Main menu

ফিকশন: বিষাদ সিন্ধু [শর্ট ভার্সন]- মীর মোশারফ হোসেন (পার্ট ৮)

১৬. মহাবিষ

মায়মুনার সহিত জায়েদার কথোপকথন হইতেছে। জায়েদা বলিতেছেন, “ঈশ্বর যাহাকে রক্ষা করেন, কিছুতেই তাহার মরণ নাই। মায়মুনা! হাসানের মরণ নাই! জায়েদারও আর সুখ নাই।”

মায়মুনা কহিল, “চেষ্টার অসাধ্য কিছুই নাই। হতাশ হও কেন? এই দেখ, এজিদ্ সকল কথা শুনিয়া এই ঔষধ পাঠাইয়া দিয়াছে। ইহাতে কিছুতেই নিস্তার নাই।” মায়মুনা আপন কটিদেশ হইতে একটি ক্ষুদ্র পুঁটুলি বাহির করিয়া জায়েদাকে দেখাইল।
জায়েদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও কী?”
“মহাবিষ।”
“মহাবিষ কী?”
মায়মুনা উত্তর করিল, “এ সর্পবিষ নয়, অন্য কোন বিষও নয়, ইহার মূল্যও অধিক, দেখিতেও অতি উজ্জ্বল। আকার পরিবর্তনে অণুমাত্র পেটে পড়িলেই মানুষের পরমায়ু শেষ করে।” “কী প্রকারে খাওয়াইতে হয়?”
মায়মুনা কহিল, “খাদ্যসামগ্রীর সহিত মিশাইয়া দিতে পারিলেই হইল। পানিতে মিশাইয়া খাওয়াইতে পারিলে তো কথাই নাই।”
“এ তো বড় ভয়ানক বিষ! ছুঁইতেও যে ভয় হয়!”
“ছুইলে কিছু হয় না। হাতে করিয়া রগড়াইলেও কিছু হয় না। এ তো অন্য বিষ নয়, এ হীরক-চূর্ণ!”

মায়মুনা তখনই জায়েদার হাতে পুঁটুলি দিল। জায়েদা পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “হাসনেবানু কিংবা জয়নাব, এই দুয়ের একজন না মিশাইলে আর কাহারো সাধ্য নাই।”

“অন্য আর একটি উপায় আছে।”
“কী উপায়?”
“ঐ সুরাহীর জলে।”
“কী প্রকারে? সেই সুরাহী যে প্রকারে সীলমোহর বাঁধা, তাহা খুলিতে সাধ্য কার?”
“খুলিতে হইবে কেন? সুরাহীর উপরে যে কাপড় বাঁধা আছে, ঐ কাপড়ের উপর এই গুঁড়া অতি অল্প পরিমাণে ঘষিয়া দিলেই আর কথা নাই। যেমন সুরাহী, তেমনি থাকিবে; যেমন শীলমোহর তেমনি থাকিবে, পানির রং বদল হইবে না, কেহ কোন প্রকারে সন্দেহও করিতে পারিবে না।”

মায়মুনা তখন জায়েদার গৃহেই থাকিল। জায়েদা গোপনে সন্ধান লইতে লাগিলেন-হাসানের নিকটে কে কে রহিয়াছে, কে কে যাইতেছে, কে কে আসিতেছে, কে কী করিতেছে! হাসানের চিন্তাতেই (জায়েদা ছাড়া) বাড়ির সকলেই মহা চিন্তিত ও মহাব্যস্ত।

জায়েদার চিন্তায় জায়েদা ব্যস্ত। জায়েদা কেবল সময় অনুসন্ধান করিতেছেন, সুযোগের পথ খুঁজিতেছেন! ক্রমে ক্রমে রাত্রি অধিক হইয়া আসিল। জায়েদা জাগিয়া ছিলেন বলিয়াই দেখিলেন যে, হাসনেবানু রওজা মোবারকের দিকে যাইতেছেন। গোপনে গোপনে তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে যাইয়া আরো দেখিলেন যে, হাসনেবানু ঈশ্বরের উপাসনার্থ দণ্ডায়মান হইলেন। দেখিয়া আসিয়াই মায়মুনাকে বলিলেন, “মায়মুনা! যদি সুযোগ পাই, তবে এ-ই উপযুক্ত সময়।”

জায়েদা বিষের পুঁটুলি লইয়া চলিলেন। মায়মুনাও তাঁহার অজ্ঞাতসারে পাছে পাছে চলিল। অন্ধকার রজনী; চান্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের প্রথম তারিখ। চন্দ্র উঠিয়াই অমনি অস্ত গিয়াছে;-ঘোর অন্ধকার!

গায়ের ভর গায়ে রাখিয়া, হাতের জোর হাতে রাখিয়া, অল্পে অল্পে দ্বার মুক্ত করিয়া গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া জায়েদা দেখিলেন দীপ জ্বলিতেছে। ইমাম হাসান শয্যায় শায়িত – জয়নাব বিমর্ষ বদনে হাসানের পদ দুখানি আপন বক্ষে রাখিয়া শুইয়া আছেন। অন্যান্য পরিজনেরা শয্যার চতুষ্পার্শ্বে ভিন্ন ভিন্ন শয্যায় শয়ন করিয়া আছেন। নিঃশ্বাসের শব্দ ভিন্ন সে গৃহে আর কোন শব্দই নাই।

সুরাহীর প্রতি দৃষ্টি পড়িবামাত্রই সুরাহীর দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। ক্রমে সুরাহীর নিকটে যাইয়া দাঁড়াইলেন। আবার গৃহমধ্যস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকাইয়া, ইমামের মুখের দিকে চক্ষু ফেলিলেন। বিষের পুঁটুলি খুলিতে আরম্ভ করিলেন। খুলিতে খুলিতে ক্ষান্ত দিয়া, কী ভাবিয়া, আর খুলিলেন না। হাসানের মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। ক্রমে ক্রমে মুখ, বক্ষ, ঊরু ও পদতল পর্যন্ত সর্বাগ্নে চক্ষু পড়িলে আর সে ভাব থাকিল না। তাড়াতাড়ি বিষের পুঁটুলি খুলিয়া সুরাহীর মুখের কাপড়ের উপর সমুদয় হীরকচূর্ণ ঢালিয়া দিলেন। দক্ষিণ হস্তে সুরাহীর মুখবন্ধবস্ত্রের উপর বিষ ঘষিতে আরম্ভ করিলেন। স্বামীর মুখপানে আর ফিরিয়া চাহিলেন না।

দ্বারে জায়েদার পদাঘাত শব্দে ইমাম হাসানের নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছিল; চক্ষু খুলিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে ঐ শব্দের প্রকৃত কারণ কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। জয়নাবকে ডাকিতে লাগিলেন। জয়নাব জাগিবামাত্রই হাসান তাঁহাকে বলিলেন, “জয়নাব! শীঘ্র শীঘ্র আমাকে পানি দাও! অজূ (উপাসনার পূর্বে হস্ত-মুখাদি বিধিমত ধৌত) করিয়া ঈশ্বরের উপাসনা করিব। এইমাত্র পিতামাতা এবং মাতামহকে স্বপ্নে দেখিলাম। তাঁহারা যেন আমার অপেক্ষায় দাঁড়াইয়া আছেন। একটু জল পান করিব,-পিপাসা অত্যন্ত হইয়াছে।”

জল আনিতে জয়নাব বাহিরে গেলেন। হাসনেবানু তস্‌বি-হস্তে ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। ইমাম হাসান নিজেই হাসনেবানুকে স্বপ্নবিবরণ বলিলেন। “অত্যন্ত জলপিপাসা হইয়াছে, এক পেয়ালা পানি দাও।” স্বপ্নবিবরণ শুনিবামাত্রই হাসনেবানুর চিত্ত আরো অস্থির হইল, অন্যমনস্কে সুরাহী হইতে জল ঢালিয়া পেয়ালা পরিপূর্ণ করিয়া স্বামীর হস্তে প্রদান করিলেন। ইমাম হাসান প্রাণ ভরিয়া জলপান করিলেন। জয়নাবও পূর্ব আদেশমত জল লইয়া উপস্থিত হইলেন। হাসান হস্তপদাদি প্রালন করিয়া ঈশ্বরের উপাসনায় প্রবৃত্ত হইলেন। বসিয়া বসিয়া জীবনের শেষ উপাসনা,-ইহজগতের শেষ আরাধনা আজ শেষ হইল; অন্তরও জ্বলিয়া উঠিল।

কাতর হইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “আজি আবার এ কী হইল! কলিজা হৃদয় হইতে নাভি পর্যন্ত সেই কী এক প্রকারের বেদনা, যাহা মুখে বলিবার শক্তি নাই। আবার বুঝি বিষ! এ তো জায়েদার ঘর নহে। তবে এ কী!-এ কী! যন্ত্রণা!-উঃ!-কী যন্ত্রণা!!”

বেদনায় হাসান অত্যন্ত কাতর হইলেন। জায়েদার ঘরে যেরূপ যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিলেন, তাহার চতুর্গুণ বেদনা ভোগ করিতে লাগিলেন। ব্যগ্রভাবে কাসেমকে কহিলেন, “শীঘ্র শীঘ্র হোসেনকে ডাকিয়া আন। আমার হৃদয়, অন্তর, শরীর সমুদয় যেন অগ্নিসংযোগে জ্বলিতেছে, সহস্র সূচিকার দ্বারা যেন বিদ্ধ হইতেছে। অন্তরস্থিত প্রত্যেক শিরা যেন সহস্র সহস্র খণ্ডে খণ্ডিত হইয়া পড়িতেছে।”

হোসেনকে দেখিয়াই হাসান অতি কাতরস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ভাই, আর নিস্তার নাই! আমি এইমাত্র মাতামহ, মাতা এবং পিতাকে স্বপ্নে দেখিয়াছি। মাতামহ ও মাতা আমাকে অনেক সান্ত্বনা করিয়া বলিলেন, ‘হাসান! তুমি সন্তুষ্ট হও যে, শীঘ্রই পার্থিব শত্রুদের অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইবে।’ এইরূপ স্বপ্ন দেখিতে দেখিতে হঠাৎ একটি শব্দ আমার কর্ণে প্রবেশ করিল। নিদ্রাভঙ্গের সহিত স্বপ্নও ভাঙ্গিয়া গেল। অত্যন্ত জলপিপাসা হইয়াছিল, সুরাহীর জল যেমন পান করিয়াছি, মুহূর্ত না-যাইতেই আমাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছে। এত বেদনা, এত কষ্ট আমি কখনোই ভোগ করি নাই।”

অনুজের হস্ত ধরিয়া হাসান নিজ শয্যার উপরে বসাইয়া মুখে বারবার চুম্বন দিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভাই! আমি যে কষ্ট পাইতেছি, তাহা মুখে বলিবার শক্তি নাই। পূর্ব আঘাত, পূর্ব পীড়া, এই উপস্থিত যন্ত্রণায় সকলই ভুলিয়া গিয়াছি।”

ভ্রাতার মুখপানে দৃষ্টিপাত করিয়া হোসেন কাঁদিতে লাগিলে। আর আর সকলে বলিতে লাগিল, “আহা! জ্যোতির্ময় চন্দ্রবদনে বিষাদ-নীলিমা-রেখা পড়িয়াছে!”

এই কথা শুনিয়া হাসান অনুজকে বলিলেন, “ভাই! আমার চিরবিদায়ের সময় অতি নিকট। মাতামহ সশরীরে ঈশ্বরের আদেশে একবার ঈশ্বরের স্থানে নীত হইয়াছিলেন। সেখানে কোন-একটি নির্দিষ্ট স্থানে অতি রমণীয় দুইটি ঘর সুসজ্জিত দেখিলেন। একটি সবুজবর্ণ, আর একটি লোহিতবর্ণ। কাহার ঘর প্রহরীকে এই কথা জিজ্ঞাসা করিতে প্রহরী উত্তর করিল, ‘আপনার অন্তরের নিধি, হৃদয়ের ধন এবং নয়নের পুতুলি হাসান-হোসেনের জন্য এই দুইটি ঘর প্রস্তুত হইয়াছে।’ ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে প্রহরী কাঁপিয়া নতশির হইল, কোন উত্তর করিল না। জিব্রাইল সঙ্গে সঙ্গেই ছিলেন। তিনিই মাতামহকে বলিলেন, ‘সবুজবর্ণ গৃহ আপনার জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র হাসানের জন্য; লোহিতবর্ণ গৃহ কনিষ্ঠ দৌহিত্র হোসেনের জন্য প্রস্তুত হইয়াছে। আপনার অভাবে একদল পিশাচ শত্রুতা করিয়া হাসানকে বিষপান করাইবে এবং মৃত্যুসময়ে হাসানের মুখ সবুজবর্ণ হইবে; তন্নিমিত্তই ঐ গৃহটি সবুজবর্ণ। ঐ শত্রুগণ অস্ত্র দ্বারা আপনার কনিষ্ঠ দৌহিত্র হোসেনের মস্তকছেদন করিবে। ঐ রক্তমাখা মুখের চিহ্নই লোহিতবর্ণের কারণ!’ – আমার মুখের বর্ণ যখন বিবর্ণ হইয়াছে, তখন পরমায়ুও আজ শেষ হইয়াছে। মাতামহের বাক্য অলঙ্ঘনীয়। ভাই! ঈশ্বরের কার্যও অখণ্ডনীয়।”

সবিষাদে এবং সরোষে হোসেন বলিতে লাগিলেন, “আপনাকে এ বিষ কে দিয়াছে?”

“ভাই! তুমি কী তাহার প্রতিশোধ নিবে?”

হোসেন অতিশয় রোষভরে দুঃখিতস্বরে বলিতে লাগিলেন, “আমি বাঁচিয়া থাকিতে যে নরাধম বিষপান করাইয়াছে, সে কী অমনই বাঁচিয়া যাইবে? আমার হৃদয়ে কী রক্ত নাই, মাতৃস্নেহ নাই যে, ভ্রাতার প্রাণনাশক বিষ প্রদায়কের প্রতিশোধ লইতে পারিব না? হয় আমার প্রাণ তাহাকে দিব, নয় তাহার প্রাণ আমি লইব।”

অনুজের হস্ত ধরিয়া নিকটে বসাইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “আমি আমার বিষদাতাকে চিনি। ঈশ্বরই তাহার বিচার করিবেন। আমার কেবল এইমাত্র আক্ষেপ যে, নিষ্কারণে আমাকে নির্যাতন করিল। যে আশাতেই হউক, – নিরপরাধে যে আমাকে নির্যাতন করিয়া চিরবন্ধুর প্রাণবধ করিল, দয়াময় পরমেশ্বর তাহার আশা কখনোই পূর্ণ করিবেন না। ভাই! কত কথা মনে ছিল, কিছুই বলিতে পারিলাম না। চতুর্দিক যেন অন্ধকারময় দেখিতেছি!” আবুল কাসেমের হস্ত ধরিয়া হোসেনের হস্তে সমর্পণ করিয়া স্নেহার্দ্রচিত্ত হাসান কাতরস্বরে পুনরায় কহিতে লাগিলেন, “ভাই! ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ মানিয়া আজ আমি তোমার হস্তে কাসেমকে দিলাম। তোমার কন্যা সখিনার সহিত কাসেমের বিবাহ দিয়ো! আর আমার বিষদাতার যদি সন্ধান পাও, কিংবা কোন সূত্রে যদি ধরা পড়ে,-তবে তাহাকে কিছু বলিয়ো না; – ঈশ্বরের দোহাই তাকে ক্ষমা করিয়ো।” – কাসেমকে বলিলেন, “কাসেম! আর বাপ! এই কবচটি সর্বদা হস্তে বাঁধিয়া রাখিও। যদি কখনো বিপদগ্রস্ত হও, সে বিপদ হইতে রক্ষা পাইবার উপায় যদি নিজ বুদ্ধিতে কিছুই স্থির করিতে না পার, তবে এই কবচের অপর পৃষ্ঠে লক্ষ্য করিয়ো; যাহা লেখা দেখিবে, সেইরূপ কার্য করিবে। সাবধান! তাহার অন্যথা করিয়ো না।”

কিয়ৎক্ষণ পরে নিস্তব্ধ থাকিয়া উপর্যুপরি তিন-চারিটি নিশ্বাস ফেলিয়া হোসেনকে সম্বোধনপূর্বক মুমূর্ষু হাসান পুনরায় কহিলেন, “ভাই! ক্ষণকালের জন্য তোমরা সকলে একবার বাহিরে যাও; কেবল জায়েদা একাকিনী এখানে উপস্থিত থাকুন। জায়েদার সহিত নির্জনে আমার একটি বিশেষ কথা আছে।”

সকলেই আজ্ঞা পালন করিলেন। শয্যার নিকটে জায়েদাকে ডাকিয়া হাসান চুপি চুপি বলিতে লাগিলেন, “জায়েদা, তুমি যে কার্য করিলে, সমস্তই আমি জানিতে পারিয়াছি। তোমাকে বড়ই বিশ্বাস করিতাম, বড়ই ভালবাসিতাম, – আমি তোমাকে ক্ষমা করিলাম। কিন্তু যিনি সর্বসাক্ষী, সর্বময়, সর্বমার অধীশ্বর, তিনি তোমাকে মা করিবেন কি-না, বলিতে পারি না। তথাপি তোমার মুক্তির জন্য সর্বপ্রথমে আমি সেই মুক্তিদাতার নিকট পুনঃপুনঃ প্রার্থনা করিব।-যে পর্যন্ত তোমাকে মুক্ত করাইতে না পারিব, সে পর্যন্ত আমি স্বর্গের সোপানে পা রাখিব না।”

জায়েদা অধোমুখে অশ্রু বিসর্জন করিলেন, একটিও কথা কহিলেন না। সময়োচিত সঙ্কেতধ্বনি শ্রবণে হোসেনের সহিত আর-আর সকলেই সেই গৃহমধ্যে পুনঃপ্রবেশ করিলেন। হাসান একে একে সকলের নিকট বিদায় লইলেন। হাসনেবানু ও জয়নাবের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া নিজকৃত অপরাধের মার্জনা চাহিলেন; শেষে হোসেনকে কহিলেন, “হোসেন! এস ভাই! জন্মের মত তোমার সহিত আলিঙ্গন করি।” – এই বলিয়া অনুজের গলা ধরিয়া অশ্রুনয়নে আবার বলিতে লাগিলেন, “ভাই! সময় হইয়াছে। ঐ মাতামহ স্বর্গের দ্বারে দাঁড়াইয়া ডাকিতেছেন। চলিলাম!” – এই শেষ কথা বলিয়াই ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে দয়াময় ইমাম হাসান সর্বসমে প্রাণত্যাগ করিলেন।

যেদিন ইমাম হাসান মর্ত্যলীলা সম্বরণ করেন, সেই দিন হিজ্‌রী ৫০ সনের ১লা রবিউল আউয়াল তারিখ।

১৭. জায়েদা স্বামীগৃহ পরিত্যাগ করিয়া চলিল

মদিনাবাসীরা হাসানের শোকে বড়ই কাতর হইলেন। পবিত্রদেহ মৃত্তিকায় প্রোথিত হইতে-না-হইতেই নৃশংস মন্ত্রী মারওয়ান দামেস্ক নগরে এজিদের নিকট সংবাদ পাঠাইয়াছিলেন। দামেস্ক হইতে ক্রমে ক্রমে সৈন্য আসিয়া পূর্বোক্ত পর্বতপ্রান্ত গুপ্তস্থানে জুটিতেছে। হাসানের প্রাণবিয়োগের পর পরিজনেরা, শোকে এবং দুঃখে অবসন্ন হইয়া মৃতবৎ হইয়া আছেন।

মায়মুনা পূর্বেই মারওয়ানের সহিত সমুদয় কথাবার্তা সুস্থির করিয়াছে, মারওয়ানও সমুদয় সাব্যস্ত করিয়া রাখিয়াছেন, কেবল জায়েদার অভিমতের অপেক্ষা। জায়েদা আজ-কাল করিয়া তিন দিবস কাটাইয়াছেন। পতির চিরবিচ্ছেদে দুঃখ নাই, ভবিষ্যৎ আশায় এবং জয়নাবের প্রতিহিংসায় কৃতকার্য হইয়াও সুখ নাই। অন্তরে শান্তির নামও নাই। সর্বদাই নিতান্ত অস্থির।

মায়মুনা ঐ নির্জন স্থানেই আসিয়া বলিতে লাগিল, “তিন দিন তো গিয়াছে, আজ আবার কী বলিবে?”

“আর কী বলিব? এখন সকলই তোমার উপর নির্ভর। আমার আশা, ভরসা, প্রাণ সকলই তোমার হাতে।”

“কথা কখনোই গোপন থাকিবে না। পাড়াপ্রতিবেশীরা এখনই কানাঘুষা আরম্ভ করিয়াছে। তোমার পক্ষ হইয়া কে দুটা কথা বলিবে বল তো?”

“আমি যাহা করিব, পূর্বেই স্থির করিয়া রাখিয়াছি। এই তো রাত্রি অধিক হয় নাই, একটু অপেক্ষা কর, এখনই আমি তোমার সঙ্গে যাইতেছি। এই একটি বড় দুঃখ মনে রহিল যে, এখানে থাকিয়া জয়নাবের চিরকান্না শুনিতে পাইলাম না।”

“মানুষের মন ক্ষণ-পরিবর্তনশীল। জয়নাবও যে আপন ভালমন্দ চিন্তা না করিতেছে, তাহাও মনে করিয়ো না, – এদিকে আসক্তির আকর্ষণ, ওদিকে নিরুপায়। জয়নাবই যদি অগ্রে যাইয়া তাহার আশ্রয় গ্রহণ করে, তবে তো তোমার সকল আশাই এই পর্যন্ত শেষ হইল। এদিকেও মজাইলে, ওদিকেও হারাইলে।”

“না-না-আমি আজ আর কিছুতেই থাকিব না। সঙ্গে আমি কিছুই লইব না। যেখানে যাহা আছে, সকলই রহিল, এই বেশেই চলিয়া যাইব।”

এই বলিয়া জায়েদা উঠিলেন। সেইসঙ্গে মায়মুনাও উঠিয়া তাঁহার পশ্চাদ্বর্তিনী হইল। রাত্রি বেশি হয় নাই, অথচ হোসেনের অন্তঃপুরে ঘোর নিস্তব্ধ নিশীথের ন্যায় বোধ হইতেছে। সকলেই নিস্তব্ধ। দুঃখিত অন্তরে কেহ কেহ আপন আপন গৃহে শুইয়া, কেহ কেহ-বা বসিয়া আছেন। চন্দ্রমাও মদিনাবাসীর দুঃখে দুঃখিত হইয়া, হাসানের পরিজনের দুঃখে দুঃখিত হইয়া,-মলিনভাবে অস্তাচলে চলিয়া গেলেন। মায়মুনার সহিত জায়েদা বিবি চুপি চুপি বাটীর বাহির হইলেন। একটি স্ত্রীলোকের ক্রন্দনস্বর জায়েদার কর্ণে প্রবেশ করিল। জায়েদা দাঁড়াইলেন। বিশেষ মনোযোগের সহিত শুনিয়া শুনিয়া আপনাআপনি বলিতে লাগিলেন, “তোকে কাঁদাইতেই এই কাজ করিয়াছি! যদি স্বামীকে ভালবাসিয়া থাকিস্, তবে আজ কেন,-চিরকালই কাঁদিবি! যদি জায়েদা বাঁচিয়া থাকে, তবে দেখিস্ জায়েদার মনের দুঃখের পরিমাণ কত? শুধু কাঁদাইয়াই ছাড়িবে না। আরো অনেক আছে। এই তো আজ তোরই জন্য-পাপীয়সী!-কেবল তোরই জন্য জায়েদা আজ স্বামীঘাতিনী বলিয়া চিরপরিচিত হইল। আজ আবার তোরই জন্য জায়েদা এই স্বামীগৃহ পরিত্যাগ করিয়া চলিল।”

বলিতে বলিতে মায়মুনার সহিত দ্রুতপদে জায়েদা বাটীর বাহির হইলেন। বাহির হইয়াই দেখিলেন, কয়েকজন সৈনিক পুরুষ অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া গমনোপযোগী বাহনাদির সহিত সম্মুখে উপস্থিত। সৈনিক পুরুষ মায়মুনার ইঙ্গিতে জায়েদাকে অভিবাদন করিয়া বিশেষ মান্যের সহিত এক উষ্ট্রে আরোহণ করাইল। মায়মুনাও উষ্ট্রপৃষ্ঠে আরোহণ করিল। কিছু দূরে যাইবার পর ছদ্মবেশী মারওয়ান তাঁহাদের সঙ্গে একত্র মিলিত হইলেন। নগরপ্রান্তের সেই নির্দিষ্ট পর্বতগুহার সন্নিকটে আসিয়া। অনন্তর মারওয়ান আরো বিংশতি জন সৈন্য সজ্জিত করিয়া জায়েদার সহিত দামেস্কে পাঠাইয়া দিলেন।

রজনী প্রভাতে হোসেনের পরিজনেরা দেখিলেন, জায়েদা গৃহে নাই। জায়েদা কেন গৃহত্যাগিনী হইল, সে কথা বুঝাইয়া বলিতে, কী বুঝিতে কাহারো বাকি রহিল না।

১৮. স্বামীবধের প্রতিফল

এজিদ্ যে দিবস হাসানের মৃত্যুসংবাদ পাইলেন, মনের আনন্দে সেই দিনই অকাতরে ধনভাণ্ডার খুলিয়া দিয়াছেন। দিবা-রাত্রি আমোদ-আহ্লাদ। স্বদেশজাত “মাআল্-আনব”-নামক চিত্ত-উত্তেজক মদ্য সর্বদাই পান করিতেছেন। সুখের সীমা নাই। রাজপ্রাসাদে দিবারাত্রি সন্তোষসূচক ‘সাদিয়ানা’ বাদ্য বাজিতেছে।

সুসজ্জিত প্রহরীবেষ্টিত হইয়া মায়মুনার সহিত জায়েদা দামেস্ক নগরে উপস্থিত হইলেন। জায়েদার আগমন সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া মনে মনে কি অনুধ্যানপূর্বক এজিদ্ বলিলেন, “আজি আমার শরীর কিছু অসুস্থ। যথাযোগ্য আদরে তাহাদিগকে গ্রহণ কর। আগামীকল্য প্রথম প্রকাশ্য দরবারে তাহাদের সহিত আমার দেখা হইবে।”

জায়েদা ও মায়মুনা যথাযোগ্য সমাদরে প্রমোদভবনে স্থান পাইলেন। জায়েদা প্রমোদভবনে পরিচারিকাবেষ্টিতা হইয়া সুখস্বচ্ছন্দে স্বর্ণপালঙ্কে কোমল শয্যায় শুইয়া আছেন। কত কী ভাবিতেছেন, তাহার তরঙ্গ অনেক। প্রথমতঃ দশ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা, তারপর রাজরাণী।

জায়েদার শয্যার পার্শ্বেই নিন্মতর আর একটি শয্যায় মায়মুনা শয়ন করিয়া আছে। উভয়েই আপন আপন চিন্তায় চিন্তিত, উভয়েই নীরব। নিশার কার্য নিশা ভুলে নাই। ক্রমে ক্রমে উভয়েই নিদ্রার কোলে অচেতন। এজিদ্ আজ মনের মত মনতোষিণী সুরাপান করিয়া বসিয়া আছেন, এখনো শয়ন করেন নাই। মদ্যপানে অজ্ঞানতা জন্মে, সাধ্যাতীত ব্যবহার করিলে মানবপ্রকৃতি বিকৃতিপ্রাপ্ত হয়। মানুষ তখন পশু হইতেও নীচ হইয়া পড়ে। কিন্তু সাধ্য-সমতার অতীত না হইলে বোধ হয় অতি জঘন্য হৃদয়ে অনেক উৎকৃষ্ট ভাবও আসিয়া উপস্থিত হয়। এজিদ্ আজ একা একা অনেক কথা বলিতেছেন। এজিদ্ ক্রমে ক্রমে সকল বিষয় আলোচনা করিলেন। সুরাপ্রভাবে মনের কপটতা দূর হইয়াছে; হিংসা, দ্বেষ, শত্রুতা ঐ সময়ে অন্তর হইতে অনেক পরিমাণে বিদূরিত হইয়াছে। আজ এজিদের চক্ষের জল পড়িল; কেন পড়িল, কে বলিবে? এজিদ্ আর এক পাত্র পান করিলেন। কোন কথা কহিলেন না। ক্ষণকাল নিস্তব্ধভাবে থাকিয়া শয্যায় শয়ন করিলেন।

জগৎলোচন-রবিদেব সহস্র কর বিস্তার করিয়া আসিতেছেন;-কাহার সাধ্য, তাঁহার সম্মুখে দাঁড়ায়! শুকতারার অন্তর্ধান, ঊষার আগমন ও প্রস্থান; দেখিতে দেখিতে সূর্যদেবের অধিষ্ঠান। রাজমুকুট শিরে ধারণ করিয়া মহারাজ এজিদ্ খাস্ দরবারে বার দিলেন। প্রহরিগণ সশস্ত্রে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দণ্ডায়মান হইল। অমাত্যগণ এবং পূর্বাহূত নগরস্থ প্রধান প্রধান মাননীয় মহোদয়গণ স্ব-স্ব স্থান পূর্ণ করিয়া দরবারের শোভা সম্বর্ধন করিলেন। জায়েদা ও মায়মুনা পূর্ব-আদেশ অনুসারে পূর্বেই দরবারে নীত হইয়াছিলেন। শাহীতক্তের বামপার্শ্বে দুইটি স্ত্রীলোক। জায়েদা রজতাসনে আসীনা, মায়মুনা কাষ্ঠাসনে উপবিষ্টা।

এজিদ্ বলিতে লাগিলেন, “আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, হাসান আমার চিরশত্রু ছিল, নানাপ্রকারে আমার মনে কষ্ট দিয়াছে। হাসান কোন বিষয়েই আমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিল না, তথাচ তাহার বংশগৌরব এত প্রবল ছিল যে, নানাপ্রকার অযথা কটূক্তি দ্বারা সর্বদাই আমার মনে ব্যথা দিয়াছে। আমি সেদিকে লক্ষ্য করি নাই। রাজ্য বিস্তারই আমার কর্তব্য কার্য। কাসেদের দ্বারা তাঁহাদিগকে আমার বশ্যতা স্বীকার করিবার আদেশ করা হইয়াছিল। সে কথা তাঁহারা অবহেলা করিয়া আমার লিখিত পত্র শত খণ্ডিত করিয়া উত্তরস্বরূপ সেই কাসেদের হস্তে পুনঃপ্রেরণ করিয়াছিল। সেই কারণেই আমি যুদ্ধ ঘোষণা করি। প্রিয় মন্ত্রী মারওয়ানকে সেই যুদ্ধে “সিপাহসালার” পদে বরণ করিয়া বহুসংখ্যক সৈন্যসহ হাসানকে বাঁধিয়া আনিতে মদিনায় প্রেরণ করি। আমার সৈন্যগণের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া হাসানের পক্ষে মিলিত হয় এবং দামেস্কের অবশিষ্ট সৈন্যদিগকে আক্রমণ করিয়া যুদ্ধে পরাস্ত করে। কি করি, চিরশত্রু দমন না করিলেও নহে, এদিকে সৈন্যদিগকের চক্রে বাধ্য হইয়া হাসানের প্রাণ কৌশলে গ্রহণ করাই যুক্তিসিদ্ধ বিবেচনা হয়। এই যে বিবি মায়মুনাকে দেখিতেছেন, ইহার কল্যাণে – আর এই বিবি জায়েদার সাহায্যে আমার চিরশত্রু বিনষ্ট হইয়াছে। আমি এই মহোদয়ার কৃপাতেই শত্রুবিহীন হইয়াছি। আজ আমার মন কিঞ্চিৎ শান্তিলাভ করিয়াছে। বহু চেষ্টা ও বহু পরিশ্রমের ফল এই মহামতী যুবতীর দ্বারাই সুপক্ব হইয়া ফলিয়াছে। আর এই বিবি মায়মুনা, ইহার সহিত এই কথা ছিল যে, যে কৌশলে, যে কুহকেই হউক, হাসানকে প্রাণে মারিতে পারিলে ইনি সহস্র স্বর্ণমুদ্রা পারিতোষিক প্রাপ্ত হইবেন।”

ইঙ্গিতমাত্র কোষাধ্য সহস্র স্বর্ণমুদ্রা পরিপূর্ণ থলিয়া আনিয়া বিবি মায়মুনার সম্মুখে রাখিয়া দিয়া, সসম্ভ্রমে পূর্বস্থানে পূর্ববৎ করজোড়ে দণ্ডায়মান রহিল।

এজিদ্ পুনর্বার বলিতে লাগিলেন, “বিবি জায়েদার সহিত এই অঙ্গীকার করিয়াছিলাম যে, আপনার প্রিয়তম পতির প্রাণ যদি আপনি বিনাশ করিতে পারেন, তবে সহস্র স্বর্ণমুদ্রা, মূল্যবান্ বস্ত্র ও মণিময় অলঙ্কার দান করিয়া রাজসিংহাসনে বসাইব।”

সঙ্কেতমাত্র কোষাধ্য সহস্র স্বর্ণমুদ্রাপূরিত কয়েকটি রেশমবস্ত্রের থলিয়া, রত্নময় অলঙ্কার এবং কারুকার্যখচিত বিচিত্র বসন জায়েদার সম্মুখে রাখিয়া দিল।

কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়া এজিদ্ আবার বলিলেন, “যদি ইচ্ছা হয়, তবে বিবি জায়েদা এই সিংহাসনে আমার বাম পার্শ্বে আসিয়া বসুন। – বিবি জায়েদা! আপনি আপনার অঙ্গীকার পরিপূর্ণ করিয়াছেন, এখন আমিও আমার অঙ্গীকার পরিপূর্ণ করি।”

জায়েদা মনে মনে ভাবিলেন, এক রাজরাণী হওয়াই বাকি ছিল, রাজা যখন নিজেই তাঁহার বামপার্শ্বে বসিতে আদেশ করিতেছেন, তখন সে আশাও পূর্ণ হইল।

এজিদ্ বলিলেন, “আমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হইল। এক্ষণে আমার কয়েকটা কথা আছে, আপনারা সকলেই মনোযোগপূর্বক শ্রবণ করুন।” – এই কথা বলিয়াই এজিদ্ সিংহাসন ছাড়িয়া একেবারে নিচে নামিলেন। জায়েদা সলজ্জভাবে অতি ত্রস্তে সিংহাসন পরিত্যাগ করিয়া সভাস্থলে এজিদের পার্শ্বদেশে দাঁড়াইলেন।

এজিদের পুনরায় বলিতে আরম্ভ করিলেন, “সামান্য অর্থলোভে এমন প্রিয়তম নির্দোষ পতির প্রাণ যে রাক্ষসী বিনাশ করিয়াছে, তাহাকে কি বলিয়া কোন্ বিশ্বাসে আমার জীবনের চিরসঙ্গিনী সহধর্মিণী পদে বরণ করিয়া লইব? আমার প্রলোভনে ভুলিয়া যে পিশাচী এক স্বামীর প্রাণ বিনাশ করিল, অন্য কাহারো প্রলোভনে ভুলিয়া সেই পিশাচী আমার প্রাণও তো অনায়াসে বিনাশ করিতে পারে! আমি দণ্ডধর রাজা, তাহার সমুচিত শাস্তি বিধান করা কী আমার কর্তব্য নহে? ইহার ভার আমি আর কাহারো হস্তে দিব না; পাপীয়সীর শাস্তি, আমি যাহা সাব্যস্ত করিয়াছি, তাহাই পালন করিব।” এই কথা বলিয়াই কটিবন্ধসংযুক্ত দোলায়মান অসিকোষ হইতে সুতীক্ষ্ণ তরবারী রোষভরে নিষ্কোষিত করিয়া জায়েদার দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “পাপীয়সী! স্ত্রী হইয়া স্বামীবধের প্রতিফল ভোগ কর!” এই বলিয়া কথার সঙ্গে সঙ্গেই এজিদ্ স্বহস্তে এক আঘাতে পাপিনী জায়েদাকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিলেন।

অসি হস্তে গম্ভীরস্বরে এজিদ্ পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “ঐ কুহকিনী মায়মুনার শাস্তি আমি স্বহস্তে বিধান করিব না! উহার অর্ধশরীর মৃত্তিকায় প্রোথিত করিয়া, প্রস্তরনিক্ষেপে মস্তক চূর্ণ করিয়া ফেল।” আজ্ঞামাত্র প্রহরিগণ মায়মুনার হস্ত ধরিয়া দরবারের বাহিরে টানিয়া লইয়া গেল। মাটিতে অর্ধদেহ পুঁতিয়া প্রস্তরনিক্ষেপে মস্তক চূর্ণ করিল। সভাস্থ সকলেই “যেমন কর্ম তেমনি ফল!”

Series Navigation<< ফিকশন: বিষাদ সিন্ধু [শর্ট ভার্সন]- মীর মোশারফ হোসেন (পার্ট ৭)ফিকশন: বিষাদ সিন্ধু [শর্ট ভার্সন]- মীর মোশারফ হোসেন (পার্ট ৯) >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →