Main menu

একখানি পুরাতন দলিল: আবদুল করিম [১৯০৬]

This entry is part 6 of 22 in the series লেখার ভাষা

বাংলা-ভাষা নিয়া এই কথা খুব স্ট্রংগলিই চালু আছে যে, বিফোর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলায় ‘গদ্য ভাষা’ বইলা তেমন কিছু ছিল না। এমনকি এই এক্সটেন্ড পর্যন্তও কল্পনা করা যাইতে পারে যে, কেউ যেন বাংলা-ভাষায় কথা কইতো না, খালি কবিতার ছন্দে গান-ই গাইতো খালি! :p

অথচ ঘটনা ছিল হইতেছে যে, সাহিত্যের ফর্ম বলতে ছিল শুধু কবিতা; গদ্য সাহিত্যের ফর্ম হিসাবে একসেপ্টেড ছিল না। এমনকি ৫০/৬০ বছর আগেও তো ছন্দ না মাইনা কবিতা লেখলে সেইটারে কবিতা বলা যাইতো না; এখনো গদ্য-ছন্দ বইলা আলাদা কেটাগরি করা লাগে। মানে, সাহিত্যের ফর্মগুলারেই ভাষা বইলা মিস-রিড কইরা আসতেছি আমরা। গদ্য জিনিসটা অনেক পরে সাহিতের ফর্ম হিসাবে একসেপ্টেড হইছে বইলা আমরা মনে করতে থাকি যে, গদ্য-ভাষা বইলা কোন জিনিস ছিল না।

আবদুল করিম (সাহিত্য-বিশারদ) এই জায়গাতে ইন্টারভেইন করছেন। উনি খালি ‘পুঁথি সংগ্রহ’-ই করেন নাই, এইরকম একটা দলিলও খুঁইজা পাইছিলেন বাংলা ১৩১৩ সনে (ইংরেজি ১৯০৬), যেইটা আনুমানিক ১৭৭৮ সালের। এখন অইটা তো বাংলা-ভাষা, এবং গদ্য; সাহিত্য করা হয় নাই বইলা অইটা ছিল না – তা তো না!

আরো দুইটা উদাহারণ দেখেন –

(১৬৭২)

“শ্রীজসোমাধব ঠাকুর কুমড়াল গ্রামে দেবালয়ত আছিলা। রামসর্মা ও গয়রহ সেবকেরা আপনার ২ ওয়াদা মাফিক সেবা করিতেছিল। রাত্রদিন চৌকী দিতেছিল। শ্রী রামজীবন মৌলিক সেবার সরবরাহ পুরুসানুক্রমে করিতেছেন। ইহার মধ্যে পরগণা পরগণাতে দেওতা ও মুরূত তোড়িবার আহাদে…… থাকিয়া আর আর পরগণাতে দেওতা ও মুরূত তোড়িতে আসিল । ……. তাহার পর ২৭ মহরম মাহে ২৮ জৈষ্ঠ ঠাকুর দেখিবার প্রাতেঃকালে সকল লোক গেল…..।

—শ্ৰীমনোমোহন ঘোষের ‘বাংলা গদ্যের চার যুগ’ ( ১১ পৃঃ)

(১৭৮৬)

“শ্রীযুক্ত ওলন্দেজ কোম্পানীতে আড়ঙ্গ বিরভূমের গঞ্জে খরিদের দাঁদ আমি লইয়া ঢাকা আড়ঙ্গ চালানী করিয়াছি আপরেল যাহাতে এবং মোকাম মজকুরের গোমস্তা কাপড় খরিদ করিতেছিল এবং কাপড় কথক ২ আমদানী হইয়াছে এবং হইতেছিল দাস্ত কথক ২ তৈয়ার হইয়াছে এবং মবলক কাপড় ধোবার হাতে দাশতর কারণ রহিয়াছে তাহাতে সংগ্ৰীতি মেঃ গেল সাহেবের তরফ পেয়াদা আসিয়া খামখা জবরদস্তী ও মারপিট করিয়া ঘাট হইতে ধোবা লোককে ধরিয়া লইয়া গেল আমার তরফ হইতে গোমস্তা পেয়াদা যাইয়া সাহেব মজকুরকে হাজির করিলো তাহা সাহেব গৌর না করিয়া আমার লোককে হাকাইয়া দিলেক এবং কহিলেক তোমরা আইয়াছ সাজাই দিব আমার কমবেষ ৪০০০ চারি হাজার থান কাপড় ধোবার ঘাটে দাস্ত বেগর পচিতে লাগিল বহা সেওয়ায় কোরা কাপড় কাচীতে তইয়ার অতএব আরজ ইহার তদারক মেহেরবাণী করিয়া করিতে হুকুম হয়—“

(ওলন্দাজ কোম্পানীর ডিরেক্টরের কাছে লেখা হরিমোহন বর্মার আরজি)

২.
ঘটনা হইতেছে, এই উদাহারণগুলা নাই না, বা অনেক কষ্ট কইরা খুঁইজা বাইর করতে হবে – পুরাপুরি এইরকমও না ঘটনাটা। সাহিত্যের বাইরে নানান কাজে-কামে লেখা তো লাগতো মানুশের; অই জিনিসগুলাও ভাষা। রেফারেন্স হিসাবে শুধুমাত্র সাহিত্য-রে আমলে নিলে এইসব জিনিস আমরা দেখতে পাবো না।

আর আমরা দেখতে পাইতেছি না বইলাই জিনিসগুলা নাই না।

৩.
আবদুল করিমের লগে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌’র ইন্টেলেকচুয়াল জার্নিটা যদি কম্পেয়ার করেন তাইলে দেখতে পাইবেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌’র কন্ট্রিবিউশন ছিল রেফারেন্সগুলারে ক্রিটিকালি এগজামিন করার জায়গাটাতে; হিস্ট্রিকালি যেই রেফারেন্সগুলা আছে, সেইগুলারে উনি খুব বেশি কোশ্চেন করেন নাই। এই জায়গাটাতে আবদুল করিম এগজিসটিং রেফারেন্সগুলারে মান্য বা অমান্য করেন নাই, বরং নতুন রেফারেন্সের খোঁজ করছেন, এবং দেখাইছেন যে, যেই জায়গাগুলাতে আমাদের খোঁজ-খবর করা দরকার সেই জায়গাগুলারে আমরা এভয়েড করে যাইতেছি।

আনফরচুনেটলি, আজকে একশ বছর পরেও এই জায়গাগুলা খুব একটা চেইঞ্জ হয় নাই। যার ফলে আবদুল করিমের ফোকাসের জায়গাগুলারে আরেকবার খেয়াল করা দরকার আমাদের।

ই.হা.

 

বঙ্গের প্রাচীন ইতিবৃত্ত ও ভাষাতত্ত্বের খাতিরে পুরাতন বাঙ্গালা দলিল দস্তাবেজগুলির সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিতান্ত আবশ্যক। সাধারণের নিকট তাহার মূল্য অকিঞ্চিৎকর হইলেও ঐতিহাসিকদিগের নিকট তাহা বড়ই মূল্যবান বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকে। কেননা, বৈজ্ঞানিকগণ কোন জিনিসকেই তুচ্ছ জ্ঞান করিতে পারে না। আমাদের সোনার বাঙ্গালার পুরাতত্ত্ব ঘোর কুহেলিকা সমাচ্ছন্ন। এই তিমিরাবরণ উন্মোচণের জন্য সকলেরই যথাসাধ্য যত্ন করা কর্তব্য। অদ্য আমরা নিম্নে যে একখানি প্রাচীন দলিলের প্রতিলিপি প্রকাশ করেতছি, আশা করি, প্রত্নতত্ত্ব হিসাবে উহার মূল্য নিতান্ত নগণ্য হইবে না। এরূপ প্রাচীন দলিল হইতে অনেক রহস্য উদ্ঘাটন করা যাইতে পারে। সেজন্য এ সমস্ত বিলোপোন্মুখ জিনিসের ফটোগ্রাফ করিয়া রাখাই উচিত; কিন্তু দুঃখের বিষয়, দরিদ্র সাহিত্যসেবীর পক্ষে তাহা সকল সময়ে সম্ভব হয় না। যাহা হউক, আমরা উহার যথাসম্ভব অবৈকল্য রক্ষা করিতেই যত্ন করিয়াছি । দলিলখানি এইরূপ : Continue reading

বিলি কলিন্সের কবিতা

[ বিলি কলিন্স সম্ভবত সম-সাময়িক আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি। ওনার কবিতার দুইটা মূল ফিচার হইতেছে উইট এবং হিউমার। প্রায় সময় ওনার কবিতা টার্ন নেয় পিকিউলিয়ার এবং অ-প্রত্যাশিত কোনো দিশায়। এছাড়াও ওনার কবিতা রিডার’কে একটা মোলায়েম ভাইব দেয়।

বিলি কলিন্সের জন্ম ১৯৪১ এ, নিউ ইয়র্ক সিটিতে। বর্তমানে বয়স ৮২। ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিলেন। দুইবার আমেরিকার পোয়েট লরিয়েট হইছিলেন।

কলিন্স নিজেকে “রিডার-কনশাস” কবি বলেন, যিনি কবিতা লেখার সময় একজন রিডার’কে পাশে কল্পনা করেন, লেখার সময় রিডারের প্রতি সেন্সিটিভিটি বহন করেন। এছাড়াও কলিন্স এক জায়গায় বলছেন, “আমরা সারাক্ষন চেষ্টা করতেছি একটা দিনের ভিতর দিয়ে একটা লজিকাল, রেশনাল রাস্তা করে আগাইতে। সেটা করতে গিয়ে, দুইপাশে দারুন কিছু ডিস্ট্র্যাকশন আসে, যাদেরকে ফলো করাটা আমরা এফর্ড করতে পারি না। কিন্তু কবি চায় এরকম যেকোনো জায়গায় দাঁড়ায়া পড়তে।” ]

একটা কুকুর, তার মনিবের ব্যাপারে

আমাকে অনেক ইয়াং দেখায়
কিন্তু আমার বয়স বাড়তেছে ওর চেয়ে দ্রুত,
তারা বলে এই রেশিওটা সাত অনুপাত এক

সংখ্যার হিশাব যাই হোক
আমি একদিন ওরে পার কইরা যাবো
আর সামনে লিড নিবো
যেমনটা আমি করি
একসাথে বাগানে হাঁটার সময়

আর যদি এই কথাগুলা
কখনো ওর মনে আসে,
যেকোনো বরফ কিংবা ঘাসের ওপর
আমার ছায়া পড়ার চেয়ে
আরো বেশি সুইট একটা ছায়া
তখন নেমে আসবে ওর মুখের ওপর


উদ্দেশ্যহীন পিরিত

আজকে সকালে আমি যখন লেকের পাড়ে হাঁটতেছিলাম,
আমি একটা ছোট্ট রেন পাখির প্রেমে পড়সিলাম,
আর দিনের অন্য সময়ে প্রেমে পড়সিলাম একটা ইঁদুরের,
যাকে বিড়ালটা ফেলে দিয়ে গেছিলো ডাইনিং টেবিলের নিচে।

শরতের সন্ধার ছায়ার ভিতর
দর্জির জানালায় দেখা সেই মেয়ের প্রেমে পড়সিলাম
যে তখনও কাজ করে যাইতেছে তার সেলাই মেশিনে,
আর তারপর এক বাটি স্যুপের প্রেমে পড়সিলাম
যেখান থেকে ধোয়া উঠতেছে নেভাল যুদ্ধের মতো।

এটাই সবচেয়ে ভালো পিরিতি, আমি ভাবলাম,
যেখানে কোনো হিশাব কিতাবের দরকার পড়ে না,
কোনো গিফট, অথবা নিষ্ঠুর কথাবাত্রা,
সন্দেহের বাতিক, অথবা টেলিফোনে নীরবতার
দরকার পড়ে না।

যেমন, চেস্টনাটের প্রতি পিরিতি,
কিংবা একটা জ্যাজ কাপ, আর স্টিয়ারিংয়ে আমার একটা হাত।

কোনো যৌন বাসনা নাই, ধরাম করে দরজা বন্ধ করা নাই –
যেমন একটা বনসাই করা কমলার গাছের জন্য পিরিতি,
কিংবা পরিষ্কার শাদা শার্ট, সন্ধার সময় গরম পানিতে গোসল,
আর ওই হাইওয়ে’টা যেটা ফ্লোরিডার মাঝখান দিয়ে বইয়া যায়।

এই পিরিতে দরকার নাই কোনো অপেক্ষার,
কোনো রাগ কিংবা হিংশার –
শুধু একটা ছোট চিনচিনে ব্যথা কখনো কখনো –

ওই রেন পাখিটার জন্য, যে বাসা বানাইছে
সাগরের উপর একটা নিচু ডালে, আর
ওই মরা ইঁদুরটার জন্য,
যে এখনো তার হালকা বাদামী জামা’টা পরে আছে।

কিন্তু আমার হৃদয় সবসময় মঞ্চে দাঁড়ায়া থাকে,
পরবর্তী তীর’টা নেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।

ইঁদুরটাকে লেজ ধরে বাগিচায় নিয়ে
পাতা’দের গাদার উপর তাকে রেখে আসার পর
আমি নিজেকে পাই বাথরুমের সিংকের সামনে
সাবান’টার দিকে মমতা নিয়ে তাকায়ে থাকা অবস্থায়,
সে এত ধৈর্যশীল, আর এত সুন্দরভাবে গলে যায়,
আর এই ফ্যাকাশে সবুজ সাবান-দানির মধ্যে
এত সুন্দর ভাবে সে থাকে,
আমি বুঝতে পারি আমি আবার প্রেমে পড়তেসি,
যখন আমার ভেজা হাতের মধ্যে সে তার দিক বদলায়,
আর আমি পাই ল্যাভেন্ডার ও পাথরের সুবাস।

Continue reading

তাহমিদ রহমানের কবিতা

নূরে আলমের পিছে পিছে

আমিও নূরে আলমকে দেখলাম আজকে
(একইভাবে) রাস্তায় দাঁড়ায়ে থাকতে
একটা বাসের ভিতর বন্দি হওয়ার জন্য
অস্থিরভাবে দাঁড়ায়ে আছে
যেই বাসটা তাকে নিয়ে যাবে ক্যাম্পাস পর্যন্ত
ওর বন্ধুদের কাছে

তারপর সে হয়তো একটু হাসতে পারবে
ওদের সাথে বিড়ি টিড়ি খাইতে পারবে
তার অতটা চিন্তা করতে হবে না আর
কারণ বাসের ভিতর
যতক্ষণ বাস চলে
ওর এংজাইটিগুলা রাস্তার ডিভাইডার গুনতে গুনতে
ভুলে থাকতে পারবে সে
আর ওরাও ভুলে থাকতে পারবে ততক্ষণ
কারণ ও জানে
ওদের দেখা হলে
ওরা হাসতে পারবে সত্যি সত্যি
আর বিষয়গুলাকেও এত কঠিন মনে হবে না আর
মেনে নিবে ওরা তো এরকমই
একটু সিরিয়াস, একটু ভ্যাগাবন্ড

তখন আবার বাসে ওঠার মতো শক্তি পাবে
ফেরার পথে ডিভাইডারগুলা থেকে এংজাইটি কুড়ায়ে নিয়ে যাবে
ভাববে জ্যামট্যাম সিগনাল এগুলা তো এরকমই
থাকবে রাস্তায়一রাস্তার নিয়ম

আমার তর সইতেছিলো না আর
তাড়াতাড়ি বাসে উঠে গেলাম
নূরে আলমের পিছে পিছে
I sha’n’t be gone long.—You come too.


ভিনসেন্ট

আত্মহত্যার আগে
ভিনসেন্ট বললেন: আল্লাহ আমার সঙ্গে আমার ছবিগুলিকেও তুমি গ্রহণ করো!
আল্লাহ বললেন: না, ওগুলি জঘন্য, পৃথিবীতেই থাকুক, তুমি একাই চলে আসো।

Continue reading

ফিকশন: পার্সেল

এ বছর নামতেছে আগে আগে শীত, সেই ফুরফুরা আনন্দে সকালে দরজা খুলতেই তোমার ফেডএক্সের কার্ডবোর্ড বাক্স পাইলাম। ওজন তিন কেজির কম তো না, কী আছে ভিত্রে? আজকাল কিছু অর্ডার করার পরপরই হুটহাট জিনিস আইসা পড়ে, ঠিকানা নেয়ার এক সপ্তাহও হয় নাই। ঠিকানা জানার প্রশ্নে তোমার ভণিতা ছিলো না, স্যাডিস্টিকরা যেমন – ডাইরেক্ট ল্যান্ডিং। ভণিতা থাকলেও খারাপ লাগতো না কিছু, তাও সত্য।

বক্সকাটার দিয়া যত্নমতন বাক্স খুললাম। উপহার দিলা, কার্ডফার্ডে কোনো লিখলামিখলা না কিছু ভালোমন্দ। ভারী বাক্স হইতে বের হইলো ক্যালেন্ডার। ২০২৩ টু ২০৫৭, গুণে গুণে ৩৫ খানা দেয়ালে ঝুলানোর ক্যালেন্ডার। আধুনিক যুগে মানুষ এইসব আন-এস্থেটিক জিনিস বর্জন করে ফেলছে প্রায়। ভাড়াটিয়া বাসায় দেয়াল ফুটা করলেও আবার জরিমানা। ফোন দিয়া কৈফিয়ত তলব করতে তোমার উচ্ছ্বসিত কন্ঠ শোনা গেলো।

– পাইছো তাইলে আমার যুগান্তকারী, অনবদ্য, অভিনব উপহার?

– হ, তো তোমার ধারণা আমি ৬৮ বচ্ছর পর্যন্ত বাঁচবো?

– এইটা একটা সলিড হাঞ্চ আমার, তোমার অন্যান্য মৃত ফ্যামিলি মেম্বারদের সময়সীমা হিসাব করে; গর্বিত শোনা গেলো তোমাকে, নিজের মেধার ওপর আস্থায়।

– বুঝলাম।

– না বুঝো নাই। আমি দেখাইতে চাইতেছি তোমার জীবদ্দশায় বড়জোর এই ৩৫ টা ক্যালেন্ডার দরকার পড়বে তোমার। সবগুলা ক্যালেন্ডারের ওজনও সমান হবে না। ধরো ২০২৯-এ একটা বাড়ি কিনলা, ২০৩৩-এ হারাইলা চাকরি, আবার ২০৪১-এ গিয়া পাইলা এওয়ার্ড কোনো আবার ২০৪১-এই বড় কোনো সার্জারি।

– তা তো সবারই হইতে পারে। যে কারোই হইতে পারে। তা এই ক্যালেন্ডারগুলার মধ্যে তুমি কোনটায়?

– আমি-তুমির ঘটনা আবার কোত্থেকে টেনে আনলা! মূল পয়েন্টটাই মিস করতেছো। আমি বুঝাইতে চাইতেছি, তোমার সময় কতটা লিমিটেড, যে ৫ কেজিও ওজন হয় নাই তোমার আসন্ন সবগুলা বছর মিলায়ে।

– জগতের সবার সময়ই লিমিটেড, বিরক্ত হয়ে বললাম আমি। এমনও হইতে পারে ৩৫টা ক্যালেন্ডারের ১০টাও লাগলো না আমার। Continue reading

(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ২

৪: সভ্যতার মিলন-মোহনায় জন্ম হইল এই মরুপয়গম্বরের

ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হযরত ইব্রাহিমই তাঁহার পূর্বপুরুষ। কাজেই, হযরত মুহম্মদের আবির্ভাবের আদি বৃত্তান্ত জানিতে হইলে হযরত ইব্রাহিম সম্বন্ধে আমাদিগকে কিছু জানিতেই হয়।

এখন হইতে আনুমানিক ৪০০০ বৎসর পূর্বে বর্তমান মেসোপোটেমিয়ার অন্তর্গত ‘বাবেল’ শহরে ইব্রাহিমের জন্ম হয়। তাঁহার পিতার নাম ছিল আযর। তিনি কুম্ভকারের কার্য করিতেন। তিনি ছিলেন পৌত্তলিক। দেবমূর্তি নির্মাণই ছিল তাঁহার ব্যবসায়। হযরত ইব্রাহিমের কিন্তু এই জড়-ধর্ম ভাল লাগিল না; পৈত্রিক ধর্ম না মানিয়া তিনি হইলেন তৈহীদবাদী। নিরাকার আল্লার এবাদত এবং মানুষের সহিত প্রেমই হইল তাঁহার ধর্মের মূলমন্ত্র। বলা বাহুল্য, পুত্রের এই নবধর্মমত পিতা কিছুতেই সহ্য করিতে পারিলেন না। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই পিতাপত্রে বিরোধ উপস্থিত হইল।

পিতা পুত্রকে স্বমতে আনিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিলেন, কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হইল। তখন পিতা পত্রকে গৃহ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিয়া বাদশার নিকট ধরাইয়া দিলেন।

বাদশা ছিলেন নমরুদ। তিনি ইব্রাহিমকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করিয়া পড়োইয়া মারিবার আদেশ দিলেন।

ইব্রাহিম আল্লার অসীম অনুগ্রহে তিনি রক্ষা পাইলেন!

অতঃপর ইব্রাহিম শিষ্যবৃন্দের সহিত প্যালেস্টাইন প্রদেশে চলিয়া গেলেন এবং সেইখানেই বসবাস করিতে লাগিলেন ।

কিছুকাল পর হযরত ইব্রাহিম তাঁহার স্ত্রী বিবি সারাকে সঙ্গে লইয়া মিশর দেশে আসিয়া উপনীত হইলেন। মিশরের রাজা তাঁহাকে সাদরে গ্রহণ করিলেন এবং হাজেরা নাম্নী একটি সন্দরী মিশর কুমারীকে উপঢৌকন দিলেন। হাজেরাকে লইয়া পুনরায় তিনি প্যালেস্টাইনে ফিরিয়া আসিলেন।

হযরত ইব্রাহিম হাজেরাকে বিবাহ করিলেন। বিবি হাজেরার গর্ভেই জন্মগ্রহণ করিলেন তাঁহার প্রথম পুত্রে ইসমাইল।

কিন্তু সপত্নীর ঈর্ষার ফলে বিবি হাজেরা স্বামীর সহিত বাস করিতে পারিলেন না। আল্লাহ তালার আদেশে তখন হযরত ইব্রাহিম শিশপুত্র ইসমাইল সহ হাজেরাকে আরবের এক মরু-প্রান্তরে নির্বাসন দিয়া আসিলেন।

বিজন মরভূমি। কোথাও জন-মানবের বসতি নাই। খাদ্য নাই। পানি নাই। শিশ, ইসমাইল তৃষ্ণায় অধীর হইয়া কাঁদিতেছেন। ব্যাকুলা জননী শিশুকে একস্থানে শোয়াইয়া রাখিরা অদূরবর্তী সাফা-মারওয়া পাহাড়ে পানির সন্ধানে হুটাহাটি করিতেছেন। কিন্তু কোথাও পানি মিলিতেছে না।

হাজেরা গভীর নিরাশায় দৌড়াইয়া শিশুর নিকট ফিরিয়া আসিলেন। আসিয়াই যে-দৃশ্য দেখিলেন, তাহাতে তাঁহার চোখ জড়াইয়া গেল। তিনি দেখিতে পাইলেন, শিশুর চরণাঘাতে কঠিন প্রস্তর ভেদ করিয়া এক চমৎকার ঝর্ণা-ধারা বহিয়া চলিয়াছে। আনন্দে তাহার হৃদয় ভরিয়া গেল। আল্লার অসীম করুণার কথা মনে করিয়া বারে বারে তিনি তাঁহাকে কৃতজ্ঞতা জানাইতে লাগল।

এই ঝর্ণা-ধারাই সেই পবিত্র জমজম—ইসলামের অন্তর্বিগলিত সুধা-নির্ঝর মুসলিমের জীবনামৃত – আবে-কওসর!

ইহার কিছু পরেই কতিপর সওদাগর সেই পথ দিয়া যাইতেছিলেন। স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখিয়া এবং জমজমের সাপের পানির সন্ধান পাইয়া তাঁহারা সেইখানেই বসতি স্থাপন করিলেন। এইরূপে বিশ্ব- মসলিমের মিলনকেন্দ্র পবিত্র মক্কা নগরীর ভিত্তিপাত* হইল। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →