Main menu

আমাদের ভাষাসমস্যা – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৯১৭)

This entry is part 7 of 22 in the series লেখার ভাষা

[১৩২৪ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মিলনীর দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতি হিসাবে কলকাতায় দেয়া ভাষণ।]

আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। দুঃখের বিষয়, জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধের ন্যায় এই সোজা কথাটীকেও আমাদের মধ্যে এক সম্প্রদায়কে বুঝাইয়া দিলেও তাঁহারা জোর করিয়া বুঝিতে চাহেন না। তাই মধ্যে মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা কি কিংবা কি হইবে, তাহার আলোচনা সাময়িক পত্রিকাদিতে দেখিতে পাওয়া যায়। হা আমাদের সূক্ষ্ম বুদ্ধি।

মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষা কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া পরাণ আকুল করে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষার ধ্বনির জন্য প্রবাসীর কান পিয়াসী থাকে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষায় কল্পনা-সুন্দরী তাহার মনমজান ভাবের ছবি আঁকে? কাহার হৃদয় এত পাষাণ যে মাতৃভাষার অনুরাগ তাহাতে জাগে না? পৃথিবীর ইতিহাস আলোচনা করিয়া দেখ মাতৃভাষার উন্নতি ব্যতীত কোনও জাতি কখনও কি বড় হইতে পারিয়াছে? আরব পারস্যকে জয় করিয়াছিল। পারস্য আরবের ধর্ম্মের নিকট মাথা নীচু করিয়াছিল, কিন্তু আরবের ভাষা লয় নাই; শুধু লইয়াছিল তাহার ধর্মভাব আর কতকগুলি শব্দ। তাই আনোয়ারী, ফারদৌসী, সাদী, হাফিয, নিযামী, জামী, সানাই, রূমী প্রমুখ কবি ও সাধক-বুলবুল কুলের কলতানে আজ ঈরানের কুঞ্জ-কানন মুখরিত। যে দিন ওয়াইক্লিফ লাটিন ছাড়িয়া ইংরেজী ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করিলেন, সেই দিন ইংরেজের ভাগ্যলক্ষ্মী সুপ্রসন্ন হইল। যতদিন পর্য্যন্ত জৰ্ম্মানিতে জম্মান ভাষা অসভ্য ভাষা বলিয়া পরিগণিত ছিল, তত দিন পর্য্যন্ত জর্ম্মানির জাতীয় জীবনের বিকাশ হয় নাই। বেশী দূর যাইতে হইবে না। আমাদেরই প্রতিবেশী আমাদের হিন্দুস্থানী মুসলমান ভাইগণ সংখ্যায় এত অল্প হইয়াও এত উন্নত কেন? আর আমরা সংখ্যায় এত বেশী হইয়াও এত অবনত কেন? ইহার একমাত্র কারণ তাঁহারা মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত আর আমরা মাতৃভাষার প্রতি বিরক্ত। হিন্দুস্থানী আলিমগণ উর্দুভাষায় কুরআন শরীফের অনুবাদ এবং তফসীর, ফিক্হ, হদীস, তসউউফ, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, ভ্রমণ-বৃত্তান্ত, কাব্য, উপন্যাস প্রভৃতি বিষয়ে বহু মৌলিক গ্রন্থ রচনা করিয়া কিংবা এতদ্বিষয়ক আরবী, পারসী ও ইংরাজি প্রভৃতি ভাষার গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করিয়া উর্দু ভাষায় সর্বাঙ্গসুন্দর ইসলামী সাহিত্যের সৃষ্টি করিয়াছেন। কিন্তু দুই চার জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত আমাদের মৌলভী মৌলানাগণ বঙ্গ ভাষায় গ্রন্থ রচনা করা দূরে থাকুক বঙ্গভাষা কাফেরী ভাষা, তাহাতে ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ করিলে ধর্মগ্রন্থের অমর্য্যাদা করা হয় ইত্যাদি রূপ প্রলাপ উক্তি করিতে ছাড়েন না। বিশুদ্ধরূপে বাংলা বলা বা লেখা তাঁহারা নিন্দাজনক মনে করেন। ফলে তাঁহাদের ধর্ম্মবিষয়ক বক্তৃতা শুনিয়া সামান্য বাংলা-জানা শ্রোতারা পর্য্যন্ত হাসিবে কি কাঁদিবে, তাহা ঠিক করিতে পারে না। তাঁহাদের বাংলা ভাষায় যেমন দখল, উদ্ধৃতিও তেমন। স্কুলের ন্যায় যে পর্য্যন্ত বাংলার মাদ্রাসাতেও বাংলা ভাষা অবশ্যপাঠ্য দেশীয় ভাষারূপে স্থান না পাইবে, সে পর্য্যন্ত আমাদের এ দুরবস্থা ঘুচিবে না। যে পর্য্যন্ত আরবী-পারসী-জানা মুসলমান লেখক বাংলা ভাষার সেবায় কলম না ধরিবেন, সে পর্য্যন্ত কিছুতেই বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য গঠিত হইবে না। সে দিন অতি নিকট, যে দিন বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভাষার স্থান অধিকার করিবে। বিদেশীয় ভাষার সাহায্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চ্চার ঘতন সৃষ্টিছাড়া প্রথা কখনও টিকিতে পারে না।

মুসলমান ছাত্রের পক্ষে কোন classical language লওয়া উচিত, ইহার উত্তরে প্রত্যেক মুসলমান এক বাক্যে বলিতে বাধ্য হইবেন আরবী। আল্লাহর শেষ প্রত্যাদেশ আরবীতে। আল্লাহর শেষ নবী আরবী। আমরা সেই নবীর উম্মত (মণ্ডলী), সেই শেষ প্রত্যাদেশের উত্তরাধিকারী। অনুবাদে মূলের ছায়া পাওয়া যায় মাত্র; মূলের প্রাণ অনুবাদে থাকিতে পারে না। যদি ইসলাম ধর্ম্মকে তাহার প্রাথমিক যুগের অনাবিল অবস্থায় বজায় রাখা আবশ্যক বলিয়া মনে হয়, যদি শত দেশভেদ এবং সহস্র ভাষাভেদ সত্ত্বেও ইসলামের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অক্ষুন্ন রাখা কর্তব্য বলিয়া মনে হয়, তবে মুসলমানকে তাহার কুরআন হদীস মূল ভাষায় পড়িতে হইবে, পড়িয়া বুঝিতে হইবে, বুঝিয়া মজিতে হইবে। যদি মরুকে নগর করিবার, পশুকে মানুষ করিবার, অন্ধকে চক্ষুষ্মান করিবার, কাঙ্গালকে আমীর করিবার, ভীরুকে বীর করিবার অমোঘ মন্ত্র শিখিতে চাও, তবে আরবী কুরআন শিখ। যেমন প্রত্যেক খ্রীষ্টান বালক তাহার বাইবেল জানে, যে পর্য্যন্ত প্রত্যেক মুসলমান বালক তেমনই তাহার কুরআন শরীফকে না জানিবে, সে পর্য্যন্ত মুসলমান সমাজ জাগিবে না। সমস্ত জগতের বদলে যে মুসলমান তাহার কুরআন ছাড়িতে প্রস্তুত ছিল না, আজ দেখ, সেই মুসলমান সন্তান সংস্কৃত, পারসী, উর্দু কিংবা পালি ভাষার বিনিময়ে কিরূপে তাহার কুরআনকে বর্জন করিতেছে। হা ধিক্ আমাদের মৌখিক ধৰ্ম্মানুরাগকে। হা ধিক্ আমাদের দুনিয়া-পূজাকে। আমি বলিন মুসলমান কূপমণ্ডুক হইয়া কেবল আরবী সাহিত্যই আলোচনা করিবে। জগতের জ্ঞান ভাণ্ডার মুসলমানেরই জন্য। ধর্মগুরু এইরূপ বলিয়াছেন যে, “বিজ্ঞান মুসলমানের হারান ধন, যেখানে পাও তাহাকে গ্রহণ কর।” পুনশ্চ, “জ্ঞান অনুসন্ধান কর, যদিও তাহা চীন দেশে হয়।” আমি শুধু এইটুকু বলিতে চাই, আগে ঘরের খবর জান, পরে পরের খবর জানিও।

স্কুলের ন্যায় মাদ্রাসাতেও মাতৃভাষা, প্রধান ভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা এই তিন ভাষার চর্চ্চা হইবে। এক্ষণে জিজ্ঞাস্য, দ্বিতীয় ভাষা কি হওয়া উচিত? আমি বলি ইংরেজী। ইংরেজী ভাষার সাহায্যে আমাদের মৌলভী সাহেবগণ আধুনিক দর্শন, বিজ্ঞানের তত্ত্ব পাইবেন। যদি আমাদের আলিমকুল কুফুরী ফতয়ারূপ প্রচণ্ড দণ্ড দ্বারা আমাদের ইংরেজী শিক্ষিত সমাজকে ভীতচকিত ও দলিতমথিত করিয়া ইসলামের অপ্রতিহত ক্ষমতার পরিচয় দিতে না গিয়া, বাস্তবিক তাহাদের হৃদয়রাজ্যে ভক্তির আসন লাভ করিতে চান। যদি তাঁহারা ক্রমবর্ধনশীল শিক্ষিত সমাজকে ইসলামের গণ্ডী হইতে খারিজ করিয়া না দিয়া তাহাদের প্রকৃত ধৰ্ম্মোপদেশক হইতে চান, তবে তাহাদিগকে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে পরিপক্ক হইতেই হইবে। পৃথিবী সূর্য্যের চারিদিকে ঘুরিতেছে বলিলে যাঁহাদের মতে অতি ভাল মুসলমানও কাফের হইয়া যায়; পৃথিবী মাছের পিঠে আছে, পৃথিবী চারিদিকে কাফ পাহাড় দিয়া ঘেরা ইত্যাদিরূপ বালকোচিত মত যাঁহারা আজও গম্ভীরভাবে প্রচার করেন, তাঁহাদিগকে তাঁহাদের সমস্ত ধাৰ্ম্মিকতা সত্ত্বেও শিক্ষিত সমাজ ভক্তি করিতে অক্ষম।

স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সর্বত্রই উর্দু বা পারসী বৈকল্পিক বিষয় (optional subject) থাকিলে মুসলমান ছাত্রগণের ভাষা সমস্যার সমাধান হয়। যাহাতে উর্দু বা পারসী বৈকল্পিক বিষয় হইতে পারে, তজ্জন্য আমাদিগকে শিক্ষাবিভাগের কর্তৃপক্ষগণকে সম্মত করাইতে হইবে।

অনেক দিন পূর্ব্বে উর্দু বনাম বাংলা মোকদ্দমা বাংলার মুসলমান সমাজের ভিতরে উঠিয়াছিল, তাহাতে বাংলার ডিক্রী হইয়া মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হইয়া যায়। বর্তমানে আবার সেই মোকদ্দমার ছানি বিচারের জন্য উর্দুপক্ষকে বিস্তর সওয়াল জওয়াব করিতে শুনিতেছি। কিন্তু ন্যায়বান বিচারক দেখিবেন যে উর্দু বাংলার দখল উত্যক্তে কিছুতেই খাস দখল পাইতে পারে না; দখল বাংলারই থাকিবে, তবে উর্দু বাংলার অধীনে উপযুক্ত করে ইচ্ছাধীন প্রজাই স্বত্বে কিছু ভূমি বন্দোবস্ত পাইতে পারে মাত্র।

বাংলা ভাষা চাই-ই। মুহম্মদ-ই বখতিয়ারের বাংলা জয়ের পরে যখন হইতে মুসলমান বুঝিল এই চির-হরিতা ফলশস্য-পুরিতা নদ-নদী-ভূষিতা বঙ্গভূমি শুধু জয় করিয়া ফেলিয়া যাইবার জিনিস নহে; এ দেশ কর্ম্মের জন্য, এ দেশ ভোগের জন্য, এ দেশ জীবনের জন্য, এ দেশ মরণের জন্য, তখন হইতে মুসলমান জানিয়াছে বাংলা চাই-ই। তাই বাংলার পাঠান বাদশাহগণ বাংলা ভাষাকে আদর করিতে লাগিলেন। যে ভাষা দেশের উচ্চ শ্রেণীর অবজ্ঞাত ছিল, তাহা বাদশাহের দরবারে ঠাঁই পাইল। নসরৎ শাহ, হোসেন শাহ, পরাগল খাঁ, ছুটি খার নাম বাঙ্গালী ভুলিতে পারিবে না। বাদশাহের দেখাদেখি আমীর ওমরা বাংলার খাতির করিলেন। আমীর ওমরার দেখাদেখি সাধারণে বাংলার আদর করিল। গোঁড়া ব্রাহ্মণের অভিসম্পাত ও চোখরাঙ্গানিকে ভয় না করিয়া বাঙ্গালী নবীন উৎসাহে তাহার প্রিয় ধৰ্ম্মপুস্তকগুলি বাংলায় অনুবাদ করিল, কত দেশ প্রচলিত ধর্ম্মকথা বাংলায় প্রকাশ করিল, কত মৰ্ম্মগাথা বাংলায় প্রচার করিল। মুসলমানও চুপ করিয়া থাকে নাই। হিন্দুর রামায়ণ আছে; মুসলমানের “জঙ্গনামা” আছে। হিন্দুর মহাভারত আছে, মুসলমানের “কাসাসোল আম্বিয়া” আছে। হিন্দুর মহাজন পদাবলী আছে; মুসলমানের মারফতী গান আছে। হিন্দুর বিদ্যাসুন্দর আছে; মুসলমানের “পদ্মাবতী” আছে।

এই পুথি সাহিত্যকে ঘৃণা করিলে চলিবে না। ইহাই বাঙ্গালী মুসলমানের খাঁটি সাহিত্য। সেই সময়ের কথিত ভাষায় পুথিগুলি রচিত হইয়াছিল। তখন পারসী রাজভাষা। মুসলমানেরা বাংলা দেশে নূতন ভাব ও নূতন জিনিস আনিয়াছিলেন। এই নুতন ভাব ও নুতন জিনিসের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের পারসী নাম বাংলা ভাষার ঢুকিয়া পড়িল। রাজভাষার প্রভাব কথিত ভাষার উপর হওয়া স্বাভাবিক। এখন যেমন বাঙ্গালী চলিত ভাষায় ইংরেজীর বুকনি ঝাড়েন, তখন ঝাড়িতেন পারসীর বুকনি। মুসলমান সেই পারসীর ‘আমেজ’ দেওয়া কথিত ভাষাতেই পুথি লিখিতেন। হিন্দু কিন্তু লিখিবার সময় যথাসাধ্য পারসী বর্জন করিয়া শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করিতেন। এখনও বাংলা ভাষায় প্রায় দুই হাজার পারসী বা পারসীগত আরবী শব্দ পারসী প্রভাবের পরিচয় দিতেছে।

গুটিকতক শিক্ষিত লোককে ছাড়িয়া দিলে, এখনও এই পুথি সাহিত্যই বাংলার বিশাল মুসলমান সমাজের আনন্দ ও শিক্ষা সম্পাদন করিতেছে। পুথি-পাঠক যখন সুর করিয়া পুথি পড়িতে থাকে, তখন শ্রোতৃবর্গ কখনও কারবালার শহীদগণের দুঃখে গলিয়া যায়, কখনও আমীর হামযার বা রোস্তমের বীরত্বে মাতিয়া উঠে, কখন বা হাতেমের দয়ায় ভিজিয়া যায়। বেচারাদের আহার নিদ্রার কথা, ঘর সংসারের কথা, চিরদৈন্যের কথা আর মনে থাকে না। দীনেশ বাবুর “বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের” ন্যায় কে আমাদের এই পুথি সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করিবে?

যদি পলাশী ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানের ভাগ্য-বিপর্য্যয় না ঘটিত, তবে হয়ত এই পুথির ভাষাই বাংলার হিন্দু-মুসলমানের পুস্তকের ভাষা হইত। যাউক সে কথা। অতীতকে যখন আমরা বদলাইতে পারিব না, তখন সে কথা লইয়া বেশী আলোচনায় লাভ কি? এখন বর্তমানে আমরা বুঝিয়াছি পুথির ভাষা আর চলিবে না। তাহার সময় গিয়াছে। অতীত যুগের জীব-কঙ্কালের ন্যায় তাহাকে কেবল দেখিবার জন্য রাখিয়া দাও। এখন আমাদের শিক্ষিত সমাজের রুচি সাধু ভাষার দিকে। এখন এই ভাষাই চলিবে। ইহাতেই লেখাপড়া করিতে হইবে। ইহাতেই আমাদের ভাবী বাঙ্গালার মুসলমান সাহিত্য রচনা করিতে হইবে।

আর এক কথা। মুসলমানের ধর্ম দেশগত বা জাতিগত ধৰ্ম্ম নহে। তাহা সার্বজনীন ধৰ্ম্ম। মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য তাহার ধৰ্ম্ম তাহার প্রতিবেশীকে বুঝাইয়া দেওয়া। সাহিত্যের ভিতর দিয়া আমাদিগকে ইসলামের মহত্ব, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, ইস্লামের সৌন্দর্য্য প্রচার করিতে হইবে। এ কথা অস্বীকার করিবার জো নাই যে বাঙ্গালী হিন্দু মুসলমান ধৰ্ম্ম অপেক্ষা খ্রীষ্টান ধর্ম্মের অধিক পক্ষপাতী। সে কি খ্রীষ্টান ইংরেজী সাহিত্যের প্রভাবে নহে? প্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদিগকে আমাদিগের প্রতিবেশীর ভাষা গ্রহণ করিতে হইবে। যে ভাষা তাঁহাদিগের মর্ম্ম স্পর্শ করে, সেই ভাষা ব্যবহার করিতে হইবে। হিন্দুর ভাষায় ইসলামী ভাব ফুটাইতে হইবে। কবি কি সুন্দর বলিয়াছেন-

“মুখন কয বহরে দী গোঈ চে ইব্‌রানী চে সুরিয়ানী।
মকাঁ ময বহরে হক জোঈ যে জাবল্‌কা চে জাবল্‌সা।।”

হস্মের তরে আছে সব বাণী, কি বা সে হি কিবা সুরিয়ানী।
সত্যের তরে খোঁজ সব ঠাই, পূর্ব্ব পশ্চিম কোন ভেদ নাই।

মুসলমানী বাংলার কটমট বুলি বাংলার হিন্দুর কানে স্থান পাইবে না, অন্তরে ত নয়ই। খোদা, পয়গম্বর, বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, নমায, রোযা প্রভৃতি পারসী শব্দ ব্যবহার করিতে যদি আপত্তি না থাকে, তবে ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, উপাসনা, উপবাস প্রভৃতি শব্দ ব্যবহারে আপত্তি কেন? পানি, চাচা, নানা, দাদা, ফুফু প্রভৃতি শব্দগুলি ত হিন্দী বা রাজপুতানী। ইহাদের জন্য এত মারামারি কেন?

মুসলমানি বাঙ্গালা দেশে প্রাদেশিক বুলির ন্যায় চলিত ভাষায় থাকিতে পারে, কিন্তু তাহ্য সাহিত্যের ভাষা হইবে না। জলকে পথ নির্দেশ করিয়া দিতে হয় না। সে আপনার পথ আপনি চিনিয়া লয়। বাঙ্গালার মুসলমানের মন আপনিই জানিতে পারিয়াছে কোন ভাষায় তাহাকে সাহিত্য রচিতে হইবে। এখন মৌলানা, মৌলভী ও পণ্ডিত, যিনিই বঙ্গ ভাষায় স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া কিছু লিখিতেছেন, তিনিই সাধু ভাষা ব্যবহার করিতেছেন। দুই এক জন যদি কেহ মুসলমানি বাংলা চালাইতে চেষ্টা করেন বা তাহাতে বই লেখেন, তাহা শুধু কলমের জোরে। ইহাদেরই সমশ্রেণীর মহাত্মারা বাঙ্গালী মুসলমানেরা মাতৃভাষা কলমের জোরে উর্দু করিয়া দিতে চান।

এখানে এক নূতন সমস্যা উপস্থিত হইতেছে। বর্তমানে বাংলা লেখকগণের মধ্যে ভাষার রীতি (style) লইয়া তিন দলের সৃষ্টি হইয়াছে। এক দল কলিকাতার বিভাষাকে সামান্য একটু মাজিয়া ঘষিয়া চালাইতে চান। এই দলের চাই “সবুজ পত্রের” সম্পাদক প্রমথ বাবু। আমি রবি বাবুকে এই দলের প্রধান বলিয়া মনে করি। ইহাদিগকে চরমপন্থী বলা যাইতে পারে। দ্বিতীয় দল সাবেক দল। ইহারা ভাষার কোনও পরিবর্তন সহ্য করিতে পারেন না। “সাহিত্য” পত্রিকা এই দলের মুখপত্র। ইহারা প্রাচীন পন্থী। তৃতীয় দল সকলের বোধগম্য সহজ সরল বাংলা প্রচলন করিতে চান। পরলোকগত অক্ষয় কুমার সরকার ও মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রভৃতি এই মতাবলম্বী। ইহাদিগকে মধ্যপন্থী বলা যাইতে পারে। এই তিন দলের মধ্যে কোন দলে আমরা যাইব? এই প্রশ্নের একটী গা-জোরি উত্তর না দিয়া ধীর ভাবে আলোচনা করিয়া দেখা যাউক, কোন দলে আমাদের যাওয়া উচিত।

যেমন রাজনীতিক্ষেত্রে অভিজাততন্ত্র (Aristocracy) এবং গণতন্ত্র (Democracy) আছে, ভাষাক্ষেত্রেও তদ্রূপ অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্র আছে। ভারতীয় ভাষা হইতে আমি ইহার উদাহরণ দিতেছি। যে সময় ঋষিগণের মধ্যে বৈদিক ভাষা প্রচলিত ছিল, সেই সময় সাধারণ আর্য্যগণের মধ্যে বৈদিক হইতে কিছু বিভিন্ন লৌকিক ভাষা প্রচলিত ছিল। বৈদিক ছিল অভিজাততন্ত্রের ভাষা। লৌকিক ছিল গণতন্ত্রের ভাষা। ঋষিরা বলিলেন ‘লৌকিক ভাষা অগ্রাহ্য, অকথ্য। ন স্নেচ্ছিতবৈ। নাপভাষিতবৈ। ম্লেচ্ছ ভাষা ব্যবহার করিও না। অপভাষা ব্যবহার করিও না। যদি কর প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে।” ঋষিরা বলিলেন, “খবরদার। ব্যঞ্জনের উচ্চারণে কিংবা স্বরের উচ্চারণে যদি এক চুল পরিমাণ এদিক ওদিক্ হয়, তবে আর তোমার রক্ষা নাই। দেখ না অসুরেরা “হে অরয়ঃ হে অরয়ঃ’ স্থানে ‘হেলয়ঃ হেলয়ঃ’ বলিয়াছিল’ তাই তাহারা ধ্বংস হইয়া গেল। দেখ না বৃত্রের পিতা পুত্রেষ্টি যজ্ঞে ইন্দ্রশত্রু শব্দ বলিতে স্বরে অপরাধ করিয়াছিল। তাই বৃত্র ইন্দ্রের জেতা না হইয়া ইন্দ্রই বৃত্রের নিহস্তা হইল।” ঋষিদিগের শত সহস্র দোহাইতেও কিন্তু বৈদিক ভাষা পুজা অর্চনায় ছাড়া অন্যত্র লৌকিক ভাষার নিকট টিকিতে পারিল না। গণতন্ত্রের নিকট অভিজাততন্ত্রের পরাজয় হইল।

পরবর্তীকালে উচ্চ বর্ণেরা লৌকিক ভাষাকে মার্জিত করিয়া সংস্কৃত করিয়া লইল। সাধারণে লৌকিক ভাষা পালি ব্যবহার করিতে লাগিল। ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রকারেরা বলিলেন, “ন স্লেচ্ছভাষাং শিক্ষেত – ম্লেচ্ছ ভাষা শিখিও না।” তখন ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের দুর্দশা, বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম তাহার নবীন তেজে দণ্ডায়মান। কেহ ব্রাহ্মাণের কথা শুনিল না। বৌদ্ধ গণতন্ত্রের পক্ষ লইল। পালি ভাষা এক বিপুল সাহিত্যের ভাষা হইল। গণতন্ত্রের নিকট অভিজাততন্ত্রের পরাজয় হইল।

আর এক যুগ আসিল। এখন রাজশক্তি বৌদ্ধ। বৌদ্ধ এখন অভিজাততন্ত্রের দিকে। বৌদ্ধ এখন ধৰ্ম্মের দোহাই দিয়া পালিকে ধরিয়া রাখিতে চাহিল; তখন কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষ হইল জৈন ধৰ্ম্ম। তখন লৌকিক ভাষা প্রাকৃত। পালি প্রাকৃতের নিকট তিষ্ঠিতে পারিল না। গণতন্ত্রের নিকট অভিজাততন্ত্রের পরাজয় হইল।

আর এক যুগ আসিল। এ-যুগ অন্ধকারময়। এ যুগে উচ্চ শ্রেণীর প্রাকৃত নিম্ন শ্রেণীর অপভ্রংশের নিকট পরাজিত হইল। এই অপভ্রংশ হইল বাংলা, উড়িয়া, আসামী, হিন্দী, গুজরাতী, মারহাঠী প্রভৃতি দেশীয় ভাষাসমূহের মূল।

তার পর আধুনিক যুগ। এ যুগে পণ্ডিতেরা সাধারণের ভাষাকে মাজিয়া ঘষিয়া সাধু ভাষা করিয়া লইলেন, বিশাল জন সাধারণের ভাষাকে ইতর ভাষা বলিয়া ফেলিয়া রাখিলেন। বর্তমানে এই ইতর ভাষা পণ্ডিতের ভাষার উপর আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে চাহিতেছে। পণ্ডিত তাঁহার অন্ধ সংস্কৃতভক্তির জন্য বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের দুর্বহ শিকলে বাঁধিতে চাহিতেছেন। আর ইতর ভাষা সেই শিকলকে কাটিতে চাহিতেছে। তাহার চেষ্টা ফলবতী হইবে কি? যদি ভারতের ভাষা-ইতিহাসের শিক্ষা মিথ্যা না হয়, তবে নিশ্চয়ই এক দিন এই ইতর ভাষা সাধু ভাষাকে, যেমন লৌকিক বৈদিককে, পালি সংস্কৃতকে, প্রাকৃত পালিকে, অপভ্রংশ প্রাকৃতকে ঠেলিয়া দিয়াছিল সেইরূপে ঠেলিয়া ফেলিবে। সাধুভাষা মৃত ভাষারূপে পুস্তকে ঠাঁই পাইবে। যেমন মিলটন, জনসন প্রভৃতির লাটিন বহুল ভাষা এখন কেবল কেতাবী ভাষা রহিয়াছে, এখনকার সাধু ভাষার অবস্থাও সেই রূপ হইবে। পরিণামে চরম পন্থারই জয় হইবে। তবে মধ্যম পন্থা বর্তমান পরিবর্তনশীল যুগের (Transitional period এর) উপযুক্ত ভাষা বটে। একেবারে নি হইতে সা-তে সুর নামাইতে গেলে অনেকের কানে বেখাপ্পা লাগিবে নিশ্চয়ই।

ভাষাবিজ্ঞান শিক্ষা দান করে যে বহু প্রাদেশিক বিভাষার মধ্যে যে বিভাষায় বহু সদগ্রন্থ রচিত হয় বা যাহা রাজশক্তির আশ্রয় পায়, তাহা সাহিত্যের ভাষা হইয়া উঠে। জীবজগতের ন্যায় বিভাষাগুলির মধ্যেও যোগ্যতমের পরিত্রাণ নীতি চলিয়া আসিতেছে। সাহিত্যিক শক্তিতে নবদ্বীপের বুলি সমস্ত বাংলার সাহিত্যের ভাষা হইয়া উঠিয়াছিল। এখন পুনরায় সাহিত্যিক শক্তিতে ও রাজশক্তির আশ্রয়ে কলিকাতার বুলি বাংলা সাহিত্যের ভাষা হইয়া উঠিতেছে। এখন বাংলার বিভিন্ন জেলার ভদ্রলোক আপোসে কথাবার্তার জন্য কলিকাতার বুলিই ব্যবহার করেন। সাহিত্যিক ভাষা হইয়া উঠিবার ইহাই সূচনা। তারপর রবি বাবু প্রমুখ কলিকাতাবাসী সাহিত্যিকগণের প্রভাবে এই বিভাষা সাহিত্যের ভাষার স্থান অধিকার করিতে চলিয়াছে।

ভাষার-রীতি সম্বন্ধে আর একটী কথা বলিয়া এ সম্বন্ধে আমার বক্তব্য শেষ করিতেছি। একদল অন্ধ সংস্কৃতভক্ত বাংলা ভাষার মধ্যে প্রচলিত আরবী পারসী শব্দগুলিকে যাবনিক বলিয়া বর্জ্জন করিতে চাহেন। আমি বলি আগে তাঁহারা বাংলা দেশ হইতে যবনকে দূর করুন, পরে ভাষা হইতে যাবনিক শব্দগুলি দূর করিবেন। যখন সংস্কৃত ভাষা হোরা, কেন্দ্র, জামিত্র, দীনার প্রভৃতি গ্রীক শব্দ এবং ইকবাল, ইন্দুবার, মুকাবিলা প্রভৃতি আরবী শব্দ গ্রহণ করিয়াছে, তখন বাংলা ভাষার বেলায় আপত্তি কেন? ঐ সকল আরবী-পারসী শব্দ বাংলা ভাষার অস্থিমজ্জাগত হইয়াছে। ভাষা হইতে ইহাদিগকে তাড়ান সহজ ব্যাপার হইবে না। দোয়াত, কলম, কাগজ, জামা, কামিজ, কমর, বগল প্রভৃতি আইন আদালতে প্রচলিত সর্ব্ব-সাধারণের সহজবোধ্য হাজার খানিক শব্দ ত্যাগ করিয়া নূতন শব্দ গড়িলে তাহা নামের জোরে পুস্তকে চলিতে পারে বটে, কিন্তু তাহা ভাষায় চলিবে না। বাংলা ভাষায় আরবী, পারসী, তুরকী, ইংরাজী, ফরাসী, পর্তুগীজ প্রভৃতি যে কোনও ভাষার শব্দ বেমালুম খাপ খাইয়া গিয়াছে, তাহারা নিজেদের দখলী স্বত্ববলে বাংলা ভাষায় থাকিবে। তাহাদিগকে তাড়াইতে গেলে জুলুম করা হইবে।

Series Navigation<< একখানি পুরাতন দলিল: আবদুল করিম [১৯০৬]“মুসলমানী বাঙ্গালা” কি? – আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ >>
The following two tabs change content below.

বাছবিচার

এডিটর, বাছবিচার।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →