Main menu

বাংলাদেশি ফিকশন: গালিভরের সফরনামা – আবুল মনসুর আহমদ

This entry is part 3 of 9 in the series বাংলাদেশি ফিকশন

গালিভরের সফরনামা
(অপ্রকাশিত শেষাংশ)

প্রকাশকের আরজ

গালিভর সাহেব ছিলেন মশহুর মুসাফির। দুনিয়ার ছোট-বড় ছেলে-বুড়ো সবাই তাঁর নাম জানেন, যেমন আমরা সবাই জানি ‘ইত্তেফাকে’র মুসাফিরের নাম। তবে তফাৎ এই যে, ‘ইত্তেফাকে’র মুসাফিরের খ্যাতি পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ; কারণ পাসপোর্ট-ভিসার হাংগামায় তিনি দেশের বাইরে সফর করিতে পারেন না। তাছাড়া, আজকাল বিদেশে সফর করিতে হইলে হাওয়াই জাহাজে চড়া চাই। হাওয়াই জাহাজের ভাড়া যোগাতে পারে কেবল সরকারি তহবিল। ‘ইত্তেফাকে’র মুসাফিরের এসব সুবিধা নাই। কাজেই, তিনি বিদেশে সফরে যাইতে পারেন নাই। কিন্তু গালিভর সাহেবের আমলে সফরের খুবই সুবিধা ছিল। পাসপোর্ট ভিসার কোন হাংগামা ছিল না। সের খানেক চিড়া, চার পয়সার বাতাসা অথবা কিছু চিনা বাদাম পুটলায় বাঁধিয়া বাহির হইয়া পড়িলেই হইত। গালিভর সাহেব তাই ইচ্ছামত সফর করিতে পারিতেন এবং করিতেন। তাই দুনিয়া-জোড়া তাঁর নাম।

এই গালিভর সাহেবের যে সফর-নামা আপনারা সবাই পড়িয়াছেন, সেখানা লেখা ইংরাজিতে। অজ্ঞ লোকের ধারণ, গালিভর সাহেব শুধু ইংরাজিতেই একখানামাত্র সফর-নামা লিখিয়াছিলেন। কিন্তু আসল কথা তা নয়। আসলে গালিভর সাহেব দুইখানা সফর-নামা লিখিয়া যান: একখানা ইংরাজিতে, অপরখানা বাংলায়। এইখানে এতকালের এই গোপন কথা আজ প্রকাশ করিয়া দেওয়া আমি আবশ্যক মনে করিতেছি যে, গালিভর সাহেব বাঙলা জানিতেন; কারণ, তাঁর মাতৃভাষাই ছিল বাঙলা-যেহেতু তিনি ছিলেন খাঁটি বাঙালি। তিনি ছিলেন অতিমাত্রায় স্পষ্টবাদী। তাঁর স্পষ্ট কথাকে লোকে গালি মনে করিত। তাই, শত্রুরা তাঁর দুর্নাম দিয়াছিল গালি-ভরা।

এই বইয়ের প্রথম মুদ্রণের পর আরও কিছু পুরাতন ও উলি-কাটা কাগজ-পত্র উদ্ধার করিয়াছি। তাতে দেখা যায় যে, গালিভর সাহেব নোয়াখালী জেলার বাশেন্দা ছিলেন। তাঁর আসল নাম ছিল গালিব। নোয়াখালী জেলার গালিবপুর গ্রাম আজও তাঁর স্মৃতি বহন করিতেছে। এতে স্বচ্ছন্দে অনুমান করা যাইতে পারে যে, দুশমনেরা গালিব নামকেই বিকৃত করিয়া ‘গালিবর বা গালিভর’ করিয়াছিল।

যা হোক, গালিভর সাহেবের দু’খানা সফর-নামার মধ্যে ইংরাজিখানা প্রকাশের ভার তিনি দিয়া যান জনাথন সুইফ্টের উপর; আর বাঙলাখানা প্রচারের ভার দেন তিনি আমার উপর। গালিভর সাহেব তাঁর ইংরাজি সফর-নামাখানা আঠার শতকেই প্রকাশের হুকুম দিয়াছিলেন; কিন্তু বাঙলা খানার প্রকাশ তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখিতে ওসিয়ত করিয়া যান। তার কারণ এই যে, ইংরাজি সফর-নামা লিখিয়াছিলেন তিনি ফিজিক্যাল জায়েন্টে (দেও) ও ফিজিক্যাল ডুয়ার্ফ (বাউন)-দের লইয়া; আর বাঙলা সফর-নামা লিখিয়াছিলেন তিনি ইন্টেলেকচুয়াল জায়েন্ট (দেও) ও ইন্টেলেকচুয়াল ডুয়ার্ফ (বাউন) দের লইয়া। ফিজিক্যাল জায়েন্ট ও ফিজিক্যাল ডুয়ার্ফদের কাহিনী বুঝিবার মত বুদ্ধি-শুদ্ধি মানুষের আঠার শতকেই হইয়াছিল। কিন্তু ইন্টেলেকচুয়াল জায়েন্ট ইন্টেলেকচুয়াল ডুয়ার্ফদের কাহিনী বুঝিবার মত বুদ্ধি-আক্কেল বিশ শতকের আগে মানুষের হইবে না, গালিভর সাহেব ইহা আন্দাজ করিয়াছিলেন। বিশ শতকের ঠিক কোন সময়ে কোন সালে এবং কোন দিন ইহা প্রকাশ করিলে, পাঠকরা তা বুঝিতে পারিবে, সেটা আন্দাজ করিবার ভার গালিভর সাহেব আমারই উপর দিয়া গিয়াছিলেন।

কিন্তু গালিভর সাহেব একটু ভুল করিয়াছিলেন। লোকজনের বুদ্ধি-আক্কেল পাকিল কিনা, সেটা বুঝিতে গেলে বুঝনেওয়ালারও যথেষ্ট বুদ্ধি-আক্কেল থাকা চাই। দুর্ভাগ্যবশত আমার বুদ্ধি-আক্কেলের যথেষ্ট প্রখরতার অভাবে বড় দেরিতে আজ বুঝিতে পারিয়াছি যে, গালিভর সাহেবের বাংলা সফর-নামা বুঝিবার মত বুদ্ধি আক্কেল মানুষের অনেক আগেই হইয়া গিয়াছে। তথাপি ‘বেটার লেইট দ্যান নেভার’ এই নীতির উপর ভরসা করিয়া গালিভর সাহেবের বাঙলা সফর-নামা বিলম্বে হইলেও প্রকাশ করিলাম। প্রকাশ থাকে যে, আমার বাক্সপেটেরা বা আলমারি না থাকায় আমি গালিভর সাহেবের পাণ্ডুলিপিটি বাঁশের চোংগায় ভরিয়া ঘরের চালে লটকাইয়া রাখিয়াছিলাম। এত সাবধানতা অবলম্বনের ফলে পাণ্ডুলিপিটি চুরি যায় নাই বটে, কিন্তু উলিতে উহার কয়েক পাতা খাইয়া ফেলিয়াছে। উলির মাটি ঝাড়িয়া পুছিয়া যে কয় পাতা উদ্ধার করা গিয়াছে, নিম্নে তাই ছাপা হইল। Continue reading

ঢাকা শহরের বইয়ের দোকান

নিলখেত

না চাইলেও ঢাকা শহরের বইয়ের দোকানগুলাতে যাইতে হয় আমারে; দরকারে, অ-দরকারে। 

বড় মেয়ে’র ভার্সিটির বই খোঁজার জন্য যাইতে হইছে দুই-তিনবার, নিলখেতের বইয়ের দোকানগুলাতে। ভার্সিটির নানান ডিপার্টমেন্টের বই পিডিএফ থিকা প্রিন্ট কইরা বেচে অরা। তো, অইখানে বই-বেচার বা কেনার মেইন ঘটনা’টা হইতেছে ভার্সিটির কোন কোর্সে পড়ায় কিনা। একটা-দুইটা চেপ্টার হইলে আলাদা কইরা প্রিন্ট নিয়া নেয়া যায়, কিন্তু কোর্সের মেইন বই হইলে তো তখন বইটা প্রিন্ট করানো লাগে। 

এখন দোকানগুলা যে খালি টেক্সট-বুক, রেফারেন্স-বই বেচে তা তো না; নতুন-পুরাতন অনেক বই-ই তাদেরকে রাখতে হয়, বেচতে হয়। তো, সেইখানে ডিসাইডিং-ফ্যাক্টর হইতেছে বইয়ের কনটেন্ট না, বরং বইয়ের কোয়ালিটি। বইয়ের কাগজ, প্রিন্টিং আর বাইন্ডিং। নিউজপ্রিন্টে তেমন কেউ-ই ছাপায় না, শাদা কাগজে ছাপাইলে একরকম দাম, ব্রাউনে একটু বেশি-দাম, এইরকম। কনটেন্ট কি – সেইটা তো আপনি জানেন-ই, সো, অইটা কোন ঘটনা না। 

এখন এই জিনিসটা অন্য বইয়ের ব্যাপারেও ছড়াইছে। মানে, যারা ক্লাসের বইয়ের বাইরেও বই কিনেন, একটু-আধটু ‘পড়াশোনা’ করেন, তারা নিলখেতের দোকানগুলাতে পিডিএফ দিয়া বই বানায়া নেন। কিন্তু এই ডিমান্ড তো সবসময় থাকে না, যার ফলে দোকানদারেরা যেই বইগুলা বেশি চলে, সেইগুলা ছাপায়া রাইখা দেন। যেমন, ইদানিং ভালো চলতেছে ‘বিফোর দা কফি গেটস কোল্ড’ সিরিজের বইগুলা। ফুটপাতে বেচা হইতেছে, একজন ‘মার্কেটিং’ করতেছে এইভাবে যে, ‘প্রিমিয়াম কোয়ালিটি’ বই; কোন পেইজ বাদ যায় নাই! মানে, কোয়ালিটি দুইটা – নরমাল এবং প্রিমিয়াম। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বই-ই পাইবেন ১০০ টাকায়!

আমি বলতে চাইতেছি, নিলখেতে পাইরেটেড বই বেচা হয় – এইরকম লিগাল জায়গা থিকা দেইখা কোন লাভ আসলে নাই, এইটা এমন একটা রিয়ালিটি যেইটারে বদলানোর তেমন কোন উপায় নাই, বরং এই পাইরেটেড বা পিডিএফ-বইগুলা বাংলাদেশে বইয়ের কনজামশনের জায়গাটারে কিভাবে চেইঞ্জ কইরা দিছে বা দিতেছে, সেইটা খেয়াল করাটা বেশি দরকার। 

যে, ছাপানো-বই হইতেছে সফট-কপি বইয়ের একটা সাবসটিটিউট; আপনি যদি সফট-কপি পড়তে পারেন, তাইলে তো আর ছাপাইয়া পড়ার দরকার নাই! আরেকটা হইতেছে, বইটার কোন সফট-কপি নাই; এই কারনে পুরান বাংলা বইও ছাপা হইতেছে কিছু। কিছু ইন্ডিয়ান-বাংলা বইও আছে এই লিস্টে, যারা পুরানা-দিনের সাহিত্য পড়তে চান।…

তার মানে কি? নতুন কোন বই কি ছাপা হইতেছে না বাংলাদেশে, যেইটা রিডার’রা পড়তে চান? নাই – বলাটা একটু বেশি-ই হবে, কিন্তু এই মার্কেট’টা খুবই ছোট, এতোটাই যে, মেবি খেয়াল না করলেও চলে। অইসব বই নিলখেতে পাইবেন না। অইগুলা কিনতে হইলে “পশ” বইয়ের দোকানে যাইতে হবে! 🙂

Continue reading

বাঙ্গালা বানান সমস্যা (১৯৩১) – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

This entry is part 9 of 22 in the series লেখার ভাষা

[জাস্ট চিন্তা করেন, আজকে থিকা আরো ১০০ বছর আগে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই শাজেশনগুলা দিয়া গেছেন, বাংলা-বানানের ব্যাপারে। যেমনে আপনি বলেন বা উচ্চারণ করেন, বানান অইরকম হওয়া দরকার; বা ৫০টা অক্ষরের কোন দরকার নাই, ৩৭টা হইলেই হয়। তারপরও আমরা সেই “শাহশ” করতে পারি নাই!

তার কারণ এইটা না যে, আমাদের শাহশ নাই, বিদ্দা-বুদ্ধি নাই না, বরং আমরা যে ‘শিক্খিত’ হিসাবে বই পইড়া বাংলা শিখছি, শেই দেমাগ দেখানোর কোন উপায় তো থাকে না তখন! মানে, বাংলা-ভাশায় এই যে কথার লগে লেখার মিল নাই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সেইটারে না-জানা বা ভুল-জানা বা ঠিকমতো বুঝতে-না-পারা হিসাবে ভাবতে রাজি থাকলেও, আমি আশলে বলতে চাই যে, এইটা খালি বেয়াকরণের সমস্যা না, বরং শোশিও-পলিটিকাল ঘটনা। ভাশা একটা কালচারাল উপাদানই না, পলিটিকাল টুল। আর বানান এর একটা খুবই ক্রুশিয়াল পার্ট। এই জায়গা থিকা না দেখতে রাজি হইলে ভাশা ও বানান নিয়া গোঁড়ামি (আশলে এলিটিস্ট পজিশন) কখনোই ছাড়তে পারা পছিবল না।

এখন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যা বইলা গেছেন, তা আমাদেরকে অক্খরে অক্খরে পালন করতে হবে – ব্যাপারটা কখনোই তা না, কিন্তু যেই বেইজ থিকা উনি কথাগুলা বলতেছেন সেইগুলারে আমলে না নিয়া, বরং ভাশা বিষয়ে আলাপে সামনে না রাখাটা কোন কাজের জিনিস না আর কি! এরপরেও আরো কয়েকটা লেখাতে বাংলা হরফ, বানান এবং ভাষা নিয়া মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কিছু সাজেশন রাখছেন, যেইগুলা এখনকার সময়ের কনটেক্সটে রিভিউ করতে পারাটা দরকারি একটা কাজ।

লেখাটা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ উনার “ভাষা ও সাহিত্য” বইয়ে বাংলা ১৩৩৮ সনে (১৯৩১) সালে ছাপাইছিলেন; তার আগে ১৩৩১ সনে “প্রতিভা” পত্রিকা’তে ছাপা হইছিল; আর এখন ১৪৩০ সন, হিসাব করলে লেখাটার মোটামুটি ১০০ বছর পার হইছে। পুরান লেখা হইলেও এর আরগুমেন্টগুলা এখনো ভ্যালিড আশলে।

ট্রাই দিস!]

মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন বাঙ্গালীর উপর একটা বড় রকম কলঙ্ক চালাইয়া বিয়াছেন। বাঙ্গী নাকি –

প্রতিজ্ঞায় কল্পতরু, সাহসে দুর্জ্জয়,
কার্য্যকালে খোঁজে সবে নিজ নিজ পথ।।

অর্থাৎ কিনা বাঙ্গালীর কাজে কথায় ঠিক নাই। বাঙ্গালী হইয়া অবশ্য আমরা নিজের মুখে এই কালী মাখিতে রাজি নই, কথাটা সত্যই হউক আর যাহাই হউক। বাঙ্গলী নবীন সেন বলিয়াছিলেন, তাই আমরা উচ্চবাচ্য করি নাই, বড়লাট কর্জ্জন ঐ রকম একটা কথা বলায় আমরা কিন্তু বেজায় চটিয়া গিয়াছিলাম। সে যাহা হউক, একটা কথা কিন্তু খুব খাঁটি যে বাঙ্গালীর লেখায় আর পড়ায় ঠিক নাই। বাঙ্গালী আগুন লিখিয়া জল পড়ে না কিম্বা চাঁদ লিখিয়া ফাঁদ দেখে না; কিন্তু অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারে আমাদের লেখা আর পড়া, বা বলা আর লেখা এক নয়। “অনেক” আর “এক” এই দুইএর “এ” আমরা এক রকম পড়ি না। বর্ত্তমান “কাল”, “কাল” চোখ – এই দুই জায়গায় “কাল” এর উচ্চারণে অনেক তফাৎ। সে তোমার “মত”, তোমার “মত” কি? – এখানেও দুই “ম তে”র দুই উচ্চারণ।

আমাদের যে কেবল স্বরেই শঠতা তাহা নয়, ব্যঞ্জনেও আমাদের গোলযোগ কম নয়। গৃহলক্ষ্মীরা ব্যঞ্জনের দোষের কথা শুনিয়া অবশ্য আমার উপর চটিবেন না। এ ব্যঞ্জন ভাষার ব্যঞ্জন। কানে শোনা আর কানের সোনা – এখানে “শোনা” আর “সোনা” শুনিতে একই, কিন্তু চেহারায় আলাদা। তিনি যান, তুমি জান, – এখানেও আমাদের বলা ও লেখা এক নয়। এই রকম আরও অনেক গরমিল পাওয়া যাইবে।

স্বরাজ্য দল নাকি দো-ইয়ারকি ভাঙ্গিয়া এক-ইয়ারকি করিবেন। বাঙ্গালার বানান রাজ্যে যখন দো-ইয়ারকি দেখা যাইতেছে, তখন যদি কেহ তাহাকে এক-ইয়ারকি করিতে চায় সে কাজটা নিশ্চয়ই সময় মোতাবেক হইবে। পয়লা কথা এই যে, যে সকল শব্দ বাঙ্গালা ভাষার নিজস্ব অর্থাৎ যাহা সংস্কৃত থেকে ধার করিয়া বা ভাঙ্গিয়া চুরিয়া লওয়া হয় নাই সেখানে বাঙ্গালার স্বরাজ্য চলিবে। ইহাতে বোধ হয় পুরানী রৌশনীদের কোন অমত হইবে না। এই ধরুন ষত্ব ণত্বের কথা, ঐ দুইটা সংস্কৃতের জন্যই বাঁধা থাকিবে। অর্থাৎ কিনা এই দুইটা হইল সংস্কৃত বিভাগের জন্য রিজার্ভড্। ইহাতে অবশ্য নরম দল কোন আপত্তি করিবেন না। কিন্তু যখন দেখি নরম দলেরাই জিনিষ, পোষাক, কোরাণ, গভর্ণমেন্ট প্রভৃতি এলাকার বাহিরের বিষয়েও ষত্ন, ণত্বের কাড়াকাড়ি চালাইতেছেন, তখন মনটা বিদ্রোহী না হইয়া থাকিতে পারে না।

রূপক অলঙ্কার বাদ দিয়া সোজা কথায় বলিতে গেলে আমরা জানিতে চাই বাঙ্গালা বানান কি সংস্কৃতের হুবহু নকল হইবে, না উচ্চারণ অনুযায়ী হইবে? যদি বল সংস্কৃত অনুযায়ী হইবে, তবে প্রশ্ন উঠিবে সংস্কৃত অনুযায়ী কেন? তুমি হয়ত বলিবে সংস্কৃত বাঙ্গালা ভাষার জননী। এখানেই কিন্তু এক মহা খইকা। বাঙ্গালা যদি সংস্কৃতের মেয়ে হইল, তবে যে সময় সংস্কৃত বাঁচিয়াছিল সেই সময়েই বা ভাষাতত্বের হিসাবে ঠিক তার পরেই বাঙ্গালার জন্ম্ন দরকার ছিল। কিন্তু মহারাজ অশোকের পাথরের লেখা হইতেই প্রমাণ হইবে যে দু হাজার বছরের আগেই গোটা ভারতে সংস্কৃত মরিয়া গিয়াছিল। বাঙ্গালা কিন্তু তত প্রাটীন নয়। বাঙ্গালার বয়স প্রায় হাজার বছর। এ কথা আমরা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের বৌদ্ধগানের প্রসাদে জানিয়াছি। বাঙ্গালার আগে অপভ্রংশ, প্রাকৃত, প্রাচীন প্রাকৃত (পালি যাহার একটি রূপ) ছিল। কাজেই সংস্কৃতকে বাঙ্গালার মা না বলিয়া তাহাকে দিদিমার দিদিমা বলা যাইতে পারিত, যদি পালি ইত্যাদি প্রাচীন প্রাকৃত সংস্কৃতের মেয়ে বলিয়া সাব্যস্ত হইত। কিন্তু পালির কোষ্ঠী বিচার করিয়া অটো ফ্রাঙ্কে প্রভৃতি পণ্ডিতেরা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে সংস্কৃত পালির মা নয়। পিশেল প্রভৃতি পণ্ডিতেরা বলেন খালি তাহাই নয়, সংস্কৃত প্রাকৃতেরও মা নয়। তবুও তর্কের খাতিরে, যদি মানা যায় বাঙ্গালা সংস্কৃত হইতেই বাহির হইয়াছে, তাহা হইলে বাঙ্গালার বানান যে সংস্কৃতের মতন হইবে তাহার নজির কি? পালি, প্রাকৃত, অপভ্রংশ কোনটাই ত সংস্কৃতের বানান মানে না। বাঙ্গালা মানিতে যাইবে কেন? পালি, প্রাকৃত, অপভ্রংশ লিখে ভিকষা, আমরা কেন লিখিব ভিক্ষা অর্থাৎ ভিক্যা? পালি, প্রাকৃত লিখে, দকখিণ, আমরা কেন লিখিব দক্ষিণ? পালি লিখে ঞাতি, ঞাণ, প্রাকৃত লিখে ণাই, ণাণ; আমরা কেন লিখিব জ্ঞাতি, জ্ঞান? মাগধী প্রাকৃত লিখে “শে”, আমরা কেন লিখিব “সে”? পালি লিখে জিব্‌হা, প্রাকৃত লিখে জিব্ভা, আমরা কেন লিখিব জিহবা? যদি সাবেক নজির মানিতে হয়, তবে বাঙ্গালাকে সংস্কৃতের শাসনে আনা চলে না।
Continue reading

বাংলাদেশি ফিকশন: নেড়ে – সৈয়দ মুজতবা আলী

This entry is part 5 of 9 in the series বাংলাদেশি ফিকশন

পুজোর ছুটির পর কলকাতায় ফিরছিলুম। চাঁদপুর স্টেশনে আসবার একটু আগেই জিনিসপত্র গোছাতে লাগলুম । সঙ্গে ছিল শুধু একটি বেতের বাক্স আর সাতরঞ্জি জড়ানো বিছানা। যাদের সচল অচল অনেক লাটবহর থাকে, তাদের ট্রেন ছেড়ে জাহাজে উঠতে দেরি হয়। কাজেই আমার মতো স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিবিহীন ব্যক্তি মাত্রেই ছুটে গিয়ে জাহাজ দখল করে বসে। এ অবশ্য আমি গান্ধিক্লাসের যাত্রীদের কথা বলছি।
চাঁদপুরে গাড়ী থামল। তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম। কুলি না ডেকে মোট ঘাড়ে করে ছুটে চললুম। বিস্তর যুদ্ধের পর জাহাজে উঠলুম। ভেবেছিলুম বেশ খালি পাব; কিন্তু দেখলুম পৃথিবীতে একমাত্র হুঁশিয়ার লোক আমিই নই। অনেকেই অমার ঢের আগে এসে ভালো জায়গাগুলি দখল করে বসে আছেন। তাদের সম্পত্তির মধ্যে একখানা খবরের কাগজখানা বিছিয়ে হাতে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন।

থাক, অনুতাপ করে লাভ নেই। বেশ কসরত করে সিঁড়ির পাশে জায়গা দখল করে বিছানা বিছিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লুম। তারপর জামার বোতাম খুলে, ডান পা সোজা করে, বাঁ পা তার উপর তুলে নাচাতে শুরু করে বিজয়গর্বে চারিদিকে তাকাতে লাগলুম । হঠাৎ মনে হলো ব্যূহ তো তৈরী করা হয়নি! তাড়াতাড়ি উঠে বিছানার একপাশে জুতা আর একপাশে বাক্স ও মাথার দিকটা রেলিংয়ের সঙ্গে ঠেকিয়ে রাখলুম। এইবার ঠিক হল। আর কোন সামান্ত-যাত্রী-রাজা আক্রমণ করতে পারবেন না। চৌহুদ্দি ঠিক করে নিশ্চিত মনে শুয়ে পড়ে বিজয়গর্বে আবার ঠেঙ নাচাতে শুরু করলুম। চারদিকে তখন হৈ হৈ কাণ্ড। জায়গা দখল নিয়ে ঝগড়া, কুলির সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধ। নানা প্রকারের চিৎকারে চারদিক তখন বেশ সরগরম।

জাহাজ ছাড়ে ছাড়ে—ভাবলুম যাক একটু কবিত্ব করা যাক—অমনি।

“হে পদ্মা আমার
তোমায় আমায় দেখা—”

বাকিটা আর আওড়ানো হলো না। দেখি একটা ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে সিঁড়ি দিয়া উঠতে চেষ্টা করছেন। পেছনে তাঁর আবরু-অবগুণ্ঠিতা স্ত্রী—কিছুতেই তাল সামলে তাঁর সঙ্গে চলতে পাচ্ছেন না। ভদ্রলোকের সেদিকে দৃষ্টি নেই।

‘এগিয়ে চলার’ আনন্দে তিনি তখন মশগুল। আনন্দ বললুম বটে—কিন্তু থাড্ডো কেলাসের যাত্রী মাত্রেরই এ আনন্দের ভয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়।

যাক। শেষ পর্যন্ত তিনি উপরে উঠলেনই। বাঙ্গালীর ধৈর্য নেই, যুদ্ধ করতে পারে না—একথা ডাহা মিথ্যে। সেই ভদ্রলোককে দেখলে উপরোক্ত কুসংস্কার কারুরই থাকবে না। উপরে উঠেই তিনি চারিদিকে তাকাতে লাগলেন। কিন্তু—
“স্থান নেই স্থান নেই ক্ষুদ্র সে তরী
মেড়ো, খোট্টা, বাঙ্গালীতে সব গেছে ভরি ।”

ততক্ষণে তাঁর স্ত্রী এসে পেছনে দাঁড়িয়েছেন। বাবু তখন পেছনে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চমকে উঠলেন। বুঝতে পারলুম ‘কুলি চম্পট’—বললুম “কি মশাই, কি হয়েছে?”
ভদ্রলোকটি কাঁদ কাঁদ হয়ে বললেন ‘কুলি—কুলি’ কোথায় গেল, এই—”
আমি বললুম “নম্বর মনে আছে?”

আমার কথায় কান না দিয়ে বলতে লাগলেন “এ্যাঁ, তাইতো, কুলি কোথায় গেল—বাক্স টাক্স সব নিয়ে—গয়নার বাক্স—হায় হায়।”
গয়নার বাক্স’র কথা মনে হতেই তার শোক দ্বিগুণ হয়ে উঠল, আমি বিরক্ত হয়ে বললুম, —
“নম্বর কত ছাই বলুন না?”
“এ্যাঁ, তাইত নম্বর, হাঁ নম্বর! নম্বর এই—তাইত! ভুলে গিয়েছি।”
“বেশ কোরেছেন!” এইবার তাঁর স্ত্রীর গলা থেকে গড় গড় করে একটা আওয়াজ বেরুল। কিন্তু, সেটা কি কোন ভাষা, না শুধু আওয়াজ মাত্র তা বোঝা গেল না। Continue reading

একজন লেখকরে রিস্ক নিতে হয়, সে যা দেখে সবকিছুরেই লিখতে পারার বিষয়ে – জেমস বল্ডউইন

This entry is part 22 of 28 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

১.
জেমস বল্ডউইন জন্মাইছিলেন ২ আগস্ট, ১৯২৪। আজকে থেকে প্রায় একশো বছর আগে। একশো বছর আগে আম্রিকার অবস্থা কেমন ছিল? সেইটা সম্ভবত আঁচ করা যায় বল্ডউইনের এই ইন্টারভিউটা পড়লে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন বিচ্ছিন্নতা এবং রেসিয়াল অপ্রেশনের বাস্তবিকতায় আইন জারি করার পক্ষে যে আন্দোলন এবং প্রতিবাদ শুরু হইছিল বিশ শতকের শুরুতে তার শেষ দশ বছরের মাথায় বল্ডউইন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। বল্ডউইন আম্রিকান রেসিয়াল অপ্রেশনের রগরগে পরিণতির সাক্ষী হইছিলেন। ওনার বন্ধুর ব্রিজ থিকা লাফ দিয়া আত্মহত্যা করা, চল্লিশ ডলার নিয়া প্যারিসে চইলা আসা। এগুলা তো এক ধরণের ঘটনাই। সম্ভবত একজন লেখক তৈরী হয় তার সমাজের নানান ঘটনার ভেতর দিয়া, একটা এগজিস্টিং বাস্তবতা এবং পরে সম্ভাবনাময় এক বাস্তবতার ভেতর দিয়া। বল্ডউইন তো অন্য যেকোনো কিছুই হইতে পারতেন, যেমনটা উনি ইন্টারভিউতে বলতেছিলেন। তবু লেখকই হইলেন এবং একজন এংরি ইয়ং ম্যান।

২.
বল্ডউইন তার বাস্তবতারে ফিকশনালাইজ করছেন। ওনার আত্মজিজ্ঞাসা, সোসাইটির সাথে তার নিজের সম্পর্ক, নানান ডিলেমা এবং মানসিক জটিলতার ভেতর দিয়া যে উনি গেছেন, সেইগুলাই উনি ডিল করছেন তার লেখায়। অই সময়ের মেসকুলিনিটি, সেক্সুয়ালিটি, রেস এবং ক্লাস নিয়া যে সোশ্যাল ন্যারেটিভ তার বিপরীতে একজন সোশ্যাল অবজারভার হিশাবে তার খ্যাতি “সিভিল রাইটস মুভমেন্ট” ও “গে লিবারেশন মুভমেন্ট” এর সময় দেখা যায়। তার উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট একচেটিয়াভাবে শুধু আফ্রিকান আম্রিকান না, র‍্যাদার গে, বাইসেক্সুয়াল কারেক্টারও যা আসলে অই সময়ের বাস্তবতাটারেই রিফ্লেক্ট করে।

৩.
মরিস ব্লাশোর ‘লিটারেচার এন্ড দ্য রাইট টু ডেথ’ যেইটা মূলত ফ্রয়েডের ‘আনকনশাস’ এর উপর বেস করে লেখা। সেইখানে তিনি বলতেছেন, কেউ লেখালিখি শুরু করেন একটা প্রশ্ন থিকা, একটা জিজ্ঞাসা থিকা। কিন্তু আপনি যখন লিখতে বসেন এবং শেষপর্যন্ত আপনার লেখা হয়ে যায়, কিন্তু লেখার পরে আপনি সেই প্রশ্নের উত্তর আর খুঁজে পান না। যেমনটা বল্ডউইন বলতেছেন যে, লেখালিখির ব্যাপারটাই হইতেছে কিছু একটা খুঁজে বের করা, কিন্তু আপনি সেইটা আসলে আর খুঁজে পান না। সেই প্রশ্নাতীত একটা জায়গা থিকা তিনি তার অভিজ্ঞতাগুলারেই লিখছেন। এবং পরবর্তীতে ‘জিওভানিস রুম, ‘গো টেল ইট অন দ্য মাউনটেইন’ এর মতো ফিকশনসহ নন-ফিকশন ‘দ্য ফায়ার নেক্সট টাইম’, ‘নোটস অফ এ নেটিভ সন’ এর মতো বইগুলা ছিল তার সোশ্যাল-পলিটিক্যাল কনশাসনেসের ভেতর দিয়া আম্রিকান আধাসত্য, ব্লাশফেমি এবং মিথ্যার বিপরীতে একধরণের পাল্টা বয়ান তৈরী করা, অপ্রেসড এবং অপ্রেসর উভয়েরই মানসিক প্রভাবরে ডিল করা যা অই সময়ের আত্মাভিমানী সমাজের কাছে এক ধরণের অস্তস্তিকর সত্যের প্রকাশই ছিল।

৪.
একটা ইন্টারভিউ মূলত একজন লেখকের থট-প্রসেসটারে ধরতে কিছুটা সাহায্য করে। কিভাবে একজন লেখক কিছু জিনিস এডপ্ট করতেছে আর কিভাবে কিছু জিনিসরে বাতিল করতেছে সেইদিকে নজরটারে নিয়া যায়। বল্ডউইন এইখানে নানান বিষয় নিয়াই আলাপ করছেন। তার আর্লি এইজ, স্ট্রাগলিং সময়ের কথা, অন্য রাইটারের সাথে তার ভালো-মন্দ সম্পর্ক, ইভেন ফিকশন লেখার নানা টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়াও ডিটেইল আলাপ আছে। সব মিলায়ে, অই সময়ের ইউরোপ-আম্রিকার রেসিয়াল কনটেক্সটারে বোঝা যাবে ভালো।

সাঈদ শ’
এপ্রিল, ২০২৩

এই ইন্টারভিউ দুইটা নেওয়া হইছে লেখক হিশাবে জেমস বল্ডউইনের সংগ্রামের পছন্দের দুই জায়গায়। প্রথমে আমরা প্যারিসে দেখা করছিলাম, যেখানে উনি লেখক হিশাবে বাইড়া ওঠার প্রথম নয় বছর কাটাইছে এবং তার প্রথম দুইটা উপন্যাস লিখছেন, গো টেল ইট অন দ্য মাউন্টেইন আর জিওভানিস রুম। পাশাপাশি তার সবচে পরিচিত প্রবন্ধ সংগ্রহ, নোটস অফ এ ন্যাটিভ সন। উনি বলেন, প্যারিসেই উনি প্রথম নিজের সাথে এবং আম্রিকার সাথে তার বিদীর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে পরিচিত হন। আমাদের পরের আলাপটা হইছিলো সেন্ট পলে ডি ভেন্সের বল্ডউইনের বাড়িতে পাউট্রেস-এন্ড-স্টোনে, যেখানে লাস্ট দশ বছর ধইরা সে তার বাড়িটা বানাইছে। আমরা আগস্টের এক সপ্তাহে একসাথে লাঞ্চ করছিলাম তার মরশুমি গেস্ট ও সেক্রেটারি সহ। শনিবারে, অসহনীয় গরম আর আর্দ্রতার মধ্যে একটা ঝড় উঠছিলো, যার ফলে বাতজনিত কারণে তার লেখার হাত (বাম) এবং কব্জিতে ব্যথা হইছিলো। ঝড়ের কারণে অনিয়মিত বিদ্যুতের ঘাটতি আমাদের পাশের টেপ-মেশিনটার ব্যাঘাত ঘটাইছে। ব্ল্যাকআউটের সময় এলোমেলোভাবে বিষয়গুলা নিয়া আলাপ করতাম বা ড্রিংকে চুমুক দেওয়ার সময় নীরব হয়া থাকতাম।

বল্ডউইনের আমন্ত্রণে রবিবার ফিরা আসি, সূর্য জ্বলতেছিলো এবং বাইরে আমরা একটা পিকনক টেবিলে লাঞ্চ করতে সক্ষম হইছি, কুঞ্জছায়াঘেরা বিস্তৃত জমি যেইখানে ফলের গাছগুলা আর দেখার মতো ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী দৃশ্য। বল্ডউইনের মেজাজ আগেরদিনের চাইতে অনেকটা প্রফুল্ল হয়া উঠছে, এবং আমরা তার অফিসে ঢুকি আর পড়াশুনা করি যেইটারে তিনি তার “টর্চার চেম্বার’ হিশাবে বইলা থাকেন। বল্ডউইন স্ট্যান্ডার্ড লিগ্যাল প্যাডে লঙহ্যান্ডে লিখতেছেন, (‘আপনি সংক্ষিপ্ত ঘোষণামূলক বাক্যগুলি অর্জন করেন’) যদিও একটা বড়, পুরানা এডলার ইলেকট্রিক তার ডেস্কের একপাশে বইসা আছে — একটা আয়তকার ওক তক্তা যার দুইপাশে বেতের চেয়ার বসানো। একটা লেখার জায়গা এবং বেশ কয়েকটা খসড়া দিয়া স্তূপ করা হইছে; একটা উপন্যাস, একটা নাটক, আঁকা ছবি, আটলান্টা শিশুর হত্যার উপরে প্রবন্ধ, এগুলা সর্বশেষ ‘দ্য এভিডেন্স অফ থিংস নট সিন’-এ সংকলিত। তার রিসেন্ট কাজের মধ্যে আছে দ্য ডেভিল ফাইন্ডস ওয়ার্ক, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জাতিগত পক্ষপাত ও ভয়ের বিরুদ্ধে এক ধরণের আক্রমণ, একটা নোবেল, জাস্ট এবভ মাই হেড, যা ১৯৬০-এর দশকে সিভিল-রাইটস এক্টিভিস্ট হিশাবে তার অভিজ্ঞতা থিকা লেখা।

জর্ডান এলগ্রাবলি
১৯৮৪

ইন্টারভিউয়ার: আপনি কি বলবেন কিভাবে স্টেট ছাইড়া আসলেন?

বল্ডউইন: আমি ভাইঙা পড়ছিলাম। আমি প্যারিসে আসছিলাম চল্লিশ ডলার নিয়া, কিন্তু আমারে নিউ ইয়র্ক থিকা বাইর হইতে হইছিল। আমার অবস্থা তখন নানান মানুষের দুরবস্থায় পীড়িত ছিলো। একটা সময়, পড়াশুনা আমারে লম্বাসময়ের জন্য দূরে নিয়া গেছিলো। তখনো আমারে রাস্তাঘাট, অথরিটি আর ঠাণ্ডার সাথে ডিল করতে হইছে। আমি জানতাম শাদালোক হওয়ার অর্থ কি, আমি জানতাম একটা নিগ্রো হওয়ার অর্থই বা কি এবং আমি জানতাম আমার লগে আসলে কি ঘটতে যাইতেছিল। আমি আমার ভাগ্য হারায়া ফেলছিলাম। আমি জেলে যাইতেছিলাম, আমি কাউরে খুন করতে যাইতেছিলাম অথবা খুন হইতে। জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ থিকা লাফ দিয়া আমার বেস্টফ্রেন্ড দুই বছর আগে সুইসাইড করছিল। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →