Main menu

গরিব যেমনে মরে – জর্জ অরওয়েল

১৯২৯ সালে আমি প্যারিসের ১৫ সাব-ডিভিশনের এক্স হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ ছিলাম। রিসেপশন ডেস্কে আমার সেইখানকার কেরানিদের কাছে সবসময়ের মত বহু প্রশ্নের উত্তর দিতে হইল, এবং ঢুকতে দেয়ার আগে প্রায় বিশ মিনিট আমারে সেইখানে দাঁড় করায়ে রাখা হইসিল। আপনি যদি কখনো কোনো ল্যাটিন দেশে কোনোপ্রকার ফর্ম ফিলাপ কইরা থাকেন, তাইলে হয়তো প্রশ্নগুলার ধরণ আপনি বুঝবেন। বেশ আগে থেকেই আমার রেউমুর (তাপমাত্রার পরিমাপ) থেকে ফারেনহাইটের হিসাব করতে সমস্যা হয়, তবু আমি জানি যে আমার গায়ের তাপমাত্রা তখন ১০৩ এর মত ছিল, এবং ওই কড়া জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হইতে হইতে আমার জন্য দাঁড়ায়ে থাকাটাও কঠিন হয়া পড়সিল। আমার পিছনে অপেক্ষা করতেসিল রোগীদের বিশাল সারি, হাতে রঙিন রুমাল। তারাও তাদের ইন্টেরোগেশনের পালার অপেক্ষা করতেসিল।

ইন্টেরোগেশনের পরেই গোসল – যারা নতুন আসে তাদের এইটা করতেই হয়, অনেকটা কোনো কারখানা বা জেলখানার মত। আমার কাছ থেকে আমার জামাকাপড় নিয়া যাওয়া হয়। কাঁপতে কাঁপতে কয়েক মিনিট পাঁচ ইঞ্চির মত গরম পানির উপর দাঁড়ায়ে থাকার পরে আমারে একটা লিনেনের নাইটশার্ট আর ফ্ল্যানেলের গাউন দেয়া হয়। আমার পায়ের সাইজের কোনো স্লিপার নাকি তারা পান নাই, তাই ওই অবস্থায়ই আমারে বাইরে নিয়া যাওয়া হয়। ওইটা ছিল ফেব্রুয়ারির এক রাত, আর আমার তখন নিউমোনিয়া। যেই ওয়ার্ডের কাছে আমরা যাইতেসিলাম সেইটা প্রায় ২০০ গজ দূরে ছিল, এবং হাসপাতালের পুরা গ্রাউন্ড পার হইয়া ওইখানে যাওয়া লাগতেসিল। পাথুরে পথটা ঠাণ্ডায় জইমা ছিল, আর বাতাসে ফ্ল্যানেলের নাইটশার্টটা আমার উদাম উরুর উপরে ঝাপ্টাইতেসিল। ওয়ার্ডরুমে পৌছানোর পর আমার কেমন যেন একটা চেনা-চেনা অনুভূতি হইতেসিল যেইটার সোর্স আরো রাত হওয়ার আগে আমি ধরতে পারি নাই। রুমটা বেশ লম্বা, নিচু আর অন্ধকার-অন্ধকার ছিল। সেইখানে ফিসফিস শব্দ শোনা যাইতেসিল সবসময়, আর তিনটা বিছানা একটা আরেকটার খুবই কাছাকাছি ঠাসা ছিল। একটা বিচ্ছিরি, পায়খানা-টাইপ আবার মিষ্টি-মিষ্টি গন্ধ আসতেসিল। আমি শুইয়া পড়তেই দেখি আমার উল্টাপাশের বিছানায় একজন ছোটখাটো, গোল কাধ আর খসখসে চুলওয়ালা একজন লোক আধল্যাংটা হয়ে বইসা আছে আর একজন ডাক্তার আর তার ছাত্র লোকটার উপর অদ্ভূত কোনো অপারেশন চালাইতেসে। ডাক্তারটা প্রথমেই তার কালো ব্যাগ থেকে প্রায় ডজনখানেক ছোট ছোট ওয়াইনের গ্লাসের মত গ্লাস বাইর করলো, আর ছাত্রটা ম্যাচ জ্বালায়ে সব বাতাস বাইর কইরা নিল। এরপর রোগী লোকটার পিঠে বা বুকে গ্লাসগুলা চাইপা ধইরা রাখার পর ভ্যাকিউমের মাধ্যমে রক্ত জমাট বাইধা আসলো। কিছুক্ষণ পর আমি টের পাইলাম ওনারা কী করতেসে। ওইটারে বলা হয় কাপিং। এই চিকিৎসার কথা পুরানা ডাক্তারি বইতে পাওয়া যায়, কিন্তু এতদিন আমি ভাইবা আসছি এই অপারেশন কেবল ঘোড়ার উপরই চালানো হয়।

বাইরের ঠাণ্ডা বাতাসে আমার গায়ের তাপমাত্রা মনে হয় কইমা আসছিল, আর এই জঘন্য চিকিৎসার কায়দাটা আমি মানসিকভাবে একটু দূর থেকে আর এমনকি খানিকটা মজা নিয়াই দেখতেসিলাম। কিন্তু তার পরপরই ডাক্তার আর তার ছাত্র আমার বিছানার দিকে আগাইলো। হ্যাচকা টানে আমারে সোজা কইরা বসাইয়া একইভাবে সেম গ্লাসগুলা কোনোভাবে না ধুইয়া-টুইয়াই আমার গায়ে বসানো শুরু করলো। হাল্কা একটু প্রতিবাদ আমি করসিলাম, কিন্তু তা কোনো জানোয়ারের ডাকের চাইতে বেশি আমলে নিলো না তারা। যেইভাবে তারা আমার উপরও একই কায়দায় সেই চিকিৎসা শুরু করলো তা দেইখা বেশ ইম্প্রেসডই হইলাম। এর আগে আমি কখনো কোনো হাসপাতালের পাবলিক ওয়ার্ডে থাকি নাই, তাই ডাক্তারদের এইভাবে রোগীর সাথে কথাও না বলা, বা মানুষ হিসেবে রোগীদের নোটিসই না করার ব্যাপারটা আমি এর আগে কখনো দেখি নাই। আমার উপরে তারা ছয়টা গ্লাস লাগাইলো, তারপর রক্তের জমাট বাঁধা জায়গায় গ্লাসগুলা আবার লাগাইলো। প্রতিটা গ্লাসে প্রায় এক চামচ কইরা কালো রক্ত উইঠা আসলো। আমার সাথে যা করা হইল তার কথা ভাইবা প্রচণ্ড ঘিন্না, ভয় আর অপমানে আমি শুইয়া পড়লাম আর ভাবলাম এখন অন্তত তারা আমারে ছাইড়া দিবে। কিন্তু না, একদমই না। আরো একটা ইলাজ বাকি ছিল: গায়ে সরিষাবাটা লাগানো। এইটা ওই গরম পানি দিয়া গোসলের মতই রেগুলার জিনিস ছিল। দুইজন নোংরা মতন নার্স আগে থিকাই সরিষাবাটা রেডি কইরা রাখসিলেন, এরপর তারা সেইটা স্ট্রেইটজ্যাকেটের মত আমার গায়ে মাখাইয়া দিলেন। ওদিকে ট্রাউজার আর শার্ট পইরা ওয়ার্ডে ঘুরঘুর করতে থাকা কতগুলা লোক আমার কাছে আইসা জটলা পাকাইয়া আধা-দরদের সাথে ভ্যাটকাইতে থাকলো। পরে আমি জানসিলাম সে অন্য কোনো রোগীর গায়ে সরিষাবাটা মাখাইতে দেখা এই ওয়ার্ডের এন্টারটেইনমেন্টের অন্যতম উৎস। প্রায় পোনে এক ঘণ্টা এগুলা মাখায়া রাইখা দেয়া হয়, আর বাইরের লোকের কাছে এইটা ফানি লাগাটাই স্বাভাবিক। প্রথম পাঁচ মিনিটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, কিন্তু তাও মনে ভরসা থাকে যে সইয়া ফেলা যাবে। পরের পাঁচ মিনিটে সেই ভরসাও উইবা যায়। আর সরিষাবাটার কাপড়টা বেল্ট দিয়া বাইন্ধা রাখা হয়, কোনোভাবেই খোলা যায় না। এইটাই দর্শকরা সবচাইতে মজা নিয়া দেখে। শেষের পাঁচ মিনিটে, আমি খেয়াল করলাম, একপ্রকার অবশ হইয়া আসে সব। তারপর সরিষাবাটা গা থিকা উঠায়া ফেলার পর আমার মাথার নিচে বরফ-ভরা একটা ওয়াটারপ্রুফ বালিশ দিয়া আমারে একলা রাইখা সবাই চইলা গেল। কিন্তু আমি ঘুমাইলাম না। এবং আমার জানামতে, এইটাই আমার জীবনের একমাত্র রাত—মানে যেই রাতে আমি বিছানায় ছিলাম—কিন্তু একটুও ঘুমাইতে পারি নাই, এক মিনিটের জন্যেও না। Continue reading

নারী আর ফিকশন – ভার্জিনিয়া উলফ

এই আর্টিকেলের টাইটেলরে দুইভাবে পড়া যায়। টাইটেলটা দেইখা মনে হইতে পারে নারী আর তারা যেসব ফিকশন লিখে এইটা বুঝাইছে, আবার এইটাও মনে হইতে পারে যে নারী আর তাদের নিয়া যে ফিকশন লিখা হয়, এইটা বুঝাইতেছে। ইচ্ছা কইরাই এইটা ক্লিয়ার করতেছি না। কারণ যখন নারী রাইটার নিয়া ডিল করতেছেন, লেখা ওপেনই রাখা উচিত। লেখার শব্দগুলা বা অন্য জিনিস নিয়া ভাবার জন্যও কিছু স্পেস রাখা উচিত, কারণ এই কাজগুলার পিছে এমনসব জিনিসের ইনফ্লুয়েন্স আছে যার সাথে আর্টের কোন সম্পর্কই নাই।

নারীর লেখা নিয়া সবচেয়ে ন্যারো চিন্তাভাবনা অনেকগুলা প্রশ্ন উঠায়। কেন এইটিন্থ সেঞ্চুরির আগে নারীরা টানা লিখে যান নাই? এরপরে কেন পুরুষের মত একটার পর একটা লিখতে শুরু কইরা ইংলিশ ফিকশনের বেশ কিছু ক্লাসিক লিখে ফেলছেন? এইসবের পরে তাদের লেখা কেন, বলতে গেলে এখনো, ফিকশনের রূপ নেয়?

একটু ভাবতে গেলেই টের পাব যে আমরা যা যা জিগাইতেছি, এইগুলার উত্তরে শুধু আরো ফিকশনই পাব। এইগুলার উত্তর এখন পুরান ডায়রিতে, পুরান ড্রয়ারে, বয়স হওয়া মানুষের মেমরিতে ভাসা ভাসা অবস্থায় পাওয়া যাবে। এইগুলার উত্তর পাওয়া যাবে সাধারণ মানুষের লাইফে, বা ইতিহাসের আন্ধার অলিগলিতে, যেইখানে নারীদের একদম অল্প, ভাসাভাসাভাবে দেখানো হইছে। কারণ নারীদের নিয়া খুবই কম জানা যায়। ইংল্যান্ডের হিস্টোরিও পুরুষদের লাইনের হিস্টোরি, নারীদের না। আমাদের বাপদের নিয়া আমরা সবসময়ই কিছু না কিছু বলতে পারি, কোন ফ্যাক্ট বা স্পেশাল কিছু। উনারা আর্মিতে ছিলেন বা নাবিক ছিলেন, অমুক অফিসে ছিলেন, বা তমুক আইন বানাইছেন। কিন্তু আমাদের মা, দাদি-নানিদের কী রইছে? ট্র্যাডিশন ছাড়া কিছুই না। উনি বেশ সুন্দরী ছিলেন, লাল চুল ছিল, একজনরে কুইন চুমু দিছিলেন। আমরা উনাদের নাম, বিয়ার তারিখ, কয়টা বাচ্চা পয়দা করছে এসব বাদে উনাদের নিয়া কিছুই জানি না।

এমনেই, আমরা যদি জানতে চাই যে একটা পার্টিকুলার টাইমে নারী কেন এইটা ওইটা করছে, কেন কিছু লিখে নাই, আবার অন্যদিকে কেন তারা মাস্টারপিস লিখছে- এইটার উত্তর দেয়া চরম মুশকিল। একজন এসব ইতিহাসের দলিল খুঁজতে গেল, তারপর ইতিহাস ছাঁইকা নারীদের নিয়া যেসব কথা ওভারলুক করা হইছে বের কইরা শেক্সপিয়ার, মিল্টন, জনসনের টাইমে সাধারণ নারীদের ডেইলি লাইফের একটা রিয়েল ছবি ফুটায়া তুললো। সে কিন্তু তাইলে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা বই লিখার সাথে ক্রিটিকদের হাতে একটা নতুন অস্ত্র ধরায়া দিলো। এক্সট্রাঅর্ডিনারি নারী অর্ডিনারি নারীর উপর ডিপেন্ড করে। তাদের দিয়াই আমরা জানতে পারি যে একজন নরমাল নারীর লাইফের কী অবস্থা ছিল – কয়টা বাচ্চা ছিল, নিজের টাকাপয়সা ছিল কিনা, নিজের আলাদা রুম ছিল কিনা, ফ্যামিলি চালাইতে কেউ তারে হেল্প করত কিনা, হেল্পিং হ্যান্ড ছিল কিনা, বাসার কাজ করত কিনা। সাধারণ নারীর রিয়েলিটি আর লিমিটেশনগুলা দেখলে এক্সট্রাঅর্ডিনারি নারী রাইটারদের সাক্সেস বা ফেইলিওরের ব্যাখ্যা দেয়া যায়।

এই না থাকাটা একেকটা পিরিয়ডরে আলাদা কইরা দেয় মনে হয়। ক্রাইস্টের জন্মের ছয়শ বছর আগে একটা গ্রিক আইল্যান্ডে স্যাফো আর নারীদের ছোট একটা গ্রুপ কবিতা লিখত। তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না। তারপর ১০০০ সালের দিকে আমরা লেডি মুরাসাকি নামের এক নারীরে পাই যে জাপানে একটা লম্বা সুন্দর নভেল লিখছিল। কিন্তু আবার সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরির ইংল্যান্ডে যখন নাটক লেখক আর কবিরা এক্টিভ ছিল সেই সময়ে নারীরা ডাম্ব ছিল। এলিজাবেথান লিটারেচার পুরাপুরিই ম্যানলি। আবার এইটিন্থ সেঞ্চুরির শেষে, নাইন্টিন্থের শুরুতে আমরা ইংল্যান্ডে নারীরে আবার ঘনঘন সেরা লেখা লিখতে দেখি।

অবশ্যই আইন আর রীতিরেওয়াজ এই সাইলেন্স আর এবসেন্সের জন্য বড়সড়ভাবে রেস্পন্সিবল ছিল। ফিফটিন্থ সেঞ্চুরির একজন নারীর সাথে যা ইচ্ছা তাই করা যাইত, যেমন বাপ-মার পছন্দের পুরুষরে বিয়া না করলে পিটায়া রুমের একদিকে ছুঁইড়া ফালানো হইত – এইসবের মধ্যে থাকলে তো আর আর্ট বাইর হবে না। স্টুয়ার্টদের সময়ের মত যখন নারীরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়া বিয়া করতে হইত, আর হাজবেন্ডরে ‘লর্ড’, ‘মাস্টার’ মানতে হইত, এইটাই পসিবল যে তার লেখার জন্য সময় থাকত না, এনকারেজমেন্টও থাকত না। পরিবেশ আর অন্য মানুষের কথা মনের উপর যে কড়া ইফেক্ট ফেলে, এই সাইকো এনালাইটিকাল যুগে আইসা আমরা এইটা বুঝতে শিখতেছি। আবার চিঠি আর ডায়রির হেল্পে আমরা বুঝতে শিখতেছি যে একটা আর্ট বের করতে হইলে কতখানি এফোর্ট লাগে, আর একজন আর্টিস্টের মনরে কীরকম সাপোর্ট দেয়া লাগে। জন কিটস, টমাস কার্লাইল, গুস্তাভ ফ্লবার্টের জীবন আর চিঠি আমাদের এই ফ্যাক্টগুলা দেখায়া দেয়। Continue reading

পলিটিক্স যা করে সাহিত্য তার চাইতেও দীর্ঘস্থায়ী বিষয়ের মামলা – মারিও বার্গাস ইয়োসা

This entry is part 20 of 28 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

ইয়োসা ও ইয়োসার সাহিত্য

জায়ান্ট শব্দের বাংলা এক সময় লেখা হইতো দিকপাল। লাতিন আমেরিকাতে না কেবল, মারিও বার্গাস ইয়োসা বিশ্বসাহিত্যেরই একজন দিকপাল। ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল না পাইলেও, তার এই অবস্থানের খুব একটা নড়চড় হইতো বলে মনে হয় না। মার্কেস, কোর্তাসার, আয়েন্দেসহ লাতিন আমেরিকান ‘ম্যাজিক রিয়ালিস্টদের’-এর মধ্যে ইয়োসা একটা খটকার মতো ‘রিয়ালিস্ট’ সাহিত্য প্রতিভা যার ক্ষেত্রে রিয়ালিস্ট কথাটা আবার উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখা লাগে। ইয়োসা আপাতভাবে ‘রিয়ালিস্ট’ অথচ ন্যারেশন টেকনিকে পোস্টমডার্নিস্ট।

কথাটা একটু খোলাসা করি।

উনিশ শতকীয় উপন্যাসের একটা আইডিয়াল ইয়োসার সাহিত্যে দেখা যায়। উনিশ শতকের উপন্যাসিকদের মধ্যে সমাজ বা বাস্তবতার ‘পুরা গল্প’ বলার যে চেষ্টা সেই ‘টোটালিটি’ তুইলা ধরার বিষয়টা ইয়োসার থাকায়, এমনকি তার ছোট উপন্যাসগুলিতেও এক ধরণের মহাকাব্যিক বিশালতা দেখা যায়। নানান পার্স্পেকটিভ থেকে, বয়ানভঙ্গির নানান টেকনিক, স্টাইল ও চরিত্রের সমবায়ের কারণে ইয়োসার লেখায় এক ধরণের ‘জটিল’ টোটালিটি দাঁড়ায়। এই ইন্টারভিউটা পড়তে গিয়াও দেখবেন, বেশিরভাগ প্রশ্নে ইয়োসার উত্তর একটু লম্বা, এইটা উনি বাচাল বা ত্যানা প্যাচাইতে পছন্দ করেন বইলা না। লম্বা করেন কারণ ইয়োসা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়া একাধিক পার্স্পেক্টিভ হাজির করেন, নিজের মতটা দেয়ার পাশাপাশি অন্যের মতটাও উল্লেখ করেন। যেকোন বিষয়ে এইরকম মাল্টি-লেয়ার ও পার্স্পেক্টিভ তার সাহিত্যেরও প্রধান বৈশিষ্ট্য। টেকনিকে ও বয়ানে পোস্টমডার্নিস্ট অথচ ‘টোটাল’ রিয়ালিটি তুলে ধরার উনিশ শতকীয় আইডিয়ালের কারণে তার রচনারে অনেকে’সোশাল রিয়ালিস্ট’ নামের খুপড়িতে ফালায়। ইয়োসার লেখার পড়লে ব্যাপকতার অনুভুতি হয়—অন্তত আমার হয়—যেন শক্তিশালী কিছু একটা—আবেগ, বোধ, শাসরুদ্ধকর অদৃশ্য কিছু—আপনারে চারপাশ থেকে শক্ত করে ঘিরে রাখছে, আপনারে গ্রেফতার করে রাখছে। আপনি তার গ্রিপ থেকে বাইর হইতে পারতেছেন না। ইয়োসার অধিকাংশ রচনা আমি পড়ি নাই, কিন্তু ফিস্ট অফ দ্য গোট বা ওয়ার অফ দি এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড- এ এইটা আছে, এমনকি হালকা-এবসার্ড ও কমিক প্রেমিজের আন্ট জুলিয়া এন্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার পইড়াও আমার এমনটা মনে হইছে।

অসম্ভব উচ্চাভিলাষী সাহিত্যিকদের একটা প্রজন্ম গেছে যারা রাজনীতিরে সচেতনভাবে সাহিত্যে ব্যবহার করছেন। ইনফ্যাক্ট সাহিত্য আর রাজনীতিরে তারা অভিন্ন মনে করতেন। তারা সাহিত্য দিয়া পলিটিক্স করতে যান নাই, —প্রোপাগান্ডা হয়ে যাওয়ার আশঙ্ক থাকেই—, কিন্তু রাজনৈতিক বিষয় উপন্যাসে এমন নুয়্যান্সসহ আনছেন যে তা এপিক হয়ে উঠছে, মোটেই প্রোপাগান্ডা হয় নাই। যেমন–গুন্টার গ্রাস। মার্কেস। ফুয়েন্তেস (তবে বোর্হেস বা কোর্তাসাররা না)। গুন্টার গ্রাসদের প্রজন্ম মনে হয় দুনিয়া থেকেই উঠে গেছে। ইয়োসা বা মিশেল হলেবেকের মতো দুই-একজন জীবিত থাকলেও এই ধরণের লেখকেরা এখন মোটামুটি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি। ‘রাজনৈতিক বিবেক’ পরিচয়টা এখন অনেক লেখক এড়াইতে চান। ইয়োসা এই দিক দিয়া বিরল। তিনি সচেতনভাবে পলিটিকাল। ফলে ইয়োসার লেখা প্রায়ই রক্তাক্ত, শকিং, ভায়োলেন্ট, শ্বাসরুদ্ধকর। অথচ প্রায়ই চিপা-চাপা দিয়া ইরোটিক ও কমিক, কিন্তু মূলত বিহ্বলতা-মাখানো সুন্দর। এই সবগুলা উপাদান মিলে তার সাহিত্য অস্বস্তিকর এক ধরণের বিউটি তৈরি করে।

কী আছে এই বইয়ে?

প্যারিস রিভিউর ইন্টারভিউগুলার কমন ফিচার হইতেছে: লেখকের নিত্যদিনের ও ব্যক্তিগত জীবনে ছোট্ট একটু উঁকি মারা, কিছু সাজেশন, লাইফস্টাইল, লেখার কলকব্জা বিষয়ে কিছু কমেন্ট। এইখানেও তার ব্যত্যয় ঘটে নাই। ইয়োসা কেমনে চিন্তা করেন, তার সাহিত্য দর্শন কেমন, লেখার ক্ষেত্রে তার ডেইলি রুটিন কী? ইয়োসা সেইসব লেখকদের একজন যারা বায়বীয় নানান মিউজ ও ক্রিয়েটিভিটির মিথ উৎপাদন করেন না। আইডিয়া থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে একটা লেখার গড়ে ওঠা ও শেষ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটা তার জন্যে কেমন সেই বিষয়ের বিস্তারিত আলাপ আছে এই ইন্টারভিউয়ে। লেখা ইয়োসার কাছে নিছক লেখালেখি না, লেখা কঠিন একটা ডিসিপ্লিনের ব্যাপার যা লেখকের কাছ থেকে টোটাল কমিটমেন্ট দাবি করে।

লাতিন আমেরিকার বোর্হেস, মার্কেস, সারমিয়েন্তো, কার্পেন্তিয়ের, ওক্তাবিও পাজ, নেরুদাসহ, ইউরোপ ও আমেরিকার রথী-মহারথী সাহিত্যিকদের নিয়া ইয়োসার মতামত আছে ইন্টারভিউয়ে। আছে এদের কয়েকজনের সাথে ইয়োসার ব্যক্তিগত সম্পর্কের নানান গল্প; বিশেষ করে মার্কেস ও বোর্হেস বিষয়ে মজার এনেকডোটস।

লেখার কলকব্জা নিয়াও আছে দারুণ কিছু পর্যবেক্ষণ। ইয়োসা ফ্লবেরের কাছ থিকা শিখছেন ট্যালেন্ট হইতেছে কঠিন ডিসিপ্লিন আর ধৈর্য্য। ফলে চাকরি করার মতো প্রতিদিন ইয়োসা তার লেখার টেবিলে বসেন। ফকনারের কাছ থিকা শিখছেন সাহিত্যের বড় একটা অংশ ফর্মের খেলা– স্ট্রাকচারের মামলা— ফলে যেকোনো থিমের লেখারে মহৎ বা দূর্বল কইরা তুলতে পারে ফর্ম। লেখার কলকব্জায় বেশি আগ্রহীরা ইয়োসার লেটার্স টু এ ইয়াং নভেলিস্ট নামে চমৎকার চটি-সাইজ বইটা দেখতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার ভাল লাগার একটা দিক হইতেছে, সিরিয়াস লেখকদের জন্যে ইন্টারভিউটা খুব ইন্সপায়ারিং। Continue reading

(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ৩

৬: সমসাময়িক পৃথিবী

হযরত মুহম্মদের আবির্ভাবকালে জগতের ধর্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি কিরূপ ছিল?

এক কথায় উত্তর দিতে গেলে বলিতে হয়: সে সময়ে জগতে সত্যই আঁধার যগে নামিয়া আসিয়াছিল। আরব, পারশ্য, মিশর, রোম, ভারতবর্ষ প্রভৃতি তৎকালীন সভ্য জগতের সর্বত্রই সত্যের আলো নিভিয়া গিয়াছিল। জবুর, তাওরাৎ, বাইবেল, বেদ প্রভৃতি যাবতীয় ধর্মগ্রন্থই বিকৃত ও রূপান্তরিত হইয়া পড়িয়াছিল, ফলে স্রষ্টাকে ভুলিয়া মানুষে সৃষ্টির পায়েই বারে করে মাথা নত করিতেছিল। তৌহিদ বা একেশ্বরবাদ জগৎ হইতে লুপ্তপ্রায় হইয়াছিল; প্রকৃতি-পূজা, প্রতিমা-পূজা, প্রতীক-পূজা, পুরোহিত-পূজা অথবা ভূত-প্রেত ও জড়পূজাই ছিল তখনকার দিনে মানুষের প্রধান ধর্ম। রাষ্ট্রিক, সামাজিক বা নৈতিক শৃঙ্খলা কোথাও ছিল না। অনাচার, অবিচার, অত্যাচর ও ব্যভিচারে ধরণী পীড়িত হইয়া উঠিয়াছিল।

আমরা একে একে ঐ সমস্ত দেশের আভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্বন্ধে এইখানে কিঞ্চিৎ আলোচনা করিব।

ভারতবর্ষ

ভারতবর্ষের অবস্থা তখন অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। বেদের কোন কোন সূত্রে ‘অজ’, ‘অকায়ম’ ও ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ ঈশ্বরের উল্লেখ থাকিলেও আর্যগণ দেবদেবীর আরাধনাই করিতেন। জনৈক খ্যাতনামা লেখক বৈদিক যুগের ধর্ম ও সংস্কার সম্বন্ধে বলিতেছেন: “বৈদিককালের ধর্ম ছিল ভৌতিক প্রকৃতির প্রত্যক্ষগোচর পদার্থের বা দৃশ্যের আরাধনা। বেদের ধর্ম বহুদেববাদ বলা যাইতে পারে।”

“প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ব্যাপার যেমন দেবত্ব লাভ করিয়াছিল, পার্থিব বহু বস্তুও তেমন দেবত্ব লাভ করিয়াছিল। ঝড়-বৃষ্টি, বজ্র-বিদ্যুৎ, ঊষা, রাত্রি প্রভৃতির সংগে সংগে জল, নদী, পর্বত, ওষধি, গাভী, অস্পৃশ্য প্রভৃতিও দেবতাত্মা বলিয়া বন্দিত হইত।”*

[শ্রীযযুক্ত চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের বেদবাণী ১৪ ও ২২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।]

বৈদিক যুগের কিছুকাল পরেই আর্যদিগের মধ্যে বর্ণাশ্রম প্রথার প্রচলন হইয়াছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র — এই চারি বর্ণে গোটা হিন্দুসমাজ বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছিল। একমাত্র ব্রাহ্মণদেরই বেদপাঠের এবং পৌরোহিত্য করিবার অধিকার থাকায় ব্রাহ্মণেতর লোকদিগের কোন ধর্মাধিকারই ছিল না। বহু সামাজিক ও রাষ্ট্রিক অধিকার হইতে তাহারা বঞ্চিত ছিল। হিন্দু শাস্ত্রকার মনু বলিতেছেন:

“যে ব্রাহ্মণ শূদ্রকে ধর্মোপদেশ প্রদান করিবেন, তিনি সেই শাস্ত্রের সহিত অসংবৃত্ত নামক নরকে নিমগ্ন হইবেন!” মনুসংহিতা, ৪।৮১

নারীজাতির অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। বেদমন্ত্রে তাঁহাদের কোন অধিকার ছিল না! নারীকে পুরুষের দাসীরূপেই গণ্য করা হইত, কোনরূপ সামাজিক অধিকার বা মর্যাদা তাঁহার ছিল না। নারীর চরিত্র বা প্রকৃতি সম্বন্ধেও তখনকার যুগে অত্যন্ত হীন ধারণাই লোকে পোষণ করিত। স্বয়ং মনু বলিতেছেন:

“মন্ত্র দ্বারা স্ত্রীলোকদিগের সংস্কারাদির ব্যবস্থা হয় না, একারণ উহাদের অন্তঃকরণ নির্মল হইতে পারে না।”

এইরূপে সমাজের প্রতি স্তরে বহু পাপ ও বহু জঞ্জাল পঞ্জীভূত হইয়াছিল।

Continue reading

একখানি পুরাতন দলিল: আবদুল করিম [১৯০৬]

This entry is part 6 of 22 in the series লেখার ভাষা

বাংলা-ভাষা নিয়া এই কথা খুব স্ট্রংগলিই চালু আছে যে, বিফোর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলায় ‘গদ্য ভাষা’ বইলা তেমন কিছু ছিল না। এমনকি এই এক্সটেন্ড পর্যন্তও কল্পনা করা যাইতে পারে যে, কেউ যেন বাংলা-ভাষায় কথা কইতো না, খালি কবিতার ছন্দে গান-ই গাইতো খালি! :p

অথচ ঘটনা ছিল হইতেছে যে, সাহিত্যের ফর্ম বলতে ছিল শুধু কবিতা; গদ্য সাহিত্যের ফর্ম হিসাবে একসেপ্টেড ছিল না। এমনকি ৫০/৬০ বছর আগেও তো ছন্দ না মাইনা কবিতা লেখলে সেইটারে কবিতা বলা যাইতো না; এখনো গদ্য-ছন্দ বইলা আলাদা কেটাগরি করা লাগে। মানে, সাহিত্যের ফর্মগুলারেই ভাষা বইলা মিস-রিড কইরা আসতেছি আমরা। গদ্য জিনিসটা অনেক পরে সাহিতের ফর্ম হিসাবে একসেপ্টেড হইছে বইলা আমরা মনে করতে থাকি যে, গদ্য-ভাষা বইলা কোন জিনিস ছিল না।

আবদুল করিম (সাহিত্য-বিশারদ) এই জায়গাতে ইন্টারভেইন করছেন। উনি খালি ‘পুঁথি সংগ্রহ’-ই করেন নাই, এইরকম একটা দলিলও খুঁইজা পাইছিলেন বাংলা ১৩১৩ সনে (ইংরেজি ১৯০৬), যেইটা আনুমানিক ১৭৭৮ সালের। এখন অইটা তো বাংলা-ভাষা, এবং গদ্য; সাহিত্য করা হয় নাই বইলা অইটা ছিল না – তা তো না!

আরো দুইটা উদাহারণ দেখেন –

(১৬৭২)

“শ্রীজসোমাধব ঠাকুর কুমড়াল গ্রামে দেবালয়ত আছিলা। রামসর্মা ও গয়রহ সেবকেরা আপনার ২ ওয়াদা মাফিক সেবা করিতেছিল। রাত্রদিন চৌকী দিতেছিল। শ্রী রামজীবন মৌলিক সেবার সরবরাহ পুরুসানুক্রমে করিতেছেন। ইহার মধ্যে পরগণা পরগণাতে দেওতা ও মুরূত তোড়িবার আহাদে…… থাকিয়া আর আর পরগণাতে দেওতা ও মুরূত তোড়িতে আসিল । ……. তাহার পর ২৭ মহরম মাহে ২৮ জৈষ্ঠ ঠাকুর দেখিবার প্রাতেঃকালে সকল লোক গেল…..।

—শ্ৰীমনোমোহন ঘোষের ‘বাংলা গদ্যের চার যুগ’ ( ১১ পৃঃ)

(১৭৮৬)

“শ্রীযুক্ত ওলন্দেজ কোম্পানীতে আড়ঙ্গ বিরভূমের গঞ্জে খরিদের দাঁদ আমি লইয়া ঢাকা আড়ঙ্গ চালানী করিয়াছি আপরেল যাহাতে এবং মোকাম মজকুরের গোমস্তা কাপড় খরিদ করিতেছিল এবং কাপড় কথক ২ আমদানী হইয়াছে এবং হইতেছিল দাস্ত কথক ২ তৈয়ার হইয়াছে এবং মবলক কাপড় ধোবার হাতে দাশতর কারণ রহিয়াছে তাহাতে সংগ্ৰীতি মেঃ গেল সাহেবের তরফ পেয়াদা আসিয়া খামখা জবরদস্তী ও মারপিট করিয়া ঘাট হইতে ধোবা লোককে ধরিয়া লইয়া গেল আমার তরফ হইতে গোমস্তা পেয়াদা যাইয়া সাহেব মজকুরকে হাজির করিলো তাহা সাহেব গৌর না করিয়া আমার লোককে হাকাইয়া দিলেক এবং কহিলেক তোমরা আইয়াছ সাজাই দিব আমার কমবেষ ৪০০০ চারি হাজার থান কাপড় ধোবার ঘাটে দাস্ত বেগর পচিতে লাগিল বহা সেওয়ায় কোরা কাপড় কাচীতে তইয়ার অতএব আরজ ইহার তদারক মেহেরবাণী করিয়া করিতে হুকুম হয়—“

(ওলন্দাজ কোম্পানীর ডিরেক্টরের কাছে লেখা হরিমোহন বর্মার আরজি)

২.
ঘটনা হইতেছে, এই উদাহারণগুলা নাই না, বা অনেক কষ্ট কইরা খুঁইজা বাইর করতে হবে – পুরাপুরি এইরকমও না ঘটনাটা। সাহিত্যের বাইরে নানান কাজে-কামে লেখা তো লাগতো মানুশের; অই জিনিসগুলাও ভাষা। রেফারেন্স হিসাবে শুধুমাত্র সাহিত্য-রে আমলে নিলে এইসব জিনিস আমরা দেখতে পাবো না।

আর আমরা দেখতে পাইতেছি না বইলাই জিনিসগুলা নাই না।

৩.
আবদুল করিমের লগে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌’র ইন্টেলেকচুয়াল জার্নিটা যদি কম্পেয়ার করেন তাইলে দেখতে পাইবেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌’র কন্ট্রিবিউশন ছিল রেফারেন্সগুলারে ক্রিটিকালি এগজামিন করার জায়গাটাতে; হিস্ট্রিকালি যেই রেফারেন্সগুলা আছে, সেইগুলারে উনি খুব বেশি কোশ্চেন করেন নাই। এই জায়গাটাতে আবদুল করিম এগজিসটিং রেফারেন্সগুলারে মান্য বা অমান্য করেন নাই, বরং নতুন রেফারেন্সের খোঁজ করছেন, এবং দেখাইছেন যে, যেই জায়গাগুলাতে আমাদের খোঁজ-খবর করা দরকার সেই জায়গাগুলারে আমরা এভয়েড করে যাইতেছি।

আনফরচুনেটলি, আজকে একশ বছর পরেও এই জায়গাগুলা খুব একটা চেইঞ্জ হয় নাই। যার ফলে আবদুল করিমের ফোকাসের জায়গাগুলারে আরেকবার খেয়াল করা দরকার আমাদের।

ই.হা.

 

বঙ্গের প্রাচীন ইতিবৃত্ত ও ভাষাতত্ত্বের খাতিরে পুরাতন বাঙ্গালা দলিল দস্তাবেজগুলির সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিতান্ত আবশ্যক। সাধারণের নিকট তাহার মূল্য অকিঞ্চিৎকর হইলেও ঐতিহাসিকদিগের নিকট তাহা বড়ই মূল্যবান বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকে। কেননা, বৈজ্ঞানিকগণ কোন জিনিসকেই তুচ্ছ জ্ঞান করিতে পারে না। আমাদের সোনার বাঙ্গালার পুরাতত্ত্ব ঘোর কুহেলিকা সমাচ্ছন্ন। এই তিমিরাবরণ উন্মোচণের জন্য সকলেরই যথাসাধ্য যত্ন করা কর্তব্য। অদ্য আমরা নিম্নে যে একখানি প্রাচীন দলিলের প্রতিলিপি প্রকাশ করেতছি, আশা করি, প্রত্নতত্ত্ব হিসাবে উহার মূল্য নিতান্ত নগণ্য হইবে না। এরূপ প্রাচীন দলিল হইতে অনেক রহস্য উদ্ঘাটন করা যাইতে পারে। সেজন্য এ সমস্ত বিলোপোন্মুখ জিনিসের ফটোগ্রাফ করিয়া রাখাই উচিত; কিন্তু দুঃখের বিষয়, দরিদ্র সাহিত্যসেবীর পক্ষে তাহা সকল সময়ে সম্ভব হয় না। যাহা হউক, আমরা উহার যথাসম্ভব অবৈকল্য রক্ষা করিতেই যত্ন করিয়াছি । দলিলখানি এইরূপ : Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →