আসল কনজারভেটিভ হইতে গেলে এখন লিবারেল হওয়া ছাড়া কোনো গতি নাই – স্লাভোজ জিজেক ও নোয়াহ হারারি’র আলাপ

এই বইতে যা আছে তারে ঠিক ইন্টার্ভিউ বললে ভুল হইতে পারে। এইটারে বরং আলোচনাই বলি।
আজকের দুনিয়ার দুই জন ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল স্লাভোজ জিজেক আর নোয়াহ হারারি। উনারা আলাপ করছেন এই যামানার আইডিওলজি নিয়া। আমি সেই আলাপের তরজমা করছি একটা ইউটিউব ভিডিও থিকা। প্রশ্ন হইতেছে, একটা ইউটিউবে থাকা ভিডিওর আলোচনা কেন বাংলায় তরজমা করলাম?
কারণ, এই যুগে যা চলতেছে – গ্লোবাল পলিটিক্সের খেলা, বামপন্থীদের নাজুক অবস্থা, ফার-রাইটরা কেম্নে আগাইতেছে আর এতসব গ্যাঞ্জামের সল্যুশন কী হইতে পারে – এই টপিকগুলা নিয়া দুইজন ডিবেট করছেন। কোথাও একমত হইতে পারছেন, কোথাও আবার পারেন নাই।
উনারা বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু, মোটাদাগে মিলেনিয়াল আর জেন-জি যামানায় চর্চিত আইডিওলজি যেমন– পলিটিকাল কারেক্টনেস, এমনকি ‘মি টু’ মুভমেন্ট নিয়াও মতামত দিছেন। জিজেকের মতামত প্রচলিত কনসেপ্ট থিকা আলাদা– যা নিয়া আপনাদেরও ভাবার সুযোগ আছে।
ভিডিও থিকা ট্রান্সক্রিপশন কইরা, এরপরে সেইটারে তরজমা করা অতো সোজা ছিল না। অনেক কথাই খাপ-ছাড়া লাগতেছিল। কারণ জিজেক প্রায়ই এক টপিকে বলতে বলতে অন্যদিকে হারায়া যাইতেছিলেন। এই ‘অন্যদিকে হারায়া যাওয়া’ কথাগুলাও ইম্পর্টেন্ট বইলা ফেলায়া দিতে পারতেছিলাম না। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই ‘হারায়া যাওয়ার’ কাজটা উনারা জাইনা-বুইঝাই একটা ভূমিকা হিসাবে আনছেন। মানে তেনা-প্যাঁচানো মনে হইলেও কথাগুলা জরুরি ছিল।
পুরা আলোচনা দুই বন্ধুর একটা আড্ডার মতো কইরা হইছে। আমিও চাইছি উনাদের আড্ডার টোনটাই লেখায় চইলা আসুক। তাই, খাপছাড়া কথাগুলারেও যতটা সাইজে আইনা সার্ভ করা যায়, চেষ্টা করছি। বারবার জিজেকরে টপিকে ফিরায়া আইনা আমার কাজটা একটু সহজ করছেন হারারি। আর এম্নে বুঝছি, এই আলাপ যদি একটা ইন্টার্ভিউ হইয়া থাকে, সেইটা হারারিই নিছেন।
যাই হোক, আমি ভাবতেছি উনাদের আলাপ আপনারে একটা নাড়া দেওয়ার ক্যাপাবিলিটি রাখে। তাই, একটু নইড়া-চইড়া বসতে চাইলে একটানে পইড়া ফেলেন, নাকি?
কে. এম. ইতমাম ইসলাম
মার্চ, ২০২৪
…
আজকের দুনিয়ায় আইডিওলজির মূল যুদ্ধক্ষেত্র কোনটা?
নোয়াহ হারারি: এই দুনিয়ায় আইডিওলজির মূল যুদ্ধটা কই হইতেছে বইলা আপনি মনে করেন? যদি এখনও আইডিওলজি বইলা কিছু থাইকা থাকে…
স্লাভোজ জিজেক: এইখানেই তো গ্যাঞ্জাম। আজকের দুনিয়ার ক্ষমতার রাজনীতির যেই লেভেল চলতাছে– এইখানে নয়া জিও-পলিটিকাল শক্তির আমদানি হইতেছে। কিন্তু কেউ কারো লগে লাগতে গেলে আগে একটা অফিশিয়াল লাইন মাইনা চলতো। একটা সিস্টেমে আগাইতো। সেই অফিশিয়াল লাইনটা এখন তারা কত সহজে ভাইঙ্গা ফেলতেছে! আমি এই দেইখা তব্দা খাই।
আমাদের সো-কল্ড উন্নত দেশও বাদ নাই। এখন দুনিয়ার কোথাও কারো গ্যাঞ্জাম হইলে সেইটারে খালি দুই পক্ষের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বইলা পার পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে কেম্নে কি হইতো সবই আমার মুখস্ত। তখন ছিল মডারেট বাম, মডারেট ডান, আর কয়টা মধ্যমপন্থী আর চরমপন্থী। মূল ফর্মূলা কিন্তু এক জায়গায় যায়া ঠেকতো – হয় খ্রিষ্টান, যারা কনজার্ভেটিভ ডেমোক্রেট, নাইলে সোশাল ডেমোক্রেট, যারা সোশালিস্ট। আর এর মধ্যেই যা অদল-বদল। যেমন তুমিও, ইউভাল, তোমার একটা বইতে লিখছো। আমার মনে হয় এই শিক্ষাটা খুবই জরুরী। তাই আমিও তোমারে এই জায়গায় প্রায়ই কোট করি।
“ডেমোক্রেসির মানে ডাইভার্সিটি – আমি এমন লোকমুখে চলা বলদামির পক্ষে না।” ডেমোক্রেসির মানে ডাইভার্সিটি হইতেই পারে কিন্তু সেইটা একটা শেয়ার্ড বিলিফে আটকায়া যায়। আবার এই শেয়ার্ড বিলিফ অনেক শক্তিশালী বা পজিটিভ কিছু – এমনও না কিন্তু।
হ্যাঁ, আইডিওলজির অলিখিত সিস্টেম বা যেকোন রাজনৈতিক ঘটনা ফেইস করার নিয়ম নিয়া আলাপ করা অদরকারি মনে হইতে পারে। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় এই আলাপটাই চরম গুরুত্বপূর্ণ হয়া দাঁড়াইছে। এক্সাম্পল হিসাবে বলি, তোমার বুশ আর আল গোরের কথা মনে আছে তো?
হারারি: হুম…
জিজেক: পুরা ঘটনাটা ঘটছে ফ্লোরিডার মাত্র এক-দুইশো ভোটের জন্য। এইটা আবার কোর্ট পর্যন্তও গড়াইছিল। কিন্তু যখন সুপ্রীম কোর্ট…বা হয়তো অন্য কেউ, আমি ভুইলা গেছি কে থামাইতে চাইছে – কিন্তু কি সুন্দর সব পক্ষ মাইনা নিছিলো! ঠিক এইটাই দিন দিন হাওয়া হয়া যাইতেছে। Continue reading