Main menu

মরম আল মাসরী’র কবিতা

মরম আল মাসরী ২ আগস্ট, ১৯৬২ সালে সিরিয়ার লাটাকিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। পড়ালেখা শেষ করেন দামাস্কাস ইউনিভার্সিটি থেকে, ইংরেজি সাহিত্যে। এরপরে ওনি আরব ম্যাগাজিনে ওনার লেখা ছাপাইতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তাঁর প্রজন্মের সেরাদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী, বিদুষী, চিত্তাকর্ষক নারীকণ্ঠ হিসাবে বিবেচিত। তাঁর লেখা ফ্রান্স, জার্মান, ইংরেজি, ইতালিয়ান, স্পেনিশ, সার্বিয়ান, তার্কিশসহ প্রায় এগারোটি ভাষায় তরজমা হইছে।

ওনার লাস্ট বের হওয়া বই The Abduction(২০১৫)। বইটা মরম আল মাসরীর নিজের জীবনীরই ঘটনা। যখন, ২০১১ সালে দেশের চলমান অস্থিরতার কারণে একজন ইয়াং আরব মহিলা হিসাবে তিনি সিরিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে থাকা শুরু করেন। আর ব্যক্তিগত কারণে সিদ্ধান্ত নেন যে নিজের হাজব্যান্ডের লগেও আর থাকবেন না, নিজের ছোট্ট ছেলেটারে নিয়েই থাকবেন। কিন্তু ছেলের বাপ বেড়াতে নেওয়ার নাম করে ছেলেরে কিডন্যাপ করে সিরিয়া চলে যায়। এদিকে আল মাসরী ১৩ টা বছর ওনার ছেলেরে আর দেখতে পান নাই। এইটাই ট্র্যাজেডি যে একজন মা, মায়ের অধিকার থাকা সত্ত্বেও সন্তানের বড় হওয়া নিজের চোখের সামনে দেখতে পাইলেন না। এগুলি হলো গা শিউরে ওঠা, দগদগে কবিতা, প্রেমের, হতাশার এবং আশার। এই বইটা সূক্ষ্ম, গভীর এবং শক্তিশালী অন্তরঙ্গতার বই যেখানে একজন মায়ের অধিকার, যুদ্ধ, নির্বাসন এবং স্বাধীনতাও বিষয় হয়ে উঠে।

মরম আল মাসরী সেইসব মা-বাবাদের ভয়েসটারে এক করছেন, যারা একদিন, যেকোন কারণে হোক, জোরপূর্বক তাদের সন্তান থেকে আলাদা থাকতে হইছে। তিনি নারীদের পদমর্যাদা নিয়েও লেখেন। তাদের ভূমিকা মনে করাইতে চান মা হিসাবে তার লেখা দিয়ে।

আমি তার কবিতা বাছাই করছি মূলত কবিতায় একজন সন্তানহারা মায়ের বেদনার সাবলীল উপস্থাপন দেখে। একটা যুদ্ধ খারাপ হওয়ার একটা কারণ ত এইটা যে মায়েরা তাদের সন্তানদের হারাইতে হয়। কিন্তু ব্যক্তিজীবনেও যখন যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করে, একটা সন্তান, একজন মা কিংবা বাবার দ্বন্দ্বের মাঝখানে পুতুল হয়ে যাইতে হয়। এই দূরত্বের কষ্ট এত সাবলীলভাবে প্রকাশ তো ঘটে না আসলে, গোমরায়ে মরা লাগে, যার যার ভিতর। গুগলে ঘাটতে ঘাটতেই যখন পেয়ে গেলাম ওনার কবিতা, মনে হইলো, তরজমা করা যাক।

 

বর্ণের রুটি

গাছেরে ব্লেইম করবে কে
যখন তারা তাদের পাতা হারায়ে ফেলে?
কে দরিয়ারে দোষারোপ করবে
বালিতে শামুক ফেলে যায় বলে?

আমি, মা-নারী, নারী-মা
ভোগসুখের জন্যে দুইটা ব্রেস্ট যার
আর মাতৃত্বের জন্যেও দুইটা ব্রেস্ট
যে দুধ পান করায় সুর করে
গল্প বলে
খেলতে শিখায়
অনুভূতি আর
চিন্তার মূলে শান দেয়
আমি, ফূর্তির নারী
আর মোহেরও
আমি পবিত্র আর পাপী
ম্যাচিউর এন্ড চাইল্ডলাইক
আমার মুখসহ
আমি রুটি খাওয়াই বর্ণের
স্বরবর্ণের আর ব্যঞ্জনবর্ণের
বাক্যের, সিনোনেইমস এন্ড কম্পারিজনের

কে আমারে দোষারোপ করবে
ভালোবাসার জন্যে আমার শরীরটারে
নজরানা বানাইলাম বলে?

 

লেখালেখি

এটা কি একটা জঘন্য কাজ না নিজেই?

লেখা হইতেছে
আমাদের সবচাইতে ঘনিষ্ট চিন্তাগুলারে জানতে শিখা

হ্যাঁ, আমি জঘন্য
কারণ আমি আমার সত্যরে শো করি
আর আমার নারীরূপি ছলাকলাহীনতারে

হ্যাঁ, আমি জঘন্য
কারণ আমি চিল্লায়ে বলি আমার দুঃখ আর আমার আশা
আমার আকাঙ্ক্ষা, আমার ক্ষুধা আর আমার পিপাসা

লেখা হইতেছে বর্ণনা করা
পুরুষের বহুরূপি চেহারা
সুন্দর আর বিশ্রী
আবেগপ্রবণ আর নিষ্ঠুর

লেখা হইতেছে
মারা যাওয়া অন্যের সামনে
যে তোমার দিকে তাকায়ে আছে, স্থির
কিংবা তোমারে খেয়াল না করেই পাশ কাটানো একটা নৌকার সামনে ডুবি যাওয়া

লেখা হইতেছে সেই নৌকাটাই হওয়া যা ডুবি যাওয়া থেকে বাঁচায়

লেখা হইতেছে
খাঁড়া পর্বতের চূড়ায় বাস করা
ঘাসের ফলায় ঝুলি থাকা

যখন আমি লেখি, আমি আরেকজন হয়ে উঠি
এই বিশ্বাসে যে
আমি মুক্ত

 

এমন মহিলা আছে

এমন মহিলা আছে
যে তোমারে ক্যারি করছে
যে তার রক্ত আর জরায়ু তোমারে উৎসর্গ করছে
যে (উসিলা হয়ে) তোমারে আনছে দুনিয়ায়
যে তোমারে গোসল করাইছে
যে তোমারে বুকের দুধ খাওয়াইছে

এমন মহিলা আছে
যে তোমার দেখাশুনা করছে
যখন তুমি ছোট আছিলা
বড় না হওয়া পর্যন্ত
যখন তুমি দূর্বল আছিলা
শক্তসামর্থ্য না হওয়া পর্যন্ত

এমন মহিলা আছে
যে তোমারে কামনা করে
আরো আছে যারা তোমারে
আজার মধ্যে আঁকড়ায়ে ধরতে চায়
যারা তাদের জরায়ুতে তোমারে ওয়েলকাম করে
যারা তোমারে ওয়াদা করে
যারা তোমারে তাদের পানি খাইতে দেয়

এমন আরো মহিলা আছে
যারা তোমারে ছলনা করে
আর এমনও মহিলা আছে
যারা তোমারে ছাড়ি যায়।
 

টু লাভ

ভালোবাসা মানে
আরেকজনের ভিতরে তোমারে ছাড়াই
থাকতে পারার সম্ভাবনা জাগানো
ভালোবাসা– এটা হইতেছে নিজেরে তৈয়ার করা
প্রাক্তন হওয়ার জন্য
 

ও দরদী ভাইয়েরা

ও দরদী ভাইয়েরা
ও দুনিয়া
আমার একটা বাচ্চা আছিল
তারে আমার পেটের মধ্যে গুঁজায়ে রাখছিলাম
তার লগে আমার শরীর ভাগাভাগি করে নিছিলাম
তারে আমার রক্ত দিয়ে পালছিলাম
আমার স্বপ্ন তার লগে ভাগ করে নিছিলাম
আমি তার জন্যে গান গাইতাম আর সেও হাসতো
তারে কোলে লই হাঁটতাম আর তার কান্দন থামি যাইতো

আমার আজার থেকে তারে ছিনায়ে নিছে সে
আমি এখন আর গান গাই না
 

যুদ্ধ

যুদ্ধ চলে রুয়ান্ডায়
আর আমার মধ্যে, আমি তখনও খাই
যুদ্ধ চলে যুগোস্লাভিয়ায়
আর আমার মধ্যে, আমি তখনও হাসি
যুদ্ধ চলে প্যালেস্টাইনে
আর আমার মধ্যে, আমি তখনও ঘুমাই

বাট তোমারে যখন কিডন্যাপ করা হইলো
যুদ্ধ চলে আমার মধ্যেই।
 

এই দুইহাতে

এই দুই হাতে
আমি তোমার সুটকেইস গোছাইছি
তোমার বাবা আমারে বলছিল
সে তোমারে কিছুক্ষণের জন্যে কোথাও বেড়াইতে নিতেছে
দরিয়ার কাছেই কোন শহরে

তোমার সুটকেইসে
আমি তোমার সবচাইতে সুন্দর জামাগুলা প্যাক করে দিছি
আমার ছোট্ট জাদুটা দরিয়া দেখতে যাইতেছে বলে

আমি তোমার পছন্দের কেকও প্যাক করে দিছি
একটা পানির বোতল
আর সবকিছু যা তোমার দরকার হইতে পারে
আমার ছোট্টজাদুটা দরিয়া দেখতে যাইতেছে বলে

এই দুইহাতেই আমি তোমারে স্ট্রলারে বসাইছি
হাসিখুশি
আমার ছোট্টসোনাটা দরিয়া দেখতে যাইতেছে বলে

পয়লা রাত পার হইলো
আর আজ পর্যন্তও
আমার ছোট্টসোনার স্ট্রলার কখনো ফিরলো না।
 

উদাসীনতা

আমার আর ধৈর্য্য নাই
গিরস্থালির কাজ করার
আমার আর শক্তি নাই
জঞ্জাল ছাপ করার
আমার আর সাহস নাই
রসিকতার লগে মানায়ে চলার
যেইটা আমারে হাসায় না
আমার বাচ্চা নেয়ার শক্তিও নাই আর
চাইব যে দিনগুলা রঙিন হোক
না আমার একটা ব্রেস্টও আছে যে দুধ খাওয়াবো

তাই আমি আমার হাত দোলাই
আর সেখানে নাই কোন বাবু আমার কোলে
আমি একটা জানলার বাইরে দেখি
কতদিন গা-গোসল ধুই না আমি
দুনিয়াটাই উদাসীন।
 

আমি বুড়া হতে চাই না

আমি বুড়া হতে চাই না
যাতে আমার বাচ্চাটা আমারে চিনতে পারে
যেদিন সে ফিরি আসবে
আমারে দেখতে

আমি মরতে চাই না
আমার আম্মার মতন
কারণ আমার একটা বাচ্চা আছে
যদিও আমার আজায় সে নাই
কিন্তু একদিন
অবশ্যই অবশ্যই
আমারে তার দরকার পড়বে
 

আমি তো এখনও অত বুড়া হই নাই

আমি তো এখনও অত বুড়া হই নাই
তাইলে কেন
এইরকম লাগতেছে?
কেন আমার স্বপ্নের চুল শাদা হয়ে গেছে?
আমার চোখের জ্যোতি ধূসর হয়ে গেছে?

আমি ত এতটা বুড়া হই নাই এখনো
তাইলে কেন
জীবনের স্বাদ পাইতেছি না আর?
কেন ভোরের গান
যা আমি গুনগুনাইতাম
আর শোনা যায় না?
 

আমার জানলা থেকে

আমার জানলা থেকে
আমি বাড়িগুলা দেখি
তাদের জানলাগুলা খুব কমই বন্ধ থাকে
আমি কল্পনা করি কী চলে
ওই মোটাদেয়ালগুলার পিছনে

আমি দেখি এক লোকরে বাড়ি ফিরতে
আর এক মহিলারে বের হয়ে যাইতে
একটা কালো কোট পরে
তাদের দুইটা বাচ্চা
জীবন তাদেরকে সেই সুযোগ দিছে বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা দেখার

একটা বাড়ি আমার মতন
যেন দুঃখ গুঁজায়ে রাখে
যেন গল্প গুঁজায়ে রাখে

এক রবিবারে
ভালোবাসার উৎসবের দিনে
আমি দেখি লোকটা ফিরি আসছে
তার বাড়িতে
এক তোড়া ফুলসহ

একটা বাড়ি খুশিতে মোড়ানো
যেইটা আমার না
 

অনেক ব্যথার মোকাবিলা করতে

অনেক ব্যথার মোকাবিলা করতে
আর দুঃখের মূর্তি চুরমাচুর করতে
আমি আমার হাসি ছড়ায়ে দিই
ফুলের রেণুর মতন
গাছের চূড়ায় চূড়ায়
বিদ্যুতের খাম্বায় খাম্বায়
পথের পাশে পাশে
পথিকের গো মুখে মুখে
রুটিতে
আমার কফির কাপে

ভালোবাসার যোগ্য হবো বলে
আমি ভালোবাসা বুনি
 

নয় মাস

নয় মাস
আর একটা প্রাণ বড় হইতেছে পেটে
যেন একটা কবিতা জন্মাইতেছে কল্পনায়

নয় মাস
আর একটা শরীর আরেকটা শরীরের ভিতর বাড়তেছে

নয় মাস
আর অপেক্ষা বুনতেছে আশা
আর স্বপ্ন

নয় মাস
একটা কান্না হয়ে উঠার জন্য নিরবতা
একটা দলা থেকে রুটি হয়ে উঠার মতন
অথবা একটা গোল চাঁদের
পূর্ণিমায় পৌঁছার মতন

নয় মাস
একটা হৃদয় আরেকটা হৃদয়ের ভিতর ধুকপুকানোর জন্য

নয় মাস
একটা জীবন শুরুর জন্য
 

আমরা বুনি

আমরা বুনি

শে গজায়
শে বাড়ে
শে ব্যথা পায়
শে ফাটে
শে জন্ম দেয়
এক শিশু এক কবিতায়

তার দুই উরুর মাঝ দিয়ে
এইটা গড়ায়
একটা ঝরনার মতন
একটা ছোট্ট শরীর
উদাম
উষ্ণ
সে কাঁদে,
এই তো আমি।
 

হ্যাপিনেস

যখন তুমি দূরে থাকলেও আমি হাসি
তার মানে একটা ছায়া
আমার সামনে দিয়ে গেলো
তুমি একটা সাদা লেয়ারে
আর খেলনা টানো তোমার পিছনে

যখন তুমি দূরে থাকলেও আমি হাসি
তার মানে এইটা না যে আমি তোমারে ভুলি গেছি
বাট সামটাইমস
এমন হয় যে
তোমার অস্ত্বিত্ব
এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরে সত্ত্বেও
আমার কাছে সুখ হয়ে ধরা দেয়।
 

আমি তারে জড়ায়ে ধরছিলাম

আমি তারে জড়ায়ে ধরছিলাম
তার শান্তিময় নিঃশ্বাস অনুভব করছিলাম
যা আমার ঘাড় ভিজায়ে দিছিল
আমি তারে আদরে দুধ দিতাম
তার মুখে চুমা খাইতাম
আমার আঙুল দিয়ে ছুঁই ছুঁই দেখতাম
তার ত্বকের কোমলতা
আর তখন
একটা অনন্তকালের ভোর ফুটতো
একটা পরিত্যক্ত দিনে
তার হাতের ছোঁয়া এখনও ফিল করি আমি
আমার ঘাড়ে
আর আমার থুতনিতে
তার ছোট্ট দাঁতের ব্যথা!
 


মায়ের ভালোবাসা

আমি তোমারে পাঠাইতাম
আমার ভালোবাসা
মেইল করে
আমি এইটারে ছোট ছোট খেলনা হিসাবে বানাইছি
যাতে তুমি খেলতে পারো
আমি এইটারে উলের পোলো শার্ট বানাইছি
যাতে তুমি উষ্ণ থাকতে পারো

আমি তোমারে আমার ভালোবাসা পাঠাইতাম
মেইল করে
আমি এটা পাঠাইতাম দুই বক্স এসপিরিনের জন্য
একটা টুথব্রাশ
কেক, চকলেট
একটা সাইকেল
তুমি কি প্যাকেজটা পাইতা ?
 

কাম অন, সান

আআসো, সূয্যমনি
ওয়েক আপ!
তোমার হলুদ চুল ছড়ায়ে দাও
পৃথিবীর ঠান্ডা ঘাড়ের উপরে
বাড়িগুলা আর রাস্তাগুলার উপরে
পাথরগুলারে তাতাও আর পিচরেও
নাচো, সূয্যমনি, ঝলকাও!
এই দিনটারে একটা সুন্দর দিনে রূপ দাও
কারণ, এই ঠান্ডা দেয়াল থেকে দূরে
রঙের মাঠে
যেখানে আকাশ গল্পে বানানো
আর গাছেরা কবিতায়
আমি আমার ছোট্টসোনারে বেড়াতে নিয়ে যাব।
 

একটা হাঁসের মতন

একটা হাঁসের মতন
তুমি হেলতেদুলতে থাকো
আর তিন পা আগাও
তুমি আমার আঙুলে ঝুলি আছো
যদি তোমাকে ছাড়ি দিই আমি, আবার পড়ি যাও

আমি তোমারে তুলি আর গুনগুনাই
তুমি হাঁটো থামি থামি
একটা হাঁসের মতন
তুমি পড়ি যাও, আবার ওঠো
আমরা আবার ট্রাই করি
আমরা পড়ি যাই, আবার ওঠি
জীবন যেমন
আমার ছোট্ট দুষ্টুটা
যতক্ষণ না আমরা ঘোড়া হই
দৌড়াইতে থাকা
 

নাচো নাচো

নাচো, বাবা
নাচো
কারণ, তুমি তো হইছো
পাখিদেরকে উড়তে শিখাবা বলে

নাচো, বাবা
নাচো
যাতে এই দুনিয়ার অস্থির এই হৃদয়
নিজেই শান্ত হইতে পারে
তোমার পায়ের ছন্দে
নাচো, নাচো, সোনা
যাতে তুমি উড়া শিখতে পারো।
 

প্রমিজ মি

কথা দাও আমাকে
যদি আমি চোখ বন্ধ করি
তুমি আমার আজায় দৌড়ি আসবা
এই অন্ধকার দুনিয়াটারে
হালকা করতে

প্রমিজ মি
যদি আমি চোখ খুলি
তখনও তুমি থাকবা
 

ফরগিভ মি

আমারে মাফ করি দাও, সোনামনি
যেহেতু আমি আসতে পারি নাই জলদি জলদি
হাঁটাপথে, এই পথ অনেক লম্বা
আর আমি টিকিটও কিনতে পারতাম না

আমারে মাফ করি দাও, লক্ষ্মীটি
এই অজুহাত
তোমার কাছে আজাইরা মনে হবে অবশ্য
আমি পায়ে হাঁটি আসতে পারতাম
অথবা টাকা ধার করি
অথবা স্মোকিং না করি কিছু টাকা জমাইতে পারতাম
(যদিও আমি স্মোক করি না)
অথবা আমার মায়ের গয়না বেচতে তো পারতাম
টিকেট কিনার জন্যে

তাদেরকেও মাফ করে দাও, সোনা
যখন আমি গেলাম
তারা আমারে তোমার লগে দেখাই করতে দিলো না
 

এভরি মর্নিং

প্রত্যেক সকালে
আমি জাগি
তোমার খাবার তৈয়ার করব এই আশায়

প্রত্যেক সকালে
আমি আমার চোখ খুলি
আর কী রকমভাবে যে আমি চাই!
তুমি তো আমার মুখ চুমা দিয়ে ভিজায়ে দিতে পারতা

প্রত্যেক সকালে আমি জাগি
আর কী রকমভাবে যে আমি চাই তুমি আমারে জাগাও!
খুব ভোরে
তুমি তো আমার ঘুম ভাঙ্গি টুকরা টুকরা করতে পারতা
 

বাড়িত ফিরি আসলাম আমি

বাড়িত ফিরি আসলাম আমি
একরাইত আমার বন্ধুরগো লগে বাইরে থাকার পর
আমি আবার তোমার লগে থাকার তাড়া পাইলাম

আমি দরজা খুললাম আস্তে করি
আর কান খাড়া করি
তুমি কত গভীরভাবে ঘুমাও এইটা বুঝতে চাইলাম

আজরাতে
আমি তোমার রুমে আসলাম
বিছানাটা বরাবরই
তোমার আত্মা দিয়ে ঢাকা
আর কসম করে বলতেছি
এখনও তোমার নিঃশ্বাস শুনতে পাইলাম
 

মনে আছে তোমার?

মনে আছে তোমার
সেই ছোট্ট ছেলেটার কথা
যে তার মাবাবার লগেই থাকতো
আমাদের কাছাকাছি?
মনে আছে তোমার
যখন তার মা তারে
আমাদের লগে যাইতে দিলো বাজারে?
আর আমি তোমাদেরকে একলগে রাখলাম খেলতে আর গুনগুনাইতে
মনে আছে তোমার
কি কিউট আর ভদ্র একটা ছেলে ছিল সে?
সে এমনকি কাড়ি নিত না
বা বিরক্তও হইতো না
যখন তুমি তার খেলনা নিতা
অথবা তারে ভর দিতা উঠে দাঁড়াইতে

তার নাম ছিল সেলিম
তার মা, জোসেফিন, এক
চাকরীছাড়া মহিলা,
ত্যক্তবিরক্ত হওয়া, আমার মত
যখন আমি শুনলাম
ছেলেটার বাবা তারে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে
চুরি করি নিয়ে গেছে তার দাদীর কাছে
আমি তার জন্যে কানলাম
ঐমূহূর্তে
আমি জানতাম না
আমার প্রথম চোখের পানি
ফেলতেছিলাম আমি
তোমার জন্যে
 

আমাদের লড়াইয়ের পাঁচ বছর পর

আমাদের লড়াইয়ের পাঁচবছর পর

আমি হইচই থেকে দূরে হাঁটা দিলাম
সে ফলো করলো আমারে
বসলো আমার কিনারে
আমি সাহস করে মাথা রাখলাম তার ঘাড়ে
তার বাতাসে আমি চাইলাম নিঃশ্বাস নিতে
আর তার শৈশবের মিইয়ে যাওয়া ঘ্রাণ ফিরায়ে দিতে

আমি তার মিষ্টি, আঠালো
হাতটা নিলাম আমার হাতে
সে গুনতে শুরু করলো আমার আঙুল
তার জন্যে ছিল আমার হাজার আঙুল

বিরক্তিকর নিরবতায়
কোন ফরফরানি ছাড়া
তার হৃদয়
আর নিঃশ্বাসে
সে কাঁপা কাঁপা গলায় আমারে জিগেশ করলো
তুমি কি আমারে ভালবাসতে ভয় পাও?
কিভাবে আমার মতন একজন মহিলা
ভালবাসতে ভয় পাইতে পারে
যখন তার সারাজীবনে
সমস্ত পথে
সমস্ত গানে
সমস্ত চুমুতে
সমস্ত হাসিতে..?
আমি বললাম
হ্যাঁ

সে মাথা নাড়ালো
হেসে
ফলে সব কথা ঝরি পড়লো আমাদের চারপাশে
একটা আহত পাখির পালকের মতন
সে উত্তরে বলল
আমিও

The following two tabs change content below.
Avatar photo

ফুল্লরা

পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
Avatar photo

Latest posts by ফুল্লরা (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →