Main menu

সিনস অফ সিনেমা (পার্ট টু)

ফার্স্ট পার্ট

সিনস অফ সিনেমা ৮


খলনায়ক (১৯৯৩)
গান: চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়
লিরিকস: আনন্দ বকশী, মিউজিক: লক্ষীকান্ত পেয়ারেলাল, সিঙ্গার: অলকা ইয়াগনিক, ইলা অরুন
স্ক্রিন প্রেজেন্স: মাধুরী দীক্ষিত, নীনা গুপ্তা, সঞ্জয় দত্ত

হিন্দি-সিনেমার কথা ভাবতেছিলাম, অইখানে কিন্তু কোন ফ্রেম বা ভিজ্যুয়াল প্রমিনেন্ট না তেমন। (কিছু জিনিস তো আছেই, কম-বেশি; যেমন কালারফুল বা রং-চং’য়া জিনিস, ড্রিমি-ড্রিমি ভাব ফুটায়া তোলা। নয়ার জিনিসটা নাই-ই তেমন, বা প্রমিনেন্ট না।) বরং গান, নাচ আর ডায়ালগের কথা মনে আসে আগে। মানে, এইগুলা সিনেমার বাইরের জিনিস না, বরং এইসব জিনিস দিয়াই ভিজ্যুয়ালটা তৈরি হইতেছে, হিন্দি-সিনেমাতে। এর কারণ হইতেছে, সিনেমা জিনিসটা হলিউডে তৈরি হওয়ার পরে সারা দুনিয়াতে ছড়ায় নাই, দুনিয়ার নানান দেশে লোকাল কালচারের লগে এক ধরণের মিল-মিশ বা কন্ট্রাডিকশনের ভিতর দিয়া একটা ফর্ম হিসাবে তৈরি হইছে। (একেক দেশের গল্প-কবিতা যেমন কম-বেশি আলাদা, সিনেমাও অইরকম। জাতীয়তাবাদী কারণে আলাদা না, কালচারের কারণেই একটু ডিফরেন্ট না হয়া উপায় নাই।)

হিন্দি-সিনেমা বা মুম্বাইয়ের সিনেমার জায়গাটা কালচার হিসাবে আসছে (ফলো করছে একভাবে) বাঈজী-বাড়ি এবং কুঠি থিকা। (বাংলাদেশের সিনেমার ব্যাপারে এইরকম ‘যাত্রা’র রিলিভেন্স পাইবেন। মানে, এইখানে আরো বড় একটা আলাপ তো আছেই যে, যে কোন আর্ট ফর্মরে যেইরকম লিনিয়ার কইরা দেখতে চাই আমরা ঘটনা তো অইরকম না, কখনোই।…) যেই কারণে হিন্দি-সিনেমার শুরু’র দিক থিকাই নায়িকারা মেইন এট্রাকশন ছিলেন, ডমিনেন্টও ছিলেন। ১৯২০-৩০’র দিকে অনেক নারী মিউজিশিয়ান পাইবেন, এমনকি ফিল্ম-ডিরেক্টরও। কিন্তু পরের দিকে উনারা আর থাকতে পারেন নাই, শুরুর দিকে ব্রিফ একটা পিরিয়ডে ডমিনেন্স ছিল উনাদের।

সিনেমা এমনিতেই একটা এডাল্ট আর্ট, আর অই বাঈজী-ঘরানার জায়গা থিকাই অনেক দিন পর্যন্ত সমাজে ‘খারাপ’ একটা জিনিস হিসাবে পারসিভড হইতো।… তো এইসব জায়গা থিকা হিন্দি-সিনেমার ঘটনা হইতেছিল, গান আর নাচ। লাখ লাখ না হইলেও হাজার হাজার গান এইরকম আছে যেইখানে নায়িকা হালকা ইরোটিক ড্যান্স দিতেছে। অডিয়েন্সরে এন্টারটেইন করতেছে। যেইটা পরে আইটেম সং হিসাবে কনভার্ট হইছে।

মানে, অন-স্ক্রিন রিয়ালিটিতে ফিমেইল ডমিনেন্স হিন্দি-সিনেমাতে সবসময় ছিল। নায়ক বরং সবসময় একটা সাইড-রোলই। নায়ক’রা দেখবেন অনেক বুড়া বয়স পর্যন্ত হিট থাকে ইয়াং নায়িকাদের ওড়না ধইরাই। রাজকাপুর এইটা শুরু করছিলেন এবং উনার নাতনিদের বয়সী নায়িকাদের লগে সিনেমা কইরা নায়ক হিসাবে টিইকা থাকার ট্রাই করছেন।…

তো, ক্যাটাগরি’টা বা পয়েন্ট’টারে নিতে পারলে পরে একটা সিন’রে বাছাই করাটা সহজই আসলে। আমি যেই বয়সে সিনেমা দেখা শুরু করছি, ১৯৯০’র দিকে, তখন মাধুরী দীক্ষিতই ঘটনা, এই কারণে আমার চয়েস হইতেছে – চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়

নীনাগুপ্তাও অনেক স্টানিং এইখানে। আর এই ড্যান্স আর হাসি তো মাধুরী’র সিগনেচার হয়া গেছিল পরে। পরের ২০ বছরে এইরকম নাচ উনি নাচছেন (দেবদাস, আজা নাচলে…)।

আমার ধারণা, এইখানে আরো ১০/১২টা গানের নাম ইজিলি নেয়া যাবে। জিনাত আমানের দম মারো দম, শোলে’তে হেলেনে’র মেহবুবা ও মেহবুবা, [ওহ, আর ডি বর্মন!], বোম্বে সিনেমায় সোনালি বান্দ্রের হাম্মা [এ.আর. রহমানের আরো কিছু আছে] বিপাশা বসু’র বিড়ি জ্বালাইলে, ক্যাটরিনা’র শিলা কি জাওয়ানি, সানি লিওনের বেবি ডল… লিটারারি হাজার হাজার জিনিস আছে এইখানে। এমন কোন হিন্দি-সিনেমা পাওয়াটা রেয়ার হবে যেইখানে গান হিট হইছে, কিন্তু সিনেমা হিট হইতে পারে নাই! এইটা হইতেছে হিন্দি-সিনেমার ট্রেজার। গিফট টু দ্য ওয়ার্ল্ড সিনেমা।

তো, এইটাই একটা জিনিস না। মেনশন করার মতো আরো কিছু জিনিস তো আছেই। কিন্তু হিন্দি-সিনেমার সিন নিয়া কথা বলার জায়গাটাতে এই আইটেমটারে এক নাম্বারে রাখবো আমি।

নোকতা:
হিন্দি-সিনেমা: বাঈজী-নাচ টু ক্যাবারে ড্যান্স টু আইটেম সং

কয়দিন আগে হিন্দি-সিনেমা নিয়া কথা বলতে গিয়া বলতেছিলাম (লিংক কমেন্টে দিতেছি), হিন্দি-সিনেমার মেইন জায়গা হইতেছে নাচা-গানা। মানে, এন্টারটেইনমেন্ট তো কতো ধরণেরই আছে; ইভেন সিনেমা বা ভিজ্যুয়ালের ভিতরেও নানান ধরণের ক্যাটাগরি আছে। তো, হিন্দি-সিনেমা’তে এন্টারটেইনমেন্টের ঘটনাটা আসছে বাঈজী-বাড়ি’র একটা ট্রাডিশন থিকা। শুরুর দিকের অনেক সিনেমার নায়িকা তো আছেই, মিউজিশিয়ানও ছিলেন বাঈজী ঘরানার মহিলারা। যারা আসলে শরীর বেচতেন না, বরং এন্টারটেইনমেন্টই বেচতেন। [ইন্টারেস্টিং একটা সার্ভে ছিল ইন্ডিয়ান প্রস্টিটিউটের উপর, উনারা বলতেছিলেন, কাস্টমার’রা উনাদের কাছে ‘গার্লফ্রেন্ড-এক্সপেরিয়েন্স’টা চায়, অথচ উনারা তো শরীর-বেচার জন্য টাকা পান, এর বাইরে কেন যাবেন!]… মানে, এইখানে ডিটেইল একটা আলাপ পেইন্ডিং আছে।

এই কারণে দেখবেন, সিনেমাহলে যখন সিনেমা দেখানো হইতো, সন্ধ্যাবেলার ম্যাটিনি শো’গুলাই ছিল সবচে প্রাইম-টাইম।…

কিন্তু যেইটা বলতেছিলাম, জিনিসটা তো স্ট্যাটিক থাকে নাই। ডাকু-কাহিনি, নায়কের ম্যাচোগিরি হয়া উঠছিল সেন্ট্রাল ঘটনা। রাজকাপুরের সময় থিকাই হিন্দি-সিনেমার ক্যামেরা সবসময় নায়িকার/নারীর শরীরের উপরে ঘুইরা বেড়ায়, আর এইটা একটা কমন ফিচার এখনো। নাচা-গানগুলাও এটলিস্ট তিনটা স্টেইজ পার হইছে বইলা মনেহয়। শুরুতে যেইটা ছিল বাঈজী নাচ [১৯৫৪ সালের “আর পার” সিনেমার ‘বাবুজি ধীরে চল না…’ গানটা কথা মনে হইলো, এর আগেরও অনেক গান থাকার কথা], পরে ফোক সং হিসাবেও ছিল। নায়িকাও নাচতো, আর অনেক সময় তার লগে কয়েকজন ‘একস্ট্রা’-ও।

এই ‘বাঈজী নাচ’ জিনিসটা ‘৭০ এর সেকেন্ড হাফ পর্যন্তও কন্টিনিউড হইছে। যদিও “ক্যাবারে ড্যান্স” জিনিসটা ১৯৭০-এর আগে থিকাই চালু হওয়ার কথা, দুইটাই পাশাপাশি চলছে কিছুদিন। কিন্তু একটা সময়ে আইসা বাঈজী-নাচ আর দেখা যায় নাই; বরং ‘৯০ থিকা নতুন একটা ঘরানা তৈরি হয় সেইটার, ‘আইটেম সং’ নামে। এখন অই নামেই চলতেছে জিনিসটা।

বাঈজী-নাচে নাচের লগে গানটাও ইম্পর্টেন্ট। মানে, যিনি নাচতেছেন, উনিই গাইতেছেন। একই মানুশ। নাচ’টাও হইতে হবে ক্ল্যাসিকাল ঘরানার। ক্যাবারে ড্যান্সে গিয়া নাচ’টা মেইন হয়া উঠছে, গানটা আছে ব্যাকগ্রাউন্ডে। নাচ’টাও ইরোটিক হইতে হবে, তা নাইলে হবে না। তবে এই দুই জায়গাতেই পারফর্মার একলাই নাচতেছেন, ভিউয়ার আছে কিছু উনার সামনে। কিছু “সখী”ও থাকতে পারে। বাঈজী-নাচ এবং মেলার-নাচ বা ফোক-সং আবার কাছাকাছি জিনিস। আইটেম সং-এ আইসা এই ভিউয়ার গ্রুপটাও পার্টিসিপেট করতেছে। মানে, জিনিসটা ইরোটিক তো আছেই, ফানও তো একটা!

যদিও কোন মেইল-পারফর্মার নাই বাঈজী-ঘরানায় এবং ক্যাবারে ড্যান্সে (ফোক-সং টাইপের জায়গাগুলাতে নায়ক থাকতো লগে অনেক সময়, বাজনা-টাজনা বাজাইতো, যেন সে নাচাইতেছে তাঁরে…), আইটেম সং-এ একটা সাইড-পার্টনার লাগতেছে অনেক সময় (বিড়ি জ্বালাইলে গানে বিবেক ওবরয়’র কথা মনে কইরা বলতেছি)। এইখানে অডিয়েন্সের পার্টিসিপেশনের ভিতর দিয়া যতোটা না ‘ইরোটিক’ তার চাইতে ‘ফান’ হয়া উঠতেছে। যেই কারণে বিয়া-বাড়ির গানের লগেও এক ধরণের ফিউশন হইছে, নানানভাবে। মীরা নায়ারের সিনেমাতে এইরকম একটা গান থাকে অনেক সময়, সবাই মিইলা নাচা-গান কইরা ‘ফান’ করতেছে।

মানে, ক্ল্যাসিক-ইরোটিক থিকা ভালগার এবং ভালগার থিকা ফান হয়া গেছে – এইরকম স্ট্রেইট লাইন আসলে টানা যাবে না। কিন্তু টাইম টু টাইম কিছু ফিচার অ্যাড হইছে। এইভাবে দেখলে বেটার। ইরোটিসজমই এর কোর ঘটনা। আর এইখানে মেইল-গেইজের জায়গা থিকাই ঘটনাগুলা ঘটতেছে। কিন্তু এইটুক বললেও পুরাটা বলা হবে না আসলে। বাঈজী-নাচানো একটা সময় ছিল জমিদারি’র জিনিস, বারে-ক্যাবারে যাওয়াটা টাকা-পয়সাঅলা লোক হইতে পারার স্টেটম্যান্ট, এইরকম আইটেম সং বা পার্টি-ড্যান্সও হাই-ক্লাস সোসাইটির ঘটনাই। মানে, পাওয়ারফুল লোক হইতে পারার সিগনেচার। আর পাওয়ার জিনিসটা তো প্যার্টিয়ার্কালই ঘটনাই সবসময়।


সিনস অফ সিনেমা ৯


পারসোনা (১৯৬৬), ইঙ্গমার বার্গমান
দ্য ফেনথম অফ লিবার্টি (১৯৭৪), লুইস বুনুওয়েল

দুইটা সিনের কথা এইখানে মনে হইছে। একটা জাস্ট আরেকটার অপজিট। কিন্তু দুইটাই সমান উইয়ার্ড। ফার্স্টে ইঙ্গমার বার্গম্যানের পারসোনা’র (১৯৬৬) কথাটা বলি। স্লাভো জিজেক এইটারে কইছিলেন, সিনেমার হিস্ট্রিতে সবচে ইরোটিক সিন। ঘটনা’টা হইতেছে দুইজন নারী কথা বলতেছে। একজন হইতেছে একট্রেস, যে একটা রিসেন্ট ট্রমা’র পরে সাগর-পাড়ে রেস্ট নিতে আসছে, আরেকজন হইতেছে তার নার্স। তো, নার্সটা গল্পটা বলতেছে। তাঁর হাজব্যান্ড/পার্টনার যখন অন্য কোথাও গেছে, শে সাঁতরায়া কাছের আরেকটা দ্বীপে গেছে। অইখানে একটা ইরোটিক এনকাউন্টারের কথা শে বলতেছে। কাহিনি’টা এতোটা গ্রস যে, অইটা আসলে ফিল্মে দেখানো পসিবল না, দেখাইলে সেইটা পর্ণগ্রাফিই হবে একটা। তো, খালি বর্ণনা’টা আছে। একজন বলতেছে, আরেকজন শুনতেছে। কিন্তু আপনি আপনার মতো কইরা দেখতে পাইবেন আসলে ঘটনা’টা, আপনার ইমাজিনেশনের ভিতর দিয়া। মানে, পর্দার ইমেজগুলাই যে সিনেমা না, এইটা যে তার বাইরেও অন্য ইমাজিনেশনগুলারে রিলিভেন্ট কইরা তোলে, সেইটার ঘটনা।

সেকেন্ড সিনটা হইতেছে লুইস বুনুওয়লের দ্য ফেনথম অফ লিবার্টি’র (১৯৭৪)। [অইটা শুরু থিকা পাইলাম না সিন’টা] যেইখানে একজন প্রফেসর লেকচার দিতেছেন, বলতেছেন হোয়াট ইফ যদি একলগে হাগা-মুতা করাটা রীতি বা কালচার হইতো, আর খাওয়া-দাওয়া করা লাগতো গোপনে, একলা? এই কথা বলার পরেই সিন’টা শুরু হয়া যায় যে, একটা কাপল আরেকটা কাপলের বাসায় আইসা হাইপ্যানে একলগে পায়খানা করার লাইগা বসছে, সিরিয়াস সব আলাপ করতেছে। আর একটা সময় একজন গিয়া গোপনে একটা ঘরে খাইতেছে, যেমনে গিয়া পায়খানা করি আমরা। এখন এইটা তো দেখানোর কথা না, কথার কথা বলতেছে একটা আলাপে, কিন্তু সেইটাই দেখাইতেছে। দেখাইতে পারে তো সিনেমা, যেইটা দেখি না আমরা! এইরকম।

মানে, দুইটা সিন-ই স্পেসিফিক একটা জায়গাতে স্ট্রাগল করতেছে যে, ক্যামেরা কি দেখাইতে পারে আসলে? বা যা দেখাইতেছে, সেইটাই কি দেখাইতেছে আসলে? এই কোশ্চেনটা অনেকেই হয়তো অনেকভাবে করছেন, কিন্তু এইরকম স্ট্রংলি এনকাউন্টার করার ঘটনা মনেহয় কমই আছে, সিনেমার হিস্ট্রিতে।

[এই দুইটারই আবার একটা মিক্সড-আপ বা এই কোশ্চেনটার বা জায়গাগুলার আরেকটা ভালো কম্পাইলেশন হইতেছে রিচার্ড লিংটেকারের “বিফোর ট্রিলজি”র সিনেমা তিনটা। যেইখানে সিনগুলা বা ভিজ্যুয়াল একদিকে চলতেছে, আর কথাগুলা বা কনভারসেশনটা চলতেছে আরেকদিকে। দুইটা জিনিস মিলতেছে, আবার এইদিক অইদিক চইলা যাইতেছে।…]


সিনস অফ সিনেমা ১০


সারেং বউ (১৯৭৮)
ডিরেক্টর: আবদুল্লাহ আল মামুন
কবরী, ফারুক

বাংলা সিনেমা’তে একটা সিন নাই 🙂 সেইটার কথা মনে করতে চাইতেছি এইখানে। সেইটা হইতেছে “সারেং বউ” (১৯৭৮) সিনেমার লাস্ট সিন’টা। উপন্যাসে আছে ঘটনা, সিনেমা’তে একটা ছবি দিয়া “বুঝানো” হইছে ঘটনা। সিনেমার ইউটিউবের লিংকটা দিতেছি, ১:৫৮:০০ থিকা ২:০০:০০ দিকে পাইবেন।

জলোচ্ছ্বাসে সবকিছু ভাইসা গেছে। ঝড় শেষে নবিতন (কবরী) জাইগা উইঠা দেখে চারপাশে কিছু নাই, একটা সময় শে তাঁর জামাইরে (ফারুক’রে) খুঁইজা পায়, বালুর মধ্যে অর্ধেক চাপা পইড়া আছে। ‘পানি, পানি…’ করতেছে। শে হাতে কইরা পানি নিয়া আসার ট্রাই করে, পারে না। পরে মাটি-চাপা থিকা বাইর কইরা পানি কাছে টাইনা নিয়া যায়, কিন্তু মুখে পানি নিয়া সে ফালায়া দেয়। কবরী বুঝতে পারে জলোচ্ছ্বাসের কারণে সব পানি লোনা হয়া গেছে, খাইতে পারবে না। তখন কবরী’র মনেহয়, শে তো পোয়াতি; তারঁ বুকের দুধ খাওয়াইতে পারে! এই জায়গাটাতেই সিন’টা নাই আর। একটা ছবি আসে যে, একটা মহিলা একটা বাচ্চারে বুকের দুধ খাওয়াইতেছে। এরপরেই ফারুক চিল্লান দিয়া উঠে, “আমারে তুই পর কইরা দিলি নবিতন! আমারে তুই পর কইরা দিলি!” তখন কবরী কয়, “কারো জান বাঁচানো তো ফরজ কাজ।”

সব মিলায়াই খুব ক্রুশিয়াল একটা জিনিস এইটা। ইরোটিসজম, মোরালিটি এইসব জিনিস তো আছেই। কিন্তু আমি এইখানে বলতে চাইতেছি এর ভিজ্যুয়ালের জায়গাটা নিয়া। এইটা যে ভিজ্যুয়াল করতে পারেন নাই আবদুল্লাহ আল মামুন। যখন শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাসটারে নিয়া সিনেমা বানানোর কথা ভাবছেন তখনই তো চিন্তা করতে পারার কথা এই জিনিসটারে কেমনে সিনেমাতে আনবেন উনি। তো, সবচে সহজ অপশনটাই নিছেন। একটা ছবি বসায়া দিছেন। এখনো দেখবেন, বাংলা-সিনেমা নিয়া হাসাহাসিটা এই জায়গাটাতেই যে, চুমাচুমি দেখাইতে পারে না, ফুলে ফুলে টক্কর খাওয়ায় 🙂

কিন্তু এইটাই একমাত্র জিনিস না যে, দেখাইতে পারে না! ইরানি সিনেমা দেখেন, ইরোটিসিজম বাদ দিয়া সিনেমা বানাইতে পারতেছে তো অরা! বাংলা-সিনেমাতে ইরোটিসজমের ভিজ্যুয়াল কি রকম হবে, সেইটারে বরং চিন্তাই করতে পারা যায় নাই। এর এগেনেস্টে বরং ‘অশ্লীল সিনেমা’ পাইছি আমরা। ‘সাহসী’ কিছু ‘আর্ট-ফিল্ম’ও থাকতে পারে মেবি; আমি জানি না। মানে, আমার পয়েন্ট হইতেছে, ভিজ্যুয়ালের জায়গাটা নাই। নাই যে, এর একটা ভালো উদাহারণ হইতেছে, সারেং বউ সিনেমার এই লাস্ট সিনটা।

 

সিনস অফ সিনেমা: ১১


ডাউনটন এবি (সিরিজ)
দ্য প্রপোজাল সিন

খুবই ড্রিমি ড্রিমি জিনিস এইটা।

কাহিনি হইলো, জমিদারের হইতেছে তিন মেয়ে। এখন (১৯১০’র দশকে) ইংল্যান্ডে সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, তিন মেয়ের কেউ-ই সম্পত্তির মালিক হইতে পারবে না। তার কোন ভাই বা বইনের ছেলে হবে। তো, যার হেয়ার (heir) হওয়ার কথা সে টাইটানিকে ডুইবা মারা গেছে। পরে জানা যায়, দূর সম্পর্কের এক কাজিন আছে, যে নোংরা শহরে থাকে, উকিল, মিডল-ক্লাস। নাম ম্যাথু। জমিদারি হাব-ভাব সে পছন্দ করে না। জমিদারিতে আইসা মা’রে কয়, দেইখো, এক মেয়েরে লেলায়া দিবো, বিয়া করার লাইগা। আর এইটা বড় মেয়ে শুইনা ফেলে।

বড় মেয়ে হইতেছে মেরি। স্বাধীন-চেতা। জমিদারি ভাবে ভরা। এক টার্কিশ মিনিস্টারের পোলার লগে কিছু-একটা হওয়ার আগেই অই পোলা বিছানায় হার্ট-এটাক কইরা মারা যায়। এই কাহিনি গুজব হিসাবে ছড়ায়া পড়লে শে হয়া পড়ে বাতিল মাল মোটামমুটি, বিয়ার বাজারে। কিন্তু ম্যাথু তারে প্রপোজ করলে রিজেক্ট করে। মোটামুটি দুই-তিনবার। পরে এক ‘সেলফ-মেইড’ টাকা-অলা নিউজপেপার বিজনেসম্যানের লগে বিয়ার কথা পাকাপাকি হয়। ম্যাথুরও একজন সুইট, কাইন্ড মেয়ের লগে বিয়ার কথা পাকাপাকি হয়।

মাঝখানে নানান ঘটনা ঘটে। ইংলিশ রোমান্টিক নভেল এবং বাংলা-সিনেমাতে যা যা হইতে পারে, তার চাইতে বেশি ‘গাঁজাখুরি’ ঘটনা ঘটে। শেষে দুইটা বিয়ার কোনটাই হয় না। সুইট, কাইন্ড গার্ল’টা মারা যায়; সেলফ-মেইড বেটা’টাও নিজের ইগোর বলকে ফুটতে ফুটতে ফুইট্টা যায়।
তারপরে এই সিন। নিউ ইয়ারের সেলিব্রেশনের পার্ট হিসাবে বাড়ির চাকর-বাকরদের লগে বার্ষিক ড্যান্স প্রোগ্রামের পরে, ম্যাথু আর মেরি, বাড়ির বাইরে গিয়া দাঁড়ায়। তখন সে তাঁরে প্রপোজ করে।

ফ্রেমটা খুবই ড্রিমি এইখানে। কিন্তু ঘটনা এতোটা না। মেরি কয়, ভালো মতো প্রপোজ করো! মানে, ফর্ম’টা, রীতি’টা মানতে হবে তো! এইটা হইতেছে এই সিরিজটার কোর সাজেশন একটা।


সিনস অফ সিনেমা ১২


“বেবি, ইউ আর গনা মিস দ্যাট প্লেইন”
বিফোর সানসেট (২০০৪)
ডিরেক্টর: রিচার্ড লিংটেকার
ইথান হক, জুলি দেলপি

বিফোর ট্রিলজি তো আমার পছন্দের সিনেমা। এইরকম রোমান্টিক-সিনেমা আর নাই – তা না, বরং এইটা সবচে স্টানিং যেই জিনিসটা আছে সেইটা হইতেছে এর ভিজ্যুয়ালটাই সিনেমা না। ক্যামেরা একদিকে চলতেছে, একটা জায়গাতে ঘটনাগুলা ঘটতেছে, বেইজ অইটা, কিন্তু কাহিনিটা হইতেছে কথাগুলা, অইটা সিনেমা হয়া উঠতেছে। মানে, কথা-বার্তা, আলাপ-টালাপগুলা হইতেছে সেন্টার পয়েন্ট, যার ফলে যারা ভিজ্যুয়ালটারে সিনেমা বইলা ভাবতে চান, উনারা মোটামুটি অ-খুশিই হওয়ার কথা। কিন্তু স্পেসিফিক্যালি এই টেকনিক্যাল জিনিসটাই ভালো লাগছে আমার, এই ট্রিলজি’টার। অন্য অনেক ঘটনা তো আছেই।

তো, এইটার একদম এক্সট্রিম ঘটনা হইতেছে বিফোর সানসেটের ক্লোজিং সিনটা। যেইটা দেখাইতেছে, সেইটা দেখাইতেছে না আসলে। এমনকি যেইটা বলতেছে, সেইটাও বলতেছে না আসলে।

ব্যাকগ্রাউন্ডটা হইতেছে, নায়ক নায়িকার একদিন ট্রেনে দেখা হইছিল, ইউরোপে। নায়ক আম্রিকান, নায়িকা ফরাসি। একদিন অরা ঘুরছিল ইস্ট ইউরোপের একটা শহরে। পরে কথা হইছিল যে, ৬ মাস পরে অরা দেখা করবে আবার। এইটা ফার্স্ট পার্ট। সেকেন্ড পার্ট’টা শুরু হইছে ৯ বছর পরে। নায়ক, আম্রিকান নভেল-রাইটার, তার বুক ট্যু’রে প্যারিসের একটা বইয়ের দোকানে আসছে। অইখানে নায়িকাও আসছে, শে অই বইয়ের দোকানে আসে, পোস্টারে আগেই দেখছিল নায়কের ছবি। তো, বুক-সাইনিং শেষ হওয়ার পরে কিছু টাইম আছে নায়কের ফিরতি ফ্লাইটের, এইটুক সময়ে অরা ঘুরতে বাইর হয়। নায়কের বিয়া হইছে, একটা পোলা আছে। নায়িকার দুই-চাইরটা এফেয়ার হইছে। সুখ-দুক্খের কথা কয় অরা হাঁটতে হাঁটতে, ঘুরা-ফিরা করতে করতে। শেষে, নায়িকার বাসায় আসে। আজাইরা কথা-বার্তা কইতে থাকে।

নায়িকা নিনা সিমেনো’র কনসার্টে কি করে – অইটা নিয়া ভেঙ্গাইতে থাকে। আর এইগুলা করতে করতে বুঝতে থাকে যে, অরা ‘রিয়ালিটি’ থিকা দূরে চইলা গেছে, একটা ‘সিনেমাটিক রিয়ালিটি’তে চইলা আসছে। ফুলের মধুতে ভোমরা ডুইবা মইরা যাইতেছে, আর বাঁচতে পারবে না, এইরকম। তখন নায়িকা তারে লাস্ট টাইম সাবধান করে, “বেবি, ইউ আ গনা মিস দ্যাট প্লেইন” মানে, ঢং-টা না দেখলে বুঝবেন না! আসলে বলতেছে, “তুমি তাইলে যাইতেছো না, তাই তো!” নায়কও হাইসা কয়, হ, আমি জানি।

মানে, ‘আই লাভ ইউ’ খুব কম সময়ই হইতেছে ‘আই লাভ ইউ’। অনেক সময় ‘আই লাভ ইউ’ মানে হইতেছে ‘গুডবাই!’ অনেক সময় ‘আই লাভ ইউ’ মানে হইতেছে ‘সরি!’ অনেক সময় ‘আই লাভ ইউ’ মানে ‘আমি মিস করতেছি!’ তো, এইরকম অন্য অনেক কথার মানেও হইতেছে ‘আই লাভ ইউ!’ ঢং’টাই আসল আসলে। এইখানে এই কথাটা নাইও যে, “যাইও না! বুঝছো!” কিন্তু মিনিং আছে কোথাও। আর এইটা জাস্ট ইল্যুশন না। নায়ক, নায়িকাই টের পাইতেছে না খালি, অডিয়েন্স হিসাবে আমরাও ফিল করতেছি।

এইটা সুন্দর! এইরকম ফিল করতে পারাটা।

আর এইটা জাস্ট সিন’টা না। যে কোন সিন-ই একটা লম্বা সময় ধইরা বিল্ড-আপ হইতে থাকার ঘটনা, সবসময়ই। নিটশে যেমন কইছিলেন, স্লো অ্যারো অফ বিউটি, অইরকম অনেকটা।

 

সিনস অফ সিনেমা ১৩: বউ-জামাই


যোথা-আকবর (২০০৮)
ডিরেক্টর: আশুতোষ গোয়ারকর
হৃতিক রোশন, ঐশ্বরিয়া রায়

বলিউডে বিজেপি’র শুরুর দিকের সফট-প্রজেক্ট ছিল “যোধা-আকবর” সিনেমাটা। [খেয়াল করেন, যোধা’র নাম শুরুতে, মেইন কারেক্টারও শে এইখানে 🙂 ] তো, ঘটনা এইটা না; হিটলার হিউম্যান জু বন্ধ কইরা দিছিলেন বইলা অইটা তো বাজে-কাজ ছিল না, এইরকম আর কি!

ঘটনা হইতেছে, সিনেমাতে দেখাইতেছে, যোধা’রে আকবর বিয়া করছিল রাজপুতদের লগে এক ধরণের সমঝোতা করার জন্য। কিন্তু যোধা পাক্কা হিন্দু-মহিলা, মোগল রাজপ্রসাদের ভিতরে ঢুইকা মন্দির বানায়া ফেলছিল। 🙂 কিন্তু সবাই মোটামুটি জানে যে, যোধা’র আকবরের কোন মিল-মহব্বত নাই। আকবর তারে তোফা পাঠায় ইমপ্রেস করার লাইগা। তখন যোধার মনেহয় তারও তো ইমপ্রেস করা দরকার। তখন শে পীরের ওরশের দিন কয়, নিজেই রান্ধা-বারা করবো। আকবরের দুধ-মা এতে খেইপা যায়, কয় , নিজের বুকে তীর ঠেকায়া জালালউদ্দিন আকবর’রে বাঁচাইছি আমি, নিজে না খায়া তারে খাওয়াইছি, আর তুমি দুইদিনের যোগী আইছো রং-ঢং কইরা জালালরে কব্জা করতে! এই-সেই…

যোধা (মানে, ঐশ্বরিয়া) তো দেয় কাইন্দা। (সুন্দরীদের কান্দা যে আরো সুন্দর – এইটা তো মোটামুটি সবাই মানেন।) তারপরও চোখের পানি মুইছা শে, আকবর দ্য গ্রেট না, বরং জামাইয়ের জন্য রান্ধে। আর রাজ দরবারে নিয়া যায়।

আকবর তার বার্বুচিরে কয়, ভালো জিনিস রানছো মনেহয়, সুন্দর খুশবু আসতেছে। বার্বুচি কয়, আমি রান্ধি নাই, রাজরাণী রানছেন। আকবর তো খেইপা যায়, কয়, আমি তো তাঁরে দাওয়াত দিছি, রানতে বলছে কে! যোধা কয়, না, না, আমি নিজেই আপনার জন্য রানতে চাইছি।

তখন শুরু আসল খেলা। আকবরের দুধ-মা কয়, জাঁহাপনা, সালতানাতের নিয়ম হইতেছে, সম্রাটের জন্য রান্ধা যে কোন খাবার আগে বার্বুচি’র খাইতে হবে, তারপরে সেইটা সম্রাটের খাওয়ার উপযোগী হবে। (মানে, খাবারে বিষ মিশানো আছে কিনা, সেইটা পরখ করার ব্যাপার আছে।) আকবর (মানে, হৃতিক রোশন) তখন কিছু কইতে যান, কারণ হিন্দু-মতে জামাই মুখে না দিলে তো বউ মুখে নিতে পারে না, পাপ হয়। এইটাই করতে চায় আসলে দুধ-মা, যে তোর হিন্দুগিরি ছুটাইতেছি! এই কারণে দুধ-মা আবার কয়, সম্রাট নিজে চাইলেও এই আইন অমান্য করতে পারেন না। (যদিও সম্রাট সবই করতে পারেন আসলে।) কি করা! যোধা তখন আবারো কান্দে! মানে, অইরকম একটা সিচুয়েশন হয়…

হিন্দি-সিনেমা মানেই হইতেছে আসলে, এই মেলোড্রামা।

যোধা’র এই পরাণ যায় যায় অবস্থা দেইখা, আকবরেরও খারাপ লাগে। যোধা’র টেস্ট করা শেষ হইলে সে হুকুম দেয়, যোধা যেই প্লেটে খাইছে, তারে যেন অই প্লেটেই খাবার পরিবেশন করা হয়। এইটা হইলো, বউ-জামাই রিলেশনের পয়লা বিজয়।

আকবর যখন খাওয়ার জন্য লোকমা তুলে, যোধা কয়, থামেন, থামেন! এইটা খাইয়েন না! সবাই তো হা হয়া যায়, কেন! কি ঘটনা! যোধা তখন একটু শরমায়া গিয়া কয়, এই তরকারি’তে লবণ একটু কম হইছে।

সবাই তো হো হো কইরা হাইসা দেয়… আকবরও হাসার পরে লোকমাটা মুখে দেন। তখন দুধ-মা অবাক হয়া যায়, কি হইলো এইটা! যোধা তখন নাগিন-মার্কা চোরা চাউনি’টা দেয়, যে দেখো, এইটা হইতেছে বউ-জামাইয়ের রিলেশন, এইখানে থার্ড-পার্টি কেউ এলাউড না। এইটা হইতেছে চূড়ান্ত বিজয়, বিয়া’র রিলেশনের।

তো, এইটা সত্যি আসলে। আপনি একটা পার্টনারশিপ রিলেশনে যতোই ক্লোজ হন, যত খুঁটিনাটি কিছুই জানেন একজন আরেকজনের; একজন বউ তার জামাই নিয়া যা জানে, বা একজন জামাই তার বউ নিয়া যা জানে সেইটা লং-টার্ম ইন্টিমেট সেক্স-পার্টনার হয়াও সেই জানা-বোঝার জায়গাতে রিচ করা পসিবল না। এইটা খুবই অন্যরকম একটা টেরিটোরি।

অনেক ধর্মেই হয়তো অনেক কথা আছে এই রিলেশন নিয়া, কিন্তু কয়েকটা হাদিসের কথা মনে পড়তেছে এখন আমার। এইরকম আছে যে, যেই বেটা-মানুশ সম্পর্কে তার বউ ভালো-কথা বলে, সেই লোক ভালো-মানুশ আসলে। আবার এইরকম আছে, যেই লোক তার বউয়ের গোপন কথা অন্য মানুশরে বলে, সেই লোক জঘন্য। এইরকম। মানে, এইখানে পর্দার একটা ব্যাপারও আছে।…

তো, সিনেমাতে সিনটা এইখানেই শেষ না। সবাই খুব আনন্দ নিয়া, চাইটা-পুইটা খায়। শেষে আকবর কয়, এখন থিকা গোশত-মাংস না খায়া সব বছর ওরশের দিনে যোধা’র রান্ধা সবজি-ই খাবো আমরা। মানে, আকবর তার মুসলমানিত্ব (গরু খাওয়া) ছাইড়া দিয়া হিন্দু (ভেজিটেরিয়ান) হয়া গেলেন যেন তখন! 🙂

এইটারেই বিজেপি-প্রজেক্ট বলতেছিলাম আমি।

সিনটা সিনেমাতে ১:২৮:০০ থিকা ১:৪০:০০ পর্যন্ত। দুই-চাইর মিনিটেই শেষ হয়া যাইতে পারতো হলিউড বা এখনকার নেটফ্লিক্স বানাইলে। মানে, মেলোড্রামা তো বাজে-জিনিস আসলে 🙂 আমাদের আধুনিক এসথেটিক্সে; ম্যারিজও তো মনেহয়, কম-বেশি 🙁

https://www.youtube.com/watch?v=x0fOXXcNbXs

 

সিনস অফ সিনেমা ১৪


আমাদের আত্মার ভিতর থিকা উইঠা আসে যেই কান্দা তার কোন ভাষা নাই, ভিজুয়াল নাই
গডফাদার পার্ট ৩ (১৯৯০), আল পাচিনো, সোফিয়া কাপোলা

সিনেমা দেইখা কান্দা-কাটি করা অভ্যাস আমার আছে। এইটা ভালো-জিনিসই মনেহয় আমার কাছে। কান্দা-কাটি করতে পারাটা। কিন্তু গডফাদার পার্ট ৩ সিনেমার এই সিনটা ফার্স্ট-টাইম দেখার পরে জাস্ট ব্ল্যাংক হয়া গেছিলাম, মনে হইছিল, কান্দা কি জিনিস, সেইটা আমরা আসলে খুব কম সময়ই ফিল করতে পারি। মরন আমাদের কাছাকাছিই আছে সবসময়, কিন্তু কি রকমের সাডেন একটা জিনিস! আর এইটা মাইনা নিতে পারি না আমরা।

এই সিনে আল পাচিনো যে ২৪-২৫ সেকেন্ড জাস্ট হা কইরা থাকে, কানতে পারে না; অইটা মাঝে-মধ্যে একজাজারেশন মনে হইতে পারে; কিন্তু এইটা অনেক সময় ঘটতে পারে যে, আমরা কানতেও পারতেছি না। আর এই কানতে না পারার জন্য যেন দমবন্ধ হয়া মারা যাইতে পারি আমরা। সবচে সিরিয়াস-ফিলিংগুলারে ফানি মনে হইতে পারে আমাদের, বা একভাবে ফানি ভাবার ভিতর দিয়া এড়ায়া যাইতে পারি আমরা।

ঘটনা হইতেছে, মাইকেল কর্লিয়নি’র (আল পাচিনো) লগে তার বউয়ের তো ছাড়াছাড়ি হয়া গেছে, মাইকেল সিসিলি-তে চইলা আসছে, অবসর-জীবন কাটাইতেছে, কিন্তু নিজের এসেট-পোর্টফোলিও গুছাইতেছে আসলে চার্চের অথরিটির ভিতর দিয়া। অর ছেলে থিয়েটারে অভিনয় করে, অই থিয়েটার দেখার লাইগা তার মেয়ে আর বউ আসছে সিসিলি-তে। তার মেয়ে তো তার কাজিনের প্রেমে পড়ছে, কিন্তু তারে খুব ক্লিয়ারলি ইন্সট্রাক্ট করছে মাইকেল যে, ফ্যামিলির পার্ট হইতে হইলে আমার মেয়ের লগে প্রেম করা যাবে না। এইটা মাইকেলের মেয়ে বুঝতে পারে। থিয়েটারের শো’র শেষে যখন সবাই বাইর হইতেছে তখন মেয়ে আইসা মাইকেল-রে জিগাইতে থাকে, তুমি কেন এইটা করছো! চার্জ করতে থাকে। আর মাইকেল এই কনভারসেশনটারে এড়াইতে থাকে যে, কি করছি আমি! কি বলো তুমি! এই-সেই। তখন মাইকেলরে খুন করার জন্য যেই লোকরে ভাড়া করা হইছিল, সে আর গুলি করার চান্স পায় না। তখন যেই পাদ্রী প্লট করছিল ঘটনাটা, সে-ই আগায়া আসে, দুইটা গুলি করে।

পরে দেখা যায় একটা গুলি মাইকেলের মেয়ের বুকে লাগছে। তাঁর মা তো কান্দা-কাটি কইরা শেষ! মাইকলে কতোক্ষণ বিলিভই করতে পারে না। তারপরে সে মেয়ের পাশে শুইয়া ২৪-২৫ সেকেন্ড তব্দা লাইগা থাকে! সবাই (ইনক্লুডিং ভিউয়ার) ওয়েট করতে থাকে আল পাচিনোর কান্দার আওয়াজটার জন্য। এই ২৪-২৫ সেকেন্ড, রেয়ার জিনিস, সিনেমার হিস্ট্রিতে। আমাদের লাইফেও মেবি।

মানে, আমাদের কান্দাটা তো সবসময় কানতে পারি না আমরা।

The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →