Main menu

ফোরো ফারোখজাদের কবিতা ২

লেটার অন

একদিন আমার মউত আসবে
হতে পারে এটা উজ্জ্বল, বসন্তের কোন ভোর
হতে পারে দূরবর্তী শীতের কোন সইন্ধ্যা
অথবা খুব সম্ভবত কুয়াশার,
বা তুষারপড়া গুমোট কোন রাইত

ঐদিন বিষণ্ন,
ঝলমল অথবা মেঘলাও হতে পারে, তবুও
এটা হবে বাকিসব দিনের মতন
একটা ফাঁপা দিন
ফিউচারের একটা মিথ্যা রচনা
অতীতের একটা পিকচার

ঐ দিন,
অন্ধকার গুহার মতন হবে আমার চোখ
ঠান্ডা মার্বেলের মতন হবে আমার ফেইস
আর আমারে নেয়া হবে
একটা চটজলদির ঘুমের জন্যে
আমার রঙিন সব স্বপ্ন পিছনে ফেলি

আমার হাতগুলা ফ্যাকাশে হয়ে যাবে
আমার কাব্যিকতা খাঁচা ছাড়ি পলাবে
আমার রূহ তার শেষ লাইনের কম্পনেই হারায় যাবে
আর তারপর, সেখানে না থাকবে কোন দুঃখ, ব্যথা আর চোট

এই দুনিয়া,
একনাগাড়ে আমার নাম ধরি ডাকবে
এইভাবেই তারা পৌঁছাবে আমারে কবরে রাখতে
ওহ, বেবাক রাইতে সম্ভবত আমার লাভার যারা
কিছু ফুল রাখবে আমার কবরের উপ্রে

তারপর,
আমার দুনিয়ার গাঢ় ছায়াটা
হঠাৎ করেই দূরে সরি যাবে
আর ভরা চান্নি পসরে, এক রাইতে
অপরিচিতজনেরা পড়বে আমার কবিতা

কোন এক কড়কড়া রইদের দিনে,
তারা আমার ছোট্ট রুমে হাঁটাহাঁটি করবে
আমার স্মরণে
এরপর আমার আয়নাতে তখনও
তারা দেখবে এক গোছা চুল
জীবনের অনেক অনেক চিহ্ন
আমার আঙুলের ছাপসকল

আমার আত্মা—
একটা পালতোলা নৌকার মতন
এইটা আমার গতর থেকে আমারে মুক্ত করি পলাবে
চোখের সীমানা থেকে জাস্ট নাই হয়ে যাব আমি
একটা ছন্নছাড়া ঘুড়ির মতন, অপার ভ্রমণে।

দিন এত জলদি সপ্তা হয়ে যাবে
আর সপ্তা এত দ্রুত মাস হয়ে যাবে যে
তোমরা ঘড়ির চোখে পলকহীন তাকায়েই থাকবা
মিছামিছি অপেক্ষা করবা
আমার চিঠির, আমার কলের।

বাট এরপরও,
আমার লাইফলেস বডি শান্তভাবেই রেস্ট নিবে
তোমাদের থেকে
তোমাদের অন্তরের খোঁয়াড় থেকে, দূরে
মাটির শব্দহীন আজায়।

পরে
এই সূয্য, এই বাতাস আর এই বিষ্টি
আমার কবরের ঠান্ডা পাথরগুলারে পলিশ করি দিবে
আর সবশেষ আমি মুক্ত হবো
একেবারে মুক্ত হবো
পুনরায় ফিরি আসার মিথ,
নাম আর যশের বাইরে।

 

আন্ধারে

আন্ধারে আমি তোমারে ডাকতাম
সবই আছিল শুনশান
আর হালকা বাতাস দুলাইতেছিল পর্দাটা
আর কুসুম উসুম আসমানে একটা তারা জ্বলতেছিল
একটা তারা চলি যাইতেছিল
আর একটা ছিল যায় যায়

আমি তোমার নাম জপতাম
তোমার নাম আমি এমনভাবে ধারণ করছিলাম যেন আমার দুই হাতে একটা দুধের বোতল
চান্দের নীলচে চাউনি
কাঁচের বিপরীতে ঠিকরায়ে পড়ছিলো

সিকাডা সিটি থেকে
এক বিষাদের গান ভাসি আসতেছিল
আর ধুঁয়ার মতন হড়কায়ে নিতেছিল জানলার ডালা

সারারাইত
আমার বুকের মধ্যে
কেউ একজন বিরক্তি নিয়ে ছবি আঁকতেছিল
কেউ উঠতেছিল
কেউ কামাতুরভাবে তাকাইতেছিল
আর দুইটা ঠান্ডা হাত তারে আবারো ধাক্কাইতেছিল

সারারাইত
দুঃখ টপটপ করি ঝরতেছিল কালা ডালগুলান থেকে
কেউ তারে চমকায়ে দিছিল
কেউ তোমারে ডাকছিল
আর বাতাস–ডেবরিসের মতন
তার মাথায় পড়ছিলো

বাউন্ডুলে বাতাস–
আমার ছোট্ট গাছটা এই বাতাসের লগে ভাব করছিল
কোথায় এই বাতাসের বাড়ি? কোথায় এই বাতাসের বাড়ি?


আমার দরদের বাগান

কেউ ভাবে না ফুলগুলার কথা
কেউ ভাবে না মাছগুলার কথা
কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না বাগানটা যে মরি যাইতেছে
এইটার আত্মা সূয্যের তেজে যে শুকায়ে গেছে
এইটার মন আস্তে আস্তে যে ডেরেন করি দিতেছে এর সতেজ মেমোরিগুলা রে

আমাদের বাগানটা মনমরা
এটা হা করি
একটা ছুটা মেঘ থেকে বিষ্টির অপেক্ষায় আছে
আর আমাদের পুকুরও খালি হয়ে আছে
লুটায়মান তারা ধূলা কামড়ায় লম্বা গাছের মাথা থেকে
আর মাছের ফ্যাকাশে বাড়ি থেকে প্রতি রাইতে আসে কাশির খকখকানি

আমাদের বাগানটা মনমরা

আব্বা বলেন, আমার সময় শেষ
আমার সময় শেষ
আমার বোঝা টানা হয়ে গেছে
আমার কাজ শেষ
তিনি সকাল-সইন্ধ্যা ওনার রুমেই থাকেন
ইতিহাসের কাহিনী নয়ত ফেরদৌসির রাজাদের মহাকাব্য পড়েন

আব্বায় আম্মারে কন,
মরুক প্রত্যেকটা মাছ আর পাখি
আমি মরি গেলে, এইসবের কি আর বেইল আছে!
বাগানটা থাকলেও কী আর মরি গেলেই বা কী
আমার পেনশন তাই—যা হিসাব করা আছে।

আম্মার জীবন জায়নামাজেই শেষ
তিনি আছেন জাহান্নামের ডরে
সবসময়ই তালাশ করতে থাকেন কোথায় গুনাহের চিহ্ন আছে না আছে
ভাবেন, এই বাগান দজ্জাল গাছের পাপে শেষ হই গেছে

আম্মা সৃষ্টিগতভাবেই একজন গুনাহগার। তিনি দোয়া করতে থাকেন সারাদিন। তারপর ওনার পবিত্র নিঃশ্বাস বইতে থাকে সব ফুলে, মাছে আর ওনার সারা শরীরে।
তিনি অপেক্ষা করেন সেই পতিশ্রুত একজন আর তাঁর ক্ষমার জন্যে।

আমার ভাই এই বাগানরে একটা কবর বলি ডাকে
সে হাসে ঘাসেদের মরা মরা অবস্থা দেখি
আর পাষাণের মতন গোনে অল্প পানিতে খাবি খাওয়া মরতে থাকা পচা মাছগুলারে।
আমার ভাই ফিলোসফিতে এডিক্টেড
সে দেখে এই বাগানের ভালা হয়ে উঠা পুরাই অসম্ভব
মাতাল হলে, সে লাথি মারে দরজায় আর দেয়ালে
বলে, সে টায়ার্ড, যন্ত্রণাকাতর, আর হতাশ।
সে এমনভাবে তার হতাশা বহন করতে থাকে সবখানে
যেরকম সে বহন করে তার বার্থ সার্টিফিকেট, ডাইরী, ন্যাপকিন, লাইটার আর কলম।

বাট তার হতাশা এতই সামান্য যে
প্রত্যেক রাইতেই তা হারায়ে যায়
জনবহুল মদের দোকানে।

আমার বইন আছিল ফুলদের সই।
আম্মা যখন তারে মারতো, সে তার মনের কথা কইতো ফুলদের দরদ আর নিরবতার ভীড়ে।
আর মাঝে মাঝে সূয্যের আলোতে মাছের পরিবারের লগে এমন আচরণ করতো সে।
আর রুটির টুকরা দিতো ছিঁড়ি ছিঁড়ি।

সে এখন শহরের অপরপ্রান্তে থাকে
তার ভাড়া বাসা
আর তার নকল জামাইয়ের আজার মইধ্যে।
সে নিজের বাচ্চা জন্ম দিছে ন্যাচারালি।
প্রত্যেক সময় সে দেখতে আসে আমাদের,
যদি তার স্কার্ট ময়লা হয়
আমাদের বাগানের গরীবীর কারণে
সে সুগন্ধি দিয়ে গোসল করে নেয়।
সে সবসময়ই আসে তার বাচ্চাদের নিয়ে।

আমাদের বাগান মনমরা
আমাদের বাগান মনমরা

সারাটাদিন দরজার পিছন থেকে
ঠুসঠাস আর কান্দনের শব্দ আসে
শব্দ আসে বিস্ফোরকের।

আমাদের পতিবেশীরা
বাগানের মাটিতে ফুলগাছ না লাগায়ে
বোম আর মেশিনগান লাগায় খালি
তারা তাদের পুকুর ঢাকি রাখে গানপাউডারের লুকানো ব্যাগ দিয়ে।
স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত তাদের পিঠের ব্যাগ ভরে ছোট ছোট বোম দিয়ে।

আমাদের বাগান মনমরা।

আমি এই বয়সটারেই ডরাই যখন সাহস চলি যায়
অনেক অনেক হাতের আদর্শ লোপ পায়
আর এত এত চেহারায় ঘটে বিচ্ছিন্নতা।

আমি একটা স্কুলের বাচ্চা যেন—
যে তার ভূগোল বই নিয়ে খুবই পাগল।
আমি মনমরা—
আর ভাবি এই বাগানটারে হসপিটালে নেওয়া সম্ভব।
আই ইমাজিন আই ইমাজিন
এই বাগানের মন উছলাইতে আছে
সূয্যের তেজে!
আর এইটার মন ধীরে ধীরে এইটার পচা স্মৃতিগুলারে ডেরেন করি দিতেছে!

পাখিটা খালি পাখিই ছিল একটা

পাখিটা গাইতেছিল: কী রইদ রে!
আহ, যেন বসন্ত আসি পড়ছে চারপাশে
আর অবশ্যই আমারে আমার জোড়া খোঁজা লাগবে।

পাখিটা কার্নিশ থেকে বাতাসে উড়াল দিলো
একটা বেনামি চিঠির মতন

পাখিটা ছোট ছিল
পাখিটা বোকা ছিল
পাখিটা পেপার পড়তে জানতো না
পাকিটার কোন ঋণ ছিল না
পাখিটা মানুষ চিনতো না

পাখিটা বাতাসে
উপরে যেখানে লাল আলো ঝলকাইতেছিল
উল্লাসে সেই বিস্মৃতিতে উড়াল দিলো
উৎফুল্লে আকাশের নীলে নীল হয়ে থাকলো

পাখিটা,
আহ,
পাখিটা খালি পাখিই ছিল একটা…

 

ঢেউ

আমার চোখে তুমি একটা ঢেউয়ের মতন
অশান্ত, বিদ্রোহী, ব্যাকুল
যা প্রতিটা মূহূর্তে টান দিয়ে গিলে ফেলতে পারে
হাজারো মোহনীয় ইচ্ছার নিঃশ্বাসে

তুমি একটা ঢেউ
তুমি একটা ঢেউ আপসোসের দরিয়ায়
ওহ, আগামীর দিগন্তে বিষণ্ন রঙ
যেন তোমার কুয়াশামাখা চোখ

তুমি অনবরত তোমার নিজের সঙ্গে যুদ্ধেরত
তুমি সবসময়ই শান্তির বেলায় গরীব
তুমি চিরকালই নিজের থেকে পালায়ে বেড়াও
তুমি সেই মেঘ যে বিষ্টির সম্ভাবনায় ভরা

কী যে ঘটবে, ও আল্লাহ!
কী যে ঘটবে যদি আমি সৈকত থেকে দূরে থাকতাম
রাইতে আমার ছড়ানো আজায়
তুমি আমারে আঁকড়ায়ে ধরবা
তুমি আমারে আঁকড়ায়ে ধরবা

বাগিচা

প্রত্যেকেই ভয় পায়।
প্রত্যেকেই ভয় পায়, কিন্তু তুমি আর আমি
মিশে এক হয়ে যাই
পানিতে, আয়নাতে
আর আলোতে
আর আমরা ভীতও না।

আমি দুইটা নামের দূর্বল মিলনের কথা বলি না
বলি না একটা পুরনো খাতার পাতায় তাদের জড়াজড়ির কথা
আমি বলি আমার লোমের কথা
যা তোমার সুরভিত আফিমমাখা চুমুতে খুশি

আমাদের শরীলের অবাধ্য ঘনিষ্ঠতা
এবং আমাদের নগ্নতার উজ্জ্বলতা
পুকুরে ঘাইমারা মাছের মতন

আমি বলি একটা গানের রূপালি সময়ের কথা
যেমন একটা ছোট ঝিরি প্রতিটা ভোরে গান গায়।


ভালোবাসা

হুমম, ভালোবাসা হইতেছে পথের শুরু
যদিও শেষ কোথায় তা বলা যায় না
আর ভাবিও না শেষটেশ নিয়ে
কারণ এইটাই ভালোবাসার সুন্দরতা
আর এজন্যেই ভালোবাসি।


দ্য উইডিং ব্যান্ড

মেয়েটি হাসলো আর কইলো:
এই সোনার আংটির সিক্রেটটা কী,
এইটার সিক্রেট কি এইটা
খুব টাইট হয়ে আমার আঙুল জড়ায়ে আছে,
এইটার সিক্রেট কি এইটা
ঝকমক করতেছে আর দ্যুতিও ছড়াইতেছে?
লোকটা থতমত খাইলো আর কইলো:
এইটা সৌভাগ্যের আংটি, শুভ জীবনের আংটি!

প্রত্যকেই কইলো: কনগ্রাচুলেশানস এ্যান্ড বেস্ট উইশেস!.
মেয়েটা কইলো: হায়রে!
যেইটা এখনো সন্দেহ তৈয়ার করে আসলে শে কী বুঝাইসে।

বছর চলে গেলো, আর এক রাইতে:
এক মনমরা মহিলা ঐ সোনার আংটির দিকে তাকাইলো আর দেখলো এর ঝকমকা দিন নষ্ট হয়ে গেছে স্বামীর আনুগত্যে।

ঐ মহিলা অস্থির হয়ে উঠলো আর কানতে লাগলো:
ও আমার আংটি রে,
এখনো ঝকমক করা এখনো আলো ছড়ানো
তুই তো গোলামি আর দাসত্বের আংটি রে!

শ্যামল মরিচীকা

সারাটাদিন,
আয়না দেখি দেখি কানতেছিলাম আমি
বসন্ত আমার জানলা দখলে নিছে
সবুজ গাছের আলেয়া ছড়ায়ে।

আমি খাপ খাইতেছিলাম না আমার একাকিত্বের পোশাকে
আর আমার ফাঁপা মুকুটের সুবাস
চারপাশরে বিষায়ে তুলছিল।

আমি পারি নাই,
আমি অপেক্ষা করতে পারি নাই।
হৈচৈমুখর লেন
পাখির কিচিমিচির
বল ছোঁড়াছুঁড়ি
আর একটা বাচ্চার চিৎকার
আর তারপর
আমার জানলায় রঙিন ঘুড়ির দাপাদাপি
সাবানের বুদবুদের মতন
সাদা ছোট দড়ি বাই উপরে উঠতেছিল।

আর ঐ বাতাস,
বাতাসও বইতেছিল এত জোরে,
যেন আন্ধারে পিরীতি উথলায়ে ওঠা।

তারা সকলে,
আমার বিশ্বাসের নিঃশব্দ দূর্গের দুয়ারে হানা দিতেছিল এবং
তারা চাপ দিয়ে ভাঙতেছিল, যখন তারা তা ভাঙলো
আমার আত্মারে ডাক দিলো তার নাম ধরি।

সারাটাদিন,
আমার জীবনের চোখের দিকে তাকায়ে থাকলাম

ঐ বিচলিত, ভয়ার্ত চোখগুলা
আমার দৃষ্টি থেকে পলায়ে যাইতেছিল
অসহায় চোরের মতন, যারা আন্ধারে গুঁজি থাকে
মুখোশের আউড়ে!

কোথায় সেই পর্বতের চূড়া?
কোথায় সেই আরোহণ?

“সব প্যাঁচানো রাস্তাই শেষ হবে, শীতল আর ক্ষুধার্ত মৃত্যুর মুখে ” তাই না?

তুমি আমারে কী কথা দিছিলা?
তুমি আমারে কী দিলা ব্যথাঅলা পায়ে?

যদি আমি একটা ফুল রাখতাম আমার চুলে
এই নকল , এই কাগুজে মুকুটের
মাথায় আবর্জনা হয়ে থাকার চাইতে কি
তা আরো ভালোকিছু হইতো না?

আমি জানি না
কিভাবে মরুভূমির এই ভূত আমারে পাইছিল
আর জোসনার অশরীরীতা আমারে সরায়ে দিছিলো
বিশ্বাসের ভীড় থেকে!

আর কিভাবে আমার অন্তরে ফাঁপা গর্তটা হইলো
আর তা পুরা অন্তরটারেই শেষ করি দিলো!

আমি জানি না
কিভাবে আমি দাঁড়াতে পারব আর দেখব
আমার পায়ের নিচে ঢেবি যাইতে থাকা ঐ দুনিয়া

এবং কিভাবে আমি সহ্য করতে পারি
আমার আশিকের এমন জ্বর,
কখনোই পৌঁছাইতে পারলাম না
আমার অন্তরের শূন্যতার বিমর্ষ আশায়

কোথায় সেই পর্বতচূড়া?
কোথায় সেই আরোহণ?

আমারে থাকতে দাও, অন্ধ, রহস্যময় আলোয়!
আমারে থাকতে দাও, আলোকিত, নিরিবিলি ঘরে!
আমারে থাকতেদাও, তোমার ধোয়া কাপড়ের সারিতে!
তোমার ছাদের দোলনায়!
আমারে থাকতে দাও, তোমার সুগন্ধি বাষ্পের বেসিনে!

আমারে থাকতে দাও পুরাপুরি, একজন সাধারণ মহিলা হিসাবে!
আমি দেখি তোমার আঙুলের নড়নচড়ন
তোমার অনাগত বাচ্চার দারুণ বিচরণ
তোমার বাড়তে থাকা পেটের ভিতরে
আর, আমি বোধ করি তোমার গাউনঝরা পানি
বাতাসে ছড়াইতেছে, খাঁটি দুধের প্রকৃত সুবাস

কোথায় সেই পর্বতচূড়া?
কোথায় সেই আরোহণ?

ওরে, আমারে থাকতে দে, থাকতে দে!
থাকতে দে চুলায়,, ভাগ্যবতী তাবিজে!
থাকতে দে বাজতে থাকা প্লেটে!
আমারে থাকতে দে, তোর সিঙ্কের আঠালো স্রোতে!
আমারে থাকতে দে, সেলাই মেশিনের খটখট শব্দে!
ওরে, থাকতে দে, পাটি আর ঝাড়ুর ডেইলি ঝগড়ায়!

থাকতে দে আমারে, লোভী ভালোবাসর মতন!
থাকতে দে আমারে, টিকে থাকা পোকার মতন!
থাকতে দে আমারে, তোর কলঙ্কিত বিজয়ের বিছানায়!
এর মধুময় বান ও রক্তে!

সারাটাদিন,
স্রোতেভাসা খড়কুটার মতন থাকি
একলা আমার নৌকায়
আমি আগায়ে যাইতেছিলাম
ভয়ঙ্কর পাথর আর নির্জন দ্বীপ,
অন্ধকার আর মহাসাগরীয় গুহার ভিতর দিয়ে
বিপজ্জনক হাঙ্গরের পাশ ঘেঁষি

আর আমার দূর্বল শিরদাঁড়া কাঁপতেছিল
আসন্ন মউতের কথা ভাবতে ভাবতে

আমি পারলাম না
আর পারলাম না আমি

আমার পায়ের ছাপ শেষমেষ,
পথের নিরর্থকতার কথা স্বীকার করলো
আর হতাশা, শেষপর্যন্ত, আমার আত্মার ধৈর্য্যরে হার মানাইলো।

তারপর বসন্ত,
শ্যামল মরিচীকা,
আমার পাশ কাটি যাইতেছিল যখন
আমারে ফিসফিসায়ে কইলো:

“দেখো,
তুমি কখনোই আগাইতে পারো নাই
খালি ডুবতেই আছো।”

The following two tabs change content below.
Avatar photo

ফুল্লরা

পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
Avatar photo

Latest posts by ফুল্লরা (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →