Main menu

বইয়ের লেখা: “মিডিয়া ও পলিটিক্স নিয়া কয়েকটা আলাপ”

[২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে, পুরান ঢাকায়, “বিএনপি কর্মী” হিসাবে সন্দেহ হওয়ার কারণে, ছাত্রলীগের কর্মী-নেতাদের হাতে, টিভি-ক্যামেরার সামনে, বিশ্বজিৎ দাস খুন হওয়ার সময় থিকা ২০২১ সালে ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদী’র বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে মুভমেন্টের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মিডিয়া, কালচার ও পলিটিক্স নিয়া লেখা কিছু জিনিস নিয়া ছাপা হইতেছে এই বই – “মিডিয়া ও পলিটিক্স নিয়া কয়েকটা আলাপ”।

এই বইয়ের তিনটা লেখা এইখানে রাখা হইলো। ]

হোয়াই বিশ্বজিৎ? (২০১২)

ওইদিন বিএনপি’র অবরোধে তো আরো ২/৩ জন মারা গেছেন! বিশ্বজিৎরে নিয়া এতো কথা, কবিতা, আলাপ-আলোচনা কেন? – এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিছেন কিনা আমার জানা নাই। আমার কাছে, বিশ্বজিৎ এর খুন হওয়াটা অবশ্যই সিগনিফিকেন্ট একটা ঘটনা, কারণ এই একটা মরার সিন আপনি বাংলাদেশে প্রথম টিভিতে দেখতে পাইতেছেন।

এইটা সিনেমার বানানো কোন সিন না, ইটস রিয়েল। কয়েকজন মানুষ চাপাতি দিয়া কোপাইয়া একজনরে মাইরা ফেলতেছে। ইমেজটারে আপনি আর আলাদা করতে পারতেছেন না। এইটা আপনারে চাইপা ধরছে; টিভিতে নায়কের ভঙ্গি ফলো কইরা আপনি কথা বলেন, নায়িকার প্রগলভতারে আপনি ট্রান্সমিট করেন ডেইলি লাইফে। এখন সন্দেহ হয়, এই যে মৃত্যুদৃশ্য সেও তো আপনার জীবনে চইলা আসতে পারে!

এই যে ইমেজের ফ্রাস্টেশন, এইটা একদিক দিয়া কবি-সাহিত্যিকদের আপ্লুত কইরা থাকতে পারে। যেমন, নূর হোসেনের ক্ষেত্রে তার ফটোগ্রাফ। এই ফটোগ্রাফ না থাকলে, নূর হোসেনরে নিয়া কবিতা লিখাটা টাফ হইতো, শামসুর রাহমানের এবং অন্যদের। কবিতাগুলা বা আলাপ-আলোচনাগুলা কেমন হইছে, এর চাইতে কেন পসিবল হয়া উঠছে, সেইটা নিয়াই বলতে চাইতেছি আমি। আই হ্যাভ স্ট্রং ডাউট, টিভিতে প্রচারিত হওয়া ছাড়া বিশ্বজিৎ এর খুনটা এতোটা ইনটেনস হইতে পারতো কিনা।

আলাপ-আলোচনায় তো অবশ্যই থাকতো, কারণ বিশ্বজিৎ এর অরাজনৈতিক পরিচয়। আমি আওয়ামী লীগ বিএনপি করি না, এরপরেও আমি মারা যাইতে পারি। এই চিন্তারও একটা বড় কন্ট্রিবিউশন আছে। সে যদি বিএনপি’র কর্মী হইতো বা আওয়ামীলীগে’র নিশ্চুপ সমর্থক, তার প্রতি এই যে ‘অরাজনৈতিক’ (এই শব্দ নিয়া আমারও সন্দেহ আছে) দরদ পলিটিক্যালিই থাকা সম্ভব হইতো না। এইক্ষেত্রে, হিন্দু-মুসলমান তেমন কোন টেনশন তৈরি করে না।

কিন্তু এই দুইটা সিগনিফিকেন্সরে বাদ দিলেও, এইটা তো একটা খুনের ঘটনা। দর্শক/রিডার হিসাবে টিভি-নিউজের এবং পত্রিকার-খবরের আপনার রোলটা কি? সবচে’ প্রথমে আপনি কি তারে ইগনোরই করতে চাইবেন? তারপর যখন পারবেন না তখন দোষী কে, তারে খুঁজতে যাইবেন? কাউরে হিরো বানানোর তাগিদটা খুব ভিতর থিকা ফিল করবেন, অনেক দেরিতে হইলেও কোন বিশ্লেষণে হয়তো কিছুটা রাজি হইতে পারবেন যে, এইটা আসলে কিলারস ইনস্টিংক্ট অথবা সমাজ-ব্যবস্থার দুর্বলতা।…

কালাচারাল পলিটিকস নিয়া (২০১৩)

এই যে ঘটনাগুলি – শাহাবাগ, মতিঝিল; মুক্তিযুদ্ধ, ইসলাম; ব্লগ, হেফাজত… এই বিষয়গুলা যে বাইনারি অপজিট না এইটা বাংলাদেশে এখন যে কারোরই বোঝার কথা। তারপরও বলা, কারণ পলিটিক্যালি এমনভাবে হাজির আছে যে, সেইটা মনে হইলেও কাউরে দোষ দেয়া সম্ভব না। কালাচারাল ক্রাইসিসটারে পলিটিক্যালি ব্যবহার করতে গিয়াই এই ঘটনা ঘটছে। তার মানে এই না যে, এইখানে কোন কালচারাল ক্রাইসিস নাই। বরং এর পলিটিক্যাল সমাধান অনেকে এইভাবেই করতে চাইতেছেন! জোর কইরা সাংস্কৃতিক অনৈক্যগুলারে চাপা দেয়ার এই যে লিবারাল চেষ্টা, এইটাই পলিটিক্যাল ফান্ডামেন্টালিজমরে আরো জোরালোভাবে সামনে নিয়া আসতেছে।

অনেক ধরণের সংকট এবং সম্ভাবনাই একটা সংস্কৃতির ভিতরে থাকে। যেমন, এখনকার বাংলাদেশের কথা যদি ধরেন, আপনি বাঙালি হইলে মুসলমান হইতে পারবেন না, হয় নাস্তিক (পড়েন, ৬০ এর কমিউনিস্ট) হইবেন, নাইলে হিন্দু (ইন্ডিয়ার সার্পোটার); এইটারে বলা যাইতে পারে, সিম্বলিক ট্রুথ-এর পূজারী। আবার, আপনি মুসলমান হইলে বাঙালি হইতে পারবেন না, আপনি হয় আফগানিস্তান থিকা আইছেন, নাইলে পাকিস্তানে যাইবার পাঁয়তারা করতেছেন। এইটারে বলা যাইতে পারে ইম্পেরিক্যাল ট্রুথ-এর মওলানা। এইভাবে কালচারাল ডিফারন্সিয়েশনের জায়গাটা ছড়াইতেছে।

যেন এই দুইটা সংস্কৃতি আসলে দুইটা ইকনোমিক ক্লাশ; শ্রেণী-সংগ্রামের ঘটনা! অথচ ঘটনাটা মোটেই তা না। একটা ব্যক্তিগত উদাহারণ দেই: একটা কোম্পানির বার্ষিক প্রোগ্রামে গায়ক হিসাবে কারে নিয়া আসা যায়, এই সিলেকশন যখন চলতেছে; তখন মালিক তার স্ত্রীরেই কইলেন ঠিক করতে; উনি সাজেস্ট করলেন, মনির খান-এর নাম; ওই যে উনার বিখ্যাত একটা গান আছে, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে…’ ওইটার কথাও কইলেন। বউ-প্রেমের একটা দুর্দান্ত গান। জামাই এবং বউ দুইজনের দিক থিকাই। অথচ এর সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা এইভাবেই সম্ভব এবং সম্ভবত মিউজিক ভিডিওটাও এইরকমই যে, গ্রাম থিকা জামাই শহরে/বিদেশে চাকরি করতে আসছে আর গ্রাম থিকা বউ মাইগ্রেটেড জামাইয়ের কাছে চিঠি লিখতেছে; মানে গ্রাম এবং শহর – এই ইউটোপিয়ার ভিতর আটকাইয়া ফেলা সম্ভব এই গানটারে; কিন্তু এইক্ষেত্রে গ্রাম বা শহর মুখ্য না, বরং জামাই এবং বউ এবং তাদের নৈতিক প্রেমের বিজয়ই মুখ্য এইখানে। এই গানরে হয়তো তাদেরই কর্মচারী যুবকও মোবাইলে জায়গা দেন না হেডফোনে শোনার লাইগা, যার বউ থাকে কাছের মফস্বলে।

মানে, গ্রাম হোক বা শহর, মাইগ্রেটেড শ্রমিকের বউ বা ব্যবসায়ীর স্ত্রী, একটা কালচারাল গ্রুপের কাছে এই গান সমানভাবে তার আবেগ নিয়া হাজির থাকতে পারে, নট নেসেসারিলি যে তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ঐক্য থাকতে হবে। কারণ, আপনি যেই বাপ-মা মরা’রে মাদ্রাসায় দাখিল হইছে বইলা ভয় করতেছেন, সে আসলে লাদেন হওয়ার ড্রিম নিয়া ইংলিশ মিডিয়াম থিকাই আসতেছে। আর আপনি পেরেশান হইতেছেন, কারণ কালাচারাল স্ট্রাগলটারে আপনি শ্রেণী-সংগ্রাম ছাড়া আর অন্য কোনকিছু দিয়া ব্যাখ্যা করতে পারেন না।

কিন্তু এই যে কালাচারাল ডিফারেন্সেস, প্রচলিত রাজনীতি অবশ্যই এরে অ্যামপ্লিফাই করার সামর্থ্য রাখে এইভাবে যে, যেন এর আল্টিমেট সমাধান সম্ভব – ইসলামি জেহাদ কিংবা মিলিটারি ক্যু’র মাধ্যমে। আসলে এই দুইটা অপশনও একই। এক ধরণের অথরিটিরে তৈরি করা, মাস-পিপল এর নাম দিয়া, সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্বররে বোবা বানাইয়া দেয়া। অথচ একটা টেনডেন্সি দিয়া আরেকটা টেনডেন্সিরে বাতিল করার ভিতরে এর সমাধান নাই, বরং কালচারালি আমরা কিভাবে বৈপরীত্যগুলারে অ্যাকোমোডেড করতেছি, তার উপরেই এর সমাধান নির্ভর করে। এইটা আবশ্যিকভাবেই একটা বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা, এখন পর্যন্ত যার উত্তর করতে আমরা ক্রমাগত ব্যর্থ হইতেছি। ব্যর্থ কারণ, যেই গ্রাউন্ডের উপর এই কালচারাল ডিফারেন্সগুলা দাঁড়াইয়া আছে, সেই জায়গাগুলারে অ্যাকোমোডেড করার সামর্থ্য আমাদের চিন্তার ভিতর তৈরি করতে পারতেছি না।

অ্যাজ অ্যান পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি বাঙালি মুসলমানই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারারে রিপ্রেজেন্ট করে; কিন্তু আমাদের চিন্তার ভিতরে যতক্ষণ পর্যণ্ত আমরা ‘বাঙালি’ এবং ‘মুসলমান’ শব্দ দুইটারে তাদের পুরানা যে অর্থ তার বাইরে গিয়া বর্তমান বাস্তবতার ভিতর তাদেরকে আনফোল্ড করতে না পারতেছি, ততক্ষণ পর্যণ্ত এই বাস্তবতারে সে ডিফাইন করার সামর্থ্য তৈরি করতে পারতেছে না। মুসোলিনির ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা দিয়া যারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদরে বুঝতে চাইতেছেন তারা আরেকটা ফ্যাসিস্ট অথরিটিরেই জায়গা করে দিতেছেন। আর এই কারণেই দেখবেন, আপনি বলার ভিতর দিয়া যতোটা না বলতে পারতেছেন তার চাইতে আপনার না-বলা দিয়াই বরং আপনার বলাটা ডিফাইনড হইতেছে! একটা ঘোরটোপের ভিতরই আটকাইয়া যাইতেছে কথাগুলা সবসময়।

এইটা একটা দীর্ঘ, ক্লান্তিকর আলাপ; কেননা আমরা বাস করতেছি শব্দের সীমিত অর্থের কারাগারের ভিতর। আমরা চাই যেন ভেদাভেদ না থাকুক। তুমি যাতে আমি হই অথবা আমি যাতে তুমি হও। এইটা যদি সম্ভবও হয়, এইটা কি আমরা সত্যিকার অর্থেই চাই?

চৈত্র ২৪, ১৪১৯; এপ্রিল ৭, ২০১৩

গার্মেন্টসের গ্রাম (২০১৩)

সাভারের ঘটনা ব্যক্তি-মানুষ হিসাবে ডিল করাটা খুবই অসহায় একটা বিষয়; এক একটা জীবন, এক একটা মরণ কি রকম যে, এই নিয়া কোন কথা-বলা আসলেই যে সম্ভব না তা না, কিন্তু সেইটা জীবন এবং মৃত্যু নিয়া একটা আলাপ…

তার বাইরে এই যে টিভিতে পত্রিকায় ফেসবুকে সারাক্ষণ একটা মাতম, দমবন্ধ করা অবস্থা; কি করবো আমরা? এই ধরণের একটা বিভীষিকা; যেইখানে পুরান-অবস্থা বাতিল হয়া যাইতেছে এবং সামনে নতুন বইলা নির্দিষ্ট কিছু নাই। এইরকম একটা অবস্থায় ‘ভবন’ বাদেও চিন্তার জায়গায় আরো কিছু প্রশ্নের ফাটল দেখা দিছে। খুব মাইনর যদিও, তারপরও বইলা রাখা যাইতে পারে।

ফার্স্টে, এই ঘটনার বিবেচনায় যে নৈতিক সাজেশনগুলা আসতেছে, সেই জায়গাটায়। এই সাজেশনগুলার প্যার্টানগুলা বিচ্ছিন্ন, মানে উনারা যে শলা-পরামর্শ কইরা এই একই ধরণের সাজেশনগুলা দিতেছেন, তা না; বরং বিভিন্ন উপায়ে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে, বিভিন্ন লোকেশন থিকা অনেকে একটা জায়গাতেই আসতেছেন, সেইটা হইলো – ‘তোমরা গ্রাম থিকা আসছো, গ্রামে ফিরা যাও’; কয়েকটা উদাহারণ দেই।

গার্মেন্টসে যারা কাজ করেন সেইসব নারীদের নিয়া লেখা দুইটাতে কবিতাতে একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমারে ট্যাগ করছিলেন*, যদিও অনেক আগের লেখা, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রিলেভেন্ট। কবিতার নৈতিক সাজেশনের জায়গাটাতে আমি চমকাইছি, কারণ ফর্মের দিক থিকা কবিতা খারাপ/ভালো যা-ই হোক, কবি তার ‘গ্রাম-ভাবনা’ গার্মেন্টেসের নারীর উপর চাপাইছেন এইভাবে যে, শহরে থাকতে থাকতে গ্রামের নদী, আষাঢ়ের ঢল, অচেনা মুকুল শে ভুইলা যাইতেছে। নট দ্যাট যে শে এই শহরের জীবন পছন্দ করে, কিন্তু এইখানে তারে নানান কিছু চিন্তা করা লাগে, বিবেচনা করা লাগে। এইটা হয়তো মিথ্যা না, কিন্তু এর বিপরীতে তার সম্ভাবনা হিসাবে দাঁড়াইয়া থাকে খালি চিন্তাহীন সরল প্রাকৃতিক গ্রাম, যেইটা হয়তো একটা বেটার অপশন হইতে পারে; যেইখানে ‘নারীর জীবন’ আছে এবং হয়তো সিঁড়ি’র ধুলায় বইসা দুপুরের খাবার খাইতে হইতো না। মানে, গ্রামরে গ্লোরিফাই করার একটা ব্যাপার আছে এবং সেইটা যতোটা না গার্মেন্টেসের নারীর বাসনা, তার চাইতে বেশি কবিরই ডিজায়ার।

আমরা যারা গ্রাম থিকা, মফস্বল থিকা শহরে আসছি আমাদের গ্রাম-আকাংখা যে নাই তা না; একজন গার্মেন্টেসের নারী’র যেইরকম আছে, বেসরকারি অফিসে যারা কাজ-কাম করেন তাদেরও আছে। কিন্তু সেইটা নিয়া কবিতা লিখলে দুইজনের ক্ষেত্রে একই অর্থ দাঁড়ায় না। যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্য বেশি, তাদের জন্য এইটা ‘নস্টালজিয়া’ (কি সুন্দর শব্দটা!) আর তার বাইরে যারা ঢাকা শহরে বস্তিতে থাকেন, গার্মেন্টেসে কাজ করেন নস্টালজিয়ার পাশাপাশি তাদের পক্ষে এইটা একটা বাস্তব সাজেশন হিসাবেও নেয়া সম্ভব। কারণ তারা চাষবাস করতে পারেন কোন লজ্জা-শরম ছাড়াই, হয়তো মাছ ধরতে পারেন, তাদের ইন্টারনেট কানেকশন লাগে না, এইরকম।

এইরকম গ্রামের প্রেম শুধুমাত্র এই কবিতা না, আরো অন্যান্য জায়গায় আমি দেখছি। যেমন, একটা জায়গায়, অনলাইনে (ফেসবুকেই হয়তো) বলা হইতেছে যে, গ্রামে গেলে হয়তো না-খাইয়া মারা যাইতি রে বইন, এখন ত জানটাই গেল! খুবই গভীর আবেগ থিকা বলা কথা এইগুলা। তাদের আবেগের প্রতি আমার কোন অশ্রদ্ধা নাই। কিন্তু এই গ্রাম খালি একটা এস্কেইপ পয়েন্ট না, বরং ভয়েসলেস যে জনগোষ্ঠী তারে আরো দূরে সইরা যাইতেও বলা একভাবে। বস্তিগুলা যেইরকম অদৃশ্য শহরের ভিতর, ইমাজিনারি রিয়ালিটি; গ্রাম সেইখানে এক ধরণের ইম্পসিবিলিটি।

আবার ধরেন এইরকমের চিন্তা-ভাবনারও দেখা পাওয়া যায়, যেইখানে কথা হইলো যে, শহরের চাল-চলন, মোবাইল, মেকাপ এইসবকিছুর লোভেই তাদের জীবনটা গেল। উইমেন এমপাওয়ামেন্টের প্রতি ক্রিটিক্যাল হইলেও এই ধরণের নৈতিকতার প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য আসলে একটা চোখ বন্ধ রাখাটা দরকার। এই অবস্থারই ক্রম এবং চূড়ান্ত দশা হইলো যে, এইটা আল্লার গজব! এই আল্লার গজব থিকা বাঁচার উপায় হিসাবে সবসময় সামনে আসে যে, ‘গ্রামে ফিরা যাও এবং ঘরে ফিরা যাও!’ যারা এইটা বলতেছেন এবং না-বইলাও ইনডিকেট করতে পারতেছেন, তারা অপশন হিসাবে এইটারে মাস্ট কইরা তুলতেছেন কিনা – এই প্রশ্নটা বিবেচনা করতে পারেন।

সেকেন্ড কথা হইতেছে, এর বিপরীতে পুঁজি’র প্রতি বিদ্বেষ এইরকম একটা চরম জায়গায় পৌঁছাইছে যেন আদিম সাম্যবাদী সমাজেই আমরা ফিরা যাইতে চাই! যেইখানে পুঁজি নাই, করাখানা নাই, টাকা-পয়সা নাই, এসি নাই, গাড়ি নাই, প্লেইন নাই (ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন থাকতে পারে হয়তো)… এইরকম একটা ব্যাপার। যেইটা এই ‘গ্রাম-ভাবনা’রই এক ধরণের পলিটিক্যাল এক্সটেনশন। পুঁজি শোষণ করে, পুঁজি খারাপ; এইজন্য পুঁজি’র বাইরে চইলা গেলেন নির্বাণ পাওয়া যাবে – এইটা পুঁজি’র চিন্তারই একটা এক্সটেনশন।

আর বড় পুঁজির জন্য শ্রম-শোষণ যে এখন আর জরুরি ব্যাপার না, ইউরোপ-আম্রিকা’র অর্থনৈতিক অবস্থা দেইখা এইটা বুঝতে পারা দরকার। মানে, পুঁজির জন্য যেই অপশন আছে, শ্রমের জন্য সেই অপশন বলতে গেলে নাই। পুঁজি মিনিমাম শ্রম দিয়াই নিজেরে মাল্টিপ্লাই করতে পারে এখন। এইজন্য পুঁজিরেই মানবিক করার আহ্ববান আছে। সে যাতে লাভ একটু কম করে, লোভ একটু কম করে। কিন্তু কেন সে এইটা করবে? মাল্টি-ন্যাশনাল পুঁজির যত অপশন আছে লোকাল পুঁজির অপশন তার চাইতে কম এবং শুধুমাত্র আরো বেশি মুনাফা করার মধ্যে দিয়াই সে টিইকা থাকতে পারে। এইটারে রেগুলেট করবে কে, এবং কিভাবে?

এইক্ষেত্রে রাষ্ট্র কখনোই একটা রেগুলেটারি এজেন্সি হিসাবে কাজ করতে পারে নাই। সব সময় পুঁজির সহযোগী শক্তিই ছিল। গ্লোবাল লিবারাল ক্যাপিটালিজমের সময়ে তার সেই ক্ষমতা তার আছে কিনা সেইটা ভাবার বিষয়। মানে, পুঁজির এই সামগ্রিকতারে আমরা কেমনে মোকাবেলা করবো, সেইটার কোন মডেল নাই। বা অপশনগুলিরে এক্সপ্লোর করতে চাইতেছি না আর আমরা যার ফলে সেই শূন্যস্থানটা ফিল-আপ হইতেছে না, বরং এক্সপান্ড হইতেছে আরো; আরো আরো কল্পনার ভিতর, আমাদের গ্রাম-ভাবনার ভিতর।

* কবিতাটার লিংক আনফরচুনেটলি আমি হারায়া ফেলছি, কিন্তু এইরকম কবিতার নমুনা খুঁজলে কিছু পাওয়া যাওয়ার কথা…

The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →