Main menu

অসুখের দিন (কিস্তি ৫)

This entry is part [part not set] of 8 in the series অসুখের দিন

[ব্যর্থ এক সার্জারি নিয়ে ভোগান্তির কাহিনি এটা। যার মূল পর্ব শুরু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, এখনো চলমান। এখন একটা সিনেমাটিক ক্লাইমেক্সে দাঁড়ায়া আছে। তবে সেই গল্পে দুর্ধর্ষ কোনো অ্যাখ্যান নাই, বিরাট কোনো বাঁক-বদল নাই। অনেক বিরক্তিকর দীর্ঘশ্বাস আছে। কিন্তু এ গল্প আমার খুবই কাছের, আমার বর্তমান। আমার স্বজনদের জন্য পরীক্ষার, আমাকে ভালোবাসার। সেই গল্পটা আমার বন্ধুদের জানাতে চাই, অন্তত এক অধ্যায়ের সমাপ্তির আগে আগে। … অবশ্য পুরো গল্পটা এভাবে শেয়ার করা সম্ভব কিনা আমার জানা নাই। এখন পর্যন্ত সব হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নাম বদলে দেওয়া।]

কিস্তি ১ ।। কিস্তি ২ ।। কিস্তি ৩ ।। কিস্তি ৪ ।।

পর্ব ৯: হোমিওপ্যাথির ডাক্তার বললেন, আপনি কি ক্ষমা করতে পারেন?
ইআরসিপি রিমুভের পর দিন দু-এক বাসায় শুয়ে-বসে কাটলো। প্রথম দিকে পেটের মধ্যে অল্প অস্বস্তি ছাড়া কিছু অনুভূত হয় নাই। তবে মনে মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল এমআরসিপি রিপোর্ট। পিত্তনালী ও কিডনির পাথর উদ্বেগে রাখার জন্য যথেষ্ট। রিপোর্টগুলো ডা. ইমরান ও ডা. ফাহিম ভাইকে পাঠালাম। ফাহিম ভাই বলছিলেন, অনেক সময় এমআরসিপি করানোর সময় পিত্তনালীতে পাথর থাকলে বের করে ফেলা যায়। সম্ভবত অন্য কোথাও পাথর আছে, যেখান থেকে বের করে আনা অসম্ভব বা ক্ষতিকর। অন্য নালীতে থাকলেও সেটা আর বাড়ার আশঙ্কা নেই। পিত্তথলি যেহেতু নাই, সেখানে পাথর থাকবে কী করে। আর যদি থেকে যায় এবং সেখানে পাথর থাকে তবে, জন্ডিস হবে, বমি হবে, জ্বর হবে। তেমন কোনো লক্ষণ না থাকলে সমস্যা নাই। আর কিডনি পাথরের জন্য বেশি করে পানি খাইতে বললেন।

৪ অক্টোবর ডা.আকবর আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। উনি সব রিপোর্ট দেখলেন। তারপর পাথরের বিষয়টা ব্যাখ্যা করলেন। সেই আগের ব্যাখ্যাটাই। একই কথা প্রেসক্রিপশন বিস্তারিত লিখে দিলেন। বললেন, ভবিষ্যতে যদি এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠে তাই লিখে রাখছেন। কিডনি প্রসঙ্গে বললেন, যেহেতু অনেকটা সময় ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেছেন, আপাতত মাস খানেক বিশ্রাম নেন। এরপর ভালো একজন চিকিৎসকের রেফারেন্স দেবেন, আল হামরায় চিকিৎসা সম্ভব। সে দিন খালি পেটে গেছিলাম। উনি বললেন, একটা ইউএসজি করিয়ে নেন। কিডনির অবস্থা দেখে নিই। আমার ফোন নাম্বার রাখলেন। পরদিন ফোন করে জানাবেন রেজাল্ট কী এলো। উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম।

রিসেপশনিস্ট জিগাসা করলেন, এখন কী অবস্থা। বললাম, ভালো আছি। এর আগে একদিন ভদ্রমহিলা বলেছিলেন, তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। দিনের পর দিন কত কষ্ট সহ্য করে গেছি। কোনো অভিযোগ ছাড়াই অপেক্ষা করছিলাম। আমার সাহসের তারিফ করলেন। যদিও আমি কখনো নিজের সাহসের তারিফ করি না। আমি ভালো করেই জানি কতটা দুর্বল হৃদয়ের মানুষ আমি। দিনের পর দিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে গেছি শুধু। আর কী-ই বা করার আছে।

পরদিন ডা.আকবর আহমেদ ফোন করে বললেন, কিডনির পাথরটা খানিকটা বড়। তবে আপাতত ততটা টেনশন করার কিছু নাই। মাস খানেক পর যোগাযোগ করতে বললেন। কিন্তু যেহেতু দারাশিকো ভাইয়ের পাথর আটকে যাওয়া ও পরে অপসারণের বিষয়টি জানি; শারীরিক যন্ত্রণা ও খরচ সব মিলিয়ে সে দিকে যেতে চাইছিলাম না।

উনার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে হোমিওপ্যাথির বিষয়টা জেনেছিলাম। শাহাদাৎ তৈয়ব ভাই ও রাশেদ এ পদ্ধতির প্রশংসা করেছিল। এ ছাড়া আমার বাবাও হোমিওপ্যাথির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আঁচিল থেকে নানা সমস্যা— ওনার ঔষধ খেয়ে ভালো ফল পেয়েছিলাম। সে সময় একদিন ফোন করলো চট্টগ্রামের বন্ধু দাউদুল ইসলাম। পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বলল, ভাই কিডনি নিয়ে ঝামেলার মধ্যে যাইয়েন না। আপনি হোমিওপ্যাথি খান। আমাদের এক বন্ধু আছে যার হাত খুব ভালো। এক ধরনের নিমরাজির মতো করে হ্যাঁ বললাম। সেটা অক্টোবরের মাঝামাঝিই হবে। পরদিন দাউদ ফোন করে নিশো হাসানের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলো। আলাপ-পরিচয়ের দু-একদিন পর আমরা লম্বা সময় ধরে কথা বললাম। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, শুধু শরীরের বিষয়াদিই নয়, আমার ফুড হ্যাবিট, জীবনযাপন তো আছে, সঙ্গে মেজাজ, কী পছন্দ করি, কী করি না। এমন একটা প্রশ্ন ছিল— আমি মানুষকে ক্ষমা করতে পারি কিনা। সব মিলিয়ে এটা ইতিবাচক অনুভূতি হচ্ছিল। এটা ঠিক যে, যতবারই কোনো সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছি, হয়তো লম্বা সময় ধরে ভুগতেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে যতই অযৌক্তিক বলুক বা আমার ভাবনাকে ভুল হিসেবে প্রতিপন্ন করুন, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। যেকোনো ঘটনার একটা মানসিক প্রশান্তির দিক হয়তো এটা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কোনো সন্তুষ্ট আসে নাই।

ওই সময় রাশেদ চট্টগ্রামে ছিল। আমাদের আরেক বন্ধু শহরে গিয়ে নিশো ভাইয়ের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে আসলেন। বেশ কয়েকটা শিসি, সঙ্গে বিধিনিষেধের বিশাল ফর্দ, কী কী খাওয়া যাবে বা যাবে না এবং কী কী পথ্য যোগ করা যায় নিত্যদিনের অভ্যাসে। একটা পানীয় অনেকদিন ফলো করেছিলাম। কাঁচা হলুদ ও গোল মরিচ মিশ্রিত পানি। প্রতিদিন সকালে বটলে করে অফিসের ব্যাগে নিতাম, একটু একটু করে পান করতাম। অবশ্য যখন অপারেশনের ঘা খুলে যায় তারপর থেকে প্রতিদিন একটা লেবুর রস, সঙ্গে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খাচ্ছিলাম। এখন চকোলেট, চিনি, আলু, চা-কফি বন্ধ হয়ে গেল। করোনার লকডাউন ওঠার পর বাসা থেকে খাবার নেয়া শুরু করেছি। সঙ্গে প্রতিদিন তিনবেলা নানা ধরেন হোমিও বড়ি ও পানীয় খাওয়া শুরু করেছি। কয়েক দিনের মাঝেই চাঙ্গা অনুভব শুরু করি।

এর মাঝে হঠাৎ-ই মেঝো ফুপু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রচণ্ড পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি তিনি কানে কম শোনেন। যাই হোক, নোয়াখালীর ডাক্তাররা চিহ্নিত করলেন পিত্তথলিতে পাথর। ডাক্তারেরা ওপেন সার্জারি করতে চাইলে আমার ফুপুতো ভাইয়েরা আপত্তি করলেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন ঢাকায় নিয়ে আসার। মিরপুর ১১ এর একটা হাসপাতালে ভর্তি করান।

ওনার অপারেশনের তৃতীয়দিনে আমি দেখতে যাই। ফুপুকে সব সময় দেখেছি নিজের শ্রবণ সমস্যার কারণে নিজেকে নিভৃতে রাখতে। এর মাঝেই চার ছেলে দুই মেয়েকে বড় করেছেন। সহজ-সরল মানুষটা অন্যকে নিজের অবস্থা বোঝাতে বা অপরের কথা বুঝতে সব সময় হিমশিম খান। ফলে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আরও নীরব হয়ে গেলেন। আমি যেহেতু ওনার সঙ্গে অভ্যস্ত নয়, তাই চুপচাপ বসে থাকলাম। সেখানে ফুপাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে এই-সেই গল্প হলো। আমার অসুখ নিয়ে কথা উঠলো। যদিও ভালো লাগছিল না। কারণ, সেখানে এক ফুপাতো ভাই ছিলেন, যিনি প্রথমবার আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখেছিলেন কিন্তু কখনো একবারের জন্যও ফোন করে খবর নেন নাই। অথচ ওষুধের জন্য যখন এ দোকান ও দোকন ঘুরছিলাম ব্যথা নিয়ে, তখনও ওনার জন্য চিন্তায় ছিলাম এত রাতে বাসা চিনতে পারবেন কিনা!

ফুপুকে দেখতে আসার আগে এক কলিগকে ফোন করেছিলাম। ফেসবুকে দেখছিলাম তার সঙ্গে ডিভোর্স হতে যাওয়া স্বামীর অপারেশন হইছে। পিত্তথলির। কথা বলে দেখলাম, ডা. আকবর আহমেদের কাছেই অপারেশন করাইছেন ওই ভদ্রলোক। তার নাকি লিভারের অনেকটা পচে গেছে। শুনে খারাপ লাগা ছাড়া আর কী আছে!

হাসপাতাল থেকে নেমে দারাশিকো ভাইকে কল দিলাম, কাছেই তার বাসা। ভাবলাম দেখা করে যাই। সেই ফেব্রুয়ারিতে আমাকে হাসপাতালে দেখতে গেছিলেন। তিনিই এখন হাসপাতাল আর ডাক্তারের কাছে দৌড়ে উপর আছেন। সেদিন সকালে মেসেজ দিছিলেন, রাতে ওনার পিত্তথলির ব্যথা উঠছে। ওষুধ দিয়ে রিকভার করছেন। শিগগিরই ডাক্তারের কাছে যাবেন। তাই দেখতে যাওয়া তো উচিত। আর ওনার মেয়ে তুবা-রুবাকে অনেকদিন দেখি না। বড়টার সঙ্গে আমার বেশ খাতির। সে আমাকে ভুলে গেলে ভালো তো লাগবে না।

যাই হোক, দারাশিকো ভাইকে কল দিতে বললেন বাসায় নাই। দুপুরের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হইছেন। কী ব্যাপার? জানা গেল, একটু সুস্থবোধ করতে সকালে অফিসের দিকে রওনা দিছিলেন। কিন্তু অফিসের গাড়িতে ওঠার আগে একটা অস্বস্তি। বাসায় ফিরতে গিয়ে ব্যথা বাড়তে থাকে। মানে পিত্তথলির ব্যথা। তাই দুপুরের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হইছেন। ডাক্তার বলছেন, পরদিনই অপারেশন হবে।

আমি নিজের অবস্থা দিয়ে উনাকে অনেকটা বুঝতে পারছিলাম। আমি যেমন বন্ধু পরিবার আকড়ে ধরেছি বা অনেকের সঙ্গে নিজেকে শেয়ার করছি, সেখানে উনি পরিবারের গুটিকয়েক লোক আর দু-একজন বন্ধু ছাড়া একদম নিজের মধ্যে রয়েছেন। অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলে বেশিরভাগ সময় এড়িয়ে যান। আর আমি তার উল্টো। এই যে হড়বড় করে এখানে প্রায় সব বলছি, আর উনার পেটে বোমা মারলেও বের হবে না। একদিন বলছিলাম, আমাকে অনুসরণ করছেন দেখি! আমার যা যা হচ্ছে, আপনারও তা তা হচ্ছে। শুধু উল্টোভাবে। আপনার কিডনি থেকে পিত্তথলি, আর আমার পিত্তথলি থেকে কিডনি সমস্যা। উনি বললেন, অনুসরণ করছি না। আপনার সঙ্গে আমাকে বেঁধে দিয়েছে। কথাটা শুনে খুব মন খারাপ হয়েছিল।

পরদিন, সম্ভবত শুক্রবার ছিল। অফিস সেরে মোহাম্মদ শোয়াইব আর আমি দারাশিকোকে দেখতে গেলাম তাসমানিয়া ব্যাংক হাসপাতালে। দুপুরে উনি মেসেজ দিয়ে রাখছিলেন, হাসপাতালে দেখা নাও হতে পারে। বিকেল পাঁচটার দিকে ওটিতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বিকেলে জানালেন, আজ অপারেশন হচ্ছে না। হাসপাতালে উনি একাই ছিলেন। ডাক্তার বলেছেন, ইনফেকশনের কারণে পিত্তথলি ফুলে গেছে। তাই মাস দেড়েক অপেক্ষা করতে। এখন ল্যাকপরোস্কপি করলে পিত্তথলি ফেটে যেতে পারে। আপাতত ওষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। দেড় মাস পর যেন দেখা করেন। এর পরদিনই ডাক্তার তাকে রিলিজ করে দেন।

নভেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা সম্ভবত। কয়েকদিন ধরে প্রস্রাবের রাস্তায় একটু জ্বালাপোড়া হচ্ছিল। বিশেষ করে অল্প গরমেই খুব ঘামতে থাকি। প্রথম দিকে ভাবছিলাম, হয়তো এ কারণে হচ্ছে। কিন্তু বাসায় বা অফিসের এসির মধ্যে থাকলেও বা যখন পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছি, প্রস্রাব স্বাভাবিক তখনও দেখি এই অবস্থা। একদিন দাউদের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। তখন ও বলল, নিশো ভাইকে এখনই জানান। ফোন দিলাম, উনার মতে, একটু তাড়াতাড়িই জ্বালাপোড়া হচ্ছে। একটা ইউএসজি করাতে বললেন। সেই মতে, একদিন ভোরে ভোরে আল হামরার অন্য একটা শাখায় চলে গেলাম, এখানে স্টেইন রিমুভ হয়েছিল। আর যেখানে অপারেশন হয়েছিল, সেখানে ইউএসজির ডাক্তার আমাকে চেনেন আর আকবর আহমেদের চেম্বার লাগোয়া ইউএসজি ডিপার্টমেন্ট। হোমিওপ্যাথি খাওয়ার বিষয়টা উনাকে জানাতে চাইছিলাম না।

… ও আচ্ছা, অক্টোবরের শেষ দিকে ডা. আকবরের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সেদিন আপা আর দুলাভাই গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। আমি অফিস সেরে এক বন্ধুর সঙ্গে সীমান্ত সম্ভারে সাক্ষাৎ শেষে রাশেদের সঙ্গে খানিকটা কেনাকাটা করলাম, এরপর আল হামরায় আসি। আকবর আহমেদ বললেন, সময় করে একদিন চলে আসতে। এমআরসিপি করে কিডনিতে একটা অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেবেন। তো, উনাকে হোমিওপ্যাথির কথা বললাম না।

এবার আল হামরায় ইউএসজির ডাক্তার বললেন, আপনার কিডনিতে কোনো পাথর নাই। ভদ্রমহিলা অবাকই হলেন। বারবার চেক করলেন। কাগজপত্রগুলো ভালো করে দেখছেন। শেষে রায় দিলেন, সত্যি সত্যি পাথর নেই। এরপর তাকে হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হওয়ার কথা বললাম। বিষয়টায় পাত্তাই দিলেন না। বললেন, অনেক সময় বেশি বেশি পানি খেলে পাথর চলে যায়।

বেশ খুশি খুশি লাগছিল। বের হয়েই নিশো ভাইকে ফোন করলাম। উনি বললেন, এখনই একটা ডাব খেয়ে নিন। যেটা মাটির স্পর্শ পাই নাই। কী একটা জটিল ব্যাপার। এমন ডাব কোথায় পাবো। এ যেন বনি ইসরায়েলিদের দাগহীন গাভী খোঁজা। কলাবাগানে রিকশা থেকে নেমে একটা ডাব খেয়ে নিলাম। যা পাইলাম তা-ই আরকি। পরে নিশো ভাই বললেন, সে রকম ডাব না পেলে খাওয়ার স্যালাইন খেতে পারেন। এটাও করেছিলাম। খবরটা রাশেদকে জানালাম। পরে রিপোর্টটা ডা. ফাহিমকে জানালাম। উনি ‘উফ’ বলে মন্তব্য করলেন। কী ব্যাপার? একটা গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া নিয়ে টেনশন করলেন, যেটা মূলত বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে হয়। ধ্যাত, সমস্যা আমায় ছাড়লো না।

পুরো বিষয়টি নিয়ে নিশো ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হলো লম্বা সময় ধরে। কিডনির জন্য ইউএসজির সঙ্গে একটা থাইরয়েডের পরীক্ষাও করিয়েছিলাম। রিপোর্টে তেমন গড়বড় দেখলাম না, কিন্তু উনি বললেন, একটু বাড়তির দিকে। যেটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। এও বললেন, সমস্যা নাই। সব ঠিক হয়ে যাবে। উনি ওষুধ দেবেন।

এর মাঝে সবকিছু বিবেচনা করে ঠিক করলাম চট্টগ্রাম যাবো। কিডনির সমস্যার বিহিতের পাশাপাশি শরীর নিয়ে আগের চেয়ে আরামবোধ হচ্ছিল। শোয়েব করিমও বিয়ের দাওয়াত দিল। পাত্রী বীথিও ওর সূত্রে অনেক দিনের চেনাজানা। এ ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে খুবই ভালো লাগবে। সব মিলিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে এক শনিবার দুপুর দুইটার বাসে চেপে বসলাম। প্রায় দেড় বছর পর চট্টগ্রাম যাওয়া, মেঘলা একটা দিনে। বিশেষ করে গাড়ির জানালা থেকে শেষ বিকেলে বিস্তৃণ সবুজ ধান ক্ষেত দেখার দৃশ্যটা চোখে লেগে আছে। যাত্রাপথে মজার মজার কাণ্ড ছিল। যেমন; হোটেলের ওয়াশ রুমে যেতে গিয়ে থমকে গেলাম। দরোজায় বোরকা পরা এক নারী। পরে উপরের দিকে চোখ যেতে দেখলাম, ও না! আমার গাড়ির সেই বৌদ্ধ ভিক্ষু। বাসের টিভি স্ক্রিনে একের পর এক নাটক পাল্টানো হচ্ছিল। কিন্তু কারো মনে ধরছিল না। পরে মোশাররফ করিমের একটা নাটক অনেকের পছন্দ হলো। যেখানে করিম তার ছেলে আখম হাসানের কবিতা চুরি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, আর মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে। এরপর একটা আঞ্চলিক গান চালানো হলো, যাত্রীরা কী যে খুশি। অনুরোধে আবার চালানো হলো। মানে একটা জমজমাট সফর। আরে! সব ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে।

 

পর্ব ১০: সুন্দরবনে ব্যথার সঙ্গে যুগলবন্দি

অক্টোবরের শেষ দিকে একদিন ফোন করল মিশু। একটু রহস্য করে কথা-টথা বলল। পরে বিষয়টা জানা গেল, ঢাকায় বদলি হয়ে চলে এসেছে। আফসোস হইলো, আহা বগুড়া ট্যুর সমাপ্ত রয়ে গেল। এরপর ওর সঙ্গে দেখা হলো। আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য টিটি পাড়ায় গেছি। মিশু বাস কাউন্টারে হাজির হলো। ওকে দেখে জড়ায়া ধরলাম। বাস ছাড়ার বেশি সময় ছিল না। দ্রুত বিদায় নিতে হলো। তখনো তো জানার উপায় ছিল না, ওর ঢাকায় আসাটা ছিল আল্লাহর রহমত। এবার চট্টগ্রামে ফিরে আসি। ২০ নভেম্বরে।

বেশ আনন্দময় একটা সন্ধ্যা। আটটা নাগাদ দামপাড়া পৌঁছে গেলাম। সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক আবহাওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে জিসি মোড়ে গেলাম। ওখানেই একটা রেস্টুরেন্টে শোয়েব-বীথির রিসেপশন। নিচে দাউদ, মোনায়েম, স্বদেশসহ কয়েকজন অপেক্ষা করছিল। ওদের দেখে খুবই ভালো লাগছিল, অনেকদিন পর চট্টগ্রামে আসলাম। আসলে বাস থেকে নেমেই মুক্তির একটা অনুভূতি হলো। ‘মুক্তি’ নিয়ে যদি ভাবি, সেটা হয়তো এমন কিছু যেটা আসলে অনেক কিছু করার চেয়ে খানিকটা স্বস্তি; নিজেকে চাপমুক্ত বা হালকা মনে করতে পারা। ওদের সঙ্গে কিছুটা সময় গল্প করলাম। যার অনেকটাই ছিল অসুখ-বিসুখ নিয়ে। চিপস খেতে খেতে গল্প করছিলাম। কোক খাইছিলাম বোধহয়। এরপর বিয়েতে এটেনন্ড করলাম। সেখান মাসউদ, সাদিয়া, শাফাকের সঙ্গে দেখা। চট্টগ্রামের বিয়ে বলে কথা, আয়োজন তো একটু ভারি হবেই।

২০১২ সালে আমি আর দাউদ হালিশহরে চৌচালা সৈকতে ঘুরতে গেছিলাম। শহর থকে কাছেই। যেখান থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার যাই ২০১৭। ওই জায়গাকে আমরা দইজ্যার কূল বলি। এবারের ট্যুর একদিনের হলেও দইজ্যার কূল ছিল পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু হতাশ হবো, এমন কিছু মাথার মধ্যে আসে নাই। শেষবার যখন গেছিলাম তখন পোর্টমুখী মেরিন ড্রাইভ তৈরির বিরাট আয়োজন চলছিল। এবার গিয়ে দেখি সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত। আগের ছায়া মোড়ানো বাধের কোনো চিহ্নই নেই। সূর্য তাপ ও চাপ পুরোপুরি ঢেলে দিচ্ছে। কড়া গ্রীষ্মে এখানে কী অবস্থা হয় আল্লাহ জানেন।

এটা একটা বড়সড় ধাক্কা ছিল। নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাধানে এখানে কনটেইনার টার্মিনাল হচ্ছে। আগের রাস্তাগুলো বন্ধ বা হারিয়ে গেছে। তাই সমুদ্র পাড়ে যাওয়া হলো না। খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ফিরলাম দাউদের বাসায়, সঙ্গে ছিলেন হাসান ভাই। পথে মেরিনা তাবাসসুমের ডিজাইন করা একটা মসজিদ দেখে আসলাম। যেখানে রয়েছে ১৭৯৫ সালে স্থাপিত আসগর আলী চৌধুরী মসজিদ; পুরোনো মসজিদটা আগেও দেখেছিলাম। এখন নতুনটার কারণে ওইটা বন্ধ। নামাজ পড়লাম।

ঘোরাঘুরি শেষে দাউদের বাসায় ফিরে খাওয়া-দাওয়ার পর কেউ শুয়ে কেউ বসে গল্প করছিলাম। এর মাঝে টের পেলাম কিছু একটা ঘটতে শুরু করেছে। পেটে। নাভির আশপাশে ব্যথাটা শুরু হলো আস্তে আস্তে। এরপর ছড়াতে শুরু করলো। অস্বস্তিটা দাউদ আর হাসান ভাইকে জানালাম। দাউদ গরম পানি এনে দিলে আস্তে আস্তে পান করলাম। ওর পরামর্মে নামাজে বসার মতো ভঙ্গি বসে রইলাম। ব্যথা অনেকক্ষণ নাভির চারপাশে জমা থাকলো, এক সময় আস্তে আস্তে সরে গিয়ে ডান বুকের হাড়ের নিচে এলো। সেখানে স্থির হয়ে রইলো। নিশো ভাইকে বিষয়টা জানালাম।

সেদিন সন্ধ্যায় চকবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা কথা বললাম। ৩০-৪০ মিনিটের ভেতর তিনি আমার পুরো হিস্ট্রি জেনে নিলেন। নানান ধরনের উপদেশ দিলেন। ব্যাপারগুলো যেহেতু লাইফস্টাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং নিজের লাইফস্টাইল নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল, ফলত উনার কথাগুলো মানতে সমস্যা নাই। আর হোমিওপ্যাথিতে ভেতর থেকে কিউর করার একটা ব্যাপার আছে মনে হয়। নিশো ভাই সম্ভবত এর সঙ্গে উপমহাদেশীয় জীবনধারার একটা ব্লেন্ড করেছেন। সব মিলিয়ে একটা ইতিবাচক ভাইব পেলাম। আপারও কিছু ঝামেলা ছিল, ওনার সঙ্গে নিশো ভাইয়ের লম্বা সময় কথা হলো। পরের সপ্তাহে আমাদের জন্য ওষুধ পাঠানোর কথা।

এর মাঝে একদিন ঢাকার একটা নামি হাসপাতালে গেলাম। আমি অবশ্য ভেতরে গেলাম না। রাশেদ, মোস্তফা ভাই ও অন্যরা গেলেন। আমাদের বন্ধু মামুনের বাইপাস সার্জারি হয়েছে। এ নিয়ে ওর বন্ধুরা খুবই বকাবকি করছিল। ঘটনা একটু অদ্ভুতই। উনি ভর্তি হয়েছিলেন রিং পরানোর জন্য, কিন্তু সার্জারির সময় রিং নাকি আটকে গেছে তাই বাসপাস করাতে হলো। অথচ হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক রিং পরাতেই মানা করছিলেন না। নামি এই হাসপাতালে আসার পর রিং পরার পরামর্শ দেয়। পরে এ নামি হাসপাতাল তার এনজিওগ্রামের সিডি দিতে অস্বীকার করে। ফলে পুরো বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যায়। পরে আমিও এই হাসপাতালে ডাক্তার দেখাত এসেছিলাম। তবে এখানে সার্জারি করাতে রাজি নাই। সে কথা সামনে হবে।

ঢাকায় ফেরার কয়েক দিন পর নিশো ভাইয়ের ওষুধ এলো। নভেম্বরের শেষ দিক থেকে শরীরে নতুন এই অস্বস্তি শুরু। কোনো কোনো দিন পেটের নিচ দিকে হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হতো। তারপর নাভির চারপাশে গিয়ে স্থির হতো। শেষে ডান বুকের হাড়ের নিচে জেগে থাকতো। তবে খুব বেশি সমস্যা মনে হতো এমন না। কিন্তু কিছুদিন পরপর বিপাক প্রক্রিয়ায় ভীষণ সমস্যা হতো। যা চার-পাঁচদিন কষ্ট দিতো। এমন একটা পরিস্থিতিতে কোথাও যাওয়াটা আমার জন্য ভীষণ ঝামেলার হয়ে গেল।

আমি আর শাহনেওয়াজ খান দেশের মোটামুটি ত্রিশটা জেলা একসঙ্গে ঘুরেছি। অনেকদিন ধরে সুন্দরবন যাওয়ার কথা বলছিল ও। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে আরেক দফা সেই প্রস্তাব দিল। বলল, জানি এ মুহূর্তে আপনার কাছে টাকা থাকার কথা না। সব খরচ আমি দিচ্ছি। যদি অবস্থা ভালো হয়, তবে ফেরত দিয়েন।

আমারও সুন্দরবন ঘোরার ইচ্ছা অনেকদিন। সেই মাস্টার্স টুরে বন্ধু ও টিচারদের সঙ্গে গেছিলাম। তবে দীর্ঘ একটা সফরের ছোট্ট একটা অংশ ছিল এটা, একদিনের। তাই সুন্দরবনকে আরও গভীর থেকে দেখার ইচ্ছা ছিল। শাহনেওয়াজ সুন্দরবনের টুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব ফিক্সড করে ফেলল। ১৬ ডিসেম্বর থেকে পরের দুদিন। কিন্তু সময়টা একটু গোলমেলে হয়ে গেল। আমার নোয়াখালী যাওয়ার ডেটের সঙ্গে মেলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এর মাঝে ছোটবোন অসুস্থ হয়ে পড়ায় যাওয়াটা প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল। ঠিক আগের দিন ও ঢাকায় আসলো। অবস্থা খানিকটা ভালো মনে হওয়ায় ১৫ ডিসেম্বর রাতে বাসে উঠতে রওনা দিলাম উত্তরা থেকে।

সুন্দরবন ভ্রমণ আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কষ্টকর একটা লম্বা সময়ের পর প্রায় চারদিনের জন্য পরিচিত সবকিছু থেকে দূরে থাকা যাবে। সুন্দরবন এলাকায় নেটওয়ার্ক থাকে না প্রায়। ১৫ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে দেশ ট্রাভেলসের গাড়ি। যেহেতু ওই সময় নদীতে বেশ কুয়াশা পড়ে। তাই রাত ১২টার পর ফেরি বন্ধ হয়ে যায়, এ কারণে সরাসরি মংলার গাড়িতে যায় নাই। এসি গাড়িগুলো নাকি ভিআইপি ফেরি ধরে। আবার আমাদের সকাল সকাল মংলায় গিয়ে জাহাজ ধরতে হবে। আমরা মংলার গাড়ি না ধরে খুলনার গাড়ি ধরলাম। এটাই ছিল ভুল। ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ছিল। পরদিন বুধবার ছুটি। আর বৃহস্পতিবার ছুটি নিলেই টানা চারদিন ছুটি। সেটাই হলো। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম।

উত্তরা থেকে গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে রাত ১২টার মতো। আর কোথায় ভিআইপি ফেরি? সারারাত ঘাটে বসে থেকে যখন ফেরি উঠলাম তখন মোটামুটি আটটার বেশি বাজে। টুর অপারেটরের কর্তা ফোন দেওয়া শুরু করলেন। তার সঙ্গে শাহনেওয়াজের ভালো খাতির হয়ে গেছিলো। এছাড়া ওর একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড মংলায় আছে নেভিতে। তার সঙ্গে টুর অপারেটরের পরিচয়। যাই হোক, উনারা বললেন, যথাসাধ্য দেরিতে জাহাজ ছাড়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আমরা তো সরাসরি মংলা যাচ্ছি না, তাই বিষয়টা গোলমেলে হয়ে গেলো। বাসে উঠে দেখা গেলো, আরও কয়েকজন একই সমস্যায় পড়েছেন। তাদেরও জাহাজ ছেড়ে দিচ্ছে।

একটা অনিশ্চিত ব্যাপারের মধ্য দিয়ে চলছি। গাড়ি যেন চলেই না। উপভোগের মেজাজই নষ্ট হয়ে গেল। সারাক্ষণ বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়ছিল। একেকটা মিনিট অনেক লম্বা। এ দিকে ড্রাইভারও লোকজনের গালি শুনতেছিল। একেকজন পড়েছিল একেক সমস্যায়। দুপুর একটার কাছাকাছি সময়ে খুলনায় পৌঁছলাম। সকালে ছোট একটা ফেরিতে গাড়ি দাড়িয়েছিল, যেখানে খাবার কিছু ছিল না। খুলনা নেমেও দ্রুত খালিশপুরের বাস ধরার তাড়া। প্রথমে একটা বাসে সিট নিয়ে বসে পড়লেও পরে আরেকটা চলন্ত বাসে গিয়ে উঠলাম। এখান থেকে মিনিট ৩০-৪০ এর মতো দাঁড়িয়েই যেতে হলো, এটা ছিল বাগেরহাটের গাড়ি। খালিশপুর নেমে মোটরসাইকেল ভাড়া করে আবার দৌড়। এ করে মংলা পৌছলাম চারটার দিকে। পশুর নদীর পার হয়ে অন্যপাশে এলাম। টুর অপারেটর ও নৌবাহিনীর ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে মিনিট পাঁচেক কথা হলো। তারা একটা কাণ্ড করেছে। সারাদিন জাহাজ যতটা সম্ভব আস্তে আস্তে চলেছে। তারপরও আমরা পৌছতে পারি নাই। তাই শেষ স্থলপথের কাছাকাছি গিয়ে নোঙ্গর করা আছে। কী একটা অবস্থা! তারপর মটরসাইকেলে করে ৩০ মিনিট বা আরও বেশি সময়ের ভ্রমণ। রাস্তায় নতুন কংকর ফেলায় কিছু পথ হাঁটতে হলো। কী যে উত্তেজনাকর সময়। একসময় একটা খালের পাড়ে নামলাম। সেখানে একটা উচু জেটির নিচে নৌকা অপেক্ষা করছিল।

একদম সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময়ে খাল পেরিয়ে নদীতে পড়তেই দেখলাম অদূরে ভাসছে জাহাজটা। অদ্ভুত সুন্দর সেই দৃশ্য। নদীর ওপর কুয়াশার হালকা সর ভাসছে। গল্পের যেমন বলে আরকি রাজহংসের মতো জাহাজ ভাসছে। এটা ততটা বিলাসী বা বড় কিছু না। কিন্তু সারাদিনের উৎকণ্ঠার ভেতরে হাত ফসকে যাওয়া জিনিস মিলে যাওয়ার স্বাদ অন্যরকম। নৌকা জাহাজের সঙ্গে বাধতেই আমরা উঠে পড়লাম। একজন এসে দ্রুত খেয়ে নিতে বললেন। আমরা আগে গোসল করে নিলাম। এরপর সারাদিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো খেলাম। নদীর বড় মাছ, মুরগী, সবজি আরও কী যেন ছিল। ততক্ষণে জাহাজ চালু হয়ে গেছে। দ্রুত দৌড়াচ্ছে, সূর্য বেশ ওপর থেকে অস্ত গেল। বন আর শীতকাল দুটোরই যে মাখামাখি। আমাদের কারণে যে জাহাজ সারাদিন আস্তে এগিয়েছে এবং মাঝনদীতে ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়িয়েছিল এটা কেউ কেউ বুঝতে পেরেছিল। ব্যাপারটা সহজভাবেই নিল।

আমাদের কেবিনের সামনে খোলা ডেক। চেয়ার পাতা আছে। বসে সামনের দৃশ্য বেশ উপভোগ করা যায়। আমবস্যায় চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, এর ওপর তুমুল বাতাস। খোলা ডেকে বসে থাকা আসলেই কষ্টকর। সন্ধ্যার পরপরই কেবিনে ঢুকে লেপের নিচে চলে গেলাম। এমন আরামদায়ক পরিবেশে আমরা দুজন সারাদিনের ক্লান্তির পর গা ছেড়ে দিলাম। হালকা গল্পগুজব চলছিল। তখন টের পেলাম আস্তে আস্তে একটা ব্যথা জেগে উঠেছে। প্রথমে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল, সারাদিনের কথা ভেবে। কিন্তু খানিকটা পর অস্বাভাবিক হয়ে উঠল পরিস্থিতি। এপাশ-ওপাশ শুরু করলাম। শাহনেওয়াজ গিয়ে একটু গরম পানি নিয়ে এলো। খেলাম। সেদিন রাতে জাহাজের ওপর বারবিকিউ করা হয়েছিল। মাংস ও মাছ দুটোই ছিল। ডাইনিং থেকে খুব ডাকাডাকি করছিল। কোনোভাবে নান দিয়ে মাছটুকু খেয়ে নিলাম।

জাহাজে মোট ২১ জন পর্যটক। একটা গ্রুপে ছিল ১৪-১৫ জনের মতো। সে দলের নেতা গোছের একজন খুব ঠাট্টা-মশকরা করছিলেন। শুরু থেকেই দেখছিলাম। এমন ভাড়ামি ভালো লাগে না আমার। দেখলাম অসুস্থতার কথা শুনে এ লোকই আগে এগিয়ে এলেন। দুই দফা গরম পানিতে মধু খেয়ে ও লবঙ্গ চিবিয়ে অনেকটা সুস্থির হলাম। এরপর গল্প মোড় নিলেন দুনিয়ার সব অসুস্থতার কথাবার্তায়। একেক জন লোক মোটামুটি গল্পের ডিপো। কেউ বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করেন না। সত্যি বলতে কি আমার বন্ধুদের অনেকে শুরু থেকেই বলছিরেন, ইন্ডিয়ায় গিয়ে অপারেশন করে আসি। কিন্তু তখন শারীরিক অবস্থা ও পাসপোর্ট-ভিসা করার ঝামেলায় মন সায় দিচ্ছিলো না। টাকাও একটা ব্যাপার। এ ছাড়া আমার চিকিৎসক বন্ধুরা বলছিলেন, মামুলি অপারেশনের জন্য ভারতে যাওয়ার মানেই না।

যাই হোক, সেই রাতে অনেকটা সুস্থবোধ করা পর এগারোটার দিকে জাহাজের ডেকে গিয়ে বসলাম। চালকের ঘরের সামনে আরও কয়েকজন ছিল। তারাও একজন উঠে গেল। আমি আর শাহনেওয়াজ বসে থাকলাম। আকাশে চাঁদ নেই, তবে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে অজস্র তারা। এবং জীবনে প্রথমবারের মতো তারা খসে পড়তে দেখলাম। এত অপূর্ব একটা রাত আমার জন্য দরকার ছিল। অনেক কিছুই তো ভুলে গেছি সেই ভ্রমণের। শুধু মনে আছে ব্যথা আর রাতটির কথা। রাত প্রায় ১টা-২টা চলার পর একটা খালের ভেতর বিশ্রামের জন্য থামলো জাহাজ। যেখানে অন্য জাহাজগুলোও এক হয়েছে। দশটার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের সব আলো নিভে গিয়েছিল, মাঝে মাঝে সার্চ লাইট জ্বলে উঠছিল। তার আলোয় নিসঙ্গ নৌকা চোখে পড়ছিল। হয়তো একা একজন জেলে বসে আছে তাতে।

পরদিন সকাল সকাল একটা দ্বীপে নামলাম। সেখানে শুকরের পাল, হরিণ, বানর এসব দেখলাম। ম্যানগ্রোভের বনের মধ্যে হেঁটে কাদায় মাখামাখি অবস্থা। সূর্য অনেকটা মাথার ওপর উঠতে আমরা জাহাজে হাজির হলাম। নাশতা করে আবার বের হতে হবে। এবার মোটামুটি ১০ কিলোমিটারের হাইকিং। বনের মাঝ দিয়ে পুরো দল হেঁটে যাবে, কচিখালী রেঞ্জে অফিসে। মাঝে থেমে পড়া বা ফিরে আসার সুযোগ নাই। অভিযাত্রীরা হাঁটা শুরু করলে জাহাজও চলতে শুরু করবে। প্রায় তিন-চার ঘণ্টার যাত্রা। নাশতা করে সবাই দ্রুত রেডি হয়ে গেল। আমিও রেডি হয়ে বসে রইলাম বাকিদের অপেক্ষায়। তখনই পেটে ব্যথা জানান দিলো। ইচ্ছা হলো গলা ছেড়ে কাঁদি। আমার চোখের সামনে দিয়ে সবাই বের হয়ে নৌকায় উঠলো। ওয়াশ রুমে গিয়ে হালকা হয়ে গোসল করে ডেকে এসে বসলাম। সেখানে উপস্থিত হলো এক ‘সন্দেহজনক দম্পতি’। যাদের ব্য়সের পার্থক্য, সন্দেহজনক হাবভাব মিলিয়ে অনেকের ধারণা ‘পরকিয়া’। আমি তো মন খারাপ করে বসে আছি। তারা ও চালক বুঝাইতে লাগলেন, না গিয়ে ভালো করছি। এ রোদের ভেতর দশ কিলোমিটার হাঁটার মানে হয় না। এর চেয়ে আরাম করে দুইপাশের তীর দেখতে দেখতে যাওয়া অনেক আনন্দের। এটা আরামের বটে! কিন্তু হাঁটার নেশা তো আমি জানি। একবার উঠলে থামানো যায় না। আমার শঙ্কা হলো, এভাবে যদি হাঁটা-চলা বন্ধ হয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে আমার ঘোরাঘুরির কী হবে। জেমসের একটা গান আছে না, ‘পথের বাপই পথরে মনা, পথের মা-ই মা’। এটা ঠিক একদম নীরবতার মধ্যে সুন্দরবনের অন্যরকম রূপ দেখলাম। উজ্জ্বল ঝকঝকে একটা দিন। কুমির, বানর, হরিণ, নানান ধরনের পাখি। এত এত সবুজ মন খারাপ হয়ে যায় খুব। মাঝি-রাধুনিদের গল্প শুনলাম। সবাই দেখি ঘর পলাতক মানুষ। এক পর্যায়ে তাদের আশ্রয় হয়েছে এ জাহাজ। ঘণ্টা তিন-চারেক পর আমরা ডিমের চরের কাছাকাছি একটা জায়গায় নোঙর করলাম। সেখান থেকে নৌকায় বন অফিসের ঘাটে নামলাম। সুন্দর একটা জেটি। বেশ মিষ্টি রোদ। সেখানে দাঁড়িয়ে বউয়ের জন্য একটা ভিডিও বার্তা রেকর্ড করলাম।

হাঁটতে হাঁটতে চমকে উঠলাম। এঁটোর লোভে কর্মকর্তাদের বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করলে বিশাল বিশাল শুকর। ভেতরে মিঠা পানির পুকুর আছে। যেখানে কর্মচারীরা গোসল করছে। এক কিশোর ঘ্যানঘ্যান করছে। মাত্র কয়েকদিন হয় এখানে আসছে। কিন্তু মন টিকছে না। অন্যরা হাসতেছে। কারণ, তাদেরও মন কেমন করত, এখন ঠিক হয়ে গেছে। সম্ভবত এখানে বিরান জায়গায় টানা একমাস থাকার চাকরি। এরপর চেঞ্জ হয়। আমাদের দলটা আসতে অনেক দেরি করছিল। কাছাকাছি দুরত্বে আসলে ওয়ারলেসে সাড়া পাওয়ার কথা। এতক্ষণে রেঞ্জের মধ্যে চলেও আসার কথা। কিন্তু কোনো খবর নাই। আমি আর জাহাজের চালক তাদের জন্য পুকুর পাড়ে হাটতে হাটতে অপেক্ষা করছিলাম। আর নানা বিষয়ে আলাপ করছিলাম।

একসময় রেঞ্জের মধ্যে তারা আসলেন। খানিকক্ষণ পরই পুকুর পাড়ে পুরো দলটা। কেউ কেউ গোসল করতে নেমে গেল। আমার মন খারাপ হয়ে গেছ। তারা খুব মজা করেছে। সৈকতে মাছ ধরেছে, আরও কী কী যেন করেছে। দুপুরে দারুণ একটা লাঞ্চের পর বেলা গড়াতেই আমরা ডিমের চরে নামলাম। আমি ছাড়া বাকি ছেলেরা ফুটবল খেলল। আমি পুরোটা সময় শুধু হাঁটলাম। খুব মন খারাপ ছিল, কিন্তু এভাবেই ভালো লাগল। সূর্য অস্ত যেতে যেতে সবাই জাহাজে ফিরলাম। ঠাণ্ডা জাহাজের মধ্যে ডেকে চালকের ঘরে সামনে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। চারদিন তখন শুনশান। নদীর পানি একদম স্থির। কিছুদূরে একটা জাহাজ নোঙর করে আছে, আলোকিত। আর লাখ লাখ মাইল দূরে চাঁদ, ঠিক মাথার ওপর। স্থির-অপার্থিব এ মুহূর্ত আমি কখনো ভুলবো না। সেদিন রাতেও পেটে ব্যথায় ভুগলাম।

সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত জাহাজ চললো। সকালে নৌকায় করে খালে মাঝে ঘোরাঘুরি হলো। সম্ভবত এর আগের দিন হঠাৎ নেটওয়ার্ক পাওয়া গেল, নিশো ভাইকে ফোন করে ঘটনাটা জানালাম। কথায় কথায় বললাম, বাক্সশুদ্ধ নানা পদের ওষুধের শিশি আনতে গিয়ে অনেকগুলো কিছুটা করে পড়ে গেছে। তখন একটা ভুল বোঝাবুঝি হলো। কারণ, আগেরবার একই সময়ে চার-পাঁচটা ওষুধ খাইছিলাম। ফলে এবারও একটা শিশি শেষ হলে আরেকটা ধরার কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু উনি বারবার বলছেন, আমাকে বলে দিছেন একটা শিশি শেষ হওয়ার পর আরেকটা ধরতে। যদিও আমার এমন কোনো কথা মনে পড়ছিল না। আপাতত ওষুধ বন্ধ রাখতে বললেন। পরে এ সম্পর্কিত অভিযোগ আরেক বন্ধুর কাছে বলছেন শুনে মন খারাপ হইছিল।

তৃতীয়দিন বিকেলে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বাস কাউন্টারে আসলাম। সন্ধ্যার আগে কোনো টিকিট নাই। বাসায় রাতে ফিরতে পারবো কিনা ঠিক নাই। তাই ঠিক করলাম, বেশি রাত হলে গাবতলীতে কাউন্টারে বা বাসে রাত কাটাইয়া দিবো। বাসে পর থেকে অস্থির লাগতেছিল। কখন বাড়ি ফিরবো! কিন্তু ফেরি ঘাট তো সহজে আসে না। আমার ভয় সত্যি করে আটটার দিকে হালকা হালকা পেটে ব্যথা শুরু হলো। পেটে খিল দেওয়ার মতো অস্বস্তি নিয়ে বসে রইলাম। গাবতলী পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেড়টা কি দুইটার মতো। নেমে দেখি মোবাইলে চার্জ মাত্র ১৫ পারসেন্ট। কোনোভাবে একটা উবারের কারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চার্জ শেষ। বাসায় পৌঁছে শান্তি পেলাম। যদিও ব্যথার কারণে বাকিটা সময় এপাশ-ওপাশ করলাম। যদিও পরদিন সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার কথা। সেদিন পত্রিকার বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান। এক বছর আগেই একইদিন আলিশান আয়োজন থাকলেও কিছু থাকতে পারি না। অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে হাসপাতাল ছাড়ছিলাম। তখন আমার রোগ নির্ণয় হয় নাই। কিছু খেতেও পারতাম না।

সুন্দরবন থেকে ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিন্তু যথারীতি কয়েকদিন পর ব্যথা ফিরতো। সন্ধ্যার দিকে হয়তো শুরু হতো। তারপর সারারাত ছটফট করতাম। এভাবে তিন-চারদিন চলে সপ্তাহখানেক বিরতি। কিন্তু যখন ব্যথা উঠতো তখন সন্ধ্যার পর কিছুই খেতে পারতাম না। খেলেই বিপত্তি। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার পর পানি জাতীয় খাবারই বেশি খেতাম। হয়তো নয়টা-দশটার দিকে সামান্য ভাত খেতাম। ততদিন নিশো ভাইয়ের ওষুধগুলো আবার খাওয়া শুরু করলাম। প্রথম দিকে বলেছিলেন, সব ওষুধ একইসঙ্গে খাওয়া ঝামেলা কিনা। পরে জানালেন, ভালো করে চেক করেছেন, এর সঙ্গে এখানকার ঝামেলার সম্পর্ক নাই। কিন্তু ঝামেলা তো হচ্ছে, উনার কথার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারছিলাম না। নিজের ওপর চূড়ান্ত বিরক্ত অবস্থা।

চলবে…

Series Navigation
The following two tabs change content below.
Avatar photo

ওয়াহিদ সুজন

দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
Avatar photo

Latest posts by ওয়াহিদ সুজন (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →