অসুখের দিন (কিস্তি ২)
…
পর্ব ৩: অপারেশন টেবিলের ঝাপসা দুনিয়া
মেজো খালু মারা গেলেন। অনেক দিন পর পরিবারে কেউ মারা গেলেন, যার খুব কাছ থেকে আমি ঘুরে এসেছি। উনার লাশ নেওয়া হলো নোয়াখালী। দুলাভাই সঙ্গে গেলেন। লাশটুকু দেখতেও আমার যাওয়া হলো না। আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
অসুখের শুরুটা এমন। তখন ‘কাঠবিড়ালি’ নামের একটি সিনেমা মুক্তি পাইছে। অফিসের ফাঁকে দুজন বন্ধুর সঙ্গে এক শনিবার দেখতে গেলাম। অফিসে ফিরে কিছুক্ষণ কাজ করলাম। সন্ধ্যার সময় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে একটা অনুষ্ঠানে গেলাম। প্রকাশিতব্য চার-পাঁচটা কবিতার বই নিয়ে আলোচনা, পরস্পরের উদ্যোগে। বের হওয়ার পর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আড্ডা দিলাম, পায়ে অনেক ব্যথা হচ্ছিল। গাড়ির প্রচণ্ড জ্যাম আর পরদিন ছুটির দিন হওয়ায় তাড়া ছিল না তেমন, শুধু ক্ষুধা ছিল।
রবিবার গোসল করে দেখে আপা রাই সরিষার শাক ভাজছে। সাথে রুই মাছ ভাজা। শাকের গন্ধটা এত ভালো লাগলো, বললাম, ‘আজ অনেকগুলো ভাত খাবো’। সত্যি সত্যি এক-দেড় প্লেট খেয়ে ফেললাম। প্রতিক্রিয়া পেলাম দ্রুতই। দুপুরের পর থেকে ভয়ংকর পেটে ব্যথা। শাক যতক্ষণ পেটে ছিল ততক্ষণ ব্যথা আর অস্বস্তির মধ্য দিয়ে গেলাম। এত দিন হালকা জ্বর আর ব্যথা থাকলেও আবার ভীষণ জ্বরে পড়লাম।
এর মাঝে সার্জেন খোঁজাখুঁজি চলছিল। আল হামরা হাসপাতালের একজন সার্জেনের নাম পাইলাম। ডা. শাহ মোহাম্মদ ফাহিম খোঁজ নিয়ে বললেন, তিনি অভিজ্ঞ ও বেশ সুনাম আছে।
বাবা তখনো জানতে পারেন নাই কিছুই। আমার প্রতি আম্মা-বাবার যে আবেগ সে কারণে আমরা উনাদের কিছু বলতে পারি না। উনাকে বলা হলো, ডাক্তার কিছু ওষুধ দিছেন। শিগগিরই সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার উনার সমস্যাও ঠিক ধরতে পারছেন কিনা বুঝতে পারছিলেন না। অনেকগুলো টেস্ট আর ওষুধের পরামর্শের পর বাড়ি ফিরে গেলেন। আমিও আবার অফিস যাওয়া শুরু করলাম। আমাদের ডেপুটি এডিটর মাহবুব মোর্শেদ ভাই বলছিলেন, ‘সুজন তাড়াতাড়ি অপারেশন করান। একজন মানুষ শরীরের মধ্যে পাথর নিয়ে ঘুরছে এটা ভাবতে কেমন লাগে?’ কিন্তু প্রতিদিন এত ক্লান্তি ভর করে যে, যাবো যাবো করে যাওয়া হয় না।
একদিন ফেসবুকে খেয়া মেজবার একটি পোস্ট দেখে মনে হলো, হাসপাতাল তো উনার বাড়ির কাছে। উনাকে নক দিতে বললেন, চলে আসেন ফার্মগেটে। একসঙ্গে হাসপাতালে যাই।
অফিস থেকে বের হলাম। ভাবলাম, ফার্মগেট এমন কী আর দুরত্ব। হলি ফ্যামিলি যাওয়ার মতো বোকামি করলাম আবার। বাংলামোটর থেকে বেশ দ্রুত আসার চেষ্টা করলাম। তারপরও ২০-২৫ মিনিট লাগলো। অসম্ভব ব্যথা হচ্ছিল সারা শরীরে। সেজান পয়েন্টের সামনে খেয়ার সঙ্গে দেখা। উনি নাকি আমাকে চিনতেই পারছেন না। ও হ্যাঁ, ততদিন আমার ওজন মোটামুটি ১০-১২ কেজি কমে গেছিল। অবশ্য ওজন আগে থেকেই কমছিল, কিন্তু কোনো কষ্ট ছাড়া ওজন কমা নিয়ে আসলেই খুশির ছিল না। শরীরের ভেতর পাথর জমছে, উল্টো দিকে এর প্রতিক্রিয়া ওজন না বেড়ে কমছে! একটু অদ্ভুতই তো!
খেয়ার সঙ্গে বছর দু-এক পর দেখা। ফলে অনেক কথা জমেছিল। কথা বলতে বলতে চলে গেলাম। আল হামরা হাসপাতালের রিসিপশনে একটা ফোল্ডার দিল— যেখানে সব ডাক্তারের নাম, পরিচয় ও শিডিউল দেওয়া আছে। আমি আকবর আহমেদের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। বললেন, তিনি সিনিয়র ডাক্তার। উনার বেশ সুনাম আছে। চাইলে আজ সন্ধ্যায় কথা বলতে পারি। আমি তো কোনো কাগজপত্র নিয়ে যাই নাই। বললাম, পরে আসবো।
আমরা কাছের একটা রেস্টুরেন্ট বসলাম। খেয়া বলল, ওর নাকি মুরগির গ্রিল খাইতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওয়েটারকে গ্রিল অর্ডার দিলেন। আমি বললাম, মাংস তো খাইতে পারবো না। আমার জন্য একটা সবজির অর্ডার দেন। উনি বলছিলেন, আমার চিমসে যাওয়া চেহারা-সুরত দেখে গ্রিলের কথাই মনে পড়ছিল। আমরা দুজনেই হাসলাম। পরে বললেন, হাসপাতালে ভর্তি হলে খাবার নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি বললে আমি বাসা থেকে রেধে নিয়ে আসবো।
মনে আছে, অপারেশনের সময় ঠিকঠাকের পর রাশেদ আমাকে চিকেন খাওয়াইতে নিয়ে গেছিল। সঙ্গে ছিল ফাহিম মুনতাসির। আমিও ভয়ে ভয়ে খাইলাম। এটাও কি আমার চেহারা দেখে পছন্দ করছিল! হাসপাতালের এ দিনগুলোতে আমার পাশে নিয়মিত ছিল রাশেদ। ও আমার স্কুল বন্ধু। একসঙ্গে ক্লাস সেভেন থেকে পড়েছি। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, তবে আলাদা সাবজেক্টে। একই হলেও ছিলাম কিছুদিন।
দিন কয়েকের মধ্যে সিরিয়াল দিয়ে সন্ধ্যার দিকে ডাক্তারের কাছে আসলাম। ডা. আকবর আহমেদ বললেন, ইউএসজি, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা করান। অপারেশন তো মাস্ট। গলব্লাডারের পাথরের অন্য কোনো চিকিৎসা নাই।
পরদিন সকালে এসে ইউএসজি করালাম। ওই বিভাগের হেড ভদ্রমহিলা। উনি বললেন, আপনার অবস্থা তো খারাপ। গলব্লাডার দেখা যাচ্ছে না। পাথরের কিছু শ্যাডো দেখে বোঝা যাচ্ছে গলব্লাডার ওখানে আছে। সম্ভবত ফেটে গেছে। সিটি স্ক্যান করে দেখেন। পরে ডা. আকবর আহমেদ বললেন, হ্যাঁ, খারাপ তো বটে। এ অবস্থা হয়ে গেল, আপনি একটুও বুঝতে পারেন নাই। কিন্তু সিটি স্ক্যান করে টাকা খরচ করবেন কেন? যা বোঝা যাচ্ছে ল্যাপারোস্কপি করা যাবে না। ওপেন সার্জারি করতে হবে। যেহেতু পেটই কাটা হবে আলাদা করে এ পরীক্ষা করে শুধু শুধু অনেকগুলো টাকা খরচ করবেন কেন। এরপর আরও কিছু টেস্ট করালাম। ইসিজিও ছিল।
একদিনের কথা মনে পড়ছে। সকালে হাসপাতালে গেছি। সম্ভবত যেদিন ইউসিজি করালাম। অ্যাপের মোটরসাইকেলে অফিসে গেছি। হাতভর্তি হাসপাতালে রিপোর্ট। খুব গরম আর জ্যাম। হোটেল সোনারগাঁও পার হয়ে নেমে গেলাম। শরীরে ভীষণ ব্যথা, গরম তো আছে— এর মাঝে খেয়াল করলাম বেল্ট থাকা সত্ত্বেও আমার প্যান্ট যেন খুলে পড়ে যাচ্ছে। হাত দিয়ে ধরে হাঁটা শুরু করলাম। কী যে বিব্রতকর অবস্থা। কান্নাও পেল। এরপর বাংলামোটর মোড়ে আসার পর খোঁজাখুঁজি করে একজন মুচি পেলাম। উনাকে দিয়ে বেল্টে একটা ছিদ্র করালাম। এরপর একটু স্বস্তি পেলাম। সে দিনের অবস্থাটা এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে।
ও সময় দেশে করোনা নিয়ে ততটা তোড়জোর শুরু হয় নাই। তবে হাসপাতালগুলোতে এ নিয়ে কিছু প্রস্তুতি চলছিল বোধহয়। ঠিক মনে নাই, কোনো এক হাসপাতালে চীনা লোক দেখে রোগীরা কী যেন বলাবলি চলছিল। যাই হোক, ডা. আকবর আহমেদ রিপোর্ট দেখে বললেন, দ্রুত অপারেশন করে ফেলেন। আগামী সপ্তাহ আমি আবার ওমরাহ করতে যাবো। কাল পারবেন। বললাম, না। আরেকটা দিন সময় লাগবে। অফিসে ছুটি, টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। সেদিন মঙ্গলবার ছিল, উনি বললেন, তাহলে বৃহস্পতিবার সকাল সকাল চলে আসেন। আটটার পর কিছু খাবেন না। এসে ভর্তি হয়ে যাবেন।
বুধবার অফিসের যাওয়ার আগে ব্যাংকে গেলাম টাকা তুলতে। অনেকক্ষণ পর জানালো আমার অ্যাকাউন্ট ডরমেন্ট করা হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন লেনদেন হয় নাই কোনো। আমি বললাম, গত কয়েক মাসে টাকা জমা দিলাম। তারপরও এ ব্যবস্থা। তারা বলছে, বেশ আগেই ডরমেন্ট হয়ে গেছে। অথচ এতদিন টাকা জমা দেওয়ার সময় বলে নাই। এখন কাগজপত্র জমা দিয়ে অ্যাকউন্ট সচল করলে টাকা পাবো। সেটার জন্য সময় লাগবে। এত অল্প সময়ে টাকা কোথায় পাবো? কী একটা নাটকীয় অবস্থা। ভাগনে নিশানকে ফোন করতে বলল, কোনো সমস্যা নাই। ও টাকা দিচ্ছে। তারপর অফিসে এসে সম্পাদককে জানালাম। কিছু কাজ করে বাসায় ফিরলাম। শুনলাম, অপারেশনের কথা শুনে আমার বউ রওয়ানা দিয়েছে ওর ট্রেনিংস্থল থেকে, সঙ্গে আসছে ভাগনি ও তার স্বামী।
২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল সকাল আল হামরায় চলে গেলাম আমি, দুলাভাই ও আমার বউ। ভর্তি হলাম। কেবিনে ঢুকে কাপড়-চোপড় ছাড়লাম। ডাক্তার ও নার্স এসে দেখে গেল। শরীরের তাপমাত্রা বেশি বলতে একবার মেপে গেল। দুই বা তিনটার পর এসে একজন কেবিন বয় এসে হুইল চেয়ারে করে আমাকে নিয়ে গেল। হুইল চেয়ারে এর আগেও বসছি মানে মাসখানেক আগে হাসপাতালে যখন ভর্তি হইছিলাম। কিন্তু এখন যখন হাসপাতালের করিডর দিয়ে যাচ্ছিলাম কেমন একটা বিচ্ছেদের ব্যাপার ঘটতেছিল। এমনও হলো ভাবি একটা ছবি তুলে রাখি। কী আজব একটা ভাবনা না! এটা সম্ভবত দেখনেওয়ালা যে জীবন-যাপন করছি তার ফলাফল। অথচ এতে আমার কিছু আসে আর যাবে না। এ ধরনের অসুখ-বিসুখের যে ব্যাপারগুলো ঘটে তা আসলে অন্যদের সঙ্গে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগাভাগির মানে কী? যদিও কাজটা আমি নিজেই করছি। এর মধ্যে নিজেকে হয়তো খানিকটা সুবিধাপ্রাপ্ত বা মানুষের করুণা আদায়ের ব্যাপার থাকে। করুণাকে আমি খারাপ অর্থে দেখি না। বরং সোসাইটিতে এর বিকৃত অর্থ তৈরি হয়েছেই বলে মনে করি।
যাই হোক, আমাকে অন্য একটা বিল্ডিংয়ে নেওয়া হলো, যা অপেক্ষাকৃত পুরোনো। করিডরে অনেক মানুষ বসা। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া রোগীদের স্বজন। একটা রুমে বসানো হলো। যেখানে স্যালাইন চলছে, ব্যথা কাতরাচ্ছে এমন রোগী আছেন। আমার হাতেও স্যালাইন লাগানো হলো। পাশে বসে ছিল অল্প বয়সী একটি ছেলে। তার বোধহয় কোনো জটিল সমস্যা ছিল— এতদিনে বিস্তারিত মনে নাই। ঠিক কতক্ষণ ছিলাম জানি না, একজন আয়া এসে ডেকে নিলেন। ওয়াশরুমে গেলাম। আগের বিল্ডিং যতটা ঝকঝকে, এটা তার চেয়ে বেশি ম্লান। অবশ্যই ইতিমধ্যে আমার হাইপাওয়ারের চশমা খুলে নেওয়া হয়েছে। স্যান্ডেল জোড়াও ওয়েটিং রুমে দিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে রাশেদ ও আপাও আসছেন। চশমা দিতে দিয়ে আপাকে এক ঝলক দেখলাম।
এদিনও নাকি বেশ সাজগোছ করা ডাক্তার চোখে পড়ছে অপারেশন থিয়েটারে। সম্ভবত তারা কোনো অনুষ্ঠানের যাবে সন্ধ্যায়। যেমনটা এনডোসকপি করার দিন আমার মাথা ধরে ছিলেন ‘বিয়ের পোশাক’ পরা এক নারী। পরে আরও কয়েকজনকে দেখছিলাম সাজুগুজু করা। ভাবুন তো, ডাক্তারদের জীবন— অসুস্থতা, কাটাকুটি, চিৎকার-চেচামেচি, ভুল হওয়ার শঙ্কা, এর মাঝেই জীবন বয়ে যায়।
অপারেশন টেবিলে শুয়ে পড়লাম, দুই হাত ছড়িয়ে। মাথার ওপর কড়া আলো। চশমা না থাকায় সবকিছু ঘোলা ঘোলা অপার্থিব লাগছিল। আল্লাহকে ডাকতেছিলাম। একজন একটা নল এগিয়ে নিয়ে এলেন মুখের কাছে। তারপর একটু পরই অন্ধকার! ঠিক অন্ধকার কিনা জানি না। এরপর আবারও অজ্ঞান হতে হবে! অজ্ঞান হওয়াকে একটা অনিশ্চিত বিষয় বলে মনে করি। এটা ঘুমের মতো কিছু না। ঘুমে আমরা স্বপ্ন দেখি, তাকে ঘুম বলেও ক্লেইম করতে পারি। এমনকি মৃত্যুর ভাইও বলি। কিন্তু অজ্ঞান হওয়া এমন একটা অবস্থা— যেখানে আমরা কোনো কিছুই ক্লেইম করতে পারি না। এবং তখনো ভাবতে পারি নাই, এমন অবস্থায় আরও তিনবার পড়তে হবে।
এখানে দুটো জিনিস মনে রাখতে পারেন। এক. আমাকে অতিরিক্ত টাকার খরচ থেকে বাঁচাতে সিটি স্ক্যান করাতে মানা করেছিলেন ডা. আকবর আহমেদ। দুই. কয়েকদিন পর ওমরাহ’য় যাচ্ছেন। তার আগেই হাতের সার্জারিগুলো শেষ করতে হবে।
পর্ব ৪: বাসায় ফেরার আনন্দ
অন্ধকারে ডুব দিয়েছিলাম, সেখান থেকে চেনা পৃথিবীতে ফিরলাম। ব্যাপারটা বুঝতে খানিকটা সময় লাগলো। আস্তে আস্তে কড়া হতে থাকা আলোর মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলাম, আশপাশে মানুষের কথাবার্তা, কাতরানি শোনা যাচ্ছে। পোস্ট-অপারেটিভ বেডে শুয়ে আছি।
মাথার নিচে কোনো বালিশ নাই, আর যেটা চোখে মারল— কড়া আলো লাগছে, এর ওপর চোখে চমশা নেই। আর একটা ব্যথা। বুক থেকে নিচের দিকে। কেউ একজন এসে বললেন, জ্ঞান ফিরেছে। আমি জড়ানো গলায় (পুরোনোকালে ড্যাম হওয়া ক্যাসেটে যেমন শব্দ আসতে) বললাম, ব্যথা ব্যথা। তিনি বললেন, ঠিক হয়ে যাবে। এর পর আমি একে ডাকি, ওকে ডাকি। কেউ হয়তো ফিরে তাকায়, কেউ তাকায় না। বুঝতে পারি না কত সময় গেছে।
অ্যানেসথেসিয়ার ঘোর ঠিক মতো কাটে নাই। একজনকে বললাম, আমার চশমাটা এনে দেন। একটু পর চশমা আসলো। খানিকক্ষণ পর আপা আসলেন, হাতটা ধরলেন। আপাকে চাইতেছিলাম আমি। এ মুহূর্তে ঠিকঠাক মনে পড়ছে না, কিন্তু সেটা হয়তো ছিল এ পৃথিবীকে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তেরগুলোর একটা। আমি আছি, আপনজনদের মাঝে আছি এ চেয়ে আনন্দের অনুভূতি আর কী হতে পারে। আপা অল্পক্ষণ ছিলেন। কাটাকুটিকে উনি অনেক ভয় পান। আমার জন্যই এলেন। বলছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।
ব্যথা তো কমছে না। ডাক্তার বা কেউ একজন বললেন, ধৈর্য্য ধরেন। ঠিক হয়ে যাবে। এরপর একটা ইনজেকশন দেওয়া হলো। যখন কেবিনের বেডে তোলা হচ্ছে, তখন জ্ঞান ফিরল।
ওই বছর জুলাই মাসে এই নিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলাম, অ্যানেস্থেশিয়ার বাংলা অবেদনিক। গুগলে স্পেলিং চেক করতে গিয়া পাইলাম। আমার দুবার অ্যানেস্থেশিয়া নেওয়ার অভিজ্ঞতা হইছে। কেমন একটা ব্যাপার যেন! একটা ভয় থাকে- যদি আর চেতনে না ফিরি। ঘুমানোর সময় ঘুম না ভাঙার ভয় থাকে না। অভ্যাসের কারণে হয়তো। বা না ভাঙলেও মরণ হবে আরকি! যে মরণকে আমরা মেনে নিই। কিন্তু অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাব না কাটার ভয় সেই অর্থে মরণের ভয় না, স্রেফ চেতনে ফিরে না আসার ভয়। মানে দুইবারই এমন হইছে। প্রথমবার সিরিয়াস কাটাকুটি ছিল- চার ঘণ্টার মতো বেহুঁশ ছিলাম। সিনেমায় যেভাবে দেখায় সার্জারির আগে রোগী দেখে আলো কেমন যেন বেশি বেশি ছড়ানো। এটা দেখি সত্যি বটে। এমনকি চেতন হওয়ার খানিক পরও প্রচুর আলো চোখে লাগে- অন্ধকার থেকে ফেরার কারণে। এমনও ভাবতেছিলাম- ঘুমরে একটা অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করার চান্স আছে। বা স্বপ্নের মাধ্যমে ঘুম নিজেকে জানান দেই। স্বপ্নের মধ্যে এটা ভাবাও সম্ভব আমি ঘুমের মধ্যে আছি। কিন্তু অ্যানেস্থেশিয়া নেওয়ার পরের অভিজ্ঞতাটা কই জমা থাকে? কিছু ভাবার চান্স কি থাকে? দ্বিতীয়বার মেবি দেড় ঘণ্টার মতো বেহুঁশ ছিলাম। তখন হইলো কী একটা রাবারের মতো জিনিস আবার বামপায়ে জড়ায়া নেওয়া হলো। এটা নিয়া পরে জিগাসা করা হয় নাই। আমি তখন ভয় পাইছিলাম পুরোপুরি বেহুঁশ না করলে হয়তো পা ছোড়াছুড়ির কোনো প্রক্রিয়া থাকতে পারে। ডাক্তার তখন বলল, এটা কী হচ্ছে আপনি বুঝতেও পারবেন না। জেগে উঠার দুই অভিজ্ঞতায় যন্ত্রণাকর। বিশেষ করে প্রথমবার খুব ব্যথা টের পাচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ পর ইনজেকশন দেওয়ার পর পোস্ট অপারেটিভ রুমে থেকে নেওয়ার বিষয়টা টের পাই নাই। দেখি কেবিনে। বাট, যেটা বারবার মনে হয়- ওই সময় আমি কি কিছু ভাবি, অবেদনিক অবস্থায়। সেটা আসলে কীভাবে জানা যায়। একটা ঘাঁ-এর ক্ষেত্রে লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া ইউজ করা মুখটা কেটে বড় করা হইছিল। আমার ভয় ছিল- এই বুঝি ভীষণ ব্যথা পাবো। ভয়ের মধ্যে থাকতে থাকতেই দেখি নার্স ব্যান্ডেজ জাড়ায়া বলতেছে উঠে পড়েন। সে হিসেবে ‘অবেদনিক’ শব্দটা ঠিক আছে!
দশটার মতো বাজে হয়তো। ডাক্তার এসে বলে গেলেন, একটু একটু করে পানি খেতে পারবো। আমার অবস্থা এমন, যা যেকোনো অপারেশনের রোগীরই হয়, নড়াচড়া বা উঠাবসা নতুন করে শিখতে হয়। এটা না শেখা পর্যন্ত, মানুষ মূলত উল্টে থাকা তেলাপোকা। যেমন; ছয় মাস বয়সের আগের বাচ্চা। হালকা স্যুপও খেলাম বোধহয়। আস্তে আস্তে সবাই বিদায় নিলো। থাকলাম আমি আর বউ। আমার আরামের জন্য যতটা সম্ভব করলেন। ভাগনে নিশান এক বন্ধুর বাসায় চলে গেছে, যেকোনো প্রয়োজনে চলে আসবে। ওর রাত জাগার ভীষণ নেশা। রোগীর কাছে থাকতে হলে রাতের ডিউটিটা ওর কাঁধেই চাপে। এর আগে দুলাভাই ও বাবার অসুস্থতার সময় রাত জেগে পাহারার কাজটা ওই-ই করেছে।
অপারেশন থিয়েটারে রাশেদও ছিল। ডাক্তার আমাকে আগেই বলেছিলেন, ওকেও বললেন, ল্যাপারস্কির চেষ্টা করছেন, দুটো ফুটো করছেন বটে কিন্তু সম্ভব হয় নাই। ওনার ভাষ্য, আমার গলব্লান্ডার পচে-গলে গেছে। তাই ওপেন সার্জারিতে যেতে হলো। সে জিনিস আবার রাশেদকে দেখালেন। রাশেদ দুটো বিষয় বলছিল। অপারেশনের পর ঠিকঠাক পরিষ্কারের জন্য ঠান্ডা ও গরম পানির ব্যালেন্স করতে না পারায় নার্সকে বকা দিচ্ছিলেন ডা. আকবর। আর বারবার বলছিলেন আসরের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।
বাজে ঘটনা পরদিন ভোরে। ভোরে দিকে প্রশ্রাবের বেগ নিয়ে ঘুম ভাঙল। রাতে নিজের চেষ্টায় উঠতে পারলেও এখন পারছি না। বউও কোনোভাবে তুলতে পারছেন না। ওয়ার্ড বয় বা নার্স কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর আমাকে একটা বোতল দিলেন। কিন্তু টয়লেট ব্যবহার নিয়ে খুঁতখুঁতে হওয়ায় এটাও সম্ভব হচ্ছিল না। কাছাকাছি টয়লেট না থাকায় স্রেফ প্রশ্রাবের জন্য আমাকে যে কতভাবে নানা সময় ভুগতে হয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকে। এ জিনিস থেকে আমার ভ্রমণ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। যাই হোক, অনেকটা বাজে সময় কাটানোর পর এক ওয়ার্ড বয়কে পাওয়া গেল। উনি আমাকে ধরে বসালেন, এরপর বাথরুম গেলাম। শান্তি।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮-৯টার দিকে ডাক্তার আকবর আহমেদ আসলেন। বললেন, আপনার তো ভয়ংকর ধৈর্য্য। ধৈর্য্য ভালো, তবে এতটা নয়। পুরো গলব্লান্ডার পচিয়ে ফেলেছেন। ভাগ্য ভালো ইনফেকশন অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে নাই। উনার কাছে এরপর অনেকদিন যেতে হয়েছে। পুরোটা সময় ধৈর্য্য নিয়ে প্রশংসা বা কটাক্ষ— পরিস্থিতি বুঝে করে গেছেন। বললেন, চিন্তার কিছু নাই। দু-তিন দিনের মধ্যে ছুটি পাবো। সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে মানা করলেন। এক প্রকার ধমকই দিলেন। লম্বা নিঃশ্বাস ও হাঁটা-চলার উপদেশ দিলেন। এর পর থেকে উনার আসার সময় হলে হাঁটাহাটিঁ করতাম বা চেয়ারে বসে থাকতাম। পরদিন বসে থাকতে দেখে খুশি হলেন। বলছিলেন, ভালো খবর আছে। বললাম, কী? ‘সারাদেশের সব প্রতিষ্ঠানে মূর্তি বানানোর একটা পরিকল্পনা ছিল, সেটা বাতিল হয়েছে।’ ব্যাপারটা আমার জানা ছিল না। বললাম, কার? উনি বললেন, বুঝলেন না! ‘ওহ!’ এ আশঙ্কা আমি বুঝতে পারি। যেকোনো ধার্মিক মানুষও হয়তো ফিল করে, কিন্তু অবস্থা বুঝে মেনে নেই বেশিরভাগই। আমি কী ভাবি, সেটা ডাক্তারকে জানালাম না। পরের বছরে তো দেশে ভাস্কর্য বনাম মূর্তি ভীষণ শোরগোল তোলে। এ নিয়ে ধর্মের কত কত ব্যাখ্যা জেনেছি। সে সব ব্যাখ্যা শুনে মনে হয়েছে, ধর্ম করা ট্রাডিশনাল লোকেরা কিছুই জানে না। শেষ মুহূর্ত বিতর্কিত মূর্তিটি কোথাও বসেনি। তত দিনে মিটিং-মিছিল ও মামলা-কারাদণ্ড কত কিছু হয়েছে। কিন্তু, আলাদা মর্যাদা বা ভাবমূর্তি নিয়ে যতই বিতর্ক হোক বা আমাদেরকে মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্য বোঝানো হোক, মর্যাদা ব্যাপারটা কী ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি। সেটা শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার ছবি ছেঁড়া বা অনলাইনে বিদ্রূপ বা সমালোচনার প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝতে পারি। ডিজিটাল আইন দিয়ে বুঝতে পারি। সোসাইটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পবিত্রতার ধারণাটা আসলে কী সেটা দিয়ে বুঝতে পারে। কোনো কিছু মূর্তি আকারে হাজির থাকা, আর কথা-ভাবে ভাবমূর্তি আকারে হাজির থাকার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। সেই ভেদ তো এখানে গুছে গেছে। পরবর্তী ঘটনাগুলোতে ডাক্তার সাহেবের মনোভাব কী ছিল জানি না।
এ দুই-তিনদিন লম্বা জ্যাম ঠেলে প্রতিদিন হাজিরা দিতেন আপা-দুলাভাই, ভাগনি-তার জামাই। রাশেদও ছিল। একদিন খেয়া আসলেন। উনার মধ্যে ঝলমলে একটা ব্যাপার আছে। সেই ভাবটার সঙ্গে ফলও নিয়ে এলেন, বেশিরক্ষণ থাকলেন না। কোন এক আপু তাড়া দিচ্ছে। আগেও দেখেছি আপুরা ওকে খুব তাড়া দেয়! আর ছেলে দরদকে নিচে রেখে এসেছে, ডাক্তার দেখাবে। এক সন্ধ্যায় দারাশিকো ভাইও আসলেন। রাফসান গালিব আর আমার এক শ্যালক আসছিল। আসলে তো ভালোই লাগে।
আমার বউ অনেক কষ্টে দুদিনের ছুটি নিয়ে আসছিল। শনিবার তার ক্লাশে থাকার কথা। বলে-কয়ে সেদিন থাকলো। রবিবার মানে ২৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে আমার ছুটি হওয়ার কথা। উনি সেদিন ভোরে বাসে চলে গেলেন। ১২টা নাগাদ ক্লাশে ঢুকলেন। আমার জন্য কী যে হ্যাপা। যাওয়ায় সময় বালিশের নিচে ভালো অঙ্কের টাকাও রেখে গেছেন। সেদিন ১০টার দিকে সেলাই ড্রেসিং চেঞ্জ করার কথা। সঙ্গে থাকা ড্রেনেজ ব্যাগ। এই ব্যাগ একটা লম্বা নল দিয়ে পেট থেকে ঝুলছে। রক্ত-পানি জমা হচ্ছে। এটা নিয়ে ভয় লাগতেছিল। আমি বলতেছিলাম, ব্যথা লাগবে না তো! আকবর আহমেদ ব্যঙ্গ করে বললেন, ‘ব্যথা আর ব্যথা। সমস্যা যখন জটিল ছিল তখন ব্যথা কই ছিলো। অন্য দিকে তাকান।’ এরপরও আমি ব্যথা ব্যথা বলছিলাম আর ডা. আকবরের সঙ্গে থাকা সুন্দরী ডাক্তার বললেন, ব্যথা ব্যথা করছেন কেন? ড্রেনেজ ব্যাগ তো খোলা হয়ে গেছে! তাকিয়ে দেখি আসলেই তো। ডাক্তার এ কাজগুলো কী নিপুণভাবে করে। এরপর ড্রেসিং করে ডাক্তার জানালেন, এখন চাইলে বাড়ি যেতি পারি। এক সপ্তাহ পর এসে ড্রেসিং খুলতে হবে। উনি দুদিন পর ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। অন্য একজন ডাক্তারের নাম লিখে দিলেন, তার কাছে আসলেই চলবে। তবে আমি ওইদিন বাড়ি ফেরার মতো ভরসা পাচ্ছিলাম না। যদি কোনো ঝামেলা হয়, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম আরেকদিন হাসপাতালে থাকবো। ডাক্তার বললেন, তাও করতে পারেন।
হাসপাতালে যে বিষয়টা দেখবেন, আপনার বিল সহজে রেডি হবে না। অন্যদের ক্ষেত্রে এমনটা দেখছি। রোগীর বাড়ি যাওয়ার একটা তাগাদা থাকে, বারবার বলা সত্ত্বেও বলবে, এই তো হয়ে যাচ্ছে, হবে। এই সব। হয়ে গেল। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত উবার ডেকে দুইটা নাগাদ বাসায় ফিরলাম। খানিকক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিলাম, তারপর হাত-মুখ ধুলাম। পরের এক সপ্তাহ গোসল না করেই থাকলাম। জীবনে এত লম্বা সময় এ অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয় নাই।
ঘুমানো ও সোফায় বসার জন্য বিশেষ ভঙ্গি রপ্ত করে নিলাম। যদিও দুটো অপশন থাকলে আমার প্যাচ লেগে যায়। বামে বা ডানে কোন দিতে কাত হয়ে উঠবো। আবার দেখা গেল আপার রুমে নিয়ে শুয়ে আছি। উঠার সময় প্যাচ লেগে গেল। কারণ বালিশ আমার বিছানা থেকে উল্টো দিকে।
রাতের বেলা কেউ না কেউ মশারি লাগিয়ে দিত। মশারির ভেতর আপা পানির বোতল দিয়ে যেতেন। ঘুমের সময় ফোন দূরে বা বন্ধ রাখার অভ্যাস। সাইলেন্ট মুড তো আছেই। আপা বালিশের মাঝে ফোন রাখতেন। রাতে যেন সমস্যা হলেই জানাই। আহা, বাসায় ফিরে আসা কত আনন্দের।
তখন করোনার প্রকোপ বাড়া শুরু হয়েছে। আমার সার্জন ওমরাহ করতে চলে গেলেন। এর এক কি দুদিন পরই সৌদি আরব ওমরাহ’র ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। যেটা প্রায় দেড় বছরের মতো বহাল থাকে।
ফেব্রুয়ারির ২৯ বা মার্চের ১। রাত আটটার দিকে ডা. হাসান আল মান্নার কাছে গেলাম। অপেক্ষা করতে করতে শুনছিলাম, রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা বলছেন, মান্না স্যারের কখনো এত রোগী থাকেন না। আকবর স্যার নাই, সব উনার রোগী আসছেন। আমি ভাবছিলাম, সেলাই কাটার কথা। কতটা ব্যথা পাবো আল্লাহ জানেন।
কম বয়সী একজন ডাক্তার। বেডে শুয়ে পড়তে বললেন। টান দিয়ে টেপ তুলে ফেললেন। কাটা জায়গা তাকিয়ে আমি তো অবাক। কী ভয়ংকর! পুরোটা স্টাপলিং করা। এ জিনিসের কথা আমি কখনো শুনি নাই। ডা. মান্নাকে বললেন, ব্যথা পাবো? বললেন, টেরই পাবেন না। অন্যদিকে তাকান। অন্যদিকে তাকাতে হাতে থাকা কাচি মতো যন্ত্র নিয়ে মিনিট খানেকের মধ্যেই পিনগুলো কেটে ফেললেন। শুধু একটা তোলার জন্য সামান্য টান লাগে। উনি সরি বললেন।
ডা. মান্না প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে বলছিলেন, আপনার মতো সুন্দর একজন মানুষের এমন অবস্থা ভাবা যায় না। এ কথায় কী বলা যায়! বয়স শুনে বলছিলেন, ওহ! আমাকে দেখে তো এত বয়স মনে হয় না। কথাটা শুনে ভালো লাগলেও পরে যখন ডা. কাফীর মুখে এ কথা শুনতাম গা জ্বলতো। বললেন, সব ঠিকঠাক আছে। দু-তিনদিন পর থেকে অফিস করতে পারবো। গোসল করতে পারবো। একটা মলম দিলেন, দিনে দুবার করে এক সপ্তাহ লাগাতে হবে। ডা. আকবর একবার বলছিলেন, কিছু বেদনা-ব্যথা থাকতে পারে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ডা. মান্নাও বললেন, কয়েক মাস অস্বস্তি থাকতে পারে। তারপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ভালোই লাগছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে।
বাসায় ফিরে সেদিন আর গোসল করিনি বোধহয়। ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে। পরদিন জম্পেশ একটা গোসল দিলাম। কী আনন্দ! দু-তিনদিন পর থেকে অফিস শুরু করলাম। সিএনজি বা উবার ব্যবহার করছিলাম, কয়েকদিনের মধ্যে পকেট ফাঁকা।
স্বস্তি ফিরলেও খাবার-দাবার স্বাভাবিক হলো না। শরীরের নানান জায়গায় ব্যথা ঠিকই থাকলো। কখনো কখনো জ্বরের মতো অনুভূতি। বেশ কয়েকদিন অফিস পুরো না করে বাসায় ফিরে আসলাম। ততদিন কিন্তু আমরা মাস্ক পরা পুরোদস্তুর শিখে গেছি। বাসে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে অন্যরা কী যে আতঙ্ক নিয়ে তাকাতো। এতদিন তো এক লোক হাঁচি দিতে দিতে শেষ। লোকজন পারলে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।
চলবে …
ওয়াহিদ সুজন
Latest posts by ওয়াহিদ সুজন (see all)
- অসুখের দিন (শেষ কিস্তি) - জুলাই 22, 2023
- অসুখের দিন (কিস্তি ৭) - মে 22, 2023
- অসুখের দিন (কিস্তি ৬) - ফেব্রুয়ারি 2, 2023