতে। যারা এই দুইটা কাজ করতে পারে, এবং আপনাদের মত ভালোমত পারে, তারা সত্যিই মিরাকল, এবং এইটাই আমারে ভাবতে বাধ্য করে যে হয়তো আমরা আসলেই সভ্য জাতি। লিখতে আর পড়তে শেখা খুবই কঠিন কাজ। আজীবন লাইগা যায় লেখাপড়া শিখতে। আমরা আমাদের স্কুলটিচারদের খুব ঝাড়ি দেই স্টুডেন্টদের লেখাপড়ার স্কোর নিচু থাকলে, আমরা এমন ভান করি যেন এইটা দুনিয়ার সবচাইতে সোজা কাজ: কাউরে লিখতে আর পড়তে শিখানো। কখনো চেষ্টা কইরা দেইখেন, দেখবেন যে এইটা প্রায় অসম্ভব।

এখন আর ক্লার্ক হইয়া কি লাভ, যেইখানে সবকিছু কম্পিউটার, মুভি আর টেলিভিশনের হাতে চইলা গেসে? ক্লার্ক হওয়া পুরাই একটা মানবিক প্রক্রিয়া, সুতরাং তা পবিত্র। মেশিনারি তা না। ক্লার্ক হওয়া হইসে এই গ্রহের সবচাইতে গভীর এবং এফেক্টিভ ধ্যানপ্রক্রিয়া। এইটা যেকোনো উঁচা পাহাড়ে ধ্যানরত হিন্দু সাধকেরও স্বপ্নের নাগালের বাইরে। কেন? কারণ, যেহেতু তারা পড়তে পারে, এই পড়ার মাধ্যমে তারা দুনিয়ার ইতিহাসের সবচাইতে ব্রিলিয়ান্ট আর ইন্টেরেস্টিং কিছু মানুষের মাথার মধ্য দিয়া ঘুইরা আসতে পারে। ক্লার্করা যখন এই সাধনা করে, যদি তাদের নিজেদের বোধবুদ্ধি খুব নিম্নমানেরও হয়, তারা তা করে ফেরেশতাদের চিন্তার মাধ্যমে। এরচাইতে পবিত্র আর কি হইতে পারে?

যাইহোক, ক্লার্ক আর বয়ঃসন্ধি নিয়া বহুত গ্যাজায়া ফেলসি। এখন স্রেফ বাকি আছে দুইটা মেজর সাবজেক্ট: একাকিত্ব আর বোরডম। আমাদের যার বয়স এইখানে যত হোক না কেন, আমাদের জীবনের বাকি অংশটুকু কাইটা যাবে একাকিত্বে আর একঘেয়েমিতে।

আমরা এত একলা কারণ আমাদের যথেষ্ট বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয় নাই। মানুষের একটা স্টেবল, সমমনা পঞ্চাশজন বা তারও বেশি মানুষে ভর্তি বিশাল বড় একান্নবর্তী পরিবারে থাকার কথা।

আপনাদের ক্লাসের রিপ্রেজেনটেটিভ এই দেশে বিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলা ভাইঙ্গা যাওয়া নিয়া খুব শোক প্রকাশ করলেন। বিয়া ভাঙতেসে কারণ আমাদের পরিবারগুলা খুব বেশি ছোট। একটা পুরুষ একটা নারীর জন্য গোটা সমাজের চাহিদা পূরণ করতে পারে না, একটা নারীও একটা পুরুষের জম্য গোটা সমাজের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তবু আমরা চেষ্টা করি, আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই যে আমরা প্রায় সবাই শেষমেষ ভাইঙ্গা পড়ি।

তো আমার উপদেশ হইসে এইখানে আপনারা সবাই নানান পদের অর্গানাইজেশনে ঢুকেন, তা যতটাই উদ্ভট হোক না কেন, স্রেফ জীবনে আরো কয়টা মানুষ আনার জন্য। যদি সেই মানুষগুলা আবালও হয় তাতেও কোনো সমস্যা নাই। মানুষ হইলেই হইলো। এই ক্ষেত্রে কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ান্টিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আর যদি বলি বোরডমের কথা: ফ্রেডরিখ উইলহেম নিৎশে, একজন জার্মান ফিলোসফার যে আজকে থিকা আটাত্তর বছর আগে মইরা গেসে, সে একবার বলসিলো: “বোরডমের বিরুদ্ধে দেবতারাও বৃথাই যুদ্ধ করে।” বোরড আমাদের হইতেই হবে। এইটা জীবনেরই অংশ। এইটা মাইনা নিতে শিখেন, না শিখলে আপনারা তা হইতে পারবেন না যা আজকে আমি আপনাদের ঘোষণা করসি: ম্যাচিউরড নারী ও পুরুষ।

আমি আজকে শেষ করবো এইটা বইলা যে মিডিয়া, যার মেইন কাজই হইসে সবকিছু জানা আর বোঝা, তাদের কাছে প্রায়ই মনে হয় ইয়াং জেনারেশনের পোলাপান অনেক উদাসীন (বিশেষত যখন পণ্ডিত আর কমেন্টেটররা বলার বা লেখার মত আর কিছু খুঁইজা পায় না)। এই নতুন জেনারেশনের গ্র‍্যাজুয়েটরা অমুক ভিটামিন খাইতে ব্যর্থ হইসে, তমুক মিনারেল খায় নাই, হয়তো তাদের আয়রনের অভাব। তাদের রক্ত ঠাণ্ডা হইয়া গেসে। তাদের গেরিটোল দরকার। ওয়েল, সেই রক্তগরম জেনারেশনের একজন হিসেবে, চউক্ষে এখনও সেই চমক, পায়ে এখনও সেই জোশ নিয়া আপনাদের বলতেসি, আমাদের সবসময় এত উন্মত্ত কইরা রাখতো স্রেফ একটাই জিনিস: ঘৃণা। আমার সারাটা জীবন আমি ঘৃণা করার মত কাউরে না কাউরে পাইসি। হিটলার হইতে শুরু কইরা নিক্সন, এমন না যে দুইজনের বদমাইশির লেভেল সমান। এইটা আসলে হয়তো একটা ট্র‍্যাজেডি, যে মানুষ ঘৃণা হইতে এত এনার্জি আর জোশ পাইতে পারে। আপনার যদি দশ ফুট লম্বা ফিল করতে মন চায়, যদি ফিল করতে মন চায় আপনি একশ মাইল দৌড়াইতে পারবেন একটুও না থাইমা, তাইলে ঘৃণা পিওর কোকেইনরেও অনায়াসে হারায়া দিতে পারবে। হিটলার একটা আধমরা, দেউলিয়া, ভুখা দেশরে ফের দাঁড় করায়া ফেলসিলো কেবল ঘৃণার ক্ষমতায়। আর কিচ্ছু না। শুধু ভাবেন একবার।

তো আমার মনে হয় আজকের ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার বেশিরভাগ ইয়াং পোলাপান আসলে উদাসীন না, এমনটা স্রেফ তাদের মনে হয় যারা ঘৃণা হইতে ব্যাপক জোশ পাইয়া পাইয়া অভ্যস্ত। আপনারা যারা আজকে গ্র‍্যাজুয়েট করতেসেন, আপনাদের প্রজন্ম আইলসা না, বেখেয়ালে না, উদাসীনও না। আপনারা কেবল ঘৃণা ছাড়া জীবন চালানোর চেষ্টা করতেসেন। আপনাদের ডায়েট হইতে মিসিং ভিটামিন বা মিনারেল বা যাইহোক, সেইটা হইলো ঘৃণা। কারণ আপনারা হয়তো টের পাইসেন যে লং রানে ঘৃণা ঠিক সায়ানাইডের মতই উপকারী।

এবং আপনারা ঠিকই ধরসেন। আপনারা অনেক অসাধারণ একটা কাজ করতেসেন, আমি আপনাদের জন্য দোয়া করি।

বইটা কিনতে পারেন এই লিংকে ক্লিক কইরা:
https://www.facebook.com/BPInterviewSeries/posts/675460593900686

The following two tabs change content below.
Avatar photo

মাহীন হক

মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →