Main menu

অসুখের দিন (কিস্তি ৩)

This entry is part [part not set] of 8 in the series অসুখের দিন

কিস্তি এক ।। কিস্তি দুই ।।

(ব্যর্থ এক সার্জারি নিয়ে ভোগান্তির কাহিনি এটা। যার মূল পর্ব শুরু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, এখনো চলমান। এখন একটা সিনেমাটিক ক্লাইমেক্সে দাঁড়ায়া আছে। তবে সেই গল্পে দুর্ধর্ষ কোনো অ্যাখ্যান নাই, বিরাট কোনো বাঁক-বদল নাই। অনেক বিরক্তিকর দীর্ঘশ্বাস আছে। কিন্তু এ গল্প আমার খুবই কাছের, আমার বর্তমান। আমার স্বজনদের জন্য পরীক্ষার, আমাকে ভালোবাসার। সেই গল্পটা আমার বন্ধুদের জানাতে চাই, অন্তত এক অধ্যায়ের সমাপ্তির আগে আগে। … অবশ্য পুরো গল্পটা এভাবে শেয়ার করা সম্ভব কিনা আমার জানা নাই।)

পর্ব ৫: ঘুম ভেঙে দেখি শরীরজুড়ে রক্ত

যখন এ অংশটা লেখা শুরু করলাম সে দিনের (১৭ মে ২০২১) আলোচিত ঘটনা হলো প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। পরে নথি চুরির অভিযোগ এনে শাহবাগ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রোজিনা কিছুদিন ধরে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে নড়েচড়ে বসার মতোই রিপোর্ট করেছিলেন। এর সঙ্গে বিষয়টিকে সম্পর্কিত করে দেখছেন সবাই।

২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি। সার্জারির যখন কোনো ধরনের ওষুধ নিতে হচ্ছে না আর। কিন্তু আমার খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক হয় নাই। বাসে করে আসা যাওয়া করছি অফিসে। তখন দিনে দেশে করোনা ধরা পড়ছে। এর মধ্যে বাস থেকে নামার জন্য দরজার কাছে দাঁড়িয়েছি। সামনে একটা গাড়ি স্লো করায় বা কোনো কারণে বাস হঠাৎ ব্রেক করায় হ্যান্ডেল ধরা হাতে ভীষণ টান লাগল। সেটা গিয়ে টান পারল বুকের কাছাকাছি কোথাও। ভয়ে পেয়ে গেলাম। হালকা একটা ব্যথা কয়েকদিন ছিল।

এর কদিনের মধ্যে করোনাভাইরাস একটা বিভীষিকা হয়ে হাজির। সব জায়গায় আতঙ্ক আর আতঙ্ক। মার্চের মাঝামাঝিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে গেল। দেশজুড়ে লকডাউনের কথা শোনা যাচ্ছে। লকডাউন শব্দটা তখন প্রথম শোনা আমাদের। যেহেতু আমরা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন, আমাদের অফিসে না এসেও কাজ করা যায়। তাই এ নিয়ে অল্প বিস্তর আলোচনা হচ্ছিল। একদিন আমাদের ডেপুটি এডিটর মাহবুব মোর্শেদ ভাই বললেন, যেহেতু আপনি অসুস্থ, আপনাকে দিয়েই হোম অফিস শুরু হোক। লকডাউন শুরু হলে ২৪ মার্চ থেকে আমি হোম অফিস শুরু করলাম। তখন নতুন উপদ্রুব শুরু হলো। সন্ধ্যার দিকে জ্বর আসতে থাকে। একদিন সেলাই মিলিয়ে যাওয়া জায়গাটা কেমন যেন ফোলা ফোলা ও ভেতরটা স্বচ্ছ মনে হচ্ছিল। বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠলাম।

২৭ মার্চ শুক্রবার। সকাল ৬টার দিকে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে চমকে গেলাম। চারদিকে রক্ত। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মনে হচ্ছিল, ভুল দেখেছি। এমন কিছু তো হওয়ার কথা না। কোথাও ব্যথা নাই, কিচ্ছু নাই। চোখ খুলে দেখবো এমন কিচ্ছু ঘটে নাই। আসলেই, চোখ খুলতে প্রথমে কিছু চোখে পড়ল না। তারপর ভয়ে ভয়ে গেঞ্জির বুকের কাছ থেকে নিচের দিকে চোখ নামালাম। পুরো গেঞ্জি রক্তে ভরা। তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। গেঞ্জি খুলে দেখি সেলাইয়ের এক পাশে খুলে গেছে। বসার কারণে চাপ লাগতেই গলগল করে রক্ত আর পুজ বেরোতে শুরু করলো। গেঞ্জি চেপে আপার রুমের দিকে গেলাম। দেখি দুলাভাই নাই, মনিং ওয়াকে গেছেন। এ দিকে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছেও রক্ত-পুজ শেষ হচ্ছে না। এমন আতঙ্কিত অবস্থায় একবার সোফায় বসি, একবার হাঁটতে থাকি। কখনো মনে হয় এ বুঝি রক্ত পড়া বন্ধ হলো, এরপর দেখি আরেক দিক থেকে গলগল করে পড়ছে।

সাতটার দিকে দুলাভাই আসলেন। ওনাকে জানাতে বললেন, হাসপাতালে ফোন দিতে। আরও কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে ফোন দিলাম। তারা বলল, ডা. আকবর আহমেদ শুক্রবার রোগী দেখেন না। বললাম, খুব জরুরি। আমার সেলাইয়ের মুখ খুলে গিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে। তারা কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার দিল। ওই নাম্বারে ফোন করার পর ডাক্তারের নাম্বার দিল। ফোন দিতেই আকবর আহমেদ ধরলেন। বললেন, দশটার দিকে হাসপাতালে আসবেন। এক ঘণ্টা থাকবেন। এর মধ্যে যেন আসি।

এখন সমস্যা হলো গাড়ি। কড়াকাড়ি লকডাউন চলছে। আমার বাসা থেকে মেইন রোড গিয়ে বাস, সিএনজি বা উবার এসেও উঠতে হয়। কিন্তু ওখানে গিয়েও লাভ হবে না যতটুকু জানি, সড়কে কোনো গাড়ি চলছে না। দুলাভাই এদিক-ওদিক ফোন দিয়ে একটা লক্কর-ঝক্কর মার্কা কার জোগাড় করলেন। রংচটা, ভেতরে মশার আস্তানা। আসা-যাওয়া মিলিয়ে তিন হাজার টাকা দিতে হবে, ফেরার পর বকশিস দিতে হলো দুইশ টাকা! উবারে আসা-যাওয়া করলে অর্ধেক খরচ। বাংলাদেশে যা হয় আরকি! আপনার বিপদে সুযোগ নিতে চায় সবাই। এমনকি অনেক কাছের মানুষও। আপনাকে আরও রক্তাক্ত করবে, এটা হয়তো সব দেশেই হয়!

বাসায় তুলা শেষ হয়ে গেছে, দরকারের সময় যেমন জিনিসপত্র আপনি পাবেন না, অন্য সময় হুদায় গড়াগড়ি খাবে। তাই টিস্যু ভাঁজ করে ক্ষতের ওপর ধরে আছি। ওই জায়গাটার কথা ভাবলেই গা শিরশির করে উঠছিল। মনে হচ্ছিল, একটু পর দেখতে পাবো এটা সত্যি নয়।

এমন ঢাকা শহর আগে দেখি নাই। প্রতি বছর কমপক্ষে একটা ঈদে ঢাকায় থাকি, অফিস করি। কিন্তু কখনো ঢাকা শহরকে এতটা ভুতুড়ে মনে হয় নাই। একে তো শুক্রবার, তার ওপর লকডাউন। সব মিলিয়ে এক নিস্তব্ধ দুনিয়া। আমরা যখন কালশির দিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানে অসমাপ্ত ফ্লাইওভার, পরে মেট্রোরেল মিলিয়ে হলিউড সিনেমার মতো মনে হচ্ছিল। ড্রাইভার তো পথ হারিয়ে ফেলল। মনে হচ্ছিল, বিশাল কর্মযজ্ঞের মাঝ থেকে হুট করে সব মানুষ উধাও হয়ে গেছে। কালসী কবরস্থান দেখে বুঝতে পারলাম আমরা ঠিক পথে আছি। অন্য সময় এ পথ যেতে দেড় ঘণ্টা তো কমপক্ষে লাগে। আজ আমরা ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম।

বিশাল আল হামরা হাসপাতাল জুড়ে শুনশান নিরবতা। এমনিতে শুক্রবার চিকিৎসকেরা রোগী দেখেন না। তবে করোনার কারণে আগে থেকেই রোগী রেস্ট্রিকট্রেড। ডাক্তারের রুমের সামনে বসে আছি। আধাঘণ্টা পর উনি আসলেন। উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, এতক্ষণ অপেক্ষা না করে উনাকে ফোন করতে পারতাম। বেডে শোয়ার পর ক্ষতটা পরীক্ষা করে বললেন, এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক সময় টিস্যুর সঙ্গে সেলাইয়ের সুতো ম্যাচ না করলে এমনটা হয়। দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। যেহেতু ডায়বেটিস বা স্টেয়রেড নেওয়ার কোনো ব্যাপার নাই ক্ষত ভালো হতে বেশিদিন লাগবে না। হায়, এটা যদি সত্য হতো!

ড্রেসিং করে দিয়ে বললেন, সামনের দুই সপ্তাহ প্রতিদিন ড্রেসিং করতে হবে। আল হামরায় আসা অনেক খরচ ও সময় সাপেক্ষ, কাছাকাছি কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে বদলে নিতে পারি। এরপর কিছু ওষুধ দিলেন, রক্তের টেস্টও। এক সপ্তাহ পর দেখা করতে বললেন।

জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিলাম সেই এফএফসি হাসপাতালে গেলাম পরদিন সকালে। ঢোকার মুখে সাবান দিয় হাত ধুতে হলো। এ অভিজ্ঞতা সম্ভবত কভিড পিরিয়ডে প্রথমবার হলো। জরুরি বিভাগে যাওয়ার পর বলল, অন্য হাসপাতালের রোগীর ড্রেসিং তারা করায় না। বললাম, আমি তো এখানেই ভর্তি ছিলাম। গলব্লাডারের অপারেশন তারা করান না দেখে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তারা বলল, যেটাই হোক কোনোভাবে সম্ভব না, ওপর থেকে মানা আছে।

খুবই খারাপ লাগলো। কারণ উত্তরা ছাড়া কিছুই মাথায় আসছে না। সেখানে আধুনিক হাসপাতালে আমার আত্মীয় আছে, কিন্তু তাদের এড়াতে চাই। আর ওই হাসপাতালে যেতে হলে তিনবার রিকশা পাল্টাতে হবে। এর মধ্যে একবার রাস্তা পার হতে হবে হেঁটে। দুলাভাই বললেন, কী আর করা। কোনো উপায় নাই। রিকশাওলাকে বললেন উত্তরার দিকে যেতে। কিছুদিন যেতে যেতে চালক বললেন, কাছাকাছি একটা হাসপাতাল আছে। ট্রাই করবো কিনা। আর্ক হাসপাতাল। বললেন, সেখানে না হলে আরেকটা হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

যাই হোক, আর্ক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতেই তারা রাজি হয়ে গেলেন। ড্রেসিং চার্জ ৫০০ টাকা। প্রতিদিন ৫০০ টাকা ভেবে দমে গেলাম। তারা বলল, আস্তে আস্তে কমিয়ে রাখবে। আসলেই তা-ই, শেষদিকে ২০০ টাকা দিতাম। চিকিৎসকেরা হেল্পফুল ছিলেন। তাদের একজনই কয়েকদিন পর চার্জ কমাতে বললেন। নার্সরাও বেশ ভালো। আল হামরার নার্সদের কথাও মনে পড়ে। সত্যি বলতে কী সরকারি হাসপাতাল নিয়ে আমার তেমন অভিজ্ঞতা নাই, সেখানকার অনেককিছু শুনি বা পড়ি। তবে আল হামরা বা আর্কের মতো বেসরকারি হাসপাতালে এরা বেশ স্নেহশীলভাবে কাজ করেন। অনেকক্ষেত্রে কর্মদক্ষতাকে শিল্প মনে হয়েছে। একটা সুই ফোটানো নিয়ে একেকজনের একের টেকনিক। কেউ কেউ এত যত্ন নিয়ে করেন বা রোগীর কষ্টের দিকে মনোযোগ দেন- তাদের কথা বলার ধরন, ভাবলেই ভালো লাগে। যাই হোক, দুই সপ্তাহের জন্য আর্ক হাসপাতালে আসা-যাওয়ায় এসে আটকে গেলাম প্রায় তিন মাস।

এক সপ্তাহ পর আবার আল হামরায় ডা. আকবর আহমেদের কাছে গেলাম। উনি বললেন ইমপ্রুভ হচ্ছে। টানা কয়েকদিন প্রতিদিন যেন ড্রেসিং অব্যাহত রাখি সেই কথা বললেন। এরপর যেন একদিন পরপর যাই। ওই দিন হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাজে ঘটনা ঘটলো। ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় অনেক দেখা যাচ্ছে। আমাদের এক জায়গায় পুলিশ থামালো। কোথায় যাচ্ছি বলার আগেই ঝাড়ি। কারণ দুলাভাই আর আমি কাছাকাছি বসেছি। পুলিশ বলল, একজন নেমে ড্রাইভারের পাশে সিটে বসেন। আমি সরে আসলাম, নামলাম না। লাঠি উঁচিয়ে বলল, ঠিকমতো বাড়ি পড়লে সব ঠিক হয়ে যাবে। একজন বললেন, লকডাউনে বাসায় বাইরে বেরোনো নিষেধ, আপনারা বাড়ি ফিরে যান। দুলাভাই বললেন, আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি। উনি বললেন, কোনো হাসপাতাল খোলা নাই। বাড়ি ফিরে যান। মরিয়া হয়ে বললাম, ডাক্তারের অ্যাপয়মেন্ট নেওয়া আছে। ফাইল দেখালাম। অফিসার গোছের একজন ফাইল দেখে সাবধান করে ছেড়ে দিল। সেদিন এ দেশের উপর এত রাগ হলো! মার দিতে চাওয়ায় এত অপমান লাগলো। এরা তো আমাদের মানুষ মনে করে না। আবার এক দলকে দেখলে প্রভুভক্তি দেখায়।

সেদিন ডা. আকবর আহমেদকে একজন একটা কাগজ দিয়ে গেল। যেখানে বড় করে লেখো ‘ডাক্তার’। আমাদের দিকে ফিরে বললেন, রাস্তায় অনেক ঝামেলা হয়। গাড়িতে এটা লাগানো থাকলে আর ঝামেলা হবে না বলে আশা করি। পরে আরেকদিন বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন এই জন্য যে, করোনার কারণে রোগীরা আসতে পারছে না!

আর্ক হাসপাতালে আমার আসা-যাওয়া বিলম্বিত হয়ে গেল। হাসপাতালে লোকজন আমাকে দ্রুতই চিনে গেল, করোনার সময় তেমন রোগী তো নাই। বেশির ভাগ সময় দুজন ডাক্তারের যেকোনো একজনকে দিয়ে ড্রেসিং করাতে চাইতাম। অন্য সময় নার্সরা করে দিতো। তারাও পরিচিত হয়ে গেছে। দুই ডাক্তারের একজন খুব দ্রুত ক্ষত সারার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন, তিনি বললেন, জায়গায় যাতে দ্রুত মাংস এসে ভরাট হয়, তেমন ওধুধ দেবেন। আমি মানা করলাম। বললাম, দ্রুত শুকানো দরকার আপাতত। কিন্তু অন্য ডাক্তার দ্রুত ক্ষত শুকানো নিয়ে সন্দেহ করলেন। তার মতে, ভেতরে কোনো একটা লিকেজ আছে। ক্ষত শুকালেও ভেতরে পুজ থেকে যাচ্ছে। কথাটা সত্য। ঘা অনেকটা শুকিয়ে আসার পর একদিন বিকেলের দিকে কম্পিউটারের অফিসের কাজ করছি— খেয়াল করলাম গেঞ্জি অনেকটা ভেজা। কিন্তু ড্রেসিংয়ে কোনো লিক নাই। এরপর ছাদে হাঁটতে যাওয়ার পর দেখলাম ভেজা অংশ বেড়ে গেছে। হাত দিয়ে ছুলে আটালো কিছু লেগে থাকে। হালকা হলুদ বা কাছাকাছি শেডের একটা রং। এমনও হলো দুদিন পর যাওয়ার কথা থাকলেও পরদিন আর্ক হাসপাতালে চলে গেলাম।

একদিন নার্স ড্রেসিং করতে করতে বলছিলেন ক্ষতের মুখ ছোট হয়ে আসলেও ভেতরে অনেক পুজ রয়ে গেছে। বের করতে বেশ সময় লাগছে। এমন সময় সিনিয়র একজন ডাক্তার আসলেন। অবস্থা দেখে বললেন, লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে ক্ষত বড় করতে হবে। নইলে দুদিনেই মুখ বুজে যাবে। তখন আবার জায়গাটা তাজা হয়ে যাবে। এনেস্থেসিয়ার কথা শুনে ভয় পেলাম। বললাম, ব্যথা পাবো। নার্স বললেন, না। হালকা সুইয়ের ব্যথা পেলাম। এরপর ব্লেড দিয়ে ক্ষতের মুখ বড় করা হলো।

এই সময় অলি-গলিতেও কড়া লকডাউন শুরু হয়ে গেছে। দুপুরের পর মনে হয় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় আর্মি নেমেছে। আমার বাসা থেকে হাসপাতালে যাওয়ার ভাড়া ১২০ থেকে কমতে কমতে স্বাভাবিকের ৫০ টাকায় এসে ঠেকেছে। এখন নতুন ঝামেলা হলো রিকশা দেখলেই পুলিশ বা আর্মি থামায়। তাদের চ্যালা হিসেবে যোগ হইছে পিচ্চি পোলাপান। এরা তো সূর্যের চেয়ে বালি গরম টাইপ নতুন প্রজন্মের ‘লীগ’। একদিন মনে আছে, তাদের তাড়া খেয়ে রিকশা বিপজ্জনকভাবে উল্টো দিকে ঘুরে গেল। চালককে আশ্বস্ত করতে পারছিলাম না। এক ছেলে এসে অটোর চাবি নিয়ে নিল। পরে আর্মিকে বলতে ফেরত দিল। এ অত্যাচার নিত্যই চলতে লাগলো। হাসপাতালের কোনা জবাবদিহি করতে হয়। অলিগলি দিয়ে গিয়েও শান্তি নাই। কোথাও কোথাও করোনা রোগী আসে, তাই অবরুদ্ধ। আর কোথায় ছোট ছোট ছেলেরা অলির প্রবেশ মুখে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে।

এর মধ্যে যা হলো— একদম প্রধান সড়কে বাঁশ! এ কারণে দুবার রিকশা নিতে হবো। আর ঠা ঠা গরমের মাঝে এক-দেড় কিলোমিটার হাঁটতে হতো। যেখানে কোথাও কোথাও কাদা বা পানি জমে থাকতো। গরমে ঘামতে ঘামতে হাঁটছি, আর ক্ষতের জায়গায় শক্ত করে ধরে আছি। এখন ভাবলে অবাস্তব মনে হয়।

ওই সময়টা ভ্যাপসা গরম ও কখনো কখনো ভীষণ হাওয়ার। এপ্রিলের শুরুতে সবাই বাসায় ঢুকে যায়। আমি শুধু হাসপাতালে যাওয়া ও কম্পিউটারে বসে অফিস কাজ। বাকি সবার ছুটি। আর দুলাভাই দুই-তিনদিন পর বাজারে যান। কাজের লোককে বলে দেওয়া হয়েছে আপাতত না আসতে। বাইরে কেউ আসা নিষেধ। সকালে উঠে কাজে বসে পড়তাম। মাঝে দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে আর্ক হাসপাতালে যেতাম, এক-দেড় সপ্তাহ পর ডা. আকবর আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া। বিকেলে সবাই মিলে ছাদে গিয়ে চা খাওয়া। এভাবেই চলছিল।

আমার ঘুম আসতো না। এর মাঝে ফ্যান স্লো হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ভীষণ হাওয়ার রাত। তখনও বেশির ভাগ দিনই আমার ঘুম আসতো না। অনেক রাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে থাকতাম। নিচের কচুবনে ভীষণ হাওয়া খেলত। বাসার সামনে অনেকদূর পর্যন্ত খোলা হওয়ায় বাতাস সরাসরি ধাক্কা দিত। শুধু গায়ে না, মনেও! ড্রেসিংয়ের যে টেপ ইউজ করা হতো, তার চারপাশে চুলকাতো। গায়ে ঘাম হলে আর রাত যত বাড়ত চুলকানি বাড়ত। চুলকাতে চুলকাতে এক ধরনের আটা আটা রস বের হয়ে পড়তো! অচিরেই পেটে খোলা অংশগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে।

এর মাঝে একদিন ডা. ইমরানকে ফোন করলাম। ভাবলাম, সবসময় শুধু অসুখ-বিসুখের গল্প বলি, আজ নাহয় উনার খবরাখবর নিই। কিন্তু যাই হওয়ার তা হলো, ঢুকে পড়লাম ক্ষত ভালো না হওয়ার সমস্যা নিয়ে। উনি বললেন, ক্ষত থেকে যে পুঁজ বের হচ্ছে, তার একটা টেস্ট করান। তা থেকে বোঝা যাবে কী ধরনে এন্টিবায়োপিক ব্যবহার করা উচিত। তবে এ কথা ডা. আকবরকে বলা হয় নাই। পরেরবারও উনি আশ্বস্ত করলেন। প্রথম থেকে বলছিলেন এভাবে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি না করে নিজেই পারি ড্রেসিং করতে।

তখন রোজার মাস। এত দৌড়াদৌড়ির ভেতরও রোজা রেখে চলছিলাম। যদিও আর্ক হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা মান করছিলেন না। কিন্তু আমার সমস্যা হচ্ছিল না, পরের দুই বছর রোজা রাখতে পারি নাই। সাহস করে রোজার শেষ দিকে একদিন আল হামরা থেকে ফেরার পথে গজ, টেপ ও জীবাণুনাশক নিয়ে আসি। প্রথম দিকে নিপুণ করে দিতো, পরে আমি নিজেই করতাম। সপ্তাহ দেড়েক মাথায় দেখি মোটামুটি শুকিয়ে আসছে, ঈদুল ফিতরের দিনও ড্রেসিং করতে হলো। এর তিন কী চার দিন দেখি পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। তারপর ডা. আকবরের কাছে গেলাম। দেখে খুশি হলেন। বললাম, ক্ষত শুকিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো ঠিকঠাক খেতে পারছি না, নানান জায়গায় ব্যথা করছে। উনি বললেন, একটা ক্ষত ত্বকের ওপরে বলেও সহজে মেলায় না। এটা তো ভেতরের ব্যাপার। আরও কিছু দিন ব্যথা-বেদনা সহ্য করতে হবে। তবে আর কোনো সমস্যা হবে।

এরপর বললেন, ঠিক আছে টেনশনমুক্ত হওয়ার জন্য একটা ইউএসজি করেন। তখন বাসার সবাই শাওয়ালের ছয় রোজা রাখছিলাম, ফলে ইউএসজির জন্য উপযুক্তই ছিলাম, পেট খালি ছিল। প্রস্রাবের বেগ দরকার ছিল, তাও ছিল!

টেনশনমুক্ত হবো কী নতুন টেনশনের দিন সেটা! ইউএসজির জন্য সিরিয়াল আসতে রুমে প্রবেশ করলাম। কম বয়সী কয়েক জন নারী কাজ করছিলেন। একজন আমার ওপর মেশিন দিকে কাজ করতে গিয়ে অবাক। বললেন, আপনার তি অপারেশন হয়েছে (পেটে লম্বালম্বি দাগ দেখা সত্ত্বেও বলছেন)? হ্যাঁ, কেন? উনি বললেন, আপনার পিত্তথলি ও পাথর তো রয়ে গেছে। আমি পুরোপুরি থ, কী বলেন? তারা বললেন, আপনি অপেক্ষা করুন। আপনার প্রথম ইউএসজিটা আমাদের হেড ম্যাডাম করেছেন। তিনি ঘণ্টাখানেক পর আসবেন। তার কাছেই ইউএসজি করার। আমি ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলাম। তাহলে কি আমাকে আবার অপারেশন করাতে হবে? খুবই দুর্বল, রিক্ত ও অসহায় হয়ে চেয়ার বসলাম। তারপর? এ বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল নিপুণ। ও পরে বলেছিল, এমন ভয়ংকর কথা শোনার পর তোমার কেমন লেগেছিল মামা। বললাম, প্রথমে প্রচণ্ড অসহায়তা ঘিরে ধরলেও পরে তেমন কিছুই লাগছিল না। শুধু বলছিলাম, যা হওয়ার তা-ই হবে। যা-ই হোক পরোয়া করি না।

মোটামুটি ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর ম্যাডাম এলেন। রিসেপশনের তরুণী আমাকে ডাকলেন। ইউএসজি রুমে ঢুকতে ঢুকতে শুনছি নারী চিকিৎসক বলছেন, ‘এত কম বয়সে এ সমস্যা? খুবই খারাপ লাগছে।’ ঢুকতেই দেখতে পেলাম উনার হাতে আমার ফাইল খোলা। চেক করতে করতে সহকর্মীদের মতো একই কথা বললেন, ‘আপনার তো অপারেশন হয়েছে মনে হচ্ছে না। সব তো রয়ে গেছে ভেতরে।’ ডা. আকবর আহমেদকে ফোন করলেন তিনি। একটু পর তিনি হাজির হলেন ইউএসজি রুমে।

পর্ব ৬: লজ্জা ভুলে কেঁদে উঠলাম হাসপাতালে

সম্প্রতি মানে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি, একই হাসপাতালে আমার ছোট ভাইয়ের হাত থেকে একটা টিউমার অপসারণ করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে ছোটখাট শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে। বিষয়টা যন্ত্রণার বটে। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, চিৎকার করছ নাই। ও একদম বাচ্চাদের মতো করে বলল, চিৎকার কেন কেন করবো, শরম না! এই শিরোনামটা তার কথা থেকেও নেওয়া।

এ পর্যায়ে আমার গল্প থেকে সামান্য বিরতি নেবো। ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলের দিকে একটা বড়সড় বিড়ম্বনার দিকে যাচ্ছিলেন দারাশিকো ভাই। আমার পরিচিতজনদের মধ্যে অফিসের একজন ছাড়া সম্ভবত প্রথম শুনেছিলাম, কোনো একটা পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত, সেটা হলো দারাশিকো ভাইয়ের শ্বশুর ফ্যামিলি। স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়ে তুবা ও রুবাকে নিয়ে দারাশিকোর সংসার। করোনার প্রাথমিক ধাক্কায় এর ভয়াবহতা মানসিকভাবে কতটা অশান্তির ছিল পরবর্তী বছরে উপলব্ধি করা কষ্টকরই বটে। সম্ভবত ঈদের পরপরই দারাশিকোর শ্বশুর মারা যান, দিনে দিনে গ্রামের বাড়ি নিয়ে গিয়ে কবর দেওয়া হয়। কিন্তু ভাবি বাচ্চাদের কথা ভেবে যান নাই বাবাকে দেখতে।

এমন খারাপ ঘটনার ভেতর দিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। একদিন উনার একটা মেসেজ পাইলাম হোয়াটস অ্যাপে। উনার প্রশ্রাবের রাস্তায় কিডনি থেকে নেমে আসা পাথর আটকে গেছে, সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, রাতের মাঝে সার্জারি। কী ভয়ানক ব্যাপার! এ ধরনের ঘটনায় যখন কাউকে হেল্প করার কোনো উপায় নাই, অহেতুক ফোন করে বিরক্ত করতেও চাই না। তারপরও থাকতে না পেরে সন্ধ্যার দিকে কল দিলাম। উনি ধরলেন না। পরে টেক্সট করে জানালেন, রাতে অপারেশন হইছে। সকালে বাসায় ফিরছেন।

পুরো ঘটনা এমন যে, কাটা-ছেড়া ছাড়াই ব্যাপারটা ঘটছে। উনার প্রশ্রাবের নালি দিয়ে একটা চিকন নল ঢোকানো হইছে, সেখানে ক্যামেরাও ছিল, ওই নালি দিয়ে পাথরটা বের করে আনা হইছে। ভেতরে নালির মতো একটা জিনিস রয়ে গেছে। যা একমাস পর বের করে আনা হবে। উনি যখন পরবর্তী ফোন ধরলেন তখন অনেক পানি খেয়ে প্রশ্রাব করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিপদ এখানে শেষ না!

কিডনির ইউএসজি করতে গিয়ে উনার পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ছে। এখনো ইনফেকশনটাইপ কিছু ঘটে নাই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ, মাস দুয়েক অপেক্ষা করতে। এ সময়ের মধ্যে করোনায় তিনি অপারেশনে না যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। তবে ভাবি আর ডা. ইমরান চাইছিলেন এ মুসিবত যাতে শরীরে না থাকে। দারাশিকো ভাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিলেন, তার দেয়া ঔষধ খেতে থাকেন। এত এত বিপদে উনার পাশে আমি একদমই নাই। একে তো নিজের বাজে অবস্থা, তার ওপর করোনা।

এর মধ্যে পেলাম আরেকটা পিত্ত পাথরের কাহিনী। আমার একমাত্র মামার অবস্থা খুবই খারাপ। পিত্তথলির সঙ্গে সঙ্গে লিভারও নাকি আক্রান্ত। উনার অপারেশন হয় উত্তরার খুবই পরিচিত হাসপাতালে। এর পরের দুই বছরেও উনি স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেন নাই।

যাই হোক, আমার নিজের গল্পও খানিকটা ফেলি এসেছি। একদিন খবর পেলাম, আম্মা দেখতে পেলেন বারান্দায় কিছু মুরগির বাচ্চা হাঁটছে। উনি প্রায় সারাটা সময় শুয়ে খাটান। বিছানা থেকে উঠে মুরগির বাচ্চাকে খাবার দিতে গেলেন। আর উল্টে পড়ে গেলাম। বেশ ব্যথাও পেলেন। এক জায়গায় ছড়ে গেছিলো। সেই ক্ষত মেলাতে বেশ সময় লেগেছে। এটা রোজার মধ্যকার কথা। আমার পিত্তথলিতে আবার পাথর আবিষ্কারের ঘটনা ঈদের পরে। সেই পুরোনো গল্পে ফিরে আসি। ডা. আকবর আহমেদ ‘ফেটে যাওয়া পিত্তথলি’র গল্প পুনরাবৃত্তি করে জানালেন, পিত্তরস জমে কিছু ফাঁপা তৈরি হওয়ার কথা বললেন, যা দেখতে পাথরের মতো দেখাচ্ছে। ইউএসজির ডাক্তার বললেন, তাহলে আমরা এখন কী করবে? ডা. আকবর বললেন, আপনার ফাইন্ডিংস যা বলছে লিখে দেন। বাকিটা আমি দেখছি।

সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থা। এর মাঝে একটা প্রশ্ন মাথায় জাগলো। ডা. আকবরের চেম্বারে যেতেই পুরোনো কাসুন্দি টানলেন। যেটা এতদিন বলে আসছিলেন, পিত্তথলি পচিয়ে ফেলেছিলাম। এমনিতেই এর আগে ও পরে দেখা হলেই অন্য কারো সামনে আমার ধৈর্য্যের কথা বলতেন। আমি প্রশ্ন ছাড়াই উনি বললেন, যেহেতু ওপেন সার্জারির মাধ্যমে পেট খুলে দেখা হয়েছে সেক্ষেত্রে পাথর থাকার প্রশ্নই ওঠে না (যদিও এ প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে)। আর যদি থাকে, জ্বর-জন্ডিস-বমি এ সব লক্ষণ দেখা যাবে। আমি আসলে আশ্বস্ত হতে পারছিলাম না। এ অস্বস্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। শারীরিক যন্ত্রণাও কাটেনি। আরও বিষয় হলো, সত্যি সত্যি পিত্তথলির অংশ রয়ে গেছিলো, কিন্তু আমার আর কখনো জন্ডিস বা বমি হয় নাই।

এরপরে ঘটনা দু-তিনদিন পরের। তাও সকালে ঘুম থেকে উঠে। দেখি পুরো গেঞ্জি হলদেটে-সবুজ এক ধরনের রসে ভেসে গেছে। মানে ক্ষতের মুখ আবারও খুলে গেছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। দ্রুত সিএনজি ডেকে দুলাভাইয়ের সঙ্গে আল হামরায় গেলাম। ডা. আকবর ক্ষত পরিষ্কার করে ড্রেসিং করে দিলেন। বললেন, ভেতরে কোনো একটা ঝামেলা আছে। ক্ষত কতদূর গভীরে তা জানার জন্য সাইনোগ্রাম করার কথা বললেন। এটা এক ধরনের এক্সরে। উনার ধারণা, সাতদিন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করলে ক্ষত সেরে যাবে। এ জন্য প্রতিদিন আসা-যাওয়া না করে সাতদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দিলেন। তবে তার আগে সাইনোগ্রামের রেজাল্ট হাতে পেতে হবে।

ডা. আকবর বললেন, সাইনোগ্রামের একটু প্রস্তুতি আছে। পরে বললেন, দেখেন আজ করা যায় কিনা। একটু ব্যথা করবে, ক্ষতও তাজা। আচ্ছা ওষুধ দিয়ে দেবো। ‘ব্যথা’র কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। এক্সরে বিভাগে গিয়ে জানলাম, সে দিন সম্ভব না। পরদিন টেকনিশিয়ান থাকবেন না। পরশু যেন সকাল সকাল আসি, একটু বেশি সময় থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। কয়েক হাজার টাকার ব্যাপার বলে জানালেন।

দুইদিন পর সকাল সাতটা বা আটটার দিকে গেলাম। পুরো ব্যাপারটা এমন স্যালাইনের নল দিয়ে একটা ইনজেকশনের অ্যাম্পুল থেকে একটা তরল ক্ষতের ভেতরে নেওয়া হবে। সেখানে পারদ থাকে। সম্ভবত এ কারণেই ভেতরে কতটুকু পর্যন্ত খোলা আছে তা এক্সরেরে দেখা যায়। এক্সরে টেবিলে শোয়ার পর একজন টেকনিশিয়ান নানাভাবে দেখলেন কোন পজিশনে থাকলে ঠিকঠাক ফল পাওয়া যাবে। উনি আমার সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন। জানলাম, এক্সরের জন্য অন্য হাসপাতালে রেডিয়েশনজনিত বিশেষ ঝুঁকি ভাতা থাকলেও ওনাদের দেওয়া হয় নাই। অথচ কত বড় হাসপাতাল, কত নামডাক!

একটু পরপরই আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম, কতটা ব্যথা পাওয়া যাবে। উনি আশ্বস্ত করছিলেন। কিছুক্ষণ চলার পর বললেন এবার বাইরে যান। আমি বললাম, শেষ। খুশি হয়েই। কিন্তু উনি খুশির বাত্তি নিভিয়ে দিলেন। বললেন, আসলে কাজ তো শুরুই হয়নি! একজন নারী প্রেশেন্ট আছেন, তার টেস্টটা করাবেন এ সময়ে।

এতদিনের যত ব্যথা-বেদনা তার মধ্যে ভয়ংকর ছিল ওইদিনটা। ঠিকঠাক বর্ণনা করে বলা কঠিন। এর পর এক্সরে টেবিলে শুয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে তরলটা পুশ করা হচ্ছিল। আসলেই তো তত ব্যথা নাই। যাক, বেঁচে গেলাম। এ ধরনের ভাবতে ভাবতে একটা অস্বস্তি জেগে উঠল। বললাম, ব্যথা শুরু হয়েছে। টেকনিশিয়ান বললেন, আরেকটু। বেশিক্ষণ লাগবে না। কতটা সময় মনে নেই। ব্যথা বাড়তেই থাকলো। আমি চিৎকার করছি। একসময় এক্সরে শেষ হলো। বললাম, দ্রুত জিনিসগুলো বের করেন। আশ্চর্য! তাদের কাছে গজ জীবাণুনাশক কিছুই নাই। একজনকে গজের জন্য পাঠানো হলো আর উনি দুইপাশ থেকে টিপে টিপে ওই তরলটা বের করছেন। এরপর একসারি টিস্যু দিয়ে চেপে থেকে ডা. আকবরের চেম্বারের সামনে গেলাম। ভেতরে রোগী আর বাইরে আমি কাতরাচ্ছি। রিসেপশনিস্ট বললেন, ওখানে শুইয়ে দিন। দুলাভাইয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে কাঁদতে থাকলাম। সম্ভবত স্মরণকালের ভেতর, প্রকাশ্যে এভাবে প্রথমবার কাঁদলাম। রোগী বের হলে ডা. আকবরের কাছে গেলাম।

সেদিনই প্রথম প্রকাশ্যে কেঁদেছিলাম। ভাবলে এখনো শিউরে উঠি। ডা. আকবর অনেকটা সময় নিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করলেন, খালি সিরিঞ্জ দিয়ে অনেকটা তরল বের করে আনলেন। ড্রেসিং করে দিয়ে কিছু ওষুধ দিলেন, রিপোর্টের খোঁজ নিতে বললেন। এক্সরে বিভাগ থেকে আমার বাকি কাগজপত্র নেওয়া হলো।

পরদিন এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে আমি আর দুলাভাই গেলাম ডা. আকবরের চেম্বারে। তিনি রিপোর্ট দেখে বললেন, যা ভাবছিলেন তার চেয়ে খারাপ অবস্থা। অপারেশনের জায়গায় একটা লিকেজ আছে। মানে পিত্তরস সরাসরি লিকেজ দিয়ে শরীরের বাইরে বের হয়ে আসছে। কী ভয়ংকর ব্যাপার! তখন ‘ভয়ংকর’ হিসেবে মাথায় আসে নাই। কিন্তু অনেকদিন পর শরীরের ভেতর আর বাইরে এই বেসামাল বিষয়টা কল্পনা করতে গিয়ে গা হিম হয়ে আসছিল আমার।

লিকেজ বন্ধ করতে ইআরসিপি নামের একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এটার উনার বিভাগের কাজ না, গ্যাস্টোলিভারের কাজ। চিন্তা করতে মানা করলেন। বললেন, এমন ঘটনা খুব একটা ঘটে না। কিন্তু কিউর সম্ভব। ডা. আবদুল্লাহ রাফিকে ফোন দিলেন। কিন্তু তিনি হাসপাতালে নাই, আমাদের গ্রিন রোড যেতে হবে। আমরা বাইরে বসে থাকলাম। রিসেপশন থেকে দুলাভাইকে ডাকা হলো একটু পর। তিনি একটা স্লিপ নিয়ে আসলেন, যেখানে ডা. রাফীর ঠিকানা লেখা। গ্রিনরোডের মুনলাইট গ্যাস্টোলিভার হাসপাতাল। খুবই বিরক্ত লাগছিল। এই হাসপাতালের ডাক্তার, অথচ আমাদের যেতে হচ্ছে অন্য এক হাসপাতালে।

আধাঘণ্টার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম। ছোটখাট একটা হাসপাতাল, আল হামরার মতো প্রশস্ত না। খানিকটা নোংরাও। ডা. রাফী রোগী দেখতে গেছেন। আমার অপেক্ষা করতে হবে। দশ-বিশ মিনিট বসতে হলো। এসে নাম বয়স, জিজ্ঞাসা করলেন। লিখতে লিখতে বললেন, ও! আমি ভাবছিলাম আপনার বয়স আরও কম।

তার কথার সারমর্ম হলো, ইআরপিসি হলো মুখ দিয়ে একটা নল প্রবেশ করানো হয়। ঘণ্টা দুয়েকের ব্যাপার। দিনে দিনে করে হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়া যায়। তবে আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে হাসপাতালে একদিন ভর্তি থাকতে হয়। মুখ দিয়ে নল… বললাম, এন্ডোস্কপির মতো কিছু নাকি! সম্ভবত বুঝিয়ে বলার পরিশ্রম কম হলো দেখে খুশি হলেন। বললেন, হ্যাঁ, এমনই! আপনি শিক্ষিত মানুষ, নেট ঘাটলে সহজে বুঝতে পারবেন। পরে বুঝেছি, আসলে রোগীকে দেওয়ার মতো উনার সময় নাই। বোঝাবেন কখন। বললাম, তাইলে তো ব্যথা করবে। উনি আশ্বস্ত করলেন অজ্ঞান করা হবে। পুরো বিষয়টি নিরাপদ। তবে সতর্কতা হিসেবে বললেন, অনেকেরই ইআরসিপির পর যক্ষা হয় বুকে, তবে চিন্তার কিছু নাই, ছয় মাস ওষুধ খেলেই চলবে।

আরও জানালেন, করোনার কারণে একটা দিন হাসপাতালে বাড়তি থাকতে হবে। করোনা টেস্ট করাতে হবে। একদিন স্যাম্পল নিয়ে যেতে পরদিন রেজাল্ট চলে আসবে, তাই একটা দিন বাড়তি থাকা লাগবে। একটা প্যাডে লিখে দিলেন ইআরসিপি, পরদিন ভর্তি হতে বলে ৫০০ টাকা চাইলেন।

বাসায় ফেরার পর পুরো বিষয়টা কেমন যেন লাগছিল। এক হাসপাতালের ডাক্তার অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে। হঠাৎ, পুরো বিষয়টা ভাবতে ভাবতে ইউনিভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়লো, অনেক বছর যোগাযোগ ছিল না, কিছুদিন আগে একবার কথা হইছিল ফেসবুকে। উনি এক সময় ছাত্র শিবিরের বড় নেতা ছিলেন, মুনলাইটের আবহাওয়া দেখে তাই মনে হলো। যাই হোক, উনাকে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মুনলাইট গ্যাস্টোলিভার চেনেন কিনা। উনি জানালেন, চেনেন। মূলত আল হামরার কিছু ডাক্তার সাইড বিজনেস হিসেবে এটা দাঁড় করিয়েছে। আমার সমস্যার কথা বলতে মুনলাইটের ম্যানেজারের নাম্বার পাঠালেন, উনার পরিচিত লোক। ডাক্তার নাম বলতেও চিনলেন। উনার একই সময়ে চট্টগ্রামে রাজনীতি করেছেন, ভালো পরিচিত। বললাম, ডা. রাফীকে যেন আমার কথা বলে। উনি বললেন, জানাবেন। পরে জিজ্ঞাসা করে নিলেন, টাকা-পয়সা কমাতে বলবেন কিনা। বললাম, দরকার নাই। হয়তো পাঁচ হাজার কমাবে বড় জোর। এখন টাকার চেয়ে সঠিক চিকিৎসা দরকার বেশি। উনিও বলে দিলেন, আমার ছোটভাই, একটু কেয়ার কইরেন। যাই হোক, সেই কেয়ারের চাপ দেখি নাই ডাক্তারের কাজকর্মে।

দুলাভাইয়ের অফিসে কাজের খুব চাপ, আর ভাগনে চাইছিল না করোনার ভয়ংকর সময়ে তিনি হাসপাতালে যান। নিশান করোনার ভয়ে একদম দিশেহারা। বাসায় থাকলে একদম রুম থেকে বের হয় না। যদি বের হতেই হয়, তবে ফিরে এসে ছাদের কমপক্ষে আধাঘণ্টা হাত-মুখ-পা ধোয়, তারপর গোসলখানায় এক ঘণ্টা। এ কদিনে তার মুখ শিরিষে ঘষা হয়ে গেছে। ভাগনি নিপুণের ধারণা, নিশান প্রতিদিন ব্লিচিং পাউডার দিয়ে গোসল করে। যদিও ব্লিচিং পাউডার শব্দটা ওর মুখ দিয়ে আসছিল না, বলছিল, কোরবানের ঈদে গরুর রক্ত পরিষ্কারের পাউডার দিয়ে গোসল করে ভাইয়া।

সেদিন ছিল ২০২০ সালের ২৪ জুন। বিশেষ করে দুলাভাই যাবে না শুনে কান্না জুড়ে দিলাম। সাধারণত নিজের বিড়ম্বনার জন্য অন্যের দোষ দিই না, সব নিজের ওপর চাপিয়ে দিই। কাঁদতে কাঁদতে সে সবই বলছিলাম। পরে দুলাভাই বললেন, আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেই তবে অফিসে যাবেন। এবার শান্ত হলাম।

আমাদের বাসা থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা বা অটোয় করে মেইন রোড ১৫-২০ মিনিটের রাস্তা। এরপর বাস, সিএনজি যা ইচ্ছা নেওয়া যায়। বাসা থেকে বের হয়ে আবিষ্কার করা গেল রিকশা-অটো সব বন্ধ! করোনার কারণে হুটহাট বন্ধ হতে আগেও দেখেছি। কিন্তু এমন দিনে? অটো স্ট্যান্ডে অদূরে কয়েকটা মটরসাইকেল দেখা গেল। তারা যাত্রী নিচ্ছে। এবার অটোর ড্রাইভাররা তেড়ে এলো, তারা যাত্রী নিতে দেবে না। অসুস্থ, অপারেশনের রোগী বলেও পার পাওয়া গেল না। একটু হেঁটে সামনে গেলাম, সুযোগ বুঝে এক মটরসাইকেল আমি ও দুলাভাই উঠে পড়লাম। ক্ষেপে গিয়ে তেড়ে আসলো ড্রাইভারেরা। অন্যদিকে পেছনে রয়ে গেলেন ভাগনি জামাই মিনহাজ। উনি পরে প্যাডেলের রিকশায় করে এলেন। এরপর একটা প্রাইভেট কারে হাসপাতালের দিকে যাত্রা। একে তো রোদের ভেতর দিয়ে হেঁটে এসেছি, তার ওপর মোটরসাইকেল চড়া— এ নিয়ে খানিকটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। দেখলাম পেটের ব্যান্ডেজে কিছু ঘটে নাই। মোটামুটি ভালোভাবে মুনলাইট গ্যাস্টোলিভার হাসপাতালে পৌঁছলাম।

ভর্তি হতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। রিসেপশন থেকে বলা হলো, করোনার টেস্ট রিপোর্ট কতদিনে আসে ঠিক নাই। তিন-চারদিনও লাগতে পারে, এ কটা দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। বললাম, ডা. রাফি বলেছিলেন একদিনে রেজাল্ট পাওয়া যায়, আর এখন তিন-চারদিন! উনি বললেন, আমাদের করার কিছু নাই। রেজাল্ট পাওয়া না যাওয়া পর্যন্ত আপনাকে ভর্তি থাকতে হবে। আমার মেজাজ চড়ে গেল। দুলাভাই ধমক দিয়ে বললেন, চুপ করো। যতদিন থাকা লাগবে থাকো, তোমার ভালো হওয়া নিয়ে কথা। আমি বলছিলাম, উনারা ধাপ্পা দিচ্ছেন। প্রতিদিন কতগুলো বিল দিতে হবে জানেন? দুলাভাই বললেন, টাকা নিয়ে তোমার ভাবার দরকার নাই। ডা. আকবর আহমেদকে ফোন দিলাম। পুরো ঘটনা বললাম। উনি বললেন, তাহলে তো ঝামেলা। আমাকে বললে তো আল হামরায় সকালে নমুনা নিয়ে বিকেলে রেজাল্ট দিতে পারতাম। বললাম, তাহলে কি কাল সকালে আল হামরায় চলে আসবো। উনি বললেন, আপনার এ অবস্থায় দৌড়াদৌড়ি ঠিক হবে না। ভর্তি হয়ে যান। আমি দেখছি। এরপর ফোন করে জানালেন, ডা. রাফির সঙ্গে কথা হয়েছে। একদিনে রেজাল্ট দেওয়ার সবোর্চ্চ চেষ্টা করবেন। আমি ভর্তি হয়ে গেলাম।

কেবিনে ওঠার পর দুলাভাই অফিসে চলে গেলেন। আমার সঙ্গে থাকলেন ভাগনি জামাই মিনহাজ। বিকেলের দিকে তিনিও চলে গেলেন। এ হাসপাতালটা পছন্দ হওয়ার কোনো কারণ নাই। আল হামরার ডাক্তার হয়েও ডা. রাফি এখানে ভর্তি করালেন, ব্যাপারটা পছন্দ হলো না। কেবিন বেশ জরাজীর্ণ ও সংকীর্ণ। পায়ের দিকে এক জানালা আছে। মশা তাড়ানোর জন্য জালি দেওয়া। একটু দূরে আরেকটা বিল্ডিং। একদম একা, টিভিও নেই যে দেখে সময় কাটাবো। আর করোনার এ সময়ে কাউকে আসতে বলতে ইচ্ছাও করছে না।

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি এটা রাশেদ জানে, সম্ভবত করোনার কারণে তার আগ্রহ জাগে নাই আসতে। দীর্ঘ একটা দিন ও রাত গেল। এখানে যে কেউ একটু ফাই ফরমায়েশ কেটে কিছু এনে দিবে তারও উপায় নেই। এর মধ্যে রাতের খাবার নিয়ে ঝামেলা। ফোন করলাম অফিসের কলিগ রাফসান গালিবকে। তার বাসা কাছাকাছি কোথাও। সে প্রায় রান্না-বান্নার পোস্ট দেয় ফেসবুকে। তাকে বললাম, রাতের খাবারটা দিয়ে যেতে। প্রথমে ব্যস্ততার কথা বলল, পরে খাবার দিতে রাজি হলো। বললাম, হাসপাতালে উঠার দরকার নেই। মিনহাজ নিচ থেকে নিয়ে আসবে। মিনহাজ খাবার দিয়ে বাসায় চলে গেলো।

এ দিকে হাসপাতালে যেহেতু আছি, হাসপাতালের কিছু দায়িত্ব তো আছে। অনেক দিন ধরে আমি প্রেশারের ওষুধ খাই, আর গ্যাস্টিকের ট্যাবলেট তো আছে। সেটা আমার প্রেসক্রিপশনে আছে। নার্স এসে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে জানিয়ে গেলেন, কী কী ওষুধ খেতে হবে। একবার ডাক্তার এসেও ঘুরে গেলাম। আমার খুব হাসি পাইলো। যদিও পরদিন ড্রেসিং চেঞ্জ করতে বলায় বেশ আমতা আমতা করলো। পরে টেপ খুঁজে পাচ্ছিল না। আমি ব্যাগ থেকে বের দেওয়ার পর তারা কাজ সারল।

সেদিন রাতটা কেমন কাটছিল? এমন না খুব খারাপ লাগছিল। তবে সময়ের হিসাব চলে গেছিলো। শুয়ে থাকা আর এক-আধটু পায়চারি ছাড়া আসলে করার কিছু ছিল না। সন্ধ্যার দিকে দারাশিকো ভাই ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বললেন। হাসপাতালে জানালার একটা ছবি পোস্ট করে ‘লাইট থ্রু দ্য হসপিটাল উইনডো’ এ রকম একটা ক্যাপশন দেওয়ার পর ফেসবুকে অনেকেই প্রশ্ন শুরু করলো। তাই দ্রুত ছবিটি অনলি মি করে দিলাম। সোশ্যাল মিডিয়ার দিনে এই এক জটিলতা, আমরা নিজেদের প্রকাশ করতে চাই, আবার চাইও না যেন!

চলবে …

Series Navigation
The following two tabs change content below.
Avatar photo

ওয়াহিদ সুজন

দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
Avatar photo

Latest posts by ওয়াহিদ সুজন (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →