Main menu

(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ২

৪: সভ্যতার মিলন-মোহনায় জন্ম হইল এই মরুপয়গম্বরের

ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হযরত ইব্রাহিমই তাঁহার পূর্বপুরুষ। কাজেই, হযরত মুহম্মদের আবির্ভাবের আদি বৃত্তান্ত জানিতে হইলে হযরত ইব্রাহিম সম্বন্ধে আমাদিগকে কিছু জানিতেই হয়।

এখন হইতে আনুমানিক ৪০০০ বৎসর পূর্বে বর্তমান মেসোপোটেমিয়ার অন্তর্গত ‘বাবেল’ শহরে ইব্রাহিমের জন্ম হয়। তাঁহার পিতার নাম ছিল আযর। তিনি কুম্ভকারের কার্য করিতেন। তিনি ছিলেন পৌত্তলিক। দেবমূর্তি নির্মাণই ছিল তাঁহার ব্যবসায়। হযরত ইব্রাহিমের কিন্তু এই জড়-ধর্ম ভাল লাগিল না; পৈত্রিক ধর্ম না মানিয়া তিনি হইলেন তৈহীদবাদী। নিরাকার আল্লার এবাদত এবং মানুষের সহিত প্রেমই হইল তাঁহার ধর্মের মূলমন্ত্র। বলা বাহুল্য, পুত্রের এই নবধর্মমত পিতা কিছুতেই সহ্য করিতে পারিলেন না। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই পিতাপত্রে বিরোধ উপস্থিত হইল।

পিতা পুত্রকে স্বমতে আনিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিলেন, কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হইল। তখন পিতা পত্রকে গৃহ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিয়া বাদশার নিকট ধরাইয়া দিলেন।

বাদশা ছিলেন নমরুদ। তিনি ইব্রাহিমকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করিয়া পড়োইয়া মারিবার আদেশ দিলেন।

ইব্রাহিম আল্লার অসীম অনুগ্রহে তিনি রক্ষা পাইলেন!

অতঃপর ইব্রাহিম শিষ্যবৃন্দের সহিত প্যালেস্টাইন প্রদেশে চলিয়া গেলেন এবং সেইখানেই বসবাস করিতে লাগিলেন ।

কিছুকাল পর হযরত ইব্রাহিম তাঁহার স্ত্রী বিবি সারাকে সঙ্গে লইয়া মিশর দেশে আসিয়া উপনীত হইলেন। মিশরের রাজা তাঁহাকে সাদরে গ্রহণ করিলেন এবং হাজেরা নাম্নী একটি সন্দরী মিশর কুমারীকে উপঢৌকন দিলেন। হাজেরাকে লইয়া পুনরায় তিনি প্যালেস্টাইনে ফিরিয়া আসিলেন।

হযরত ইব্রাহিম হাজেরাকে বিবাহ করিলেন। বিবি হাজেরার গর্ভেই জন্মগ্রহণ করিলেন তাঁহার প্রথম পুত্রে ইসমাইল।

কিন্তু সপত্নীর ঈর্ষার ফলে বিবি হাজেরা স্বামীর সহিত বাস করিতে পারিলেন না। আল্লাহ তালার আদেশে তখন হযরত ইব্রাহিম শিশপুত্র ইসমাইল সহ হাজেরাকে আরবের এক মরু-প্রান্তরে নির্বাসন দিয়া আসিলেন।

বিজন মরভূমি। কোথাও জন-মানবের বসতি নাই। খাদ্য নাই। পানি নাই। শিশ, ইসমাইল তৃষ্ণায় অধীর হইয়া কাঁদিতেছেন। ব্যাকুলা জননী শিশুকে একস্থানে শোয়াইয়া রাখিরা অদূরবর্তী সাফা-মারওয়া পাহাড়ে পানির সন্ধানে হুটাহাটি করিতেছেন। কিন্তু কোথাও পানি মিলিতেছে না।

হাজেরা গভীর নিরাশায় দৌড়াইয়া শিশুর নিকট ফিরিয়া আসিলেন। আসিয়াই যে-দৃশ্য দেখিলেন, তাহাতে তাঁহার চোখ জড়াইয়া গেল। তিনি দেখিতে পাইলেন, শিশুর চরণাঘাতে কঠিন প্রস্তর ভেদ করিয়া এক চমৎকার ঝর্ণা-ধারা বহিয়া চলিয়াছে। আনন্দে তাহার হৃদয় ভরিয়া গেল। আল্লার অসীম করুণার কথা মনে করিয়া বারে বারে তিনি তাঁহাকে কৃতজ্ঞতা জানাইতে লাগল।

এই ঝর্ণা-ধারাই সেই পবিত্র জমজম—ইসলামের অন্তর্বিগলিত সুধা-নির্ঝর মুসলিমের জীবনামৃত – আবে-কওসর!

ইহার কিছু পরেই কতিপর সওদাগর সেই পথ দিয়া যাইতেছিলেন। স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখিয়া এবং জমজমের সাপের পানির সন্ধান পাইয়া তাঁহারা সেইখানেই বসতি স্থাপন করিলেন। এইরূপে বিশ্ব- মসলিমের মিলনকেন্দ্র পবিত্র মক্কা নগরীর ভিত্তিপাত* হইল।

[*কিন্তু এ কথার অর্থ এ নয় যে, এর পূর্বে মক্কা নগরীর কোন অস্তিত্ব ছিল না। কুরান-মজিদে আল্লাহতালা মক্কাকে ‘উম্মুল-কোরা’ (বসতি-জননী) এবং ‘কাবা’কে ‘’প্রথম গৃহ’ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।]

ইসমাইল সেইখানে ধীরে ধীরে বর্ধিত হইতে লাগিলেন। আরব তাঁহার স্বদেশ হইল, আরবী তাঁহার মাতৃভাষা হইল।

হযরত ইব্রাহিম বিবি হাজেরাকে চিরতরে নির্বাসন দেন নাই। হাজেরা ও ইসমাইলকে তিনি প্রাণাপেক্ষা ভালোবাসিতেন; তাই মাঝে মাঝে তিনি আসিয়া স্ত্রী-পত্রের খবর লইয়া যাইতেন। পরবর্তীকালে তিনি মক্কা নগরে আসিয়াই স্থায়ীভাবে বসবাস করিতে থাকেন। ইসমাইলের কুরবানি ব্যাপার এই মক্কা নগরেই সংঘটিত হয়।

ইসমাইল যখন যৌবনে পদার্পণ করিলেন, তখন হযরত ইব্রাহিম মক্কার জরহাম গোত্রের মাদাদের কন্যা সাইদার সহিত তাঁহার বিবাহ দিলেন।

মক্কায় অবস্থানকালে একদিন হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল তথায় ‘বায়তুল্লাহ” বা কা’বা-গৃহের পুনর্নির্মাণের জন্য আল্লার ‘অহি’ লাভ করিলেন। নির্মাণকার্য শেষ হইলে পিতাপুত্রে মিলিতভাবে প্রার্থনা করিলেন।

“হে আমাদের প্রভু, আমাদের উভয়কেই তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশধরদিগের মধ্য হইতে একটি মহাজাতির সৃষ্টি কর এবং আমাদিগকে তোমার ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দাও এবং আমাদের প্রতি করণা কর। নিশ্চয়ই তুমি (করণার প্রতি) চির-প্রত্যাবর্তনশীল এবং দয়াময়।

“হে আমাদের প্রভু, আমাদের বংশধরদিগের মধ্য হইতে (সেই) একজন রসল উত্থিত কর যিনি তাহাদের নিকট তোমার বাণী প্রচার করিবেন এবং কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিবেন, জ্ঞান দান করিবেন এবং তাহাদিগকে শুদ্ধ করিবেন। নিশ্চয়ই তুমি শক্তিমান এবং পরম জ্ঞানী।”

-(সুরা বকারা : ১২৪-১২৯ )

আল্লাহ তালা এই প্রার্থনা মঞ্জুর করিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারেই পরবর্তীকালে ইসমাইলের বংশে হযরত মুহম্মদের জন্ম হইল ।

হযরত মুহম্মদের মধ্যে তিনটি স্বতন্ত্র রক্তধারার মিশ্রণ হইল। হযরত ইব্রাহিমের মধ্য দিয়া আসিল পারশ্যের রক্তধারা, বিবি হাজেরার মধ্য দিয়া আসিল মিসরের রক্তধারা এবং বিবি সাঈদার (ইসমাইলের স্ত্রীর) মধ্য দিয়া আসিল আরবের রক্তধারা। তিনটি বিশিষ্ট প্রাচীন সভ্যতার মিলন-মোহনায় জন্ম হইল এই মরুপয়গম্বরের। পক্ষান্তরে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের কেন্দ্রভূমিও হইল এই আরব দেশ। কাজেই হযরত মুহম্মদের মধ্যে যে ফুটিয়া উঠিবে একটা উদার বিশ্বজনীন রূপ- ইহাতে আর আশ্চর্য কি!

কোরেশ-বংশ

হযরত মুহম্মদের ঊর্ধ্বতন একাদশ পুরুষের নাম ছিল ফিহির। তিনি ‘কোরেশ” নামেও অভিহিত হইতেন। এই কারণে তাঁহার বংশধরগণ কোরেশ নামেও খ্যাতিলাভ করেন। এই হিসাবেই হযরত মুহম্মদ কোরেশ বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।

পরবর্তীকালে কোরেশদিগের মধ্যে নানা শাখার উদয় হইয়াছিল এবং নানা গোত্রে তাঁহারা বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন।

হযরত মুহম্মদের জন্মগ্রহণের প্রাক্কালে এই কোরেশগণই মক্কা নগর শাসন করিতেছিলেন। হযরতের পিতামহ আবদুল মুতালিব একজন ধার্মিক লোক ছিলেন। মক্কার কা’বা গৃহে প্রতি বৎসর বিভিন্ন স্থান হইতে তীর্থ-যাত্রীরা তীর্থ করিতে আসিত। আবদলে মুতালিবের উপর এই সব তীর্থ-যাত্রীদের পানি সরবরাহের ভার ন্যস্ত ছিল। তীর্থের সময় প্রতি বৎসর সুপেয় পানির অভাব ঘটিত। আবদুল মুতালিব ইহাতে বিচলিত হইয়া পানি সরবরাহের কোন উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টায় ছিলেন। সহসা তাঁহার মনে এক অদ্ভুত খেয়াল চাপিল। হযরত ইসমাইলের সময়কার সেই বিখ্যাত ‘জমজম’ উৎসটি কালক্রমে মাটির তলে চাপা পড়িয়া গিয়াছিল। সেই হারানো উৎসের পুনরাবিষ্কারের জন্য আবদাল মুতালিব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইলেন। কিন্তু বহু চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি উৎসটির কোনই সন্ধান পাইলেন না। লোকে তখন তাঁহাকে পাগল বলিয়া উপহাস করিতে লাগিল।

এদিকে আবদাল মুতালিবের বয়সও দিন দিন বর্ধিত হইতেছিল, অথচ কোনই সন্তান-সন্ততি জন্মিতেছিল না। এই জন্যই তিনি একদিন কঠোর প্রতিজ্ঞা করিলেন : “যদি আমার দশটি পুত্র জন্মে এবং যদি আমি জমজম উৎসের আবিষ্কার করিতে পারি, তবে একটি পুত্রকে হযরত ইব্রাহিমের ন্যায় আমিও কুরবানি দিব।”

আশ্চর্যের বিষয়, কালরুমে তিনি জমজম, উৎসের আবিষ্কার করিতে সক্ষম হইলেন এবং একে একে দশটি পুত্রসন্তানও লাভ করিলেন। তখন আবদুল মুতালিব পূর্ব-প্রতিশ্রুতি মত একটি পত্রকে কুরবানি দিতে মনস্থ করিলেন। পত্রদিগের মধ্যে লটারী করা হইল; সর্বকনিষ্ঠ পুত্র আবদুল্লার নাম উঠিল।

আবদুল মুতালিব আবদল্লাকেই সর্বাপেক্ষা বেশি ভালোবাসিতেন, তবু কর্তব্যের খাতিরে তাহাকেই কুরবানি দিবার জন্য কা’বা গৃহে গইয়া গেলেন। লোকেরা তাঁহাকে একার্য করিতে নিষেধ করিল।

অনেক বুঝাইবার পর আবদলে মুতালিব ‘শিয়া’ নামক একজন ভবিষ্যৎ বক্তার নিকটে গিয়া পরামর্শ গ্রহণ করিলেন। শিয়া এই নির্দেশ দিলেন: আবদুল্লার বিনিময়ে দশটি উট নির্ধারিত করিয়া উট ও আবদুল্লার মধ্যে ভাগ্য-নির্ণয় কর। যতক্ষণ না উটের নাম উঠিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকবার উটের সংখ্যা দশগুণ বাড়াইয়া দাও। এইরূপে যখন উটের নাম পাওয়া যাইবে, তখন নির্দিষ্ট সংখ্যক উট কুরবানি করিও।

ঠিক তাহাই করা হইল। দশম বারেব বার উটের নাম উঠিল। কাজেই উটের সংখ্যা দাঁড়াইল একশত। তখন আবদুল মুতালিব সন্তুষ্টচিত্তে ১০০টি উট কুরবানি দিলেন। সেই হইতে কাহারও প্রাণের বিনিময়ে একশত উট কুরবানি প্রথা আরবে প্রচলিত হইয়া গেল।

এইরূপে আবদুল্লাহ নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা পাইলেন। পরবর্তী-কালে যিনি বিশ্বনবীর পিতা হইবার গৌরব অর্জন করিবেন।

ক্রমে ক্রমে যখন আবদুল্লাহ বিশ বৎসরে পদার্পণ করিলেন, তখন বনি-জোহরা গোত্রের ওহাবের কন্যা রূপেগুণে অতুলনীয়া পুণ্যময়ী আমিনার সহিত তাঁহার বিবাহ হইল। ইহার কিছুদিন পরেই বাণিজ্য ব্যপদেশে আবদল্লাহ সিরিয়া যাত্রা করিলেন। তখন আমিনা গর্ভবতী।

সিরিয়া হইতে প্রত্যাবর্তনকালে আবদুল্লাহ মদিনা নগরে কয়েকদিন বিশ্রাম করিতেছিলেন; এমন সময় হঠাৎ তাঁহার কঠিন পাঁড়া হইল। এই সংবাদ পাইয়া আবদুল মাতালিব আবদুল্লাহকে গৃহে আনিবার জন্য তাঁহার জ্যেষ্ঠ পত্র হারিসকে মদিনায় পাঠাইয়া দিলেন। কিন্তু হায়। হারিস আবদুল্লাহকে না আনিয়া আনিলেন তাঁহার নিদারণ মৃত্যু-সংবাদ। বৃদ্ধ আবদুল মুতালিব ও আমিনার হৃদয় শোকে-দুঃখে একেবারে ভাঙিয়া পড়িল ।

এইরূপে মাতৃগর্ভে থাকিতেই বিশ্বনবী পিতৃহীন হইলেন। বেদনার অমৃত মুখে লইয়াই তিনি ধরায় আসিলেন।

৫: মুহম্মদ ও আহমদ

বৃদ্ধ আবদুল মুতালিব তখন কা’বা গৃহে বসিয়া আপন গোত্রের লোকদিগের সহিত নানা বিষয়ে আলোচনা করিতেছিলেন। একটা অভূতপূর্ব নৈসর্গিক পরিবর্তন লক্ষ্য করিয়া সকলেই বিস্ময় মানিতেছিলেন। এমন সুন্দর প্রভাত তো তাঁহারা আর কখনও দেখেন নাই! এমন সময় সংবাদ আসিল, আমিনা এক পত্রেরত্ন প্রসব করিয়াছেন। হর্ষ ও বিষাদে আবদল মাতালিবের হৃদয় ভরিয়া গেল। আজ তাঁহার প্রিয় পুত্র আবদুল্লার বিয়োগ-বেদনা বড় করণে হইয়া বাজিয়া উঠিল। পক্ষান্তরে সেই মৃত পুত্রের স্মৃতি বহন করিয়া আসিল এই নবাগত তরুণ অতিথি। এ-সংবাদও তো তাঁহার কম জীবনে আনন্দের নয়। সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি আমিনার গৃহে উপস্থিত হইয়া আবদল্লাহ্ তনয়ের মুখদর্শন করিলেন। কী সুন্দর জ্যোতিময় বিহিশতী মুখশ্রী! আবদল মুতালিবের চোখ জড়াইয়া গেল। আকুল আগ্রহে শিশুটিকে কোলে লইয়া তিনি তৎক্ষণাৎ কাবা-মন্দিরে আসিয়া তাহার জন্য প্রার্থনা করিলেন।

সাতদিন পরে আরবের চিরাচরিত প্রথানুযায়ী আবদুল মুতালিব শিশরে ‘আকিকা’ উৎসব করিলেন। মক্কার বিশিষ্ট কোরেশ নেতৃবৃন্দ ও আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াৎ দেওয়া হইল। উৎসব-শেষে কোরেশ দলপতিগণ শিশুকে দেখিয়া খুসি হইলেন এবং কৌতূহলী হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন: “শিশুর নাম কী রাখিলেন?”

“মুহম্মদ।”

কোন এক অদৃশ্য ইংগিতে আবদুল মুতালিব এই কথা বলিয়া ফেলিলেন। “মুহম্মদ। এমন অদ্ভুত নাম তো আমরা কখনও শুনি নাই। কোন দেবতার নামের সঙ্গে নাম মিলাইয়া রাখিলেন না কেন?”

তৎকালে কোরেশদিগের মধ্যে ইহাই ছিল প্রথা। দেবদেবীর নামের সংগে মিলাইয়া শিশুর নামকরণ করা হইত।

বৃদ্ধ বলিলেন : “আমার এই স্নেহের নাতিটি বিশ্ববরেণ্য হইবে সমগ্র জগতে ইহার মহিমা ও প্রশংসা পরিকীর্তিত হইবে – এই জন্যই ইহার নাম রাখা হইয়াছে মুহম্মদ।”

এদিকে বিবি আমিনাও গর্ভাবস্থায় স্বপ্ন দেখিতেন, তাঁহার প্রাণের দালালের নাম যেন ‘মুহম্মদ’ রাখা হইয়াছে। আবার কখনও দেখিতেন তিনি যেন ‘আহমদ’ নামেও পরিচিত হইতেছেন। এইজন্য ‘মুহম্মদ’ নামের সংগে সংগে তিনি ‘আহমদ’ নামও রাখিয়া দিলেন।

এইরূপে হযরত দুই নামে অভিহিত হইলেন: মুহম্মদ ও আহমদ। ‘মুহম্মদের’ অর্থ ‘চরম প্রশংসিত’, আর ‘আহমদের’ অর্থ ‘চরম প্রশংসাকারী’।

কিন্তু এই দুইটি নামের ব্যাখ্যা কী, তাৎপর্য কী, হযরতের জীবনে ইহাদের কোন সার্থকতা আছে কিনা, একটি নামের পরিবর্তে দুইটি নামের প্রয়োজনীয়তাই-বা কেন হইল, সে কথা কি আমরা কখনও গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখিয়াছি?

‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নামের মধ্যে একটা গভীর দার্শনিক রহস্য লক্কায়িত আছে। হযরতের পর্ণে পরিচয়ের জন্য দুইটি নামেরই প্রয়োজন। শুধু ‘মুহম্মদ’ বা শাসন ‘আহমদ’ দ্বারা তাঁহার স্বরূপ সম্পূর্ণরূপে ধরা পড়ে না। দুইটি মিলিয়া এক হইলেই তবে তাঁহাকে সত্যরূপে চেনা যায়। নাম দুইটি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।

এক নামে তিনি ‘মুহম্মদ’, অন্য নামে তিনি ‘আহমদ’, অর্থাৎ একদিকে তিনি ‘চরম-প্রশংসিত’, অপরদিকে তিনি ‘চরম প্রশংকারী’। কিন্তু বলিতে পারেন কি, কাহার দ্বারাই বা তিনি চরম প্রশংসিত, আর কাহারই-বা তিনি চরম প্রশংসাকারী? আল্লার দ্বারাই তিনি চরম প্রশংসিত হইয়াছেন, আবার আল্লাকেও তিনি চরম প্রশংসা করিয়াছেন। অন্য কথায়: যে চরম প্রশংসা ও সম্মান মুহম্মদ লাভ করিয়াছেন, অন্য কাহারও ভাগ্যে তাহা ঘটে নাই; পক্ষান্তরে মুহম্মদ আল্লার যে প্রশংসা ও যে গুণকীর্তন করিয়াছেন, অন্য কাহারও দ্বারা তাহা সম্ভব হয় নাই। উভয়দিক হইতেই প্রশংসা ও গৌরব-দানের চরম হইয়া গিয়াছে।

এখন দেখা যাউক, এই ‘চরম-প্রশংসিত’ ও ‘চরম-প্রশংসাকারী’ কে হইতে পারে।

‘চরম প্রশংসিত’ একমাত্র সে-ই হইতে পারে—যাহার মধ্যে চরম পূর্ণতা আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ না হইলে কেহ কখনও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশংসা লাভ করিতে পারে না। যাহার মধ্যে অপূর্ণতা বা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, তাহাকে কেহই চূড়ান্ত প্রশংসা করে না—করিতে পারা যায় না। ‘চরম প্রশংসিত’ হইতে হইলে তাহাকে সর্বশ্রেষ্ঠ হইতে হয়। সুতরাং একথা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ্ যে মুহম্মদকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনরূপে প্রদর্শন করিবেন, সমস্ত পরিপূর্ণতা যে তাঁহাকে দিবেন, তাঁহাকে যে চরম এবং পরম আদর্শরূপে বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলিয়া ধরিবেন, এই ইংগিতই পাইতেছি আমরা তাঁহার মুহম্মদ’ নামের মধ্যে। পক্ষান্তরে আল্লার পরিপূর্ণ সত্য-পরিচয় যে মুহম্মদের দ্বারাই সারা জগতে বিঘোষিত হইবে, মুহম্মদের হস্তেই যে আল্লার প্রকৃত স্বরূপে উদ্ঘাটিত হইবে, এই ইংগিতও পাইতেছি আমরা তাঁহার ‘আহমদ’ নামের মধ্যে। কোন ব্যক্তি বা বস্তুর চরম প্রশংসা কেবলমাত্র তিনিই করিতে পারেন—যিনি সেই ব্যক্তি বা বস্তুর রূপ ও গুণ সম্বন্ধে পূর্ণজ্ঞান রাখেন। কাজেই মুহম্মদ যে আল্লার প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে পূর্ণজ্ঞানের অধিকারী হইবেন, এবং তাঁহার সত্য-পরিচয় যে একমাত্র তিনিই দিতে পারিবেন, এই কথারই আভাস পাইতেছি তাঁহার ‘আহমদ’ নামের মধ্যে।

আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সকল অভাব ও সকল প্রয়োজনের অতীত। জানি; তবু বলিব: সৃজন-লীলার সার্থকতার জন্য মুহম্মদকে কল্পনা না করিয়া তিনি পারেন নাই। নিখিল সৃষ্টির মূলে যদি কোন উদ্দেশ্য নিহিত থাকিয়া থাকে, তবে সে হইতেছে আল্লারই আত্ম-প্রকাশের উদ্দেশ্য। আল্লাহ, তাঁহার এই সৃষ্টি-লীলার মধ্য দিয়া নিজেকে ব্যক্ত করিতে চান। শুধু, স্রষ্টা থাকিলেই হয় না, দ্রষ্টাও চাই, নতুবা স্রষ্টার সৃষ্টি সার্থক হইবে কেন? উপযুক্ত গুণীর কদর করিবার জন্য তাই প্রয়োজন হয় উপযুক্ত গুণগ্রাহীর। আল্লাহ-তালাও তাই আত্মঅভিব্যক্তির জন্য এমন একজন উপযুক্ত গুণগ্রাহী বা অন্তরঙ্গ বন্ধুর প্রয়োজন অনুভব করিতেছিলেন—যাহার নিকট তিনি আপন স্বরূপ উদ্ঘাটন করিতে পারেন এবং যিনি সেই মহাসত্যের বেগ ধারণ করিবার সামর্থ্য রাখেন। এই জন্যই বিশ্ব সৃষ্টির সংগে সংগে এমনিই একজন উপযুক্ত মহা-পুরুষের সৃজন অনিবার্য হইয়াছিল।

সেই ভাগ্যবান পরষেই হইতেছেন মুহম্মদ।

এখানে প্রশ্ন জাগিতে পারে: মুহম্মদের পূর্বে তবে কি জগতে কোন পূর্ণ-মানুষ আসে নাই? অথবা জগদ্বাসী কি আল্লার পূর্ণ-পরিচয় পায় নাই? উত্তর: না। মুহম্মদের পর্বে বহু, পয়গম্বর ও তত্ত্বদর্শী সাধুপুরুষের আবির্ভাব হইয়াছে; কিন্তু নিজেদের ধারণ ক্ষমতার অপূর্ণতার জন্য আল্লার সম্পূর্ণ ও ব্যাপক পরিচয় তাঁহারা কেহই নিজেরাও পান নাই, অপরকেও দিতে পারেন নাই। সে-গৌরব সঞ্চিত হইয়াছিল পূর্ণ-মানব মুহম্মদের জন্য। মুহম্মদের পূর্বে কোন পূর্ণ-মান্যকেও আমরা দেখি নাই—পূর্ণ আল্লাকেও দেখি নাই।

মুহম্মদের ‘আহমদ’ রূপ এখনও প্রকটিত হয় নাই। আল্লাহ্ তালাকে তিনি কিরূপ প্রশংসা করিবেন, কিভাবে তাঁহার পরিচয় দিবেন এবং সে প্রশংসা ও পরিচয় চরম এবং পরম হইবে কিনা, তাহা বিচার করিবার সময় এখনও আসে নাই। মুহম্মদের জীবন-শেষে সে-বিচার আমরা করিব।

মুহম্মদকে আল্লাহ, ‘হাবীব’ বা ‘দোস্ত’ বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন, এবং তিনি যে ‘রহমতুল্লিল আলামিন” – অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টির দকে আল্লার মূর্তিমান করুণা ও অশীর্বাদ, এই কথা ঘোষণা করিয়াছেন। ইহা খুবই স্বাভাবিক হইয়াছে। চরম প্রশংসার সংগে চরম প্রেম এবং আশীর্বাদও জড়িত থাকে। শিল্পী যাহাকে আপন মনের সমস্ত সংযমা মিশাইয়া নিখতভাবে রচনা করে, তাহাকে সে কেবল প্রশংসাই করে না, ভালোওবাসে। বিশ্বশিল্পী তবে কেন তাঁহার এই শ্রেষ্ঠ শিল্পকে ভালোবাসিবেন না? এই জন্যই মুহম্মদ আল্লার মাহাবুব বা প্রেমাস্পদ। শুধু তাই নয়, যেহেতু মুহম্মদকে আল্লাহ, ভালোবাসেন, এ কারণে মুহম্মদকে যাহারা ভালোবাসেন, অথবা মুহম্মদ যাহাদিগকে ভালোবাসেন তাহাদিগকেও আল্লাহ্, ভালোবাসেন। কাজেই মুহম্মদের আবির্ভাব বিশ্বমানুষের জন্য এক অপূর্ব কল্যাণের উৎস হইয়া উঠিয়াছে। প্রেমের ধর্মই এই!

‘মুহম্মদ’ হইলে যেমন তাহাকে ‘হাবীব’ হইতে হয়, তেমনি তাহাকে ‘আহমদ’ না হইয়াও উপায় নাই। ‘মুহম্মদ’ এমন শব্দ—যাহার মধ্যে ‘হাবীব’ ও ‘আহমদের ধারণাও ওতঃপ্রোতভাবেই নিহিত থাকে। শ্রেষ্ঠ শিল্প শব্দে, শিল্পীর শ্রেষ্ঠ প্রেম লাভ করিয়াই ক্ষান্ত হয় না, বিনিময়ে শিল্পীর শ্রেষ্ঠ মহিমাও সে ঘোষণা করে। শিল্পের মধ্যে শিল্পী আত্মপ্রকট হয়। শিল্পের প্রশংসা তাই প্রকৃতপক্ষে শিল্পীরই প্রশংসা। শিল্প অচেতন হইলে শিল্পীর প্রশংসা সে নীরবে করে, সচেতন হইলে প্রকাশ্যে করে। ঠিক যে-পরিমাণে শিল্প সার্থক ও সুন্দর হয়, সেই পরিমাণে শিল্পীও সার্থক ও সুন্দর হইয়া দেখা দেয়। কাজেই শিল্প যদি চরম প্রশংসিত ও পরম-পূর্ণ হয়, তবে শিল্পীও তখন তার মধ্য দিয়া চরম-প্রশংসিত এবং চরম পরিচিত না হইয়াই যায় না।

‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ তাই একই ব্যক্তি না হইয়া পারে না। স্রষ্টার দিক দিয়া যিনি মুহম্মদ, সৃষ্টির দিক দিয়া তিনিই আহমদ।

ইহাই হইতেছে ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নামের দার্শনিক তাৎপর্য। এই দুইটি নাম তাঁহার সার্থক হইয়াছে কিনা, অর্থাৎ আল্লার চরম-প্রশংসা তিনি লাভ করিয়াছেন কিনা পক্ষান্তরে তিনি আল্লার চরম প্রশংসা করিতে পারিয়াছেন কিনা—ইহাই হইবে তাঁহার জীবনালোচনার দুই প্রধান লক্ষ্যবস্তু —ইহাই হইবে তাঁহার সাফল্য বিচারের দুই প্রধান মাপকাঠি।

Series Navigation<< (বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ১(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ৩ >>

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →