Main menu

অসুখের দিন (কিস্তি ৪)

This entry is part [part not set] of 8 in the series অসুখের দিন

[ব্যর্থ এক সার্জারি নিয়ে ভোগান্তির কাহিনি এটা। যার মূল পর্ব শুরু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, এখনো চলমান। এখন একটা সিনেমাটিক ক্লাইমেক্সে দাঁড়ায়া আছে। তবে সেই গল্পে দুর্ধর্ষ কোনো অ্যাখ্যান নাই, বিরাট কোনো বাঁক-বদল নাই। অনেক বিরক্তিকর দীর্ঘশ্বাস আছে। কিন্তু এ গল্প আমার খুবই কাছের, আমার বর্তমান। আমার স্বজনদের জন্য পরীক্ষার, আমাকে ভালোবাসার। সেই গল্পটা আমার বন্ধুদের জানাতে চাই, অন্তত এক অধ্যায়ের সমাপ্তির আগে আগে। … অবশ্য পুরো গল্পটা এভাবে শেয়ার করা সম্ভব কিনা আমার জানা নাই। এখন পর্যন্ত সব হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নাম বদলে দেওয়া।]

কিস্তি ১ ।। কিস্তি ২ ।। কিস্তি ৩ ।।

পর্ব ৭: অপারেশন টেবিলে মৃত্যু নিয়ে রসিকতা

সকালটাও একা একা কাটল। আগের বিকেলের পাউরুটির কয়েকটা স্লাইস আর কলা ছিল। সেটা দিয়ে নাশতা সারলাম। সকালে নার্স এসে গ্যাস্টিকের ওষুধের কথা বলে গেল। ইআরসিপি কখন করাবে জিজ্ঞাসা করলাম, উত্তর দিতে পারলেন না। দুপুরের দিকে ক্ষিদে লেগে গেল। বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসার কথা নিপুণ ও মিনহাজের। কিন্তু ওদেরও ডাক্তারে এপয়ন্টমেন্ট ছিল, তাই আসতে খানিকটা দেরি হবে। দুই পিস পাউরুটি তখনো রয়ে গেল। সেটাই খাইলাম।

দুইটার দিকে ডা. রাফি আসলেন। বললেন, ইয়ংম্যান কেমন আছেন? বললাম, ভালো। এরপর বললেন, আজকে রিপোর্ট পাইলে সন্ধ্যায় অপারেশন হবে। কিছু খাবেন না। নইলে দুইদিন পিছিয়ে যেতে হবে। শুক্রবার আমি অপারেশনে যায় না। মেবি শনিবারও উনার অন্য শিডিউল ছিল।

এ কথা শুনে কিছু বলতে পারলাম না। একটু পরই ভাগনি হাজির হলো খাবার নিয়ে। তখন নার্স এসে বললেন, সকাল থেকে কিছু খেয়েছেন? খাবেন না। আপনার করোনা নেগেটিভ। রাত আটটার দিকে ইআরপিসি করা হবে। বললাম, এটা এমন কথা। সারাদিন যাওয়ার পর বলছেন খাবেন না। এটা তো সকালেই আপনাদের বলা উচিত ছিল। এখন আমার মনে হয়, কখন দুই পিস পাউরুটি খেয়েছি। আর খাবার দেরিতে এসেছে বলে এতক্ষণ খাইনি। আপনার দায়িত্ব পালন করলেন না। গ্যাস্টিকের ট্যাবলেটের কথা বলতে আসছিলেন শুধু। তারা কোনো উত্তর দেই না।

সমস্যা হলো, আমি কখন পাউরুটি খেয়েছি মনে নাই। ওই যে সংশয় পিছু ছাড়ে না। শয়তানটা আশপাশে কোথাও বসে থাকে। যখনই কোন কিছু নিশ্চিত হতে চাই, টুপ করে আমার মাথায় মধ্যে ঢুকে পড়বে। তারপরও একটা সময় ধরে ঠিক করা হলো রাতে ইআরসিপি হবে। কয়েকদিন পিছিয়ে যাওয়ার চেয়ে এই ভালো। এই জঘন্য হাসপাতালে আর থাকতে হবে না।

রাত আটটার খানিকটা আগে সার্জারি রুমের পাশে একটা বিছয়ানায় শুইয়ে দেওয় হলো। হাতে লাগানো হলো স্যালাই। এর আধঘণ্টা পর ডা. রাফি আসলেন। সঙ্গে দুজন ছিলেন। খুব একটা কথা বললেন না। দ্রুত অপারেশন টেবিলে শুয়ে পড়লাম। এক হাত স্যালাইনের কারণে লম্বা করে রাখছি, অন্য হাত মাথার নিচে। একজন মুখের মধ্যে একটা চোঙের মতো জিনিস দিলেন। তারপর সেখানে টেপ লাগিয়ে দিলেন।

তিনজনে কথা বলতে বলতে এটা সেটা করছেন। পায়ের দিকে কিছু তারের মতো জিনিস জড়ানো হলো। ভয় পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে, পা ছোড়াছুড়ি করবো নাকি। জিজ্ঞাসাও করা যাচ্ছিল না, মুখ বন্ধ। এই ফাঁকে তাদের কিছু কথা শুনে গা হিম হয়ে আসলো। আগেই হয়তো বলেছি অ্যানেন্থেশিয়ার মাধ্যমে অজ্ঞান হওয়া ভয়ংকর একটা ব্যাপার। যেন ফাঁদে পড়ে যাওয়া, মৃত্যু নয়, আর যদি জ্ঞান না পেরে। আর তখন তারা মৃত্যু নিয়ে রসিকতা করছে।

ডা. রাফি সম্ভবত অপারেশন টেবিলে মারা যাওয়া কোনো এক রোগীকে নিয়ে কিছু বলছিলেন, তারপর তিনজনই হাসছিলেন। আমি বলতে লাগলাম, ভাই আপনারা দেখছেন না, আমি এখানে শুয়ে আছি। একটু পর অজ্ঞান করবেন। এইসব কথা বন্ধ করুন। কিন্তু কথাগুলো আমার ভেতরেই রয়ে গেল। মুখ খোলা গেল না। পা নাড়ানোর চেষ্টা করলাম, সেটাও হলো না। তাদের হাসাহাসির মাঝে একজন আমার দিকে এগিয়ে এলেন। চোঙে লাগানো টেপ খুলে একটা নল আমার মুখে মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। অ্যানেন্থেশিয়া!

লোকজনের অস্পষ্ট কথাবার্তা ও আলোর মাঝে জ্ঞান ফিরলো। ততক্ষণে কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে। অ্যানেস্থেশিয়ার ঘোর সহজে কাটছিল না। ঘণ্টাখানেক বা এর আগে-পরে টলতে টলতে ওয়াশ রুমে গেলাম। দরজা লক করি নাই। কমোডের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।

খাওয়া-দাওয়া বন্ধ, গলায় খুব তৃষ্ণা; এভাবে শুয়ে পড়লাম। পেট ফুলে ঢোল হয়ে আছে। এক হাতে স্যালাইন লাগানো। ভয় হচ্ছিল মাঝরাতে হয়তো শেষ হয়ে যাবে, কেউ টের পাবে না। যদি রক্ত ওঠে। সারারাত ঘুম আসে নাই। পেট ফুলে থাকায় গ্যাসের যন্ত্রণা। মিনহাজকে কিছুক্ষণ পরপর বলছিলাম, মামা দেখেন তো স্যালাইন বোধহয় শেষ। এই করে করে সেই স্যালাইন শেষ হলো সকাল ৮টার দিকে। সকাল হতেই বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছি। হাসপাতালে লোকেরা বলছিল, খারাপ লাগলে থাকতে। কিন্তু থাকার কোনো দরকার ছিল না। যা হয়, কাগজপত্র রেডি করতে করতে অনেক সময় চলে গেল। ডা. রাফির সঙ্গে আর দেখা হলো না। একজন নার্স ওষুধ বুঝিয়ে দিয়ে বললেন এক সপ্তাহ যেন ডা. রাফির সঙ্গে আল হামরায় গিয়ে দেখা করি। দুলাভাই এসে বিল পরিশোধ করতে গেলেন। এ রক্তপাতহীন কাজের জন্য গলব্লাডারের অপারেশনের সমান টাকাই গেল। এর মধ্যে করোনা টেস্টের সাড়ে চার হাজার টাকা আছে। করোনা নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও করোনা প্রটেকশন ফি নামে আরও চার হাজার বাড়তি নিল। কী যেন একটা নলের জন্য আলাদা করে টাকা নিল। অথচ আল হামরার মতো সুপরিসর হাসপাতালে এর চেয়ে দুটো দিন বেশি ছিলাম। এটা হলো ঠেকে যাওয়া অবস্থা। পৃথিবীর অন্য কোথাও কেমন জানি না, আমি দেখেছি যে দিন শরীর খারাপ থাকে, এটা বুঝে গেলে পাড়ার রিকশাওলারাও ১০ টাকা বেশি নিতে চায়। ‘রিকশাওলা’ বললাম এ কারণে যে এটা খুবই সহজ উদাহরণ!এখন তো উপায় নাই আমার। এরা ভর্তির সময় বলেছিল, রিপোর্ট আসতে তিন-চারদিনও লাগতে পারে।

ডা. রাফি যদিও বিষয়টা না বুঝিয়ে অনলাইনে দেখে নিতে বলেছিলেন, কিন্তু ইআরসিপি কী আমার দেখা হয় নাই। তবে বাসায় আসার পর দেখলাম লম্বালম্বি হয়ে শুতে গেলে পেটের মধ্যে কেমন যেন লাগে। তাই কোনাকুনি একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হলো। আমার ধারণা ছিল, অপারেশনের লিকের জায়গায় জোড়া দেওয়া হয়েছে। একদিন তাসমিয়া আফরিন মৌ ফোন করে পুরো বিষয়টা জানতে চাইলেন। সব শুনে উনি বললেন, তাইলে কী পেটের মধ্যে সেলাই করছে। বললাম, না। ঝালাইও করে নাই। তাহলে? ভীষণ বেকায়দায় পড়ে গেলাম। আসলে আমার পেটের মধ্যে কী করেছে।

এক সপ্তাহ পর আল হামরায় গেলাম। প্রথমে ডা. আকবর আহমেদের সঙ্গে দেখা করলাম। উনি ড্রেসিং চেঞ্জ করার জন্য সহকারীকে ডাকলেন। কিন্তু মাত্র তিনদিনে আমার ক্ষতে বুজে গেছিল। এটা দেখে উনি সন্তুষ্ট হলেন। তারপর বললাম, আমার পেটের মধ্যে কি সেলাই করা হয়েছে? উনি একটা শরীরের একটা ছবি টেনে নিয়ে জানালেন, আমার সমস্যা কোথায় এবং কী? বললেন, শরীরের ভেতর একটা স্ট্রেইন বসানো হয়েছে। অনেকটা ক্লিপের মতো। তাহলে? বললেন, ওটা একমাস পর বের করে আনা হবে। এবার তো ভয় পাওয়ার পালা। পেটে কেটে বের করবে? না, যেভাবে স্ট্রেইন বসানো হয়েছে, ঠিক সেভাবে খুলে আনা হবে। হায় হায়! কী মুশিবত!

এর মাঝে আরেক বাজে ঘটনা ঘটল। সেটা জুলাই মাস সম্ভবত। আম্মা কিছুদিন আগে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। এবার হঠাৎ করে স্মৃতি বিভ্রমের মতো ঘটনা ঘটল। কিছুক্ষণ কাউকে চিনতে পারছিলেন না। আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে বলছিলেন, গরুর দুধ ধুইয়ে আশপাশের ঘরে দিয়ে আসতে। অথচ আমার বুদ্ধি হওয়ার পর বাড়িতে গরু পালতে দেখি নাই। এ রকম এলোমেলা ঘটনা। উনি এমনিতে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাত কাঁপার রোগী। বাড়িতে একটা ভয়ংকর অবস্থা। রাতের বারোটা দিকে ছোটবোন ভিডিও কল দিলো। আম্মা আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। কী নীরব তার চাহনি। কথায় কোনো তাড়াহুড়ো নেই। খুব ধীরস্থিরে বলছিলেন, উনার কিছুই ভালো লাগছে না। আমি কেমন আছি। ভিডিওতে আম্মাকে দেখতে কী যে সুন্দর লাগছিল। যেন একটা পরী! আমি তো কাঁদতে কাঁদতে অস্থির। তখন এমনিতে আমার জন্য ঘুমানো কষ্টকর ছিল। রাতের পর রাত জেগে থাকছি। একটু চোখ লেগে এলো বোধহয়। কিন্তু কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। প্রথমে মনে হলো আপার কাঁদছে। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। একটু সুস্থির হতে বুঝতে পারলাম। বারান্দার খোলা দরোজায় দিয়ে হু হু বাতাসের সঙ্গে অনেক দূর থেকে কোনো নারীর কান্না ভেসে আসছে। আল্লাহ আমাদের ডাক শুনেছিলেন। পরদিন আম্মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রক্ত ও প্রশ্রাবে কিছু ইনফেকশন ধরা পড়ে। দুই-তিনদিনের মাথায় তিনি বাড়ি ফেরেন। অনেকটা রিলিফ পেলাম।

সম্ভবত জুলাইয়ের কোনো একদিন টিভি দেখতে বসেছি। তখন শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিদিন একটা অনুষ্ঠান দেখায় সব চ্যানেলে। যেখানে বলা হয়, ওই দিন বঙ্গবন্ধুর জীবনে কী ঘটেছে। তখন জানলাম, ১৯৭৩ সালের দিকে সম্ভবত উনার গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। ঘটনা শুনে মনে হলো, সদ্য স্বাধীনতা দেশের ডাক্তাররা হয়তো নিজেদের হাতের ওপর ভরসা করতে পারছিলেন না, তাই উনাকে লন্ডন গিয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। ওই সময় নাকি বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা। সদ্য স্বাধীন দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিলেন শেখ মুজিব, সেই সংবর্ধনার একটা ছবি অনলাইনে পাওয়া যায়। পরে জেনেভায় যান অবসর কাটাতে।

অনেক পরে যখন আম্মার সঙ্গে দেখা। তিনি বলছিলেন, আগের দিনের অনেক মানুষ নিশ্চয় গলব্লাডারে ব্যথায় ভুগছেন। কিন্তু তারা বলতে পারতেন না, আসলে কী হচ্ছে! ব্যাপারটা কেমন বিভীষিকাময় নয়? তো, টিভিতে শেখ মুজিবের গলব্লাডারের ঝামেলার কথা শুনে মজাই পাইলাম। আর জিনিসটা আমারই চোখে পড়া বাকি ছিল বুঝি।

সত্যি কি এই সময় আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। একে তো অ্যানস্থেশিয়া নিয়ে দারুণ অস্বস্তি, তার ওপর আবারও মুখের ভেতর নল করিয়ে কিছু একটা বের করে আনা। যদি কোনো অনর্থ ঘটে। এর মধ্যে বাসায় থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠছিলাম। হাসপাতালে দিনগুলো বা খুব একটা বাধ্য না হলে কাজ করা বাদ দিই নাই। অফিসের কাজ না থাকলেও নিজেদের কিছু কাজ দেখাশোনা করতে হতো। নইলে নানান দুশ্চিন্তা তো ছিল। এ সময় মানে কোরবানের কয়েক দিন পর আমার বউ আসলেন। আমরা মাস খানেক একসঙ্গে ছিলাম। একেবারে সুস্থ হওয়ার আগে আম্মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। যাতে তারা কোনো দুশ্চিন্তার সুযোগই না পান। বিশেষ করে বাবা সব সময় নানান বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, তার মধ্যে আর নতুন করে কিছু যোগ করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এবার জোরাজুরির কারণে যাইতে হলোই।

সেদিন ছিল ২৯ আগস্ট, পরদিন আমার জন্মদিন। এই দিন ও আম্মা-বাবার সঙ্গে প্রায় ১০ মাস পর দেখা হওয়া নিয়ে অনেকটা আপ্লুত ছিলাম। এখানে শুধু নিজের অসুস্থতা নয়, করোনার বিষয়টা এজন্য গুরুত্ব দিয়ে দেখছিলাম, আম্মা-বাবা বয়স্ক ও ওনাদের নানা ধরনের অসুস্থতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও না গিয়ে পারলাম না।

ওই দিনের কথা কেন যেন খুব একটা মনে নাই। গভীর দিনগুলো এমনই হয়। স্মৃতি বা অভিজ্ঞতায় জানান দেওয়ার বাইরে আয়ু খোরাক হয়ে থাকে তারা। ২৯ আগস্ট সকালে যখন রওয়ানা দিলাম, ততক্ষণে জানতে পারলাম ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ অভিনেতা চাডউইক বোসম্যান মারা গেছেন। প্রায় চার বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন তিনি। কিন্তু এর মাঝে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করলেও ব্যাপারটা তিনি কাউকে জানতে দেন নাই, পরিবার জানতো শুধু। কী অবাক বিষয়। হয়তো বাস্তবের সুপারহিরো এমন হয়। বা আমাদের মধ্যে এমন কিছু ফ্যান্টাসি আছে, গোপনে সব সয়ে যাবো কাউকে বলবো না। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের এমন সংযম নাই আসলে। বরং এ চিন্তার চোরা একটা সুখ আছে। যেটা স্বস্তির কিছু না। এমনটা ভাবতে আমার ভালোও লাগে না।

যাই হোক, সন্ধ্যার পর আমরা বাড়ি পৌঁছি। আম্মা-বাবা কী যে খুশি হইছেন। এখানে একটা ব্যাপার আছে, আমি যেন নিজের অনুভূতিগুলো ঠিকঠাক বুঝাইতে সংকোচ বোধ করি, তেমনি আম্মা-বাবার মধ্যেও একটা লজ্জার ব্যাপার আছে যেন। ব্যাপারটা যে কোন পক্ষ থেকে শুরু হইছে আল্লাহ ভালো জানেন। বাড়ি পৌছার ঘণ্টা দু-এক পর তাদের পুরো ঘটনাটা জানালাম,শুধু ইআরসিপি রিমুভের ব্যাপারটা গোপন করে গেলাম। আরেকবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা শুনলে ভীষণ টেনশনে পড়ে যাবেন। আম্মা অনেকটা হতভম্ব হয়ে গেলেন। বারবার বলছিলেন, তাকে জানাই নাই কেন! কিন্তু এটা তো স্পষ্ট যে, উনি অনেক কিছু বুঝতে পারেন। যখন বাজে বাজে ঘটনাগুলো ঘটছিল, তিনি নানা সময়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। একটাই কথা, আমার জন্য মন কেমন যেন করছে।

বাড়িতে প্রথম কাউকে না জানালেও এক ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে ছোটবোন জেনে যায়। তারও ভীষণ টেনশন নিয়ে ব্যাপারটা গোপন রাখতে হচ্ছিল। প্রায় ফোন করে জিগাসা করতো কেমন লাগছে, কষ্ট হচ্ছে কিনা। ও জানত না যে, এক সময় এ প্রশ্ন শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে উঠেছি।

সেই সফরে দুদিন বাড়ি ছিলাম। তারপর ঢাকায় ফিরে আসলাম। তখন আমার মধ্যে কিছু ফ্যান্টাসি চলে আসছে। মনে হলো, খুব পছন্দ করি এমন কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা না হলে চলবে না। যেমন; মিশু। যদি মরে-টরে যায়, তার আগে ওর সঙ্গে দেখা করে যাওয়া উচিত। ও যদিও আমার এত জটিলতার কথা স্পষ্টভাবে জানতো না। নওগাঁয় এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করছিল। করোনার লকডাউনে কাজ করতে করতে ওর জান জেরবার অবস্থা। মাঝে মাঝে তাদের করোনা ঠেকানোর বিষয়গুলো জানার জন্য ফোন দিতাম।

একদিন ফোন করে বললাম, আমি আসতে চাই। ও রাজি হয়ে গেল। সেপ্টেম্বরের এক শুক্রবার অফিস করে কল্যানপুর থেকে বিকেলের গাড়ি ধরে রাত ১২টার দিকে পৌঁছে গেলাম নওগাঁ। মিশু শুধু আমার বন্ধু বা ছোট ভাই-ই নয়, মাঝে মাঝে মনে হয় ও আমার ছেলে। দুইদিন আগে দেখা হলেও মনে হয় অনেকদিন দেখা হয় নাই। সেইবার প্রায় ১০ মাস পর ওর সঙ্গে দেখা। নওগাঁর আত্রাইয়ে গেস্ট হাউসে ওর পাশের রুমে উঠলাম। গোসল দিয়ে মিশুর ধরা বিশাল একটা মাছের মাথা দিয়ে ভাত খাইলাম। এরপর টুথপেস্ট নিতে এসে গল্প করতে করতে ভোর ৪টা বেজে গেল।

ও আচ্ছা! আমার প্ল্যান ছিল বগুড়া ঘুরে দেখার। মিশুকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম বগুড়া চলে আসুক। ওই দিন রাতে থেকে পরদিন ঘুরেফিরে সন্ধ্যার গাড়িতে ঢাকায় ফিরবো। কিন্তু মিশুর রাতে থাকা মানে ড্রাইভারেরও থাকার ব্যাপার আছে। তাই ঠিক হয়েছিল, নওগাঁ থেকেই বগুড়া ঘুরব। কিন্তু সকালে খবরাখবর নিয়ে জানা গেল, বগুড়ার প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ। আর মিশু কোনো বিশেষ সুবিধা নিতে আগ্রহী না। এটা নিয়ে আমারও আগ্রহ নাই। নওগাঁ আমার আগে খানিকটা ঘোরা ছিল। আমরা কুসুম্বা মসজিদে গিয়ে যোহরের নামাজ পড়লাম। করোনার মাঝে মসজিদে যাওয়া বন্ধ ছিল। অনেকদিন জুমা তো দূরের কথা ঈদের নামাজও পড়া নাই। এর আগে একদিন হাসপাতালে এমআরসিপি রেজাল্ট আনতে গিয়ে মাগরিব নামাজ পড়া হয়েছিল। রাশেদ থাকার কারণে। আর এ দিন যোহরের নামাজ। তারপর আদমদীঘি গেলাম অনেক পথ পাড়ি দিয়ে। এখানে আমি আগেও গেছিলাম। অদ্ভুত বিষয় হলো, বছর সাতেক আগের সেই ভ্রমণে আমি আর শাহনেওয়াজ খান জঙ্গলের মাঝে ঘুরেছিলাম। গা ছমছম অবস্থায় ছবিও তুলেছিলাম। এখন সেই সব জঙ্গলের কিছু নাই। তবে মানুষ সমাজ উঁচু উই ঢিবিগুলো রয়ে গেছে। দুনিয়াতে এই সব থাকা বা না থাকা একেকটা উদাহরণ বটে। যখন আমরা থাকবো না, যেন কখনো ছিলাম না। যেমন; মিশুকে জঙ্গলের বিষয়টা আমি বোঝাইতে পারছিলাম না।

সন্ধ্যার দিকে গেলাম ধীবর দীঘিতে। পাশের একটা মসজিদে আসর নামাজ পড়া হলো। অনেক দিন পর একটা মসজিদ দেখলাম যেখানে ফ্যান নাই। রাত বারোটার দিকে ঢাকার ট্রেন ধরলাম। মিশুর সঙ্গে কোলাকুলি করে ট্রেনে উঠলাম। মন খারাপ হয়ে গেল খুব। আর কী দেখা হবে। এটাও মনে হলো, একটা মিশন শেষ হলো। আমি চলে গেলেও একটা অপূর্ণতা অন্তত থাকবে না।

এ ঘটনাগুলো কেন বলছি? জাস্ট আমার মনের অবস্থা বোঝানোর জন্য। কতটা ভঙ্গুর হয়ে গেছিলাম আমি। কারণ কখনোই নিশ্চিত হতে পারছিলাম না, এরপর আমি বলতে পারবো কিনা— হ্যাঁ, আমি সুস্থ হয়ে গেছি! আমার এ অস্থির সময়ে আপা সব সময় একটা কথায় বলতেন, কখনো আল্লাহর ওপর নারাজ হতে নাই। অসুখ-বিসুখ উনি দেন। উনি আমাদের সুস্থ্য করবেন। এমনকি ঝড়-বৃষ্টিতে বিরক্ত হতেও মানা করেন তিনি। কারণ, দুনিয়াতে সবকিছুর দরকার আছে। দারাশিকো ভাইও সান্ত্বনা দিতেন। বিশেষ করে আমাদের দুজনের জীবন বিষয়ক কিছু ধারণার মিল ছিল। আমরা ভাবতাম, প্রত্যেক মানুষের এই পৃথিবীতে আলাদা কাজ আছে। লক্ষ্য আছে। সেটা আমরা বুঝি বা না-ই বুঝি, আমরা সেই উদ্দেশ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাই। আসলে কি আমরা কখনো জানতে পারি কী সেই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য? এমনও হতে পারে, অন্য কারো জীবনে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ি, যেটা কখনো জানতে পারি না। রাশেদ অবশ্য এতটা কল্পনা বিলাসী ছিল না। তাসনিম আলমের ব্যাপারটা এমন যে, উনি যখন জানতে পারেন, নতুন কোনো অসুস্থতায় জড়িয়ে পড়েছি, বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আল্লাহ নাকি প্রিয় বান্দাদের অসুখ-বিসুখ দিয়ে থাকেন। মাসুম হয়ে যায় কি আমরা? আর আমি কি এতই প্রিয়! সব আল্লাহই জানেন।

পর্ব ৮: হাসপাতালের বিল থেকে অর্ধেকের বেশি টাকা গায়েব

তিন মাস প্রায় শেষ হয়ে আসলো। এখনকার কাজ হলো ডা. রাফির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইআরসিপি রিমুভ করার ব্যবস্থা নেওয়া। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে হাসপাতালে যোগাযোগ করলাম। আল হামরা জানালো, ফোনে সিরিয়াল দেওয়া হয় না। এসে টিকিট কাটতে হবে।

জুনেই দেখেছিলাম, করোনার ভয় কাটিয়ে হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। ওই বছর আগস্টে বিবিসি বাংলা জানিয়েছিল, করোনার সময় সিজারের বাচ্চা জন্ম নেওয়া কমে এসেছিল।

সেখানে বলা হচ্ছিল, সরকারি হিসেবেই জানুয়ারি মাসে নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৫০ হাজার ৮৭৮টি যেখানে সিজার হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৭৯টি। পরে ফেব্রুয়ারি মাসে সিজার হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৩২টি, মার্চ মাসে ৩৭ হাজার ৪১১টি, এপ্রিল মাসে ৩২ হাজার ৫৯১টি, মে মাসে ৩৩ হাজার ৮০৮টি, জুন মাসে ৩৬ হাজার ৯০টি এবং জুলাই মাসে ৩২ হাজার ১৭৩টি নরমাল ডেলিভারির বিপরীতে সিজার হয়েছে ২৬ হাজার ৮০২টি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেছিলেন, করোনার সময়ে শুধু সিজার নয় বরং হাসপাতালগুলোতে নরমাল ডেলিভারি ও সিজার দুটিই কমেছে।

‘বাড়িতে প্রসব বেড়েছে ২৩%। কারণ এ সময়ে অনেকেই হাসপাতাল এড়াতে চেয়েছেন। এতে করে বাড়িতে প্রসব করাতে গিয়ে কিছু দুর্ঘটনাও যে হয়নি তা কিন্তু নয়। তাই শুধু মাত্র সিজার কমেছে এমনটি বলা যাবে না।’

সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চ এপ্রিলে যেখানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৫ হাজারের বেশি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের এই দুই মাসে তাও অন্তত পাঁচ হাজার কম হয়েছে।

যাই হোক, আমার গল্পে ফিরি। হাসপাতাল থেকে সকাল ১০টায় যেতে বললেও আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি ১১টার আগে ডা. রাফির আসার সম্ভাবনা নাই। তারপরও আমার যেতে যেতে সাড়ে ১১টা। ডাক্তার আসেন নাই। কাউন্টার থেকে বলল, ডাক্তার কখন আসবে ঠিক না, আর আমাকে সিরিয়াল দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে ৪৯ জন টিকিট কেটেছেন। বললাম, টিকিট কাটার সুযোগ থাকলেও কাটতাম না। এত রোগী দেখতে স্বভাবত কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। তার ওপর বাসায় গিয়ে অফিসের কাজে বসতে হবে। হোম অফিসের ওই সময়টাতে ডে অফ বাতিল করা হয়। তাই প্রতিদিন কাজ করতে হতো। এখন সমস্যা হলো, এত দূর এসে লম্বা সময় ধরে বসে থাকা যেকোনো দিনের জন্যই সমস্যা।

কী করব ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যায় ডা. রাফিকে কল দিলাম। উনি জানালেন, তিন দিন সকালে আল হামরায়, বাকি তিন দিন সকালে অন্য কোথাও বসেন। প্রতিদিন দুপুর ও সন্ধ্যায় ফেমাস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতালে বসেন। এর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন হাসপাতালে অপারেশন থাকে। এ তালিকায় মুনলাইট হাসপাতালে রোগী দেখার কথা নাই। সম্ভবত অন্য হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনেন এখানে। যেভাবে আমাকে আল হামরা থেকে নিয়ে আসলেন। পুরো তালিকা শুনে মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা। পরদিন সকালে কল দিয়ে ফেমাসে দেখানোর সিরিয়াল পাওয়া গেল। রোগী বেশি ছিল না, পরে দেখলাম এ সময়টাই ফি একটু বেশি থাকে।

ফেমাস একটু খরুচে হাসপাতাল। ঠাটবাট আলাদা। আগের দুই হাসপাতালে খোলামেলাভাবে বসলেও এবার তাকে দেখলাম কাচের ওপারে। ডা. রাফি সব মিলিয়ে আট মিনিটের মতো সময় দিলেন। আগের হিস্ট্রিগুলো দেখলেন, আর পেটে চাপ দিয়ে দেখলেন। একটা প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন, এমআরসিপি ও এক্স-রে করতে। সঙ্গে কিডনির সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম। এ নিয়ে কিছুই বললেন না। এতই দ্রুত কথা বললেন যে, এমআরসিপির জিনিসটা কী বললেন না। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম ইআরসিপি লিখেছেন। বললেন, এখন আল হামরার কাছের আউটলেটে গিয়ে পরীক্ষাগুলো করে ফেলতে, বাড়তি ছাড় লিখে দিলেন। পরদিন নয়টার মধ্যে এসে ফিল্ম দেখিয়ে ইআরসিপি রিমুভ করে দেবেন। বললাম, কত খরচ? উনি কাচের ওপর থেকে বললেন, মুনলাইটে গেলে আবার করোনা টেস্ট ও দুদিন থাকতে হবে। তাই টেস্ট ছাড়া আল হামরায় রিমুভ করে ফেলবেন। হাজার বিশেক টাকা লাগবে।

কথা প্রসঙ্গে উনাকে ইউনিভার্সিটির সেই বড় ভাইয়ের কথা বললাম। উনি বললেন, আপনি ওনার দলের নাকি? মানে? ‘ছাত্র শিবির’ নামটা মুখে আনতে চাইছিলেন না আরকি! আমি বললাম, না। আমি দল করতাম না। একই হলে থাকার সুবাদে ভালো পরিচয়। উনার বাড়িও গিয়েছিলাম।

এরপর আমার পেশা জিগেস করলেন। একটা পত্রিকা বের করে দিলাম। এবার তিনি সাংবাদিকদের কত দায়িত্ব সেই জ্ঞান দিতে লাগলেন। কীভাবে আমরা দেশকে পাল্টে দিতে পারি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি উদ্দীপ্ত হতে পারলাম না। বিরক্তি চেপে শুনছিলাম। বিরক্তি এই কারণে যে, উনাকে দেখে মনে হওয়ার কারণ যাই যে, ডাক্তাদের কোনো দায়িত্ব নাই। বিশেষ করে, যখন বললাম ‘শিবির’ করতাম না, কিছুটা মনে হয় কোনঠাসা বোধ করছিলেন। দেশের অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ জানানোর পাশাপাশি বলছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কেউ না আসলে কিছু্ই পাল্টাবেন না। ‘কিছু মনে করবেন না’ বলে এও বললেন, নারীরা কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে এতে তার আস্থা নাই। পুরো ব্যাপারটাই বিরক্তি ও হাসি দুই-ই আসলো। শেষে বললেন, আর সময় নষ্ট করবো না আপনার। আবারও জানালেন, আমার বয়স অনেক কম দেখায়। এটা আমার কাছে এখন আর ভালো লাগে না!

নিচে নেমে রিকশায় চেপে আল হামরায় যেতে যেতে মনে হলো, উনি আসলে আমাকে কী করতে বলছেন, স্পষ্ট করে বলেন নাই। আমিও স্পষ্ট করে জিগাসা করি নাই। নতুন উৎকণ্ঠা পেয়ে বসলো। এক্স-রে করানো গেলে সহজে। এমআরসিপির জন্য কাস্টমার কেয়ারের অনুমতি লাগবে। সেটাও নিয়ে নিলাম। ডা. রাফি ১০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করেছেন। এমআরসিপির জন্য পর দিন সকাল সকাল আসতে হবে। রাফিকে ফোন করতে বললেন, স্টেইন রিমুভের জন্য এমআরসিপি করা লাগবে। রিপোর্ট দরকার নেই, শুধু ফিল্ম পেলেই চলবে। এমআরসিপির একটা অংশ হলো সিটি স্ক্যান। আল হামরার এক্সরে ডিপার্টমেন্টের প্রধান সেই ভদ্রমহিলা অপারেশনের আগে করতে বলেছিলেন। কিন্তু ডা. আকবর আহমেদ অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে করান নাই। পরিহাস হলো, সেই একটা ঘটনাই বোধহয় পুরো হিস্ট্রিটা পাল্টে দিল।

পরদিন সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। যতবার যাই-ই না কেন, হাসপাতাল মানে তো ভয়ের বিষয়, কী হবে ঠিকঠাক জানি না, অ্যান্থেশিয়ার অভিজ্ঞতা সব সময় অস্বস্তির বটে, আগেও বলেছি। আজ আমার সাথে কেউ যাচ্ছে না। ব্যাগে দরকারি জিনিসপত্র নিলাম। আপাকে বলে ছাদে গেলাম, সেখানে দুলাভাই ব্যায়াম করছেন। উনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ছোটবোনের কাছ থেকে ওর ডেবিট কার্ডটা দিলাম। মন এই জন্য বেশি খারাপ যে, আজ বাসা থেকে কেউ আমার সঙ্গে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল, সবাই আমাকে ত্যাগ করেছে। করুণ একটা সুর বাজছিল মনের মাঝে।

পরে অবশ্য আপা বলছিল, সেদিন দুলাভাই মন খারাপ করছিল। অফিসের ব্যস্ততার জন্য আমার সঙ্গে যেতে পারেন নাই এ জন্য। শুনে খুবই খুশি হইছিলাম। একজন অসুস্থ মানুষকে যদি তার পরিবার অবহেলা করে বা তার মনে অবহেলিত হওয়ার ভাব অনুভূত হয় এর চেয়ে খারাপ কিছু আর না। কোনো সান্ত্বনা একে দূর করতে পারে না। আজ সেই ঘটনার প্রায় দশ মাস পর (যখন লিখছিলাম) বিষয়টা আবার নতুন করে অনুভব করছি। আমাদের শরীর হয়তো সবটা সারে বা কখনোই সারে না, কিন্তু মন যদি না সারে তবে আমাদের শরীরি মৃত্যু না হলেও মানসিক মৃত্যু ঘটে, যে যন্ত্রণা হয়তো বোঝানো সম্ভব না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, অসুস্থ মানুষ যখন নিজেকে অন্যের বোঝা মনে করে, তার জীবন আস্তে আস্তে নিশ্চল হয়ে পড়ে। সেদিন যখন বাসা থেকে কেউ আমার সঙ্গে যাইনি খুবই কষ্ট লাগছিল। অবহেলা হলেও আমাকে তো এখানেই ফিরে আসতে হবে।

হাসপাতালে এমআরসিপির সিরিয়াল দিতে গিয়ে বিপত্তি। আগের দিন সিরিয়াল না দিয়ে নাকি বোকামি করেছি। যদিও আগের দিন সেই কথা আমাকে কেউ বলে নাই। ৪০ নাকি ৮০-র পর সিরিয়াল ভুলে গেছি। ৪-৫ ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। আজ তাইলে স্টেইন রিমুভ হবে না। কিছু না খেয়ে যেহেতু বসে আছি, তাইলে কাজটা করেই যাই। কাউন্টারে বললাম, এতটা সময় যেহেতু লাগবে, হাসপাতালে বসে না থেকে বাইরে গিয়ে কোথাও রেস্ট নিই। উনারা বললেন, না না, এখান থেকে যাবেন না। অনেকেই আগের দিন সিরিয়াল দিয়ে গেছে, কিন্তু সকালে এসে টাকা জমা দিয়ে কনফার্ম করে নাই, ফলে আগে-বাগেও হয়ে যেতে পারে। তারপরও ধরে রাখলাম অনেকটা সময় লাগবে। বোর হওয়ার জন্যই অপেক্ষা। দশ মিনিটের মাথায় মাইক্রোফোনে ঘোষণা এলো, ওয়াহিদ সুজন সিটি স্ক্যান রুমে চলে আসুন। আমার আর রাশেদের হতভম্ব অবস্থা।

ভেতরে ঢুকে জামা পাল্টে নিলাম। এমআরআই রুমের সামনে আরামদায়ক কাউচে আরও রোগীর সঙ্গে বসে আছি। টেনশন যে হচ্ছিল না, তা নয়। একটা কফিনের মতো মেশিনের মধ্যে ঢুকে যাওয়া। ভয় তো লাগছিলই। চশমা খুলে রেখে এমআরআই রুমে ঢুকলাম। একজন এটেনডেন্ট এসে সব ঠিক করে দিলো। বুকের সঙ্গে একটা ভেস্টের মতো জিনিস বেধে দিলো। একটা চাপ তৈরি হলো। হাত নাড়ানোর কোনো উপায় নাই। মেশিনের মধ্যে ঢোকার পর কয়েকটা ঘটনা অস্বস্তি তৈরি করে। চশমা না থাকায় স্পষ্ট করে কিছু দেখছি না, যদিও মাথার ওপর জায়গা অল্প। এমনিতে বদ্ধ পরিবেশ, তার ওপর মাস্ক পরে আছি। নিঃশ্বাসের সমস্যা হচ্ছিল। এই সব চিন্তা এভয়েড করছিলাম। হাত আটক, মানে কোনো ঝামেলা হলে নিজের চেষ্টায় বেরোতে পারবো না। আতঙ্ককর পরিস্থিতি। অবশ্য একটা কিছু ছিল হাতের কাছে, সমস্যা হলো চাপ দিলে লোক চলে আসবে। ভাবার চেষ্টা করছিলাম, এগুলো সব মনের কারিকুরি। আসলে সব ঠিক আছে। যাই হোক, নানা রকম শব্দের খেলা ও দীর্ঘ শ্বাস নেওয়া ও বন্ধের মধ্য দিয়ে অনেকক্ষণ কাটল। কিছুক্ষণ পর একজন পানি খাইয়ে দেওয়ার পর আরেক দফা টেস্ট শেষ বের হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

এবার কাউচে বসলাম সিটি স্ক্যানের অপেক্ষা। একজন বয়স্ক লোক ভেতরে, উনি বের হতেই আমাকে ডাকা হলো, ঢোকার আগেই বলা হলো, অপেক্ষা করুন, জায়গাটা পরিস্কার করতে হবে। খেয়াল করলাম, বয়স্ক রোগীর প্যান্ট ভেজা। হায় হায়! যদি আমারও এ অবস্থা হয়। উনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি কোনো ভাবান্তর নেই। মানে তিনি প্রসাব করার বিষয়টি বুঝতে পারেন নাই। তাইলে চিন্তা নাই। আসলেই, মিনিট দুয়েকের মধ্যে হয়ে গেল।

আধাঘণ্টা পর এমআরসিপির ফিল্ম হাতে এলো। ডা. রাফি হাসপাতালে ৬ বা ৭ তলায় একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিল। গিয়ে দেখি সেটা হাসপাতালে এন্ডোস্কপি ডিপার্টমেন্ট। অনেক রোগীই টেস্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। ওই ভদ্রলোককে রিসেপশনে খুঁজে পেলাম না। ডা. রাফি নাকি ভেতরে এন্ডোস্কপি নিয়ে ব্যস্ত। বারবার খবর নিয়েও তাদের দেখা পাওয়া গেল না। এর মাঝে আরেকবার খোঁজ নিয়ে শুনলাম, ডাক্তার অন্য দরোজা দিয়ে বের হয়ে গেছেন। মুশকিল! এরপর ফোন দিলে রিসিভ করলেন। বললেন, আমাদের জন্য এক্সরে রুমের সামনে অপেক্ষা করছেন। এক্সরে রুমের সামনে এসে ওখানে পেলাম না। পরে দেখা হলে উনি ধমক দিলেন, দেরি হলো দেখে। পাশের একটা রুমের মধ্যে নিলেন। যা কোনোভাবেই এ আধুনিক হাসপাতালের সার্জারি রুমের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কোনোমতে একটা বেড আছে। ডা. রাফি এমআরসিপি দেখে বললেন, স্টেইন দেখে মনে হচ্ছে ভেতরে কোনো সমস্যা হয় নাই। ও এটা কী! পাথর দেখা যাচ্ছে! আপাতত এটা থাক। আমরা এখন স্টেইনটা রিমুভ করে নিই। পাথরের চিন্তা পরে করা যাবে।

ওনার কথায় এক্সরে করালেও সেটা দেখলেনও না। কিন্তু পাথরের চিন্তা উনি তো করবেন না, আমার চিন্তা রয়েছে। এ অবস্থায় আর ভাবার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বেল্ট ও জামা খুলে রেখে আমাকে শুয়ে পড়তে বললেন ডা. রাফি। তারপর বললেন, টাকা কে দেবে? কত? এখন বিশ হাজার দেন। আমি তার হাতে বিশ হাজার নিয়ে রিসিট চাইলাম। বললেন, যাওয়ার সময় রিসেপশন থেকে দেবে। রাশেদকে বললেন, কিছু ওষুধ লাগবে নিয়ে আসেন। ও ওষুধের জন্য যেতে ব্যাংকের কার্ড আর পাসওয়ার্ড জানিয়ে বললাম, টাকা লাগলে এখান থেকে নিস।

ডাক্তার ও ওনার সহকারী দ্রুত করার তাড়া দিচ্ছেন। যেন ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে। আমি বিছানায় শুতে না শুতেই হাতে স্যালাইন, মুখে নল। আর কিছু মনে নাই। যখন জ্ঞান ফিরলো, মনে হলো কোথাও নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। চারদিকে সবকিছু কিছু ঝাপসা। আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছিল। বললামও, ‘কত মানুষ’! আসলেই অনেক মানুষ। আরেক লিফট করে হাসপাতালের এন্ডোস্কপি ডিপার্টমেন্টের পোস্ট অপারেটিভ রুমে আনা হয়েছে। বিছানায় উঠতে উঠতে মাথা অনেকটা পরিস্কার হয়ে আসলো, যদিও কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। পরে জানলাম, রাশেদ ওষুধ এনে দেখে আমার স্টেইন রিমুভ হয়ে গেছে। ১০ মিনিট সময়ও লাগে নাই।

পোস্ট অপারেটিভ রুমটাকে কসাইখানার মতো লাগছিল। স্ট্রেচারে করে একজনের পর একজন আসছে। তাকে কোনো একটা বেডে তুলে দিচ্ছে দুই-তিন জন। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যে রুমের সব বেড ভরে গেল। বেডে তুলেই একজন নার্স এসে জাগানোর চেষ্টা করছে। ডাকাডাকিটা খুবই কর্কষ, হয়তো তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফেরানো দরকার। এখানকার রোগীরা সম্ভবত কোলোনোস্কপির। শুধু আমার ধরনটা এনডোস্কপির মতো। আমি মোটামুটি আছি, প্রায় ঘণ্টা খানেক পর ডা. রাফি বললেন, আমার সবকিছু ঠিক আছে। আরও ঘণ্টাখানেক পর সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তিনি যেমন তাড়াহুড়োর মধ্যে এসেছিলেন তেমনি চলে গেলেন। আমরা আর কিছু জিগাসা করারও সুযোগ পেলাম না।

এই ফাঁকে বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে ফেলল রাশেদ। আমার পাশে একটা ছেলে, তাকে খুব চেষ্টা করেও সজাগ করা যাচ্ছিল না। মায়ের সঙ্গে এসেছিল বরিশাল থেকে। এখন ঠিকঠাক মনে হয়। তবে বিষয়টা এমন— ঢাকায় চাকরি করতো মায়ের একমাত্র ছেলেটি। তারপর কী যেন ঝামেলা হয়। সম্ভবত লিভারের। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা করা হয়। একটু সুস্থবোধ করলে বাড়িতে নেওয়া হয়। কিন্তু পরে অবস্থা খারাপ হলে লকডাউনের কারণে ঢাকায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না। শরীরের ভেতরে ইনফেকশন, মিলিয়ে যা-তা অবস্থা। আর যখন আনাই হলো তখন ঢাকা মেডিকেলে করোনার ঢেউয়ের কারণে অন্য রোগী রাখা যাচ্ছিল না। সব মিলিয়ে একটা বিলম্বে ছেলেটার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এ গল্প হয়তো ভুরি ভুরি। কিন্তু আমাদের কে শোনাবে। এখন মা ছেলেকে নিয়ে এসেছেন এ হাসপাতালে! প্রায় সব রোগীর জ্ঞান ফেললেও এ ছেলেটা বেশি বেশি ডাকলে হয়তো সারা দিচ্ছিলো। কিন্তু চোখ মেলে তাকাতে পারছিল না। আর মা ছেলেকে বারবারে ডেকেই যাচ্ছিলেন।

দেড়টার দিকে একজন নার্স এসে বললেন, ওয়াহিদ সুজন আপনি যেতে পারেন। বিছানা থেকে নামলাম। খানিকটা টলছিলাম বটে। উনি বললেন রিসেপশনে বসতে, খানিকক্ষণ পর প্রেসক্রিশপন ও বাকি কাগজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ডা. রাফির কথা জিগাসা করতে বললেন, তিনি চলে গেছেন। সেই এক ধৈর্যের পরীক্ষা বটে। বসে আছি তো আছিই। সম্ভবত ঘণ্টাখানেক পর একজন নার্স এসে প্রেসক্রিপশন বুঝিয়ে দিলেন। বললেন ছয় ঘণ্টার কিছু খেতে পারবো। তবে আজ তরলই খেতে হবে। কিন্তু বাকি কাগজ ও বিল? সেটা এনডোস্কপি ডিপার্টমেন্টের একজন লোক বুঝিয়ে দেবেন, যার কথা আগের দিন ডা. রাফি বলে দিয়েছিলেন। এভাবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কেটে গেল। বসে থাকতে কী যে খারাপ লাগছিল। তারা বারবার বলছিল, একটু অপেক্ষা করুন। একবার ভেতরে গেলাম, একজন লোককে জিগাসা করলাম, উনি কিছু বরতে চাইছেন না। কিন্তু আরেকজন বলল, তাকে ফিল্মের জন্য নিচে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু দিতে চাইছে না। তাদের হেডকে যাইতে বলছে। এর খানিকক্ষণ আবার গিয়ে যখন চিল্লাচিল্লি শুরু করলাম, তখন বলল, আসেন রিপোর্ট রেডি। একটা বড় প্যাকেট দিলো।

ফিল্ম, প্রিন্ট করা ছবি ও বিল। পরে যখন বিলের কাগজ নিলাম, ধাক্কা খেলাম। আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিলেও বিলে লেখা ৮ হাজার টাকা। তাহলে ১২ হাজার টাকা কোথায়? বুঝলাম, কোনো রিসিট না দিয়ে এভাবে টাকা নেওয়ার উদ্দেশ্য। অথচ আগের দিন এ লোক সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে কত জ্ঞান দিলেন।

এর আগে কাগজপত্রের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ডা. রাফিকে ফোন দিছিলাম। তিনি ফোন ধরেন নাই। বিল পেয়ে সেটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছা হলো না। শুধু ইচ্ছা হচ্ছিল কোথাও শুয়ে পড়ি। আমরা তো যেকোনো কিছু বিনিময়ে একটু সুস্থ থাকতে চায়। তার কাফফারা দিতে হয় আরকি। নিচে গিয়ে ওষুধ কিনলাম আর উবার ডেকে চেপে বসলাম। রাশেদ তার বাড়ির পথ ধরলো। অফিসে ফোন করে জানালাম, আমার দুটো দিন রেস্ট লাগবে। (কিছুদিন আগে আমাদের ওয়ার্ক ফ্রম শেষ হয়েছে)। বাসায় ফিরতে ফিরতে মাগরিবের পর। ভালো করে গোসল করলাম। রাতে স্যুপ খেলাম।

কিন্তু মনের মধ্যে খচখচ করছিল একটা বিষয়, এমআরসিপি ফিল্মে দেখা যাচ্ছে পাথর রয়ে গেছে। তবে? আর কিডনির পাথরের কী ব্যবস্থা হবে?

[টু বি কন্টিনিউ…]

Series Navigation
The following two tabs change content below.
Avatar photo

ওয়াহিদ সুজন

দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
Avatar photo

Latest posts by ওয়াহিদ সুজন (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →