Main menu

নুসরাত ফতেহ আলী খানের লগে আলাপ

নুসরাত ফতেহ আলী খান নিয়া কিছু বলার জরুরত, মানে চিন পরিচয় করানোর কোনো হাউশ আমার নাই। নুসরাত আপন গুণেই মশহুর আছেন দুনিয়াজোড়া। তার গায়কির বিশেষ ধরন সকলের মনেই গুনগুনায় উঠে- দোস্ত বন্ধুরা এমনটাই জানাইছেন। দোস্ত-বন্ধুদের কথায় ইমান আমার ষোলআনা। ফলে, সেইদিকে আর গেলাম না। তার চাইতে কিছু না বইলা লেখায় ঢুকে পড়াই বেহতর।

১৯৮৮-তে নেয়া নুসনাত ফতেহ আলী খানের এই সাক্ষাতকার পয়লা ছাপা হয় ২০০৭-এ। সাক্ষাতকারগ্রহীতা আছিলেন আদম নায়ার। পড়তে পড়তে ভাবলাম তর্জমা হউক বরং। ফলে, তর্জমা হইলো। ভুল বোঝাবুঝির তো শেষ নাই দুনিয়ায়। এই তর্জমাতেও হয়তো সেই ভুল বোঝাবুঝির কিছু নমুনা বর্তমান রইলো।–জামিল আহমেদ

—————

::আপনার পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহের বিষয়ে কিছু বলুন।

প্রথমেই আমার শ্রোতাদের জানাতে চাই যে, কাওয়াল ‘বাচো কা ঘরানা’ থেকে এসেছি আমি। বহু প্রজন্ম ধরে এই ঘরানা আমাদের সাথেই আছে। অন্যান্য ঘরানার সাথে যদি তুলনা করি তো বলা ভালো টেকসই দীর্ঘমেয়াদী ঘরানাগুলোর অন্যতম এই ঘরানা। আপনি শুনলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন যে, বহু অসাধারণ সঙ্গীতকার বেরিয়েছেন এই ঘরানা থেকে। একে একে নাম করলে বেরিয়ে আসে ওস্তাদ ফতেহ আহমেদ খান, ওস্তাদ বড় মুহম্মদ খান, ওস্তাদ বড় মুবারক আলী খানের নাম।এর বাইরে, কাওয়াল ঘরানাতে তনারস খানের মতো সঙ্গীতকার রয়েছেন যিনি কিনা খুদ কাওয়ালেরই প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি নিজেই একটি একক সংহত অনন্য ঘরানা। এর পরপরই চলে আসেন আগা খান, খান সাহেব বৈরম খানের মতো কাওয়ালের নাম। গোয়ালিয়র ঘরানায় রয়েছেন হাদ্দু হাসু খানের মতো সঙ্গীতকার।::অন্যান্য কাওয়ালেরাও কি আপনার মতোই রাগপ্রধান সঙ্গীতের কাজে উৎসাহী?

ধ্রুপদী সঙ্গীতের গুরুত্ব আমাদের কাছে অপরিসীম। আমরা সঙ্গীত সাধনার শুরুতেই প্রচুর পরিমাণে ধ্রুপদী সঙ্গীতের চর্চার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাই বলে আমাদের ঘরানার প্রায় সকলেই এই ধরনের কাজ করে থাকেন, অনায়াসেই। আমাদের মুরুব্বিরা কাওয়ালীতে ধ্রুপদী সঙ্গীতের বুনিয়াদ পত্তন করেছিলেন। উনারা পুরোপুরি নিখাদ রাগ সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারতেন আর এটাকে কাওয়ালীতে বাধতেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

::আপনার সঙ্গীত শিক্ষার শুরুটা কবে থেকে?

আমার তখন ১৩ বছর।

::এর আগে কিছুই শেখেন নাই?

ছোটবেলা থেকেই আমি বাবার কাছে তবলায় তালিম নিতাম। বিশেষ করে, আমাদের ঘরানায় ব্যবহৃত স্থায়ী আর অন্তরার বিষয়টা খেয়াল করতাম। ছোটবেলাতেই আমাদেরকে খেয়াল বিশেষ করে তারানা গাইবার জন্য উতশাহিত করা হতো। রাগদারিটা বাবা আমাকে রীতিমাফিকই শিখিয়েছিলেন। আমার বয়স যখন ১৩ চলে, বাবা মারা যান। লাহোরে, ১৯৬৪ ইসায়ী সালে। আমি তখন স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র আর আমার চাচা তখন আমাকে কাওয়ালীতে নিয়ে আসেন। এবং রীতি ধরে ধরে কাওয়ালী শেখাতে থাকেন। ১৯৬৫সালে বাবার পহেলা মৃত্যুবার্ষিকীতে, বহু সঙ্গীতকারের মুখোমুখি আমার জীবনে প্রথম পারফর্ম করি আমি। সেই ৬৫তেই ‘রেডিও পাকিস্তান, লাহোর’-এর আমন্ত্রণে ‘জাশন-এ-বাহার’ নামের বসন্তকালীন সঙ্গীত উৎসবে যোগ দিই। এভাবেই আমার জীবনে কাওয়ালীর শুরু। বলে শেষ করা যাবে না যে কতো অসাধারণ সব সঙ্গীতকার সেদিন তাদের সুরের লহরী পরিবেশন করেছিলেন। ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, ওস্তাদ উমিদ আলী খান, রওশন আরা বেগম, ওস্তাদ আমানত আলী খান, ফতেহ আলী খান, সালামত আলী খান-নাজাকত আলী খান জুটি, ওস্তাদ গোলাম হাসান শাগানসহ অনেকে। তারা সকলেই আমার বাবার পরিচিত ছিলেন আর বাবাকে ভালোও বাসতেন। ফলে, সবাই আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন। আমি বলবো, এ ছিলো এক অসাধারণ কনসার্ট। বসন্তের আমেজে রেডিও স্টেশনের সামনের খোলা ময়দানে পরিবেশিত হয়েছিলো এ কনসার্ট। সেখানে আমি ৫০০ রুপি সম্মানী পেয়েছিলাম। ঐ সময়ের হিসেবে এটা বেশ বড়ো অংকের রোজগারই বলতে হবে। আমি প্রথমেই শুরু করি ‘আমির খসরু’র গজল ‘মান বান্দা এ আর রুহ এ কে দিদান’ দিয়ে। এটা ফার্সিতে লিখা। এরপর থেকে আমি প্রায় নিয়মিত পারফর্ম করতে থাকি।

::আপনি ওস্তাদ উপাধি পেলেন কি করে? সেই গল্পটি বলুন।

বেশ তো; ‘আঞ্জুমান-এ-মোশিকারান’ নামে সঙ্গীতকারদের সভায় ওস্তাদ শওকত হোসেন খানের সাথে আমিও এ উপাধি লাভ করি। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে আমি ধ্রুপদী গীত গাইতাম। ১৯৮৪’র দিকে তাকালে দেখতে পাই, সমস্ত বড়ো বড়ো ওস্তাদদের সমাবেশ ছিলো সেটা। সকলে যেনো আমাকে ঘিরে ধরেছিলো।

::যখন আমি পুরোনো কোনো কাওয়ালী শুনি, খেয়াল করে দেখেছি যে, এর রিদম আজকালকার কাওয়ালী থেকে বেশ জটিল ধরনের। এরকমটা হবার কি কারণ?

এ হলো সময়ের দাগ। আমরা এক ভিন্ন সময়ে রয়েছি; আর খুব কম শ্রোতাই সুরের সুক্ষ্ম দ্যোতনা বোঝে। কাওয়ালী বদলে গেছে এখন। আগেকার দিনে, কাওয়ালী নিয়ে অনেক ধরনের পরিকল্পনা, ধ্যান, মগ্নতা কাজ করতো। আর শ্রোতারাও ছিলেন অসাধারণ মনোজ্ঞ। পাঞ্জাবী সবরী’র কাফি, আরা চৌতালা’র কাওয়ালী বা ধামাল কাওয়ালী’র মতোই আমাদের পাঞ্জাবী কাফি’র কাওয়ালীও বেশ জটিল সব তালে সমৃদ্ধ ছিলো। এগুলো হলো ঐ সময়ের কাওয়ালী। এখন তো সেদিন আর নাই। এখন আপনি ফার্সি দিয়ে শুরু করলেই মেহফিলে শ্রোতারা বিরক্ত হন, উঠে চলে যান। সে এক সময় ছিলো, এক অসাধারণ চমৎকার সময় ছিলো যখন কিনা শ্রোতারা গানের গীতের উপর অনেক বেশি মনোযোগী ছিলেন। শ্রোতারা ফার্সি গীত শুনতে ভালোবাসতেন; আর বুল্লা শাহ, খাজা গোলাম ফরিদ, মঈন মুহম্মদ বখস্ জেহেলমী’র মতো বিখ্যাত লোকের গীত শুনে আমোদ পেতেন। এখনো লোকে এগুলা শোনে কিন্তু তখন আরো অনেক বেশি শুনতো।

::আপনার ভাষার বহর তো বেশ সমৃদ্ধ- ফার্সি, পাঞ্জাবী, উর্দু এবং পুরবী। যাই হোক, খেয়াল করে দেখলাম যে, পাঞ্জাবী গাইবার কালেই আপনার বোল যেনো মধু হয়ে ফোটে!

দুটি ভাষার প্রতি আমার হৃদয় হতে ভালোবাসার পরশ লেগে থাকে। এর একটি হলো ফার্সি, অপরটি পাঞ্জাবী। এই দুই ভাষাতেই সুফী চিন্তার মগ্নতার কাছাকাছি যাওয়া যায় বলে আমি মনে করি। অন্য কোনো ভাষাতে এতটা সম্ভব নয়। মারেফতের ভাষা হলো পাঞ্জাবী। আর একারণেই আপনি খুঁজতে গেলে দেখবেন যে অধিকাংশ গুরু এই ভাষাতেই লিখে গেছেন। হযরত আমীর খসরু সাহেবের কাউল আর তারানা সব ফার্সিতে লেখা। সবগুলোই এক বিশেষ সুরের বাঁধনে বাধা। উনার পুরবী গীতেও বন্দীশ রয়েছে, রয়েছে তারানা। পাঞ্জাবী কাওয়ালীতে তারানা ব্যবহৃত হয় না।

::‘রাং’ নিয়ে আপনার ভাবনা কি? যখন ‘রাং’ গীত হয় শ্রোতারা সব উন্মুখ হয়ে শোনেন। তারা অভিভূত হয়ে ওঠেন। এরকমটা কেনো হয়?

এটা হযরত আমীর খসরু সাহেবের এক অনন্য আবিষ্কার। একরাতে স্বপ্নে তিনি নবীয়ে করিমের (সাঃ) দর্শন লাভ করেছিলেন। সকালে উঠেই এক ঘোরের বসে লিখে গেলেন: আজ রাং হে রি মা রাং হে রি, মেরে মেহবুব কে ঘার রাং হ্যায়। একারণেই ভারতে, পাকিস্তানে, গোয়ালিয়রে, আজমীর শরিফে, নিজামুদ্দিন আউলিয়াতে এ গীতকে অধিক মর্যাদার সাথে দেখার রেওয়াজ রয়েছে। শ্রোতারা ভালোই জানেন, এর গুরুত্ব কতোখানি। কতোটা সম্মান আর শ্রদ্ধা দাবি করতে পারে এ গীত। আমল করা হয় যে, যখন কিনা রাং আবৃত্তি হতে থাকে, প্রাচীন গুরুরা নবীয়ে করিমের (সাঃ) পাশে জড়ো হতে থাকেন। এটা সম্মানের একটা ধরন। লোকজন এভাবে প্রকাশ করে শান্তি পায়।

 

https://www.youtube.com/watch?v=T_1jQjKZO1E

 

::দাতা সাহিব ছাড়া আর কোথায় কোথায় আপনি কাওয়ালী গেয়েছেন?

হযরত বাবা ফরিদ শাকরগঞ্জে, পাকিস্তানের সমস্ত বিখ্যাত মাজারগুলোতে, তুনসা শরীফ, চিশতিয়া শরীফ, কালাম শরীফ- চিশতিয়া সিলসিলা যেখানে খানকায় ঘরানার সাথে মিশে গেছে।

::আপনার কি নিজস্ব একক কোনো সিলসিলা রয়েছে?

সাবরি সিলসিলা, চিশতি-সাবরি।

::লোকমুখে শুনতে পাই যে, কাওয়ালীতে আপনি বিশেষ কিছু দিয়েছেন। আপনার গাইবার ধরন পুরোপুরি নতুন। আপনে কিভাবে দেখেন?

সময়ের চাহিদাই আসলে যেখানে দরকার সেখানে প্রয়োজন নতুন নতুন ধারা তৈয়ার করেছে। আমাদের তো দেশের বাইরেও যেতে হয় যেখানে কিনা শ্রোতারা আমাদের ভাষার বিন্দুমাত্র কিছু বোঝেন না। সঙ্গীতের লয় মেনে তাদের জন্য যা করা হয় তারা সেটাকে নিতে পারেন। গ্রহণ করেন। আমরা তাদেরকে রিদমটা, মানে ধ্রুপদী অংশটা দিয়ে দিই আর ভেবে রাখা হয় যে, আমাদের গীত সারগমকে অনুসরণ করেই এগিয়ে যাবে। এমন কোনো শ্রোতা যদি থাকেন যিনি কিনা গীতিটা ধরতে বা বুঝতে পারছেন না, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই। তিনি সুরের সাগরে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে যাবেন। এটা তখনই কেবল শিল্পেরও অধিক কিছু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈয়ার করে। আমাদের সাথে যখন জাপান ট্যুরে ছিলেন, আপনি কি এটা খেয়াল করেননি?

::নিজস্ব, স্থানীয়, আপন ভাষার বাইরে কোনো ভাষাতে গাইবেন বলে ভেবেছেন কখনো? যেমন কিনা আমার মনে পড়ছে, সালামত আলী খান একবার ফরাসীতে গেয়েছিলেন। আমিতো বেশ চমকে গিয়েছিলাম।
হুমম। এ বিষয়ে ভেবেছি আমি।

::সুফি কবিদের, তাদের লেখাপত্র গীতি…

এ এক অসাধারণ চিন্তা, বেশ ভালো ভাবনা। এটা তো হতেই পারে।

::লক্ষ্য করে দেখেছি যে, এরকম বড় বড় মেহফিলের বাইরে আপনি বেশ ছোট ছোট ঘরোয়া ধরনের আসরে, গ্রামেগঞ্জেও গেয়ে থাকেন।

আমাদের পাঞ্জাবের ভীত বলা হয় গ্রামকে। আমরা নিজেদের খুজেঁ পেতে শুরু করি গ্রামীণ স্মৃতিতেই। দোয়াবা থেকে ফেরত লোকজনসহ আমাদের সাথে চলতি ভারতীয়রা গ্রামে থাকতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। দোয়াবার নিজস্ব ধরনে যদি আমি না গাইতে জানি তো, সেখানকার লোকেরা তা শুনে আমোদ পাবে না। সেই সুরে নিজেদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। তাদের বেশিরভাগই ফয়সালাবাদের আশপাশের গ্রামেই থাকেন। আগেকার লোকজনের কাছেও এটা নজর করে ভাববার মতো বিষয় ছিলো।

::গুজার খানের কাছেও তো গেয়েছেন আপনি। এখানেও কি দোয়াবার লোকজনেরাই থাকেন?

না, না। তারা পথওয়ারী। কিন্তু, কাওয়ালী তারা অসম্ভব ভালোবাসেন। চিশতি সাবরি ঘরানার বিখ্যাত সাধক কলিম শরীফের মাজার রয়েছে সেখানে। এটাও কাওয়ালীর জন্য মশহুর। পীর মেহের আলী শাহ্ তার কাছে আপন বায়েত প্রকাশ করেছিলেন। খাজা সুলেমান তনসুভি তাকে উনার কাছে পাঠিয়েছিলেন। কলিম শরিফের কারণেই ঐখানকার মানুষ কাওয়ালীর মতো সুরের স্পর্শে থাকতে পারছে দীর্ঘদিন ধরে।

::পাকিস্তানে কাওয়ালী শ্রোতাদের মধ্যে সেরা শ্রোতারা কোন্ শহরে থাকেন বলে আপনি মনে করেন?

প্রথমেই বলবো লাহোর। এরপর করাচি।

::অন্যান্য যারা কাওয়ালী করেন তাদের ব্যাপারে যেমন কিনা আজীজ মঈন- উনাদের সম্পর্কে কিছু বলবেন? উনারা কি ধ্রুপদীতে তেমন জোর দেন না?

না। তারা কেবল গীতটাকে মুখস্থ করেন। আর আমরা গীত, সুর দুটাতেই জোর দিই। আমরা শ্রোতার মেজাজ-মর্জি, আমাদের খেয়াল আর যেখানে বসে গাইছি এই তিনের উপর নজর রেখে গান পরিবেশন করে থাকি। আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন যে, একই গীতের দুইটা কাওয়ালী কখনোই একরকম হয় না। আমরা পরিবেশন করি নানান ধাঁচে। দোয়াবাতে আমাদের শ্রোতারা এক ধ্যানমগ্ন কণ্ঠের আকাঙ্খায় থাকে। ফলে, পরিবেশনা উপস্থাপনে ভিন্নতা চলেই আসে। শ্রোতাদেরতো নিরাশ করতে পারি না। কিছু শ্রোতা আছেন শুধু গীতের কথাতেই মনোযোগী। কোন্ ছন্দে, কি রাগে গাইছেন গায়ক তারা তা জানেন না। তারা কথায় মজে থাকেন, কিন্তু আমরা তাদেরকে সুরের একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সবসময়েরই একটা প্রচেষ্টা থাকে যে শ্রোতা যখন কথাতে মজে থাকেন তখন তাকে অনুভব করতে সাহায্য করা যে কত্তো জটিল কারুকাজের মধ্য দিয়ে এক একটি সুরের বয়ে চলা। এমনকি তারা যদি সুরের জটিলতা বুঝতে নাও পারেন তো তাদের আগ্রহ ভালোবাসা যাতে নষ্ট না হয়, সে বিষয়েও আমারা সচেতন থাকি।

::আপনি বলতে চাইছেন যে, পয়সাঅলা সুরের সমঝদার বড়োলোকদের দখল থেকে ধ্রুপদী সঙ্গীতকে আপনি সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আগ্রহী?

আমরা এটা করার কোশেশ করি; বলা ভালো, আমাদের উদ্দেশ্যই তাই।

::লক্ষ্য করেছি যে, কনসার্টের আগে আগে আপনার উপর বেশ ধকল যায়। প্র্যাকটিসে আপনি প্রচুর সময় দিয়ে থাকেন। আপনের সাথে যখন জাপান গিয়েছি দেখলাম যে আপনি জাপানি টেলিভিশন দেখছেন। আমিতো অবাকই হয়েছিলাম যে, এরকমটা করার কি কারণ থাকতে পারে? আপনি বলেছিলেন যে, আপনি তাদের সঙ্গীতের ধরন–পদ্ধতিটা বুঝতে চাইছেন।

হ্যা। হ্যা। তাদেরও তো রাগপ্রধান গীত রয়েছে। কেবল নামে ভিন্নতা। আমি দেখতে চাইছিলাম, কোন্ ধরনের রাগগীতি ঐখানকার শ্রোতাদের পছন্দের। এর মূল সুরটি কি? এর নির্যাস কেমন?

::আপনি সাধারণত প্র্যাকটিসে সময় দেন কতক্ষণ?

কনসার্টের চাপের কারণে তো দিনে দিনে প্র্যাকটিসের সময় কমে যাচ্ছে। যখনি বাড়তি সময় পাই, কি যে ভালো লাগে! মনে হয় যেনো সারাটা দিনই প্র্যাকটিস করে কাটিয়ে দিই। আগে প্রতিদিন দশঘন্টা করে প্র্যাকটিস করতাম। দরজা বন্ধ করে প্র্যাকটিস শুরু করে দিতাম। আর দিন-রাতের কোনো ঠিক থাকতো না–সময়ের কোনো হিসাব থাকতো না। ঘন্টার পর ঘন্টা আমার বাবা চাচারা গান করতেন।

::নিজের শিল্পের উত্তরাধিকার বলে কাউকে ভাবেন কি?

আমাদের পরিবারে, আমাদের বাচ্চারা এখন শিখছে। তাদেরকে আমরা ধ্রুপদী শেখাচ্ছি। আমার ভাতিজা রাহাত আলীর উপর আমার অনেক ভরসা। সেও ক্লাসিক্যাল শিখছে। কিন্তু ওর পড়াশুনার চাপের কারণে দীর্ঘসময় এতে মনোযোগ দিতে পারেনি। এই শিল্পে যেটা অনেক বেশি জরুরী। এমনকি সে তবলাও বাজাতে পারে। আল্লার রহমতে আমরা এগিয়ে যাবো, ইনশাল্লাহ।

জামিল আহমেদ
আজিমপুর।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

জামিল আহমেদ

জন্ম: উনিশশো চুরাশি, লালবাগ, ঢাকা। থাকেন ঢাকা, বাংলাদেশ। পেশাঃ বেসরকারি চাকুরি। তর্জমা করেন খেয়াল খুশিতে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →