সাহিত্য কোনো মোরাল বিউটি কনটেস্ট না – ফিলিপ রথ

ফিলিপ রথ, যার একটাই পরিচয়, আগাগোড়া লেখক। জীবনভর কন্ট্রাডিক্ট কইরা যাওয়া লোকটার লেখক আইডেন্টিটি নিয়া কইতে গেলেও কন্ট্রাডিকশন প্রাসঙ্গিক হয়া যায়। এতো শৈল্পিক উপায়ে কন্ট্রাডিক্ট কয়জনই বা করতে পারে!
লেখক রথ উপন্যাস লিখছেন, ছোট গল্পও লিখছেন। তাঁর সাহিত্যে উইঠা আসছে কন্টেম্পোরারি পলিটিক্স, কালচার, আর জীবনবোধ। মোটা অংশ জুইড়া লেইখা গেছেন নিজেরে নিয়া। না, ‘অটোবায়োগ্রাফি’ বললে ভুল হইবো। উনি নিজের আইডেন্টিটি নিয়া খেলছেন। এতো বাস্তবের মতো কইরা খেলছেন যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা ধরতে গেলে ফিকশনের স্বাদ নেওয়াই উল্টা কঠিন হয়া যাইবো। আর তাই উনি চাইতেনও না কেউ উনার ফিকশনরে দূরে ঠেইলা লেখায় তাঁরে খুঁইজা বেড়াক।
জাকারম্যান, কেপেশ, আর পোর্টনয় – রথের এই কারেক্টারগুলারে উনি নিজের নানা বয়স আর সময়ের লগে মিলায়া, চারপাশের এলিমেন্ট বসায়া, যত্ন দিয়া গড়ছেন – একটা ভাস্কর্যের মতন। পুব-পশ্চিম, রিপাবলিক -টোটালারিয়ান, সেমেটিক-এন্টি সেমেটিক থিকা শুরু কইরা নারী-পুরুষ পর্যন্ত মানুষ-মানুষের সম্পর্ক, আর ক্রাইসিস নিয়া উনি গল্প বইলা গেছেন।
সাইকো-এনালাইসিসের অভিজ্ঞতা তাঁর লেখার মধ্যে বড় ভূমিকা রাখছে। আমজনতা, লোকে কী ভাবলো, পাঠক কী মনে করলো এইগুলারে উনি কখনো গুনেন নাই। নিউ জার্সি থিকা নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা থিকা চেকোশ্লোভাকিয়া, ইংল্যান্ড – নানা স্থান-কাল-পাত্র থিকা উনি নিছেন, আর একটার পর একটা নভেল ডেলিভারি দিছেন।
আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেখক রথ দুইটা ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড, দুইটা ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল এওয়ার্ড, তিনটা ফকনার এওয়ার্ড, একটা পুলিৎজার আর ম্যান বুকার ইন্টার্ন্যাশনাল প্রাইজ পাইছেন।
যদিও রথরে চেনার জন্য প্রাইজের এই লিস্ট কাজে আসবো না। নিজের লাইফের সাথে মিল রাইখা এতগুলা নভেল লেখার পরও রথ আদৌ নিজেরে চেনাইতে চাইতেন কিনা সন্দেহ আছে। উনি নিজের জন্যই লিখতেন, কারণ এইটা তারে ভালো রাখতো। পাঠক নিয়া তার তেমন মাথা ব্যথা ছিল না, যদিও এইটাও তাঁর জীবনভর হেঁয়ালির আরেকটা কিনা – জানা সম্ভব না। কারণ, এইটা জিগানোর টাইম ফুরায়ে গেছে।
মোদ্দা কথা, লেখক হিসাবে রথ যতটা মজার, মানুষ হিসাবে ততটাই ডিফিকাল্ট। তারে যদি চিনতেই হয়, কয়টা রথ পইড়া দেখতে পারেন। তবে বইলা রাখতেছি, পুরাপুরি চিনতে না পারলে সেই দায়ভার আমার না। আর তার লেখা বইগুলার কোনো লিস্ট এখানে দিতেছি না (কোনটা রাইখা কোনটা দিবো), সেইটা বরং আপনারা গুগুল কইরা নিয়েন।
১৯৩৩ সালে নিউ জার্সির ইহুদী পরিবারে জন্মানো রথ, ২০১৮ সালে ম্যানহাটনে মইরা যাওয়ার আগে শেষ বয়সে দুঃখ করতেছিলেন, ফিকশন পড়ার এস্থেটিক দিন দিন ‘কাল্ট’ এক্টিভিটি হয়া যাইবো। তাঁর এই ভাবনা কি সত্য হইবো না মিথ্যা? সময়ই বইলা দিবো।
২.
ফিলিপ রথের এই প্যারিস রিভিউ ইন্টার্ভিউটা ৮৪’ সাল পর্যন্ত লেখক রথের পুরা জার্নিটারেই তুইলা ধরছে। একজন সাকসেসফুল নভেলিস্ট, যারে আমেরিকার অন্যতম সেরা সাহিত্যিক ধরা হয়, উনি নিজ মুখে বলতেছেন কেমনে তার লেখার জার্নি শুরু হয়, কেমনে শেষ হয়, লেখার টাইমে তার কী ক্রাইসিস ফেইস করা লাগে—এইটা উঠতি লেখক আর কিউরিয়াস পাঠক, সবার জন্যই দারুণ রিসোর্স হইতে পারে।
অবশ্য উনি এইখানে ফিকশান লেখা শিখায়ে দিছেন, বা কোনো ট্রিক বইলা দিছেন, এমন ভাবাটা ভুল হইবো। উনারে নিয়া মানুষের অনেক প্রি-এজাম্পশনস এইখানে ভাইঙ্গা দিছেন। ফিকশন কেমনে লিখতে হয়? এই প্রশ্নের কোনো প্রি-এজিউমড উত্তর আপনার মনে উঁকি দিতেছে? দিলে উনি সেটাও যে ভাইঙ্গা দিবেন, এইটুকু স্পয়লায় দিয়া রাখতেছি।
কাজের এথিকস, পাঠক নিয়া ভাবনা, আর লেখার ক্রাইসিস উনারে কেমনে প্রভাবিত করে সুন্দর কইরা বুঝায়া দিছেন। অটোবায়োগ্রাফি আর তাঁর উপন্যাস নিয়া পাবলিক কোয়েশ্চান নিয়া বিশাল বাহাস হইছে, সেখানে উইঠা আসছে তাঁর ইন্সপাইরেশন, সিচুয়েশন, আর থট-প্রসেস।
যখন অপ্রিয় কিছু জিগানো হইছে, ডাউন দ্যা উইকেটে আইসা ছক্কা পেটানোর মতো কইরা রথ মারছেন–তাঁর কথা দিয়া। রথের সাথে আপনার মিলা গেলে পিঠে মোলায়েম স্পর্শ টের পাবেন আর না মিললে চাবুকের বাড়ির মতোও লাগতে পারে। যদিও রথ ওসবের থোড়াই কেয়ার করতেন। রথের কাছে সামাজিক মোরালিটি সাহিত্যের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করার রাইট রাখে না। তাঁর কাছে যা ঘটে, তা-ই লেখা সাহিত্য। যা ঘটে তা ভালো কি মন্দ–সেইটা আলাদা আলাপ।
যেহেতু ব্যক্তিজীবনের সাথে তাঁর সাহিত্যের অনেক মিল আছে, এই ইন্টার্ভিউতে তাঁর পার্সোনাল লাইফ নিয়াও প্রশ্ন উইঠা আসছে। বিশ্ব রাজনীতি নিয়া, রেজিম নিয়া, ন্যারেটিভের চয়েস নিয়া আর এক গাদা রথ নভেল আর পেছনের ইতিহাস নিয়া তাঁরে প্রশ্নবানে জর্জরিত করছেন হারমিওন লি। আশা করতেছি, এইটা পইড়া মজা পাবেন, জানবেন, আর রথরে ‘একটু’ হইলেও চিনতে পারবেন।
কে, এম ইতমাম ইসলাম
অক্টোবর, ২০২৩